ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০২০

সকল প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে: মিয়া গোলাম পরওয়ার

Bangladesh Barta Desk: করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তৃতির মধ্যে ৩০ মে থেকে স্কুল-কলেজ ব্যতীত সকল প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশে করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ লাভ করছে। যতই টেষ্ট করা হচ্ছে ততই রোগী শনাক্ত হচ্ছে। প্রতিদিনই মৃত্যুবরণ করছে মানুষ। করোনা ভাইরাসের এ জটিল পরিস্থিতিতে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে যে ৩১ মে থেকে সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ সকল অফিস খুলে দেয়া হবে। জন প্রশাসন মন্ত্রী বলেছেন, হাটবাজার, দোকানপাট আগের মতোই চালু থাকবে। সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। ব্যাংকগুলোর শাখা খোলা থাকবে।
তিনি বলেন, সরকারের এ ঘোষণায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি করোনা ভাইরাসের ব্যাপক বিস্তৃতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে সরকারের এ সিদ্ধান্ত ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।
তিনি আরো বলেন, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে লকডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি উত্তরণের পরই কেবল অফিস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। এর পূর্বে কোনো অবস্থাতেই অফিস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলা সমীচীন হবে না।
জনগণের জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহবান জানান।

বুধবার, ২৭ মে, ২০২০

জনাব মোঃ জাফর সাদেকের সুস্থতা কামনা করে দোয়ার আহবান


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জনাব মোঃ জাফর সাদেকের সুস্থতা কামনা করে দোয়ার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ২৬ মে এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখার আমির মোঃ জাফর সাদেক গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। দেশব্যাপী অসংখ্য মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বড়ছে। প্রতিদিনই মানুষ মৃত্যুবরণ করছে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মোঃ জাফর সাদেকসহ দেশব্যাপী করোনয় আক্রান্ত সকলের সুস্থতা কামনা করে আল্লাহ তায়ালার নিকট কায়মনোবাক্যে, বিগলিত চিত্তে দোয়া করার জন্য আমি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সকল সহকর্মী এবং দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
সেই সাথে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা ইতোমধ্যে ইন্তিকাল করেছেন তাদেরকে শহীদি মর্যাদা দেয়ার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দোয়া করছি।

মঙ্গলবার, ২৬ মে, ২০২০

আমাদের ঈদ আজ কারাগারের চার দেয়ালের মাঝে বন্দী।

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আমার হৃদস্পন্দন, আমার ভাললাগা-ভালবাসা, আমার পরম শ্রদ্ধেয় পিতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী হাফিজাহুল্লাহ'র সাথে সাক্ষাত করতে পারছিনা আজ ২ মাস ১৬ দিন। শেষবার যখন আব্বার সাথে সাক্ষাতে গিয়েছিলাম সেবারও আমাদেরকে দেখা করতে দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ, গেট থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল আমাদেরকে।
জানিনা বর্তমানে করোনার এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আমার ৮১ বছর বয়স্ক অসুস্থ আব্বা কেমন আছেন আর কীভাবেই বা আছেন? কোন রকমের কোন যোগাযোগই করতে পারছিনা।
গতকাল কারা ফটকের টিএন্ডটি নম্বরে ফোন দিয়েছিলাম ঈদ উপলক্ষে পরিবারের ২/১ জনকে সাক্ষাতের অনুমতি দেবে কিনা তা জানার জন্য। ফোন রিসিভকারী ব্যাক্তি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে কঠিন ভাষায় জানিয়ে দিলেন, 'সাক্ষাত হবেনা।' আমি বললাম, 'পত্রিকায় দেখতে পেলাম সরকার কারা বন্দীদেরকে ২/৪ মিনিট তার স্বজনদের সাথে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে। সাক্ষাত যদি নাও হয় তবে অন্ততঃ আমাদেরকে ২/৪ মিনিট মোবাইলে কথা বলার সুযোগ করে দিন।' ওপাশ থেকে উত্তর এলো, 'এ সুযোগ সাধারণ হাজতী বা কয়েদীদের জন্য, দাঙ্গাবাজ কোনো আসামীর জন্য নয়।'
কান থেকে ফোন সরিয়ে নিলাম। নতুন করে জানলাম, কোরআনের পাখি আল্লামা সাঈদী সরকারের দৃষ্টিতে শুধু যুদ্ধপরাধীই (!) নন, ভয়ংকর দাঙ্গাবাজও (!) বটে। চোখের পানি মুছলাম। আকাশ পানে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে আমার যা বলার তা বলে দিয়েছি।
আমার মনে পড়ছে আজ থেকে ১০ বছর আগের কথা। ২০১০ সালের ২৯ জুন আমাদের শহীদবাগের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আমার আব্বা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের হাস্যকর এক মামলায় গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সেই থেকে কেটে গেছে ১০টি বছর। একে একে হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে ২০টি ঈদ।
যে মানুষটি বিগত ৫০টি বছর ধরে বিশ্বব্যাপি বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তে, প্রতিটি জনপদের মানুষকে কোরআনের দাওয়াত দিয়েছেন, মানুষকে কোরআনের পথে আহবান করেছেন সেই তিনিই নাকি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছেন !!
ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাতের মামলায় গ্রেফতারের পরপরই কথিত যুদ্ধাপরাধসহ আওয়ামী সরকার তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বাস্তবায়নের জন্য আমার আব্বার বিরুদ্ধে -
•• রমনা থানায় গাড়ি ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানো ও পুলিশের কাজে বাঁধা দেয়ার কথিত অভিযোগে (!) ২টি মামলা দায়ের করে। এই মামলায় আবার জিজ্ঞাসাবাদের নামে আব্বাকে ডিবি অফিসে ৩ দিন রিমান্ডেও নিয়েছিল।
•• রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে (!) উত্তরা মডেল থানায় ১টি মামলা দায়ের করে। এই মামলাতেও জিজ্ঞাসাবাদের নামে আব্বাকে রমনা থানায় ৩ দিন রিমান্ডে নিয়েছিল।
•• পল্টন মডেল থানায় গাড়ি ভাংচুর, গাড়ি পোড়ানো, পুলিশের কাজে বাঁধা ও রাষ্ট্রপতির (তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান) গাড়ি বহরে হামলার হাস্যকর অভিযোগে (!) ৩টি মামলা দায়ের করে। হাস্যকর এইসব মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমার আব্বাকে ডিবি অফিসে প্রতিটি মামলায় ৩ দিন করে মোট ৯ দিন রিমান্ডে নিয়েছিল।
•• শেরেবাংলা নগর থানায় যাকাতের ৫ লক্ষ টাকা আত্নসাতের অভিযোগে (!) ১টি মামলা
•• কদমতলী থানায় পেট্রোল বোমা ও ককটেল বানানোর হাস্যকর অভিযোগে (!) ১টি মামলা দায়ের করে। এবং এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে আব্বাকে রমনা থানায় ৩ দিন রিমান্ডে নিয়েছিল।
•• রাজশাহীর মতিহার থানায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যার কথিত অভিযোগে (!) ১টি হত্যা মামলা
•• জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকার আয়কর ফাঁকির হাস্যকর অভিযোগে (!) ১টি মামলা এবং
•• পিরোজপুরে অর্থের প্রলোভন ও ভীতিপ্রদর্শন করে ২টি কল্পিত যুদ্ধাপরাধের মামলা
•• পিরোজপুরের নাজিরপুরে আওয়ামীলীগের অফিসে রক্ষিত প্রধানমন্ত্রী ও তার পিতার ছবি ভাংচুরের (!!) অভিযোগসহ মোট ১৩টি মামলা দায়ের করে আওয়ামী সরকার।
এইসব কল্পিত অভিযোগ আর মিথ্যা মামলায় আমার পরম শ্রদ্ধেয় আব্বাকে টানা ৪১ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। এছাড়া সরকারের সেফ হোমেও তাকে একদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। এভাবে টানা রিমান্ডে নিয়ে আমার আব্বার উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আল্লামা সাঈদীর মতো একজন কোরআনের দা'ঈ ও সিনিয়র রাজনীতিবিদকে এতোদিন রিমান্ডে নেয়ার বিষয়টি বিশ্ব রাজনীতিতে বিরল এক ঘটনা।
এখন থেকে ১০ বছর আগে গ্রেফতার হওয়ার সময় আমার আব্বার বয়স ছিল ৭১। এই ৭১ বছরের মধ্যে আমার আব্বার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন থানায় কোন মামলা তো বহুদূরের কথা সামান্য একটি জিডিও তার বিরুদ্ধে কোন বিষয়েই ছিলনা।
কিন্তু কি আশ্চর্যের বিষয়, জন্মের পর থেকে নিয়ে জীবনের ৭১টি বছরের মধ্যে যার বিরুদ্ধে কোনো অপরাধেই একটি মামলাও ছিলোনা, সেই তারই বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই আবিস্কার করলো হাজারো অভিযোগ আর দায়ের করলো এক এক করে মোট ১৩টি মামলা !!
আওয়ামী সরকারের রোষানলে কারান্তরীণ অবস্থায়ই আমার আব্বা হারিয়েছেন তার মমতাময়ী প্রিয় মা গুলনাহার ইউসুফ সাঈদী, ছোট ভাই হুমায়ুন কবির সাঈদী এবং কলিজার টুকরা বড় সন্তান রাফীক বিন সাঈদীকে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে একই মাঠে সন্তান হয়ে মায়ের এবং পিতা হয়ে পুত্রের নামাজের জানাজা পড়ানোর মতো দুঃসহ যন্ত্রনা সইতে হয়েছে আমার আব্বাকে। শুধু তাই নয়, মা কিংবা সন্তানের লাশের পাশে এমনকি স্বজনদের সাথেও ব্যাথা ভোলার জন্য সামান্য কিছু সময়ও তাকে কাটাতে দেয়া হয়নি। জানাজা শেষেই মাঠ থেকে আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কারাগারে। আর ছোট ভাই হুমায়ুন কবির সাঈদীর নামাজে জানাজায় তো অংশগ্রহণই করতে দেয়নি আওয়ামী সরকার!!
আমি প্রায়ই একাকী বসে ভাবি ..
আহ্! কী অব্যক্ত বেদনাময় সময়-ই না কাটিয়েছেন আমার আব্বা তখন !!
আমার প্রানপ্রিয় আব্বার বয়স এখন ৮১ চলছে। নানারকম শারিরীক অসুস্থতা নিয়ে কারাগারে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন তিনি। চিকিৎসার অভাবে হাঁটু ও কোমড়ের ব্যথার তীব্রতা প্রতিদিন বাড়ছেই। ৩৯ বছরের ডায়াবেটিক আর হার্টের সমস্যা তো তার নিত্যদিনের সঙ্গী। শারিরীক অসুস্থতার কারনে আব্বা কারো সহযোগিতা ছাড়া একাকী হাটাচলা করতে পারেন না। দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন না। এমনকি শোয়া অবস্থা থেকে বিছানা থেকে উঠতে গেলেও কারো না কারো সহযোগিতা নিয়ে উঠতে হয়।
এমন একটি অবস্থায় আব্বার শারিরীক অবস্থা নিয়ে আমরা সবসময়ই দুঃশ্চিন্তায় থাকি। এর মধ্যে এখন আবার নতুন করে যোগ হয়েছে করোনা নিয়ে উদ্বেগ। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের লক্ষ কোটি মানুষ অসুস্থতা, বয়স ও মানবিক বিবেচনায় সরকারের নিকট আল্লামা সাঈদীর মুক্তি দাবি করে যাচ্ছে কিন্তু 'মানবতার ঠিকাদার' এই সরকার কোটি মানুষের এই মানবিক দাবিটি পূরণে আন্তরিক তো নয়ই, উল্টো গত আড়াই মাস ধরে আব্বার সাথে আমাদের সাক্ষাত বন্ধ করে রেখেছে।
আব্বাকে কারাগারে রেখে এটি আমাদের ২১তম ঈদ। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় আব্বা কারাগারে থাকা অবস্থাতেই আমরা হারালাম কলিজার টুকরা বড় ভাইকে, হারালাম ছোট চাচাকে, তেমনি হারিয়েছি প্রিয় দাদীকেও।
আমাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ বলতে এখন আর কিছুই নেই। আমাদের ঈদ আজ কারাগারের চার দেয়ালের মাঝে বন্দি।আমাদের ঈদ আনন্দ এখন আমরা খুঁজে বেড়াই অতীত স্মৃতির মাঝে। চারপাশের মানুষের ঈদের আনন্দ দেখে আজকাল মাঝে মধ্যে বড় ঈর্ষা হয় আমার। আহারে! এই ঈদ আনন্দ এক সময় আমাদেরো তো ছিল ! সরকার আমাদের এই আনন্দটুকুনও কেড়ে নিয়েছে।
Masood Sayedee - মাসুদ সাঈদী

সোমবার, ২৫ মে, ২০২০

চান্দগাঁও জামায়াতের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ঈদুল-ফিতর উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁওবাসী সহ সবার প্রতি ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরী মজলিসে শুরা সদস্য ও চান্দগাঁও থানা আমীর  ও সেক্রেটারি ।
এক যৌথবার্তায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে খুশীর সওগাত নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের দ্বারে সমাগত। ঈদুল ফিতর হলো মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার সমাপনী অনুষ্ঠান। এ পবিত্র রমযান মাসেই আল্লাহ মানবজাতির হেদায়াতের জন্য পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। রমযানের দাবি হলো কুরআনের আলোকে একটি তাকওয়া ভিত্তিক ইসলামী সমাজ কায়েম করা। রাসূল (সাঃ) এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার আদলে একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেই মানুষ সেখানে সত্যিকার অর্থে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে সক্ষম হবে। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা ও ঈদুল ফিতর আমাদেরকে সমাজে ন্যায় ও ইনসাফ কায়েম করতে উদ্বুদ্ধ করে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতি ভাইরাস কোভিড-১৯ বা করোনার ভয়াবহ সংক্রমণে মানুষ যখন দিশেহারা ঠিক সেই মুহূর্তে পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের দ্বারে সমাগত। এমতাবস্থায় আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সর্বস্তরের জনশক্তিসহ সবার প্রতি ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ঈদ মোবারক।
শুভেচ্ছা বার্তায় নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ঈদ মুসলমানদের জীবনে নিয়ে আসে অনাবিল আনন্দ। আমাদের জাতীয় জীবনেও ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব অপরিসীম। ঈদের উৎসবে মুসলিম উম্মাহ শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত বিশ্ব গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করে। ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে দেশের দুঃস্থ, দরিদ্র ও সঙ্গতিহীন মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ব ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সমাজের বিত্তবান মানুষরা ঈদের আনন্দকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেবেন বলেও নেতৃবৃন্দ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেইসাথে ঈদের সালাত আদায় ও ঈদ উদযাপনে স্বাস্থ্য বিধি ও সামাজিক দূরত্ব নির্দেশিকা মেনে চলার জন্য সকলকে আহবান জানান।

দুঃস্থদের সাথে আমীরে জামায়াতের ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা মহানগরী উত্তরের মিরপুর ও শেরে বাংলা নগরে শনিবার পৃথক দুই অনুষ্ঠানে দুঃস্থদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এসময় তিনি তাদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেন।
উভয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন বিএনপি'র মহানগরী উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মিরপুর থানা সভাপতি আব্দুল আলী আব্দুল এবং যুবদল নেতা নুরুল ইসলাম নুরু।
আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামী মিরপুর পূর্ব থানা আমীর শাহ আলম তুহিন, থানা শুরা সদস্য মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, টিপু সুলতান এবং শেরে বাংলা নগর উত্তর থানা আমীর আব্দুল আউয়াল আজম, থানা শুরা সদস্য আজিজুর রহমান তরুন, অ্যাডভোকেট আব্দুল হালিম প্রমুখ।
করোনা পরিস্থিতির নাজুকতার মধ্যে আয়-রোজগার না থাকায় যারা কষ্টে আছেন তাদের প্রতি আমীরে জামায়াত সহমর্মিতা জানান। তিনি বলেন, ক্ষুধার জালা বড়ই কষ্টের। তারপরও এ অবস্থাতে আমরা যদি নৈতিক থাকতে পারি কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ নিশ্চয় এর উত্তম প্রতিদান দেবেন।
আমীরে জামায়াত স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, হাদীসে এসেছে জান্নাতে ধনীদের তুলনায় গরীবদের সংখ্যা হবে বেশি। তাই ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা চালাতে হবে, কিন্তু ধৈর্য হারিয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে জান্নাত হারানো যাবে না।
তিনি বলেন, গরীবের চেয়ে ধনীদের দায়িত্ব ও জবাবদিহিতা বেশি। তাদেরকে যাকাত, উশর ও ফেতরা আদায় করতে হয়; সদকা দিতে হয়। এসব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করলে কেয়ামতের দিন কঠিন আযাবের সম্মুখীন হওয়া লাগবে।
আমীরে জামায়াত বলেন, করোনা পরিস্থিতি ধনী গরীব সবার জন্য পরীক্ষা। আলহামদুলিল্লাহ ধনী-গরীব উভয় মহলেই ধৈর্যশীল ভাইবোনদের দেখা পেয়েছি। সীমিত সামর্থের মধ্যেও অনেকে আন্তরিকভাবে এই সংকটকালীন মুহুর্তে এগিয়ে এসেছেন। সহসা এ পরিস্থিতি উত্তরণের সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় সহযোগিতার মনোভাব আমাদেরকে অব্যাহত রাখতে হবে।
করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ক্ষমতাসীন সরকারের বলে মন্তব্য করেন তিনি। দৃঢ়তার সাথে বলেন, সংকটকালীন সময়ে প্রত্যেকের তৎপরতার একদিন মূল্যায়ন হবে ইনশাআল্লাহ।
আজকের আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরসহ সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী মানবিক সাহায্য তৎপরতা চালিয়ে আসছে। মাবুদের কাছে আরজ করি তিনি যেনো এ ধরণের কাজে জামায়াতে ইসলামীকে আরো বেশি সম্পৃক্ত হওয়ার তৌফিক দেন।

শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০

সুষ্ঠু ত্রাণ বিতরণে বাঁশখালীর আলহাজ্ব সিরাজুল হক ফাউন্ডেশনের দৃষ্টান্ত: নইম কাদের

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত গোটা পৃথিবী। প্রায় দু মাস হতে চলল বাংলাদেশে লকডাউন চলছে। এমতাবস্থায় দেশের খেটেখাওয়া দরিদ্র শ্রেণির মানুষ যারপর নাই আর্থিক সংকটে পড়ে গেছেন।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানাভাবে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু সুষ্ঠু ত্রাণ বিতরণ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি ত্রাণ আত্মসাত করায় এবং ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় বহু জনপ্রতিনিধি বরখাস্ত হয়েছেন।
এ কঠিন পরিস্থিতে এলাকা ভিত্তিক একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে ত্রাণ কার্যক্রমে এগিয়ে এসেছে
আলহাজ্ব সিরাজুল হক ফাউন্ডশন। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জনাব হাসান নুর চৌধুরী সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে মাঠ পর্যায়ে যাচাই বাচাই এর মাধ্যমে অতি গোপনে দরিদ্র ও অতি দরিদ্র দুটি তালিকা প্রণয়ণ করেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল প্রকৃত অভাবী মানুষের নাম যেন তালিকায় স্থান পায় এবং ত্রাণ গ্রহণকারীদের যেন ত্রাণের জন্য ধরনা দিতে না হয়।
এরপর তিনি কোন মাধ্যম না রেখে নিজে তদারকি করে প্রথম পর্যায়ে তালিকাভূক্ত ৫৫০টি পরিবারে চাউল, ডাল, তেল, আলুসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ইফ্তার সামগ্রীর প্যাকেট ঘরে ঘরে পৌঁছে দেন। একইভাবে দ্বীতিয় পর্যায়ে ঘরে ঘরে প্যাকেট পৌঁছে দেন ৬৫০টি পরিবারে।
প্রতিটি প্যাকেটে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিবারের জন্য প্রায় ১৫ দিনের খাদ্য সামগ্রী ছিল।
হাসান নুর চৌধুরী মূলত একজন প্রবাসী। পাশাপাশি তিনি চট্টগ্রামের হাসনাইন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস এর চেয়ারম্যান।
দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অনেক কষ্টার্জিত অর্থ নিয়ে তিনি তাঁর মরহুম পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডশনের মাধ্যমে এলাকার অভাবী দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

জনাব হাসান নুর চৌধুরীর বৃদ্ধা মা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভোগছেন। তিনি নিজেও অসুস্থ। আল্লাহরপাক যেন তাঁদেরকে সুস্থতার সাথে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করেন এবং মরহুম সিরাজুল হক সাহেবকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। আমিন।

সোমবার, ১৮ মে, ২০২০

বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মূখ উজ্জ্বল করা এক ব্যক্তি হলেন ড. মুহাম্মদ আবদুল বারী।।


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সারা বিশ্বে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছেন এম বি ই খেতাবপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী। সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদানের জন্য তাঁকে মেম্বার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার(এমবিই) খেতাব দেয়া হয়। গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ খ্যাত অলিম্পিকের ২০১২ আসরের আয়োজক লন্ডনের বোর্ড মেম্বারের ১৯ জনের তালিকায় ছিলেন এই বাংলাদেশী। বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গৌরবময় এখবরটি লন্ডন অলিম্পিক ২০১২- এর ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছিলো।
অলিম্পিকে প্রথম মুসলিম হিসেবে এ বিরল সম্মান অর্জন করেন ড. অাব্দুল বারী। তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন।
লন্ডনে যাবার আগে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। পদার্থ বিদ্যায় পিএইচডি করার জন্য তিনি ইংল্যান্ডে যান। উচ্চশিক্ষা সমাপনান্তে তিনি সেখানে শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন।
বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী, লেখক ও প্যারেন্টিং কনসালটেন্ট ড. বারী লন্ডনের প্রথম মসজিদ ‘ইস্ট লন্ডন মসজিদ’ এবং লন্ডন মুসলিম সেন্টারের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তিনি ২০০৬ -২০১০ সাল পর্যন্ত মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ব্রিটিশ মুসলিম কাউন্সিলের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। ড. বারী যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা মুসলিম এইডের কার্যকরী কমিটির সেক্রেটারি। সামাজিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদানের জন্য তাকে মেম্বার অব ব্রিটিশ এম্পায়ার(এমবিই) খেতাব দেয়া হয়।
তাঁর গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলা সদরে। ইউরোপের বৃহৎ মসজিদ ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টার প্রতিষ্ঠায় ড. বারীর নিরলস অবদান অনেক। তারই সুযোগ্য নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপের মুসলিমের প্রাণকেন্দ্র লন্ডন মুসলিম সেন্টার। এখন তারই নেতৃত্বে অচিরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে লন্ডনের মুসলিম মহিলাদের মালটিপারপাস সেন্টার "দি মরিয়ম সেন্টার"।
ড. আব্দুল বারী ইউকের প্রখ্যাত প্যারেনটিং বিশেষজ্ঞ ও স্বনামধন্য প্রশিক্ষক। তাঁর ইউকের মূলধারা পাবলিশিং মিডিয়ার সুলেখক হিসেবে সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর ইংরেজিতে লেখা ৪টি বই এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। ড. আব্দুল বারী ইউরোপের একজন সফল দাওয়া সংগঠক ও লেকচারার।বৃটেনে মালটিকালচারাল সোসাইটি ও মুসলিম সোসাইটির উন্নয়নে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

আধুনিক নগর রাস্ট্র সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা বিনতে ইয়াকুব।

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ পেশায় পাহারাদার মোহাম্মদ ইয়াকুবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট হালিমা জন্ম নেন ১৯৫৪ সালে। তার বয়স যখন ৮ বছর তখন পিতা দুনিয়া ত্যাগ করেন।
মা সংসার চালাতে হোটেলে ঝিয়ের কাজ নেন। স্কুলের ফাকে হালিমা মায়ের সাথে হোটেলে প্লেট গ্লাস ধোয়ার এবং ফরমায়েশ শোনার কাজ করতে থাকেন। কিন্তু লেখাপড়া থামাতে পারেনি তাকে তাদের এই দরিদ্রতা। আইন পড়া শেষের মাধ্যমে ক্ষুধার সাথে যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন হালিমা।
আইন পেশা হতে ২০০১ সালে সিঙ্গাপুর পিপলস এ্যাকশন পার্টির কর্মী হিসাবে যোগদান করে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন তিনি। পরপর চারটি নির্বাচনে জয়লাভ করে নিজের অবস্থান জানান দেন সবাইকে খুব ভালভাবে।
হালিমা ইয়াকুব ২০১১ সালে সামাজিক উন্নয়ন ও যুব ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে প্রথম নারী স্পীকার মনোনিত হয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় চলে আসেন সিঙ্গাপুরের এই মুসলিম মহীয়সী নারী।
সংসদে স্পীকার হয়েই শেষ হোল না তার উত্থান। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য স্পীকারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন আর প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হয়ে বিশ্বের সর্বাধুনিক নগর রাস্ট্র সিঙ্গাপুরের প্রথম মুসলিম নারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ গ্রহন করেন হালিমা বিনতে ইয়াকুব।
বর্তমান সিঙ্গাপুরের এই প্রেসিডেন্ট এক বক্তৃতায় বলেছিলেন-
"জীবনের মারাত্মক খারাপ সময়গুলোতে অনেকবার আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কিন্তু যখন ভেবেছি যে, আমি একজন মুসলিম তখন আবার ফিরে এসেছি সে সিদ্ধান্ত থেকে। আবার নতুন করে জীবন সাজাতে শুরু করেছি"

আমরা জীবন যুদ্ধে জয়ী এই মুসলিম বোনের আরো সমৃদ্ধি এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।

বুধবার, ১৩ মে, ২০২০

অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহেরকে তৃতীয় জানাযার নামাজ শেষে আনোয়ারায় নিজ বাড়ীতে দাফন করা হয়

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্ক জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহেরের তৃতীয় নামাজে জানাযা তাঁর নিজ গ্রামের বাড়ী আনোয়ারার পারুয়া ইউনিয়নের পারুয়া পাড়ার রায়পুওে সকাল সাড়ে দশ টায় অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত জানাজার নামাজে ইমামতি করেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ.ন.ম.শামসুল ইসলাম। এতে উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ জাফর সাদেক, আনোয়ারা উপজেলা জামায়াত নেতা মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মরহুম অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহেরের ছোট ছেলে মোহাম্মদ ফয়সাল প্রমুখ।
উক্ত জানাযার নামাজ শেষে তাঁকে তাঁর পিতা ও মাতার পার্শ্বে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
মরহুম অধ্যক্ষ মাওলানা আবু তাহেরের রুহের মাগফেরাত কামনা কওে আগামী ১১ মে সোমবার, ১৭ রমজান দোয়া দিবস পালনের জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সকল নেতা-কর্মী ও দেশবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়।

সোমবার, ১১ মে, ২০২০

আমার আব্বা মাওলানা আবু তাহের: একজন প্রশান্ত মানুষ

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আব্বা ইন্তেকাল করার পর আমি ভাবতে চেষ্টা করলাম, কত পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে। একটা স্মৃতি আবছাভাবে মনে পড়ে। আব্বা আমাকে টাকা দিয়ে বলেছিলেন বাসার সামনের হকারের দোকান থেকে দৈনিক আজাদী কিনে আনতে। পত্রিকা আনার পর তিনি দাঁড়িয়েই মন দিয়ে পড়ছিলেন। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে ঘাড় উঁচু করে ভাবছিলাম আব্বা এতো লম্বা কেন? পত্রিকা পড়ায় তাঁর মনযোগ দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কি হয়েছে? তখন আব্বা বলেছিলেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তারপর আমার হাতে পত্রিকা দিয়ে বলেছিলেন পড়তে পারি কি না। তখন সম্ভবত আমি ক্লাশ টু’তে পড়ি।
আশির দশকের শেষের দিকের আমার শৈশবের সব ঘটনা আজ পরিস্কারভাবে মনে নেই। তবে প্রতিটি মানুষের জীবনেই শৈশবের অনেক মধুর স্মৃতি থাকে। ঐ সময়টাতে মানুষের মন থাকে সরল, দৃষ্টি অবারিত, জীবনও খুব সহজ। সে সময়ের টুকরো টুকরো অসংখ্য ঘটনাই মনে পড়ে। বছরে এক দুইবার আব্বার সাথে গ্রামের বাড়ি যেতাম। কর্ণফুলী নদী পার হওয়ার সময় সাম্পানে বসে দেখতাম একটু দূরে শুশুক মাছ লাফিয়ে উঠছে। একটা মাছ লাফালেই আব্বা বলতো দেখো দেখো। আরেকদিকে আরেকটা মাছ লাফলে তখন ঐদিকে তাকিয়ে বলতেন দেখো দেখো।
নদী পার হওয়ার পর তখন রিকশায় চড়ে দেড়-দুই ঘন্টার মতো লাগতো আমাদের বাড়ি যেতে। তখন রাস্তা ছিলো এঁটেল মাটির কাঁচা রাস্তা। এইসময় অবধারিতভাবে আব্বা একটা কাজ করতেন। রাস্তার পাশে নীরব গ্রামের জমিতে বাচ্চারা গরু ছাগল চড়াতো। আব্বা তাদেরকে দেখিয়ে বলতেন, আমি ছোটবেলায় মাদ্রাসা ছুটির পর এইরকম গরু চড়াতাম। এই গরীব বাচ্চারা পড়ালেখা করার সুযোগ পায়নি, অন্যদিকে তুমি আল্লাহর রহমতে পড়ালেখা করছো। এই কথাটা সবসময় মনে রাখবে। যখনই আব্বার সাথে বাড়িতে যেতাম, নদী পার হওয়ার পর দূরে কোথাও রাস্তার পাশে গরু-ছাগল চড়ানো বাচ্চা দেখলেই মনে মনে প্রস্তুতি নিতাম ঐ কথা শোনার জন্য।
পৃথিবীতে আমার আব্বার কাছে নামাজের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো পড়ালেখা। এই দুইটা বিষয় নিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে সম্ভবত তিনি একটা দিনও বাদ দেননাই, যতদিন কাছে ছিলাম। তাঁর এই অবধারিত প্রশ্নের ভয়ে মোটামুটি পালিয়ে বেড়াতাম, কারণ বুঝতে পারতাম কোন সময়গুলোতে তিনি আমাকে ধরে বসবেন।
এই স্বভাব সম্ভবত তিনি তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। আমার দাদাকে আমি দেখিনি। অর্থ্যাৎ মনে নেই। আমার বয়স যখন দুই বা তিন বছর, তখন আমার দাদা ইন্তেকাল করেন। আম্মার কাছ থেকে আমি দাদার অনেক গল্প শুনেছি। দাদার অসুস্থতার সময়ে একমাত্র পুত্রসন্তান হওয়ার পরও আব্বা ঢাকা থেকে আসতে পারেননি সংগঠনের ব্যস্ততার কারণে। তারপর যখন এসে পৌছেছিলেন ততক্ষণে দাদা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
আমি আমার বাবা-মায়ের মাঝে এমন একটা প্রজন্ম দেখেছি যাদের কাছে ইসলামী আন্দোলন ছিলো আক্ষরিক অর্থেই এই জীবনের ধ্যানজ্ঞান। তবে তাই বলে তারা তাদের পরিবারের প্রতি দায়িত্বও খুব যে অবহেলা করেছেন তা নয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি আব্বার মনযোগ আমি খেয়াল করেছি সারা জীবন, খুব ভালোভাবে খেয়াল না করলে বুঝা যেতো না। এতো ব্যস্ততার পরও সব আত্মীয়রাই তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আমার দাদীর কাছে আব্বা ছিলেন কলিজার টুকরার মতো। দাদী যদি বলতেন আজ সুর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে তাহলে আব্বা মুচকি হেসে তাতেই মাথা নাড়াতেন। দাদী কোন কিছু চাইলে আব্বা তা পূরণ করবেনই, যাই হোক না কেন।
আমি মাঝে মাঝে আব্বার বেড়ে উঠার সময়ের কথা কল্পনা করতে চেষ্টা করি। সাতচল্লিশের দেশভাগের মাত্র দুই বছর পরে তাঁর জন্ম। আমার দাদা ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। এলাকায় না কি তার পরিচিতি ছিলো কট্টর নৈতিকতার জন্য। চট্টগ্রামের যে জায়গায় আমার বাবার জন্ম, আনোয়ারা থানায় বঙ্গোপসাগরের সৈকতের এক গ্রামে, এখানে মুসলমানরা বেরেলভী চিন্তায় প্রভাবিত। সুতরাং আব্বা নিজেও শুরুতে পড়ালেখা করেছেন সুন্নিয়া মাদ্রাসায়। যেহেতু অতিরিক্ত ভালো রেজাল্ট করতেন এবং সবসময়েই দুই তিন ক্লাশ উপরে পড়তেন তাই একসময় পড়ালেখা করতে চলে আসেন চট্টগ্রাম শহরের মাদ্রাসায়।
একবার জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালালউদ্দিন আল কাদেরী সাহেব হেসে হেসে বলেছিলেন, আমি এক বছর ক্লাশে ফার্ষ্ট হতাম তো তোমার আব্বা আরেকবছর ফার্ষ্ট হতেন। উনি যদি 'মওদুদীবাদের' পথে না যেতেন তাহলে এই মিম্বরে হয়তো আমার বদলে উনিই থাকতেন!
শিক্ষাজীবনের বাকী পর্বে আব্বা শুধু নিজ মেধার কারণে মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেছেন, আবার ঢাবি থেকে মাস্টার্স করেছেন। তারপর ইসলামী আন্দোলন ও রাজনীতি দুটোই করেছেন। তবে কখনোই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা তেমন বলতেন না। তিনি তাঁর দ্বীনি শিক্ষাকেই তিনি ভালোবাসতেন। তার অন্য পরিচয় কদাচিত টের পাওয়া যেতো। যখন হঠাৎ হয়তো দেখা যেতো বিমানের কোন একজন এমডি আব্বার ক্লাশমেট ছিলেন, অথবা কোন এনজিওর কেতাদূরস্ত পরিচালিকা ভদ্রমহিলা। কোথাও দেখা হয়ে গেলে, কথা হয়ে গেলে তারা বলতেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পড়ালেখার স্মৃতির কথা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বাঘা বাঘা প্রফেসরদের প্রিয় ছাত্র হিসেবে আব্বার কথা। কিন্তু মেলাতে পারতাম না চোখের সামনে যেই আব্বাকে শুধু একজন মাওলানা হিসেবে দেখেছি ছোটবেলা থেকে তার সাথে।
আমি একটা ডিজার্টেশন লেখছিলাম সেক্যুলারিজম সম্পর্কে মাওলানা আবদুর রহীম রা. এর দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে। যখন বিষয়টা চিন্তাপর্যায়ে ছিলো, আমি মাওলানার লেখা বাংলা বইপত্র যোগাড় করছিলাম তখন একদিন কথায় কথায় আব্বা বললেন, জন লক এবং থমাস হবসের মতো পন্ডিতরা সেক্যুলারিজমকে কিভাবে ডিফাইন করেছেন তাও পড়তে হবে ভালো কিছু লিখতে হলে। এইসব নাম আব্বার মুখে শুনে আমি বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। আমার আব্বার মাঝে এইরকম কিছু অবোধগম্য বৈপরীত্য ছিলো। নিজে ইসলামের বিভিন্ন ধারাকে দেখেছেন এবং কোন ধারারই বিরোধীতা করতেন না। আবার আমাদের সমাজে যাকে অনৈসলামিক মনে করা হয়, তাও দেখার ও বুঝার চেষ্টা করতেন।
তিনি প্রতিদিন রাতে কিছু না কিছু পড়তেন। হয়তো আরবী ম্যাগাজিন আল-মুজতামা' পড়ছেন, নয়তো উর্দু ম্যাগাজিন পড়ছেন নয়তো ঢাকা ডাইজেস্ট কলম পৃথিবী। গোলাম আযম বা নিজামী চাচার লেখা প্রত্যেকটা বই। ইসলামী সাহিত্য পড়া শেষ করে ব্যক্তিগত রিপোর্ট লিখতে বসবেন। আবার কোনদিন উঁকি মেরে দেখতাম পড়ছেন হয়তো তসলিমা নাসরিনের লেখা ক।
আমি হয়তো রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প পড়ছি। দেখে কিছু বলবেন না। সাইমুম সিরিজ বা ইউসুফ কারাদাভীর লেখা বা আবদুশ শহীদ নাসিম চাচার লেখা কোন বই বা নিতান্তই পাঠ্যবই। দেখে খুশি হয়ে যেতেন। কিছু বলতেন না কিন্তু চেহারা দেখে বুঝা যেতো। মাসুদ রানা, ধমক খেতে হতো। মাঝে মাঝে বই সাময়িক বাজেয়াপ্ত হয়ে যেতো। অবশ্য বেশিরভাগ শাসন আমার উপরেই হতো, আমার পিঠাপিঠি ছোটবোনকে একই অপরাধে তেমন কোন শাস্তি দেয়া হতো না। সে ছিলো আব্বার নয়নের মণি। তাই মনে হয় আম্মা আমাকে একটু সাপোর্ট দিতেন। বাজেয়াপ্ত করা বই পরে গিয়ে আম্মার কাছ থেকে ফেরত পাওয়া যেতো।
আমরা ঘরের ভেতরে থাকায় এসব দেখার সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া তার জ্ঞান বুঝতে পেতো যারা ভালো ভালো আলেম আছেন তারা। তিনি যে ঘরানারই হোক না কেন। কওমী, দেওবন্দী, নদভী, সালাফি সবাই আব্বাকে পছন্দ করতেন। আব্বাও পছন্দ করতেন তাদের সাথে কোরআন সুন্নাহ ফিকহ এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ করতে পারলে। রাজনৈতিক ব্যস্ততায় এমন সুযোগ হতো কালেভাদ্রে। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি তাঁর আত্মিক টান বুঝা যেতো কালেভাদ্রের এসব উপলক্ষে। তাই সুলতান যওক নদভী হোন কিংবা মুফতি ইজহার, চট্টগ্রামের সব ঘরানার আলেমরা তাকে খুব বেশি পছন্দ করতেন। নিজের মানুষ মনে করতেন। এটা আমি বিভিন্ন সময়ে দেখেছি।
ছোটবেলাতেই বুঝে ফেলেছিলাম আমার আব্বা অন্য সবার মতো না। উনি অনেক ব্যস্ত, উনি অনেক পরিচিত। সবাই তাকে সম্মান করে। চট্টগ্রামে মাওলানা আবু তাহেরের সন্তান এই কথাটা কাঁধের উপর কিছু বাড়তি বোঝা যোগ করে। তাছাড়া সবাই যেমন তাহের ভাইয়ের আদর্শ পুত্র আশা করে, আমার মনে হতো আমাকে কেন তেমন হতে হবে? আব্বা সাধারণত চাননা আমি তাঁর পরিচয়ে কোন সুবিধা পাই, আমিও আন্তরিকভাবে এর সাথে একমত।
তাই আমি প্রথম সুযোগেই পালানোর জন্য নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি লেখা শুরু করেছিলাম। বৃটিশ কাউন্সিল থেকে ম্যাগাজিন যোগাড় করে পোল্যান্ড জার্মানী কিংবা আমার শিক্ষকদের কাছে থেকে ঠিকানা যোগাড় করে মিশর সউদি আরব ভারত সবখানেই। মানুষ মরিয়া হয়ে লেগে থাকলে একটা না একটা ব্যবস্থা হয়েই যায়। সুতরাং দুই হাজার চার সালে যখন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পেয়েই গেলাম, তখন একদিন আব্বা বললেন, একটা কথা ভুলে যেও না। এই মাটিতে এই ভাষার মানুষদের মাঝে তোমাকে জন্ম দেয়ার সিদ্ধান্তটি আল্লাহর। হয়তো এর মাঝে কোন কারণ আছে। আমি বু্ঝতে পেরেছিলাম আব্বা কি বলতে চাচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়েছেন শিবির ও জামায়াতের নেতা হিসেবে, অসংখ্য সংস্কৃতি ও সমাজ দেখেছেন সুতরাং এই কথা তিনি বলার সুযোগ তাঁর ছিলো।
আব্বার সাথে যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো তা নয়। উনি আমাদেরকে সবসময় সব কথা বলতেন আমরা সবসময় সবকথা তাকে বলতাম, এমন পরিস্থিতি কখনোই ছিলো না। তবে একটু বড় হওয়ার পর যখন ধমক খেয়েও হাঁত-পা কাঁপা কিছুটা বন্ধ হলো তখন মাঝে মাঝে কিছু কথা হতো। একবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম আব্বার সাথে। সেদিন ছিলো স্বাধীনতা দিবস। দাউদকান্দির দিকে একদল ছেলে গাড়ি থামিয়ে সামনের আয়নায় কাগজের পতাকা লাগিয়ে দিলো। ঐ গাড়িটাতে সরকারী পতাকার স্ট্যান্ড ছিলো তাই তারা তখন গাড়িটাকে আটকাতে একটু ইতঃস্তত করছিলো। কিন্তু আব্বা ড্রাইভার ভাইকে গাড়ি স্লো করতে বলেছিলেন এবং ছেলেগুলোকে পঞ্চাশ টাকা দিয়েছিলেন।
তখন আব্বাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা এই জমিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছেন, কিন্তু একাত্তর সালে সালে এদেশের মানুষদের গণমতের বিপক্ষে চলে গেলেন কিভাবে?
আব্বা প্রথমে বললেন, এটা অনেক বিস্তারিত বিষয়। বিভিন্ন জটিল ও সমস্যার প্রসঙ্গকে তিনি সহজে এড়িয়ে যেতেন। এই উত্তরের পর আর কিছু বলার সাহসও আমার হতো না।
কিন্তু সেদিন একটু পরে কি মনে করে তিনি নিজেই বললেন, যখন পাকিস্তানী আর্মি ক্র্যাকডাউন শুরু করলো তখন আমরা ধারণাও করতে পারিনি তারা জুলুম শুরু করবে, পোড়ামাটি নীতি নেবে। এরপর সময়ের সাথে সাথে আর কিছু করার থাকলো না। তিনি ছাত্রসংঘের একজনের কথা বললেন যিনি পাকিস্তানী আর্মির নির্যাতনের প্রতিবাদ করাতে উল্টা তাকেই হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে গেছিলো। বললেন, এক পর্যায়ে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে আলবদর সদস্য হিসেবে নির্যাতিত মানুষদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করাই ছিলো তাদের মূল কাজ। যুদ্ধ শেষের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিলো না এবং তারাও এক পর্যায়ে না কি সিদ্ধান্তহীন হয়ে পড়েছিলেন, কি করবেন। এমন সময় ভারত ঢুকে পড়াতে আচমকা যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়।
এ সময় তিনি পালিয়ে মহেশখালীর এক গ্রামে কিছুদিন ছিলেন। ওখানে তিনি লবণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তারপর স্থানীয় লীগাররা টের পেয়ে গেলে এক রাতে নৌকায় চড়ে বার্মা চলে যান। আরাকান হয়ে সোজা রেঙ্গুন। গ্রামের পরিচিত এক মানুষ তাকে কাজ জুটিয়ে দেন এক বিড়ি কারখানায়। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বিড়ির বান্ডেল বাঁধতে হতো। পাশের এক মসজিদে নামাজ পড়তেন। ছয়-সাত মাস পর একদিন ফজরের নামাজের সময় ইমাম সাহেব সুরা আল ইমরানের কিছু আয়াত পড়ার সময় একটা আয়াত ভুলে বাদ দিয়ে যান। তখন আব্বা অভ্যাসবশে লোকমা দিয়ে বসেন। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব আব্বাকে ধরে বসলেন, বিড়িশ্রমিক কিভাবে এই আয়াত জানে। ঐ ইমাম সাহেব কিছুদিন পর দেশে ফিরে যান, যাওয়ার আগে আব্বাকে ইমামতির চাকরিটি দিয়ে যান। বাকী কয়েক বছর আব্বা ওখানেই ছিলেন।
এই ঘটনা বলে আব্বা বললেন, সবমিলে একাত্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা গ্রে এরিয়া। এখানে হক্ব ও বাতিলের যুদ্ধ হয়নি, বরং নানামুখী জটিল সংঘাত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদেরকে এর দায় বহন করতে হচ্ছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে আপনাদের ভবিষ্যত চিন্তা কি? উত্তর দিলেন, আল্লাহ যা চায় তাই হবে। সংগঠনের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সামস্টিক সিদ্ধান্তের উপর আল্লাহ রহমত দেবেন।
তাঁর নিজের কাছে সংগঠন ও আনুগত্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু ছিলো না। আরেকবার কথায় কথায় বলেছিলেন, যদি একান্তই কোন মুসলিম নিরুপায় হয়ে যায় তাহলে আবু জর গিফারী রা. এর মতো একাকী জীবন যাপন করাও ইসলামী আন্দোলনের ভেতরে মতপার্থক্য সৃষ্টি করার চেয়ে বেহতর।
তবে আরো নানা কথা, সবকিছু মিলে আমি বুঝতে পারতাম, তিনি ইসলামী সংগঠনকে ইসলামের সমার্থক মনে করতেন না। ইসলাম তাঁর কাছে ছিলো অনেক উদার, অনেক বিশাল পরিসর। সবাইকে তিনি খোলামনে গ্রহণ করতে পারতেন। কারণ তিনি ইসলামের বিভিন্ন ধারাকে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজকে স্বচক্ষে দেখেছন। এশিয়া থেকে আফ্রিকা, আরব থেকে ইউরোপ। ছোটবেলা থেকে নিজে ইসলামের বিভিন্ন ধারায় হেঁটে বেড়িয়েছেন। তিনি মাঝে মাঝে কোরআনের বিভিন্ন কেরাআত বা বিভিন্ন মাযহাবের মতপার্থক্যের কথাও বলতেন। কাউকেই কখনো খারিজ করতেন না। তবে নিজের জন্য ইসলামী সংগঠনকে তিনি 'ওয়াজিব' করে নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে আমার আম্মার কাছে বিষয়টা একটু অন্যরকম। আম্মাও সত্তরের দশকে ঢাবি থেকে পাশ করা ছাত্রী। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ অন্য ধরণের পরিবার থেকে আসা। তিনি ইসলামকে চিনেছেন ইসলামী সংগঠন দিয়ে। সুতরাং তাঁর কাছে ইসলামী আন্দোলনই শেষ কথা। জামায়াত করতেই হবে।
এই গূঢ় পার্থক্যের পরও তাদের মাঝে রসায়ন ছিলো ব্যতিক্রমী। আমার আব্বা একজন আড়ম্বরহীন বাহুল্যহীন মানুষ হিসেবে জীবন কাটিয়ে গেছেন, এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আমার আম্মার। শেষপর্যন্ত গিয়ে আম্মার চিন্তার সাথে তিনি একমত হতেন। এটা একটা অব্যখ্যনীয় বিষয়, যা অল্প কথায় বুঝানো সম্ভব না। বেশ কয়েকবার এমন ঘটেছে অন্য দলের মন্ত্রী এমপি মেয়র এরা চট্টগ্রামে আব্বাকে এটা সেটা উপহার দিয়েই দিয়েছেন। জমি, ফ্ল্যাট, ট্রাকে করে আসবাবপত্র। আব্বা আটকাতে পারেননাই, কিন্তু শেষপর্যন্ত আম্মার কারণে ফেরত পাঠাতে হয়েছে। শুনতে মনে হয় গল্পকাহিনী, কিন্তু বাস্তবেই যে ঘটেছে আমাদের জীবনে।
আজ যখন পিছনে তাকিয়ে দেখি, আমার আব্বা কেমন মানুষ ছিলেন? তাঁর নানারকম গুণ ছিলো। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় গুণ সম্ভবত তার প্রশান্ত হৃদয়। আন-নাফসুল মুতমাইন্নাহ। তিনি জীবনযাপন করেছেন মুসাফিরের মতো। আক্ষরিক অর্থেই। তাঁর পাঞ্জাবী ছিলো হাতেগোণা কয়েকটা। কিন্তু তাতেই কেন জানি তাকে সুন্দর মানাতো। একটা ব্রিফকেসে সার্টিফিকেট আর পুরনো সাংগঠনিক ডায়রীগুলো। আর শেলফভর্তি বই। এই হলো তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয়। আর্থিক বিবেচনায় বরং আমার দাদা তার পুত্রের চেয়ে কিছুটা বেশি স্বচ্ছল ছিলেন। পার্থিব কোন কিছুতে তাঁর আকর্ষণ দেখিনাই, হাতঘড়ি ছাড়া। আব্বা ভালো হাতঘড়ি পড়তে পছন্দ করতেন। সেই ভালোর মাত্রা আবার সিকো ফাইভ বা সিটিজেন পর্যন্ত, এর উপরে না।
একানব্বই এর ঘুর্নিঝড়ের পর যখন বিদেশ থেকে কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী আসলো, অফিসের একজন একটা টুনা মাছের ক্যান পাঠিয়েছিলো বাসায়। দুপুরে বাসায় খেতে এসে মাছের সেই ক্যান দেখে আব্বা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। আমি কোনদিন অফিসে আব্বার রুমে ঢোকার সুযোগ পাইনাই। অফিসের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে তিনি ব্যবহার করতেন না। কালেভাদ্রে কখনো করতে হলে, যেমন কাউকে হাসপাতালে নেয়ার মতো দরকারে বা আমাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করার মতো দরকারে, তেল কিনে দিতেন এবং হিসাব রাখতেন। তাঁর চারপাশে ঘিরে থাকা ক্ষমতা ও রাজনীতির বলয় থেকে তিনি আমাদেরকে একটু দূরে রাখতেন। আবার একই সাথে চেষ্টা করতেন শিবিরের দায়িত্বশীলরা অথবা মাদ্রাসার শিক্ষকরা যেন আমাদের লাগাম ধরে রাখে। অন্তঃসলিলা প্রবাহের মতো, মাঝেসাঝে টের পেয়ে যেতাম।
চট্টগ্রামে আব্বা ছিলেন রাজনীতিবিদ। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে ঢাকা আসার পর তিনি যেহেতু জামায়াতের আভ্যন্তরীণ কাজে জড়িত ছিলেন বেশি, কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার পরও জামায়াতের বাইরের মানুষ তাকে তেমন চিনতো না। কিন্তু জামায়াতের যারা তাকে চিনতেন, তাই এতো বেশি ছিলো যে প্রায়শ এই পরিচয় লুকাতে হতো। কোন এক অবোধগম্য কারণে মানুষ তাকে খুব বেশি ভালোবাসতো। তার প্রতি অন্যদের এই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কখনো কখনো আমি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে খেয়াল করে দেখতাম এবং চিন্তা করতাম এর কারণ কি?
সম্ভবত এর বড় একটা কারণ হলো তিনি খুব মেধাবী ও তীক্ষ্ণধী হওয়ার পরও কিভাবে জানি খালেস ও নিরহংকারী মানুষ ছিলেন। সব বুঝতেন কিন্তু কাউকে শত্রু বা অপছন্দের মানুষ হিসেবে গণ্য করতেন না। মানুষকে কোনভাবেই জাজ করতেন না। একবার আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা প্রাণপাত করে নিয়ে এসে পত্রিকা চালু করলেন, এই দৈন্যদশা দেখে এখন হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছা করে না আপনার? হেসে বলেছিলেন, আমার যা চেষ্টা তা তো করেছি। বাকীটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।
তাঁর এই নিরহংকারী ও পিছুটানবিহীন স্বভাব আমাকে মাঝে মাঝে আশ্চর্য করতো। বিমানের বিজনেস ক্লাশে তিনি স্বাভাবিক, আবার ট্রেনের সুলভ শ্রেণীতেও তিনি খুশী। ফাইভ স্টার হোটেল না কি রাস্তার পাশের হোটেল, তাঁর কিছু আসতো যেতো না। চারপাশের নানা পার্থিক বিষয় তাকে প্রভাবিত করতো না। কোন দেশের রাষ্ট্রদূত হোক, এমনকি প্রেসিডেন্ট হোক কিংবা কর্ণফুলী ব্রিজের গোড়ার চা দোকানদার, সবার কাছে তিনি পছন্দের মানূষ হয়ে যেতেন। কারণ তার মাঝে কৃত্রিমতা ছিলো না। আল্লাহ তায়ালার উপর তাওয়াক্কুল সম্ভবত এর বড় একটা কারণ।
এছাড়াও তাঁর একটা সহজাত ক্ষমতা ছিলো, যা মাঝে মাঝে আমার মনে হতো একটা অলৌকিক ক্ষমতা। অনেক বছর আগে দেখা হওয়া কথা হওয়া মানুষের নাম ও নানা কথাবার্তা তাঁর অবলীলায় মনে থাকতো। হয়তো কুমিল্লার বরুড়ার কোন জামায়াতকর্মী, কিংবা বগুড়ার একজন শ্রমিক যে মগবাজারে কাজ করে, অনেকদিন পর দেখা হলেও তার নাম ধরে খোঁজখবর নিতেন। ঐ মানুষটা তখন আপ্লুত হয়ে যেতো। তবে এটাও তিনি কোন ট্রিক হিসেবে করতেন তা না। এইরকম কয়েকটা ঘটনা আমি খেয়াল করে দেখেছি, এইটা ছিলো তাঁর স্বভাবজাত স্বাভাবিক বিষয়। ড্রাইভার, স্টাফ এই ধরণের মানুষদেরকে তিনি নিজের সমপর্যায়ের মনে করতেন। উনারাও তাঁর জন্য জীবন দিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকতো। অনেক জায়গায় তাঁর প্রতি জামায়াতের মানুষদের ভালোবাসা এতোটা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে যে এমনকি আমি নিজের পরিচয় প্রকাশ করিনাই। বরং এমনিতেই কথাবার্তা চালিয়ে যেতাম। বুঝতে চেষ্টা করতাম ঘটনা কি। যে মানুষটা তাঁর সাথে একটু পরিচিত হয় সেই তাকে পছন্দ করা শুরু করে কেন? এমনকি কোন মন্ত্রী, কোন মুক্তিযোদ্ধা, কোন কমিউনিষ্ট, কোন হিন্দু? কেন? তখন বারবার আমার মনে পড়েছে একটা হাদীসে নববীর কথা। রাসুল সা. বলেছেন, আল্লাহ যদি পছন্দ করেন তাহলে তিনি ফেরেশতাদেরকে বলেন তোমরা গিয়ে জমিনবাসীদের কানে কানে বলে দাও তাকে আমি ভালোবাসি। কে জানে, হয়তো এমনও হতে পারে। এই পৃথিবীর জীবনে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়পাত্র হওয়ার চেয়ে বড় অর্জন আর কিইবা আছে? আমরা মানুষেরা পার্থিব নানা স্বার্থ ও প্রবৃত্তির কারণে তার মূল্য বুঝে উঠতে পারিনা।
প্রশান্ত মানুষ হওয়ার অর্থ যে তিনি একদম শান্তশিষ্ট ছিলেন এমন না। মাঝে মাঝে তাঁর রাগ বুঝা যেতো। তবে সেই রাগকে তিনি আটকে রাখতে পারতেন। আমার ধারণা, এই রাগ সামলে একদম স্বাভাবিক থাকার কারণে তার মস্তিস্কের উপর চাপ পড়েছিলো দীর্ঘদিন ধরে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অসংখ্য ডামাডোল, বাইরের মারামারি, অনেক মানুষ নিহত আহত গ্রেফতার হওয়ার অনেক ঘটনা, দলের আভ্যন্তরীণ সমস্যা এসব তিনি সহজে পার হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এসবের প্রভাব নিঃসন্দেহে মানুষ হিসেবে তাঁর মনের উপর পড়েছিলো।
যখন জামায়াত নেতাদেরকে একের পর এক ফাঁসি দেয়া শুরু হলো, তখন থেকে আব্বা একদম চুপ হয়ে গেলেন। আম্মা বলতেন, বিছানায় শুয়ে থাকা তাঁর চোখের কোণা দিয়ে শুধুপানি গড়িয়ে পড়ে। আমি যেহেতু সাধারণত আব্বার সাংগঠনিক পরিচয় থেকে সরে থাকতাম, সুতরাং অন্য নেতাদেরকে আমি খুব কাছ থেকে দেখিনি। আব্বা যখন ঢাকায়, তখন আমি আর বাংলাদেশে নাই। তথাপি ছুটিতে গেলে অনেকের সাথে হঠাৎ করে দেখাতো হতোই। কিছুটা ভেতর থেকে জানার সুযোগ পেতাম। জামায়াতের যেসব নেতাদেরকে বাংলাদেশে ফাঁসি দেয়া হয়েছেন এরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রায় একইরকম মুখলেস মানুষ। একেকজনের গুণের বিকাশ ঘটেছিলো একেকদিকে। দর্শকের সারিতে বসে নয় বরং মঞ্চের একপাশে একটু আড়াল কিন্তু কাছে থেকে দেখে আমার মনে হতো সাহাবীদের কথা। যাদের একেকজনের গুণ ছিলো একেকরকম। সারাজীবনে আব্বার বন্ধু ও কাছের মানুষ বলতে ছিলেন এরাই। এমন মানুষগুলো একসাথে হয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশে এমন কালজয়ী একটা মুভমেন্ট শুরু হয়েছে।
প্যারালাইজড হয়ে আব্বা অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন। এসবি পুলিশের অফিসাররা আসতো নিয়মিত, মেডিক্যাল রেকর্ড কাগজপত্র নিয়ে যেতো। একটু সুস্থ হলে, উঠে বসতে পারলে যদি ট্রাইবুনালে দেয়া যায়। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নাই। এই ক্ষেত্রে আব্বার আশাটাও অবশ্য পূরণ হয়নাই। তাঁর শহীদি মৃত্যুর ইচ্ছা ছিলো। আল্লাহ তাকে শাহাদাতের দারাজাত দিন।
আব্বার কথা ভাবতে গিয়ে শুধু ভালো কথাই মনে পড়ছে। মানুষ হিসেবে তাঁর কি কোন দোষত্রুটি ছিলো না? নিঃসন্দেহে ছিলো। রাসুল সা. বলেছেন, কেবলমাত্র আমল দিয়ে নাজাত পাওয়া কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু আমার মনে পড়ছে না এখন। এতো সংযমী এবং নিয়ন্ত্রিত মানুষের কোন ত্রুটি বের করা পরিশ্রমসাধ্য কাজ।
আগেই বলেছি, আমরা অন্য সবার মতো বাবা পাইনি। রাতদিন ব্যস্ততায় তাঁর জীবনে জামায়াতই ছিলো আসল পরিবার। আমার আব্বার কাছে আমার যে স্থান, শিবিরের যে কোন ছেলেরও একই স্থান। এমন মনে হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায় সারাজীবন, বারবার। তথাপি এমন বাবা এমন মা কয়জন পায় এ জীবনে? আজ আত্মাটা বিদীর্ণ হয়ে যায় আপনার কথা মনে করলে। আল্লাহ যদি আমার অবশিষ্ট আয়ুগুলো আপনাকে দিয়ে দিতেন, তবে নির্দ্বিধায় দিয়ে চলে যেতাম। যে সময়গুলো আপনার কাছে ছিলাম, তখন যদি বুঝতে পারতাম তার মূল্য। তাহলে হয়তো আপনার জান্নাতি চেহারাটা আরেকটু দেখতাম।
আম্মার কাছে শুনেছি, একাশি সালে বিয়ের পর একবার ঢাকার কোন রাস্তায় রিকশা দিয়ে যেতে যেতে আপনি আম্মাকে বলেছিলেন, এই যে বড় বড় দালানে মানুষগুলো ঘুমায়, রাস্তায় ঘুমানো মানুষগুলোকে দেখেনা, এই দেশে ইসলাম কায়েম হলে এই অবস্থা আর থাকবে না। সম্পূর্ণ বদলে যাবে।
তারুণ্যের সেই স্বপ্নের তাড়না নিয়ে আপনি সারাজীবন কাটিয়ে গেছেন। চল্লিশ বছর আগে আপনার হাত ধরেছিলেন আমার মা, এখন তিনি একা। আল্লাহর ইচ্ছা আমাদেরকে মেনে নিতে হয়। যেই সাধারণ গ্রাম থেকে আপনি নিজ মেধা ও যোগ্যতায় নির্বিকার অনেক দূর গিয়েছিলেন, জিন্দেগির এই সফর শেষে চুপচাপ সেখানেই ফিরে গেছ্নে। আপনি এই পৃথিবীতে নিজের জন্য কিছু চাননাই। আপনার এই চাওয়া আল্লাহ পূরণ করেছেন বলেই আমার মনে হয়।
তাই রাহমানুর রাহীম আল্লাহর কাছে চাওয়া, তিনি যেন আপনাকে মাফ করে রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেন। আপনার সওয়াল-জওয়াব, আপনার আলামে বরযখ যেন তাঁর প্রিয় আবেদদের মতো হয়। আমি নিতান্তই আপনার অযোগ্য এক সন্তান, তথাপি তিনি যেন আমাদের সবাইকে সেই চিরস্থায়ী জীবনে একসাথে থাকার সুযোগ দেন।
(মরহুমের বড় সন্তানের লেখা)

রবিবার, ১০ মে, ২০২০

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের সাহেবের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত।

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ চট্টগ্রাম মহানগর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান সাহেবের ইমামতিতে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আবু তাহের সাহেবের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত জানাযায় উপস্থিত ছিলেন নেজামী ইসলাম পার্টির চেয়ারম্যান বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন মুফতি ইজহারুল ইসলাম, মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী , সেক্রেটারি ' মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম , চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের ছাত্রশিবির সভাপতি হামেদ হাসান ইলাহী
চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মুহাম্মদ ইমরানুল হক সহ মহানগর এবং জেলা নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য মরহুমের প্রথম জানাজা ঢাকায় মুহতারাম আমীরে জামায়াতের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
আজ১০মে সকাল সাড়ে দশটায় মরহুমের নিজের গ্রামের সর্বশেষ জানাযা অনুষ্ঠিত হবে , চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হবে।

জানাযায় উপস্থিত মুসল্লিগণ মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।