সরকার সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে- মিয়া গোলাম পরওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যা এগুলো সবই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এগুলো প্রতিরোধ বা মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও ডুমুরিয়াসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অসহায় এ সব দূর্গত মানুষের জীবন-যাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তবে এই অবস্থায় দূর্গত এলাকায় সরকারের প্রয়োজনীয় তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ঘর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে এগিয়ে আসলে তারা ক্ষয়ক্ষতি থেকে কিছুটা হলেও লাঘব হবে। তাই দূর্গত এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা বৃদ্ধির জোর দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে সামর্থবানদেরকে দূর্গত মানুষের সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছি।
গতকাল রোববার সকালে উপকূলীয় জেলা খুলনার কয়রা উপজেলার সবচেয়ে বড় ভাঙন কবলিত এলাকা দশহালিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে নগদ অর্থসহায়তা ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে তিনি এ আহবান জানান। এ সময় তিনি ২৬ মে উপকূলীয় অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে যারা বসতবাড়ি, সহায়-সম্পত্তি হারিয়েছেন তা অপূরণীয় উল্লেখ করে বলেন, আপনাদের সকল ক্ষতি আমরা পূরণ করতে পারবো না। তবে আমাদের সামর্থানুযায়ী আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
এ সময় সেক্রেটারি জেনারেলের সাথে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, খুলনা দক্ষিণ জেলা আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার, সেক্রেটারি এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, কয়রা উপজেলা আমীর মাওলানা মিজানুর রহমান, সেক্রেটারি মাওলানা মো. সাইফুল্লাহ, খুলনা দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহাম্মদ আবু ইসহাক, মহানগরী ছাত্রশিবির নেতা মু. আমিরুল ইসলাম, জামায়াত নেতা মাওলানা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, আদর্শবাদী সংগঠনটি বরাবরই জনগণের যেকোন বিপদ-অপদে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে। আর দেশে ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর এই গণমুখী প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, আইনের শাসন, নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা, দেশের শান্তিশৃঙ্খলা ও যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলা করার দায়িত্ব সরকারের। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার অধিকারের নিশ্চয়তার দায়িত্বও সরকার কোন ভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলায় শুধু আমাদের দেশে নয় বরং প্রতিটি সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু আমাদের দেশে নেতিবাচক রাজনীতির কারণে সরকার গণমুখী চরিত্র হারিয়ে ফেলায় রাষ্ট্রের কোন অঙ্গই আইন ও সংবিধান অনুযায়ি কাজ করতে পারছে না। ফলে সরকারের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এমতাবস্থায় জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই দুর্গত ও বিপন্ন মানুষের কল্যাণে তাদের পাশে থেকেছে। কিন্তু রাষ্ট্রের অভাব ব্যক্তি বা সাংগঠনিক পর্যায়ে কোন ভাবেই সমাধান করা সম্ভব নয়। তবুও আমাদের সীমিত সামর্থ নিয়ে সাধ্যমত দুর্গত মানুষের দুর্দশা লাঘবে কাজ করে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজনীতি কোন ভোগের বিষয় নয় বরং আর্ত-মানবতার কল্যাণের ধারণা থেকেই রাজনীতির পথচলা শুরু হয়েছে। কিন্তু রাজনীতির একশ্রেণির উচ্চাভিলাষী পাত্রমিত্রদের কারণেই আমাদের দেশের রাজনীতির লক্ষ্যচ্যুতি ঘটেছে। রাজনীতি হারিয়ে ফেলেছে আপন গতিপথ এবং গণমুখী চরিত্র। জামায়াতে ইসলামী প্রচলিত নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে কল্যাণকামী ও উৎপাদনমুখী রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে। জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই অসহায় মানুষের পাশে ছিল, এখনো আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে-ইনশা আল্লাহ। মূলত আমরা দেশকে সুখী, সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভরশীল ও কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জামায়াতে ইসলামী এই কাজে সফল হলে এবং দেশকে কল্যাণরাষ্ট্রে পরিণত করতে পারলে রাষ্ট্রই জনগণের সকল সমস্যার সমাধান করবে। তিনি মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য সকলকে জামায়াতে ইসলামীর পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
খুলনা দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার বলেন, বন্যাদূর্গত কয়রাবাসীসহ খুলনার বন্যাদূর্গত মানুষ ক্ষমতাসীন সরকারের দিকে চেয়ে আছে। আমরা আশা করি সরকার দূর্গত এলাকার মানুষের কল্যাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে বন্যার্তদের মানুুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে। জামায়াতে ইসলামী দেশ ও জাতির যে কোন ক্রান্তিলগ্নে অতন্দ্র প্রহরীর ভুমিকা পালন করেছে, এখনও করে যাচ্ছে এবং এর ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন