ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

একটি অপ্রয়োজনীয় প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রস্তাব! == ডঃ আসিফ নজরুল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন ৭ এপ্রিল। ভারতে বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর সফর এমনিতেই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এবারের সফরটি আরও গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনার কারণে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ১৯৭২ সালের মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তিতে প্রতিরক্ষা সমঝোতা-সম্পর্কিত কিছু বিধান ছিল। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে তা সমালোচিত হয়েছে। এই চুক্তি ২৫ বছর মেয়াদি ছিল, এর নবায়নের সুযোগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে ছিল। তখন তা নবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে কেন সে তুলনায় আরও জোরালো ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, তা নিয়ে দুই দেশে জল্পনা রয়েছে। এ নিয়ে অস্বস্তি ও ভীতিও রয়েছে বাংলাদেশে।
এই ভীতি অমূলক নয়। এর প্রধান কারণ প্রতিরক্ষা সমঝোতা নিয়ে অস্পষ্টতা। এ বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে কী থাকতে পারে তার একটি ধারণা কয়েক দিন আগে একটি ইংরেজি দৈনিকে ছাপানো খসড়ায় দেখা গেছে। কিন্তু এটি কতটা বস্তুনিষ্ঠ বা এটিই চূড়ান্ত বা সবকিছু কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আবার এই খসড়ায় যা ছাপানো হয়েছে (যেমন, ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়, যৌথ টহল, প্রশিক্ষণ ও তথ্যবিনিময় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ), তা বাংলাদেশের জন্য কতটা স্বার্থানুগ বা এটি আদৌ বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক নিয়ে অস্বস্তির আরও কারণ রয়েছে। অতীতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ভারত মৈত্রী ও সহযোগিতার নামে যে চুক্তিগুলো করেছে, তাতে দেশ দুটোর জন্য অবমাননাকর কিছু শর্ত ছিল। যেমন, নেপালের সঙ্গে ১৯৫০ সালের চুক্তিটিতে বলা আছে যে নেপাল ভারতের সম্মতি ছাড়া তৃতীয় কোনো দেশ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনতে পারবে না, নেপালের প্রাকৃতিক সম্পদ উন্নয়নে ভারত অগ্রাধিকার পাবে। ভুটানের সঙ্গে ভারতের আদি মৈত্রী চুক্তিতে অনুরূপ বিধান ছিল; ছিল এমনি বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের পরামর্শ দ্বারা ‘গাইডেড’ হওয়ার বাধ্যবাধকতাও। নেপাল সম্প্রতি চুক্তিটির কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করলেও ভারতের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। অন্যদিকে ভুটানের সঙ্গে চুক্তিটি ২০০৭ সালে নবায়ন হলে তাতে বৈদেশিক সম্পর্ক স্থাপন ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে ভুটানকে অধিকতর স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে বলে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা-ও ভুটানের সম-অবস্থানের ইঙ্গিতবাহী নয়।
এসব চুক্তি এই সাক্ষ্য দেয় যে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক চুক্তি করার একটি মানসিকতা ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ছিল। ভারতের সমরবিদ ও প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন লেখায়ও (যেমন সুব্রামানিয়াম স্বামী, ভবানী সেনগুপ্ত) এর প্রতিফলন দেখা যায়। নেপাল ও ভুটানের তুলনায় বাংলাদেশ বহু দিক দিয়ে শক্তিশালী একটি রাষ্ট্র, এ দেশ দুটোর তুলনায় বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসও বহুগুণে গৌরবদীপ্ত ও মর্যাদাকর।
কিন্তু তাই বলে তুলনামূলকভাবে প্রতিকূল কোনো প্রতিরক্ষা সমঝোতায় বাংলাদেশকে রাজি করানোর মতো প্রভাব ভারতের নেই, তা বলা যাবে না। বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বর্তমানে বহু গুণে বেড়েছে, অন্যদিকে কমেছে দুর্বল ম্যান্ডেটের সংকটে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের দর-কষাকষির ক্ষমতা। সম্প্রতি চীন থেকে বাংলাদেশের সাবমেরিন কেনার পর ভারতের অসন্তুষ্ট হওয়ার যে খবরাখবর ভারতের পত্রপত্রিকাতেই পাওয়া যায়, তাতে ভারতকে শান্ত করার একটি মনোভাবও সরকারের মধ্যে কাজ করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে সুযোগ গ্রহণ করার মতো চেষ্টা ভারতের নীতিনির্ধারকদের রয়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক তাই বাংলাদেশের জন্য
কতটা স্বার্থানুগ হবে, তা নিয়ে বাংলাদেশের মধ্যে অস্বস্তি থাকা স্বাভাবিক।
২.
গতকালের প্রথম আলোর সংবাদ অনুসারে বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি নিয়ে যে সচেতন রয়েছে, তার কিছু আলামত পাওয়া যায়। এতে ভারতের চাপে কোনো চুক্তি করতে রাজি না হয়ে শুধু সমঝোতা স্মারকের প্রতি বাংলাদেশের সম্মতি রয়েছে বলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক চুক্তি আইন অনুসারে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) চুক্তির (অ্যাগ্রিমেন্ট/ট্রিটি) তুলনায় অনেক দুর্বল একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে। চুক্তির তুলনায় সমঝোতা স্মারক পালনের বাধ্যবাধকতাও অনেক কম।

তবে সমঝোতা স্মারক তাই বলে ছুড়ে ফেলার মতো বিষয় নয়। এতে যেসব বিষয় থাকার কথা বলা হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থের দৃষ্টিকোণ থেকে বহু প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে। যেমন এতে ভারত থেকে অস্ত্র আমদানির কথা বলা হয়েছে। ভারত ঐতিহাসিকভাবে মূলত একটি অস্ত্র আমদানিকারক দেশ, রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে এর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা বড় নয়। তুলনামূলকভাবে উন্নত চীনা অস্ত্র ও সরঞ্জামে সজ্জিত বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ভারতের অস্ত্র কেনার এই বাধ্যবাধকতা কেন থাকবে তাহলে দুই দেশের সমঝোতায়?
সমঝোতা স্মারকে দুই পক্ষের প্রশিক্ষণ, সামরিক পর্যবেক্ষক, প্রশিক্ষণ, প্রতিরক্ষা তথ্যবিনিময়ের কথা বলা হচ্ছে। অতীতে চুক্তি থাকার পরও নদীর পানির মতো ‘নিরীহ’ তথ্যবিনিময়ে ভারতের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি, যদিও বাংলাদেশ ভারতের দাবি অনুসারে বহু তথ্য দিয়েছে। এমন অবস্থায় তথ্যবিনিময় বাংলাদেশের জন্য অনুকূলভাবে ব্যবহার করা কখনো সম্ভব হবে কি? প্রশিক্ষণ বিনিময় প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ও আরও নিয়মিতকরণের ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির স্বাতন্ত্র্যের কথা বিবেচনায় নেওয়া হবে কি? তুলনামূলকভাবে বহু গুণে শক্তিশালী ভারতের সঙ্গে ভবিষ্যতে কোনো বৈরিতা হলে এসব বিষয়ে সমঝোতা বাংলাদেশের জন্য কি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে না?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, স্বাধীনতার এত বছর পর ভারতের সঙ্গে এ ধরনের একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা স্মারক কেন বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন হতে পারে?
বাংলাদেশের নিরাপত্তাঝুঁকি (যুদ্ধ বা সীমান্ত সংঘাত বা এক দেশের মাটিতে অন্য দেশের উগ্রবাদীদের আশ্রয় প্রদান) রয়েছে আসলে কোন দেশ থেকে? এই সমঝোতা স্মারক যদি মূলত ভারতের স্বস্তি ও স্বার্থের জন্যই প্রয়োজন হয়, তাহলে বাংলাদেশ বিনিময়ে কী পাচ্ছে? ভারত থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে ভারতেরই অস্ত্র কেনা বাংলাদেশের জন্য কতটুকু স্বার্থানুগ হতে পারে না। বাংলাদেশ তাহলে কী পাচ্ছে বিনিময়ে?
৩.
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে লেনদেনের অজস্র বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত প্রায় পুরোটাই ভারতবেষ্টিত। ফলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বহু বিষয় রয়েছে, যা অন্য কোনো দেশের সঙ্গে নেই, থাকা সম্ভবও না।

কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ স্বার্থ সম্পর্কে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি কয়েক দশকেও; বরং ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মূলত ভারতের জন্য সহায়ক হয় এমন আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, ভারত এর উপযুক্ত প্রতিদান দেয়নি। শেখ হাসিনার সরকার বিএনপির আমলে বাংলাদেশে নিরাপদে থাকা ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে কঠোরভাবে দমন করে ভারতের নিরাপত্তাঝুঁকি বহুলাংশে দূর করেছে। ভারতকে অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের স্থলভূমি ও বন্দর ব্যবহার করতে দিয়েছে, ভারতের প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রায় অবাধে উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ড করতে দিয়েছে, কম মাশুলে ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, ভারতের সঙ্গে অসম বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে, আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কূটনীতি বজায় রেখেছে।
বিনিময়ে বাংলাদেশের সামনে এক তিস্তা চুক্তির প্রলোভন জিইয়ে রাখা হয়েছে বহু বছর ধরে। এই চুক্তি না হওয়ার জন্য শুধু পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দোষারোপ করার একটা প্রবণতা বাংলাদেশেও রয়েছে। কিন্তু এটি আসলে ঠিক নয়। তিস্তার পানির বিষয়ে ভারতের সংবিধান অনুসারে মমতাকে অগ্রাহ্য করে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে (দেখুন মিজানুর রহমান খান, প্রথম আলো, ১৫ মার্চ, ২০১৭)। আমার ধারণা, ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার গঠনে উচ্চাভিলাষী বিজেপি এই চুক্তি করতে উদ্যমী হচ্ছে না নিজের স্বার্থে। বিজেপি সরকারের কাছে বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকারের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভোটারের সমর্থন হয়তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি না হলে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের জন্য এত কিছু করার পর এক তিস্তা চুক্তিই বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখার কোনো যুক্তি নেই।
প্রশ্ন হচ্ছে, তিস্তা চুক্তি হলেই কি আমাদের অসম বাণিজ্য, অসম ট্রানজিট চুক্তি বা কোনো সম্ভাব্য অসম প্রতিরক্ষা সমঝোতা মেনে
নিতে হবে? না। কারণ তিস্তা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নদীতে পানি পাওয়া আন্তর্জাতিক নদী ও পরিবেশ আইন এবং ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তি অনুসারে আমাদের ন্যায্য অধিকার। একইভাবে সীমান্ত বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তার গ্যারান্টি পাওয়া জাতিসংঘ সনদ অনুসারে আমাদের ন্যায্য অধিকার। আর ভারত ট্রানজিট, নৌ ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, কানেকটিভিটি বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতার যেসব বিষয়ে আগ্রহী, তা কোনো বিচারেই অধিকার নয়। এসব অন্য দেশের সঙ্গে বড়জোর সমঝোতার শর্তে প্রত্যাশিত সুবিধা মাত্র।

দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ভারত বন্ধুত্বের কথা বলে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকে তার ন্যায্য অধিকার দেয়নি অনেক ক্ষেত্রে। এসব অধিকারের প্রতি যুগের পর যুগ ধরে কর্ণপাত না করা একটি দেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বা নতুন নতুন আরও বিভিন্ন সমঝোতায় উদ্বিগ্ন হওয়া তাই অন্ধ ভারতবিরোধিতা নয়, যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া মাত্র।
বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার বহন করা আমাদের প্রধানমন্ত্রী কি ভারতকে এটি বোঝাতে পারবেন তাঁর আগামী সফরে? পারবেন ভারতের সঙ্গে একটি ভারসাম্যমূলক স্বার্থসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে এগোতে? যদি পারেন তাহলে বাংলাদেশের আরও বহু মানুষের কাছে তিনি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হবেন।
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কার্টেসীঃ দৈনিক প্রথম আলো

শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭

মেধা পাচার এবং হাফেজ নাঈম

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ   আমাদের দেশ থেকে মেধা পাচার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং হচ্ছে। হোক অর্থনৈতিক, সামাজিক কিংবা রাজনৈতিক এ দেশ থেকে প্রচুর মেধাবী মানুষ বাইরে চলে যাচ্ছেন। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায় অনেক বাংলাদেশী বিজ্ঞানী গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন। আধুনিক বিশ্বে বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে বাংলাদেশীর নাম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ হচ্ছে। অথচ দেশে এদের অনেকই ছিলেন অবহেলিত ও উপেক্ষিত।
এক মেধাবী তরুণের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল কয়েক বছর আগে। ফটিকছড়ি বখতপুর হিরাগাজি বাড়ির ছেলে হাফেজ নাঈম। পরিচয়ের সূত্র আমার লেখালেখি। বিভিন্ন দৈনিক ও সাময়িকীতে আমার লেখা পড়ে সেই আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেছিলে। একদিন সে আমার সাথে কথা বলার জন্য কলেজে চলে আসে। প্রথম দিনেই তার মেধা এবং জ্ঞানের গভীরতা আমাকে মুগ্ধ করে। কিতাবি জ্ঞানের পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির উপর তার দখল আমাকে বিষ্মিত করে। হাফেজ নাঈম মাঝে মধ্যে আমার সাথে কথা বলত। একদিন শুনলাম সে মধ্যপ্রাচ্যের কাতার চলে গেছে এবং কাতারের রাজধানী দোহায় একটি মসজিদে খতিবের দায়িত্বে আছে।
গত ২ মার্চ চট্টগ্রাম শহরের একটি অভিজাত হোটেলে আহলে বাইত এর মর্যাদা বিষয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। আহলে বাইত বা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার ও বংশের মর্যাদা ইসলামি আকিদার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অন্যানের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্বদ্যালয় চট্টগ্রাম থেকে অধ্যাপকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আমার সৌভাগ্য যে, আলোচকদের মধ্যে প্রধান অতিথি এবং প্রধান বক্তার পরই ছিল আমার অবস্থান।
সেমিনার শুরুর কয়েক ঘন্টা আগে আহলে বাইত এর উপর হাফেজ নাঈম এর একটি লেখা আমার হাতে আসে। সময় ছিল না, তাই একবার চোখ বুলিয়েই আমি লেখাটি রেখে দিয়েছিলাম। আলোচনা শেষে রাতে লেখাটি গভীর মনোযোগসহকারে পড়লাম। খুবই তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। প্রতিটি কথার সাথে রেফারেন্স। আফসোস! যদি লেখাটি একদিন আগে আমার হাতে আসত, সেমিনারে আমার আলোচনা আরো বেশি প্রাণবন্ত ও আকষর্ণীয় হত।
হাফেজ নাঈমের মত মেধাবী তরুণকে আমরা ধরে রাখতে পারি নি। দেশে এজাতীয় মেধাবী লোকদের গবেষণায় কাজে লাগাতে পারলে আমরা অনেক বেশি উপকৃত হতাম।

বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০১৭

ঘুমে নাকডাকা: কারণ ও জটিলতা: অধ্যাপক নইম কাদের

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ   ঘুমের মধ্যে নাকডাকা একটি বিরক্তিকর ও জটিল উপসর্গ। নাকডাকার এই সমস্যা সব বয়সের মানুষের হয়। তবে, মধ্যবয়ষ্ক লোকদের মাঝে এ উপসর্গ বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা চল্লিশোর্ধ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা বিশ্বে প্রায় ৬০% ভাগ সুস্থ মানুষ কোন না কোনভাবে ঘুমে নাকডাকা উপসর্গে ভোগেন। এর মধ্যে প্রায় ৪০ভাগ পুরুষ ও ২৫ভাগ নারী। অর্থাৎ নাক ডাকায় মহিলাদের তুলনায় পুরুষের হার বেশি। ৪৫ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের নাক ডাকা অনিয়মিত, ২৫ভাগ মানুষ নিয়মিত নাক ডাকেন। কারো নাক ডাকা হয় মৃদু, কারো উচ্চৈঃস্বরে। কেউ কেউ দিনের বেলায়ও ঘুমে নাক ডাকেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নাকডাকার এই শব্দ কারো কারো ৯০ ডেসিবেল পর্যন্ত হয়।
নাকডাকা এমন এক বিরক্তি ও অস্বস্তিকর উপসর্গ যে, এর কারণে স্বামী-স্ত্রী আলাদা রুমে রাত যাপন করে। এমনকি অনেকের বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটে। মজার ব্যপার হলো যারা ঘুমে নাক ডাকেন, তারা কিন্তু বিষয়টি একেবারেই টের পান না।

নাকডাকা কী :

ঘুমের মধ্যে কোন কারণে শ্বাসনালীতে বাধা সৃষ্টি হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে এক ধরণের শব্দ-কম্পন তৈরি হয়। এর ফলে যে শব্দ শোনা যায় তাকেই নাকডাকা বলা হয়। অর্থাৎ নাকডাকা হলো শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শ্বাসনালীর উপরিভাগের কম্পনজনিত শব্দ।
অটোল্যারিঞ্জোলজিস্ট ড্যানিয়েল প্লিটার এর গবেষণা অনুযায়ী যারা নাক ডাকেন তাদের মধ্যে শতকরা ৭৫ভাগের ঘুমের মধ্যে কিছুক্ষণের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া সিন্ড্রোম। গবেষকরা নাকাডাকা বিষয়ে যে ভায়াবহ তথ্যটি দিয়েছেন তা হলো, যাদের উচ্চস্বরে নাক ডাকার অভ্যাস, তারা পরবর্তীতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এর ফলে ঘুমের মধ্যে শ্বাসরোধ হয়ে ঘুমে মৃত্যু হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, স্লিপ অ্যাপনিয়া রোগীদের ঘুমের মধ্যে মৃত্যুহার শতকরা প্রায় ৪৬ভাগ।
এছাড়াও নাকডাকার ফলে ঘনঘন ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ায় সুনিদ্রায় ব্যঘাত ঘটে। দৈনন্দিন কাজ-কর্মে বিরক্তি ও মনোযোগের অভাব সৃষ্টি হয়, স্মৃতিলোপ, মানসিক অশান্তি ও বিষন্নতা বৃদ্ধি পায়। নাকডাকার বিরক্তিকর শব্দে শয্যাসঙ্গি ও আশে পাশে যারা থাকেন তারা বিরক্ত হন, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়, কার্বনডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায়, যৌনকর্মে আগ্রহ কমে যায়। সর্বোপরি পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়

কারণ :

নাকডাকার প্রধান কারণ শ্বাসনালীর সংকোচনা। শরীরে যে শ্বাসপথ রয়েছে, কোন কারণে যদি তাতে ঠিকমত বাতাস প্রবেশ করতে না পারে, অথবা পথটি সরু হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি হয় তাহলে এক ধরণের শব্দ-কম্পন তৈরি হয়। বিভিন্নভাবে এটা হতে পারে। যেমন- নাকের হাঁড় বাঁকা হয়ে যাওয়া, নাকের এলার্জি বা সাইন্যাস, পলিপ, বৃদ্ধ বয়সে বাতাসের পথ নরম হয়ে যাওয়া বা তাতে চর্বি জমা, শরীরের ওজন বৃদ্ধি, অতিরিক্ত পরিশ্রমজনিত কারণে শারীরিক ক্লান্তি ও অবসাদ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ক্লান্তি ও অবসাদ, ধূমপান, অ্যালকোহল পান, ঘুমের ওষুধ সেবন, থাইরয়েড সমস্যা, গ্রোথ হরমোনের আধিক্য ইত্যাদি। শিশুদের নাকডাকার দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো- নাকের পেছনে এডিনয়েড গ্রন্থির স্ফীতি এবং সর্দিজনিত কারণে নাক জ্যাম হয়ে থাকা।

নাকডাকা প্রতিরোধে করণীয় :

নাকাডাকা কোন রোগ নয়, বরং রোগের উপসর্গ। এই উপসর্গ ঘুমের মধ্যে দেখা দেয়। তাই শোয়ার আগে ও শোয়ার সময় কিছু নিয়ম মেনে চললে এই উপসর্গ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

পাশ ফিরে বা কাঁত হয়ে শোয়া :

পিঠে ভর দিয়ে চিত হয়ে শুলে জিহ্বার মূল এবং নরম প্যালেট গলার পেছনের দেয়ালে সাথে লেগে যায়। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে এক ধরণের শব্দ কম্পন তৈরি হয়। ঘুমানোর সময় চিত হয়ে না শুয়ে পাশ ফিরে বা কোল বালিশ ব্যবহার করে একপাশ হয়ে শুলে ভাল ফল পাওয়া যায়। কেউ যদি ঘুমে নাকডাকা শুরু করে, বিরক্ত হয়ে তার শয্যা-সঙ্গির রুম ত্যাগ করার দরকার নেই, আস্তে করে তাকে পাশ ফিরিয়ে দিলে নাকডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।

উঁচু বালিশ ব্যবহার :

ঘুমানোর সময় বুকের চাইতে মাথা কিছুটা উঁচু থাকে এমন বালিশ ব্যবহার করলে নাকডাকা কমে যায। খেয়াল রাখতে হবে, বালিশ বেশি উঁচু হলে ঘাড় ব্যথা করতে পারে।

মুখ বন্ধ করে ঘুমানো :

অনেকে মুখ হা করে ঘুমান এবং মুখে শ্বাস নেন। এটা নাকডাকার সহায়ক। মুখ বন্ধ করে ঘুমানোর অভ্যাস করলে নাকাডাকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

নির্ধারিত সময়ে ঘুমানো :

নিয়ম মনে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং একই সময়ে বিছানা ত্যাগের চেষ্টা করতে হবে।

রাতের আহার এবং নিদ্রা :

গবেষকরা রাতের বেলায় কম খাওয়া এবং ঘুমানোর অন্তত দু ঘণ্টা আগে আহার গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। মসলাযুক্ত খাবার পাকস্থলিতে গ্যস সৃষ্টি করে, অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে।

ওজন কমানো :

শরীরের ওজন বৃদ্ধি নাকডাকার অন্যতম কারণ। ঘাড়ের দিকে স্থুলতা বেড়ে গেলে গলার ভেতরের পরিধি কমে যায। ঘুমের মধ্যে তা আরো সংকুচিত হয়ে নাকডাকা শুরু হয়। বাড়তি ওজন কমাতে পারলে নাকডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।
ধূমপান, ঘুমের ওষুধ ও অ্যালকোহল : ধূমপানের ফলে ফুসফুসের উপর চাপ সৃষ্টি হয় যা শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ঘুমে নাকডাকা হয়। ঘুমের ওষুধ ও অ্যালকোহল গলার পেছনের অংশের মাংসপেশিকে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে বাধা দেয়। গবেষণায় এর সাথে নাকডাকার সম্পর্ক পাওয়া গেছে। নাকডাকা বন্ধে ধূমপান, ঘুমের ওষুধ ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।

পর্যাপ্ত পানি পান করা :

শরীরে পানি শূণ্যতা দেখা দিলে নাক দিয়ে একপ্রকার আঁঠালো পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। যা নাকাডাকা বাড়িয়ে দেয়। তাই নারী-পুরুষ প্রত্যেককে পর্যাপ্ত পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

নাসারন্দ্রের পথ পরিষ্কার রাখা :

সর্দি-কাশিজনিত কারণে অনেক সময় নাক জ্যাম হয়ে যাায়। সব সময় নাক পরিষ্কার করা দরকার।

ডিভাইস ব্যবহার :

বাজারে নাকডাকা বন্ধে বিভিন্ন ডিভাইস বিক্রি হয়, অনেকে এগুলি কিনে ব্যবহার করেন। এসব ডিভাইস ব্যবহার কতটা নিরাপদ? জে এফ কে মেডিকেল সেন্টারের Clinical neurophysiology and sleep medicine এর পরিচালক সুধাংশু চক্রবর্তী বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডিভাইস ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা :
যে বয়সেই হোক, বিষয়টিকে হাল্কাভাবে না নিয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি সহজে নাকডাকা বন্ধ না হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হোমিওপ্যাথিতে নাকডাকা উপসর্গের ভাল চিকিৎসা আছে।
জিঙ্কাম মেট, কার্বোভেজ, নাক্সভম, অ্যামন কার্ব, ক্যাল্কেরিয়া কার্ব, লাইকোপোডিয়াম, এগারিকাস, ওপিয়াম প্রভৃতি মেডিসিন থেকে লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া যায়। স্থুলতা, ভীরুতা, অল্পে ঠাণ্ডালাগা ও শ্লেষ্মা প্রবণতা, নিদ্রাকালে মাথায় প্রচুর ঘাম প্রভৃতি লক্ষণে ক্যাল্কেরিয়া কার্ব এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, পক্ষাঘাতসদৃশ দুর্বলতা, নিদ্রালুতা, ঘুমে নাকডাকার সাথে গলায় ঘড়ঘড়শব্দ প্রভৃতি লক্ষণে ওপিয়াম প্রয়োগ করে আমি নাকাডাকা রোগীর চিকিৎসায় ভাল ফল পেয়েছি।
ভুল ধারণা- ঘুমে নাকডাকলে অনেকে এটাকে গভীর ঘুমও সুনিদ্রার লক্ষণ মনে করে থাকেন। আসলে বিষয়টি তা নয়। বরং নাকডাকা নানাবিধ জটিলতার লক্ষণ।

সরিষার তেল :

‘নাকে সরিষার তেল মেখে ঘুমানো’ একটি প্রবাদ আছে। মজার ব্যপার, গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে যে, শোয়ার আগে নাকে ২ফোটা খাঁটি সরিষার তেল নাকে দিয়ে ঘুমালে নাকের ছিদ্রপথ পরিষ্কার থাকে, নাকডাকা বন্ধ হয়।

চেম্বার : হোমিও হেলথ হোম, বহদ্দারহাট, চট্টগ্রাম।
মোবাইল : ০১৯৯১৯৪৮৫৯১, ০১৮১৯৩৯৮৩৩৮
ইমেইল : nayeemquaderctg@gmail.com