ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

'ইসলাম কি জ্ঞান বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশের পথে বাঁধা নাকি সহায়ক?' -বুরহান উদ্দীন আযাদ,তুরস্ক


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ইসলামী সভ্যতার পতন লগ্নে মুসলমানদের মধ্যে একটি প্রশ্ন প্রকট আকার ধারণ করে। আর সেই প্রশ্নটি হল, 'ইসলাম কি জ্ঞান বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিকাশের পথে বাঁধা নাকি সহায়ক?' এই প্রশ্নে উসমানী খিলাফতের শেষের দিকের সুলতানগণ ইউরোপীয় ধ্যান ধারণাকে গ্রহণ করে নেন এবং তাঞ্জিমাত ফরমানের মাধ্যমে এই ধারণাকে সাংবিধানিক রূপ দান করেন। এই অবস্থা চলতে থেকে ১৮৭৬ সাল পর্যন্ত। ১৮৭৬ সালে উসমানী খিলাফতের দায়িত্ত্ব গ্রহণ করেন সুলতান আব্দুল হামিদ হান। তিনি তার পূর্ববর্তী সুলতানদের এই সকল অনুকরণকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেন। তিনি প্যান ইসলামীজম বা ইসলামী ঐক্যকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে ইসলামী সভ্যতাকে বেগবান করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তার এই কাজে সবচেয়ে বেশী প্রেরণা ও শক্তি যোগান প্রখ্যাত আলেম ও বহু ভাষাবিদ আহমেদ জাওদাত পাশা। 

উসমানী খিলাফতের সুলতানদের এই পাশ্চাত্যের অনুকরণ প্রিয়তা শুধুমাত্র উসমানী শাসনাধীন অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এই চিন্তা ভাইরাসের মত ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র বিশ্বে। সমগ্র বিশ্বে চালু হয় ২ টি ধারা। 

এদের মধ্যে এক শ্রেনী হল, পাশ্চাত্যে অন্ধ অনুকরণ ও অনুসরণ করে পাশ্চাত্য সভ্যতার (!) আলোকে নিজেদেরকে গড়ে তোলা। এই ধারনার লোকেরা পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণকে আধুনিকতা গণ্য করে থাকে। নিজদেরকে যত ইসলামী চিন্তা দর্শন থেকে দূরে রাখতে পারবে ততটাই এলিট হবে বলে চিন্তা করে থাকে।

আর দ্বিতীয় শ্রেনী হল, আমরা আমাদের সভ্যতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে পারি। আমাদের পতনের মূল কারণ ইসলাম নয়, বরং ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার ফলেই আমাদের পতন হয়েছে। 

দ্বিতীয় ধারণাকে শক্তিশালী ভাবে প্রতিষ্ঠা করেন, আল্লামা ইকবাল, সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদুদী, হাসান আল বান্না, আল্লামা শিবলী নোমানী, আলিয়া ইজ্জেত বেগভিচ সহ আরও অনেক মহান মনিষী। 
অপরদিকে প্রথম ধারাকে জনপ্রিয় করে তুলে ওরিয়েন্টালিস্টরা এবং পাশ্চাত্যের জীবন দর্শনের আলোকে গড়ে তোলা বুদ্ধিজীবীদের বিশাল একটি অংশ।

উসমানী খিলাফতের সময়ে প্রথম ধারার পক্ষে ছিল, তানজিমাত ও ইসলাহাত ফরমানের পক্ষের লোকেরা এবং ইত্তেহাদ ও তারাক্কী আন্দোলন। এই আন্দোলন সমূহ মূলত পরিচালিত হত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস এবং লন্ডন থেকে। উসমানী খিলাফতের পতনের পর এই ধারাকে ধরে রাখে আতাতুর্ক পন্থী বামরা এবং ইত্তিহাদ ও তারাক্কী ঘরনার লেখক ও কবি শ্রেনী। 

অপরদিকে দ্বিতীয় ধারার পক্ষে উসমানী আমলে সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন সুলতান আব্দুল হামিদ হান, জাওদাদ সাঈদ, প্রখ্যাত আলেম জাহিদ আল কাওসারী, মুস্তাফা সাবরী এফেন্দী, সাঈদ হালিম পাশা, প্রখ্যাত কবি ও দার্শনিক মেহমেদ আকীফ এরসয় সহ আরও অনেকে। উসমানী খিলাফতের পতনের পর এই পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, বদীঊজ্জামান সাঈদ নুরসী, প্রখ্যাত মুফাসসির এলমালী হামদী ইয়াজার, , জেমিল মেরিচ, নাজিপ ফাযিল কিসাকুরেক এবং সেজাই কারাকোচ সহ আরও অনেকে। 

আর এই দ্বিতীয় ধারাকে বিজয় করার জন্য সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন প্রফেসর ডঃ নাজমুদ্দিন এরবাকান এবং তার প্রতিষ্ঠিত মিল্লি গরুশ আন্দোলন, মাওলানা মওদুদী ও তার প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী ও ইমাম শহীদ হসান আল বান্না ও তার প্রতিষ্ঠিত ইখওয়ানুল মুসলিমিন। 
Copyright

মৃত্যুর আগে স্টিব জবস হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জীবন সম্পর্কে যা বললেন।

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ স্টিভ জবস যখন মারা যান তখন এ্যাপলের ব্যাংক একাউন্টে জমা ছিলো ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশী। টেকনোলজির এই রাজপূত্র মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে একেবারে অন্তিম মুহুর্তে জীবন সম্পর্কে কিছু অসাধারণ কথা বলেছিলেন-

যা জাপানি, চায়নীজ, হিন্দি, উর্দু, আরবী, স্প্যানিশ, পর্তুগীজ, রুশ সহ প্রায় আঠারোটি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। শুধু তাই নয়- শিশুদের মানসিক উৎকর্ষতা বিধান এবং তাদের সুন্দর মনন গঠনের লক্ষ্যে একাধিক ভাষায় স্টিভ জবসের এই অমর কথাগুলো সহ উনার জীবনী বিভিন্ন দেশের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।

কথাগুলি নিম্নরূপ :

বাণিজ্যিক দুনিয়ায় আমি সাফল্যের একেবারে সর্বোচ্চ চুড়োয় আরোহণ করেছি।যা আপনাদের কাছে সাফল্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত।কিন্তু,এ কথা ধ্রুব সত্য কাজের বাইরে আমার সামান্যই আনন্দ ছিলো। সম্পদের প্রলোভনে বিভোর ছিলাম সারা জীবন। আজ মৃত্যুশয্যায় শুয়ে যখন জীবনটাকে দেখি-তখন আমার মনে হয়, আমার সব সম্মান, খ্যাতি আর অর্জিত সম্পদ আসন্ন মৃত্যুর সামনে একেবারেই ম্লান, তুচ্ছ আর অর্থহীন।এ্যাপলের বিশাল সাম্রাজ্য আমার নিয়ন্ত্রনে ছিলো-কিন্তু মৃত্যু আজ আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।পৃথিবীর অন্যতম ধনী ব্যক্তি কবরের বিছানায় শুয়ে আছে সেটা আদৌ কোনো বড় ব্যাপার না। প্রতি রাতে নিজের বিছানায় শুয়ার আগে আমি কি করলাম -সেটাই আসল ব্যাপার। অন্ধকার রাতে জীবনরক্ষাকারী মেশিনের সবুজ বাতিগুলোর দিকে চেয়ে আমার বুকের গহীনে হাহাকার করে ওঠে। মেশিনের শব্দের ভিতরে আমি নিকটবর্তী মৃত্যু দেবতার নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারি। অনুধাবন করতে পারি-শুধু সম্পদ না, সম্পদের সাথে সম্পর্কহীন জিনিসেরও মানুষের অন্বেষণ করা উচিত।

বেকুবের মতো সম্পদ আহরণই সবকিছুই নয়- আরো অনেককিছু মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।আর তা হলো- মানুষের সাথে সুসম্পর্ক তৈরী করা,সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করা আর তারুণ্যে একটি সুন্দর স্বপ্ন নিজের হৃদয়ে লালন করা। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটলেই মানুষ আমার মতো এক ভ্রান্ত মানুষে পরিণত হতে পারে। সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবার হৃদয়ে ভালবাসা অনুভব করার জ্ঞান দিয়েছেন।কেবলমাত্র এই নশ্বর দুনিয়ায় সম্পদের মোহে জড়িয়ে পড়ার জন্য নয়। এই যে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে আছি।কই, সব সম্পদতো এই বিছানায় নিয়ে আসতে পারিনি। শুধু আজ সাথে আছে ভালোবাসা, প্রেম, মায়া, মমতার স্মৃতিগুলোই । এগুলোই শুধু সাথে থেকে সাহস যোগাবে , আলোর পথ দেখাবে। ভালোবাসা পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে আছে- সম্পদ না খুঁজে ভালোবাসাও খোঁজে নিতে হয়। সম্পদ কভু শান্তি আনেনা।মানুষের প্রতি গভীর মমত্ববোধ আর ভালোবাসাই শান্তি আনে।পৃথিবীটাকে দেখো। শুধু সম্পদের পেছনে ছুটে হাহাকার করলে জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবে না…

পৃথিবীতে সবচেয়ে দামী বিছানা কি জানেন? তাহলো- হাসপাতালের মৃত্যু শয্যা। আপনাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আপনি একজন গাড়ি চালক রাখতে পারেন। আপনার নিযুক্ত কর্মচারীরা আপনার জন্য অনেক টাকাই আয় করে দিবে।কিন্তু এটাই সবচেয়ে বড় সত্য গোটা পৃথিবী চষে, পৃথিবীর সব সম্পদ দিয়ে দিলেও একজন মানুষও পাবেন না যে আপনার রোগ বয়ে বেড়াবে।

বৈষয়িক যে কোনো জিনিস হারালে আপনি পাবেন। কিন্তু একটা জিনিসই হারালে আর পাওয়া যায়না তা হলো মানুষের জীবন। মানুষ যখন অপারেশান থিয়েটারে যায় তখন সে কেবলি অনুধাবন করে- কেন জীবনের মূল্যটা আগে বুঝিনি!! জীবনের যে স্টেজেই আপনি আজ থাকুন না কেন- ,মৃত্যু পর্দা আপনার জীবনের সামনে হাজির হবেই। সাঙ্গ হবে জীবন। তাই, এই নশ্বর জীবনের পরিসমাপ্তির আগে পরিবারের জন্য, আপনজনের জন্য, বন্ধুদের জন্য হৃদয়ে সবসময় ভালোবাসা রাখুন। নিজের জীবনটাকে ভালোবাসুন,নিজের জীবনের মালিক মহান আল্লাহকে ভালোবাসুন, ঠিক নিজের মতো করে অন্যকেও ভালোবাসুন।

আদর্শ পরিবার গঠনে রাসূল (সা.)-এর আদর্শ -অধ্যক্ষ শামসুন্নাহার নিজামী

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সমাজকে ভাল রাখার জন্য মানুষের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। সমাজকে অন্যায়মুক্ত দুর্নীতিমুক্ত করার জন্যও চলছে চেষ্টা প্রচেষ্টা। এর জন্য প্রণীত হচ্ছে আইন। আইনের প্রয়োগের ফলে দুর্নীতি অন্যায় অনাচার একেবারে কমছে না এটা যেমন বলা যায় না তেমনই দুর্নীতি নির্মূল হচ্ছে না এটাও মানুষ বুঝতে পারছে। একটা দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর সুখী সমৃদ্ধ সমাজ সবারই কাম্য। আর পরিবারই হচ্ছে সমাজের ক্ষুদ্রতম ইউনিট। অনেকগুলো পরিবারের সমষ্টিই হচ্ছে একটা সমাজ। একটা ঘরের ইটগুলো যদি নষ্ট হয় তাহলে গোটা ঘরই যেমন দুর্বল হয়-তেমনি একটা সমাজের পরিবারগুলো নষ্ট হয়ে গেলে সেই সমাজও সুস্থ সুন্দর হতে পারে না।
একটি পরিবারের সূচনা হয় বিবাহের মাধ্যমে। একজন নারী এবং একজন পুরুষের বিবাহ নামক বন্ধনের মাধ্যমে যে পরিবারের যাত্রা শুরু হল তা ক্রমান্বয়ে সন্তান সন্তুতি আত্মীয়-স্বজন নিয়ে পরিপূর্ণতা রূপ লাভ করে। যে আয়াতটি বিবাহের সময় পড়া হয় যা বিয়ের খুৎবা হিসেবে পরিচিত তা নিম্নরূপ :
‘‘হে জনগণ! তোমাদের রবকে ভয় কর যিনি তোমাদিগকে একটি ‘প্রাণ’ হতে সৃষ্টি করেছেন। তা থেকে তার জুড়ি তৈরি করেছেন এবং তাদের থেকে বহু সংখ্যক পুরুষ ও স্ত্রীলোক দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের নিকট থেকে নিজের হক দাবি কর এবং আত্মীয় সূত্র ও নিকটত্বের সম্পর্ক বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাক। নিশ্চিত জেনো যে আল্লাহ তোমাদের উপর কড়া দৃষ্টি রাখছেন।’’ (সূরা আন নিসা-১)
বিবাহের এ খুৎবার মাধ্যমে যে পরিবারটির সূচনা করা হল সেই পরিবারের সদস্যদের তার দায়িত্ব কর্তব্যের কথা এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হলো।
১. গোটা বিশ্বের মানুষ ভাই ভাই। একটি প্রাণ থেকে তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশ-কাল-পাত্র ভেদে মানুষ সাদা কালো, ধনী-গরিব, শিক্ষেত, অশিক্ষেত হতে পারে। কিন্তু মূলত তারা এক পিতামাতা আদম ও হাওয়া থেকে এসেছে। এখানে আরব, অনারব, উঁচু-নীচু, আশরাফ-আতরাফের কোন ভেদাভেদ নেই। বরং যে সৎ কর্মশীল, যোগ্য, তাকওয়াদার সেই শ্রেষ্ঠ। কোরআনে কালামে পাকে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ যে সবচেয়ে বেশী খোদাভীরু।’’
২. আল্লাহকে ভয় করতে হবে। এটা একটা ব্যাপক অর্থবোধক কথা। আল্লাহকে ভয় করতে হলে আল্লাহর সঠিক পরিচয় জানতে হবে। জানতে হবে আল্লাহর জাত, সিফাত। ধারণা থাকতে হবে আল্লাহর ক্ষমতা এখতিয়ারের। বুঝতে হবে আল্লাহর হুকুম মানলে কি লাভ না মানলে কি ক্ষতি। আর এগুলো জানা বোঝার জন্য কোরআন সুন্নাহ সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞানার্জন প্রয়োজন।
৩. একটা সমাজ সুন্দর হওয়া সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা, পরস্পরের সম্পর্কের হক আদায় করা এগুলো নির্ভর করে আল্লাহভীতির উপর। স্বার্থপরতা, নির্লজ্জতা, সম্পর্ক বিনষ্ট করা এগুলো আল্লাহর ভীতির বিপরীত। সব কিছু আল্লাহ দেখছেন-তাঁর কাছে সব কিছুর ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে এই অনুভূতিই মানুষকে ভাল থাকতে, সৎ এবং দায়িত্ববান হতে সাহায্য করে। আখেরাতের প্রতি ঈমান মানুষকে সৎ হওয়ার ব্যাপারে পূর্ণতা দান করে।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদের জন্য সর্বযুগেই একমাত্র অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি ছিলেন কোরআনের মূর্তপ্রতীক। তিনি তার পারিবারিক জীবন শুরু করেছিলেন বিবি খাদিজার সঙ্গে। একদিকে তরুণ যুবক মুহাম্মদ (সা.) যেমন ছিলেন সে যুগের সবচেয়ে আমানতদার, চরিত্রবান, সত্যবাদী আদর্শ যুবক-যার পরিচয় ছিল আল আমীন-আল সাদিক তেমনি বিবি খাদিজা ছিলেন সৎচরিত্রা আদর্শ মহিলা। তারও পরিচয় ছিল তাহেরা বা পবিত্র। এই পরিবারটি ছিল একটি আদর্শ পরিবার। খাদিজা তাহেরা ছিলেন অঢেল সম্পদের অধিকারী। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার স্বামী মুহাম্মদ (সা.)-এর মিশন কি? সেই মিশন বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত সম্পদ তিনি অকাতরে বিলিয়ে দিলেন। এ মহান ব্যক্তির জন্য শারীরিক কষ্ট স্বীকার করতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেননি। প্রৌঢ় বয়সে তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যান মগ্ন স্বামীর খাবার পৌঁছে দিতেন। তাঁর এ কার্যকলাপে খুশী হয়ে জিব্রাইল (আঃ) তাঁকে সালাম পৌঁছেছেন। পারিবারিক জীবনে এ দম্পত্তি ছিল অত্যন্ত সুন্দর ও শান্তিময়। খাদিজার (রা.) মৃত্যুর পরও রাসূল (সা.) তাকে স্মরণ করতেন। কোন বকরি জবাই হলে খাদিজার বান্ধবীদের হাদিয়া পাঠাতেন। রাসূল (সা.)-এ কার্যকলাপের ফলে অনেক সময় আয়েশা (রা.) মন্তব্য করতেন যে আল্লাহ আপনাকে তাঁর চেয়েও সুন্দরী বিদূষী স্ত্রী দান করেছেন অথচ আপনি এখনও খাদিজার কথা মনে করেন। আয়েশার (রা.) এ কথা রাসূল (সা.) অপছন্দ করেছেন। এ মহান দম্পতির সন্তানেরাও সমাজের আদর্শ। বিশেষ করে শেষ কন্যা হযরত ফাতেমা-যিনি বেহেশতে নারীদের নেত্রী হবেন।
বর্তমান সমাজে নতুন প্রজন্ম যে অনৈতিকতা ও চরিত্রহীনতার দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছে তা আমাদের জন্য চরম দুশ্চিন্তার কারণ। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ এত নীচু স্তরে নেমে গিয়েছে যা ভাবতে গেলে শরীর শিউরে উঠে। বর্তমান সময়ে আধুনিক প্রযুক্তি এগুলোতে আরও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নগ্নতা, অশস্নীলতা এখন আর কোন লজ্জার বিষয় নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ সমাজ পশুর সামজের চাইতেও নীচু স্তরে নেমে যাবে। মানুষ চলে যাবে আবার আইয়্যামে জাহেলিয়াতের সেই অন্ধকার যুগে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত পথের কোন বিকল্প নেই। আর এর কার্যক্রম শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। পরিবারে সন্তান সন্তুতিকে কি শিক্ষা দিতে হবে তার মূলনীতি পবিত্র কোরআনে সূরা লোকমানে আল্লাহ রাববুল আলামীন বলে দিয়েছেন : ‘‘হে আমার সন্তানেরা। তোমরা শিরক করো না। শিরক সবচেয়ে বড় যুলুম। অর্থাৎ সন্তানকে আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাবেই মাুনষ শিরক করে। বাবা মায়ের অধিকার আদায় করে না। বর্তমানে আমাদের দেশে নতুন আইন প্রবর্তিত হয়েছে। পিতামাতার ভরণ পোষণ না দিলে সন্তানকে জরিমানা দিতে হবে। জরিমানা করে কি হক আদায় করা যায়? এটা মনের ব্যাপার।
মনও তৈরি হয় ঈমান থেকে। আল্লাহ আমার রব ইলাহ। সমস্ত কিছুই তিনি দেখছেন। সব ব্যাপারে তাঁকেই জবাবদিহি করতে হবে। এ অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া ছাড়া অধিকার আদায় সম্ভব নয়। পাশ্চাত্য দেশে অমুসলিমদের সমাজে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ মেলে। সেখানে রাস্তা ঘাটে দেখা যায় বৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজেরাই কিনছে। বাসায় একা একা বসে আছে। কেউ হ্যালো বললেও তারা খুশী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মুসলিম সমাজে এর বিপরীত চিত্রই দেখা যায়। মক্কা মদীনায় গেলে দেখা যায় বৃদ্ধ পিতামাতাকে সন্তানেরা প্রতি ওয়াক্তের নামাযে হুইল চেয়ারে করে নামায পড়তে আনছে। তাদের খেদমতের জন্যে তারা সদা তৎপর। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এটাতো এ জন্যে যে তাদের আল্লাহর প্রতি ঈমান আছে। আল্লাহর নির্দেশ তারা জানে। ‘‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।’’ (সূরা নিসা-৩৬)। ‘‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না এবং পিতামাতার সাথে সদাচরণ করবে।’’ (সূরা বনী ইসরাইল-২৩)। ‘‘আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই।’’ (সূরা লোকমান-১৪)। পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব তৌহিদের পরেই। এজন্যে পিতামাতার অবাধ্যতা শিরকের পরেই স্থান পেয়েছে এবং নবী করীম (সা.) একে মহাপাপ বলে গণ্য করেছেন। ইসলাম পিতামাতার সঙ্গে ভাল ব্যবহার করার জন্যে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে বৃদ্ধকালে যখন তারা দুর্বল হয়ে পড়েন আর অপরের খিদমতের বেশি মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েন। তখন তারা শিশু বা তার চেয়েও অবুঝ হয়ে যান। সামান্য অবহেলাও তারা সহ্য করতে পারেন না। এ ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশ :
‘‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া আর কারও এবাদত করবে না এবং পিতা মাতার সাথে ভাল ব্যবহার করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমাদের কাছে বৃদ্ধ বয়সে থাকেন তবে তাদেরকে উহ্ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল। তাদের সাথে বিনয় অবনত হয়ে আচরণ কর। আর দোয়া করতে থাক, ‘‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে তারা শৈশবে আমাকে লালন পালন করেছে।’’ (সূরা বনী ইসরাইল-২৩-২৪)। সন্তানের জন্য মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ বিশেষভাবে দেয়া হয়েছে :
‘‘আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়তে আরও দুই বছর লেগে যায়। সুতরাং আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর। (সূরা লোকমান-১৪)। ‘‘আর আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছে এবং তাকে প্রসব করেছে। তার গর্ভধারণ ও দুধপান ছাড়ানোর সময় লাগে ত্রিশ মাস।’’ (সূরা আহকাফ-১৫)।
আল্লাহ পাক পিতামাতার প্রতি দায়িত্বপালনের নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথে মায়ের গর্ভকালীন, প্রসব কালীন, দুধপান সময়ের কষ্টের কথা উল্লেখ করেছেন। এ জন্যেই রাসূল (সা.) মায়ের ব্যাপারে তিনবার নির্দেশ দিয়েছেন আর পিতার ব্যাপারে একবার। যখন তাকে কতিপয় মুসলমান জিজ্ঞাসা করেন, কে আমার কাছে ভাল ব্যবহার পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন, তোমার মা। সে জিজ্ঞাসা করল তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে জিজ্ঞাসা করল এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে জিজ্ঞাসা করল এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা।
তিনি আরও বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তোমাদের মায়েদের সাথে সদয় ব্যবহার করার জন্য। অতঃপর নির্দেশ দিয়েছেন মায়েদের সাথে ভাল ব্যবহার করার জন্য। অতঃপর নির্দেশ দিয়েছেন মায়েদের সাথে ভাল ব্যবহার করার জন্য। এরপর নির্দেশ দিয়েছেন পিতার সাথে সদাচরণ করার জন্য। অতঃপর নির্দেশ দিয়েছেন নিকটাত্মীয়দের সাথে সদয় ব্যবহার করার জন্য।
যে সন্তান পরিবার থেকে এ শিক্ষা পায় সে সমাজে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে পারে না। পক্ষান্তরে পরিবারের টহপধৎবফ অবহেলিত সন্তানেরা হয় উচ্ছৃঙ্খল। দুনিয়াতে যত বড় জ্ঞানী-গুণী পন্ডিত তথা ভাল মানুষ আছে খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের মায়েরা ছিলেন আদর্শ মা।
আজকের সমাজে সৎ নেতৃত্বের কথা খুব বেশি বেশি শোনা যায়। সৎ নেতৃত্বের অভাবেই সমাজের এ দুরবস্থা এ কথার চর্চাও খুব বেশি হয়। এই সৎ নেতৃত্ব আকাশ থেকেও নাজিল হবে না আবার জমিন থেকেও পয়দা হবে না। সৎ নেতৃত্ব তথা সৎ মানুষ আসবে আদর্শ পরিবার থেকেই। আর সেই আদর্শ ইসলাম ছাড়া কিছুই নয়। দেশকে ভালোবাসলে দেশের কল্যাণ চাইলে পরিবারগুলোকে আদর্শ ইসলামী পরিবার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষাবিদ

সুন্দর সমাজব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন কুরআনি সমাজ প্রতিষ্ঠা, __ ড. মোবারক হোসাইন ৷ ৷ প্রথম পর্ব

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ মহাগ্রন্থ আল কুরআন। স্রষ্টার মহাদান, রাসূল (সা)-এর শ্রেষ্ঠ মোজেজা, বান্দার জন্য রহমতের ভান্ডার। সর্বোপরি বিশ্বমানবতার মুক্তির মহাসনদ। কুরআন এমন একটি কিতাব যা তিলাওয়াত করলেও সওয়াব, শুনলেও সওয়াব, শিখলেও সওয়াব, শেখালেও সওয়াব, আমল করলেও সওয়াব, কাউকে আমল করতে উৎসাহিত করলেও সওয়াব। কুরআনি সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শহীদ হলেও সওয়াব, গাজী হলেও সওয়াব। পৃথিবীতে কুরআন ছাড়া এমন কোনো গ্রন্থ নেই যা তার অনুসারীদেরকে এভাবে উজ্জীবিত করে।
কুরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্যঃ
১. সঠিক পথনির্দেশনা-
কুরআন বিশ্ববাসীর জন্য হেদায়েত, রহমত ও সুসংবাদের ঘোষণা এবং দিশেহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দানের নিমিত্তে আল্লাহ তায়ালা আল কুরআন অবতীর্ণ করেন।

২. সমস্যার সমাধান-
বিশ্বমানবতা যখন চরম সমস্যায় জর্জরিত হয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত, যখন বিশ্বমানবতা আশা করছিল ওপরের ফয়সালা, ঠিক তখনিই আল্লাহ তায়ালা সব সমস্যার সমাধানকল্পে আলোকবর্তিকা রূপে কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করেন।

৩. সতর্কবার্তা প্রদান-
কুরআন আল্লাহপ্রদত্ত সব নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার পাশাপাশি অতীতের হটকারী জাতিগুলোর ভুলের শোচনীয় পরিণামসমূহ উল্লেখের মাধ্যমের মানবসমাজকে সতর্কতা প্রদানের নিমিত্তে আল-কুরআন অবতীর্ণ হয়।
৪. ভ্রান্ত বিশ্বাসের অপনোদন-
ইসলাম-পূর্ব আরব সমাজের লোকেরা বিভিন্ন ভ্রান্ত আকিদা পোষণ করত। নিজেদের মনমতো বিধান তৈরি করে জীবন অতিবাহিত করত। তারা ছিল চরম কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। তাদের সে ভ্রান্ত ধ্যান-ধারণা খন্ডনের নিমিত্তে কুরআন অবতীর্ণ হয়।

৫. ইসলামী সমাজের রূপরেখা প্রণয়ন- মানবরচিত সব মতাদর্শ উৎখাত করে ইসলামী সমাজের বাস্তব রূপরেখা প্রণয়ন তথা কুরআনের বিধান কায়েম করা। বস্তুত এটাই ছিল কুরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য।
৬. শিরকমুক্ত সমাজ গঠন-
আল-কুরআন নাজিলের পূর্বে মানবতা ছিল জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। শিরক, কুফর আর নিফাকিতে সয়লাব ছিল মানবসমাজ। কুরআন এসেই বিশ্ববাসীকে এসব মুনকার কাজ থেকে মুক্ত করে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথনির্দেশ প্রদান করে।

৭. ইনসাফ প্রতিষ্ঠা-
অন্যায়, জুলম-অত্যাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘনে বিশ্বমানবতা অস্থির। আর এ জন্য দরকার ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠিত হওয়া। কুরআন নাজিলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।

৮. রবের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন-
প্রতিটি মুমিনেরই একান্ত কামনা থাকে তার মনিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ। কুরআন এ কামনা পূরণে পথনির্দেশ হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছে।

৯. সত্যায়নকারী-
সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব হলো আল-কুরআন। এর আগে অনেক আসমানি কিতাব ও অগণিত নবী-রাসূল পৃথিবীতে আগমন করেছেন। কুরআন এসে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলসহ আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের সত্যতা প্রমাণ করেছে।

১০. তাজকিয়ায়ে নফস-
সর্বোপরি দুনিয়ার সব কর্মকান্ডে বান্দার আত্মপরিশুদ্ধি লাভে কুরআন এক কার্যকর টনিক হিসেবে অবতীর্ণ হয়।
কুরআনি সমাজ কেন দরকার?
কুরআনি সমাজ মানে আল্লাহর অহির দিকনির্দেশনার আলোকে সমাজ পরিচালিত হবে। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর হেদায়েতের অনুসরণের বিকল্প নেই। আল্লাহর রাসূল হিলফুল ফুজুুল করেও শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। হেরাগুহায় ধ্যান করেছিলেন। অহি দিয়ে ২৩ বছরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। সুন্দরী রমণী ঘর থেকে একাকী বের হতে পারতো। জাকাত নেয়ার মতো লোক ছিল না। হযরত আবদুল আজিজ ছেলেকে রাষ্ট্রীয় তহবিলের একটি খেজুর দেননি আল্লাহর ভয়ে। ব্যক্তিগত কথা বলার সময় রাষ্ট্রেীয় অর্থের বাতি নিভিয়ে রাখতেন। কুরআনি সমাজ ছাড়া এমন সুখ পাওয়া যায় না।
পুরো লিখাটা ধারাবাহিকভাবে পর্ব আকারে চলবে ইনশাআল্লাহ ৷
 লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির 

রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

ব্যারিস্টার আব্দুররাজ্জাকের পদত্যাগ,মুজিবুর রহমান মন্জুর বহিস্কার ও গনতান্ত্রিক রাজনীতির সুপুত্র জামায়াত।

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ শিরোনামের শেষাংশ দিয়ে শুরু করা যাক,অর্থনীতিবিদ প্রফেসর রেহমান সোবহানের স্ত্রী প্রফেসর রওনক বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উপর গবেষনা করে বলছেন একমাত্র গনতান্ত্রিক চর্চা ও। জবাব দিহিতা জামায়াত ইসলামিতে আছে। আবার ব্যারিস্টার রাজ্জাক সাহেব পদত্যাগ পরবর্তি বিবিসি তে সাক্ষাতকার দিয়ে বলেছেন জামায়াতে ইসলামি তে গনতান্ত্রিক চর্চা বিদ্যমান বলে সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে সিদ্বান্ত হয়।
ফলে তিনি যে বিষয কেন্দ্র করে পদত্যাগ করছেন তা সংখ্যাগরিষ্ট মতামতের আলোকে ই বাতিল হয়েছে।। এটা ই শুরাই সিদ্বান্ত। ফলে জামাতের শহিদ নেতারা নিজের জিবন দিয়ে আনুগত্য ও শৃংখলার অনপম দৃষ্টান্ত স্বাপন করেছেন। তারা প্রত্যকেই জিবন বাচানোর জন্য ক্ষমা চাইতে পারতেন , সুন্দর ভাবে নিশ্চিন্তে অপরাধী মননিয়ে রাজনীতি করতে পারতেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক ওখানে পরাজিত।
তার পর জামাতের সিদ্বান্ত গ্রহন যে কোন ব্যাক্তির ইচ্চা অনিচ্ছা বা স্বৈরতান্ত্রিক হয়না তা তিনি দলের বাহিরে এসেও বলছেন। সেখানে তিনি অনন্য।
এজন্য ই জামায়াত গনতান্ত্রিক রাজনীতির সুপুত্র। ব্যারিস্টার সাহেব শহিদ নেতাদের স্তর থেকেএকটু পিছনে পড়ে গেলেন মাত্র।তার মতো নেতা যে কোন সংগঠনে প্রয়োজন, দেশ নয় শুধু বিশ্ব নেতৃত্ব ও অবদান রাখার মতো যোগতা রয়েছে তার।

তার পদত্যাগ কে পদস্খলন বলা যাবেনা তবে বিরাট ভুল
জামায়াত কত বিচক্ষণ রাজনীতি করে ত্যাগ ও শৃংখলা, পরাকাষ্ঠা দেখাতে পারে তা বার বার প্রমান হয়েছে। জামায়াত সেক্রেটারি ডাক্তার সফিক তা তুলে ধরে ছেন। তার বিবৃতি বাংলাদের রাজনীতির জন্য একটি শিক্ষা।এর আগে ও বিবিসির সাথে তার একটি সাক্ষাৎকার অতুলনিয় এবং বিজ্ঞতার পরিচায়ক।

যারা রাজনিতি নিয়ে চিন্তা করে তাদের কে ২৫ বছর জামায়াত নিয়ে চিন্তা করার করার জন্য পড়া লেখার টেবিলে বসিয়ে দিয়েছেন।
মজিবুর রহমান মন্জু র বহিস্কার এবং তার আবেগ মিশ্রিতস্টাটাস অনেককেই তাড়িতাড়ি করবে। একজন মন্জু গড়ে উঠতে বহু সময় লাগে।
মন্জুরা আনুগত্যের শিকলের বাধা না থাকলে হয়তো জাতি আরেকজন
মাহমুদুর রহমান ফেতে পারে। মন্দ কি।? ইসলাম ও মুসলিম উম্মার জন্য
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত কিন্তু ইমানের অগ্নি পরিক্ষায় কাপূষ নয় এমন লোক খুব প্রয়োজন। মন্জুরা তেমন হোক।

তবে এ ও সত্য অদুর ভবিষ্যতে ব্যারিস্টার রাজ্জাক রা জামাতের রাজনীতিতে ফিরে আসবেন। হয়তো অন্য আংগিকে, মন্জুরা ও ভুমিকা রাখবেন ইতিবাচক অবয়বে
কেননা কেবল ৭১ জামায়াকে মূল্যায়নের জন্য একমাত্র ইস্যুহতে পারেনা
বাংলাদেশের ভূ নাজনীতিক অবস্হান , বিশ্ব রাজনীতে এঅন্চলের পরাশক্তি গুলোর গোপন পরিকল্পনা জামাতকে প্রতিরোধকারি শক্তি হিসেবে দেখছে বিধায়
জামায়ত বা জামায়াতে অন্যরুপ সামনের কাতারে থাকবে প্রতিরোধকামি ফোর্স হিসাবে । তার প্রসব বেদনা শুরু বোধহয়।
একান্ত নিজের ভাবনা।।।।।।।
সংগৃহীত

শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী থেকে মজিবুর রহমান মনজুকে বহিস্কার ও তার আবেগঘন স্ট্যাটাস

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ গতকাল ১৫ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার, আনুমানিক রাত সাড়ে সাতটার দিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্মানিত আমীর জনাব মকবুল আহমদের পক্ষ থেকে নির্বাহী পরিষদের একজন সম্মানিত সদস্য আমাকে জানান যে আমার দলীয় সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
বেশ কয়েক বছর যাবত সংগঠনের কিছু বিষয়ে আমি দ্বিমত করে আসছিলাম। মৌখিক ও লিখিত ভাবে বৈঠক সমূহে আমি প্রায়ই আমার দ্বিমত ও পরামর্শের কথা সম্মানিত দায়িত্বশীলদের জানিয়েছি।
আভ্যন্তরীণ ফোরামের পাশাপাশি আকারে ইংগিতে প্রকাশ্যেও আমি আমার ভিন্নমত প্রকাশ করে এসেছি। আমি যেহেতু সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করি এবং প্রকৃতিগত কারণে আমাকে নানা ধরনের আড্ডা, ঘরোয়া আলোচনা, সেমিনার এ অংশ নিতে হয়। সেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তন-পরিবর্তন প্রসঙ্গে আমি অনেক জায়গায় খোলামেলা মত প্রকাশ করে থাকি। এসব আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে মিসর, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, তিউনিশিয়ার ইসলামী ধারার রাজনীতির উত্থান পতন ও বাংলাদেশে জামায়াতের রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয় গুলো উঠে আসে।
জামায়াতে রাজনৈতিক সংস্কারের যৌক্তিকতা, ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা প্রসঙ্গে আমার সুস্পষ্ট মত ছিল যে, জামায়াতে প্রয়োজনীয় সংস্কার না হলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। আমার এরুপ খোলামেলা মত নিয়ে জামায়াতের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের মাঝে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী হয়।
বছর কয়েক আগে শিবিরের সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল শিশির মুহাম্মদ মনিরের মোবাইল ফোন হ্যাক করে পুলিশ তুরস্কের গুলেন মুভমেন্ট সংক্রান্ত একটি মতামত জাতীয় মেসেজ পায়। যার ভিত্তিতে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তাকে গ্রেফতারের জন্য তার বাসায় অভিযান চালায়। শিবিরের সাবেক সভাপতি জাহিদুর রহমান ও আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের কৌশলী আসাদ উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। পরদিন সংবাদপত্রে এ নিয়ে একটি বানোয়াট রিপোর্ট ছাপা হয়।
রিপোর্টে গুলেন মুভমেন্টের আদলে বাংলাদেশে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রকারী ও পরিকল্পপনাকারী হিসেবে আমি সহ ১১ জনের একটি কল্পিত বৈঠকের বর্ণনা করা হয়। এর ভিত্তিতে আমাদের সকলের বিরুদ্ধে একটি রাষ্ট্রবিরোধী (সেডিশন) মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।
তখন আমি গ্রেফতার ও পুলিশি নির্যাতন এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে চলে যাই। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আমি জানতে পারি যে সংগঠনের উর্ধতন দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলা ও অধস্তন শাখা গুলোতে আমি সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে একটি মৌখিক সার্কুলার জারী করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে আমি গুলেন মুভমেন্টের আদলে একটি ভিন্ন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি অতএব আমার কথা-বার্তা ও কার্যকলাপে জনশক্তি যাতে বিভ্রান্ত না হয়। তারা যাতে আমাকে এড়িয়ে চলে।
আমি জামায়াতের একজন সদস্য অথচ আমার কাছ থেকে কিছু জানতে না চেয়ে, আমাকে জবাবদিহির আওতায় না এনে বা আমি যদি দোষ করে থাকি সে বিষয়ে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে আমার বিরুদ্ধে সার্কূলার জারী করায় আমি এর প্রতিকার চেয়ে আমীর বরাবরে আবেদন জানাই। তথ্য প্রমাণ সহ আমার স্পষ্ট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের সম্মানিত আমীর, সেক্রেটারী জেনারেল, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল, মহানগরী আমীর সহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সম্মিলিত ভাবে আমাকে নিয়ে বসেন।
তাঁরা আমাকে জানান যে বিষয়টা নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে আমি যেরকম সার্কুলারের কথা শুনেছি বিষয়টা তা নয়। তারা আমাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যে, বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা বা ঘরোয়া সেমিনারে কিংবা ফেসবুকে আমি পরোক্ষ পন্থায় যে ধরনের খোলামেলা মত প্রকাশ করি তা শৃংখলা ও গঠনতন্ত্র বিরোধী। আমি লিখিত ভাবে আমার বক্তব্য উপস্থাপন করি ও তাদের অভিযোগ খন্ডন করি। বিনয়ের সাথে জানাই যে, আমি সংগঠনের আভ্যন্তরীণ নানা অনিয়ম ও সংস্কার প্রসঙ্গে সংগঠনের ফোরামে আমার সুস্পষ্ট মত-দ্বিমত উল্লেখ করি। কিন্তু জনসম্মুখে আমার সকল মত পরোক্ষ। তাতে শৃংখলা ও গঠনতন্ত্রের কোন লংঘন হয়না। তাছাড়া আমি সংগঠনের পদস্থ কোন দায়িত্বশীলও নই।
তাঁরা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি আয়োজিত “চলমান রাজনীতি ও আগামীদিনের বাংলাদেশ” শীর্ষক সেমিনারে আমার উপস্থাপিত একটি প্রবন্ধ সেখানে প্রমান হিসেবে হাজির করেন। যাতে আমি বলেছি বাংলাদেশে সেকুলার, গণতন্ত্রী ও ইসলামী সব রাজনৈতিক দল ব্যর্থ হতে চলেছে। তৃতীয় শক্তি নামে যারা এসেছে তাদের প্রতিও জনগণের কোন আস্থা নেই। ফলে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের উন্মেষ অপরিহার্য যারা মানবাধিকার, সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক আধুনিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারে। যারা হবে ধর্মীয় বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধে অনুপ্রাণিত কিন্তু ধর্মীয় দল নয়। যে দল হবে গণমুখী ও আপাত: উদারনৈতিক।
এই প্রবন্ধে ইসলামী রাজনৈতিক দল ব্যার্থ হতে চলেছে মর্মে আমি যে বিশ্লেষণ দিয়েছি সে ব্যপারে তাঁরা আপত্তি তোলেন। জামায়াতে ইসলামীর সদস্য হয়ে একটি প্রকাশ্য সভায় ইসলামী দল ব্যর্থ হতে চলেছে এরকম মত দিতে পারি কিনা তাঁরা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।
আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলি যে, এখানে আমি সামগ্রিকভাবে ইসলামী দলগুলোর কথা বলেছি জামায়াতের নাম সুস্পষ্ট ভাবে বলিনি। তাছাড়া এটা একটা ঘরোয়া সেমিনার এবং এতে রাষ্ট্র ও রাজনীতির একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে আমি বক্তব্য দিয়েছি। জামায়াতের নেতা বা কর্মী হিসেবে মত প্রকাশ করিনি। আমি শুধু জামায়াতের সদস্য নই রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিকও বটে। আমি যখন জাতীয় রাজনীতির কথা বলবো তখন সব মত পথ ও মতাদর্শের রাজনৈতিক কথাই বলতে হবে।
আমি প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ বিএনপি’র সমালোচনা করতে পারবো কিন্তু নিজেদের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাব তা কীভাবে সম্ভব। আমিতো ইসলামী রাজনীতির গুরুত্ব ও প্রভাব নিয়ে অনেক ইতিবাচক কথা বলেছি। কিন্তু আত্ম সমলোচনা মূলক বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলে আমার মতটাতো একপেশে হিসেবে গণ্য হবে। অতএব আমি মনেকরি এজাতীয় মত প্রকাশে কোন সমস্যা নেই।
যাই হোক নেতৃবৃন্দ আমার সব কথা শোনার পর স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে জামায়াতের একজন সদস্য হিসেবে এরকম মত প্রকাশ করার সুযোগ নেই। এটা শৃংখলা ও গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ। তারা আমাকে এ বিষয়ে সতর্ক করে দেন। আমি বিনয়ের সাথে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষন করি এবং আমার অবস্থানে অটল থাকি।
আমি ভেবেছিলাম এই স্পর্ধা ও মতামতের পর নেতৃবৃন্দ আমার উপর চরমভাবে অসন্তুষ্ট হবেন এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা স্বরুপ আমার সদস্যপদ বাতিল করবেন। কিন্তু তারা আমার প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল, উদার ও দরদী আচরণ করেন। তাঁরা আমাকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিশ্বস্ত কাজে সংযুক্তও করেন।
সদ্য সমাপ্ত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জামায়াতের অংশগ্রহণ নিয়ে আমার দ্বিমত ছিল। তারপরও নির্বাচনের পূর্বে আমি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে জাতীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়, সংলাপ, বৈঠক সহ একটি নির্বাচনী আসনে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করেছি।
নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমি কিছু স্বাধীন মত প্রকাশ করি। যাতে আমি সরকারের নির্লজ্জ ভোট ডাকাতি ও বিরোধী জোট এবং দলগুলোর সমলোচনা করি। রাজনৈতিক দলের নেতাদের দায় স্বীকার করে পদত্যাগের আহবান জানাই। শুধু তাই নয় আমি নিজের দায় থেকেও অক্ষমতা অপারগতার জন্য ক্ষমা চাই।
সম্প্রতি গত ৪ ফেব্রুয়ারি’২০১৯ তারিখে আমি ফেসবুকে “তরুণ ও তরুণোর্ধদের নতুন রাজনীতি” নামে একটি স্ট্যাটাস দেই। যাতে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাবনাময় তরুণদের তাদের দল মতের গন্ডি থেকে বেরিয়ে এসে একটি জাতীয় মুক্তি আন্দোলন সংগঠিত করার আহবান জানাই। এ আহবানে অনেকেই উৎসাহ বোধ করেন। এ বিষয়ে বিভিন্ন দলীয়, নির্দলীয়, আমার পরিচিত বন্ধু স্বজনদের কৌতুহল তৈরী হয়।
ফেসবুকে নামে বেনামে বিভিন্ন আই.ডি থেকে আমি জামায়াত ভেঙ্গে নতুন দল করছি বলে প্রচারণা চলতে থাকে। গত কয়েক সপ্তায় আমি ব্যক্তিগত বা পেশাগত কাজে যেখানেই গিয়েছি আমার বন্ধু স্বজনদের অনেকেই এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়ে কথা বলেন। কেউ কেউ তাদের নিজস্ব বন্ধু সার্কেলে আমাকে দাওয়াত দেন। আমি সিলেট ও ঢাকার উত্তরায় এরকম দুটি সার্কেলে যোগদান করি এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন, জাতীয় মুক্তি আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে কথা বলি। সেসব আলোচনায় আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, ঐক্যফ্রন্ট সকল বিষয়েই আলোচনা হয়। আমি আমার মত ও বিশ্লেষণ উপস্থাপন করি। আমি জানতে পারি যে ফেসবুকের নানা প্রচারণা ও আমার এসব মত প্রকাশে জামায়াতের দায়িত্বশীলগণ পূণরায় অসন্তোষ বোধ করছেন এবং আমার গতিবিধি চলাচল মনিটরিং করছেন। তাঁরা আবারও অধস্তন শাখা ও জেলা সমূহে আমার বিরুদ্ধে মৌখিক সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে জামায়াতের একজন নির্বাহী পরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে ৩ জন সম্মানিত দায়িত্বশীল আমার সাথে বৈঠকে মিলিত হন। তারা আবারও আমার বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লংঘন ও শৃংখলা ভঙ্গের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিনয়ের সাথে আমি তাদের জানাই যে আমি জামায়াতের একজন নগন্য সদস্য এবং দেশের নাগরিক। স্বাধীন মত প্রকাশ আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাষ্ট্রীয় অধিকার। আমার মত প্রকাশে জামায়াতের গঠনতন্ত্র বা শৃংখলার কোন লংঘন হয়না বলে আমি মনেকরি। আমি যা করি তা স্বচ্ছ ও প্রকাশ্য। এখানে ষড়যন্ত্র বা গোপনীয়তার কিছু নেই।
আমি তাদের মাধ্যমে জামায়াতের আমীর বরাবর একটি লিখিত বক্তব্য ও ব্যখ্যা প্রদান করি। আমার বিরুদ্ধে জামায়াত ভেঙ্গে নতুন দল গঠনের যে অপপ্রচার তার বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাই। তাঁরা অসন্তুষ্টচিত্তে আমার আবেদন গ্রহণ করেন এবং জামায়াতের আমীরের নিকট তা উপস্থাপনের আশ্বাস দেন।
আমার আবেদনের বিষয়ে কোন তদন্ত না করে গতকাল রাতে আমাকে টেলিফোনে জানানো হয় আমার সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। মনে ভীষন ব্যথা ও কষ্ট অনুভব করলেও আমি সন্তুষ্টচিত্তে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।
১৯৮৮ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরে যোগদানের মাধ্যমে আমি ইসলামী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাই। যাদের দাওয়াতে আমি এই আন্দোলনের সন্ধান পাই আমার বিবেচনায় তারা তৎকালীন সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯টি খ্যাতনামা ছাত্রসংগঠনের কার্যক্রম স্বশরীরে পর্যবেক্ষণের সুযোগ আমার হয়েছে। আমার মনে হয়েছে এগুলোর চাইতে ইসলামী ছাত্রশিবির সব দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ ও উন্নত।
আমার শিবিরে যোগদান ছিল আমার পরিবারের সাথে একটা বিদ্রোহ। শিবিরের কর্মী হওয়ার অপরাধে আমাকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ও গৃহবিতাড়িত হতে হয়েছে। সেই থেকে সংগঠনই আমার পরিবার।
৮৮ থেকে ২০০৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি শিবিরে ছিলাম। এই ১৫ বছরের সংগ্রামী জীবন আমার শ্রেষ্ঠ সময়। আমার জ্ঞান, দৃষ্টি ও সাহসের বিকাশ এই সংগঠনেই হয়েছে। আমি সত্য বলতে, ন্যায়ের পক্ষে থাকতে, নি:সংকোচে মত প্রকাশ করতে এবং জেল জুলুম ও গুলী বোমার মুখোমুখি দাড়িয়ে বিদ্রোহ করতে শিখেছি এই আন্দোলনে এসে। আমার কাছে শিবিরের অনুষ্ঠান গুলোতে সবচাইতে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল “সাধারণ প্রশ্নোত্তর”। যা খুশী তা প্রশ্ন করা যেতো। আহ্ কী অপরিসীম স্বাধীনতা। কী অদ্ভুত পরিচ্ছন্নতা, স্পস্টতা ও স্বচ্ছতা! আমি এখনো মনেকরি “চির উন্নত মম শির আমার প্রাণের ছাত্রশিবির”।
সত্যি কথা বলতে ২০০৪ সালে জামায়াতে যোগদানের পর আমি কিছুটা থমকে যাই। জামায়াত বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন ও প্রচলিত পূঁতি গন্ধময় রাজনীতির সাথে সমন্বয় করে পথ চলার এক চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী তাদের কর্মসূচি ও কর্মনীতিতে গতিশীলতা নেই। আমি মনে করি প্রচলিত রাজনীতির সাথে তালমিলিয়ে ইসলামী রাজনীতির পথে পা বাড়াতে জামায়াত প্রস্তুতির আগে ময়দানে নেমে পড়েছে। ফলে সময় আসার আগেই তারা কঠিন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছে। যে বাঁধা তারা মোকাবিলা করেছে তা অবিস্মরণীয়।
রাসূল (স.) এর আন্দোলন আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে যখন ওপেন হয় তা আর আন্ডারগ্রাউন্ডে ফিরে যায়নি। তা বিজয় পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়েছে। বাংলাদেশে জামায়াত একাধিকবার ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে আবার কয়েকবার আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে হয়েছে। জামায়াতের কারণে এখানে ইসলাম সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সমাজে জামায়াতের লোক মানেই সৎ, আদর্শবান, বিবেকবান, ভাল মানুষ। এই স্বীকৃতি বিশাল একটা অর্জন।
জামায়াতের শীর্ষস্হানীয় বেশ কিছু দায়িত্বশীল ও উল্লেখযোগ্য সাবেক শিবির সভাপতিদের উপস্থিতিতে ২০০৭ সালে মীর কাসেম আলীর ব্যবস্থাপনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে জামায়াতের জন্য যে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছিল তা ছিল একটি অসাধারণ কৌশলপত্র।
যদি তখন থেকে তার বাস্তবায়ন শুরু হতো তাহলে বাংলাদেশেও আজ তুরস্ক বা মালোয়েশিয়ার মত ইসলাম ও ন্যায়পরায়ন শাসন বান্ধব সরকার ক্ষমতায় আসীন হতো বলে আমার বিশ্বাস।
পরবর্তীতে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান আরও প্রাগম্যটিক ও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেসব কোনটাই বিবেচনায় নেয়া হয়নি। জামায়াতে ভেতরকার নিয়মতান্ত্রিক সংস্কারের দাবী বা আলোচনা সম্পর্কে বাইরের কারও জানার সুযোগ নেই। এমনকি সর্বোচ্চ মানের সদস্যরাও তা জানতে পারেনা।
এসব আলোচনা বাইরে এলে তা হয় গঠনতন্ত্র ও শৃংখলা পরিপন্থী। তাহলেতো জামায়াত কেবল পরিবেশ পরিস্থিতিতে বাধ্য হওয়া ছাড়া কোন পরিবর্তন করবেনা। যেমন আছে তেমনই থাকবে। সাধারণ মানুষের চিন্তা, সাধারণ সদস্য বা কর্মীর চিন্তার সাথে দলের নীতি নির্ধারকদের সংযোগ কীভাবে ঘটবে তাহলে?
আমি সামান্য কিছু আলোচনাকে নিজ দায়িত্বে ওপেন করেছি। দেশের শীর্ষস্হানীয় চিন্তক ও বুদ্ধিজীবিদের সাথে জামায়াতের ভাল দিক দূর্বলতার দিক নিয়ে খোলাখুলি মত বিনিময় করেছি। জামায়াত কে নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দৃষ্টিতে জামায়াতের কী কী বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন তারা তা বলেছে। আমি গুরুত্বপূর্ণ লোকদের সাথে জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সাক্ষাত ও মতবিনিময়ের সংযোজক হিসেবে কাজ করেছি। হয়তো এজন্য তাদের দৃষ্টিতে শৃংখলা ভঙ্গ হয়েছে। সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়েছে সেজন্য তারা অনিচ্ছা সত্বেও আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছেন। 
তবুও আমার প্রিয় দায়িত্বশীলদের কাছে আমি আজ ঋণী। মেনে নিচ্ছি তাদের বিবেচনায় তারা সঠিক।
আমার আবেগ বোধ শক্তি সবই ভুল। তাই আমার আজ কোন আফসোস নেই। তারা আজ আমাকে মুক্ত করে দিয়েছেন। আমার ৩০ বছরের সাংগঠনিক জীবন শেষ। আমি এখন থেকে ইচ্ছেমত আমার কথা লিখতে পারব, বলতে পারব। রাজনীতি ও সমাজ নিয়ে আমার স্মৃতি-অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারব। আমি যে স্বপ্ন দেখি তার জন্য এখন নি:শংক চিত্তে কাজ করবো। যার জন্য আমাকে শত শত হাজার হাজার ভাই বোনেরা ভালবাসেন, উৎসাহ দেন, দেশের আনাচে কানাচে দূর দুরান্ত থেকে ফোন করেন, ডাকেন তাদের কাছে ছুটে যাব- কাজ করবো।
আমি চলে যাচ্ছি কিন্তু এই বিশ্বাস নিয়ে যাচ্ছি যে, এই আন্দোলন আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এই সংগঠন মুহাম্মাদ কামারুজ্জান, মীর কাসেম আলী ও ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকদের প্রস্তাব একদিন গ্রহণ করবে।
শহীদ নিজামী ভাই, মুজাহিদ ভাই, কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী, মোল্লা ভাই সহ শত শত শহীদের রক্ত একদিন কথা বলবে।
বিদায় হে প্রিয় কাফেলার সাথীরা। 
যারা আমাকে ভালবাসেন তারা দোয়া করবেন। যারা ঘৃণা করেন তারা ক্ষমা করে দেবেন। বিদায় বেলায় সেই স্মৃতি বিজড়িত গানটি হৃদয়ে বাজছে—-
আমি আর নেই সেই মিছিলে... ভাবতেই বন্ধু বুক ভেঙ্গে যায়....
মজিবুর রহমান মন্জু
১৬/০২/২০১৯

ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ প্রসঙ্গে যা বললেন শাহ আব্দুল হান্নান :


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ প্রসঙ্গে জামায়াতের আন্দোলন ও রাজনীতির নিবিড় পর্যবেক্ষক সাবেক সচিব শাহ আব্দুল হান্নান বলেছেন, জামায়াতের মধ্যে কোন সংস্কার হয়নি বলে উল্লিখিত বক্তব্য সঠিক নয়। এর মধ্যে জামায়াতের কার্যক্রমে অনেক সংস্কার ও অগ্রগতি হয়েছে। জামায়াত নারীদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিযেছে। উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করেছে অনেককে। জামায়াতের নারী সদস্যের সংখ্যা এখন অর্ধেকের কাছাকাছি পৌঁছেছে। মেয়েদের রুকন করার ব্যাপারে কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। দলের সংখ্যালঘু সদস্য করা হয়েছে ৮০ হাজারের কাছাকাছি। সামনে এ সংখ্যা আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

জনাব শাহ হান্নান পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী আর বাংলাদেশ জামায়াত এক নয় বলে উল্লেখ করে বলেন, বর্তমান জামায়াতে ইসলামী ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।স্বাধীনতার সময়ের ভূমিকার জন্য তাদের ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি প্রাসঙ্গিক নয়। এর পরও দলের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম জেল থেকে মুক্তি পাবার পর বায়তুল মোকাররমে জামায়াতের বিশাল জনসভায় ১৯৭১ সালে জামায়াতের সে সময়ের রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য দু:খ প্রকাশ করেছেন। প্রয়োজন মনে করা হলে এখন আবারো ক্ষমার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে।

জামায়াতের নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে জনাব শাহ হান্নান বলেন, রাজনৈতিক দলের কিছু ঐতিহাসিক নাম রয়েছে। যেমন মুসলিম লীগ ভারতে, পাকিস্তানে ও বাংলাদেশে রয়েছে । একইভাবে জামায়াতে ইসলামীও ভারত পাকিস্তান এমনকি শ্রীলঙ্কায়ও রয়েছে। ১৯৭৯ সালে এখানে যে জামায়াত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটি নতুন জামায়াতে ইসলামী। একেবারে অল্প সংখ্যক রয়েছেন যারা স্বাধীনতা পূর্ব জামায়াতের সাথে যুক্ত ছিলেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি নিয়ে ভিন্ন কোন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

ব্যারিষ্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এই সিদ্ধান্তটিকে সঠিক বলে মনে করি না। কোন সংগঠন বা ফোরামে সবার সব পরামর্শ গৃহীত হবে এমনটি বাস্তব সম্মত নয়। এরপরও এটি তার
অধিকার। আমি তার সব ধরনের কল্যাণ কামনা করি।

রাজনীতির নামে অপরাজনীতি -মুহাম্মদ আবদুল জব্বার

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ছোট বেলা বাবা-চাচাদের কাছে শুনতাম-“রাজার যে নীতি তাই রাজনীতি। রাজনীতি দেশ ও দশের তরে! রাজনীতি কেবলমাত্র দেশের সিংহভাগ মানুষের জীবন-মান উন্নয়নের জন্য।” কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় রাজনীতির অর্থে পরিবর্তন এসেছে! এখন রাজনীতির অর্থ নেকামী, ধান্ধাবাজি, শঠতা, ধোঁকাবাজি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশে বর্তমানে রাজনীতি হলো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়ার অন্যতম হাতিয়ার। রাজনীতি হলো ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যম! এমন রাজনীতিকে সাধারণ মানুষ মন থেকে ঘৃণা করে! এহেন অপরাজনীতির কবল থেকে দেশবাসী মুক্তি চায়।
একসময় রাজনীতির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ছিল, ছিল ভালবাসা! আর এখন রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকেও মানুষ পছন্দ করে না। যে রাজনীতি মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে, ন্যায়বিচার ব্যবস্থা ও সুশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়; সত্যকে সত্য বলতে পারে না, নেতার অন্ধ আনুগত্য করতে গিয়ে নীতিকে বিসর্জন দেয়, অকপটে মিথ্যার বেসাতির জাল বিস্তার করে স্বার্থসিদ্ধি করতে কূটজাল বিস্তার করে, এসব জনবিধ্বংসী ছলচাতুরীকে রাজনৈতিক নেকামী বা অপরাজনীতি বৈ কি বলা চলে? সেই অপরাজনীতির খপ্পরে এখন সিংহভাগ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক দল এবং সমগ্রদেশবাসী। তাই দেশ ও দশের তরে রাজনীতির প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সর্বত্র প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার রাজনীতির তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এই প্রতিযোগিতায় কার কি ক্ষতি হচ্ছে তাতে কার কী আসে যায়! এমন রাজনীতির কবলে পড়ে নিঃশ্ব হচ্ছে নাম না জানা কত মানুষ! আমজনতা জজমিয়া আর জাহালম নাটক আরো কত দিন নীরবে নিবৃত্তে সহ্য করে যেতে হবে তা কে বা জানে! যে রাজনীতিতে রাজনৈতিক সহকর্মীকে খুন করতে হাত কাঁপে না! অপরাজনীতির দৌরাত্ম্য এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পক্ষ-প্রতিপক্ষ সে যেই হোক না কেন যে কোন মূল্যে নিজের মতের বিপক্ষ শক্তিকে কুপকাত করতে পারাটাই যেন রাজনৈতির মুখ্য বিষয়। যেখানে আদর্শ নীতি নৈতিকতার কোন বালাই নেই। প্রতিনিয়ত এমন পরিস্থিতি দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এক নায়কতন্ত্র ধরনের শাসন ব্যবস্থার কোপানলে দেশ। আওয়ামী শাসনে পিষ্ট হয়ে মানুষ তাদের সঠিক চিন্তা ও মতামত ব্যক্ত করতে পারছে না বল্লেই চলে। মামলা-হামলা থেকে জান বাঁচানোই যেখানে মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এহেন পরিস্থিতির ফলে সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চার পরিবর্তে বল প্রয়োগের রাজনীতি সৃষ্টি হচ্ছে, প্রকৃত রাজনৈতিক অদর্শ কর্মীর সৃষ্টি না হয়ে সুবিধাবাদী কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে, যা রাজনৈতিক দলসমূহকে চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিবে। এতে করে সময়ের পরিক্রমায় একটি পক্ষ একদলীয় শাসক গোষ্ঠীর জুলুমবাজীর শিকার হয়ে সুস্থ রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়বে। যা সুস্থ রাজনীতির চর্চা ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে দুর্বল করে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিবে। শেষতক যার পরিণিত হবে ভয়াবহ!
বর্তমানে ক্ষমতা কুক্ষিগত করাই যেন দেশে রাজনৈতিক ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আগে শুনতাম মানুষ যাকে ভোট দেয়, নিজের চাওয়ার চাইতে জনগণের চাওয়াতে জননেতা বা জনপ্রতিনিধি হয়। আগে সর্বত্র একটা আওয়াজ ছিল, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। টুকটাক ভোট দেয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে টানাপোড়েন হত। আর এখন ঘটছে ঠিক তার উল্টোটা। এখন আওয়াজ শুনা যায়- আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব, সকাল সন্ধ্যা রাতেও দেব! একেবারে ভোট ডাকাতি। এতে কারো বুঝতে বাকী থাকে না যে, এসব ক্ষমতান্ধরা জনগণের চাওয়া নয় বরং নিজেই নেতা হিসেবে তাদের ঘাড়ে চেপে বসছে। জোর করে ভোটাধিকার হরণ করে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে, খুনাখুনি করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নেতা হওটাই যেন এদের বিশেষ ক্রেডিট! মানুষ এধরনের রাজনৈতিক নেকামী মন থেকে ঘৃণা করে। তবে সাধারণ মানুষের ঘৃণা করা না করাতে ক্ষমান্ধদের কিছু যায় আসে না। এদেরকে রাজনৈতিক কীট বৈ কী বা বলা চলে! এদের জন্য ধিক!
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় সমাসীনের পর থেকে দেশকে বিরোধী দল শূন্য করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে! সেই মিশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের সাথে তারা কী না আচরণ করেছে? খালেদা জিয়াকে বছরের পর বছর কারাগারে আবদ্ধ করে, তারেক জিয়াকে সাজা দিয়ে বিএনপিকে খন্ড-বিখন্ড করতে কী তারা বাকী রেখেছে ? অপর দিকে জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করতে টেস্ট কেইস হিসাবে শীর্ষ নেতাদের হত্যা ও নানা মামলায় সাজা কার্যকর অব্যাহত রেখেছে। পুলিশি হয়রানির কারণে বিরোধী দলীয় কার্যালয়গুলো অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে আছে। সভা-সমাবেশ নেই বল্লেই চলে। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে আর কার্যত কোন বিরোধী দল আছে বলে মনে হয় না। এহেন পরিস্থিতিতে চারদিকে আয়ামী লীগের জয় জয়াকার অবস্থা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন- সরকার বিরোধী প্ল্যাটফর্ম সক্রীয় হয়ে না উঠলে আওয়ামী লীগ অচিরেই নিজেদের পতন নিজেরাই ডেকে আনবে। তাই তাদের উচিত প্রতিহিংসা আর জেল জুলুমের পথ পরিহার করে রাজনৈতিক সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা। যাতে সবাই তাদের মত-পথ চর্চা করতে পারে।
বিরোধী দল বিহীন সংসদ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে কার্যকর বিরোধী দলের কোন বিকল্প নেই। এমন শাসন ব্যবস্থায় একদলীয় শাসন ও একদলীয় রাজনীতিকে বাহ্যত শক্তিশালী করলেও ফ্যাসিবাদকে সাংঘাতিকভাবে উস্কে দিয়ে গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে। কালের ব্যবধানে দেশে বিরোধীদল ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ অকার্যকর হয়ে যায়। দেশে ২০১৪ সালের মত এবারের বিরোধীদলও নামকা ওয়াস্তে এরশাদের জাতীয় পার্টি! একেবারে গৃহপালিত বিরোধী দল! যদিওবা ক’দিন আগে জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা জি.এম কাদের বলেছেন, তারা এবার গৃহপালিত বিরোধী দল নয় বরং কার্যকর বিরোধী দল হিসাবে ভূমিকা পালন করবেন! বক্তব্য বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সরকার বা জাতীয় পার্টি যাই কলুক না কেন, তাদের অতীতে প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার নিরিখে দেশবাসী এখন আর এমন বক্তব্য বিশ্বাস করে না।
দেশের সামগ্রিক উন্নতি অবনতির প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে মিডিয়ার কোন বিকল্প নেই। যার মাধ্যমে দেশবাসী সচেতন হয়। যে কোন ভাল ও মন্দের ব্যাপারে তাদের মত ব্যক্ত করতে পারে। এতে দেশে কোন অন্যায়-অবিচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পাওে না। তবে সরকার যখন মিডিয়াকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে “মিডিয়া ক্যু” করে তখন মিডিয়ার মালিক/ পরিচালক/কর্মীরা দেশের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে পারেন না। তারা দেশের আসল সত্য প্রচার করতে পারে না। যেমন পারেনি ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনের অনিয়মের কথা! কারণ আসল সত্য প্রচার করলে লাইসেন্স থাকবে না! যেমন অতীতে বেশ ক’টি মিডিয়া তাদের লাইসেন্স হারিয়েছে। মিডিয়াগুলো নীতি-নৈতিকতা বা আইনের কাছে ধরা বাঁধা নয়, বরং আওয়ামী সরকারের কাছে ধরা বাঁধা! তাইতো কিছু মিডিয়া সরকারের ফরমায়েশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সত্যকে মিথ্যা বানাতে আর মিথ্যাকে সত্য বানাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে! এতে সচেতন বিবেকবানরা পত্রিকা-টিভির খবরকে গুরুত্ব দেয় না, কোন মিডিয়াকে দেশের প্রতিচ্ছবিও মনে করে না।
উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে সর্বত্র এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করছে। একনায়কতন্ত্রের কবলে পড়ে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী মুক্তির প্রহর গুনছে। তারা সকল বাধাবিপত্তি মাড়িয়ে বাধাহীন মুক্ত জীবন চায়।
দৈনিক সংগ্রাম

ইসলামী আন্দোলনে হীনমন্যতাবোধের সুযোগ নেই


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ইসলামী আন্দোলন নিছক রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। নয় নিছক ক্ষমতার রাজনীতি। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় পাঠাবার আন্দোলনও নয় এটি বরং আল্লাহর দ্বীন বা ইসলামী আদর্শকে পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সকল দিক ও বিভাগে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠাই ইসলামী আন্দোলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। ক্ষমতা লাভের পথ দীর্ঘ মনে হবার কারণে অথবা বিপদসংকুল ও বাধা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবার কারণে ইসলামী আদর্শ তথা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার কাজ আপাতত: বাদ দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষমতার রাজনীতির নিয়ামক শক্তিসমূহের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের কৌশল অবলম্বনের পথ বেছে নেয়ার যুক্তি বাস্তবে কতটা টেকসই হতে পারে গভীরভাবে তা তলিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে। অবশ্য ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্টদের একটা পথ বন্ধ হলে দশটা পথ খোলার মত যোগ্যতা-দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে। তবে বাস্তবে পথ বন্ধ হবার আগে কৃত্রিমভাবে নিজেদের পক্ষ থেকে পথ বন্ধ করে কোন কৌশল অবলম্বনের চিন্তা-ভাবনা হীনমন্যতারই পরিচয় বহন করে এতে কোন সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই।

সম্প্রতি বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে চতুর্মুখী চক্রান্ত ষড়যন্ত্র চলছে। তথ্য সন্ত্রাস, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস থেকে বিচারিক সন্ত্রাসের আয়োজন চলছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিন্তার ঐক্য, পারস্পরিক আস্থা সুদৃঢ় থাকা অপরিহার্য। তার চেয়েও বেশি অপরিহার্য হল আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুলের ভিত্তিতে প্রতিকূলতার মোকাবিলায় অসীম ধৈর্য ও ছাবেতে কদমীর সাথে ময়দানে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে অকুতোভয়ে টিকে থাকার, বরং সামনে অগ্রসর হবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।’ পক্ষান্তরে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিপক্ষের এ সময়ের কৌশল হয়ে থাকে নানা কাল্পনিক, তাত্ত্বিক বিভ্রান্তির গুজব ছড়িয়ে চিন্তার ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্যে তথ্য সন্ত্রাস জোরদার করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কখনও কোন ব্যক্তি বিশেষের অপরিনামদর্শী কথা বা কার্যক্রমকে এরা সূত্র বা তথ্য উপাত্ত হিসাবে ব্যবহার করে এ ধরনের সুযোগ নিয়ে থাকে।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে মহল বিশেষের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রচারণা বেশ সুকৌশলে চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা কতিপয় ব্যক্তির একটি অপরিণামদর্শী ও অপরিপক্ব পদক্ষেপজনিত একটি বৈঠককে এবং পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধকে তথ্য উপাত্ত হিসাবে ব্যবহার করছে। যদিও তাদের সকল জল্পনা-কল্পনাকে ভুল প্রমাণ করে তাদের পরিকল্পিত প্রচারণার মুখে ছাই নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের যুবক ও ছাত্রকর্মী তথা নতুন প্রজন্মই রাজপথে শক্ত অবস্থান নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের উপর সরকার পরিচালিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। অকুতোভয়ে জীবন দিতেও কুণ্ঠা বোধ করছে না এরপরও মহল বিশেষের পক্ষ থেকে ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে অব্যাহতভাবে।

ইসলামী আন্দোলনের সাথে সংশ্লিষ্ট নবীন ও প্রবীণ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সামনে বর্তমানে মিসরের ইসলামী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের উপর যে গণহত্যা চালানো হচ্ছে তা থেকে দুটো বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়। এক, তথাকথিত দেশী-বিদেশী সোস্যাল এলিটদের সমর্থন পাওয়ার জন্যে বা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার জন্যে দলের ইসলামী পরিচিতি বর্জন করেও কোন লাভ হয় না, দুই, ইসলামের সংগঠিত শক্তি হওয়াটাই মূল অপরাধ।

মিসরের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে তো স্বাধীনতা বিরোধিতার কোন অভিযোগ আনার সুযোগ নেই। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বরং তাদেরই ছিল সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা। তারপরও তাদের দেশের প্রথমবারের মত গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে কেন ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।

ইতিপূর্বে ১৯৯১ সনে আলজিরিয়ায় ইসলামী সলভেশন ফ্রন্ট প্রথমবারের মত নির্বাচনে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতেই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে গণতন্ত্রের প্রবক্তা বিশ্ব মোড়লেরা অকুণ্ঠ সমর্থন দেয় নিছক ইসলাম ঠেকাবার জন্যে। তাদের বিরুদ্ধেও আলজিরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধিতার কোন অভিযোগের সুযোগ ছিল না। ইসলামের পক্ষের সংগঠিত শক্তি হওয়াই তাদের অপরাধ। অতএব বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থান যে নিছক ইসলামী আদর্শের পক্ষের শক্তির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি রোধ করার জন্যেই এতে কোন বিবেকবান ব্যক্তির মনেই সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করে মুসলিম ব্রাদারহুড তার নাম পরিচয় পালটিয়ে অন্য নামে ইসলামী পরিচিতি বাদ দিয়ে সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাফল্য অর্জন করেছে, বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কবে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আসলে কি মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের নাম পরিবর্তন করেছে নাকি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে একটা ফ্রন্ট করেছে। ব্রাদারহুড নিষিদ্ধ থাকা অবস্থায় এর আগেও তারা ওয়াকদ পার্টির হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এবারেও তাদের একই কৌশল আমরা দেখতে পাই একটু ভিন্ন আংগিকে। কিন্তু আজকের পরিস্থিতির মোকাবিলা তাদের করতে হচ্ছে মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকেই। ভিন্ন নামে নির্বাচনের পরও তাদের ক্ষমতায় টিকতে দেয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে তাদের সংগঠনের সুনামেই ইনশাআল্লাহ আগামীতে মিসরে একই সাথে ইসলাম ও গণতন্ত্রের বিজয় হবে একটি সফল ও ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়ানোর কৌশল হিসেবে একটা গোপন বৈঠক ও একই প্রবন্ধকে ব্যবহার করা হয়েছে। উক্ত প্রবন্ধে নাকি এও বলা হয়েছে যে, ভারতের জামায়াতে ইসলামী তাদের অতীতের ভুল শুধরিয়ে দলের নাম পরিবর্তন করে একটা প্লাটফরম করেছে যাতে নেতৃত্বের পর্যায়ে একজন হিন্দু, একজন খৃস্টানও আছে। আসলে জামায়াতে ইসলামী হিন্দ তার নাম পরিবর্তন করেনি। তারা অতীতে নির্বাচনে কোন ভূমিকাই রাখতো না। ভোটও দিত না। তারা মূলত: একটা “সামাজিক, সাংস্কৃতিক ধর্র্মীয়” প্রতিষ্ঠান হিসাবেই কাজ করে আসছিল। মুসলিম পার্সনাল ল’-এর সংরক্ষণের ব্যাপারে তারা সকল ইসলামী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে কাজ করেছে। এর পর নির্বাচনী রাজনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্যে একটা প্লাটফরম দাঁড় করিয়েছে, এটা তাদের কার্যক্রমের একটা নতুন অগ্রগতি বলতে পারি। কিন্তু অতীতের ভুল শুধরে তারা নাম পরিবর্তন করেছে, এমন কথা যদি কেউ বলে থাকেন বা লিখে থাকেন তা হলে তিনি তথ্য বিচ্যুতির আশ্রয় নিয়েছেন। এই তো সেদিনও জামায়াতে ইসলামী হিন্দের আমীর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের ব্যাপারে সরকারের উদ্দেশে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিবৃতি বিবিসিতেও প্রচারিত হয়েছে।

এটা ঐতিহাসিক বাস্তব ঘটনা যে ’৭১ সালে পাকিস্তানের অখ-ত্বের পক্ষে শুধু জামায়াতে ইসলামীই অবস্থান নেয়নি। বরং সকল ইসলামী ও মুসলিম সংগঠন, প্রতিষ্ঠান এবং সুপরিচিত সব ইসলামী ব্যক্তিত্ব পাকিস্তানের অখ-নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, সেই কারণেই মুসলিম লীগের সকল গ্রুপসহ পিডিপি, কৃষক শ্রমিক প্রজাপার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও জামায়াতে ইসলামকে একযোগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী ছাড়া ঐসব দলের আর কোনটাই সংগঠিত শক্তি হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় নাই বলেই তাদের নিয়ে বর্তমান সরকারের কোন মাথা ব্যথা নেই। তাছাড়া জামায়াতে ইসলামী বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার রাজনীতিতে ফ্যাক্টর হওয়াও একটা বড় কারণ। সেই সাথে প্রতিবেশী দেশের আগ্রাসী, আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী ভূমিকার ক্ষেত্রে জামায়তই প্রধান প্রতিবাদী শক্তি হওয়ার ফলেই আজ সরকারের কোপানলের শিকার হতে হচ্ছে। ১৯৯১ সালে এবং ২০০১ সালে জামায়াতের কারণে বিএনপি ক্ষমতায় আসা এবং আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসতে না পারাটাই জামায়াতের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের ক্ষোভের প্রথম ও প্রধান কারণ। না হলে ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পুনর্গঠিত হওয়ার পর থেকে ’৯১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে বর্তমানে যে অভিযোগ এনেছে, সে অভিযোগ কোন দিনই আনেনি। ’৯২ সালে ‘ঘাদানিকের’ মাধ্যমে জামায়াতের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক অভিযান পরিচালনার মূল কারণ ছিল, জামায়াত কেন সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দিল? কিন্তু পরবর্তীতে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াতকে সাথে পেয়ে বা সাথে নিয়ে তাদের কোন আপত্তি তো ছিলই না, বরং অনেক তোয়াজ করে জামায়াতকে সাথে রাখার চেষ্টা করতে তাদের কোন কুণ্ঠা ছিল না। জামায়াতকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং দিতে তখন কোন সংকোচ বোধ করেননি। তাই আজ একথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়, দেশের রাজনীতিতে জামায়াতের ফ্যাক্টর হওয়া এবং ভারতীয় এজেন্ডা ও ডিজাইন বাস্তবায়নের পথে প্রধান অন্তরায় হওয়াই জামায়াতের একমাত্র অপরাধ। জামায়াতের এই ভূমিকা আওয়ামী ঘরানা ও বাম ঘরানার কাছে যতই অগ্রহণযোগ্য হোক না কেন দেশবাসী এটাকে ইতিবাচকভাবেই মূল্যায়ন করবে সেদিন বেশি দূরে নয়। অতএব কোন মহলের প্রচারণায় বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারণে ইসলামী আন্দোলনের নেতা ও কর্মীদের মনে হীনস্মন্যতা বোধের বা চিন্তার বিভ্রান্তির শিকার হবার প্রশ্নই ওঠে না।

ইসলামী আন্দোলনের মূল পথিকৃত শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁকেও আল্লাহ তায়ালাসহ বিভিন্ন সময়ের, তার পূর্বের নবী রাসূলদের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার সাথী-সঙ্গীদের ছবর ও ইস্তেকামাতের সাথে ময়দানে সুদৃঢ় অবস্থান নিয়ে সামনে অগ্রসর হবার তাকিদ দিয়েছেন। বর্তমানে আল্লাহর পক্ষ থেকে নতুন করে ওহীর মাধ্যমে কোন পথ নির্দেশ আসার সুযোগ নেই। তবে ময়দানের বাস্তবতাকে সামনে রেখে কোরআন ও সিরাতে রাসূল অধ্যয়ন করলে মনের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা কাটিয়ে উঠে পূর্ণ আস্থা নিয়ে ময়দানে টিকে থাকার এবং সামনে এগুবার প্রেরণা পাওয়া অবশ্যই সম্ভব।

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলাম বিরোধী শক্তির নাস্তিক্যবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমে দ্বীন হাজার হাজার আলেমে দ্বীনের ওস্তাদ হযরত আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে গড়ে উঠা হেফাজতে ইসলামের রাজপথ কাঁপানো প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহেেণর পর থেকে সরকার এবং সরকারের দোসর ধর্মহীন রাজনীতির প্রবক্তা ও বাম ঘরানার রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের নানামুখী প্রচারণা ও জুলুম নির্যাতন আমাদর সকলের জন্যে একটি জীবন্ত নজির। হযরত আল্লামা আহমদ শফী এবং তার সহকর্র্মীদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা উত্তর ৪২ বছরে আওয়ামী ঘরানারা বাম ঘরানা বা পক্ষ থেকে এমন কোন অভিযোগ বা অপবাদ শোনা যায়নি যা বর্তমানে শোনা যাচ্ছে। কারণ একটাই এখন তারা সরকারের এবং সরকারের দোসরদের ন্যক্কারজনক ইসলাম বিরোধী ভূমিকায় মাঠে-ময়দানে সবর এবং সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। ইসলামের বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলন সংগ্রামের বিরুদ্ধে ঐ মহল বিশেষের আক্রোশ ও বিদ্বেষ মজ্জাগত। ইসলামের পক্ষে যারাই ইতিবাচক, সক্রিয় এবং শক্ত ভূমিকা রাখবে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তুফান স্থায়ী করা অত্যাচার, জুলুম, নিপীড়ন, নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানোই তাদের ইতিহাস। কাজেই এসব দেখে ইসলামের পক্ষের লোকদের আত্মবিশ্বাস এবং আস্থা আরো বৃদ্ধি পাওয়াটাই স্বাভাবিক। এটাই ইসলামী আন্দোলনের মূল ধারার যথার্থতার ও সঠিক পথে থাকার মহা সনদ যা স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কর্তৃক সত্যায়িত বা অনুমোদিত।

সম্প্রতি মিসরের ঘটনার প্রতি গোটা বিশ্বের দৃষ্টি নিবন্ধ হয়ে আছে। মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করার পাঁয়তারা চলছে। এটা হলে নাকি সেখানে ইসলামী রাজনীতি বা তাদের ভাষা, রাজনৈতিক ইসলাম শেষ হয়ে যাবে, এই মর্মে বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকের উপ-সম্পাদকীয় নিবন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে। মন্তব্যকারী এই নিবন্ধ লেখার সময় মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডকে বিগত প্রায় ৬০ বছর নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ইসলামী আন্দোলন যা তাদের ভাষায় রাজনৈতিক ইসলাম শেষ হয়ে যায়নি। মিসরের জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রথম সুযোগেই মুসলিম ব্রাদারহুড মনোনীত প্রার্থীদের সংসদে বিজয়ী করেছে, প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকেও বিজয়ী করেছে, একই সাথে গণতন্ত্র ও ইসলামী আদর্শের জন্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে। এর পর যারা মনে করে গণতন্ত্র থাকলে ইসলামের জয় সুনিশ্চিত, তারাই চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কু’দাতার মাধ্যমে প্রথম বারের মতো জনগণের ভোটে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, গ্রেফতারও করেছে। এ প্রসঙ্গে তুরস্কের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়েব এরদোগান স্পষ্টই উল্লেখ করেছেন। মিসরের সামরিক কু’দাতার পেছনে ইসরাইলের হাত থাকার ব্যাপারে তাদের কাছে প্রমাণ আছে। এতে প্রমাণিত হয় কোরআনে ঘোষিত ইসলাম ও মুসলমানদের কট্টরতম দুশমন জায়নবাদী গোষ্ঠীই তাদের পৃষ্ঠপোষকদের মাধ্যমে দেশে দেশে ইসলামের অগ্রযাত্রা রুখে দেবার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে।

- শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী রহঃ

ব্যারিস্টার রাজ্জাকের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ রাখবো: জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল

বাংলাদেশ বার্তাঃ দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অবস্থান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকসহ আমরা দীর্ঘদিন একইসঙ্গে এই সংগঠনে কাজ করেছি। তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন সিনিয়র পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা ছিলেন। তার অতীতের সব অবদান আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।’
শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে এক বিবৃতিতে শফিকুর রহমান এ কথা বলেন। এ দিন সকালে খবর আসে ব্যারিস্টার রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। তিনি বর্তমানে লন্ডনে বসবাস করছেন।
সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যেকোনও সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি, তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি, তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’
বাংলা ট্রিবিউন

বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

কন্যা সন্তান; মা-বাবার জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত (আশির্বাদ)।

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সেদিনটির কথা আমি কখনোই ভুলবো না, যেদিন কোর্টে বাবা মায়ের সেপারেশনের সময় মা কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, "আপনি কাকে চান, ছেলে কে না মেয়েকে?? "
মা তখন ছেলেকে চেয়েছিল, আমাকে চায়নি। বাবাও তখন আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কারণ তিনি আবার বিয়ে করে নতুন সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, অযথা আমাকে নিয়ে নতুন সংসারে বোঝা বাড়াতে চাননি।

কাঠের বেঞ্চিতে বসে যখন অঝোরে কাঁদছিলাম তখন বুকে আগলে ধরেছিলেন এক লেডি কনস্টেবল। আশ্রয় দিয়েছিলেন তার বাড়িতে। কিন্তু তার মাতাল স্বামীর লোলুপ দৃষ্টি পড়েছিল আমার উপর। শিশু বয়সে অত কিছু না বুঝলে ও কেমন যেন খারাপ লাগতো। রাতে যখন আন্টি বাসায় ফিরতেন, আমি তাকে সব বলে দিতাম। মহিলা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। অতঃপর আমার নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি আমাকে একটা এতিমখানায় রেখে আসলেন। যাবার সময় আমাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরে যেমন করে কাঁদলেন, আমার মাও আমাকে রেখে যাওয়ার সময় ওভাবে কাঁদেনি।
দিন যায়-মাস যায়, এতিমখানাতেই জীবন কাটতে থাকে আমার। খুব অসহায় লাগতো নিজেকে। বাবা মা বেঁচে থাকতে ও যে শিশুকে এতিমখানায় থাকতে হয় তার থেকে অসহায় বুঝি আর কেউ নেই!!
বছর দু'য়েক পরের কথা। এক নিঃসন্তান ডাক্তার দম্পতি আমাকে দত্তক নেন। জীবনটাই পাল্টে গেল আমার। হেসে খেলে রাজকীয় ভাবে বড় হতে লাগলাম আমি। আমার নতুন বাবা মা আমাকে তাঁদের মতই ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমার একগুঁয়ে ইচ্ছে ছিল একটাই, আমি ল'ইয়ার হবো। আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে আজ আমি একজন ডিভোর্স ল' ইয়ার। যারাই আমার কাছে তালাকের জন্য আসে, আগেই আমি বাচ্চার কাস্টোডির জন্য তাদের রাজি করাই। কারণ বাবা মা ছাড়া একটা শিশু যে কতটা অসহায়, তা আমি ছাড়া কেউ জানে না!!
চেম্বারে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলাম। হঠাৎ একটা নিউজে চোখ আটকে গেল। এক বৃদ্ধা মহিলাকে তার ছেলে আর বউ মিলে বস্তায় ভরে রেলস্টেশনে ফেলে রেখে গেছে। পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। নিচে বৃদ্ধা মহিলার ছবি দেয়া। মুখটা খুব চেনা চেনা লাগছিল। কাছে এনে ভালো করে ছবিটা দেখলাম। বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। এ তো সেই মহিলা যে আমাকে অনেক বছর আগে আদালতে ছেড়ে গিয়েছিল, আমার মা। নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে ছুটে গেলাম হাসপাতালে।
সেই মুখটা কিন্তু চেনার উপায় নেই। চামড়াটা কুঁচকে আছে, শরীরটা রোগে শোকে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে খুব মায়া লাগছে, ভেতরটা ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে। আচ্ছা, সেদিন কি তার একটু ও কষ্ট লাগেনি, যেদিন তার ১০ বছরের শিশু কন্যাটি মা-মা করে পিছু পিছু কাঁদতে কাঁদতে দৌড়াচ্ছিল?? হয়তো লাগেনি। নয়তো এভাবে ফেলে যেতে পারতো না।
একবার ভেবেছিলাম চলে যাবো। হঠাৎ দেখি তিনি ঘুম ভেঙে চোখ পিটপিট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বুঝলাম চিনতে পারেন নি, চেনার কথা ও নয়!! আমি আমার পরিচয় দিলাম। কয়েক সেকেন্ড নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। নিজের কৃতকর্মের জন্য বারবার ক্ষমা চাইতে থাকে। নিজের বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি মাকে।
মাকে পাওয়ার পর বাবার জন্য ও মনটা উতলা হয়ে উঠে। মায়ের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বাবার অফিসে যোগাযোগ করি। জানতে পারি, কয়েক বছর আগেই রিটায়ার্ড করেছেন তিনি। বাসার ঠিকানায় গিয়ে দেখি উনি নেই। উনার দ্বিতীয় পক্ষের ছেলেমেয়েদের জিজ্ঞেস করে জানলাম, রিটায়ার্ড করার কিছু দিনের মধ্যেই তিনি প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়েন। অযথা একটা রুম দখল করে নোংরা করত, তাই বিরক্ত হয়ে ছেলেমেয়েরা তাকে একটা সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, অযথা ঘরে বোঝা বাড়িয়ে কি লাভ!!!
ওদের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে বৃদ্ধাশ্রম গেলাম। চিনতে খুব কষ্ট হচ্ছিলো, মনে হলো একটা জীবিত লাশ পড়ে আছে বিছানায়। পাশে বসে হাতটা ধরলাম, পরিচয় দিতেই মুখ ফিরিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
বাবা মা এখন আমার সাথে একই বাড়িতে আছেন। একসময় তারা আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু আমি পারিনি ছাড়তে। হাজার হোক আমার বাবা মা তো!!! 
.
.... কন্যা....
আফরিন শোভা

রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সীমান্ত খুলে দিতে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের আহ্বান !

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সম্প্রতি মিয়ানমারে ফের সহিংসতা শুরু হয়েছে। এর ফলে ওই দেশ থেকে যেসব মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চাইছে তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। 
সংস্থাটি এক বিবৃতির মাধ্যমে শুক্রবার বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এ আহ্বান জানায়।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরু করলে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। 
সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইন ও চিন প্রদেশে নতুন করে সহিংসতা শুরু হলে গত কয়েক দিনে বান্দরবানের সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারের প্রায় দেড়শ’ নাগরিক বাংলাদেশে এসেছে। নতুন করে আসা এসব মানুষ দেশটির বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বলে জানা গেছে।
ইউএনএইচসিআর বিবৃতির মাধ্যমে মিয়ানমারে সম্প্রতি শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে দেশটিতে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা এমন বিপর্যয় পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও জানায়।
জেনেভায় অবস্থিত সদর দফতরে সংস্থাটির মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বলেন, ‘মিয়ানমারের ওসব রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরু ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সহিংসতার কারণে অনেক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে যাচ্ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে দেশের ভেতরে অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে কিংবা ভয়ে দেশ ছেড়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছেন অনেকে। আর এ কারণে যে মানবিক বিপর্যয় শুরু হয়েছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।’

সংস্থাটির মুখপাত্র আন্দ্রেজ মাহেসিস বাংলাদেশের উদ্দেশে বলেন, ‘মিয়ানমারে শুরু হওয়া সহিংসতার কারণে যেসব মানুষ আশ্রয়ের জন্য যাচ্ছে তাদেরকে প্রবেশের অনুমতি দিতে বাংলাদেশ সরকারকে সব রকমের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আমরা।’

সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

দেশে শিশু ও নারীর কোনো নিরাপত্তা নেই : জামায়াত।


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সম্প্রতি সারা দেশে নারী-শিশু- কিশোরী ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি সারা দেশে নারী-শিশু ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গোটা দেশের জনগণের সাথে আমরাও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও শঙ্কিত। দেশে আজ নারী ও শিশুর ইজ্জত- আবরুর কোনো নিরাপত্তা নেই। 
গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এক মহিলার স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে সুবর্ণচরের পূর্বচরবাটা ইউনিয়নে ষষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত এক ছাত্রী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে। দেশে নারী-শিশু- কিশোরী অবাধে ধর্ষিতা হচ্ছে। প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তরা নারী-শিশু -কিশোরীকে ধর্ষণ করছে। 
তিনি আরো বলেন, তদন্তে দেখা যায় সরকারি দলের লম্পট দুর্বৃত্তরা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় অবাধে ধর্ষণ ও হত্যার মতো নৃশংস ঘটনা একের পর এক ঘটিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ এসব দেখেও না দেখার ভান করছে। ফলে ধর্ষকেরা আরো উৎসাহিত হচ্ছে। তারা ধর্ষিতাদের অভিভাবকদের মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে এবং নাজেহাল করছে। ফলে নারী-শিশু- কিশোরী ধর্ষণ ও নির্যাতন মহামারি আকার ধারণ করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ সরকারি দলের ধর্ষণকারীদের সাহায্য- সহযোগিতা করছে এবং ধর্ষকদের বিরুদ্ধে করা মামলা আমলে না নিয়ে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি তাদের এ ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 
ডা: শফিক এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০১৮ সালে যৌন সহিংসতায় সারা দেশে ৪২ জন নারী ও শিশু নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ২৮৪ জন। গত জানুয়ারি মাসের ৩৩ দিনে ৪১টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ অপচেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। তাদের ২৯ জনই শিশু ও কিশোরী। ওপরের তথ্য থেকেই বোঝা যাচ্ছে, দেশে কী সাংঘাতিক অবস্থা বিরাজ করছে। বাস্তবে দেশে নারী-শিশু- কিশোরী ধর্ষণের যেসব ঘটনা ঘটছে তার সামান্যই মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। বেশির ভাগ ঘটনাই অজানা থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, নারী-শিশু-কিশোরী ধর্ষণকারী দুর্বৃত্তদের বিচার না হওয়ার কারণেই নারী, শিশু-কিশোরী ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই যাচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হলে ধর্ষণকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে। সেই সাথে দেশের জনগণকে নারী ধর্ষণ এবং নারী-শিশু- কিশোরীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে তীব্র প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। নারী-শিশু-কিশোরীদের নির্যাতনকারী দুর্বৃত্তদের কঠোর হস্তে দমন করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। 

মহিলা পরিষদের তথ্য : জানুয়ারিতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ২৯৮ !

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ চলতি বছরের প্রথম মাসেই ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটেছে মোট ২৯৮টি। আর বিদায়ী ২০১৮ সালে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ৩৯১৮টি। যা খুবই উদ্বেগজনক। তাই দেশের চলমান ধর্ষণ আইনের পরিবর্তন ও আইনের মাধ্যমে ধর্ষকের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম। তবে বিচারবহির্ভূত হত্যার পর কাউকে ধর্ষণ মামলার আসামি হিসেবে যেন প্রচার করা না হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
গতকাল জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়া চালু এবং অব্যাহত নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতন, ধর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আয়েশা খানম বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের একটি ইতিবাচক দৃশ্য এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান। আজকে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নারীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে একটি বড় ভূমিকা রাখছে। 
সেই ভূমিকার স্বীকৃতির প্রতিফলন হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে এবং একটি শক্তিশালী, ভবিষ্যৎমুখী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থায় অর্থ এবং পেশীশক্তির ব্যবহার, নারীর প্রতি সমাজের প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি, নারী হিসেবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা, বিদ্যমান সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইত্যাদির কারণে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে নারীদের অগ্রসর হওয়া অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে এই সরকারের যখন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল সেখানে নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণ করে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করার মতো একটি সহায়ক পরিবেশ ছিল এবং তা করা হলে ২০১৮তে অনেক নারী সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। 
কিন্তু তা এখনো কারোর দৃষ্টিগোচর হয়নি। তাই আমরা এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবারো বলতে চাই যে, এখনো সময় আছে, সংবিধান সংশোধন করে আগামীর জন্য সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়নের পরিবর্তে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য যাতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরা রাষ্ট্র পরিচালনায় জনশক্তি হিসেবে এগিয়ে আসতে পারে। 
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্তের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন বছরের প্রথম মাসেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৯৮টি। এর মধ্যে ধর্ষণ ৫২টি। আর গণধর্ষণ ২২টি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৫টি। একইভাবে ২০১৮ সালে ৩৯১৮টি নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৬৯৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ১৮২ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৬৩। এ ছাড়া বাসা থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, পরিবহন সব জায়গায় নারী নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। সংবাদ সম্মেলনে এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রেখা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাখী দাশ, অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম প্রমুখ।