মাওলানা আবদুস শহীদ নাসিম |
বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার কুরআন গবেষক আবদুস শহীদ নাসিম ইসলামি জ্ঞান চর্চার জগতে একটি সুপরিচিত স্বনামধন্য নাম। একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক বলেছেন: 'আশির দশকেই মাস্টার্সে তাফসির পরীক্ষায় সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে তাঁর বই পড়েছি।'
পরবর্তীতে তিনি অনেক অনেক ইসলামি সাহিত্য রচনা করেছেন। অনুবাদ করেছেন অনেকগুলো গ্রন্থ। সম্পাদনাও করেছেন অনেক গ্রন্থ।
আবদুস শহীদ নাসিম শুধু একজন সুসাহিত্যিকই নন, সেইসাথে তিনি একজন সুবক্তা এবং দক্ষ সংগঠকও । তিনি বাংলাদেশ কুরআন শিক্ষা সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। প্রায় তিন দশক আগে তিনি কুরআনুল কারীমের শিক্ষা ব্যাপক প্রচারের উদ্দেশ্যে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া প্রায় চার দশকব্যাপী তিনি একটি নামকরা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দুই যুগেরও অধিককাল ইসলামি ব্যাংক শরিয়া বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনো কোনো কোনো ব্যাংকের শরিয়া কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দেশের একজন বিশিষ্ট শরিয়া বিশেষজ্ঞ।
খ্যাতিমান চিন্তাবিদ, লেখক, গবেষক আবদুস শহীদ নাসিমের চিন্তাধারা ও লেখনীর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো:
০১। তিনি বিশেষ কোনো ধর্মীয় মসলক নয়, কুরআন সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের নীতি ও আদর্শের অনুসারী।
০২। তিনি অমৌলিক ও সাধারণ বিষয়ে অন্য অনেকের মতো কট্টরপন্থী নন।
০৩. তিনি দীনের অনেক কঠিন বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপনে সুদক্ষ।
০৪। তিনি ইসলামে এখতেলাফি বিষয়ে বিরোধ বিবাদ, ফেরকাবাজি ও দলবাজির ঘোর বিরোধী।
০৫। তার গ্রন্থাবলী আধুনিক উন্নত ও সহজ সাবলীল বাংলা ভাষা ব্যবহারের দিক থেকে অনবদ্য অন্যন্য।
০৬। তার অনুবাদ সাহিত্যগুলোর ভাষাও মৌলিক রচনার মতই শিল্পগুণ সম্পন্ন সহজ সাবলীল।
০৭। তার অনূদিত "আল কুরআন: সহজ বাংলা অনুবাদ" -এর মত কুরআনের অনুবাদ বাংলা, ইংরেজি এবং উর্দু ভাষায়ও দেখিনি।
ক) এ অনুবাদে তিনি বিশেষ রীতির শিল্প সম্মত সাবলীল বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন।
খ) এ অনুবাদে তিনি প্রতিটি সুরার শুরুতে সে সুরার আয়াত ভিত্তিক আলোচ্য বিষয় উল্লেখ করেছেন।
গ) তার একটি সাহসিকতার বিষয় হলো, কুরআনে যেসব স্থানে আল্লাহ্ নিজের জন্যে সম্মানজনক ও রাজকীয় বহুবচন ব্যবহার করেছেন, তিনিও সেসব স্থানে হুবহু 'আমরা' ও 'আমাদের' অনুবাদ করেছেন, যা আর কোনো অনুবাদক 'পাছে লোকে কিছু বলে'র ভয়ে ব্যবহার করেননি।
আবদুস শহীদ নাসিমের বয়েস এখন ৭১ পেরিয়ে ৭২ চলছে। আলহামদুলিল্লাহ এখনো তিনি গবেষণার কাজে রত আছেন, লিখে যাচ্ছেন, কুরআনের উপর আলোচনা করে যাচ্ছেন, ইসলামের উপর প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান করছেন।
বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার মাওলানা অাবদুস শহীদ নাসিম -এর জন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯ সালে, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে। ১৯৭০ ও ১৯৭২ সালে তিনি কৃতিত্বের সাথে অালিয়া মাদরাসা থেকে ফাজিল ও কামিল ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৫ এবং ১৯৭৬ সেশনে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে যথাক্রমে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছুদিন পড়ালেখা করেন।
কামিল পাশ করার পর কিছুদিন তিনি একটি ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন (১৯৭৩-১৯৭৪-এ)। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স মাস্টার্স পড়ার জন্যে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তিনি চাঁদপুরের বিখ্যাত আল আমিন একাডেমীতেও কিছুদিন অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আবদুস শহীদ নাসিম ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। পরবর্তীতে আল্লাহ পাক তাকে ইসলামি সাহিত্য জগতে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন।
সুসাহিত্যিক অাবদুস শহীদ নাসিম একজন সুপ্রতিষ্ঠিত সৃজনশীল লেখক। এ যাবৎ তিনি ছোট বড় প্রায় ১০০টি মৌলিক গ্রন্থ রচনা করেছেন।
এছাড়াও তিনি কুরঅান মজিদের সহজ বাংলা অনুবাদ করাসহ প্রায় ৪০টি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন। সম্পাদনা করেছেন অনেক গ্রন্থ।
তার প্রতিষ্ঠিত "বাংলাদেশ কুরঅান শিক্ষা সোসাইটি" অাল কুরঅান ও ইসলামি অাদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্নমুখি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
ব্যাক্তি জীবনে আবদুস শহীদ নাসিম একজন পরিচ্ছন্ন, সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক ও স্বল্পভাষী মানুষ। তিনি তিন কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের পিতা। তার দুই কন্যাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
মাওলানা আবদুস শহীদ নাসিমের পিতা মরহুম মাওলানা আব্দুল হামিদও (১৯১২-১৯৮৮) ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম দীন। আবদুস শহীদ নাসিমের একটি লেখা থেকে জানা যায়, তার পিতা ১৯৪০ সালে দেওবন্দ মাদরাসায় পড়তে যান। সেখান থেকে দাওরা পাশ করে সুরাট ডাবিল সিমলকে অাল্লামা অানোয়ার শাহ কাশ্মীরি প্রতিষ্ঠিত মাদরাসায় অাল্লামা শিব্বির অাহমদ উসমানি রহ.-এর কাছে হাদিস পড়তে অাসেন। এখানে হাদিসে দাওরা করার পর তাঁর এখানকার সহপাঠী (অাল্লামা) অাবুল হাসান অালী নদভীসহ লাহোরে চলে যান অাল্লামা অাহমদ অালী লাহরির কাছে তফসির পড়ার জন্যে। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি অাজীবন একটি অালিয়া মাদরাসার হেড মাওলানা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মাওলানা অাবদুস শহীদ নাসিমরা দুই ভাই। ছোট ভাই ড. মুহাম্মদ অাল ফারুক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক ছিলেন, পরে ১৯৮৫ সালে কানাডার টরোন্টো ইউনিভার্সিটিতে ডক্টরেট করতে যান। ডক্টরেট শেষে টরেন্টো ইউনিভার্সিটিতে কিছুকাল চাকুরি করেন। সেখান থেকে এসে কয়েক বছর মালয়েশিয়ার IIUM-এ অধ্যাপনা করেন। পরবর্তীতে অাবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করেন, পরে ইলিনয় (শেম্পেন) ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করেন। এখন তিনি অবসরে যুক্তরাষ্ট্রে অাছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী স্কলারদের একটা এসোসিয়েশন অাছে, তিনি সেটার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
আবদুস শহীদ নাসিমের নানাও ছিলেন একজন বড় ইসলামি স্কলার। তিনি কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসার মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সাথে রিপন কলেজে ইসলামি বিষয়ে অনারারী অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আবদুস শহীদ নাসিম এমন একটি পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন, যে পরিবারের পূর্ব পুরুষরাও ছিলেন ইসলামের দা'য়ী।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মাওলানা আবদুস শহীদ নাসিমকে দীর্ঘ হায়াতে তাইয়েবা দান করুন এবং সুস্থ সালামতে দীনের খেদমত করে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক:
সাজেদা হোমায়রা
মাহমুদা শিফা
মাহমুদা শিফা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন