ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৮

শরমিন, এক নয়া যোদ্ধা, ওয়ান পারসন আর্মির নাম!

বাংলাদেশ বার্তাঃ ভারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে যারা যুদ্ধ করে শুধু তারা না, প্রচলিত অন্যায়, জুলুম কিংবা প্রথার বিরুদ্ধে যারা বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়ায়, লড়ে যায়, তারাও কিন্তু যোদ্ধা। হারকিউলিস যেমন যোদ্ধা, পচাব্দী গাজী যেমন; তেমনি বেগম রোকেয়াও যোদ্ধা।
বেগম রোকেয়া হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও প্রচলিত ধারার বিরুদ্ধে একলা লড়েছিলেন। শরমিনকেও আমার যোদ্ধা মনে হয়। ওয়ান পারসন আর্মি মনে হয়।
শরমিনকে (১১) আমি চিনি গত বছরের ডিসেম্বর থেকে। ফারাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস থ্রির এক শিশু শরমিন মাধ্যম দিয়ে খবর পাঠাল, মাঝবয়সী এক পুরুষের সাথে তার বাবা-মা তার বিয়ে ঠিক করেছে। সে এই বিয়ে থেকে মুক্তি পেতে চায়। তড়িঘড়ি করে বিয়ে ঠেকালাম।
শরমিনের বাবা-মা ও বিয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সকলের কাছ থেকে মুচলেকা নিই এবং সতর্ক করি যেন আইনগত বয়স না হওয়া অবধি মেয়ের বিয়ে না দেয়। শরমিনের বিয়ের জন্য কেনা কানের দুল জব্দ করে আমার জিম্মায় রাখলাম। ভবিষ্যতে তার শিক্ষাখরচ মেটাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পোস্ট অফিসে ডিপিএস করি এবং তাকে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য সব ধরনের আশ্বাস প্রদান করি।
গল্পটা এখানে শেষ হতে পারত। গল্পটা শেষ হয়নি ফারাঙ্গার পঞ্চম শ্রেণির আরেক শিশুর বিয়ে ঠেকাতে গিয়ে। ঐ বিয়ে ঠেকানোর সময় জানলাম, কঠোর গোপনীয়তায় শরমিনের বিয়ে হয়ে যায় বান্দরবানের লামার হাছনা ভিটায় তার মামার বাড়িতে।
শরমিন এখন তার শ্বশুরবাড়ি মহেশখালীতে থাকে। জানলাম তার স্বামী পানের বরজে কাজ করে। মানবিক সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা সত্ত্বেও বিয়ে ঠেকাতে না পারায় মনটা ভেঙ্গে পড়ল। ব্যর্থতা মেনে নিতে কষ্ট হল। বাল্য বিবাহের আইনটি মোবাইল কোর্টে তফসিলভুক্ত হতে বিলম্ব হওয়ায় এই বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করতে পারলাম না।
হতাশ মনে বাল্য বিবাহ অনুৎসাহিত করার জন্য ক্যাম্পেইন শুরু করি। বিভিন্ন অংশীজনকে বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারণা চালাতে অনুরোধ করি। উপজেলা শিক্ষা অফিসের সহযোগিতায় শিক্ষার আলো বঞ্চিত ও অভাবে জর্জরিত গ্রাম গুলোতে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মায়েদের বাল্য বিবাহের কুফল বলে সচেতনতা চালানো শুরু করে দিলাম। শিক্ষা অফিসও শিক্ষকদের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ বিরোধী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিল অবিরত।
নানা দাপ্তরিক ব্যস্ততায় শরমিনের কথা আস্তে আস্তে ভুলতে বসেছিলাম। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে আচানক একটা ফোনকল ভুলতে দেয়নি শরমিনের কথা।
-হ্যালো স্যার, আমি শরমিন বলছি।
-কোন শরমিন?
- ফারাঙ্গার শরমিন স্যার। ক্লাস থ্রিতে পড়তাম। যার বিয়ে আপনি ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।
- তুমি কোথায় এখন, শরমিন?
- আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে আসছি। বাড়ি গেলে আবার আমাকে মহেশখালীতে পাঠিয়ে দিবে। স্যার আমি পড়ালেখা করতে চাই। আমাকে আপনি বাঁচান।
- তুমি কাউকে বলে আমার অফিসে চলে আস।
-স্যার গাড়িতে উঠছি কিন্তু আমার গাড়ি ভাড়া নাই।
- অসুবিধা নাই। তুমি উপজেলা গেইটে নামো। কাউকে দিয়ে তোমার ভাড়া পাঠিয়ে দিচ্ছি।
কিছুক্ষণ পর শরমিন অফিসে আসলো। দীর্ঘক্ষণ কান্নাকাটি করে বলল, সে পড়তে চায়। সে আশ্রয় চায়। বর্তমানে সে প্রশাসনের জিম্মায় আছে। দুদিন পর তাকে পার্শ্ববর্তী একটা প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম। সে এখন চতুর্থ শ্রেণির ১ম সাময়িক পরীক্ষা দিচ্ছে। স্কুল ড্রেস পরে যখন সে পরীক্ষা দিতে আসে তখন মনে হয় সে আমারই মেয়ে।
গত মঙ্গলবার তার পরিবারের লোকজন তাকে উঠিয়ে নিতে তার স্কুলের পথে দাঁড়িয়েছিল। সমুহ বিপদ আশংকা করে সে অফিসে চলে আসে এবং এই যাত্রায় সে আবারো বেঁচে যায়। এখন প্রতিদিন আমার এক স্টাফ তাকে স্কুলে দিয়ে আসে এবং স্কুল থেকে নিয়ে আসে।
সে আমাকে বলে, তার দুঃস্বপ্ন এবং দুর্বিষহ অতীত ভুলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়, বড় হয়ে টিএনও হতে চায়। আমিও চাই সে পড়ালেখা করুক। তার পড়ালেখার যাবতীয় খরচ আমি নিশ্চিত করতে চাই। স্বপ্ন দেখি সে হয়ে উঠুক একজন দৃষ্টান্ত। তাকে অনুসরণ করে হাজারো শরমিন বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক। দেশ এগিয়ে দেওয়ার মিছিলে শরমিনও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিক।


---------------------------------------------------------------------------------
লেখক: মোঃ মাহবুব আলম (Mahbub Alam), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম

শুক্রবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৮

অগ্নিকান্ড ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পশে-: মোছাল্লী কল্যাণ ট্রাষ্ট-মোংলা।

বাংলাদেশ বার্তাঃ ২০/০৪/১৮ শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ১১ টা ৪৫ মিঃ মোংলা উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের দক্ষিন চাঁদপাই স্কুল সংলগ্নে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দুই টি দোকান সহ পাঁচ টি বসতি স্থপনা পুড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে । উক্ত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ঘর র্নিমানের জন্য মোছাল্লী কল্যাণ ট্রাষ্টের সহযোগীতায় প্রতি পরিবারকে আজ সকাল ১১ টায়ার দিকে এক বান করে (টিন) প্রদান করা হয়। মোছাল্লী কল্যাণ ট্রষ্টের সভাপতি মো: জহিরউদ্দীন বাবর মোছাল্লীর পরিচালনায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা,বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা ও বাগেরহাট জেলা জামায়েতর নায়েবে আমীর, ২০ দলীয় জোট বাগেরহাট জেলার সদস্য সচীব ও রামপাল মোংলার ২০ দলীয় জোটের প্রিয় মানুষ এ্যাডভোকেট মাওলানা শেখ আঃ ওয়াদুদ সাহেব, বিশেষ অতিথি মোংলা উপজেলা পরিষদ এর ভাইচ চেয়ারম্যান অধ্যাপক কহিনূর সরদার, সাবেক মেম্বার আউবআলী, শ্রমিক নেতা ইমরান ও ছাত্র নেতা মোস্তাইন মোল্লা। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সান্তনা প্রদান করেন।

'নিশ্চয় আমি এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং নিশ্চয় আমিই একে সংরক্ষণ করবো'!!



বাংলাদেশ বার্তাঃ রাশিয়ায় যখন কুরআন নিষিদ্ধ ছিলো, ১৯৭৩ সাল, রাশিয়ার রাজধানী মস্কো, একটি মুসলিম দেশ থেকে একজন মুসলমান সেখানে ট্রেনিংয়ের উদ্দেশ্যে যান। তিনি বলেন, জুমার দিন আমি বন্ধুদেরকে বললাম, চলো জুমার নামাজ পড়ে আসি।

তারা বললো এখানের মসজিদ গুলোকে গুদাম ঘর বানানো হয়েছে এবং দুই একটি মসজিদকে রাজনীতির স্থান করা হয়েছে। এই শহরে শুধুমাত্র দু'টি মসজিদ আছে, যা কখনও খোলা হয় আবার বন্ধ করে রাখা হয়। আমাকে সেখানের ঠিকানা বলে দাও। ঠিকানা নেওয়ার পর মসজিদের কাছে গিয়ে দেখি মসজিদ বন্ধ। পার্শ্ববর্তী এক লোকের কাছে চাবি ছিল। সে আমাকে বললো মসজিদ আমি খুলে দিতে পারি, তবে আপনার কোন ক্ষতি হলে এর দায়িত্ব আমার না! আমি বললাম দেখুন জনাব! আমি আমার দেশেও মুসলমান ছিলাম রাশিয়ায়ও মুসলমান আছি। সেখানে নামাজ পড়তাম। এখানেও নামাজ পড়বো।

এরপর মসজিদ খুলে দেখলাম ভিতরের অবস্থা খুব খারাপ। আমি দ্রুত মসজিদ পরিস্কার করে উচ্চস্বরে আযান দিলাম। আযানের শব্দ শুনে শিশু, বৃদ্ধ, নারী পুরুষ মসজিদের গেটে জমা হয়েছে। কে এই ব্যক্তি যে মৃত্যুর আওয়াজ করেছে? কিন্তু কেউ মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করলো না।

যেহেতু শুধুমাত্র এক ব্যক্তি থাকলে জুমার নামাজ পড়া যায় না তাই আমি জোহরের নামাজ পড়লাম। তারপর মসজিদ থেকে বের হয়ে আসলাম। তখন দেখলাম সকলেআমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন আমি এইমাত্র বিশ্বে নতুন কোন জিনিস আবিষ্কার করে তাদের কাছে এসেছি।

এক বাচ্চা এসে আমার হাত ধরে বললো, চলুন না আমাদের বাসায় গিয়ে চা খাবেন! তার কাককুতি মিনতি দেখে আমি আর না করতে পারলাম না। বাসায় গিয়ে দেখলাম অনেক সুস্বাদু খাবার। আমি তা খাওয়ার পর চা খেলাম। এরপর পাশের এক বাচ্চাকে বললাম তুমি কোরআন পড়তে পারো? সে বললো পারি। আমি আমার পকেট থেকে কুরআন শরীফ বের করে খুলে এক জায়গায় আংগুল রেখে সেখান থেকে তাকে পড়তে বললাম।

তখন সে একবার কুরআনের দিকে একবার আমার দিকে একবার তার পিতা মাতার দিকে আরেকবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আমি বললাম বাবা! এখান থেকে পড়ো?

ইয়া আইয়্যুহাল্লাজীনা......। সঙে সঙে সে আমার দিকে তাকিয়ে পড়তে লাগলো। সে পড়ছে আর পড়ছে। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম যে দেখে পড়তে পারেনা। অথচ মুখস্থ পড়েই যাচ্ছে। আমি এর কারণ তার পিতা মাতার কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললো, আসলে আমাদের এখানে কারো ঘরে কুরআন নেই। কারো ঘরে যদি কুরআনের কোন আয়াতের টুকরো পাওয়া যেত, তাহলে পুরা পরিবারকে ফাঁসিতে ঝুলানো হত।

তাহলে এ কিভাবে কুরআন মুখস্থ করেছে? আমাদের এখানে কিছু হাফেজ আছে। তাদের মধ্যে কেউ দরজি, কেউ
দোকানদার, কেউ কৃষক। আমরা কাজের কথা বলে তাদের কাছে আমাদের বাচ্চাদেরকে পাঠিয়ে দিতাম। তারা মৌখিকভাবে সুরা ফাতিহা থেকে নাস পর্যন্ত পড়ে শুনাতো। বাচ্চারা তাই শুনে শুনে এক সময় পুরো কোরআনের হাফেজ হয়ে যেত। আমাদের কারো কাছে যেহেতু কুরআন শরীফ নেই আর তারা কখনো কুরআন শরীফ দেখে পড়েনি, এ জন্য তারা কুরআন শরীফ দেখে পড়তে পারে না।তবে এই এলাকায় যত বাচ্চা দেখছেন, সকলেই হাফেজ।

আমি সেদিন কুরআনের একটি নয়, বরং কয়েক হাজার মুজিযা দেখলাম। যে সমাজে কোরআন রাখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সে সমাজের প্রতিটি শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষের অন্তরে মুখস্থরুপে কুরআন সংরক্ষিত রয়েছে।

আমি যখন বাইরে বের হলাম, সেখানে কয়েকশ বাচ্চাকে দেখলাম। তাদের কাছ থেকে কুরআন শুনতে চাইলাম। সকলে আমাকে কুরআন তেলাওয়াত করে শুনালো। আমি বললাম, হে নাস্তিক, কাফের, মুশরেকরা! তোমরা কুরআন রাখার ব্যাপারে তো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছো। কিন্তু যে কুরআন মুসলমানদের অন্তরে আছে তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারোনি।

আর তখন আমার কুরআনের এই আয়াতটি মনে পড়ে গেল 'নিশ্চয় আমি এ কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং নিশ্চয় আমিই একে সংরক্ষণ করবো'!! আল্লাহ্ সুবহান'ওয়া তা'লা সবাইকে দ্বীনের পথে অবিচল পথ চলার তাওফিক দান করুন।
Copyright

বৃহস্পতিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৮

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ফরয সালাত শেষ করে যেই ১৩টি দোয়া জিকির করতেনঃ



১. “আসতাগফিরুল্লা-হ” - ৩ বার ।(ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠَّﻪ)
অর্থঃ হে আল্লাহ!আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

২. “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবা-রাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম” – ১ বার।
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﻭَﻣِﻨْﻚَ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡُ، ﺗَﺒَﺎﺭَﻛْﺖَ ﻳَﺎ ﺫَﺍ ﺍﻟْﺠَﻼَﻝِ ﻭَﺍﻟْﺈِﻛْﺮَﺍﻡِ
অর্থঃ হে আল্লাহ্! তুমি শান্তিময়, তোমার কাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। তুমি বরকতময়, হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন “রাসুল (সাঃ) যখন সালাম ফেরাতেন তখন তিনি তিনবার ইস্তেগফার পড়তে্ন অর্থাত ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলতেন। তারপর বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম”। -মুসলিম ১/২১৮, আবু দাউদ ১/২২১

৩. একবার
لاَ إِلهَ إِلاَّ الله وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
উচ্চারণ:- “ লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহ্‌দাহু লা শারীকা লাহ্‌, লাহুল মুলকু অলাহুলহামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।
অর্থ:- আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।

৪. একবার
اَللّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الَجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’তিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা রোধ করার এবং যা রোধ কর তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন তোমার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬২ নং)

৫. একবার
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِالله
উচ্চারণ:- লা-হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ্‌।
অর্থ:- আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার শক্তি নেই।

৬. একবার
لآ إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ، لاَ إِلهَ إِلاَّ اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ
উচ্চারণ:- লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অলা না’বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন্নি’মাতু অলাহুল ফায্বলু অলাহুস সানা-উল হাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিস্বিনা লাহুদ্দ্বীনা অলাউকারিহাল কা-ফিরুন।
অর্থ- আল্লাহ ব্যতীত কেউসত্য উপাস্য নেই। তাঁর ছাড়া আমরা আর কারো ইবাদত করি না, তাঁরই যাবতীয় সম্পদ, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ, এবং তাঁরই যাবতীয় সুপ্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই উপাসনা করি, যদিও কাফেরদল তা অপছন্দ করে। (মুসলিম, সহীহ , মিশকাত ৯৬৩ নং)

৭. আয়াতুল কুরসী (সুরা বাক্বারা আয়াতঃ ২৫৫) ১ বার।
আবু উমামা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর ‘আয়াতুল কুরসী পাঠ করে মৃত্যু ছাড়া আর কিছুই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবেনা”।(নাসায়ী, হাদীস সহীহ, সিলসিলাহ সহিহাহ-হাদিস ৯৭২)

৮. আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এবং ১০০ বার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ দাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর” পড়ে, তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনাপুঞ্জের সমতুল্য হয়। (মুসলিম-১২২৮)।

৯. সুরা ইখলাস,ফালাক্ব ও নাস ১ বার করে। (আবু দাঊদ২/৮৬, সহীহ তিরমিযী ১/৮, নাসাঈ ৩/৬৮)

১০. “আল্লাহুম্মা আ ই’ন্নী আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হু’সনি ইবাদাতিকা”১বার
ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺃَﻋِﻨِّﻲ ﻋَﻠَﻰ ﺫِﻛْﺮِﻙَ، ﻭَﺷُﻜْﺮِﻙَ، ﻭَﺣُﺴْﻦِ ﻋِﺒﺎﺩَﺗِﻚَ
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার স্মরণ, তোমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার সুন্দর ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর”। -আবু দাউদ ১/২১৩

১১. একবার
اَللّهُمَّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাবআসু ইবা-দাক।
অর্থ:- হে আল্লাহ! যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনরুত্থিত করবে সেদিনকার আযাব থেকে আমাকে রক্ষা করো। (মুসলিম)

১২. হযরত আব্দুর রহমান বিন গানম (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের নামায থেকে ফিরে বসা ও পা মুড়ার পূর্বে (অর্থাৎ যেভাবে বসে নামাজ শেষ করেছে সেভাবে বসেই, এদিক অদিক ঘুরা বা অন্য রকম করে বসার পূর্বেই) নিম্নোক্ত দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবে,
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ইয়ুহ্‌য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।
আল্লাহ্‌ তার আমলনামায় প্রত্যেকবারের বিনিময়ে ১০টি নেকি লিপিবদ্ধ করেন, ১০টি গোনাহ মোচন করে দেন, তাকে ১০টি মর্যাদায় উন্নীত করেন, প্রত্যেক অপ্রীতিকর বিষয় এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে (ঐ যিকির) রক্ষামন্ত্র হয়, নিশ্চিতভাবে শির্ক ব্যতীত তার অন্যান্য পাপ ক্ষমার্হ হয়। আর সে হয় আমল করার দিক থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, তবে সেই ব্যক্তি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে যে তার থেকেও উত্তম যিকির পাঠ করবে”(আহমাদ,সহীহ তারগীব-হাদিস ৪৭২)

১৩. ফজরের সলাতের পর ১ বার
اَللّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْماً نَّافِعاً وَّرِزْقاً طَيِّباً وَّعَمَلاً مُّتَقَبَّلاً
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা ইলমান না-ফিআ, ওয়া রিযক্বান ত্বাইয়িবা, ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালা।
অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ফলদায়ক শিক্ষা,হালাল জীবিকা এবং গ্রহণযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।
ফজরের নামাযের পর এটি পঠনীয়। (ইবনে মাজাহ্‌, সুনান১/১৫২, ত্বাবারানী সাগীর, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/১১১)

দ্রষ্টব্য- এখানে সিরিয়ালি যেভাবে দেওয়া হয়েছে এভাবেই করতে হবে এমন নয়, এভাবে করতে পারেন কিংবা সিরিয়াল আগ পাছ হলেও সমস্যা নেই, প্রত্যেক ফরজ সলাতের পর সবগুলো দোয়া জিকিরই করার চেষ্টা করবেন হয়তো ৭-৮ মিনিট লাগতে পারে তবে সময় সল্প থাকলে সেই ওয়াক্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণগুলোও করতে পারেন মুল কথা রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ফরজ সলাত শেষে এগুলো দোয়া জিকির করতেন আমাদেরও সাধ্যমত এগুলোর অনুসরণ করা উচিত।
================================
ফরজ সলাত শেষে রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত এই দোয়া জিকিরগুলো পরিত্যাগ করে সম্মিলিত মুনাজাত করার মাধ্যমে আমরা কতটা খতিগ্রস্থ হয়েছি দেখুন
=================================
১- প্রতি ফরজ সলাতের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাত এই সওয়াব থেকে বঞ্চিত হচ্ছি সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে।

২- আমাদের সব পাপ ক্ষমা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুসংবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি-

“আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’’(সহিহ মুসলিম হাদিস-২২২০, হাদিস একাডেমী)

যদি রাসূল (সাঃ) এর নিম্নে বর্ণিত হাদিসটি লক্ষ্য করেন--
রাসূল (সাঃ) বলেন, কোন ব্যক্তি যদি প্রত্যেক ফরয স্বলাতের পর-
“সুবহা-নাল্লাহ” (আল্লাহ কতই না পবিত্র-মহান)”«سُبْحَانَ اللَّه ((৩৩ বার
“আলহামদুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য) الْحَمْدُ لِلَّهِ، (৩৩ বার)
“আল্লা-হু আকবার” (আল্লাহ সবচেয়ে বড়)” اللَّهُ أَكْبَرُ (৩৩ বার)
তারপর ১ বার নিম্নোক্ত দোয়া বলে
« لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ».
(লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)।
“একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।”
তাহলে ঐ ব্যক্তির সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা সমতুল্যও হয়। (সহিহ মুসলিম হাদিস-১২৩৯, হাদিস একাডেমী)
আর এ দোয়া না পারলে আর ১ বার “আল্লা-হু আকবার” বলে ১০০ পূর্ণ করবে।
#তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোন ব্যক্তি ৫ ওয়াক্ত সলাত আদায় করলেই তার ৩৬০ বার নয় ৫০০ বার উপরোক্ত তাসবিহ, তাহলিল, তাকবীর, তাহমিদ আদায় এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে যার বিনিময়ে তার সব গুনাহ মাফ এমনকি জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত সেটা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি সম্মিলিত মুনাজাতের মাধ্যমে।

৩- ১২ নাম্বার হাদিসে বর্ণীত ফজর ও মাগ্রিবের সলাতের পর ১০ বার করে ঐ জিকির পাঠ করলে শিরক বাদে বাকি সব পাপ ক্ষমার কথা বলা হয়েছে, এটা কত বড় ফজিলত সেটা কি চিন্তা করা যায়!! অথচ এগুলো না করে সম্মিলিত মুনাজাতের নামে এমন বিদাতে আমরা লিপ্ত হয়েছি যার সহিহ হাদিস দূরে থাক রাসুল (সাঃ) ফরজ সলাত শেষে সাহাবীদের নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন এই মর্মে কোন জাল হাদিসও নেই অথচ শয়তান আমাদের কাছে এটাই লোভনীয় করে তুলে ধরেছে, এমনকি বিদআতপন্থি কিছু মানুষ এই কাজকে জায়েজ প্রমান করার জন্য ঘুরিয়ে পেচিয়ে বিভিন্ন দলিল দেওয়ার চেষ্টা করে অথচ কিয়ামত পর্যন্তও তারা স্পষ্ট কোন দলিল দেখাতে পারবে না যে, রাসুল (সাঃ) ফরজ সলাত শেষে সাহাবীদের নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত করেছেন। সত্যিকার অর্থে সুন্নাতের অনুসরনেই মুক্তি রয়েছে, দলিল বিহিন আমল তথা বিদাতের অনুসরণ না করে আল্লাহর রাসুল যা করতেন, যা করতে বলেছেন অর্থাৎ রাসুলের সুন্নাতের ছায়াতলে আসাটাই নিরাপদ, এতেই কল্লান রয়েছে, এটাই সরল পথ যেই পথ আমাদেরকে জান্নাতে পৌঁছে দিবে ইন শা আল্লাহ।

২৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ‘১৫ মাসেই সংকটে ইসলামী ব্যাংক’ শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে ইসলামী ব্যাংকের বক্তব্য

বাংলাদেশ বার্তাঃ২৬ এপ্রিল,২০১৮:  ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড-এ মালিকানা বদলের পর আর্থিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে যে খবর ছাপা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। গ্রাহকের আস্থায় চিড় ধরার বিষয়টি অনুমান নির্ভর এবং সংকট সৃষ্টির বিষয়টিও কল্পনা প্রসূত। এ ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকের আস্থা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল সময়ের তুলনায় ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল সময়ে আমানত বৃদ্ধির হার ছয় গুণেরও বেশি। এর মাধ্যমে ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। ২০১৭ সালের ৩১ মার্চ পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধির হার ছিল ১০% যা ২০১৮ সালের একই সময়ে ১২% দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে দেশের স্থিতিশীলতা ও উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ থাকায় ব্যাংকিং খাতের বিনিয়োগ বেড়েছে। এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দেশের মোট বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধি সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। 
এছাড়া ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে এর একটি বড় অংশই হলো এই সময়ে বিগত বছরের বিভিন্ন শিল্প যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানীর মূল্য পরিশোধ জনিত কারণে যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সার আমদানী এবং বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক পন্য সংরক্ষণের মওসুমের কারণেও প্রতিবছর এসময় বিনিয়োগ বেড়ে যায় যা স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি। দেশের বৃহত্তম ব্যাংক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানী নির্ভর বিনিয়োগ রয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানী উত্তর বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়েছে। বিনিয়োগের হার সমন্বয় করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া সময়সীমার মধ্যেই ব্যাংকের আইডিআর সমন্বয় করার কার্যকর পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করা হয়েছে। 
২০১৮ সালে ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ২ লক্ষ ৫০ হাজারেরও বেশি নতুন হিসাব খোলা হয়েছে। আরো অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে ব্যাংকের সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে এযাবত ৯৫টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট চালু হয়েছে এবং এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। গ্রাহকদের আস্থা হারানোর মত কোন ঘটনা এ ব্যাংকে ঘটেনি এবং ব্যাংকে কোন কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনাও হয়নি। ব্যাংকের বোর্ডে দ্বন্দের বিষয়টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। ব্যাংকে সুশাসন বলবৎ রয়েছে। নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সকল নিয়ম কানুন পরিপালন করেই ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে সুতরাং ব্যাংক কোন বিশেষ গ্রুপের কাছে জিম্মি হওয়ার বিষয়টি অবান্তর। 
ব্যাংকে কোন তারল্য সংকট নেই এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালু রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ইসলামী বিনিয়োগ বন্ডে ইসলামী ব্যাংকের পর্যাপ্ত তারল্য সংরক্ষিত আছে।

বুধবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৮

শরীয়াতের মানদন্ডে শবে বরাত ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল-আযহারী


বাংলাদেশ বার্তাঃ ‘শবে বরাত’ নাকি ‘লাইলাতুন নিসফি মিন সাবান’?
আমাদের দেশে এ রাতকে ‘শবে বরাত’ বলা হয়। ফারসী ভাষায়, শব অর্থ রজনী। আর বরাত অর্থ ভাগ্য। সুতরাং শবে বরাতের অর্থ দাঁড়ায়, ভাগ্য রজনী। মূলত: এই পরিভাষাটি কুরআন বা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং একটি আয়াতের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকেই এ ধরনের নামকরণ হতে পারে।
সূরা দুখানে বলা হয়েছে,
﴿ إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ . فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴾
“নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়”(সূরা দুখান:৩,৪)। 
‘বরকতময় রাত’ বলতে অসাবধানতাবশত কেউ কেউ মধ্য শাবানকে বুঝেছেন। অথচ এর দ্বারা যে রমাদান মাসে অবস্থিত কদরের রাতকে বুঝানো হয়েছে, তা একটি অকাট্য বিষয়।
এজন্যই ইবনুল কায়্যীম (র.) বলেন,
” وهذه هي ليلة القدر قطعا؛ لقوله – تعالى -: "إنا أنزلناه في ليلة القدر". ومن زعم : أنها ليلة النصف من شعبا، فقد غلط “
“এটি অকাট্যভাবে কদরের রাত্রি। কারণ আল্লাহ বলছেন, “নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে কদরের রাত্রিতে নাযিল করেছি”। আর যারা শাবানের মধ্যরাত ধারণা করছে, তারা আসলে ভুল করছে”।
ইবনু কাসিরও বলছেন,
"ومن قال :إنها ليلة النصف من شعبان فقد أبعد النَّجْعَة؛ فإن نص القرآن أنها في رمضان “
“যারা শাবানের মধ্য রাত্রি বলছেন, তারা বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। বরং এটি যে রমাদান মাসের একটি রাত, সে ব্যাপারে কুরআনের ভাষা সুস্পষ্ট”। 
আল্লামা শানকিতী বলেন, ” إنها دعوى باطلة ” (মধ্য শাবানের দাবী) একটি ভিত্তিহীন দাবী”।
এভাবে প্রমাণিত হলো, কুরআনের মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ রাতের কোন উল্লেখ নেই। বরং একাধিক হাদীসে এ রাতের উল্লেখ পাওয়া যায়। একটু পরেই সেগুলোর আলোচনা আসবে। যেথায় এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘শাবানের ১৫তম রজনী’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই শবে বরাত না বলে এ রাতকে “‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’” বলাই শ্রেয়। কারণ, এটিই হাদীসের দেয়া নাম। 

তবে হা, বরাত বলতে যদি আরবী براءة (বারাআহ) কে বুঝানো হয়, তাহলে অনেকটা মেনে নেয়া যায়। যার অর্থ, মুক্তি বা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি। তাহলে পুরো অর্থ দাঁড়াবে, গুনাহ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত। কারণ হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, এ রাতে এমনটি ঘটে থাকে।

শরীয়তের মানদন্ডে শাবানের ১৫তম রজনীর মাহাত্ম্য:

শাবানের মধ্য রজনী একটি পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনী। এর রয়েছে স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ করুণা ধন্য এ রাত। এ রাতে ইবাদাত-বন্দেগী করা উত্তম। এ মর্মে কুরআনে কিছু না থাকলেও হাদীসের মধ্যে রয়েছে সুস্পষ্ট বক্তব্য। একাধিক হাদীস দ্বারা এই মর্যাদা সুপ্রতিষ্ঠিত। হযরত মু‘আয বিন জাবাল, আবু বকর, আবু ছা‘লাবাহ, আবু মুসা আশ‘আরী, আবু হুরায়রা, ‘আইশা, আবদুল্লাহ বিন ‘উমার ও আওফ বিন মালিক (রা.) প্রমুখ সাহাবী থেকে এ সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
নিন্মে হাদীসগুলো সূত্র ও স্তর বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো:

১. মু‘আয বিন জাবালের (রা.) হাদীস:
হযরত মু‘আয বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেন,
يَطْلُعُ اللَّهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
“আল্লাহ তাঁর সমস্ত সৃষ্টির দিকে শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি দেন। অতঃপর তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে মাফ করে দেন, শুধুমাত্র মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত”।

এ হাদীসটি ইবনি হিব্বান তাঁর ছহীহের মধ্যে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন:
رواه الطبراني في الكبير والأوسط ورجالهما ثقات.
“হাদীসটি ইমাম তাবারানী তাঁর আল-মু‘যাম আল-কাবীর ও আছ-ছগীরের মধ্যে রিওয়ায়িত করেছেন। এ দুটোতেই হাদীসটির বর্ণনাকারীরা নির্ভরযোগ্য”।

২. হযরত আবু বকরের (রা.) হাদীস:
হযরত আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন,
(إذا كانت ليلة النصف من شعبان ينزل الله تبارك وتعالى إلى سماء الدنيا فيغفر لعباده إلا ما كان من مشرك أو مشاحن لأخيه
“যখন শাবানের মধ্য রাত আসে, আল্লাহ দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন। তারপর সব বান্দাকে মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি শত্রুতাভাবাপন্ন তাদেরকে ছাড়া”।
ইমাম হাইসামী مجمع الزوائد এ বলেন:
رواه البزار وفيه عبد الملك بن عبد الملك ذكره ابن أبي حاتم في الجرح والتعديل ولم يضعفه وبقية رجاله ثقات
“হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে আবদুল মালিক বিন আবদিল মালিক নামে একজন রাবী আছেন। ইবনু আবি হাতিম আল-জারহ অত-তাদিল কিতাবে তার কথা উল্লেখ করেছেন। তবে তাকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেন নি। এছাড়া, সনদের অন্যান্য সব রাবী (বর্ণনাকারী) বিশ্বস্ত”।

৩. আবু ছা‘লাবাহর (রা.) হাদীস:
হযরত আবু ছা‘লাবাহ থেকে বর্ণিত। নবী (স.) ইরশাদ করেন,
يطلع الله إلى عباده ليلة النصف من شعبان فيغفر للمؤمنين ويمهل الكافرين ويدع أهل الحقد لحقدهم حتى يدعوه
“আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অর্ধ শাবানের রাতে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং সমস্ত মুমিনকে মাফ করে দেন। তবে কাফিরদেরকে অবকাশ দেন। আর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে পরিত্যাগ করেন, যতক্ষণ না তারা হিংসা-বিদ্বেষ বর্জন করে”।
হাদীসটি ইমাম বাযযার তার মুসনাদে ও ইমাম বায়হাকী তার আস-সুনান আছ-ছুগরাতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম হাইসামী বলেন:
رواه الطبراني وفيه الأحوص بن حيكم وهو ضعيف
তাবারানী হাদীসটি বেওয়ায়েত করেছেন। এর মধ্যে আল-আহওয়াস বিন হাকীম নামে একজন রাবী আছেন। তিনি দুর্বল”।

৪. আবু মুসা আশ‘আরীর হাদীস:
আবু মুসা আশ‘আরী (রা.) রাসূল (স.) থেকে বর্ণনা করেন,
إِنَّ اللَّهَ لَيَطَّلِعُ في لَيْلَةِ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خلقة إلا لِمُشْرِكٍ أو مُشَاحِنٍ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাত্রিতে তাকান। তারপর মুশরিক ও মুশাহিন (অন্যের প্রতি বৈরিভাব পোষণকারী) ব্যতীত তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন”।
ইমাম ইবনু মাজাহ এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। مجمع الزوائد (মাজমাউয যাওয়াইদ) নামক গ্রন্থে বলা হয়েছে, إسناده ضعيف এর সনদটি দুর্বল। তবে ইমাম আলবানী বলছেন, حديث حسن এটি একটি হাসান হাদীস।

৫. হযরত আবু হুরায়রার হাদীস:
عن أبي هريرة قال قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: إذا كان ليلة النصف من شعبان يغفر الله لعباده إلا لمشرك أو مشاحن
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেন, “যখন অর্ধ শাবানের রাত্রি আসে, আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক ও মুশাহিন ব্যতীত”।
ইমাম ইবনুল হাইসামী এ হাদীস প্রসঙ্গে বলেন, “হাদীসটি ইমাম বাযযার বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে হিশাম বিন আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি আছেন। তাকে আমি চিনি না। তবে অন্যান্য সবাই নির্ভরযোগ্য”।

৬. হযরত ‘আইশার হাদীস:
ক. ইমাম তিরমিযি হযরত ‘আইশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
فَقَدْتُ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- لَيْلَةً فَخَرَجْتُ فإذا هو بِالْبَقِيعِ فقال: أَكُنْتِ تَخَافِينَ أَنْ يَحِيفَ الله عَلَيْكِ وَرَسُولُهُ، قلت: يا رَسُولَ اللَّهِ إني ظَنَنْتُ أَنَّكَ أَتَيْتَ بَعْضَ نِسَائِكَ، فقال: إِنَّ اللَّهَ عز وجل يَنْزِلُ لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ إلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَغْفِرُ لِأَكْثَرَ من عَدَدِ شَعْرِ غَنَمِ كَلْبٍ
“একদা রাত্রিতে আমি রাসূল (স.) কে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই তার সন্ধানে বের হলাম। জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে তাকে পেলাম। তিনি বললেন, তুমি কি আশঙ্কা করছিলে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি ভেবেছিলাম, আপনি অপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাত্রিতে দুনিয়ার আকাশে অবর্তীর্ণ হন এবং বনী কালবের ছাগল পালের লোমের চেয়ে অধিক পরিমাণ মানুষের গুনাহ মাফ করে দেন”।
ইমাম তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন,
حَدِيثُ عَائِشَةَ لَا نَعْرِفُهُ إلا من هذا الْوَجْهِ من حديث الْحَجَّاجِ وسَمِعْت مُحَمَّدًا يُضَعِّفُ هذا الحديث
“‘আইশার হাদীসটি হাজ্জাজের এই সূত্র ছাড়া অন্য কোন ধারা থেকে আমাদের জানা নেই। মুহাম্মাদ এই হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন বলে শুনেছি”।
হাদীসটি আরো বর্ণনা করেছেন ইবনু মাজাহ, ইবনু আবি শাইবাহ, আহমাদ বিন হাম্বল। শুআইব আরনাউত বলেন, إسناده ضعيف এর সনদটি দুর্বল।
খ. ইমাম বায়হাক্কী বর্ণনা করেন,
أن عائشة قالت: قام رسول الله -صلى الله عليه وسلم- من الليل يصلي فأطال السجود حتى ظننت أنه قد قبض فلما رأيتُ ذلك قمت حتى حركت إبهامه فتحرك فرجعت، فلما رفع الي رأسه من السجود وفرغ من صلاته قال: يا عائشه أو يا حميراء: أظننت أن النبي قد خاس بك؟ قلت: لا والله يا رسول الله، ولكنني ظننتُ أنك قبضت لطول سجودك، فقال: أتدرين أي ليلة هذه؟ قلت: الله ورسوله أعلم قال هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين، ويرحم المسترحمين، ويؤخر أهل الحقد كما هم)
হযরত ‘আইশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (স.) রাতে নামাযে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমার আশঙ্কা হলো, তাঁর হয়তো ইনতেকাল হয়ে গেছে। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে ‘আইশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা! তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (স.) তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা দেখে আমার আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যু বরণ করেছেন? নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তা‘আলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমাতের দৃষ্টি প্রদান করেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই”।
গ. ইমাম বায়হাকীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
فقال هذه الليلة ليلة النصف من شعبان، ولله فيها عتقاء من النار بعدد شعور غنم كلب،لا ينظر الله فيها إلى مشرك ولا إلى مشاحن ولا إلى قاطع رحم ولا إلى مسبل ولا إلى عاقّ لوالديه ولا إلى مدمن خمر، قال: ثم وضع عنه ثوبيه فقال لي: يا عائشة تأذنين لي في قيام هذه الليلة، فقلت: نعم بأبي وأمي فقام فسجد ليلا طويلا حتى ظننت أنه قبض، فقمت التمسته ووضعت يدي على باطن قدميه فتحرك ففرحت وسمعته يقول في سجوده: أعوذ بعفوك من عقابك، وأعوذ برضاك من سخطك، وأعوذ بك منك جل وجهك لا أحصي ثناءً عليك، أنت كما أثنيتَ على نفسك، فلما أصبح ذكرتهن له فقال يا عائشة: تعلمتِهنَّ؟ فقلت: نعم. فقال: تعلميهنَّ وعلميهنَّ؛ فإن جبريل عليه السلام علمنيهنَّ وأمرني أن أرددهن في السجود
‘অতঃপর তিনি বললেন, এই রাত্রিটি হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি। এই রাতে আল্লাহ কালব গোত্রের ছাগলের গায়ে যে পরিমাণ পশম আছে, সেই পরিমাণ লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেন। তবে আল্লাহ এ রাতে মুশরিক, বিদ্বেষপোষণকারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, টাখনুর নীচে পোশাক পরিধানকারী, মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান এবং মাদকাসক্তের প্রতি তাকান না। অতঃপর আবরণ সরিয়ে বললেন, হে ‘আইশা! তুমি কি আমাকে এই রাত্রে ইবাদাত করার অনুমিত দিবে? আমি বললাম, অবশ্যই, আমার বাবা-মা আপনার জন্য কুরবান হোক। অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং এত লম্বা সিজদা করলেন যে, আমার ভয় হলো, তিনি মনে হয় ইনতেকাল করেছেন। তাই আমি উঠে তার শরীর স্পর্শ করলাম। তাঁর পায়ের তলদেশে হাত রাখলাম। তাঁর পা নড়ে ওঠলো। আমি খুশী হলাম। তাকে শুনতে পেলাম, তিনি বলছেন, (হে আল্লাহ) তোমার ক্ষমার দ্বারা তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় চাই। তোমার সন্তুষ্টির দ্বারা তোমার ক্রোধ থেকে বাঁচতে চাই। তোমার থেকেই তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তোমার প্রশংসা করে শেষ করতে পারব না। তুমি তেমন, যেমনটি তুমি নিজেই নিজের প্রশংসা করেছ। অতঃপর যখন সকাল হলো, আমি এ দু‘আটি বললাম। রাসূল (স.) বললেন, ‘আইশা, তুমি মুখস্ত করে ফেলেছ? বললাম, হ্যাঁ। (তিনি বললেন) এগুলো মানুষকে জানিয়ে দাও, শিখিয়ে দাও। জিব্রাইল (আ.) আমাকে এগুলো শিখিয়েছেন এবং সিজদাতে এ দু‘আ পুনরাবৃত্তি করতে বলেছেন’।
ইমাম বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করে বলছেন, এটির সনদ দুর্বল।

৭. হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমরের হাদীস:
عن عبد الله بن عَمْرٍو انَّ رَسُولَ الله -صلى الله عليه وسلم- قال: يَطَّلِعُ الله عز وجل إلى خلقة لَيْلَةَ النِّصْفِ من شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِعِبَادِهِ الا لاِثْنَيْنِ: مُشَاحِنٍ وَقَاتِلِ نَفْسٍ
হযরত আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (স.) বলেন, “আল্লাহ অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি তাকান। অতঃপর সব বান্দাকে ক্ষমা করে দেন, দু’ শ্রেণী ব্যতীত: ক. মুশাহিন (বিদ্বেষপোষণকারী) ; খ. মানব হত্যাকারী”।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه أحمد وفيه ابن لهيعة وهو لين الحديث وبقية رجاله وثقوا
“ইমাম আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এর সনদের মধ্যে রয়েছে, ইবনু লাহীয়াহ। তিনি লাইয়্যেনুল হাদীস (হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে কিছুটা কোমলাতা/দুর্বলতা বিশিষ্ট)। তবেঅন্যান্য সব রাবী নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত”।
এছাড়া, ইমাম বাযযারও এটি বর্ণনা করেছেন।
৮. আওফ বিন মালিকের হাদীস:
عن عوف بن مالك قال قال رسول الله: – الله عليه وسلم- (يطلع الله تبارك وتعالى على خلقه ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر لهم كلِّهم إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত আওফ বিন মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় সৃষ্টির উপর শাবানের মধ্যরাতে দৃষ্টি নিবন্ধন করেন। এবং তাদের সবাইকেই মাফ করে দেন। শুধুমাত্র মুশরিক ও মুশাহিন ছাড়া।
ইমাম হাইসামী বলেন,
رواه البزار وفيه عبدالرحمن بن زياد بن أنعم وثقه أحمد بن صالح وضعفه جمهور الأئمة وابن لهيعة لين وبقية رجاله ثقات
বাযযার হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এতে আবদুর রহমান বিন যিয়াদ বিন আনউম রয়েছে। ইমাম আহমাদ তাকে নির্ভরযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে অধিকাংশ আলিম তাকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। এছাড়া , ইবনু লাহিয়াহও আছেন। যিনি একটু নরম। বাকী সব রাবী সিকাত”।

৯. কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামীর হাদীস।
عن كثير بن مرة الحضرمي، قال: قال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (إن اللهَ ينزل ليلةَ النصف من شعبان، فيغفر فيها الذنوب إلا لمشركٍ أو مشاحن
হযরত কাসীর বিন মুররা আল-হাদরামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ শাবানের মধ্য রাতে অবতীর্ণ হন। তারপর এ রাতে মুশরিক ও মুশাহিনের গুনাহ ব্যতীত অন্য সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন”।
হাদীসটি ইবনু আবি শাইবাহ, আবদুর রাজ্জাক তাদের মুছান্নাফে এবং বাযযার তাঁর মুসনাদের বর্ণনা করেছেন।

এতক্ষণে আমাদের সামনে যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে তাহলো, উপরিউক্ত হাদীসগুলোর সনদসমূহ সমপর্যায়ের নয়। কিছু শুদ্ধ, আবার কিছু দুর্বল। তবে সবগুলো একত্রিত করলে এ কথা না বলে কোন উপায় নেই যে, এ রাতটির ফজিলত একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।
এজন্য গবেষকগণ বলছেন,
أنَّ الأحاديثَ في فضل ليلة النصف من شعبان ثابتة وفي أقلِّ أحولها أحاديث حسنة لغيرها بمجوع طرقها، ومن العلماء من صرح أنها صحيحة لغيرها بمجموع طرقها لأنّ من طرقها حسنة بذاتها
বর্ণনার সবগুলো ধারা একত্রিত করলে হাদীসগুলোর সর্ব নিন্মস্তর হবে ‘হাসান লিগইরিহা’। অনেক গবেষক আবার স্পষ্ট করে বলছেন যে, এদের সবগুলো ধারা সমন্বিত করলে ‘ছহীহ লিগইরিহা’র পর্যায়ভুক্ত হবে। কারণ এগুলো যে সব ধারাই বর্ণিত হয়েছে, তাতে নিজেরাই ‘হাসান’ হিসেবে গণ্য।
এ প্রসঙ্গে শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ সর্বজন স্বীকৃত আলেমদের বক্তব্য বিষয়টিকে আরো প্রতিভাত করবে।
নিন্মে তা প্রদত্ত হলো,

হাফিজ ইবনু রজব (র.) বলেন,
اختلف فيها، فضعفها الأكثرون، وصحح ابن حبان بعضها، وخرجه في صحيحه.
অর্ধ শাবানের রাত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। অনেকেই এগুলোকে দুর্বল বলেছেন। ইবনু হিব্বান এদের কিছুকে ছহীহ বলেছেন এবং তার ছহীহ কিতাবের মধ্যে তাখরীজ করেছেন।

ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (র.) বলেন,
وأما ليلة النصف من شعبان ففيها فضلٌ، وكان في السلف من يصلي فيها، لكنَّ الاجتماع فيها لإحيائها في المساجد بدعةٌ، وكذلك الصلاة الألفية
“অর্ধ শাবানের রাতের মাহাত্ম্য রয়েছে। সালাফদের মধ্যে কেউ কেউ এ রাতে নামায পড়তেন। তবে মসজিদের মধ্যে এ রাতে ইবাদাতের জন্য একত্রিত হওয়াটা বিদ‘আত। অনুরূপ আলফিয়্যাহ নামক বিশেষ নামায আদায় করা (ও বিদ‘আত)”।

যে দুটো কারনে ইসলামী ব্যাংক থেকে সরে যেতে হলো আরাস্ তু খানকে......


বাংলাদেশ বার্তাঃমুলত দুটো কারনেই আরাস্তু খানকে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। ডেইলী স্টারের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, ২১ জন শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত না করায় এবং দুটো বড় কোম্পানীকে বিশাল আকারের ঋন দিতে অস্বীকার করায় আরাস্তুর চেয়ারম্যান পদটি দায়িত্ব নেয়ার এক বছর ও ৩ মাসের মাথায় শেষ হয়ে যায়।

জানা যায়, একটি অদৃশ্য মহল থেকে কয়েকমাস আগে আরাস্তুু খানের কাছে ব্যাংকের ২১ জন কর্মকর্তার একটি তালিকা যায়। বলা হয় এদের সবাইকে বরখাস্ত করতে হবে কেননা এদের সাথে জামায়াত-শিবিরের সম্পৃক্ততা আছে। এই তালিকায় ব্যাংকের এএমডি, ডিএমডি এবং মধ্যম সারির বেশ কিছু কর্মকর্তাও ছিলেন।

এই ২১ জনের মধ্যে একজন এএমডি, ৩ জন ডিএমডি এবং একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টকে জোর করে গত ৩ এপ্রিল পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহনও করা হয় দুদিনের মধ্যে।

কিন্তু এর পরপরই আরাস্তুু খানের উপর চাপ আরও বেড়ে যায় যাতে তালিকায় থাকা বাকি ১৬ জনকেও অনতিবিলম্বে বরখাস্ত করা হয়। সমস্যা শুরু হয় সেখান থেকেই। কেননা আরাস্তুু খান একসাথে এত কর্মকর্তাকে সরিয়ে দিতে রাজী হননি। তিনি জানিয়েছিলেন, এতগুলো সিনিয়র অফিসারকে একসাথে সরিয়ে দিলে ব্যাংক সমস্যায় পড়ে যাবে।

আরাস্তু খানের এই অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংকের একজন পরিচালক সরকারকে বোঝান যে আরাস্তুু খানকে দিয়ে জামায়াত-শিবিরের লোকজনকে সরানো যাবেনা। আর তখনই আরাস্তুকে বলা হয় তিনি যাতে পদত্যাগ করেন। প্রবল এই চাপ সইতে না পেরে ১৭ এপ্রিল পদত্যাগ করেন তিনি আর সাথে সাথেই তার পদত্যাগপত্র গৃহীতও হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নাজমুল হাসান। এর আগে নাজমুল হাসান ছিলেন স্বতন্ত্র পরিচালক। তাকে নতুন করে আরমাদা স্পিনিং মিলসের প্রতিনিধির দায়িত্ব দেয়া হয়, যেটা আগে আরাস্তুু খান নিজেই করতেন।

দ্বিতীয় যেই কারনে আরাস্তুুকে চলে যেতে হলো তাহলো তিনি বড় ঋন না দেয়ার ব্যপারে শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন। একটি বড় কোম্পানী (যার রিয়েল এস্টেট ও সিমেন্টের ব্যবসা আছে) ইসলামী ব্যাংকের কাছে ১৪শ কোটি টাকা ঋন চায়। কিন্তু ব্যাংকের তহবিল সংকট আছে এই অজুহাত দেখিয়ে আরাস্তু এত বড় ঋনটি দিতে অস্বীকার করেন। এর পর আরেকটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানীও ৫০০ কোটি টাকা ঋন চাইলে আরাস্তু সেটাও না করে দেন। ঐ রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর মালিক সরকারের একজন গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তি হওয়ায় এই ঋনটি স্যাংকশন না হওয়ার বিষয়টি সরকারের উপরমহলে চলে যায় ফলে কপাল পোড়ে আরাস্তুু খানের।

আরাস্তুুকে এই বিষয়ে ফোন দেয়া হলে তিনি ঋন না দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে সিনিয়র অফিসারদের বরখাস্তের প্রসংগে তিনি কোন কথা বলেননি। তিনি জানান, ইসলামী ব্যাংক নিয়ে তিনি আর কোন মন্তব্য করবেন না।

Courtesy: Ali Ahmad Mabrur

শমসের পাড়া নিবাসী ওসমান সাহেবের পিতার মৃত্যুতে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের শোক

বাংলাদেশ বার্তাঃ শমসের পাড়া মালেক খলিফা বাড়ি নিবাসী ওসমান সাহেবে পিতা আলহাজ সোলায়মান সাহেব ২৩ এপ্রিল ২০১৮ তারিখ বার্ধ্ক্য জনিত কারনে ইন্তেকাল করেছেন(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে মরহুমের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি ৩ছেলে, ৫ মেয়েসিহ অসংখ্য শুবাকাংখী রেখে যান।
তার মৃত্যুতে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের আমীর আবু জাওয়াদ ও সহকারী সেক্রেটারী শোক প্রকাশ করে এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন।
শোকবানীতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও মাস্টার নুরুন্নবীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

বাংলাদেশ বার্তাঃ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা মহানগরী শাখার আমীর মাওলানা আবুল কালাম আজাদ খুলনার আদালতে ও যশোর পূর্ব সাংগঠনিক জেলা শাখার আমীর মাস্টার নুরুন্নবী যশোর আদালতে গত ২২ এপ্রিল মিথ্যা মামলায় আত্ম-সমর্পন করেন। আদালত তাদেরকে জামিন না দিয়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠায়। তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২৩ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “জামায়াত নেতৃবৃন্দ দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে মিথ্যা মামলায় আত্ম-সমর্পন করতে গেলে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
মাওলানা আবুল কালাম আজাদ ও মাস্টার নূরুন্নবী দু’জনই অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানী করার হীন উদ্দেশ্যেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তারা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেই তারা দেশের সুনাগরিক হিসেবে আদালতে আত্ম-সমর্পন করতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক।
রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে তাদের মুক্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী মুক্তিসংগ্রাম- – মাহমুদুর রহমান(দ্বিতীয় কিস্তি)

Bangladesh Barta; April 24, 2018 0 27: উপরোক্ত শিরোনামের লেখাটির দ্বিতীয় কিস্তির জন্য কলম ধরতে বেশ দেরী হয়ে গেল। দিনের হিসেবে এক মাস পর লিখতে বসেছি। দৈনন্দিন ধরা-বাধা কোন দায়িত্ব না থাকলেও নানা রকম ঝক্কি-ঝামেলায় একেবারেই ফুরসত পাইনি। এর মধ্যে জেলখানায় বসে ইংরেজীতে লেখা আমার বইটি প্রকাশের উপযোগী সজ্জা ও বিন্যাস ঠিক করতে বেশ সময় লেগেছে। এ ছাড়া সপ্তাহে অন্তত: তিনটে দিন জেলায় জেলায় মামলার হাজিরায় ছুটতে হয়েছে। আমার কোন চাকরী কিংবা ব্যবসা না থাকলেও ১১৮টি মামলায় হাজিরা দেয়াই অনেকটা পেশায় দাঁড়িয়ে গেছে। অবশ্য এ পেশায় কোন আয় নেই, পুরোটা ব্যায়। এ নিয়ে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কোন অভিযোগও নেই। আমার মত এক অতি নগন্য ব্যক্তি প্রবল ক্ষমতাধর দখলদার প্রধানমন্ত্রী আর তার দিল্লির প্রভুদের সমালোচনা করে যাবে, আর সেই প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতার যথেচ্ছ প্রযোগ করবেন না তা কী হতে পারে? আমি একগুঁয়ে হতে পারি, তবে যুক্তিবিবর্জিত নই। বিলম্বের কৈফিয়ত শেষ করে এবার প্রসঙ্গে আসি।
গত এক মাসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজধানী এবং বাইরের প্রায় শ’খানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের সরকারী চাকরীতে ‘কোটা-সংস্কার’ আন্দোলন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনী তামাশার পর প্রথম বারের মত অবৈধ সরকারকে কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পেরেছে। আন্দোলন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বর্তমান পর্যায় পর্যন্ত ধারাবাহিক ঘটনাবলী থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ, সমাজে ভিন্ন মত পোষনকারী শ্রেণি এবং এমনকি আন্দোলকারীদেরও শিক্ষা গ্রহনের অনেক উপাদান রয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদবিরোধী মুক্তিসংগ্রামে এই শিক্ষা কাজে লাগবে।
বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ন ভিত্তিহীন মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর আমার প্রথম লেখায় মন্তব্য করেছিলাম, আদালত কিংবা আইনের মাধ্যমে তার মুক্তি মিলবে না। বিএনপি যদি কঠিন ও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে তাহলেই কেবল সরকার বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। অন্যথায় যেদিন শেখ হাসিনা এবং দিল্লি মনে করবে যে, বাংলাদেশে জনপ্রিতায় অপ্রতিদ্বন্দী এই রাজনৈতিক নেত্রীকে আর জেলখানায় আটকে রাখার প্রয়োজন নেই সেদিন তিনি ছাড়া পাবেন। বেগম জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর আমরা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দেখলাম যে, বিএনপির নীতি নির্ধারকবৃন্দ এবং আইনজীবীরা সমস্বরে বলছেন, তারা নাকি আইনী প্রক্রিয়াতেই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনবেন। এখানেই তারা থেমে থাকেননি। বিভিন্ন টকশো এবং সভা-সেমিনারে প্রদত্ত বক্তব্যে বন্দীত্বের প্রথম দিকে তারা মুক্তির দিন-ক্ষনও ঠিক করে দিতেন। প্রথমে তিন দিন, তারপর সাতদিন, এরপরে এক মাস এবং সর্বশেষ ঘোষনা অনুযায়ী ৮ মে। নেতৃবৃন্দের মধ্যে অধিকাংশ আইনের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার বয়ান শেষ পর্যন্ত বন্ধ করলেও, অতি আশাবাদী দুই-একজন এখনও আইনী প্রক্রিয়ার জাবর কাটছেন। এই সব জাতীয়তাবাদী নেতাদের কন্ঠে ৮ ফেব্রুয়ারী পরবর্তী মাসখানেক ‘ফাঁদে পা না দেয়া’ তত্ত্ব প্রায় প্রতিদিন শুনেছি। একটি দলের কৌশলের মধ্যে অহিংস নীতি থাকতেই পারে। কিন্তু প্রতি নেতার প্রতিটি বক্তৃতায় ভাাঙ্গা রেকর্ডের মত শান্তিপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ মন্ত্র কেন জপতে হবে সেটা বুঝতে পারিনি। বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার এবং আদালতের অব্যাহত অন্যায় আচরন দেখে আমার মত কোন নির্বোধের মনে যদি আজ প্রশ্ন জাগে যে, ফাঁদ আসলে কোনটা ছিল তাহলে বিএনপির নেতৃবৃন্দ কী তেড়ে মারতে আসবেন? অবশ্য একটি ভরসা আছে। তারা তো অহিংসা নীতি এখনও পরিত্যাগ করেননি। কাজেই সমালোচনাকারীরা পার পেয়ে যেতেও পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা শিক্ষা এবং অনুপ্রেরনা গ্রহন করবেন কি না?
আমার দৃষ্টিতে বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছেন, আন্দোলন অহিংস হবে নাকি সহিংস হবে সেটা সম্পূর্নভাবে ক্ষমতাসীনদের নীতির ওপরই নির্ভর করে। জনগনের স্বত:স্ফূর্ত এবং যোক্তিক আন্দোলনকে স্বৈরতান্ত্রিক সরকার যখন রাষ্ট্রযন্ত্রের নিপীড়নের মাধ্যমে স্তব্ধ করতে চায় তখনই সহিংসতার সৃষ্টি হয়। দক্ষিন আফ্রিকার বর্ণ-বাদী সরকারের জুলুমের প্রসঙ্গক্রমে নেলসন ম্যান্ডেলা কথাগুলো বললেও সারা বিশ্বেও সকল গনতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্যেই সেটি অকাট্য। আজকের বাংলাদেশ সম্পর্কেও কী এই মহান রাষ্ট্রনেতার বিশ্লেষন সঠিক নয়? এই জন্যেই তিনি, নেলসন ম্যান্ডেলা।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনের শুরুতে বিএনপি নেতৃবৃন্দের মুখে বার বার শান্তিপূর্ন আন্দোলনের কথা উচ্চারিত হওয়ায় আন্দোলনের মূল লক্ষ্যের চেয়ে তার ধরন নিয়ে বিতর্ক অপ্রয়োজনীয়ভাবে সামনে চলে আসে। ফলে সেই কথিত শান্তিপূর্ন আন্দোলনেও আশাপ্রদ গতি আনা সম্ভব হয়নি। গাজীপুর এবং খুলনার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এখন মিডিয়ায় অধিক প্রাধান্য পাচ্ছে। সেই নির্বাচন শেষ হতেই পবিত্র রমজান মাস শুরু হবে। রোজার মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রধানত: ইফতার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারের খেতাবপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা যদি নিদেনপক্ষে ঈদুল ফিত্র পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে জেলেই রাখতে চান সেক্ষেত্রে বিএনপির নীতি নির্ধারকদের আস্তিনে কোন বিকল্প কৌশল আদো কী আছে? আমাদের মহানবী (সা.) রমজান মাসেই বদরের যুদ্ধে নেতৃত্ব দিলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিবেচনায় ওই মাসে কোন কঠোর আন্দোলনের সুযোগ নেই। কাজেই আগামী ঈদ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে দখলদার প্রধানমন্ত্রী নিরাপদেই থাকছেন। এই অবস্থায় দু’টো প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে। এক, বিএনপি কী রোজার ঈদের পর থেকেই আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত কিংবা প্রস্তুতি নিয়েছে. এবং দুই, যদি আন্দোলন তারা করেও তাহলে এবারও কী গান্ধীবাদী অহিংসার নীতিতেই তারা অটল থাকছে?
বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে কথা-বার্তা বলে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, দুই কারনে দলের নীতিনির্ধারকরা অহিংসা নীতির প্রতি এতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পরিচালিত ২০১৫ সালের ব্যর্থ আন্দোলনের পর বাংলাদেশ এবং ভারত সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যৌথভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে সহিংসতার জোর প্রচারনা চালায়। ঢাকায় নিযুক্ত পশ্চিমা কূটনীতিকরাও ক্ষমতাসীন বেআইনী এবং অসাংবিধানিক সরকারকে সংবিধানের দোহাই দিয়েই সমর্থন জোগায়। তারা আন্দোলনের ন্যায্যতাকে সম্পূর্ন উপেক্ষা কওে এবং সহিংস ঘটনার পেছনে সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ এজেন্সীর হাত থাকলেও এ সকল কূটনীতিবিদ সহিংসতার জন্যে বিএনপিকে ঢালাও এবং একতরফা ভাবে দোষারোপ করে। পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহের এই দ্বিমুখী আচরন ইসলাম ভীতি (Islamophobia) এবং ভারততোষন নীতি হতে সৃষ্ট। একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির পক্ষে পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। ফলে তারা এবার সহিংসতার কোন দায় নিতে চায়নি।
এদিকে ২০১৫ সালের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়া মাত্র ক্ষমতাসীন মহল পুলিশ এবং আদালতকে ব্যবহার করে বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করবার যাবতীয় পদক্ষেপ নেয়। বিএনপি জামাতের নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক ভুয়া মামলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষকে আসামী করা হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই এখন বাড়ী ছাড়া, এলাকাছাড়া হয়ে পলাতক জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে। বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং গুম খুনের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। পুলিশ হেফাজতে বর্বর নির্যাতনে পঙ্গু হয়েছে আরও কয়েক হাজার। এমতাবস্থায় নতুন করে মামলা-হামলার ঝুঁকি এড়াতেও বিএনপি নেতৃবৃন্দ অহিংসার নীতি প্রচারে বাধ্য হয়েছে। চলমান লক্ষাধিক মামলার খরচ চালিয়ে পুনরায় মামলার বোঝা কাঁধে নেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের গনতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ এবং আদালত আজ সবচাইতে বড় বাধা। যে দূর্বিষহ পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলাম তার সঙ্গে দ্বিমত করবেন বাংলাদেশে এমন মানুষের সংখ্যা আমার ধারনা খুব কমই পাওয়া যাবে। তাহলে মুক্তির উপায় কি? সেই মুক্তি প্রক্রিয়া আলোচনার আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা সেরে নেয়া দরকার। কারন জাতির মুক্তির সঙ্গেই তো আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে।
দীর্ঘদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা সেই পাকিস্তানী আমল থেকে গড়ে ওঠা গৌরবদীপ্ত শিক্ষায়তনের লড়াকু ঐতিহ্যের ইতিহাস আমাদের স্মরন করিয়ে দিয়েছে। মহান ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৬৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটেছিল যে গণ আন্দোলনে তারও নেতৃত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯০ সালে বেহায়া স্বৈরাচার এরশাদের পতনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল ঢাকসুর নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য। সর্বশেষ ২০০৭ সালে এক এগারোর ভারতীয় দালাল সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুনরাই সর্বপ্রথম প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ভারতের কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিসর্জনের কুশীলবদের একজন, ডিজিএফআই এর এক বড় কর্তা সেদিন এক সাংবাদিকের মোটর সাইকেলের পেছনে বসে আন্দোলনে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছিল। তৎকালিন সেই ডাকসাইটে সামরিক কর্মকর্তা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী জীবন যাপন করছেন। বর্তমান স্বৈরাচারেরও ক্ষমতায় দীর্ঘ ৯ বছর পার হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার গন আন্দোলনের মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যাপক এবং বেপরোয়া প্রয়োগের মাধ্যমে সরকার সামলে উঠেছে। ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর এই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনকে দিল্লি প্রত্যক্ষভাবে এবং পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ পরোক্ষভাবে সহায়তা জুগিয়েছে। বাংলাদেশে কথিত ইসলামী জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রনের জন্যে শেখ হাসিনা অপরিহার্য, এই ভ্রান্ত নীতি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কারনেই পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশে দিল্লির তাবেদার গোষ্ঠীকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়েছে। এবারের ছাত্র আন্দোলনেও জঙ্গী কার্ড ব্যবহার করার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারের নীতিনির্ধারক মহল চিহ্নিত দালাল মিডিয়াদের লেলিয়ে দিয়েছে। স্বত:স্ফূর্ত এবং ন্যায্য আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে এই সকল মিডিয়া সাধারন ছাত্রনেতাদের শিবির কর্মী বানানোর অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এই অপকর্মে এখন পর্যন্ত এরা সফল হতে পারেনি। আমার এই নিবন্ধটি লেখার সময় শেখ হাসিনা বিদেশে অবস্থান করছেন। ছাত্র আন্দোলন ব্যাপকভাবে দ্রুত জনসমর্থন লাভ করায় ভীত হয়ে শেখ হাসিনা সম্পূর্ন ভাবে কোটা বাতিলের অসাংবিধানিক ঘোষনা দিলেও দেশে ফিরে তার ভূমিকা কি হবে তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। কোটা বাতিল ঘোষনা পরবর্তী সময়ে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী আচরনকে স্বৈরাচারী সরকারের ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ বলেই আমি ধারনা করছি। তিনি এখানেই থেমে থাকবেন বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ছাত্রদের দাবী মেনে নেয়ার কথা বলে শেখ হাসিনা সময় ক্ষেপন করছেন মাত্র। পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে এলেই তার আসল চেহারা দেখা যাবে।
আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রবল সাহস যে দেখাতে পেরেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তাদের আন্দোলন প্রক্রিয়ার মধ্যে স্ববিরোধিতা রয়েছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর পিতার ছবি বুকে ধারন করা, আন্দোলনের মাঝপথেই স্বৈরাচারের আন্তর্জাতিক মেডেলপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ‘মাদার অব এডুকেশন’ উপাধি প্রদান- এ সকল কর্মকান্ড ইতিহাস সম্পর্কে অসচেতনতা, অনভিজ্ঞতা এবং স্ববিরোধিতার পরিচায় বহন করে। বিগত নয় বছর নব্য বাকশালের যে শাসনে বাংলাদেশের জনগন নিস্পেসিত হচ্ছে, মানবাধিকার প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে সেই শাসন ব্যবস্থা জন্ম নিয়েছিল ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর পিতার খাঁটি বাকশাল জামানায়। সেই আমলেও হাজার হাজার তরুন মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মম ভাবে গুম-খুন এবং বিচার বহির্ভূত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভিন্নমত দলন ছিল নিত্য দিনের ঘটনা। চারটি সরকারী প্রচারযন্ত্র রেখে দেশের সকল মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। রক্ষীবাহিনীর কর্মকান্ড কোন অংশে র‌্যাব এর চাইতে কম নিন্দনীয় ছিল না। এ সবই ইতিহাসের অংশ। ফ্যাসিবাদের পদলেহী মিডিয়ায় অব্যাহত প্রচারের কল্যানে আবেগতাড়িত তরুন-তরুনীদের হয়ত সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করা যায়, কিন্তু ইতিহাস তার জায়গায় অপরিবর্তনীয়ভাবে স্থির থাকে। আন্দোলনকারীদের জন্য অপর গুরুত্বপূর্ন বিষয় হলো প্রতিপক্ষের চরিত্র সঠিকভাবে অনুধাবন করা। তারা কোটা সংস্কারের দাবী জানাচ্ছেন এমন এক ব্যাক্তির কাছে যিনি জনগনের ভোটে নির্বাচিত নন। অতএব ক্ষমতাসীন মহলের জনগনের যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক কোন দাবী পুরনেরই দায় ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের নেই। এই জন্যেই একদিকে তারা ছাত্র-ছাত্রীদের দাবী মেনে নেয়ার অভিনয় করে, অন্যদিকে লাঠিয়াল পুলিশকে দিয়ে রাজপথ থেকে আন্দোলনের নেতাদের চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের অধিকাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেনি থেকে আসার কারনে ফ্যাসিস্ট সরকারের বেপরোয়া পুলিশ বাহিনী এখনও তাদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষন করে গনহত্যা চালায়নি। এরা দরিদ্র পরিবারের সন্তান হলে ৫ মে ২০১৩ সালের মধ্যরাতে পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি দ্বারা পরিচালিত হেফাজতের গনহত্যার পূনরাবৃত্তি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখতে পেতাম। ইসলামী জঙ্গী দমনের নামে মাদ্রাসার বালক-কিশোর-তরুনদের যত সহজে হত্যা করে পার পাওয়া যায়, তথাকথিত সেক্যুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই রকম হত্যাকান্ড চালানো সম্ভব নয়। যে পশ্চিমা সা¤্রাজ্যবাদ ইসলাম বিদ্বেষের কারনে হেফাজত নিধনকে বাহবা দেবে তারাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন উল্টো অবস্থান নেবে। শেখ হাসিনা এবং তার দিল্লির পরামর্শকরা এ বিষয়টি ভালই বোঝেন। তবে স্মরনে রাখতে হবে ফ্যাসিবাদী শাসকের ভিন্নমতের প্রতি বিদ্বেষে কিন্তু, কোন তারতম্য থাকে না। পরিস্থিতি অনুকূল হলে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী শুধু গুলি চালানো নয় প্রতিবাদী ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ট্যাংক চালিয়ে দিতেও কিছুমাত্র দ্বিধা করবে না। আন্দোলন চলাকালে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ‘খাইয়া ফালামু’ বক্তব্য রীতিমত ভাইরাল হয়ে গেছে। সেই ঘটনা নিয়ে নিন্দাবাদের ডামাডোলে আমরা ফ্যাসিবাদের মূল কেন্দ্র থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলেছি। এই নির্বোধ পুলিশ কর্মকর্তা উত্তেজনার বসে যে হুমকি দিয়েছেন সেটি তার কথা নয়। তিনি ‘মাদার অব ফ্যাসিজ্ম্’ এর মনের কথাটি নিজের ভাষায় প্রকাশ করেছেন মাত্র। ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন কিংবা চর্চা করেন এমন প্রত্যেকেরই জানার কথা যে ফ্যাসিজ্মের চরিত্রই হচ্ছে সকল প্রতিবাদ ও ভিন্নমতকে ‘খাইয়া ফালানো’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা কোটা সংস্কারের দাবীতে আন্দোলন করছেন। অর্থাৎ তাদের লক্ষ্য এখানে কেবল সরকারী চাকরী কারন বেসরকারী খাতের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সাধারনত: কোন কোটা থাকে না। অথচ আন্দোলনকারীদের বেসরকারী খাত নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করা উচিৎ ছিল। সম্ভবত: অনভিজ্ঞতার কারনে কর্মসংস্থানের প্রধান খাতটিই তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে এ সম্পর্কে খানিকটা আলোকপাত করা প্রয়োজন। বেসরকারী খাত দেশীয় এবং বিদেশেী বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। বিদেশী বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উচ্চ পদগুলোতে আদৌ কোন বাংলাদেশী নাগরিক চাকরী করেন কিনা এ নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আর করলেও তাদের সংখ্যা হাতে গোনা। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে দেশীয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও বিদেশী নাগরিকরা অধিক সংখ্যায় ঢুকে পড়ছেন। তাহলে আমাদের সন্তানরা কি কেবল সরকারী চাকরী করেই সন্তুষ্ট থাকবে? বেসরকারী খাতে চাকরী করবার যোগ্যতা কী তাদের নেই? বেসরকারী খাতের কর্মসংস্থান নিয়ে আরো একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন রয়েছে। যে সকল বিদেশী বাংলাদেশে বৈধ অথবা অবৈধভাবে চাকরী করছেন তারা কোন দেশের নাগরিক? প্রশাসনের সকল কর্তাব্যক্তি আমার এই প্রশ্নের উত্তর জানেন। কিন্তু, তথ্যটি স্পর্শকাতর হওয়ার কারনে তারা প্রকাশ্যে বলবেন না। বাংলাদেশে বৈধ এবং অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশীদের মধ্যে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বর্তমানে ভারতীয় নাগরিক। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ অবৈধভাবে কর্মরত হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে ভারতে বছরে কি পরিমান বৈদেশিক মূদ্রা চলে যাচ্ছে তার প্রকৃত তথ্য পাওয়া কঠিন। প্রতি বছর হুন্ডির মাধ্যমে কত টাকা ভারতে পাচার হচ্ছে সেই পরিসংখ্যানও বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কখনও প্রকাশ করেনি। হয় তারা তথ্য জানে না অথবা জানলেও দিল্লি এবং তাবেদার সরকারের চাপে প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষনা অনুযায়ী ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ৪.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভারতে প্রেরণ করা হয়েছে। ওই বছর ভারতে বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থের (Remittance) অর্থের পরিমানে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। বেসরকারী ব্যাংকে কর্মরত এক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা আমাকে সম্প্রতি জানিয়েছে যে, বিগত অর্থবছরে বাংলাদেশে নাকি ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মূদ্রা সরবরাহকারী দেশে উন্নীত হয়েছে। এদেশ থেকে ভারতে মুদ্রা প্রেরণের পরিমান ২০১২ সালের ৪.০৮ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা অনুমান করাও আমাদের সাধ্যাতীত। অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পূর্বে তৎকালিন পূর্ব বঙ্গ ভারতের সম্পদ বৃদ্ধির জন্যে পশ্চাদভূমির (Hinterland) যে ভূমিকা পালন করতো, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর শেষে দূর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই ভূমিকাতেই বাংলাদেশ ফেরত গেছে। সুতরাং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে ঢালাওভাবে বিদেশী নাগরিক নিয়োগ বন্ধেরও দাবী জানাতে হবে। যে সকল পদে বাংলাদেশী তরুন-তরুনীরা যোগ্য সেগুলোতে বিদেশী নাগরিক নিয়োগে বিধি নিষেধ জারি করার দাবী না তুললে এদেশের কর্পোরেট সেক্টর এক সময় সম্পূর্নভাবে ভারতীয়করন হয়ে যাবে। জেনারেল মইন এবং শেখ হাসিনার ১১ বছরের শাসনকালে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে প্রবল প্রতিবেশীর চারনভূমিতে পরিনত হয়েছে। দেরিতে হলেও আমাদের সন্তানেরা যেহেতু জেগেছে, তাই আমার এই প্রবীনত্বে দেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নতুন করে দেখছি। আমার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নতুন নতুন মামলা দেয়ার ফলে আমার সারা দেশ ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ হচ্ছে। আমি যেখানেই যাই, তরুনদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং বাংলাদেশী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবার আকাঙ্খা দেখতে পাই ওদের প্রত্যেকের চোখে।
গতকাল হবিগঞ্জ থেকে ফিরেছি। সেখানে কত তরুন বুকে-পিঠে অসংখ্য গুলির চিহ্ন নিয় বেঁচে আছে। একজনকে দেখলাম বা চোখটা গুলিতে নষ্ট হয়ে গেছে। রাবার বুলেটের অংশ বাসা বেধে আছে চোখের ভিতরের দিকে। অপর চোখের দৃষ্টিশক্তিও ক্রমেই কমে আসছে। শেখ হাসিনার বর্বর পুলিশ বাহিনী ভরা তারুন্যে ছেলেটির জীবনে অন্ধকার নিয়ে এসেছে। এমন ঘটনা একটি, দুটি নয়। সারা দেশে হাজার হাজার তরুনকে ফ্যাসিবাদ এভাবেই পঙ্গু করে দিয়েছে। চোখে পানি নিয়ে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে, এত অত্যাচারও আমাদের সন্তানদের মনোবল ভাঙতে পারেনি। তারা সবাই এখনই লড়াই এর ময়দানে ফিরতে প্রস্তুত। কার্যকর ডাকের জন্যে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতাকামী তরুন। যুগপৎ বিষাদ এবং আশা নিয়েই লেখার দ্বিতীয় কিস্তি শেষ করলাম। লেখাটির সমাপ্তি টানবো তৃতীয় কিস্তিতে। এবার পাঠকের অপেক্ষা দীর্ঘ হবে না ইনশাআল্লাহ।
সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ।

সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

মালয়েশিয়ায় ফিলিস্তিনি বিজ্ঞানী ও স্কলারকে গুলি করে হত্যা করলো মোসাদ !

ফিলিস্তিনি স্কলারস ও হামাস সদস্য ফাদি আল বাতসকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার তার বাসার কাছেই অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।
ফাদি আল বাতসের পিতা অভিযোগ করেছেন যে, তার ছেলের হত্যার পেছনে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার (মোসাদ) হাত রয়েছে।
মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমেদ জায়েদ হামিদি বলেছেন, আমাদের বিশ্বাস বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে হত্যাকারীদের যোগাযোগ রয়েছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান দাতুক সিরি মানসুর বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের ২০ মিনিট আগ থেকেই দুইজন হামলাকারী তার বাসার সামনে অপেক্ষা করছিল। তারা তার ওপর ১০ টি গুলি চালায়। ৪টি গুলিতে তিনি মারা যান।
পুলিশ বলেছে, ফাদি আল বাতসের শরীর ও মাথায় গুলি লাগে। তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।
হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম আল জাজিরাকে বলেছেন, ফাদি আল বাতস এই আন্দোলনের সদস্য ছিলেন।
এক টুইট বার্তায় হামাস ফাদি আল বাতসকে তরুণ স্কলার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাকে ‘শহীদ’ হিসেবে উল্লেক করা হয়েছে তিনি একজন তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্ম সেক্টরে অনেকে অবদান রেখেছেন।
মালয়েশিয়াস্থ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত আনোয়ার আল আঘা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বলেছেন, ফাদি আল বাতস ওই মসজিদের দ্বিতীয় ইমাম ছিলেন। তিনি ১০ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় বসবাস করছিলেন। একটি সম্মেলনে যোগ দিতে শনিবার ফাদির তুরস্কে যাওয়ার কথা ছিল বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।
নিহত ফাদির স্ত্রী ও ৩ সন্তান রয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা

বিএনপি নেতা আলহাজ্ব আবদুল আজিজের পিতার ইন্তেকালে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের শোক প্রকাশ

বাংলাদেশ বার্তাঃচট্রগ্রাম মহানগর বি,এন,পি সহ আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ও পূর্বষোল শহর ওয়র্ড যুব দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব আবদুল আজিজ এর পিতা ইন্তেকাল করিয়াছেন ।
বিএনপি নেতা আলহাজ্ব আবদুল আজিজের পিতার ইন্তেকালে পূর্বষোল শহর ওয়র্ড জামায়াতের সভাপতি  মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন, চান্দগাঁও থানা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক আবু জাওয়াত শোক প্রকাশ করে এক যুক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন েএবং মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা কামনা করেছেন।

মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮

হতভাগ্য ছেলেটি আমার ছাত্র ছিল চলে গেল রাজিব


Bangladesh Barta:তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারিয়েছিলেন তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন।

এর পর ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন একুশ বছরের এই এতিম।

কখনও খালার বাসায় থেকে, কখনও টিউশনি করে ও কাজ করে নিজে পড়াশোনা করেছেন এবং দুই ভাইকে পবিত্র কোরআনের হাফেজ বানিয়েছেন।

রাজীবের স্বপ্ন ছিল- বিসিএস দিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিয়ে নামকরা শিক্ষক হবেন। ছোট দুই ভাইকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করবেন। থাকবেন তিন ভাই মিলে। অন্যান্য আত্মীয়স্বজন- যাদের জীবন অন্ধকারের মুখে, আলোকিত করবেন তাদেরও।

কিন্তু সেই স্বপ্নদ্রষ্টা রাজীবই রাজধানীতে দুই বাসচালকের নিষ্ঠুর খেয়ালখুশির শিকার হয়ে প্রথমে হাত  হারিয়েছেন। এরপর ১৪ দিন জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোমবার রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

রাজীব হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে।

গত ৩ এপ্রিল বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন তিনি। ওই সময় তার হাতটি সামান্য বাইরে বেরিয়ে ছিল। হঠাৎই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার বা ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে।

দুই বাসের প্রচণ্ড চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দু-তিনজন পথচারী দ্রুত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন সেই হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি।

শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সাময়িক উন্নতির পর গত সোমবার থেকে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়। সেই থেকে আর জ্ঞান ফিরেনি তার।

মৃত্যুর আগে অজ্ঞান অবস্থায় রাজীবকে রাখা হয়েছিল ঢামেকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র-আইসিইউতে। ভাইয়ের জ্ঞান ফেরার আগে আইসিইউর সামনে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে দেখা গেছে রাজীবের ছোট দুই ভাই হাফেজ মেহেদি হাসান (১২) ও হাফেজ আবদুল্লাহকে (১১)।

সেখানে তারা থেমে থেমে দুই হাত তুলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করেছিলেন যেন তাদের ভাই বেঁচে ফেরেন। প্রায় প্রতিদিনই তারা স্বজনদের কাছে জানতে চেয়েছে- ‘ভাই ভালো হবে তো?’ কিন্তু এতিম মেহেদি ও আবদুল্লাহকে রেখে চলে গেলেন রাজীব।

আইসিইউর সামনে কথা হয়েছিল রাজীবের ছোট ভাই হাফেজ মেহেদি হাসানের সঙ্গে। সে বলছিল, মা-বাবা মারা যাওয়ার সময় সে ও তার ছোট ভাই আবদুল্লাহ খুব ছোট ছিল। মা-বাবা বলতে তারা বড় ভাই রাজীবকেই বুঝত।

মেহেদি জানিয়েছিল, দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর বড় ভাই রাজীবের জন্য দুই ভাই মিলে কোরআন পড়েছে। মসজিদে দোয়া পড়িয়েছে। ওই সময় ভাইয়ের কিছু হলে আমরা বাঁচব না- বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে ভাইয়ের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছিল এ কিশোর হাফেজ।

রাজীবের খালা জাহানারা বেগম জানান, রাজীব তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় মা ও অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারায়। এর পর মতিঝিলে খালার বাসায় থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে তিতুমীর কলেজে ভর্তি হয়। পরে সে যাত্রাবাড়ীতে মেসে ওঠে। ছোট দুই ভাই মেহেদি ও আবদুল্লাহ সেখানকার তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় সপ্তম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। সে টিউশনি করে নিজের খরচ এবং একটি কম্পিউটারের দোকানে কাজ করে ছোট ভাইদের খরচ জোগাত। খুব মেধাবী ছাত্র সে। স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে নামকরা শিক্ষক হবে।

সোমবার রাতে ঢামেকের চিকিৎসকরা স্বজনদের রাজীবের মৃত্যুর কথা জানান। আজ সকালে রাজীবের লাশ গ্রামের বাড়ি বাউফল নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে শৈশবে হারানো বাবা-মায়ের কবরের পাশেই শায়িত হবেন সংগ্রামী তরুণ রাজীব।

(((লেখকঃ আবদুস সামাদ আজাদ,ইংরেজী বিভাগ অধ্যাপক ঃতামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা )))) 

রবিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮

শবে মেরাজের প্রকৃত শিক্ষা


বাংলাদেশ বার্তাঃ রাসূল সা: মেরাজ থেকে ফিরে আসার পর সূরা বনি ইসরাইলের মাধ্যমে ১৪টি দফা জনগণের সামনে পেশ করেনঃ
১. আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক কোরো না, তাহলে তুমি নিন্দিত ও অসহায় হয়ে পড়বে। আর তোমরা কেবল আল্লাহরই বন্দেগি করো (সূরা বনি ইসরাইল-২২)।
২. বাবা-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। তাদের একজন বা উভয়ে বৃদ্ধ অবস্থায় যদি তোমাদের সামনে উপনীত হয় তাহলে তাদের সাথে উহ্ শব্দটি পর্যন্ত কোরো না। তাদের ধমকের সুরে জবাব দিয়ো না; বরং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলো। আর তাদের সামনে বিনয়ী থেকো আর দোয়া করতে থাকো- ‘হে আমার প্রতিপালক, তাদেরকে তেমনিভাবে লালন-পালন করো, যেমনি তারা শৈশবে আমাদের লালন-পালন করেছেন’ (সূরা বনি ইসরাইল ২৩-২৪)।
৩. তোমাদের কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের মনের খবর জানেন (সূরা বনি ইসরাইল-২৫)।
৪. আত্মীয়স্বজনকে তাদের অধিকার দাও আর মুসাফিরদের হক আদায় কর (সূরা বনি ইসরাইল-২৬)।
৫. অপব্যয় কোরো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই, আর শয়তান স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ (সূরা বনিইসরাইল-২৭)।
৬. হকদারদের হক আদায়ে তুমি যদি অপারগ (অসমর্থ) হও তাহলে তাদের সাথে অত্যন্ত নম্রভাবে কথা বলো (সূরা বনি ইসরাইল-২৮)।
৭. ব্যয়ের ক্ষেত্রে বেহিসাবি হয়ো না, আবার কৃপণতাও প্রদর্শন কর না। আল্লাহ যাকে চান রিজিক বাড়িয়ে দেন, যাকে চান কমিয়ে দেন (সূরা বনি ইসরাইল : ২৯-৩০)।
৮. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা কোরো না। নিশ্চয়ই এটি মহাপাপ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩১)।
৯. জেনা-ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চই এটি নিকৃষ্ট ও গর্হিত কাজ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩২)।
১০. কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা কোরো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে তার উত্তরাধিকারীকে আমি এই অধিকার দিয়েছি (চাইলে রক্তের বিনিময় চাইতে পারে), তবে প্রতিশোধের ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৩)।
১১. এতিমের সম্পদের ধারেকাছেও যেও না। সম্পদের ব্যাপারে তার বয়োপ্রাপ্তি পর্যন্ত অপেক্ষা করো আর প্রতিশ্রতি সম্পর্কে সচেতন থাক। নিশ্চয়ই প্রতিশ্রতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৪)।
১২. ওজনে কখনো কম দিয়ো না। দাঁড়িপাল্লা সোজা করে ধরবে-এটিই উত্তম পন্থা (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৫)।
১৩. যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সেগুলোর পেছনে লেগো না। নিশ্চয়ই চোখ, কান, অন্তর সব কিছুই জিজ্ঞাসিত হবে (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৬)।
১৪. জমিনে দম্ভসহকারে চলো না। এগুলো সবই মন্দ ও ঘৃণিত কাজ (সূরা বনি ইসরাইল : ৩৭-৩৮)।
এই ১৪ দফাই শবে-মেরাজের প্রকৃত শিক্ষা।
# সংগৃহীত