ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১৮

শহীদ জিয়াউর রহমান এর ৩৭ তম শাহাদাত বার্ষিকি উপলক্ষে,পৃর্বষোলশহর ৬নং ওয়ার্ড আলোচনা সভা আনুষ্টিত

বাংলাদেশ বার্তাঃ শহীদ জিয়াউর রহমান এর ৩৭ তম শাহাদাত বার্ষিকি উপলক্ষে,পৃর্বষোলশহর ৬নং ওয়ার্ড বি,এন,পি, যুবদল, ছাত্রদলের উদ্যেগে এক আলোচনা সভা, ওয়ার্ড বি,এন,পি, সভাপতি ও সাবেক কমিশনার দোস্ত মোহাম্মদ এর সভা পতিত্তে আনুষ্টিত হয়।
উক্ত আলোচনা সভায় উপস্তিত ছিলেন কেন্দিয় ছাত্র দলের সাবেক সহ সভাপতি এম এ হাশেম রাজু,চান্দ গাঁও থানা যুবদলের আহবায়ক জাফর আহমদ, পুর্বষোলশহর ওয়ার্ড বি,এন,পি, সিনিয়র সহ সভাপতি আলহাজ্ব আবুল বাশার,সিনিয়র যুগ্ন সম্পাদক মোঃ ইউছুফ,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ নুরনবী,চান্দগাঁও থানা যুবদলের নেতা ওমর ফারুক,মোঃ শাহেদ,ওয়ার্ড যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ শাহাজান, সাধারণ সম্পাদক ফজল কবির, সহ সভাপতি মোঃ জসিম,মোঃ জাহাঙ্গির, মোঃ আকবর,সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ বাদশা,মোঃ বাহাদুর, সহ নেতৃ বিন্দ উপস্তিত ছিলেন, এম,এ,হাসেম রাজু,তার বক্তবে বলেন শহিদ রাষ্টপতি জিউর রহমান এর ৩৭ তম শাহাদাত বার্ষিকিতে আমাদের অঙ্গিকার হক, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে,এই দল তিন তিন বারের খমতার দল, জারা বি,এন,পিকে, মুছলিম লীগ মনে করেন, তারা সুদু সপ্ন ই দেখে যাবে, ইনশা আল্লাহ আগামি দিনে, বেগম খালেদা জিয়াকে,নিয়ে নির্বাচনে যাবে বি,এন,পি।,আপনারা সবাই একোতা বদ্দ হয়ে সকল আন্দলন সংরামে জাপিয়ে,পড়বেন তাহলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাদ্য হবে এই অবোদ সরকার,। ,সভা সেষে শহিদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমান,এর জন্য দোয়া ও খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনা করেন।

দেশবাসীরর কাছে দোয়া চাইলেন জয়নুল আবদিন ফারুক

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ নিজের সুস্থতা কামনা করে দেশবাসীরর কাছে দোয়া চাইলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলের চীপ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।
বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরায় এ্যপোলো হাসপাতালে দেখতে আসা নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীরর কাছে দোয়া চান তিনি।
এর আগে, গত সোমবার দুপুরে হঠাৎ অসুস্থতাববোধ করায় রাজধানীর এ্যপোলো হাসপাতালে প্রেফেসর ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের তত্ত্ববধায়নে ৭৩১১ নং কক্ষে ভর্তি হন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, দেশ বাচাও মানুষ বাচাও আন্দোলনের সভাপতি কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন, নাজমুল হাসান রনি, সাজিদ, মোহাম্মদ ফারুক, এস এম শরিফুল ইসলাম শরিফ প্রমুখ।

রবিবার, ২৭ মে, ২০১৮

হাটহাজারীর সাবেক সাংসদ ও হুইপ আলহাজ্ব সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম আর নেই


বাংলাদেশ বার্তাঃ হাটহাজারীর সাবেক সংসদ সদস্য ও হুইপ আলহাজ্ব সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম আর নেই।ইন্না নিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন।রবিবার(২৭মে) সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ঢাকা ন্যাশনাল হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগছিলেন। হাটহাজারী উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো. সাহেদুল আজম সাহেদ তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 
প্রসঙ্গত, আলহাজ্ব সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম হাটহাজারী থেকে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে তিনবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার জানাযার সময় ঠিক কবে হবে তা জানা যায়নি।পরিবারের পক্ষ থেকে জানাযার সময় জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

শনিবার, ২৬ মে, ২০১৮

এতিমদের নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের ইফতার মাহফিলে নেতৃবৃন্দ

সমাজের নৈরাজ্য ও দুনীর্তি দূর করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ার আহবান


বাংলাদেশ বার্তা মে ২৬, ২০১৮; বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রী কর্মপরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, মাহে রমজান আত্মশুদ্ধি ও আত্ম গঠনের মাস। কুরআন নাযিলের এ মাসে একটি নফল কাজ অন্য মাসের ফরজের সমান এবং একটি ফরজ কাজ অন্য মাসের ৭০টি ফরজের সমান। ইসলামের ৫টি স্তম্বের মধ্যে যাকাত অন্যতম। সমাজের দু:স্থ মানুষের আর্থিক দু:খ কষ্ট লাঘব করে তাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় যাকাত অন্তর্ভক্ত করা হয়েছে। মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য ইসলামকে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ তা‘য়ালা। 

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি কল্যাণ মূলক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে ইসলামী আদর্শের আলোকে গড়ে তোলা এবং সমাজের সর্বস্তরে সৎ, চরিত্রবান ও যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাই জামায়াতের অন্যতম কর্মসূচী। সমাজের দারিদ্র বিমোচন, যাবতীয় অনাচার, অবিচার, নৈরাজ্য ও দুনীর্তি দূর করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে একটি সূখী সমৃদ্ধশালী সমাজ তৈরী করে অসহায় দু:স্থ ও বিপন্ন মানুষের আর্থিক সাহায্য ও পুনর্বাসনের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়ে তোলাই জামায়াতের মূল লক্ষ্য। 
নগর জামায়াত আমীর আরো বলেন, জামায়াত যাকাত ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্তমানবতার কল্যাণ সাধনের চেষ্টা করছে। যাকাত হলো ধনীদের সম্পদে গরীবের অধিকার। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ ও শিশুদের কল্যাণে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসতে হবে। ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য ও ধনী গরিবেব ব্যবধান দূর করা সম্ভব। তিনি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকলকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানান। 
জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে এতিমদের নিয়ে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে তিনি সভাপতির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন।
জামায়াতের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত ইফতার মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নগর জামায়াতের এসিসটেন্ট সেক্রেটারী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ উল্লাহ,নগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ডা: এম.ছিদ্দিকুর রহমান, নগর কর্মপরিষদ সদস্য এম.এ.আলম,নগর উত্তর ছাত্রশিবির নেতা মুহাম্মদ জোবায়ের প্রমুখ। 
এতিমদের নিয়ে আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে মোনাজাত পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।

বুধবার, ২৩ মে, ২০১৮

গরীব ও অসহায়দের কল্যাণে জনপ্রতিনিধি ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার জন্য জামায়াত নেতা ও সাবেক এম,পি শাহজাহান চৌধুরীর আহবান

বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সাবেক এম, পি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী গরীব ও অসহায়দের কল্যাণে সমাজের বিত্তশালী ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আজ সরকার গরীব ও অসহায়দের কোন খোজ নিচ্ছে না শুধু লুটে ব্যস্ত। সমাজের দরিদ্র জনগোষ্টীর খবর না নিয়ে উল্টো এম, পিদের ৭৫০০০/= টাকা করে মোবাইল কেনার জন্য বরাদ্ধ দিয়েছে তিনি এর তীব্র নিন্দা জানান এবং অবিলম্বে প্রত্যাহার করে গরীব ও অসহায়দের জন্য বরাদ্দের আহবান জানান। তিনি আজ ২৩ মে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুরিং থানার উদ্দ্যেগে চট্টগ্রাম ১০ সংসদীয় আসনের গরীব ও অসহায়দের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় উপরোক্ত কথা বলেন। ডবলমুরিং থানা জামায়াতের সাংগঠনিক সেক্রেটারি মোস্তাক আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ডবলমুরিং থানা জামায়াত নেতা মাওলানা অলিউর রহমান, মোহাম্মদ হাসান, হাবিবুর রহমান ও জাকির হোসাইন। পরে প্রধান অতিথি ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেন।

দেশের জন সমষ্টির এক বিরাট অংশ নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে

বাংলাদেশ বার্তাঃ এ দেশের শতকরা পঁচানব্বই জন নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। দেশের জন সমষ্টির এত বিরাট অংশ যদি অসৎ চরিত্রের হয়ে পড়ে তা হলে জাতির সমষ্টিগত স্বভাব চরিত্র কেমন করে ঠিক থাকতে পারে? এই জন্যই তো হিন্দু-মুসলমান ও শিখ জাতির কাছে সত্যবাদিতা, সুবিচার ও সততার কোন দামই এখন নেই। সত্যপন্থী, সৎ এবং ভদ্রস্বভাব বিশিষ্ট লোকেরা তাদের ভিতর কোনঠাসা ও দুর্বল হয়ে রয়েছে। মন্দ কাজে বাধা দান এবং ভাল কাজ করার জন্য উপদেশ দেয়া তাদের সমাজে অসহনীয় অপরাধে পরিণত হয়েছে, সত্য ও ন্যায় কথা শুনতে তারা প্রস্তুত নয়।
তাদের মধ্যে একটি জাতিই এমন লোকদেরকে পছন্দ করে যারা তার সীমাহীন লোভ লালসা ও স্বার্থের পক্ষে ওকালতি করে এবং অন্যের বিরুদ্ধে তাকে উত্তেজিত করে তার ন্যায় ও অন্যায় সবরকম স্বার্থোদ্ধারের জন্য সংগ্রাম করতে প্রস্তুত হয়। এজন্যই এরা নিজেদের ভিতর থেকে বেছে বেছে সবচেয়ে দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে নিজেদের নেতা নির্বাচন করেছে। তারা নিজেদের জঘন্যতম অপরাধীদেরকে খুঁজে বের করে তাদেরকে নিজেদের নেতৃত্ব পদে বরণ করে নিয়েছে। তাদের সমাজে সবচেয়ে দুশ্চরিত্র, দূর্নীতিবাজ, বিবেকহীন লোকেরা তাদের মুখপাত্র সেজে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অত্যাধিক বরণীয় হয়েছে। অতঃপর এসব লোকেরা নিজ নিজ পথভ্রষ্ট জাতিকে নিয়ে ধ্বংসের পথে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। তারা জাতির পরস্পর বিরোধী আশা-আকাংখাকে কোন ইনসাফের কেন্দ্রবিন্দুতে একত্রিত না করে তাকে এতখানি বাড়িয়ে দিয়েছে যে, তা অবশেষে সংঘর্ষের সীমান্তে পৌঁছেছে। তারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘর্ষে ক্রোধ, ঘৃণা, শত্রুতার বিষ মিশিয়ে একে নিত্য অগ্রবর্তী করেছে। বহু বছর ধরে নিজেদের প্রভাবাধীন জাতিগুলোকে উত্তেজনামূলক বক্তৃতা ও রচনার ইনজেকশন দিয়ে এতখানি উত্তেজিত করে তুলেছে যে, এখন উত্তেৎনাবশতঃ কুকুর ও হিংস্র পশুর মত লড়াই করবার জন্য খড়গ উঁচিয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসাধারণ ও শিক্ষিত সমাজের মনকে পৈশাচিক আবেগ ও উচ্ছাসে দূর্গন্ধময় এবং অন্ধ শত্রুতার চুল্লীবানিয়ে ফেলেছে। আপনাদের সামনে এখন যে তুফান প্রবাহিত হচ্ছে তা মোটেই সাময়িক ও আকস্মিক নয়। বহুদিন থেকে বিকৃতির যেসব বেশুমার কার্যকারণ আমাদের মধ্যে সক্রিয় রয়েছে এ হলো তারই স্বাভাবিক পরণতি। এটা একবার দেখা দিয়েই ক্ষান্ত হবে না; বরং যতদিন পর্যন্ত এসব কার্যকারণ সক্রিয় থাকবে, ততদিন এ বিকৃতি ক্রমশ বাড়তে থাকবে। এটা একটা শস্যপূর্ণ ক্ষেতের মত। বহু বছরের বীজ বপন ও জল সেচের পর এ ফসল খাবার উপযুক্ত হয়েছে। এখন আপনাকে এবং আপনার বংশধরদেরকে কতদিন পর্যন্ত এ ফসল কাটতে হবে তা বলা যায় না।ভাংগা ও গডা বইটিতে মহান লিখকের নিচের কথা গুলো আরা গুরুত্বপুরণ।

সংশোধনের জন্য সৎলোকদের সংগঠনের সাথে সাথে ভাংগা ও গড়া সম্পর্কে একটা সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। ভাংগা কি তা আমাদের ভাল করে বুঝে নিতে হবে। তাহলেই ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা যাবে। এমনিভাবে গড়া কি তাও জানতে হবে। তা হলেই তার বাস্তবায়নের জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করা যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ এখানে নেই। সংক্ষেপে এ দুটোর আলোচনা পেশ করব। মানব জীবনে যে সব কারণে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয় সেগুলোকে আমরা চার ভাগে ভাগ করতে পারি। 
প্রথম হচ্ছে, আল্লাহকে ভয় না করা। এটা দুনিয়ার সব রকমের অন্যায়, অবিচার, নিষ্ঠুরতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও যাবতীয় দুর্নীতির মুল। 
দ্বিতীয় হচ্ছে, আল্লাহর বিধান মেনে না চলা। এটিই মানুষের জন্য কোন ব্যাপারেই অনুসরণ যোগ্য স্থায়ী নৈতিক বিধান অবশিষ্ট রাখেনি। এরি বদৌলতে ব্যক্তি, দল ও জাতির কর্মধারা স্বার্থপুজা ভোগ বিলাস ও কামনা লালসার দাসত্বের অধীন হয়ে গিয়েছে। এরি ফলে তারা নিজেদের উদ্দ্যেশ্যের মধ্যে বৈধ ও অবৈধ পার্থক্য করে না এবং উদ্দেশ্য হাসিল করবার জন্য যে কোন রকমের অসদুপায় ও দুর্নীতি অবলম্বন করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করে না। 
তৃতীয় হচ্ছে , স্বার্থপরতা। এরি কারনে মানুষ পরস্পরের অধিকার হরণ করে। এমনকি ব্যাপক ভাবে খান্দানী ও জাতীয় আভিজাত্য এবং শ্রেণী বিদ্বেষের সৃষ্টি হয়। এবং এথেকে নানান ফেতনা ও বিপর্যয়ের উদ্ভব হয়। 
চতুর্থ হচ্ছে, জড়তা ও বিপথগামীতা, এর দরুন আল্লাহ প্রদত্ব শক্তি ও ক্ষমতা হয়তো কোন কাজে ব্যবহারই করে না কিংবা তাঁর অপব্যবহার করে অথবা আল্লাহ প্রদত্ত উপায় উপকরণকে কাজে লাগায়না কিংবা অকাজে লাগায়।
অপরদিকে মানুষের জীবন যে সব উপায়ে সুন্দরভাবে গড়ে উঠে তাকে ও চার ভাগ করা যায়। 
প্রথম হচ্ছে, আল্লাহ ভীতি
দ্বিতীয় হচ্ছে, আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা।
তৃতীয় হচ্ছে, মানবতার ব্যবস্থা, এতে ব্যক্তিগত, জাতীয়, বংশীয় সাম্প্রদায়িক স্বার্থপরতার পরিবর্তে সমস্ত মানুষের সমান মর্যাদা ও সমান অধিকার থাকবে। এর ভেতর অযথা বৈষম্য, উচু-নীচু, অপবিত্র ধারনা, কৃত্রিম গোড়ামী ও পক্ষপাতিত্ব থাকবে না। এতে কতক লোকের জন্য কৃত্রিম বিধি নিষেধ ও বাঁধা বিপত্তি থাকবেনা। এতে সবারই উন্নতি ও প্রগতির সুযোগ সবিধা থাকবে। দুনিয়ার সব মানুষ সমানভাবে মিলে মিশে থাকতে পারবে, এমন ব্যাপক হতে হবে এ ব্যবস্থা। 
চতুর্থ হচ্ছে, সৎকাজ। এর মানে হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ও উপায় উপাদানকে পূর্ণরূপে ও সঠিকভাবে কাজে লাগানো।

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১৮

চীনে রোজা পালনে নিষেধাজ্ঞা


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ চীনের মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং অঞ্চলে রোজা পালনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দেশটির সরকার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার চীনের বিভিন্ন সরকারি ওয়েবসাইটে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
সরকারি ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সরকারি চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা রোজা পালন করতে পারবেন না৷ পাশাপাশি মুসলিম মালিকদের রেস্তোরাঁ খোলা রাখার নির্দেশও দেয়া হয়েছে৷
শিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিমরা বসবাস করেন। গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নিহত হয়েছে শত শত মানুষ।
শিনজিয়াং অঞ্চলে রোজা পালনে নিষেধাজ্ঞা এই প্রথম নয়। গত কয়েক বছর ধরেই ওই অঞ্চলে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে চীন সরকার। আর এর ফলে জাতিগত উত্তেজনা বাড়বে বলে ধারণা করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১৮

প্রিয় শিক্ষকের বদলি বন্ধ হওয়ায় পুরো রংপুর যেন গতকাল আনন্দে ভেসেছে

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ তিনি এমনই একজন শিক্ষক। যার ট্রান্সফারের খবর শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের মনের আকাশে জমে মেঘ, কর্মকর্তা কর্মচারীরা আড়ালে ফেলেন চোখের জল। যেন এক রুপকথার গল্প। শোনার পরে ঘিরে থাকবে একরাশ মুগ্ধতা।
রংপুরের দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজের লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ নাজমুর রহমান। যিনি গোটা প্রতিষ্ঠানটি সাজিয়েছেন রুপকথার মতো। যিনি অধ্যক্ষ হয়েও ক্যান্টিনে গিয়ে সিঙ্গারা বিক্রি করতে পারেন, মাঠে নেমে পড়তে পারেন বাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলতে কিংবা অনুষ্ঠানে আয়োজনে র‍্যালিতে রিকশা ভ্যান নিজেই চালিয়ে যেতে পারেন। এমনই একজন অভিভাবকের যখন ট্রান্সফারের সংবাদ আসে স্বাভাবিকভাবেই চোখের জল কেউ ধরে রাখতে পারেন না। তাহলে ছোট ছোট শিশুরা কীভাবে পারবে। বিদায়ের খবর শুনে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে শিক্ষার্থীরা। অফিস কক্ষে এসে ঘিরে ধরে প্রিয় স্যারকে। কিন্তু উপায় কী? তাহলে কী এতোগুলো মানুষের ভালোবাসা, চোখের জল বৃথা হয়ে যাবে? শেষ পর্যন্ত বৃথা যায়নি। তার আগে আসুন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ নাজমুর রহমানের আবেগ ঘন ফেসবুক পোস্টটি পড়ি। যেটি তিনি নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছেন।
তিনি ভালোবাসাকে শিরোনাম করেছেন 'সর্বনাশা ভালবাসার অরুনিমায়...' তিনি লিখেছেন তা হুবহু এমন ,
এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল।'জন্মিলে মরিতে হইবে', এটাই তো চিরন্তন সত্য। পুরনো প্রাণের প্রস্থান না হলে কিভাবে নতুনের আগমন ঘটবে। পেশাগত দিকে আমি একজন আর্মি অফিসার, আমার কৈশোর পেরুনো দিনগুলো থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ আর রীতিনীতির মাঝে অতিবাহিত হতে থাকে সময়। এভাবেই একে একে যৌবন, মধ্যবয়স পেরিয়ে বেলাশেষের প্রস্তুতি গ্রহণকালে হঠাৎ পোস্টিং হয়, দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল এন্ড কলেজ, রংপুর এর অধ্যক্ষ হিসেবে। পোস্টিং অর্ডার শোনার সাথে সাথে মনটা অনিশ্চয়তায় কেঁপে উঠল। খুবই চিন্তিত হলাম, আমি কেমন করে এই দায়িত্বটা পালন করব। এই পদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন জ্ঞান-তো আমার নেই। সেদিন আমার স্ত্রী আমার পাশে বসে পরম নির্ভরতার সাথে বলেছিল, পোস্টিংটা স্বাভাবিকভাবেই নাও। যারা তোমাকে পোস্টিং করেছেন নিশ্চয়ই ভাল কিছু চিন্তা করেই করেছেন। ওর কথা শোনার পর মন খারাপের রেশটা কেটে গেল।

সামরিক পেশায়, পেশাগত প্রয়োজনেই আমাদের কিছুটা রুথলেস হতে হয়। এখানে আমাদের শেখানো হয় প্রতিপক্ষের মৃত্যুকে স্বাগত জানাতে। এক বুলেট, এক শত্রু- এই মূলমন্ত্রে নিজেদের শাণিত করতে আমরা ফায়ারিং রেঞ্জে অনবরত গুলি ছুড়ি লক্ষ্যবস্তুর দিকে। কাল্পনিক শত্রুকে নানান আকৃতির বানিয়ে- দাঁড়ানো, বসা, শায়িত ভঙ্গিতে রুপ দিয়ে আমরা ছুড়তে থাকি বুলেট। পরিস্থিতি ও কৌশলের প্রয়োজনে আমরাও পরিবর্তন করি আমাদের অবস্থান- কখনও দাঁড়িয়ে, কখনও বসে, কখনও হাঁটু গেড়ে, কখনও শুয়ে ছুড়তে হয় গুলি। বছরের পর বছর চলে এমন প্রশিক্ষণ। মৃত্যু, আর্তচিৎকার, রক্তক্ষরণ এগুলো সামরিক জীবনের/যুদ্ধক্ষেত্রের নৈমিত্তিক ঘটনা। প্রতিপক্ষকে যত দ্রুত ঘায়েল করা যায়, ততই ত্বরান্বিত হয় কাংখিত বিজয়। এমন সব কাজের জগত থেকে হঠাৎ শিক্ষাঙ্গনে গিয়ে অধ্যক্ষ হিসেবে নতুন কাজ করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।
আমার নতুন দায়িত্বের কথা শুনে আমার কিছু বয়োবৃদ্ধ আত্মীয় বললেন, আর্মি-কি তোমাকে রিটায়ারমেন্টে পাঠিয়ে দিল? আমি হেসে বললাম, না, ওনারা হয়ত আমাকে দিয়ে শত্রু মারার চেয়ে মানুষ গড়ার কাজটা করাতে চাচ্ছেন।
রংপুরে এসে পৌঁছলাম, ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি তারিখে। আমাকে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষারত সামরিক গাড়ির চালককে বললাম,'আমাকে প্রথমে মিলেনিয়াম স্টারস স্কুলে নিয়ে যাবে।'
চালক বলল- 'স্যার, রাতে তো তেমন কিছুই দেখা যাবেনা।'
আমি মৃদু হেসে বললাম, 'তোমার কথাটা ঠিক, তারপরও আমাকে সেখানে নিয়ে যাও। কারণ, আমি আমার জন্য নির্ধারিত অফিসার্স মেসের কক্ষে ঢোকার আগে, সেই স্থানের মাটিকে স্পর্শ করতে চাই, যেখানে আমার সামনের কয়েকটি দিন জড়িয়ে থাকবে।'
রাত সাড়ে নয়টায় আমরা পৌঁছলাম আমার নতুন ঠিকানা- দি মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল ও কলেজের সীমানায়। জানুয়ারি মাসের শীতের রাত। কনকনে শীত। স্কুলের কর্তব্যরত নিরাপত্তা প্রহরী এসে জানতে চাইল পরিচয়। রাতের আঁধারে অস্পষ্ট স্কুল ভবনটির মতো আমিও ওর কাছে কিছুটা অস্পষ্ট থাকতে চাইলাম। বললাম, 'নতুন এসেছি রংপুরে, শুনলাম স্কুলটা ভাল, বাচ্চাদের ভর্তি নিয়ে চিন্তায় আছি, তাই একনজর এই স্কুলটা দেখতে এসেছি।'
নিরাপত্তা প্রহরী বলল- 'দিনের বেলা আসেন, ভাল করে দেখেন, স্যারদের সাথে কথা বলেন, স্যাররা দেখবেন ভর্তি করা যায় কিনা?'

ও তখনো জানেনা, তাঁর সাথে কথোপকথনরত এই লোকটিই সামনের দিনগুলোতে এই স্কুল ও কলেজের সকল কার্যক্রমের সাথে মিশে যাবেন তাদেরই একজন সহকর্মী হয়ে কিছুদিনের জন্য। গাড়ী বারান্দার পিলারটি স্পর্শ করে কাল্পনিক একটা অনুভূতির শিহরণ অনুভব করলাম। কিছুটা এদিক ওদিক উঁকি মেরে দেখলাম, ধীরে ধীরে হাটলাম, তারপর চললাম... অফিসার্স মেসের দিকে।
খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম, খেলার মাঠটি নানান ধরণের নির্মাণ সামগ্রীতে ভরপুর দেখে। শিশুর প্রথম চাহিদাই তো ছুটাছুটির একটু জায়গা...। প্রজাপতির মতো উড়তে পারা... ফড়িং এর লেজ আর পাখনা ধরে টানাটানি করা...ঘাসে আর মাটিতে লুটোপুটি খেয়ে জামা ময়লা করে বাসায় ফিরে মায়ের বকা খাওয়া...। শৈশবে একটুকরো রঙিন দিন পাওয়া ওদের অধিকার...। কারো দয়া নয়।
পরদিন স্কুলে এসে তৎকালীন প্রিন্সিপাল সাঈদ আহমেদ স্যারের সাথে দেখা করলাম। স্যার ও ভিপি ম্যাডাম আন্তরিকতা নিয়ে আলাপ করলেন। যেহেতু স্যার তখনও দায়িত্বে ছিলেন তাই আমি অনানুষ্ঠানিকভাবে স্কুলের বিভিন্ন অংশ ঘুরে ফিরে দেখছিলাম ও ধীরে ধীরে আমার মানসপটে আঁকতে শুরু করেছিলাম কল্পনার আলপনায় কিছু উচ্চাভিলাষী দৃশ্য। পড়াশোনার পাশাপাশি আমাদের শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠবে মানবিক গুণাবলি নিয়ে। খেলাধুলা করে মজবুত শারীরিক গঠন নিয়ে ওরা তৈরী হবে তেজোদীপ্ত নাগরিক হিসেবে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হবে আমাদের সোনামনিরা। ওরা জানবে সমাজে মাথা উঁচু করে বাচঁতে হলে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবলে হবেনা, ভাবতে হবে আমাদের চারপাশ নিয়ে। মানুষের কষ্টে চুপ করে থাকা যাবেনা। নৈতিকতা আর চারিত্রিক মূল্যবোধের আলোয় উদ্ভাসিত হতে হবে। মা-বাবা সহ অন্য সকলের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও দায়িত্ববোধ সম্পন্ন হতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
এগুলো কে করাবে ওদের? আমাকেই করতে হবে। এটাই আমার চ্যলেঞ্জ। প্রথমেই শুরু করি স্কুল গেট/প্রবেশ পথ থেকে, আমার 
কারণ- আমি মনে করতাম, এটা শিশুদের স্কুল। ওদের রাজত্ব। ওদের জন্যই আমরা আছি। আমাদের জন্য ওরা না। ওদের আগমনে জেগে উঠে যে ক্যাম্পাস, সেই ক্যম্পাসের বাকী সবাই তো ওদের আগমনের খুশিতে ওদের অভ্যর্থনা জানাবে, নাচবে, সুর করে গাইবে। শিশুরা যখন চলে যায়, পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে নেমে আসে যেন মৃত্যুপুরীর ছায়া।আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়। আমি অধীর হয়ে থাকি আর একটি সকালের। ওদের আসার প্রতিক্ষায়। ওদের কলকাকলী যেন এক তীব্র সঞ্জীবণী শক্তি।

সোনামনিদের সাথে আসসালামু আলাইকুম, গুড মর্নিং, ওয়েলকাম টু ইওর লাভিং স্কুল' বলে।
শুরু করেছিলাম- একটি শিশুবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে পড়াশোনার কার্যক্রম, ক্লিন এন্ড গ্রিন প্রোগ্রাম, একটি খেলার মাঠ পাওয়ার চেষ্টা, একটি সুন্দর লাইব্রেরি-যেখানে অকারণেও যেতে মন চাইবে, কমন রুম, দৃষ্টিনন্দন বাগান, পানির ছুটে চলার শব্দময় ঝরণা, একুয়ারিয়াম, অর্কিড ও ক্যাক্টাস গার্ডেন, এগ্রিকালচার পার্ক তৈরি। প্রতিটি কাজের পেছনে ছিল সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য।
রাতের পর রাত ছুটে গিয়েছি শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বাড়িতে। জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে গিয়েছি। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গিয়েছি। কর্দমাক্ত পথে স্যন্ডেল খুলে, প্যাণ্ট গুটিয়ে হাজির হয়েছি আমার তারাদের বাসায়। দেরি করলে তো চলবেনা। ওদের সমস্যাগুলো জেনে সমাধানের পথ দেখিয়ে দিতে হবে। কখনও হাতে থাকত মার্কশীট। ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হত। আমার স্ত্রী অসুস্থ অবস্থায় কখনও কখনও বলতো- 'ভুলে যেওনা তোমারও একটি পরিবার আছে”। আমি চুপিচুপি সৃষ্টিকর্তাকে বলেছি- 'হে প্রভূ, তুমিই সহায়...'
বারবার আমার শিক্ষকদের বলেছি- 'আপনি কত বেশি জানেন, তা, আপনার শিক্ষার্থীদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি তাঁর ব্যাপারে কত বেশি যত্নশীল সেটা। তাই আমাদের সকল কাজেই যেন যত্নটাই মুখ্য হয়।'
দিন গড়িয়ে যেতে থাকে। আমিও ছুটতে থাকি আমার ভালবাসার প্রজাপতি, ফুল-পাখি আর তারাদের সাথে। কখনও টিফিন পিরিয়ডে ক্লাসে বসে ওদের সাথে চুটিয়ে গল্প, ভীড় সামলাতে কখনও ক্যন্টিনে বিক্রি করতে থাকি সিঙ্গারা, ছমুচা, কখনও মাঠে গিয়ে কানামাছি, মাংকি মাংকি খেলা, বাগানের গাছের সাথে পরিচয়, শিশুদের দলবেঁধে রিকশা চড়ানো... সবাই মিলে ফ্লোরে বসে খাতা চেক করা...।
ওদের বিস্ময় ভরা চোখ, পিটপিট করে তাকানো, আর নরম কণ্ঠে উচ্চারিত- 'তুমি থাকলে, আমাদের স্কুলে আসতে ভাল লাগে.....
কথাগুলো আমাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়...ওদের ভালোবাসার কাছে আমি হেরে যাই। এই হেরে যাওয়া যে কি মজার.........আর হৃদয়স্পর্শী...তা বোঝাতে পারবোনা। আর এই পথে চলতে গিয়ে আমি অনুভব করি এক ভয়ংকর অদৃশ্য মায়ার জাল আমাকে ঘিরে ফেলছে, আমি চিৎকার করে উঠি...... কিন্তু কানে যেন শুনতে পাই সেই চিৎকার সুর হয়ে বাজছে, আমি হারিয়ে যাই এক স্বপ্নময় ভুবনে।
যে আকাশসম ভালোবাসায় আমাকে আমার ছাত্রছাত্রীরা জড়িয়েছে তা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ ছিল উপরের অংশে বলা গুণাবলী ওদের মধ্যে সৃষ্টি করার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া ...। আমি এজন্য দায়বদ্ধ ছিলাম......
আমার অফিসে এসে শিশুরা কাঁদতে কাঁদতে বলে গেল আপনি চলে গেলে আমরা স্কুলে আসবনা। আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম, স্কুলে না আসলে তোমরা বড় হতে পারবেনা। সাথে সাথে চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বললো, 'আমরা বড় হবনা। আমাদের বড় হওয়া লাগবেনা...।'
কি করুণ সেই দৃশ্য! আমি অসহায়ের মতো জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, হে প্রভূ, তুমি ভালোবাসাকে কেন এত তীব্র করে সৃষ্টি করেছ?
আজ বিদায়ের ঘণ্টা শুনে আমার শিশুগুলো যখন কাঁদছে, আমি দৃঢ় কণ্ঠে ওদের বোঝানোর চেষ্টা করছি পুরানোর প্রস্থান আর নতুনের আগমনই জগতের নিয়ম। এটাই মানতে হবে।
কিন্তু আমার হৃদয়? সেখানে এক প্রলয়ংকরী ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের উপরের পৃষ্টে শান্ত স্রোতের আড়ালে গভীরে সৃষ্ট ভুমিকম্প বা সুনামি অনেক পর্যটকের কাছে দৃশ্যমাণ হয়ত হয়না। কিন্তু আমি কি আমার নিজের কাছে সেই সত্য কে আড়াল করতে পারি। হয়ত একেই বলে সর্বনাশা ভালোবাসা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ নাজমুর রহমানের বিদায়ের খবরে সোশ্যাল মিডিয়াতেও হইচই পড়ে যায়। বিশেষ করে অভিভাবক মহলে অমানিশার অন্ধকার জমা হয়। শিশুদের কান্নার ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গতকাল সোমবার তাঁর বদলির আদেশ স্থগিত করা হয়। সেনাবাহিনী হেডকোয়ার্টার থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ নাজমুর রহমানের বদলি আদেশ স্থগিত করে।
এই ঘটনার পর সকল মহলেই আনন্দের ফল্গুধারা বয়ে যায়। একজন অফিস সহকারী ফেসবুক হ্যান্ডেলে লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে, ছোট্ট সোনামণিদের চোখের পানি, সবার দোয়া বৃথা যায়নি। স্যার এর বদলি বাতিল হয়েছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে স্যার এর প্রিয় মুখখানা আবার প্রতিদিন দেখতে পাব। আল্লাহ আপনাকে সুস্থ রাখুন। আমিন।
একজন অভিভাবক নিজের ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, পড়াশোনা শেষ করেছি অনেক আগেই, অধ্যক্ষ মানেই ভয়ের জায়গা সে ধারণা এসময় এসে যে ভেঙে দিল আমার মেয়েদের প্রাণপ্রিয় অধ্যক্ষ নাজমুর স্যার। তার পরিবারের সাথে কিছু স্মৃতি বিজড়িত সময় অতিবাহিত করলাম, স্যার আপনি যেখানেই থাকবেন সকলের মাঝে নিজেকে স্মরণীয় করে রাখবেন, এই দোয়া করি।
আজিজুল হক নামের একজন লিখেছেন, সত্যি আপনি সুপার পাওয়ার ছাড়া সুপারম্যান। আপনার সাথে সবস্ময় সৃষ্টিকর্তার দোয়া থাকবে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমার সুপারম্যানের মতো একজন ভাই রয়েছে।
প্রিয় শিক্ষকের বদলি বন্ধ হওয়ায় পুরো রংপুর যেন গতকাল আনন্দে ভেসেছে।
সৌজন্যেঃ শিক্ষাবার্তা ডট কম

জেলাবাসীকে জামায়াতের মাহে রামাদানের শুভেচ্ছা


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সমাগত মাহে রামাদানের পবিত্রতা রক্ষা ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধের আহবান এবং জেলাবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কক্্সবাজার জেলা আমীর মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, সেক্রেটারি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিমুল্লাহ। বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেছেন, রাহমাত, বারকাত ও মাগফিরাতের সাওগাত নিয়ে পবিত্র মাহে রামাদান আবারও আমাদের মাঝে সমাগত। রামাদানে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর জন্য অবারিত হয় রাহমাত ও ক্ষমা। খোলে যায় জান্নাতের দ্বার শৃংখলিত করা হয় শয়তানকে। আতœশুদ্ধি, আতœগঠন ও সংযম প্রদর্শনের শিক্ষার সর্বোত্তম সময় মাহে রামাদান। তাই মহানবী স. বলেছেন-“যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে রামাদান মাসের সিয়াম পালন করবে মহান আল্লাহ তার পূর্বাবর সকল পাপ মার্জনা করে দিবেন”। এই মাসে রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইতুল ক্বদর আর সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী বদর যুদ্ধের ইতিহাস। তাই আমাদের উচিত কুরআন নাজিলের মাস হিসেবে বুঝে বুঝে কুরআন পড়ে কুরআনের শিক্ষা ধারণ করে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় আতœনিয়োগ করা। জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে ধর্ণা দেয়া।
নেতৃদ্বয় বলেন, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে আজ ইসলামী তাহজিব-তামাদ্দুন বিরোধী কর্মকান্ড বিস্তৃতি লাভ করছে। যার কারণে সমাজে ঘুষ, দুর্নীতি, ধর্ষণ, ইভটিজিং, খুন, রাহাজানি, সন্ত্রাস ও অসামাজিক কার্যকলাপ সীমাতিক্রম করছে। মানুষের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। এহেন সংকট উত্তরণে মহাগ্রন্থ কুরআনিক জ্ঞান অনুশীলন ও অনুকরণের কোন বিকল্প নেই। নেতৃদ্বয় আরো বলেন, সরকারের যথাযথ নজরদারির অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদ করে দ্রব্যমূল্য উর্ধ্বগতি করে রেখেছে। যার কারণে সাধারণ মানুষের মাহে রামাদানে পরিপূর্ণ শান্তি ও ¯^স্তির সাথে সিয়াম পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিরোধে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে সরকারের রোষানলের শিকার হয়ে কারাগারে আটক আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমদ ও আল্লামা দেলাওয়ার হোছাইন সাঈদীসহ আটককৃত সকল নেতাকর্মীর ঈদের আগেই মুক্তি দাবি করছি। রামাদানের পবিত্রতা রক্ষায় দিনের বেলা হোটেল রে¯েঁÍারা বন্ধ রাখার জন্য ব্যবসায়ী ভাইদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মদ, জুয়া, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা বন্ধ করার আহবান করছি। পাশাপাশি সকল শ্রেণি, পেশা ও মতের মানুষের নির্বিঘেœ, নিরাপদে ও ¯^স্তিতে রামাদানের সিয়াম পালনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বুধবার, ১৬ মে, ২০১৮

ইফতারের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে –

 বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক মে ১৬, ২০১৮;
প্রথমে লেবুর অথবা ডাবের পানি দিয়ে ইফতার শুরু করবেন। আর্টিফিশিয়াল রঙ যুক্ত পানীয়, সফট ড্রিঙ্ক একদমই পরিহার করবেন।
খেজুর (১-২ টি) এবং অন্যান্য ফল কলা, আম, শসা, গাজর, আপেল ইত্যাদি খেতে পারেন। অথবা সব ফল দিয়ে আর টক দই দিয়ে একটি সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন। এতে শরীরে প্রচুর শক্তি পাবেন এবং ভিটামিন ও মিনারেলস এর ঘাটতি দূর হবে।

এরপর আধা ঘন্টা বিরতি দিন, একবারে সব খাবার খাবেন না। মাগরিবের নামাযের পর খেতে পারেন অল্প মুড়ি, ২টা পিয়াজু, ১টা বেগুনি বা অন্য কোনো খাবার। আর সাথে একটু ছোলা খেয়ে নিবেন প্রচুর সালাদ সহকারে।
খাওয়ার পর সাথে সাথে পানি খাবেন না। অন্তত ২০ মিনিট পর পানি পান করুন। ভাজা পোড়া কিছু খেতে না চাইলে খেতে পারেন চিঁড়া ও দই, সাথে দিতে পারেন ফল।
রাতের খাবারের সম্ভাব্য ধরন হতে পারে –
ভাত বেশি না খেয়ে সবজি বেশি করে খান। রুটি খেলে আরও ভালো। আর সাথে থাকতে পারে ১ পিস মাছ অথবা মুরগির মাংস অথবা ১ টি ডিম । রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একটু গরম দুধ, লাচ্ছি, অথবা একটু পনির খেতে পারেন।
সেহরি যেমন হতে পারে-
সেহরিতে অতিরিক্ত তেল, লবন ও মশলাদার খাবার পরিহার করা উচিত। এগুলো দেহে পানি স্বল্পতা প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয়। খাওয়া যেতে পারে ফল, দুধ বা টক দই, সবজি সিদ্ধ, সবজি সালাদ, অল্প ভাত অথবা পাতলা রুটি, ১-২ পিস মাছ অথবা মুরগির মাংস অথবা ১ টি ডিম এবং ডাল। আর পানি খেয়ে নেবেন প্রয়োজনমত।
 আরো কিছু টিপস-
ইফতার এবং সেহরি র মাঝখানে কম পক্ষে ৩ থেকে ৫ লিটার পানি খাবেন। এখন গরমকাল । তাই ঘামের কারনে শরীরে পানি স্বল্পতা দেখা দেয়। ডাবের পানি খেতে পারেন। প্রতিদিনের ইফতারে মৌসুমি ফল রাখার চেষ্টা করবেন। অতিরিক্ত চিনি যুক্ত শরবত পরিহার করা উচিত ।
এমন দিনে দই খুব উপকারী এবং প্রচুর শক্তি দেয়। তাই ইফতারে ভাজা খাবারের বদলে দই-চিঁড়া, লাচ্ছি রাখতে পারেন।
ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার চা-কফি, কোমল পানীয় ইত্যাদি যথা সম্ভব এড়িয়ে চলবেন।
খাবারে অতিরিক্ত মসলা পরিহার করুন।
প্রতিদিন খাবারের মেনুতে রঙ্গিন শব্জি ও ফল রাখবেন। যেমনঃ কুমড়া, গাজর, পাকা পেঁপে, কামরাঙ্গা,মালটা, আপেল, কমলা লেবু ইত্যাদি।
অতিরিক্ত গরমের কারণে শরীর থেকে ঘামের সাথে প্রচুর পটাশিয়ামও বের হয়ে যায়। তাই খাবারের তালিকায় ডাল, মাছ, মাংস অবশ্যই রাখবেন।
(সংগৃহীত)

গাজায় নির্মম গণহত্যার প্রতিরোধে বিশ্ব বিবেক সোচ্চার করার লক্ষ্যে বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ এর মানববন্ধন

বাংলাদেশ বার্তাঃ ইসরাইল কর্তৃক গাজা এবং দুনিয়ার সব গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিরোধে বিশ্ব বিবেক স্বোচ্চার করার লক্ষ্যে বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব, বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে ঢাকা প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গনে আজ এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব সুন্নী আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লবের প্রবর্তক ইমাম হায়াত এর দিক নির্দেশনায় অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ত্ব করেন জনাব আরেফ সারতাজ।
সমাবেশে বক্তাগণ বলেন, সব কিছুর উর্ধ্বে জীবন ও মানবতা এবং জীবন ও মানবতা রক্ষাই সর্বোচ্চ এবাদত। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন ধর্মের নামে অধর্ম সন্ত্রাসবাদ এবং বস্তুবাদী জাতীয়তাবাদী উগ্রবাদী একক গোষ্ঠিবাদী স্বৈরদস্যুতান্ত্রিক অপরাজনীতিই দুনিয়ার সকল খুন-জুলুম-পাশবতার মূল কারণ ।
বক্তাগণ বলেন, মানবতা সব প্রকৃত ধর্মের অলংঘনীয় মূল্যবোধ যা রাজনৈতিক সীমান্ত-ভাষা-গোত্র-বর্ণের উর্ধ্বে এক অখন্ড বিবেকবোধ এবং যে কোন অজুহাতেই মানবতার সংকটে নির্বিকার থাকা অমানুষিকতা। তাঁরা বলেন, জীবন ও মানবতার বিরূদ্ধে কোন ধর্ম হয় না, ধর্মের ছদ্মনামে অধর্ম হয়।
বক্তাগন বলেন, রাজনীতির লক্ষ্য হতে হবে একমাত্র মানবতা এবং যে নামেই হোক মানবতা বিরোধী সকল রাজনীতিই পরিত্যাজ্য অপরাজনীতি। গাজা, সিরিয়া, আরাকান, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন এবং দুনিয়ার সর্বত্র খুন-জুলুম-ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্ব বিবেককে সোচ্চার হওয়ার জন্য তাঁরা আবেদন জানিয়ে বলেন, রাজনৈতিক সীমান্তের কারণে মানবিক ভ্রাতৃত্ব ও দায়িত্ব অস্বীকার করা মানবতাই অস্বীকার করা।
বক্তাগণ দুনিয়াব্যাপী চলমান ক্রমবর্ধমান খুন-সন্ত্রাস-অরাজকতা-যুদ্ধ বিগ্রহ-ধ্বংসযজ্ঞের পিছনে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও মূল্যবোধের বিলুপ্তি এবং বিভিন্ন ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদের ভয়াবহ রাজনৈতিক উত্থানকে দায়ী করে সকলকে অবিলম্বে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, বিভিন্ন ধর্মের নামে অধর্ম উগ্রবাদের সাথে ভাষা-গোত্র-ভৌগলিকতা-বর্ণ কেন্দ্রিক বিভিন্ন উগ্র জাতীয়তাবাদের প্রাদুর্ভাব ও তাদের একক গোষ্ঠিবাদী অপরাজনীতিও মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামান্তর।
বক্তাগণ বলেন, মানবতার মুক্তি সাধনায় সত্য ও মানবতার নিজস্ব পূর্ণাংগ পথে শান্তিময় নিরাপদ জীবন ও বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে একক গোষ্ঠিবাদি স্বৈরদস্যুতামুক্ত সর্বজনীন মানবতার রাষ্ট্রব্যবস্থা ও সর্বজনীন মানবাধিকার ভিত্তিক মুক্ত জীবনের অখন্ড বিশ্বব্যবস্থা ব্যতীত মানবতা বিধ্বংসী অপরাজনীতির বিনাশী গ্রাস থেকে মুক্তি নেই।

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১৮

ব্রিটেন, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে রমজান শুরু বৃহস্পতিবার থেকে

জাকির হোসেন কয়েছ: সৌদি আরবে পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এ কারণে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং ব্রিটেন ও ইউরোপে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে ১৭ মে বৃহস্পতিবার থেকে। বুধবার রাতে হবে প্রথম তারাবিহ। সৌদি সরকারের ঘোষনা মতে মাক্কা ও মাদীনায় বুধবার প্রথম তারাবীহ হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, ব্রিটেন, ইউরোপ ও আমেরিকার মুসলিম কমিউনিটি রোজা শুরু করে থাকেন। ইস্ট লন্ডন মসজিদের ওয়েব সাইডে এ সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেয়া হয়েছে।

ইউরোপের মুসলিমরা গত কয়েক বছর যাবত দীর্ঘতম রোজা রেখে আসছেন। এবারো প্রায় সমান সময় রোজা রাখতে হবে।
ব্রিটেনে গত কয়েকদিন যাবত প্রচন্ড গরম পড়েছে। প্রথম রমজানেও গরম থাকবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে রমজানে স্কুল খোলা থাকায় মুসলিম অভিভাবকদের বাড়তি কস্ট স্বীকার করতে হবে। রমজান মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রোজা রাখা শুরু হয় বলে ইংরেজী সাল গণনায় এটা প্রতি বছর ১০-১২ দিন এগিয়ে আসে। গ্রীষ্মকালে যুক্তরাজ্য তথা ইউরোপের অনেক দেশে দিনের আলো থাকে ১৯ ঘন্টারও বেশি।
ফলে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোজা থাকতে গেলে মুসলিমদের প্রায় ১৯ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। অবশ্য গত কয়েক বছর যাবত ব্রিটেন তথা ইউরোপের মুসলিমদের লম্বা রোজা রাখতে হয়েছে।

চন্দ্রমাস গণনা অনুযায়ী প্রতি বছর আরবী বছরের ৯ম মাসে রমজান আসে। এই মাসে সিয়াম সাধনা করা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় রোজা পালন করে।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও রমজানে মুসলিমদের সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে নানা আয়োজন হচ্ছে। মসজিদগুলোতে ইফতার, তারাবি ও বিশেষ বয়ানের ব্যবস্থা থাকছে।
এবার ইস্ট লন্ডন মসজিদে প্রথম তারাবির নামাজ হবে রাত ১০:৪৫ মিনিটে। বৃহস্পতিবার ইফতার হবে (লন্ডন সময়) সন্ধ্যা ৮টা ৫২মিনিটে।

এদিকে সৌদি আরব ও কাতারে আজ বৃহস্পতিবার পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। এ কারণে ওই দুটি দেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আগামী ২৭ মে শনিবার থেকে রোজা শুরু হচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস ও আলজাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে। সাধারণত সৌদি আরবের একদিন পর বাংলাদেশের আকাশে চাঁদ দেখা যায়। সেই হিসেবে আগামী রোববার বাংলাদেশে পবিত্র রোজা শুরু হচ্ছে।
কাতার সরকারের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। কাল দেখা যাবে। আর এ কারণে রমজান মাস শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার।
হিজরি সনের রমজান পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য করে থাকে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়। মাসজুড়ে রোজা রাখার পর উদযাপন করে ঈদুল ফিতর।

বিশ্বমিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধার শাহাদাৎ বরণ...

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ২৯ বছর বয়সী ফাদি আবু সালাহ ফিলিস্তিনের গাজা নিবাসী। ২০১৪ সালে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধে দু পা হারান।
গতকাল নিজের হুইল চেয়ারে করে সিমান্ত মার্চ কর্মসুচীতে অংশ নিতে গাজা ইসরাইল সিমান্তে ছুটেযান। ইসরাইলী জানোয়ার সেনারা পঙ্গু মানুষটিকেও ছাড়দেননি। তারা দুর নিয়ন্ত্রীন স্নাইপার রাইফেল দিয়ে এই ফাদি আবু সালাহ কে শহীদ করেছে।
নিজের মাতৃভুমির অধিকার রক্ষায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে শতাব্দির পর শতাব্দি কাল ধরে মুসলমান জাতিকে অনুপ্রেরননা যুগাবে এই পঙ্গু ফিলিস্তিনি ফাদি আবু সালাহ এর বিপ্লব...

আগামীকাল সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিত ঘোষণা

বাংলাদেশ বার্তাঃ মে ১৫, ২০১৮’ ইসরাইলী সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ৫৮ জন মুসলমান নিহত ও দুই সহস্রাধিক আহত হওয়ার নৃশংস বর্বর ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ
গাজায় নিজেদের ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে এবং পবিত্র জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনী মুসলমানদের উপর ইসরাইলী সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে ৫৮ জন মুসলমান নিহত ও দুই সহস্রাধিক আহত হওয়ার নৃশংস বর্বর ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়ে আগামীকাল ১৬ মে সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ. ন. ম. শামসুল ইসলাম আজ ১৫ মে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের উপর ইসরাইলী সৈন্যরা নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ৫৮ জনকে হত্যা ও দুই সহস্রাধিক মুসলমানকে আহত করার ঘটনা নিঃসন্দেহে বর্বর গণহত্যা। ফিলিস্তিনে ইসরাইলীদের গণহত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি শান্তিকামী বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
ফিলিস্তিনী মুসলমানদের তীব্র প্রতিবাদ এবং বিশ্ব জনমতকে বেমালুম উপেক্ষা করে পবিত্র জেরুজালেমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার দূতাবাস স্থানান্তর করে তারা আন্তর্জাতিক রীতি-নীতির প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, তারা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানোর ব্যাপারে ইসরাইলকে মদদ যোগাচ্ছে। তাদের এ ন্যক্কারজনক ভূমিকায় গোটা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ হতবাক হয়েছে।
গত ১৪ মে ইসরাইলী সেনাবাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছে এরূপ ঘটনা ২০১৪ সালের পর আর ঘটেনি। এ ঘটনায় জাতিসংঘ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ওআইসি ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো সত্ত্বেও ইসরাইল গণহত্যা বন্ধ করছে না। দখলদার ইসরাইলীদের নৃশংসতা ও বর্বরতা সকল সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের মজলুম মুসলমানদের উপর ইসরাইলীদের গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমি জাতিসংঘ, ওআইসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ, শান্তিকামী রাষ্ট্র ও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।

ফিলিস্তিনে ইসরাইলীদের গণহত্যার প্রতিবাদে আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগামীকাল ১৬ মে বুধবার সারা দেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঘোষিত এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা সংগঠন ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।”

রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে শ্রমিকদের অধিকার নস্যাতের ব্যবস্থা করছে

বাংলাদেশ বার্তাঃ ১২ মে সকালে রাজধানী ঢাকার মীরপুরে বাংলাদেশ রিক্সা শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের বার্ষিক সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর হাসান রাজু, কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক জনাব আবুল হাসেমসহ ৪০ জন নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান আজ ১২ মে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও বাংলাদেশ রিক্সা শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশন নামক সংগঠন দুইটি নিবন্ধনকৃত শ্রমিক সংগঠন। শ্রমিকদের কল্যাণের জন্যই এই সংগঠন দুইটি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হল বাংলাদেশ রিক্সা শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের বার্ষিক সম্মেলন থেকে কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে সরকার আবারও প্রমাণ করল যে, তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোন চিন্তাও তাদের মাথায় নেই। জনবিচ্ছিন্ন এ সরকার শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদেরকে গ্রেফতার করে শ্রমিকদের অধিকার নস্যাতের ব্যবস্থা করছে।

আমি সরকারের এহেন স্বৈরাচারী আচরণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত শ্রমিক নেতা ও কর্মীদেরকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শ্রমিক সমাজ জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের এহেন জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, ইনশাআল্লাহ।”

শনিবার, ১২ মে, ২০১৮

শপথ নিলেন ড. মাহাথির মোহাম্মদ;


বাংলfদেশ বার্তা ডেস্কঃ আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মালয়েশিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ। স্থানীয় সময় আজ বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৩০ মিনিটে শপথ নিয়েছেন তিনি। দেশটির রাজা সুলতান মুহাম্মদ তাঁর বাসভবন ইস্তানা নিগারাতে এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

দেশটির সংবাদ মাধ্যমে নিউ স্ট্রেইটস টাইমস বলছে, ওই শপথ অনুষ্ঠানে চিফ সেক্রেটারি ড. আলী হামজা, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) মোহাম্মদ ফুজি হারুন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান রাজা মোহাম্মদ আফেন্দি রাজা মোহাম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৯৫৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল ফ্রন্টের পতন হলো। এক সময় এই জোট থেকেই প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন মাহাথির। বর্তমানে ওই জোটের নেতৃত্বে আছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।
সরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন জোট ‘অ্যালায়েন্স অব হোপ’ ২২২টির মধ্যে ১১৩টি আসন নিশ্চিত করেছে। আর ৭৯টি আসন পেয়েছে নাজিব রাজাকের জোট।
মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে মালয়েশিয়া অন্যতম ‘এশিয়ার টাইগারে’ পরিণত হয়। তবে তাঁর কর্তৃত্ববাদী নীতির অধীনে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে যেতে হয়।
মাহাথির দেশটির সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে বরখাস্ত করেছিলেন। বিষয়টি বেশ আলোচিত হয়। আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সমকামিতার মিথ্যা অভিযোগ ওঠে। ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের ডাক দিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সমকামিতার মিথ্যা মামলার দায়ে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়।
ওই আনোয়ার ইব্রাহিমই এখন মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম নেতা।

শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮

মাহাথির মোহাম্মাদের হাতে আনওয়ার ইবরাহীমের বিজয় এবং ইসলাম পন্থী “পাসের” স্থীতিশীল অবস্থা

বাংলাদেশ বার্তাঃ মাহাথির মোহাম্মাদের দাদা ইস্কান্দার ছিলেন ভারতের কেরালার মানুষ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি মালয়েশিয়া আসেন, এবং কেদাহ রাজপ্রাসাদে শিক্ষকতায় ব্যপৃত হন। এই সময়ে ১৮৮১ সনে ইস্কান্দার সাহেব জোহর প্রদেশের সিতি হাওয়াকে পেনাং এ বিয়ে করেন। সুন্দর সাজানো সংসারে মাহাথীরের বাবা মোহাম্মাদ ইস্কানদার বড় হয়ে ওঠেন এক দিকে ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে, অন্য দিকে রাজনীতি সচেতন হয়ে। তিনি হলেন পেনাং “আলোর সেতার” এর ইংরেজী স্কুল “মাক্তাব সুলতান আব্দুল হামিদ” এর প্রথম মালে হেড টিচার। তার জ্ঞান ও দক্ষতার জন্য কেদাহ রাজপরিবারের দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় ওয়ান তেম্পাওয়ান বিন্ত ওয়ান হানাফি তাকে বিয়ে করতে রাজি হন। এদের ই ঘরে ১৯২৫ সালের ১০ই জুলাই মাহাথির মোহাম্মাদের জন্ম হয়।
খেলাধুলাতে কিছু দূর্বলতা তার সেই ছোট বেলা থেকে থাকলেও তিনি প্রথম থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন, ও বেশ পরিশ্রমী ছিলেন। “সেবেরাং পেরাক মালে বয়েস” স্কুলে তার প্রাইমারী শিক্ষা শুরু হয়, এবং ইংরেজী খুব ভাল হওয়ার দরুন তিনি একটা ইংরেজি মিডীয়াম স্কুলে স্কলারশিপ সহ পড়ার সুযোগ পান। এই সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান মালয়েশিয়া দখল করে নিলে মাহাথিরের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, এবং যুদ্ধ চলা কালীন তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। ঐ তারুন্যে তাকে কফি বিক্রী ও ফ্রাইড কলা “পিসাং গরেং” বিক্রী করে জীবন চালাতে হয়। যুদ্ধ শেষে তিনি আবার পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেন, এবং ১৯৪৬ সনে সিনিয়র ক্যামব্রীজ এক্সামে অংশ গ্রহন করে মাধ্যমিক শিক্ষা সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হন। এর পরে মালয়েশিয়ার তদকালীন রাজ্য সিঙ্গাপুরের কিং এডওয়ার্ড সেভেন কলেজ অব মেডিসিনে ভর্তি হন, এবং অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে সেখান থেকে তিনি ডাক্তারী সনদ নিয়ে মালয়েশিয়ার তার এলাকায় ফিরে আসেন।
প্রথমে তিনি ডাক্তার হিসেবে সরকারী চাকুরিতে যোগদেন। পরে ছাত্র জীবন থেকে পরিচিত ডঃ সিতি হাসমাহ মোহাম্মাদ আলী কে ১৯৫৬ তে বিয়ে করে প্রাইভেট ক্লিনিক শুরু করেন এবং এর পর থেকে এলাকার ধনীদের কাতারে চলে আসেন।

তার রাজনীতি সব সময়ে জাতীয়তাবাদে ঋদ্ধ। মালেদের উন্নয়ন, মালয়েশিয়ার উন্নয়ন, মালয়েশিয়াকে জগতের উন্নতদের তালিকায় স্থাপন ইত্যাদিই ছিলো তার লেখা লেখি, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সফলতার দর্শন। তার রাজনৈতিক দর্শন শুরু হয় জাপানীদের থেকে দেশোদ্ধারের সময় নন মালেদের মালয়েশিয়ার সিটিজেনশিপ দেয়ার বিরোধিতার মাধ্যমে। তার পারিবারিক নাম ছিল ‘চে দেত’, এই ছদ্ম নামেই তিনি “দ্যা স্ট্রেইট টাইমে” অগ্নি উদগীরনী প্রবন্ধ লিখতেন। মালে ভাষাকে রাস্ট্র ভাষা ঘোষণা ও মালে ছাত্রদের মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ দানে কোটা পদ্ধতির দাবী ছিলো তার জনপ্রিয়তার আরকেটা কারণ। এইভাবে তিনি ১৯৫৯ সালে ইউনাইটেড মালেস ন্যাশনাল অরগাইনাইজেশানে (যাকে সংক্ষেপে ‘আমনো’ বলে) যুক্ত হন, এবং সম্মানিত আসন পান। মালে জাতির প্রতি তার জাতীয়তাবোধের ব্যাপারে সে সময়ের মালয়েশিয়ার স্থপতি ও আমনোর প্রেসিডেন্ট টুঙ্ক আব্দুর রহমানের সাথে মতপার্থক্য হলে ১৯৫৯ সালে জাতীয় নির্বাচনে তিনি রাগ করে অংশগ্রহন করেন নি।
১৯৬৪ সনে উভয়ের মতপার্থক্য সত্বেও তিনি “কোতা সেতার সেলাতান” সংসদীয় আসন থেকে মালয়েশিয়ান ইসলামি আন্দোলন ‘পাস’ এর প্রার্থী মোহাম্মাদ সারী আব্দুস শাকুরকে পরাজিত করে প্রথম এম পি হন। জুনিয়র এমপি হয়েও তিনি ছিলেন পার্লামেন্টে খুবই নামকরা সাংসদ। তার যুক্তির কাছে হার মেনে সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়া থেকে আলাদা করার ব্যাপারে জনমত তৈরি হয়। ১৯৬৯ এর নির্বাচনে তিনি তার আসনে “পাস” এর প্রার্থী ইউসুফ রাওয়ার কাছে পরাজিত হন। এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে মাহাথির চাইনিজদেরকে দায়ী করেন। এইভাবে চাইনিজদের সাথে মালেদের মারাত্মক দূরত্ব তৈরি হয়, ফলে ১৯৬৯ এর ১৩ই মে তে মালে-চাইনিজ রায়টে অনেক মানুষ হতাহত হয়। এই ধোঁয়াশার মাঝে তিনি টুঙ্ক আব্দুল রহমানের কাছে মালে স্বার্থ সংরক্ষণের গুরুত্ব দিয়ে একটা চিঠি লিখেন, যেটা পরবর্তিতে “খোলা চিঠি” রূপে জনগণের হাতে যায়। এখানে তিন আব্দুল রহমানকে পদত্যাগ করতে হুমকি দেন। ফলে তাকে আমনোর পদ হারাতে হয়, ও কারাগারে যেতে হয়। এই সময়ে তিনি “দ্যা মালে ডাইলেমা” বই লেখেন। যেখানে মালেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকারের জন্য সরকারী পলিসি নির্ধারণের উপর জোর দেন। স্বাভাবিক ভাবেই বইটা বাতিল করা হয়। তবে তার প্রভাব ছিলো এত সুদূর প্রসারী যে এর আঘাতে টুঙ্ক আব্দুল রহমান ১৯৭০ সনে পদত্যাগ করে ক্ষমতা আব্দুল রাযাক হুসায়ন এর হাতে দিয়ে তিনি সরে পড়েন।
আব্দুল রাযাক মাহাথিরকে দলে ফিরিয়ে আনেন, এবং তাকে ১৯৭৩ সালে সিনেটর করে ১৯৭৪ সনে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দ্বায়িত্ব দেন। তার মালে পলিসি এখানে দারুন জন সমর্থন পায়। তিনি ক্যাম্পাস রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সেখানে সুন্দর পড়াশুনার ক্ষেত্রে তৈরি করেন। তদুপরি মালয়েশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস ও কারিক্যুলাম বিশ্বমানে আনার প্রচেষ্টা তাকে অসম্ভব জনপ্রিয় করে তোলে। আমনোর কেন্দ্রীয় লীডারশিপে তার স্থান ভালো হলেও তাকে আব্দুল রাযাক খুব ভয় পেতেন। ফলে মাহাথিরের বিপরীতে তিনি হুসাইন অন, গাফার বাবা, ও রাজ পরিবারের টুঙ্ক রিজালেই হামযাকে ডেপুটি লীডার করে প্যানেল করেন। মাহাথিরকে এইসব ষড়যন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে সামনে এগুতে হয় এবং অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বুদ্ধি ব্যবহার করে ও আল্লাহর কুদরাতে তিনি ডিপুটি প্রধান মন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা পান। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে সুনাম অর্জনের পর তাকে দ্বায়িত্ব দেয়া ট্রেড ও ইন্ডাস্ট্রী মন্ত্রানলয়ে। এখানে তিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য পলিসি নির্ধারণের সবচেয়ে ভালো যায়গা পেয়ে যান। ১৯৭৮-১৯৮১ এ তিনি মালয়েশিয়ায় এই সেক্টরের দিকে বিশ্বের নযর আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
১৯৮১ এর ১৬ জুলাই এ ৫৬ বছর বয়সে তিনি প্রধান মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এর পর থেকেই তিনি মালয়েশিয়াকে বিশ্ব সভায় এক জ্বলজ্বলে সদস্য হিসেবে স্থাপন করেছেন।
তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তার বিপরীতে যে সব থ্রেট ছিলো সেগুলো কখনও আইন প্রনয়ন করে, কখনো রাজনৈতিক মেধা দিয়ে সরাতে সক্ষম হন। মালয়েশিয়া রাজা শাসিত দেশ। রাজাদেরকে তিনি একটা আইনের মাধ্যমে সুন্দর বৃত্তের আওতায় নিয়ে আসেন। অর্থনীতিতে সমাজতান্ত্রিক ধারা ও ধনতান্ত্রিক ধারার মাঝে সমতা রেখে তার নিউ ইকনোমিক্স পলিসিতে ‘ভূমিপুত্র’ দর্শন ও পরবর্তিতে ন্যাশনাল ডেভালপমেন্ট পলিসিতে আরো ফ্লেক্সিবল নীতি প্রনয়ন করার ফলে মালয়েশিয়া হয়ে ওঠে এশিয়ার নামকরাদের মধ্যে। তার “ওয়াওয়াসান দুয়াপুলু দুয়াপুলু” বা “২০২০ ভিশন” খুবই খ্যাতনামা হয়। এখানে তার মালয়েশিয়াতে সেরা ব্রিজ, সেরা বিমান বন্দর, সেরা টাওয়ার, সেরা আইল্যান্ড, সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদির চিন্তা মালয়েশিয়াকে অপরের হিংসার পাত্র করে ফেলে। ফলে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি ধ্বস নামানো হয়, বাজার অর্থনীতি শেষ করার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্র ও বিপদ মুকাবিলা করে তিনি টিকে থাকেন তার শক্তিশালী লীডারশিপ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কারণে, সর্বোপরি আল্লাহর রহমে।
তিনি মালয়েশিয়ার ইসলামী আন্দোলনের উত্থানকে ভালো ভাবে নেন নি। বিশেষ করে ইউসুফ রাওয়ার কাছে তার হেরে যাওয়াটা ছিলো ‘পাস’ এর ব্যাপারে সব সময় নেতিবাচক চিন্তার কারণ। পাস এর আন্দোলন ছিলো মিশরের ইখওয়ান ও পাকিস্তানের জামাআতের আদলে। তবে এর ধর্মীয় পন্ডিতরা ছিলো খুবই ক্লাসিক্যাল ভাবধারার। এই সময় আনওয়ার ইবরাহিমের উত্থান হয়।
তিনি যখন ইউনিভার্সিটি মালায়ুর ছাত্র, সেই ২১ বছর বয়সেই তার মধ্যে লীডারশিপ যোগ্যতা দেখা যায়। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মালায়েশিয়ান মুসলিম স্টুডেন্টস প্রতিষ্ঠা করেন। এর নাম হয় পরে আবিম, বা আংকাতান বেলিয়া ইসলাম মালায়েশিয়া। ১৯৬৮-১৯৭১ সন পর্যন্ত তার নাম ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্থানে ছড়ায়ে পড়ে। নেতৃত্ব দেন ইংলান্ডে ইফসু, সৌদি ভিত্তিক ওয়ামি, আমেরিকা ভিত্তিক ট্রিপল আইটির এবং সারা বিশ্বে ছাত্র আন্দোলনে তিনি ক্যারিশমাটিক নেতা হিসেবে আবির্ভুত হন। ছাত্রজীবন শেষ হলে তিনি মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে সরাসরি প্রবেশ করেন। ১৯৭৪ সনে তিনি কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন যাতে সারা মালয়েশিয়াতে তার প্রভাব পর্যাবেক্ষন করে সবাই। তাকে আই এস আই বা ইন্টারনাল সিক্যুরিটি এক্টএ আটক করা হয়, এবং ২০ মাস বিনা বিচারে জেল খাটিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
মাহাথির মোহাম্মাদ ১৯৮১ সালে প্রধান মন্ত্রী হওয়ার পরে যাদের মাধ্যমে দেশোন্নয়নের কথা ভাবছিলেন, তার মধ্যে আনওয়ার ইবরাহীমকেও রেখেছিলেন। যেহেতু তিনি ছিলেন কট্টোর সেক্যুলার, আর আনওয়ার ইবরাহীম কোন ভাবেই তার কথায় কর্ণপাত করতেছিলেন না, কাজেই মাহাথির সাহায্য নেন ডঃ ইউসুফ আলক্বারাদাওয়ী, তাহা জাবির, আব্দুল হামিদ আবুসুলায়মান প্রমুখ যারা সে সময় আনওয়ার ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের পরামর্শে এই পরম ইসলামি ব্যক্তিত্ব চরম সেক্যুলার মাহাথিরের দলে যোগ দেন। ক্রমে ক্রমে ১৯৮৩ সালেই তাকে সংস্কৃতি মন্ত্রী, ১৯৮৪ এগ্রিকালচার মন্ত্রী এবং ১৯৮৬ সালে তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। মালায়েশিয়ার ইতিহাসে শিক্ষামন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পাওয়া মানে প্রধান মন্ত্রী হওয়ার দিকে পা রাখা, এ বিষয়টা সবারই জানা ছিলো। ফলে এখান থেকেই আনওয়ার ইবরাহীম শত্রুতার কোপানলে পড়েন। 
মাহাথির তাকে নিজ ছেলের মত আদর করতেন, আনওয়ার ইবরাহীম সব সময় তাকে বাবা বলে সম্বোধন করতেন। ফলে এই মধুর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর কাজে ব্যাপৃত হয় মাহাথির মোহাম্মাদের কিছু কাছের মানুষ। আনওয়ারকে যত গুলো মন্ত্রনালয় দেয়া হয়, প্রতিটাতেই সফলতার হার ছিলো অনেক উঁচুতে। ১৯৯১ সালে তাকে যখন অর্থ মন্ত্রনালয়ের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়, তখন তার পদক্ষেপগুলো ছিলো মালয়েশিয়ার জন্য একটা জোয়ার বয়ে নিয়ে আসা ঢেও।

আনওয়ার তিন ভাবে মালয়েশিয়া অর্থনীতিকে সাজায়ে তোলেনঃ
১- ইসলামি অর্থনীতির নানান প্রকল্প তিনি শুরু করেন তার দেশে। এটা করে তিনি সারা বিশ্বের ভালো ভালো বিশেষজ্ঞদের তার দেশে নেয়া শুরু করেন, ইসলামি ব্যাঙ্কিং শুরু করেন এবং প্রতিটি ব্যাঙ্কের সাথে মালে মুসলিমদের দাবীর প্রতি সন্মান জানিয়ে ইসলামি ব্যাংকিং এর উইং খুলে দেন। এইভাবে সারা দেশে ইসলামি অর্থনীতির অগ্রযাত্রা শুরু হয়, ফলে লক্ষ লক্ষ্ মুসলিম ও আরব ইনভেস্টরদেরকে মালয়েশিয়া মুখী করেন।

২- চায়না, জাপান, কোরিয়া সহ উন্নত বিশ্বের ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে মালয়েশিয়ায় ব্রাঞ্চ খোলার জন্য পথ উন্মুক্ত করেন। এবং মুসলিম বিশ্বের সস্তা জনশক্তিকে তার দেশে কাজ করার অনুমতি দেন। ফলে সস্তায় বিশ্ববাজারের চাহিদা সাপ্লাইএর জন্য মালয়েশিয়া হয়ে ওঠে খুবই আকর্ষণীয়।
৩- "ভূমিপুত্র" কন্সেপশানের সাথে মাহাথিরের ২০২০ ভিশন মালয়েশিয়ার আভ্যন্তরীন জনশক্তিগুলোকে কর্মমুখী করে তোলে। এটাকে আরো কাজে লাগায় আনওয়ার ইবরাহীমের শিক্ষাবৃত্তি। সারা দেশে নানান সেক্টরে কাজের ক্ষেত্র তৈরি করেন তিনি। ফলে মালয়েশিয়ার জনশক্তির যেমন উন্নয়ন সাধন হয়, তেমন ভাবে তাদের কাজে লাগানোয় দেশ দ্রুত প্রভাবশালীর তালিকায় আসে। 
মাহাথির ভালোভাবে বুঝে ছিলেন "পাস" এর ইসলামি খেলাফত থেকে ফেরাতে গেলে আনওয়ারের মত বিকল্প ইসলামিস্ট তার দলে থাকা দরকার। তিনি বুঝে ছিলেন "আল আরকাম" সহ অন্যন্য ইসলামি গ্রুপ গুলো শেষ করতে আনওয়ার ইবরাহীমের মত ইসলাম জানা লোক তার ডান পাশে রাখা উচিত। তিনি এটাও বুঝেছিলেন, তার সমস্ত মন্ত্রী পরিষদের মধ্যে আনওয়ার ইব্রাহীমের মত ক্যারিশমা কারো নেইঃ বুদ্ধিতে তার ধারে কাছে কেও নেই, এবং মালয়েশিয়াকে সামনে নিতে তার মত নিঃশংক ও আন্তরিক কেও নয়। কাজেই তিনি আনওয়ারকে তার উত্তরসূরী করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার অর্থ ধ্বসের সময় আমি ওখানে ছিলাম। খুব গভীর ভাবে তখনকার অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছি। ঐ সময়েই আমি দেখছি এই দুই নেতার দূরত্ব তৈরির ফ্যাক্টর গুলো। ১৯৯৮ এর ২০শে সেপ্টেম্বর তার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী অবস্থার শেষ সমাবেশ “মারদেকা স্কয়ারে” আমি আমার বন্ধুদের সাথে উপস্থিত ছিলাম। তাকে যখন মানুষ ঘাড়ে করে সামনে নিচ্ছিলো তখন তার হাতে হাত রেখে প্রচুর কেঁদেছিলাম, তার এরেস্ট করার পর তার বাসায় যেয়ে ম্যডামকে সান্তনা দেয়ায় ও শরিক হয়ে ছিলাম। সত্যি বলতে কি, এই ঘটনার পর মালয়েশিয়াতে আমার আর থাকতে ইচ্ছা করেনি। 
যাই হোক, আমি কাছ থেকে এই দুই নেতার বিভক্তির যে কারণ গুলো জেনেছি ও দেখেছি তা হলোঃ

১- মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক ধ্বসের কারণ হিসেবে মাহাথির জর্জ সরোস সহ বড় বড় ইনভেস্টরদের দায়ি করতেন, এবং তারা অর্থ পাচারের পরে দেশটাকে সাবলম্বী করতে যেয়ে ইন্টারনাল রিসোর্সের দিকেই ছিলো মাহাথির মোহাম্মাদের ইচ্ছা ও নির্দেশনা। আনওয়ার ইবরাহীম মনে করতেন শুধু আন্তর্জাতিক দুষ্ট চক্রই এই ধ্বসের জন্য দায়ী নয়, দায়ী দেশের ভেতর থাকা করাপ্টেড টাউট রাজনৈতিক সংস্থা ও নেতৃবর্গ। কাজেই তিনি বাইরের ইনভেস্টরদেরকে আরো যায়গা করে দিতে চাইলেন ও আই এম এফ এর সার্বিক সাহায্য চাইলেন। আই এম এফের যে মারাত্মক শর্তাবলী ছিলো তা তো আমরা সবাই জানি। তারা মাহাথিরের আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, ও দেশের দুষ্ট চক্রের উপর দৃষ্টিদিতে বলে, যা প্রকারন্তরে মাহাথিরের মাথাটাকেই গুলির আওয়তায় আনার মত। তাছাড়া আই এম এফ এর নিগড়ে একবার পড়লে কোন দেশ ঋণ ভেদ করে উঠতে পারেনা তা মাহাথির বুঝতেন। কাজেই আনওয়ারের আই এম এফের ফাঁদকে তিনি খুব খারাপ অর্থে নেন।
২- আনওয়ারের প্রতি ভালোবাসায় হোক, অথবা মাহাথিরের দীর্ঘদৃষ্টির দিব্যতায় আনওয়ার ইবরাহীমের উত্থান রোধের পরিকল্পনায় হোক, মাহাথির আনওয়ারকে তার পরবর্তি প্রধান মন্ত্রী করার ঘোষণা দিয়ে ইউকেতে আসেন গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে। এই সময় তিনি আনওয়ারের কাজ খুব খুঁটিয়ে দেখতে থাকেন। আনওয়ার তখন ভারপ্রাপ্ত প্রধান মন্ত্রী। মাহাথির প্রধান মন্ত্রী থাকতেই তিনি রাঘব বোয়ালদের ব্যাপারে কিছু করে নিতে চাইলেন। তিনি চাইলেন রাস্ট্রের যেসব চুরি করা অর্থ নানান নেতাদের হাতে জমে গেছে তা এন্টি করাপশান এজেন্সির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে।
এইটা করতে যেয়ে তিনি চতুর্মুখী শত্রুতার সম্মুখীন হন। ব্যাংক গুলো সরকারি সাহায্য পাবেনা বলে আনওয়ারের সিদ্ধান্ত ধনিক শ্রেনীকে ক্ষেপিয়ে তোলে। করাপ্টেড নেতাদের প্রত্যেকের নামে তদন্ত সেল প্রস্তুত হওয়ায় সবাই ঘাবড়ে যায়। রাজনৈতিক ভাবে তার ক্ষমতার দাপট মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে ভয় ধরিয়ে দেয়। খোদ মাহাথির ও চাপের মধ্যে থাকেন। কারণ মালেয়েশিয়ার সব সেরা অর্থকরী সংস্থায় তার পরিবারের কিছুনা কিছু শেয়ার ছিলো।
একদিকে আনওয়ার ইবরাহীমের কাছ থেকে মাহাথির দূর হচ্ছিলেন। আবার মাহাথিরের লোকেরা আনওয়ার মুক্ত মালয়েশিয়া রেখে না গেলে মাহাথিরের পরিবারকেও ধরা হবে হুমকি দিলেন। ফলে মাহাথির মোহাম্মাদ ছুটি থেকে ফিরে এসে তার সিদ্ধান্ত থেকে ৯০ ডিগ্রী ঘুরে দাঁড়ালেন। আনওয়ারকে স্যাক করলেন, তাকে মার দিলেন, ব্যাক বোন ভেঙে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। অন্ততঃ ৫ জনের সাথে আনওয়ার ইবরাহীমের সমকামী সম্পর্ক ছিলো প্রমান করতে স্পার্ম নিয়ে খেলা শুরু করলেন, ম্যাট্রেস প্রদর্শনী করেলেন। নূর হাফিলদাদের জাগালেন, আজিজান আবু বকরদের হাতে পাখা, ও পকেটে টাকা দিলেন, ডঃ মুনাওওয়ায়র দের আঘাতে আঘাতে শেষ করলেন এবং অনেক অনেক গল্প তৈরি হলো।
আনওয়ার ইবরাহীম ছিলেন আরেক মাহাথির। মূলত তাদের দুইয়ের ফসল হলো আধুনিক ও মুসলিম মালয়েশিয়া। মাহাথির আধুনিক উন্নত মালায়েশিয়ার রূপকার, আর আনওয়ার হলেন আধুনিক ইসলামি মালয়েশিয়ার কর্মকার। আনওয়ারকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখার মাহাথিরীয় বুদ্ধি মাহাথিরকে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন করে। ক্ষমতা তাকেও হারাতে হয়, কারণ খ্যাতি চলে যায় যিরোর কোঠায়। ফলে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু ক্ষমতার মেইন ঘুটি হিসেবে থাকেন তিনি। প্রথমে আব্দুল্লাহ বাদাওয়ীকে তিনিই আনেন। তাকে দিয়ে কাজ হচ্ছিলনা বলে তাকে তিনিই তাড়ালেন। নাজিব রাযাককেও তিনি আনেন। বারবার আনওয়ারের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করেছেন। কিন্তু তাকে দিয়েও মালয়েশিয়ায় তেমন উপকার দেখতে পাচ্ছেন না। এখন থেকে বছর দুই আগ থেকে তিনি আনওয়ারের প্রতি সুদৃষ্টি দেন। তাকে এই সব নেতাদের মধ্যে সব চেয়ে যোগ্য ও কাছের মনে করে তার সাথে করা অন্যায়ের জন্য তিন বার অশ্রুপাতও করেছেন। একবার বাকরূদ্ধও হয়েছেন। পরে আনওয়ারের মেরুদন্ডের ব্যাথা ও কিছুটা ভালো হবার পরে দুই বন্ধু ও বাবা ছেলে এক হয় পাকাতান হারাপান করেছেন। এবং সেই মাহাথির আবার তাকে ক্ষমতার শীর্ষে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
আমরা যারা কুমিরের পেটে ছেলে হারানো লোক, তারা ঢেকি দেখলেও ভয়ে কাঁপি। ৯২ বছরের মাহাথিরকে আনওয়ার কি বলবেন জানিনা, আগে দাঁত হারা বাঘ বলতেন। আমরা মনে করি মাহাথির মোহাম্মাদ যদি কথা রাখেন, তা হলে মালায়েশিয়া একটা ভালো যুগে ঢুকতে পারবে।
আমি সব সময় পাস এর দিকে তাকাই। খাঁটি ইসলামি আন্দোলন ও ইসলামি চরিত্র এদের কর্মিদের মাঝেই পাওয়া যায়। এদের মাঝে শায়খ নিক আব্দুল আযীয (র) থাকতেই দু’টো গ্রুপ আমরা লক্ষ্য করেছি। আলিম উলামারা “পাস”কে পুরো খেলাফতের কান্ডারী করতে চান। আনওয়ার ইব্রাহীম ২০০৮ সালে পাকাতান রা’ইয়াত প্রতিষ্ঠা করেন। এই জোটে তিনি আগুন ও পানি এক যায়গায় করতে যেয়েই মূলতঃ “পাস” কে দুই ভাগ করে ফেলেন। ড্যাপ হলো অমুসলিমদের সংগঠন। আর “পাস” হলো ইসলামি আন্দোলন। আর তিনি হলেন মোডারেট। এই ফার রাইট, বা ফার লেফটের সাথে তিনি মাঝামাঝি বসতে যেয়ে “পাস” এর সংবিধান পরিবর্তন করেন। সেই সংবিধান থেকে শারীয়া আইনের বাস্তবায়ন ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম ইত্যাদি বিষয় গুলো বাদ দিতে বাধ্য করেন। কারণ ড্যাপের নেতারা ছিলো এ ব্যাপারে সাংঘাতিক বাতিক গ্রস্ত। ঐটা বাদ দেয়ার সময় আলিম গণ সেই সময় খুব খারাপ ভাবে “পাস” এর নেতৃত্বের বিরোধিতা করে। এমন কি গত নির্বাচনের আগে মাহাথিরের মাধ্যমে “পাকাতান হারাপান” জোট গঠনের সময় তারা এই জোটে আসতে অনীহা প্রকাশ করে। যদিও আমানাহ নামে আরেকটা দল করে এদের অপেক্ষা কৃত আধুনিকরা “পাস” থেকে বের হয়। এই বড় বিপদেও “পাস” তাদের কেলান্তন এবং তিরিঙ্গানু ধরে রেখেছে। কেদাহ হয়তো আসতো তাদের ঐক্য থাকলে।
আমার বয়স এখন অর্ধ শতাব্দী ছুঁই ছুঁই করছে। ইসলামী আন্দোলন গুলোর গভীরে থাকার চেষ্টা করেছি। নেতা নেতৃবৃন্দের সাহচর্য্য নেয়ার চেষ্টা করেছি। পি এইচডির গবেষণা করতে যেয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামি পন্ডিত ও নেতাদের পাশে গিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বর্তমান লীডারশিপ আমাদের যা বুঝাতে চায়, তা যেন আমরা মালয়েশিয়ার এই নির্বাচনে দেখতে পেয়েছি। তা হলোঃ
১। ইসলামি সংস্কার ও রাজনৈতিক আন্দোলন যারা করে, ইসলামি বিশ্বে কাজের ধরণ তাদের চেইঞ্জ করতে হবে। মুসলিম দেশে আমরা যে খেলাফতে রাশেদার আদলে একটা খিলাফত তৈরির কাজ করতে চাই, সাধারণ জনগন তাতে ভোট দেয়না। ভোটের রাজনীতি আলাদা। সেখানে তারা আউটকাম ও স্বপ্ন দেখতে চায়। আর সেই আউটকাম তৈরিতে ভূমিকা রাখে দেশের প্রভাবশালী মুসলিম নেতারা। পাকিস্তান জামাআত একা নির্বাচন করলে ভোট কম পায়, কিন্তু জোট করলে ভালো করে। ইখওয়ান জোটে ভালো করে। তুরাবীর জোট ও ভালো করেছে। আরবাকানের দল বারবার বাতিল হবার পরে ইরদোয়ানদের পদক্ষেপ ও জোট ভালো কাজ করেছে। রাজনীতিতে ইনসাফের পক্ষে অবস্থান, করাপশানের বিপরীতে পদক্ষেপ, বেকারত্ব নিধনের বাস্তব রূপরেখা ইত্যাদি থাকতে হবে বেশি।

ভোটের ভাষা যদি হয়, “আমারে ভোট দাও জান্নাত পাবা, না দিলে জাহান্নামে যাবা” তা হলে বুঝতে হবে জনগণকে দেয়ার মত তেমন কিছু আমাদের নেই।
২। আনওয়ার ইব্রাহীমকে ক্রাশ করতে হেন কাজ নেই যা আগের সরকার গুলো করেনি। বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, বিশ্ব সমকামীদের ওয়েব পেইজে গেলে আনওয়ার ইবরাহীমের নামটাও দেখতে পাবেন। অথচ তিনি এর ধারে কাছেও ছিলেন না। সবটাই করেছে আগের সরকার গুলো। আনওয়ার সেই মাহাথিরকে যখন ক্ষমা করেন, মাহাথির যখন সেই কথা স্মরণ করে কাঁদেন, তখন আমাদের বুঝতে হবে রাজনীতি কি জিনিষ। মুসলিম নেতাদের ব্যাপারে আমাদের আচরণের একটা দারুন যায়গায় আনওয়ার ইব্রাহীম আমাদের ছেড়ে দিয়েছেন। যা অনেক তিক্ত হলেও ইসলামিক।
৩। আনওয়ার ইব্রাহীম কে ক্রাশ করতে চেষ্টা হয়েছে। তার সম্পদ শেষ, স্বাস্থ্য শেষ, সম্মানে আঘাৎ করা হয়েছে। কিন্তু তিনি এক দিনের জন্যও তার আন্দোলন থেকে থেমে থাকেন নি। আজ আমাদের ঐ বোধ কাজে লাগাতে হবে। যদি উদ্দেশ্য মহৎ হয় মানুষ পছন্দ করেন। আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর যখন নিজকে মরণের হাতে সঁপে দিচ্ছিলেন, তখন আম্মা আসমা বিনতে আবূ বকরের (রা) কাছে বিদায় নিতে যান। যে বলেন, আম্মা আমার আপন ভাই মুসআব ও আজ আমার বিপরীতে উমাইয়্যাহ শিবিরে চলে গেছে। আমি কি করবো। আম্মা বললেনঃ তুমি যদি সত্যের উপর থেকে এতদিন যুদ্ধ করে থাকো, এগিয়ে যাও। পালায়ো না। আমার কেন জানি মনে হয়েছে, মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজকারীদের কোন অবস্থাতেই বসে থাকা উচিৎ না।
৪। ইসলাম পন্থীরা যদি সঠিক নেতৃত্ব নিয়ে এগিয়ে আসে, তাদের পরাজয় হবেনা ইনশাআল্লাহ।
অনেক অনেক আশা, অনেক অনেক দুয়া মালায়েশিয়ার জন্য।

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকী আজ

সামছুল আরেফীন : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর দ্বিতীয় শাহাদাত বার্ষিকী আজ শুক্রবার। গত বছরের ১০ মে দিবাগত রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ফাঁসির মঞ্চে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। ১১ মে সকালে পাবনার সাঁথিয়ায় মনমথপুরে গ্রামের বাড়ী সংলগ্ন কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ দিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর স্বপ্ন বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ.ন.ম. শামসুল ইসলাম। 
রিভিউ খারিজের রায় কারাগারে: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১৬ সালের ৯ মে প্রকাশের পর তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে রায়ের অনুলিপি কারাগারে পৌঁছে ট্রাইব্যুনাল থেকে। এর আগে বিকেলে আপিল বিভাগের তৎকালীন রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার মেহেদি হাসান রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনাল নিয়ে যান। সেখান থেকে রায়ের এ অনুলিপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যায়। এর আগে বেলা সোয়া ৩টার দিকে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা মাওলানা নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ২২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় লিখেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তার সঙ্গে একমত পোষণ করে অপর তিন বিচারপতি রায়ে সই করেন। 
৫ মে মাওলানা নিজামীর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ রায় দেয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তখন “ডিসমিসড” এই এক শব্দে রিভিউ আবেদন খারিজের আদেশ দিয়েছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। ফলে আপিলে তিনটি অভিযোগে দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল থাকে। 
এর আগে ৩ মে সকাল ৯টা ২৫ মিনিট থেকে ১০টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন মাওলানা নিজামীর প্রধান কৌসুলি ও সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। এরপর ১০ মিনিট এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রসিকিউশন পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। মাঝে আধা ঘণ্টার বিরতি শেষে এটর্নি জেনারেল তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। এরপর আদালত রায়ের জন্য ৫ মে দিন ধার্য করেন। ওইদিন আদালত ‘ডিসমিসড’ বলে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। 
আদালতে শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সহায়তা করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিকী ও ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন।
আপিল ও মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ : ২৯ মার্চ মাওলানা নিজামীর আইনজীবীরা খালাস চেয়ে আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। ৭০ পৃষ্ঠার মূল রিভিউর আবেদনের সঙ্গে মোট ২২৯ পৃষ্ঠার নথিপত্রে ৪৬টি (গ্রাউন্ড) যুক্তিতে খালাস চান তার আইনজীবীরা। রিভিউ আবেদনের এডভোকেট অন রেকর্ড হলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন।
এর একদিন পরেই সরকার পক্ষে শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আবেদন করে। সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে ৩ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেন। ওইদিন ডিফেন্সপক্ষে ৬ সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করা হলে আদালত এ সপ্তাহে নয় বলে আদেশ দেন। মামলার প্রধান আইনজীবী ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণে সময় চাওয়া হয়।
১৫ মার্চ আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করতে হয়। সে হিসেবে ৩০ মার্চ পর্যন্ত রিভিউ করার সময় ছিল। তার আগেই মাওলানা নিজামীর পক্ষে তার আইনজীবীরা সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করেন। 
২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর মাওলানা নিজামীর মামলায় রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের রায় দেয়া হয়। অপর চারটি অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়। এছাড়া বাকি আটটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মাওলানা নিজামীকে অভিযোগগুলো থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের দেয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ২৩ নবেম্বর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে মৃত্যুদ-ের রায় বাতিল করে খালাসের আরজি জানান মাওলানা নিজামী। মোট ১৬৮টি যুক্তি দেখিয়ে এ আপিল করা হয়। 
২০১৩ সালের ১৩ নবেম্বর প্রথমবারের মতো এই মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই অবসরে চলে যান ট্রাইব্যুনাল-১-এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল অধিকতর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে দ্বিতীয় দফায় ২৪ মার্চ মামলার রায় অপেক্ষমান রাখেন। 
২০১০ সালের ২৯ জুন কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় মাওলানা নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট এক আবেদনে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়।
সকলকে ধৈর্য্য ধারন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন মাওলানা নিজামী: ১০ মে সন্ধ্যায় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করেন পরিবারের সদস্যরা। এ সময় তিনি তার পরিবারসহ সকলকে ধৈর্য্য ধারন করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আল্লাহ যেন সবাইকে হেফাজত করেন। 
পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর সাথে যখন স্বজনরা সাক্ষাত করতে কারাগারে প্রবেশ করেন, তখন তিনি নামাজ পড়ছিলেন। তার পড়নে ছিল সাদা পাঞ্জাবী, লুঙ্গি আর মাথায় টুপি। স্বজনরা যখন কারাভ্যান্তরে প্রবেশ করেন, তখন তিনি নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষে উনার নাতি ‘দাদা ..দাদা’ বলে ডাক দেয়। এ সময় তিনি ফিরে তাকান। তাদের কাছে টেনে নিয়ে আদর করেন। তিনি সে সময় শক্ত ছিলেন। স্বাভাবিক ছিলেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন। তিনি এ সময় বলেন, শাহাদাত সারা জীবনই কাম্য ছিল। যুদ্ধ না করেও যদি শাহাদাত বরণ করা যায়, তার চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে? তিনি বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। আল্লাহ যেন সবাইকে হেফাজত করেন। 
এর আগে নিয়মিত সাক্ষাতের অংশ হিসেবে পরিবারের সদস্যরা কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাত করেন। সে সময় মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী পরিবারের সদস্যদেরকে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শতভাগ মিথ্যা। যে সব এলাকার ঘটনার কথা উল্লেখ করে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে সে সব এলাকায় ১৯৮৬ সালের আগে আমি কখনো যাইনি। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঐ এলাকায় আমি প্রথম যাই। এলাকার জনগণ প্রতিটি নির্বাচনে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছেন। এলাকার জনগণ সাক্ষী আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছু নয়। 
মাওলানা নিজামীর সংক্ষিপ্ত জীবনী: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা, দেশের গণমানুষের নেতা। দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রসেনানী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে গণমানুষের কল্যাণে নিবেদিত এই ব্যক্তিত্ব মুক্তিকামী ও মজলুম মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের মর্যাদাকে বহির্বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল ও উন্নত করেছে।
মাওলানা নিজামী দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে পর্যায়ক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সফলভাবে পালন করে দেশের ইতিহাসে সৃষ্টি করেছেন এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। মাওলানা নিজামী কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ দায়িত্ব পালনকালে তিনি যে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে গতিশীল ও সার্থক করে তুলতে যে যোগ্যতা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন তা এক অনন্য ও অনুসরণীয় অধ্যায়। মন্ত্রনালয় পরিচালনায় তার বিরুদ্ধে সামান্যতম দুর্নীতিও অভিযোগ উঠেনি।
মাওলানা নিজামী ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে পাবনার সাঁথিয়া-বেড়া এলাকার গণমানুষের প্রতিনিধি তথা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ৩৭ হাজার ৮শ ৬৯ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদে যোগদান করেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম লুৎফর রহমান খান একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও খোদাভীরু লোক ছিলেন। ফলে বাল্যকাল থেকেই মাওলানা নিজামী ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শের আলোকে গড়ে ওঠার সুযোগ লাভ করেন। নিজগ্রাম মনমতপুর প্রাইমারি স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার সূচনা হয়। এরপর তিনি সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী মাদরাসায় ভর্তি হন। অল্প বয়সেই মাওলানা নিজামীর মধ্যে সুপ্ত নেতৃত্বের গুণাবলী শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রখর মেধার অধিকারী নিজামী বরাবরই বিভিন্ন পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দাখিল পরীক্ষায় ১ম বিভাগ লাভ করেন। ১৯৫৯ সালে পাবনার শিবপুর ত্বহা সিনিয়র মাদরাসা থেকে ১ম বিভাগে সমগ্র বোর্ডে ষোলতম স্থান অধিকার করে আলিম পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে একই মাদরাসা থেকে তিনি ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
শিবপুর ত্বহা সিনিয়র মাদরাসায় ফাজিল শ্রেণীতে অধ্যয়ন করার সময় মাওলানা নিজামী বেশকিছু উদ্যোগী ও মেধাবী ছাত্র নিয়ে একটি সংগঠন কায়েম করেন। 
লেখাপড়া ও সাংগঠনিক কার্যক্রমÑ উভয় দিকেই তিনি সাফল্য অর্জন করেন। ১৯৬৩ সালে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে কামিল পরীক্ষায় ফেকাহ শাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী লাভ করেন।
ছাত্রআন্দোলন: ১৯৬১ সালে ইসলামী ছাত্রসংঘের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে তিনি ছাত্রআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে থাকেন। ঐ সময় মাদরাসা-ছাত্ররা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে এ-আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে। কামিল শেষবর্ষের ছাত্র মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মাদরাসা-ছাত্র হিসেবে মাদরাসা-ছাত্রদের ন্যায্য দাবী আদায়ের লক্ষ্যে এ-আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৬২-৬৬ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৬ সালে মাওলানা নিজামীর উপর পূর্বপাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয়। এ সময় দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল সংঘাতমুখর। পরপর তিন বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি (নাজেমে আ’লা) নির্বাচিত হন। পর পর দু’বছর তিনি এ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকেন।
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে পরিচালিত শিক্ষা-আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৯৬৭-৬৮ সালে ছাত্রদের উদ্যোগে শিক্ষাসপ্তাহ পালিত হয়। এ উপলক্ষে ‘শিক্ষাসমস্যা-শিক্ষাসংকট’ ও ‘শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন’ সংক্রান্ত দু’টি পুস্তিকা বের হয়। নিজামীর নেতৃত্বাধীন গঠনমূলক এ-আন্দোলন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শিক্ষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায়, ছাত্রসংঘ ছাত্র-জনতার কাছে ক্রমে আরো প্রিয় সংগঠনে পরিণত হতে থাকে।
জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান: ছাত্রজীবন শেষে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি সংগঠনের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল মনোনীত হন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এ-দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা ১২ বছর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ সালের ১৯ নভেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৩, ২০০৪-২০০৬, ২০০৭-২০০৯ সেশনে আমীরের দায়িত্ব পালনের পর ২০১০-২০১২ সেশনের জন্য তিনি পুনরায় আমীর নির্বাচিত হন। আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায়ই ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন তিনি। 
গণআন্দোলনে মাওলানা নিজামী: স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২-৯০ সাল পর্যন্ত তদানীন্তন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে যে প্রচন্ড গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, এ আন্দোলনে মাওলানা নিজামী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। ফলে একাধিকবার তিনি স্বৈরশাসকের আক্রোশের শিকার হন। তাঁর সাহসী নেতৃত্বের কারণে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং ১৯৯০ সালে জাতি অপশাসনের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রদত্ত ফর্মুলা অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংসদে মাওলানা নিজামী বিল উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে সংসদের ভিতরে ও বাইরে জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামীর সংগ্রামী ভূমিকা জাতির মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহ আওয়ামী দু:শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১/১১ জরুরী সরকারের সময়েও তিনি এর বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। তিনিই প্রথম এ ধরনের সরকারের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রথম কথা বলেন। 
টিপাইমুখ বাধ নিয়ে দেশব্যাপি গড়ে উঠা আন্দোলনেও নেতৃত্ব দেন মাওলানা নিজামী। 
জাতীয় সংসদে: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৯১ সালে পাবনা-১ (সাঁথিয়া-বেড়া) নির্বাচনী এলাকা থেকে ৫ম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় সংসদে গঠনমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তিনি বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। বিভিন্ন ইস্যুতে জাতীয় সংসদে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর যুক্তি ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়ে তিনি একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে দেশবাসীর নিকট খ্যাতি লাভ করেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তিনি পার্লামেন্টে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর বুদ্ধিভিত্তিক, তথ্য-যুক্তি ও সময়োপযোগী বক্তব্য পার্লামেন্টে সকলের সমর্থন লাভ করে। এ সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলনেতার দায়িত্ব পালন করেন। 
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে সাঁথিয়া-বেড়ার জনগণ মাওলানা নিজামীকে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে। জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা এবং সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সংসদে পূর্বের চেয়ে কার্যকর ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। তিনি ৫ বছর সফলতার সাথে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 
বিশ্বরাজনীতিতে মাওলানা নিজামী: জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমীর এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে বিশ্বরাজনীতির সাথে মাওলানা নিজামীর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। নানান গুরুত্বপূর্ণ আর্ন্তজাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে মাওলানা নিজামীর ভূমিকা প্রসংশিত হয়েছে। 
২০০২ সালের ২৭ মার্চ মুসলিম দুনিয়ার বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর ইউসুফ আল কারযাভীর নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের দশজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা নিজামীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। 
২০০২ এর ১১ এপ্রিল মাওলানা নিজামী রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সম্মেলনে যোগদান করেন এবং সৌদি গেজেট পত্রিকায় সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। এসময় মাওলানা নিজামীসহ মুসলিম বিশ্বের ৫২ জন বিশিষ্টি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবি আরব ও মুসলিম বিশ্বের জনগণের প্রতি ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আহ্বান জানান। 
২০০৩ সালের ১৫-১৭ অক্টোবর চীনে অনুষ্ঠিত ঝঁংঃধরহবফ ঊষরসরহধঃরড়হ ড়ভ ওড়ফরহব উবভরপরবহপু উরংড়ৎফবৎ শীর্ষক সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।
২০০৬ সালে মাওলানা নিজামী ইংল্যান্ডের শীর্ষ বৈদেশিক ও কূটনৈতিক নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম চেথম হাউজের আমন্ত্রণে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহ : জামায়াতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে তিনি এ-সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ বৈঠকে বৃটেনের বিশিষ্ট নীতিনির্ধারক বুদ্ধিজীবী, কূটনৈতিকবৃন্দ, পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মাওলানা নিজামী উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। 
উল্লেখ্য যে, চেথম হাউজ বৃটেনের অন্যতম শীর্ষ নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রেখে থাকেন। মাওলানা নিজামী প্রথম বাংলাদেশী নেতা, যিনি চেথম হাউজের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তব্য রাখেন।
২০০৬ সালে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত রাবেতা আল আলম আল ইসলামী কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক ওলামা সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়ে যোগদান করেন। তিনি মুসলিম ওয়াল্ড লীগ (রাবেতা), সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির স্থায়ী সদস্য। মুসলিম উম্মায় তার গুরুত্বপূর্ণ অবদানের ২০০৯ সালের ইউএসএ ভিত্তিক ‘দ্যা রয়েল ইসলামিক স্টেটিজিক স্টাডিজ সেন্টার’ কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষ ৫০ জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে মাওলানা নিজামীকে নির্বাচন করেন। দৈনিক সংগ্রাম এর সৌজন্যে