ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৯

পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার চেতনা ও ইসলামকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে -ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ

বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, আজ পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতার চেতনা ও ইসলামকে পরস্পরের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হচ্ছে অথচ ইসলামই জনগনকে প্রকৃত মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছে। তথাকথিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ও চেতনাধারীরা স্বাধীনতার লাইসেন্স হিসেবে খুন ধর্ষন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে জনগনের স্বাধীনতাকে ধুলিস্যাৎ করছে। গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভোটের স্বাধীনতা হরণ করার মাধ্যমে মূলত বর্তমান সরকার স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি নয়, স্বাধীনতা বিরোধী সরকারে পরিণত হয়েছে। তারা এখন স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় বিরোধী শক্তি। এদেশের জনগণ দেশ ও ধর্ম বিরোধী কোন অপশক্তিকে অতীতে কখনো মেনে নেয়নি এবং ভবিষ্যতেও মেনে নিবে না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় স্বৈরাচারী জালেম শাষকেরা তাদের কর্মের কারনেই ধ্বংস হয়। এই সরকারও তদের অপকর্মের কারণে অচিরেই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি জনগনকে প্রকৃত মুক্তির স্বাদ গ্রহনের জন্য ইসলামকে বিজয়ী করার উদাত্ত আহবান জানান। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী সকলের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট ড.হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সবুর ফকির, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী এডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিশে শুরা সদস্য আমিনুর রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতেই দেশে বিরাজনীতিকরণ শুরু করেছে। স্বাধীনতা অর্জন ও রক্ষায় ইসলামপ্রিয় জনতা বৃহত্তম শক্তি হিসেবে ভুমিকা পালন করছিল অথচ আজকে ইতিহাস পরিবর্তন করে ইসলামপ্রিয় জনতাকে স্বাধীনতার প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর আমীর, সেক্রেটারী সহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। এই সরকার দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। মানুষের অধীকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার আজ ভূলুন্ঠিত। মতপ্রকাশের স্বধীনতা তথা মানুষের কথা বলার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নিয়েছে। মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারছেনা। যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন সরকারের বিভেদের রাজনীতির কারণে তা পুরোপুরি অর্থবহ হয়ে ওঠেনি। স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নে যেখানে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন সেখানে ক্ষমতাসীনদের অপরাজনীতির কারণে তা ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি সরকারকে অপরাজনীতি পরিহার করে সুস্থ ধারায় ফিরে আসার আহবান জানান।
তিনি আরোও বলেন, সাম্য, মৈত্রী, সামাজিক ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও সকল স্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। অথচ এ সরকারের আমলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের অপশাসন, দুঃশাসন ও পর্বত প্রমাণ ব্যর্থতার কারণেই স্বাধীনতার সুফল অর্জন করা সম্ভব হয়নি। দেশে আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি হয়েছে। সরকার ও সরকারদলীয় লোকজন রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাটের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস ও বিদ্যুতের দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধিতে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। এ ছাড়াও চরম নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ে আমাদের মূল্যবোধ ও জাতিসত্তা হুমকির মুখে। আকাশ সংস্কৃতি ও বিজাতীয় সংস্কৃতি এবং সরকারের ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে ধর্মহীন শিক্ষাব্যবস্থা এবং সর্বক্ষেত্রে নাস্তিকতা বিস্তারের ফলে তরুণ প্রজন্ম আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তিনি দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, ইসলাম, গণতন্ত্র রক্ষা ও মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা পালন করার আহ্বান জানান।
পরিশেষে স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি কামনা করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে বিশেষ দোআ অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৯

জনাব আফতাব উদ্দিন মোল্লাকে পুলিশের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রংপুর অঞ্চলের টীম সদস্য ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য এবং চিরির বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব আফতাব উদ্দিন মোল্লাকে আজ ২৮ মার্চ সাড়ে ১১:৩০ তার অফিস থেকে পুলিশের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ২৮ মার্চ প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “জনাব আফতাব উদ্দিন মোল্লাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানী করার হীন উদ্দেশ্যেই পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জনাব আফতাব উদ্দিন মোল্লা একজন জনপ্রিয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়েই সরকার তাকে পুলিশ দিয়ে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করিয়েছে। তিনি কর্তৃত্ববাদী সরকারের জুলুমের শিকার হয়েছেন। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে সরকারের ফ্যাসিবাদী চেহারাই অত্যন্ত নগ্নভাবে ফুটে উঠেছে।
জুলুম নির্যাতন বন্ধ করে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

শোকবাণী ও দোয়া মাহফিলের কর্মসূচী ঘোষণা

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন নিহত, অসংখ্য আহত ও জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ শোকবার্তায় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মো: মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, চকবাজারের অগ্নিকান্ডের মর্মান্তিক ঘটনার রেস কাটতে না কাটতেই আবারও রাজধানীর বনানীর বহুতল এফ আর টাওয়ারের মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় গোটা জাতি গভীর ভাবে শোকাহত ও স্তম্ভিত। পুনরায় এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৫ জন নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেকে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজধানীতে মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলো। দুপুর ১টায় আগুন লাগলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় প্রমাণ হয় দেশে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। জনগণের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে মুখে মুখে উন্নয়নের বুলি দেশের মানুষ শুনতে চায় না। সুতরাং আর কালক্ষেপণ না করে সরকারের উচিৎ এমন দূর্ঘটনা থেকে দ্রুত মানুষকে উদ্ধার ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে সর্বাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ পদ্ধতির ব্যবস্থা করা। আমরা এ ধরণের দূর্ঘটনা রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার-পরিজনদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ প্রদান করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে যার যার সাধ্যমত দূর্ঘটনায় কবলিতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য আহবান জানাচ্ছি। আশা করি সরকার ও সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ এমন দূর্ঘটনা রোধে আরও সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
অগ্নিকান্ডে যারা নিহত হয়েছেন আমরা তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
দোয়া মাহফিলের কর্মসূচী ঘোষণা
মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডে নিহতদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশব্যাপী দোয়া মাহফিলের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশে ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মো: মোবারক হোসাইন ও সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সারাদেশে সকল নেতাকর্মীকে দোয়া দিবস পালনের আহবান জানান। একইসাথে নেতৃবৃন্দ দেশবাসীর কাছেও দোয়া কামনা করেন।

শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৯

হত্যাকারীর রাইফেলে লেখা আছে নব্য ক্রুসেডের মানচিত্র # সালাহ উদ্দিন জাহাঙ্গীর

যারা মনে করছেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে আক্রমণকারী কেবলমাত্র একজন খ্রিষ্টান জঙ্গি, তবে অনেক কিছুই বলা বাকি থাকবে। জুমআর নামাজের জন্য আগত ৫০ জন মুসলিমকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা মোটেও বিকৃত মস্তিষ্ক বা আবেগতাড়িত কোনো ফ্যানাটিকের কাজ নয়। এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছে গভীর অনেক বার্তা এবং ঐতিহাসিক অনেক যোগসাজশ। কীভাবে?
এর জবাব পাওয়া যাবে হত্যাকারী (সন্দেহযুক্ত ব্রেন্টন টারান্ট) ব্যবহৃত অটোমেটিক রাইফেলের মাজল, ম্যাগজিন এবং বাটে লিখিত শব্দ-সংকেতে। রাইফেলজুড়ে যেসব শব্দ-সংকেত লিখিত আছে সেগুলোর প্রায় সবই ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনা ও ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে।
এবং আশ্চর্যের বিষয় হলো, শব্দ-সংকেতের প্রতিটিই ‘ইউরোপে’র ইতিহাসে মুসলিমদের বিভিন্ন পরাজয় বা মুসলিমবিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিকে ইঙ্গিত করে। যেসব ঘটনার সাল উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রত্যেকটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইউরোপের কথিত ‘ক্রুসেড’ বা ‘হলি লিগ’-এর বিভিন্ন যুদ্ধের ইতিহাস জড়িত।
আমরা হত্যাকারীর রাইফেল ও রাইফেলে ব্যবহৃত ম্যাগজিনে লেখা শব্দ-সংকেতের পাঠোদ্ধার করে ইতিহাসের ওইসব ঘটনাবলি পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।

Tours 732 (ব্যাটল অব তুরস ৭৩২ খ্রিষ্টাব্দ)
তুরের যুদ্ধ। ৭৩২ সালে দক্ষিণ ফ্রান্সের তুর ও পোয়াতিয়ে শহরের কাছে ফ্রাংক ও বুর্গুন্দীয় সেনাদের সাথে আরব উমাইয়াহ খিলাফতের সেনাদের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মুসলিম সেনাপতি ছিলেন আন্দালুসিয়ার (স্পেন) তৎকালীন উমাইয়া শাসক আবদুর রহমান ইবনে আবদুল্লা আল-গাফিকি। যুদ্ধে ফ্রাংকরা জয়লাভ করে এবং এর ফলে পশ্চিম ইউরোপে মুসলমানদের অগ্রযাত্রা ব্যহত হয়।
এটি ছিল এক অর্থে ইউরোপের প্রাণকেন্দ্রের বেশ কাছে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের এক গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ। অনেক ইতিহাসবিদ এই যুদ্ধের ফলাফলকে ইউরোপের খ্রিষ্টানদের জন্য এক যুগান্তকারী ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। তাদের মতে এই যুদ্ধে খ্রিষ্টানরা পরাজিত হলে গোটা ইউরোপের ইসলামীকরণের সম্ভাবনা ছিল এবং তা হলে ইউরোপের ইতিহাসই পালটে যেত।

ব্যাটল অব তুরস
আবার কেউ কেউ মনে করেন মুসলমানরা ইউরোপের জন্য এত বড় হুমকি ছিল না এবং এই যুদ্ধের ফলাফল কেবল পশ্চিম ইউরোপের শক্তিশালী ক্যারোলঙ্গীয় ফ্রাংক রাজবংশের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি নির্দেশ করে।
এই যুদ্ধে বিজয়ের পরে ফ্রাংকেরা মুসলমানদের ফ্রান্সের বাইরে আরও দক্ষিণে স্পেনে হটিয়ে দেয়।
Acre 1189 (আক্রা ১১৮৯ : জেরুজালেম দখল)
১১৮৭ সালের সেপ্টেম্বরের ২০ তারিখ শুরু হওয়া বিখ্যাত হাত্তিন যুদ্ধে বিখ্যাত মামলুক সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবি বিজয় লাভ করেন। এরপরই তিনি জেরুজালেম অবরোধ করেন এবং অক্টোবরের ২ তারিখে জেরুজালেম দখল করেন।
জেরুজালেমের পতনের পর ইংল্যান্ডের রাজা রিচার্ড দ্য লায়নহার্টের উদ্যোগে ও অর্থায়নে শুরু হয় থার্ড ক্রুসেড (১১৮৯-১১৯১)। টায়ার শহর থেকে ক্রুসেডার খ্রিষ্টানরা যোগ দেয় তার সাথে। আক্রা শহরে মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করে রিচার্ডের বাহিনী। নারী ও শিশুসহ প্রায় তিন হাজার বন্দী মুসলিমকে হত্যা করেন রিচার্ড।
এরপর ১১৯১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আরসুফ যুদ্ধে সালাহউদ্দিনের বাহিনীর মুখোমুখি হন রিচার্ড। সে যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হন সালাহউদ্দিন, যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হন বাহিনীসহ। রিচার্ড জাফফা শহর দখল করে নেন।

Sigismund of Luxembourg (কিং সিগিসমুন্ড অব লুক্সেমবার্গ ১৩৬৮-১৪৩৭)
সুলতান প্রথম বায়েজিদের শাসনামলে উসমানি সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল বোর্সা। ইউরোপের বুলগেরিয়া, বসনিয়া, সালানিক ও আলবেনিয়া বিজিত হয় সুলতান প্রথম বায়েজিদের হাতে।

১৩৯৬ সালে ইউরোপ থেকে মুসলমানদের উৎখাত ও বিতাড়িত করতে ১৫টি খ্রিষ্টান দেশ সম্মিলিত আক্রমণ শুরু করে মুসলমানদের ওপর, এর প্রতিরোধে সুলতান প্রথম বায়েজিদ অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন করেন। ইতিহাসের প্রসিদ্ধ নিকোপলিস যুদ্ধে তাঁর নেতৃত্বে জয় ছিনিয়ে আনে উসমানি সৈন্যরা। পরাজয়বরণ করে ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ ইউরোপের সম্মিলিত সামরিক শক্তি।
এই ইতিহাসের হাত ধরেই চলে আসে সিগিসমুন্ড অব লুক্সেমবার্গ-এর নাম। সে ছিল রোমান সম্রাট চতুর্থ চার্লসের ছেলে। জন্মগ্রহণ করে ১৩৬৮ সালে ন্যুরেমবার্গে। পিতার অধীনে সে শাসক ছিল একাধারে হাঙ্গেরি, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, বোহেমিয়া এবং সর্বশেষ রোমান সম্রাট ছিল ১৪৩৩ থেকে ১৪৩৭ পর্যন্ত।

চতুর্দশ শতকের মাঝামাঝি থেকে উসমানি সাম্রাজ্য বড় হতে থাকে এবং মুসলিমদের হাতে একে একে পতন ঘটতে থাকে দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন শহর। ১৩৯৬ সালে সিগিসমুন্ড অব লুক্সেমবার্গ যখন হাঙ্গেরির শাসক তখন হাঙ্গেরির পোপ নবম বনিফেস মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডের ডাক দেন। তার ডাকে ফ্রান্সের নেতৃত্বে একীভূত হয় হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ভেনিস, কন্সটান্টিনোপলসহ প্রায় ১৫টি খ্রিষ্টান দেশ। লক্ষ্য: উসমানি মুসলিমশক্তিকে প্রতিহত করা।
অবশেষে নিকোপলিস যুদ্ধে মুখোমুখি হয় উভয় পক্ষ। একদিকে সিগিসমুন্ড অব লুক্সেমবার্গ-এর নেতৃত্বে ৯০ হাজার খ্রিষ্টীয় ক্রুসেডার সৈন্য, অপরদিকে অটোমান সুলতান প্রথম বায়েজিদের সঙ্গে ১ লাখ ৪০ হাজার মুসলিম যোদ্ধা। ১৩৯৬ সালে ২৫ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত যুদ্ধে খ্রিষ্টীয় বাহিনী সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয় এবং সিগিসমুন্ড অব লুক্সেমবার্গ পালিয়ে যায়।

তবে এ যুদ্ধে পরাজিত হলেও ১৪০৮ সালে সিগিসমুন্ড ৫০ হাজার ক্রুসেডার নিয়ে বসনিয়া আক্রমণ করে এবং নির্বিচারে গণহত্যা চালিয়ে কয়েক হাজার মুসলিমকে হত্যা করে।
পরবর্তীতে উসমানি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে সে আরও একাধিক ক্রুসেড আক্রমণ পরিচালনা করে।
lepanto 1571 (ব্যাটল অব লেপান্তো ১৫৭১)
লেপান্তোর যুদ্ধ ইতিহাস-বিখ্যাত। ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ নৌযুদ্ধ বলা হয় ভূমধ্যসাগরের লেপান্তো নৌযুদ্ধকে।
ইউরোপজুড়ে খ্রিষ্টীয় ধর্মরক্ষার জন্য ভেনিস রিপাবলিক এবং স্প্যানিশ সাম্রাজ্য মিলে গির্জার সহায়তায় গঠন করে হলি লিগ – ‘পবিত্র সেনাদল’। যাদের লক্ষ্য ছিল: ক্রমবর্ধমান উসমানি তথা মুসলিম শাসনকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশ করতে না দেয়া।
এ লিগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পোপ পঞ্চম পিয়াস এবং পরিচালনা করতেন জন অব অস্ট্রিয়া। সার্বিক অর্থ সহায়তা দেয়া হতো স্পেনের শাসক দ্বিতীয় ফিলিপ এবং ভেনিস সরকারের পক্ষ হতে।

১৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে উসমানি সুলতান ছিলেন দ্বিতীয় সেলিম। তার নৌবাহিনীর অন্যতম সেনাপতি ছিলেন অ্যাডমিরাল আলি পাশা। এ অ্যাডমিরাল ১৫৭১ সালের ৭ অক্টোবর ২৮৭টি যুদ্ধজাহাজ, ২২২টি গ্যালি (নৌযুদ্ধযান বিশেষ) এবং ৫৬টি গ্যালিয়টস নিয়ে পেত্রাস উপসাগরে খ্রিষ্টান ‘হলি লিগের’ মুখোমুখি হন।
খ্রিষ্টান নৌবাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন অ্যাডমিরাল জন অব অস্ট্রিয়া স্বয়ং, যিনি স্পেনের শাসক দ্বিতীয় ফিলিপসের সৎভাই (অবৈধ) ছিলেন; এবং লুইস ডে রেকুয়েসনেস, জন আলভারো ডি বাজান এবং গিয়ানান্দেরা ডরিয়া।
অবশেষে ৭ অক্টোবর ইয়োনিয়ান উপসাগরের লেপান্তো অঞ্চলে সংঘটিত ইতিহাসের ভয়াবহতম নৌযুদ্ধে মুসলিম বাহিনী পরাজিত হয় খ্রিষ্টীয় হলি লিগের কাছে।

ধারণা করা হয়, প্রায় ৪০ হাজার উসমানি সেনা নিহত হয় এ যুদ্ধে এবং প্রায় আড়াই শ যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস হয়। খ্রিষ্টান শক্তির ১২ হাজার যোদ্ধা নিহত হয় যুদ্ধে।
[হত্যাকারীর ব্যবহৃত ম্যাগজিনে আরও কিছু নাম রয়েছে, যেমন: Sebastiano Venier (সেবাস্তিয়ানো ভেনিয়ার) ছিল ১৫৭১ সালের লেপান্তো যুদ্ধের অন্যতম নৌসেনাপতি।
Marcantonio Colonna (মার্কান্টোনিও কলোনা)ও ছিল ১৫৭১ সালের লেপান্তো যুদ্ধের অন্যতম নৌসেনাপতি।]
Vienna 1683 (ব্যাটল অব ভিয়েনা ১৬৮৩)
উসমানি খেলাফতের সুলতান তখন চতুর্থ মুহাম্মদ। তিনি তার প্রধান উজির কারা মুস্তফা পাশার অধীনে বিরাট এক সেনাদল পাঠান ভিয়েনা (বর্তমান সুইজারল্যান্ডের রাজধানী) দখল করতে। ভিয়েনা তখন হাঙ্গেরির অধিভুক্ত ছিল এবং এর কিছু অংশ ছিল উসমানি খেলাফতের করতলগত। কারা মুস্তফা পাশা ১৬৮৩ সালের জুলাই মাসের ২ তারিখে ভিয়েনা অবরোধ করেন।
দুই মাস অবরোধের পর সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে ভিয়েনাকে রক্ষা করতে এবং উসমানি সেনাবাহিনীকে পশ্চিম ইউরোপ থেকে হটিয়ে দিতে তৎকালীন রোমান সম্রাট এবং পোল্যান্ড ও লিথুনিয়া সরকার এক যৌথবাহিনী গঠন করে। এর নাম দেয়া হয় ‘হলি লিগ’ অর্থাৎ, পবিত্র সেনাদল। যেমনটা একাদশ ও দ্বাদশ শতকে ক্রুসেড বাহিনী তৈরি করা হয়েছিল। তাদের লক্ষ্য ছিল, কোনোভাবেই উসমানি খেলাফতের মুসলিম শক্তি যেন পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশ করতে না পারে।

অবশেষে ১৬৮৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১২ তারিখে উসমানি ও খ্রিষ্টান হলি লিগের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে উসমানি বাহিনী পরাজিত হয় এবং পশ্চিম ইউরোপে ইসলাম প্রবেশের দ্বার চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
এ যুদ্ধে ১২ থেকে ১৫ হাজার উসমানি সেনা প্রাণ হারায়। হলি লিগের প্রায় ৫ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়।
যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার কারণে এ বছর ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখে উসমানি স্পেশাল ফোর্স ‘জানেসির’ বাহিনী তাদের সেনাপতি ও উজির কারা মুস্তফা পাশাকে বেলগ্রেডে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:
সবচে লক্ষণীয় বিষয় হলো, হত্যাকারীর শব্দ-সংকেতে উল্লিখিত অধিকাংশ লড়াই ছিল ইউরোপীয় বনাম উসমানি সাম্রাজ্যের এবং আরও লক্ষণীয় বিষয়, প্রতিটা লড়াই কেবল রাজ্যজয় বা আধিপত্য বিস্তারের জন্য সংঘটিত হয়নি; হয়েছিল মুসলিম খেলাফত তথা ইসলামকে পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশে সর্বাত্মক বাধা প্রদানের জন্য।

অন্যদিকে, যেসব ঘটনার উল্লেখ এখানে রয়েছে, প্রতিটি ঘটনাই ছিল খ্রিষ্টান রাজা বা পোপদের দ্বারা পরিচালিত ক্রুসেড বা হলি লিগ-এর দিকে ইঙ্গিতবহ। আবার যেসব ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তারাও প্রত্যেকেই ছিলেন ক্রুসেড বা হলি লিগ পরিচালনাকারী ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।
সুতরাং, এই ঘটনাকে নিছক একজন ধর্মীয় চরমপন্থী কর্তৃক ‘বিচ্ছিন্ন’ হত্যাকাণ্ড বলে পার পাওয়ার কোনো উপায় নেই। এটা অবশ্যই সংঘবদ্ধ ধর্মীয় ফ্যানাটিকদের দূরদর্শী পরিকল্পনার অংশবিশেষ। এই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে নতুন করে সংগঠিত কোনো ক্রুসেডীয় সংগঠনের প্রত্যক্ষ যোগসাজশ রয়েছে।
যে ক্রুসেডের নামে একাদশ শতকে শুরু হওয়া ক্রুসেড শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্মের নামে মানুষ খুনের যে বৈধতা জারি করে রেখেছিল, এই ঘটনা সেই ক্রুসেডেরই নব্য দামামা শুরু করেছে।
‘ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম’ ‘ইসলাম চরমপন্থার ধর্ম’ ‘ইসলামে জিহাদের কথা বলে’… এইসব বলে বলে যারা ইসলামকে একটা ফ্যানাটিক ধর্মে পরিচিত করতে ব্যস্ত, তাদের সামনে এই হত্যাকারী নিজেই খ্রিষ্টধর্মের ইতিহাস তুলে ধরেছে। ঐতিহাসিকভাবে খ্রিষ্টধর্ম কতটা নৃশংস, মানুষ হত্যার বৈধতা কীভাবে ইতিহাস ধরে ধরে তারা লালন করে-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ আজ পৃথিবীর সামনে খোলাসা হয়ে গেল।

মসজিদে সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাত জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীদের সন্ত্রাসী জংঙ্গী হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছে শহীদি কাফেলা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সংগঠনের প্রচার বিভাগের এস আলমের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শহীদি কাফেলার মুহতারাম আমির মকবুল আহমাদ এবং সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় এ যুক্ত বিবৃতি দেন।
.
তারা বলেন, ‘বন্ধু প্রতীম শান্তি প্রিয় দেশ নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে আজ জুমার নামাজে প্রায় একই সময় বন্দুকধারী সন্ত্রাসী, জংঙ্গীদের গুলিতে তিন বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকে।
এ নির্মম ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এ ঘটনায় বিশ্ববাসীর মতো আমরাও হতবাক। এ ধরনের ঘটনা নিউজিল্যান্ডে নতুন হলেও সাম্প্রতিক বিশ্বের কোনো কোনো দেশে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।’
.
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সদস্যরা ওই মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গেলেও তারা মসজিদে প্রবেশ করার আগ মুহূর্তেই এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় তারা। তাদের কোনো ক্ষতি না হওয়ায় আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। আমরা মনে করি,জংঙ্গী, সন্ত্রাসীদের কোনো দেশ, দল ও ধর্ম নেই। তাদের একটিই পরিচয় তারা সন্ত্রাসী। গুটি কয়েক সন্ত্রাসীর কাছে শান্তি প্রিয় বিশ্ববাসী জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জাতি, ধর্ম, দল- মত-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।
.
আমরা আশা করি নিউজিল্যান্ড সরকার সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেবে।
সন্ত্রাসী হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করার জন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি এবং তাদের শোক সন্তপ্ত পরিবার- পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
.

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ.
"হে আমাদের রব! আমরা যদি ভুলে যাই, অথবা ভুল করি তাহলে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব, আমাদের উপর বোঝা চাপিয়ে দেবেন না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ্য আমাদের নেই। আর আপনি আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আর আমাদের উপর দয়া করুন। আপনি আমাদের অভিভাবক। অতএব আপনি কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।" (সূরা বাকারাঃ২/২৮৬)

বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০১৯

দাম্পত্যসম্পর্ক বাঁচানোর কৌশল


বোতল উল্টিয়ে মেঝেতে পানি ফেলে ঘরময় সয়লাব, আর সেটা থেকে সঙ্গীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া? আসলে ছোট বিষয় থেকেই বড় কিছু হয়। আর এর অন্যতম কারণ হতে পারে অনুভূতিতে চর পড়া।
পুরান চাল ভাতে বাড়লেও, সঠিক মাপে পানি কিন্তু লাগবে। সম্পর্কেও তাই জলীয়ভাব ফেরাতে কিছু কৌশল অবলম্বন করাই যায়। আর সেটা দুজনের পক্ষ থেকেই করতে হবে। এই বিষয়ে প্রকাশিত সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে কয়েকটি কৌশল এখানে দেওয়া হল। যেগুলো চর্চা করলে আশা করা যায় দাম্পত্য সম্পর্কটা বেঁচে যাবে।
.
অন্তরঙ্গতা বাড়াতে -
কিছু না বলে অন্তত দুই মিনিট দুজন দুজনের চোখে চোখ রাখুন। একসঙ্গে যখন শুয়ে থাকবেন তখন নিজেদের চাদর দিয়ে ঢেকে ফিসফিস করে কথা বলুন। আপনি যদি প্রথম ফিসফিসানি শুরু করেন তবে আপনার সঙ্গী নিজে থেকেই সেভাবে জবাব দেবে। যা ঘনিষ্টতা বাড়াবেই। ফোনেও একই কাজ করতে পারেন।
.
একে অপরের কথা শুনুন -
মনে করছেন এই কাজ তো করেনই। তারপরও সক্রিয়ভাবে শুনতে বরং সঙ্গীকে যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে বলুন। তারপর তার প্রতিটি বাক্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকুন। কথা মাঝে কথা না বলে, মাঝে মাঝে উচ্চারণ করুন.. হ্যা আমি শুনছি।
কোনো কিছু ভুল বুঝলে সেটা সঙ্গী ধরিয়ে দেয়। একই ভাবে আপনিও তাই করুন। তর্ক নয়, এটা শুধু মাত্র সাধারণ কথাবার্তা দিয়েই সম্ভব।
.
প্রার্থণা করা: একসঙ্গে প্রার্থণা করতে পারেন। প্রার্থণার বিষয় দুজন মিলে ঠিক করে নিতে পারেন।
.
যদি পারতাম: এই বাক্য হতে পারে অন্তরঙ্গতা বাড়ানোর কৌশল। সঙ্গীকে বলুন ‘ইশ আমি যদি তোমার জন্য রান্না করতে পারতাম’, বা ‘আমি যদি তোমাকে আরও ভালোবাসতে পারতাম’। ন্যাকা ন্যাকা মনে হলেও- এই কথাগুলো বলেই দেখুন না, তারপর কি হয়!
.
স্মৃতিচারণ: দুজনের অনেক মধুর স্মৃতি আছে। সেগুলো নিয়ে অন্তরঙ্গ হয়ে আলাপ করুন। অতীতের অন্তরঙ্গ থাকার সময়গুলোর জায়গা, গন্ধ যখন স্মৃতিপটে চলে আসবে তখন বর্তমান সময়েও সেই ভাব দুজনের মধ্যে খেলা করতে থাকবে।
.
নীরবতা: দিনের একটা সময় দুজনেই চুপ থাকার সময় নির্ধারণ করে নিন। নীরব থেকেও অনেক কিছু অনুভব করা যায়।
.
কথা বলে সম্পর্ক গাঢ় করতে -
যেকোনো বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলুন। গবেষণায় দেখা গেছে, সুখী দম্পতিরা প্রতিটা নেতিবাচক কথার বিপরীতে অন্তত পক্ষে পাঁচটা করে ইতিবাচক কথা বলে। সঙ্গীর যে কোনো কাজ, যেটা আপনার ভালোলাগে, সেটা তাকে জানান। সেটা নিয়ে গল্প করুন। সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ছোট থাকতে কী করতে পছন্দ করতেন। বলতে পারেন- এই পোশাকে তোমাকে আকর্ষণীয় লাগছে। আর পোশাক নির্বাচনেও সাহায্য করুন। সঙ্গী কোনো বিষয়ে ভালো করলে সেটা নিয়ে প্রশংসা করুন। বলুন- ‘তুমি আমাকে আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছ’। কীভাবে সেটাও জানান। কোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলে, সঙ্গীকে সে বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে বলতে পারেন। যে বিষয় নিয়ে চিন্তিত সেটা সঙ্গীকে জানান। সে হয়ত কোনো সমাধান দিতে পারবে না, বা কোনো কথা বলবে না। তবে হাত ধরা কিংবা জড়িয়ে ধরবে। যা আপনার উদ্বগ্নভাব কাটাবে, সেই সঙ্গে সঙ্গীও হবে সহমর্মী।
.
সঙ্গী কোনো আচরণ আপনাকে রাগালে -
কোনো কিছু বলার আগে থামুন। আর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন ‘কী কারণে এত রাগ করছি’। ছোট যেকোনো বিষয় গভীর সমস্যাকে ঢেকে রাখে। আর যদি মনে করেন বিষয়টা বড়, তাহলে আপাতত মুখ সামলান। পরে কথা বলুন যখন মাথা হবে ঠাণ্ডা।
তার দুঃখ প্রকাশ মেনে নিন। রেগে থাকার পরও যদি আপনার সঙ্গী পুনরায় মিলতে চায় তবে তাকে ফেরাবেন না। এমন বিষয়ে ক্ষমা চান যেটা নিয়ে আগে কখনও চাননি। এমনকি সেটা আপনার দোষ না হলেও। নিজেদের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে বিনা সংকোচে কথা বলুন। যদি সঙ্গীকে গোপন কোনো কথা জানাতে চান, তবে বলার আগে সেটা অন্তত পাঁচভাবে লিখুন। এখন পাঁচ রকম উত্তর খুঁজে বের করুন, যা আপনার সঙ্গী বলতে পারে। তারপর যেটা মনে হবে সবচেয়ে ভালো উপায় বলার, সেভাবে সঙ্গীকে জানান। সঙ্গীর কোনো বিষয় বা আচরণে আপনার মন খারাপ হয়। সেটা নিয়ে তাকে দোষারোপ না করে বরং সুন্দর ভাবে বলুন। যেমন সঙ্গীকে বলতে পারেন, ‘তোমাকে একটা কথা বলার ছিল, মাঝে মাঝে আমার খুব খারাপ লাগে যখন তুমি আমার সাথে এরকম কর(বা যে বিষয়টা নিয়ে খারাপ লাগে সেটা বলুন)। তুমি আর এরকম করো না।’ আগের ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে ভাবনাচিন্তুা করুন। সেখান থেকে কী কী বিষয় শিখলেন সেটা বের করার চেষ্টা করে সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ করুন। আরও ভালো হয় যেসব বিষয় নিয়ে মনমালিন্য হয়েছে সেসব বিষয়ে ভিন্নভাবে কিছু করার আছে কিনা সেটা বের করার চেষ্টা করতে পারেন। দিতে পারেন ‘স্পেশাল ট্রিট’। এমনকি সঙ্গী ডায়েটে থাকলেও তাকে নিয়ে খেতে যান। হতে পারে সেটা প্রেমের প্রথমদিকে কাটানোর সময়গুলোর কোনো একটি রেস্তোরাঁ। এক সঙ্গে রান্না করুন। কাজ ভাগ করে নিন। আপনি হয়ত রান্না পারেন না, তাতে কি! আলু, কপিতো টুকরা করে দিতে পারবেন।
.
আল্লাহ পাক দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিকের বর্ণনা করেছেন। সুরা আর রূমের মধ্যে তিনি বলেন-“তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে ইহাও একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতির মধ্য হইতে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের নিকট পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও স্বহৃদয়তার সৃষ্টি করে দিয়েছেন”। (রূম-২১) এ আয়াত থেকে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিক পাওয়া যায়। (১) নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজত। (২) ভালবাসা ও আন্তরিকতা।

১৯৪৭ সাল থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আছে।


এমন অভিযোগ করেছেন ভারতের বুকার পুরস্কার জয়ী লেখিকা ও সমাজকর্মী অরুন্ধতী রায়। ভারতের সংবিধান রচয়িতা ড. বি আর আম্বেদকরের বই ‘অ্যানিহিলেশন অফ কাস্ট’ (জাতি বর্ণের নাশ) -এর তামিল অনুবাদ প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। উল্লেখ্য, বইটিতে অরুন্ধতীর টীকা সংযুক্ত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় সেনাবাহিনী নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, আসাম, গোয়া, জুনাগাদ, কাশ্মির এবং ছত্রিশগড়ের জনগণের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে। কারা এই জনগণ? তারা হলো খ্রিস্টান, মুসলিম, শিখ, দলিত সম্প্রদায়।’
এর আগে বহুবার জনগণের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর ব্যবহার নিয়ে সাড়া জাগানো মন্তব্য করেছেন তিনি। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত ‘আফজাল গুরুর ফাঁসি ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য কলঙ্ক’ শীর্ষক এক নিবন্ধে অরুন্ধতী রায় বলেছিলেন,‘আফজাল গুরুর সত্যিকার কাহিনী ও ট্র্যাজেডি শুধু আদালতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই,প্রকৃত ঘটনা জানতে হলে কাশ্মির উপত্যকার ঘটনা জানতে হবে। এটি একটি পরমাণু যুদ্ধক্ষেত্র এবং পৃথিবীর সবচেয়ে সামরিকীকরণ এলাকা। এখানে রয়েছে ভারতের পাঁচ লাখ সৈনিক। প্রতি চারজন বেসামরিক নাগরিকের বিপরীতে একজন সৈন্য! আবু গারিবের আদলে এখানকার আর্মি ক্যাম্প ও টর্চার কেন্দ্রগুলোই কাশ্মিরীদের জন্য ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বার্তাবাহক। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিতে সংগ্রামরত কাশ্মিরীদের জঙ্গি আখ্যা দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬৮ হাজার মুক্তিকামীকে হত্যা করা হয়েছে এবং ১০ হাজারকে গুম করা হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছে আরও অন্তত এক লাখ লোক।’

‘দি গড অফ স্মল থিংস’ বইয়ের জন্য বুকার পুরস্কার জয়ী এই লেখিকা, দীর্ঘদিন ধরে ভারতে সামাজিক অবিচারের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং সেনাবাহিনী ‘ঔপনিবেশিক’ আদলে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেছেন। 

বিভিন্ন জাত, গোত্র ও সম্প্রদায়ের প্রতি এই অবহেলাকে তিনি ‘নিষ্ঠুর সামাজিক যাজকতন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন এই বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় আনতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনা করা উচিত।’

তিনি ভারতের বর্তমান অবস্থাকে আমেরিকার নাগরিক অধিকার আন্দোলন (সিভিল রাইট মুভমেন্ট) এর সময়কার পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেন। আমেরিকার কারাগারগুলো থেকে আফ্রিকান আমেরিকানদের মুক্ত হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারতেও বহু মুসলিম, শিখ ও দলিত সম্প্রদায়ের লোক বন্দি রয়েছেন। বিরাজমান সমস্যাকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন ‘জাত হচ্ছে পুঁজিবাদের মূল।’

এসময় অরুন্ধতী জানান, কথা বলার জন্য তাকে আরও সতর্ক থাকতে হচ্ছে। কারণ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জে এন সাইবাবার জামিন না মঞ্জুরের বিষয়ে কথা বলার অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

এটি প্রথমবার নয় যখন অরুন্ধতী রায় আধুনিক ভারত রাষ্ট্রের এই রোগাক্রান্ত ক্রটিগুলোর দিকে আঙুল তুললেন। এসব সমস্যা নিয়ে এর আগেও তিনি খোলা-মেলা মতামত দিয়েছেন। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মির ও মনিপুরে ধর্ষণকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

ন্যায়-সমতা আর মুক্ত পৃথিবীর পক্ষের একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিশ্বজুড়ে অরুন্ধতী এক পরিচিত নাম। নিজ রাষ্ট্র ভারত থেকে শুরু করে দুনিয়ার সব পরাক্রমশালী রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তুলে যাচ্ছেন তিনি।

শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯

সিইসির বক্তব্যের সূত্র ধরে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন বাতিল চায় জামায়াত

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দেয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে বিগত ৩০ ডিসেম্বরের ব্যালট ডাকাতির প্রহসনের নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করে দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ৯ মার্চ (শনিবার) এক বিবৃতিতে বলেন,
“প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা গত ৮ মার্চ আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রদত্ত এক বক্তব্যে স্বীকার করে নিয়েছেন, ৩০ ডিসেম্বর নয়, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ব্যালট পেপার কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। তার বক্তব্যে প্রমাণ হয়, ৩০ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পরিচালনায় ভোটারবিহীন নির্বাচনের নাটক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তার এ বক্তব্য প্রদানের পরে ৩০ ডিসেম্বরের কথিত নির্বাচন রাজনৈতিক, সাংবিধানিক, আইনগত ও নৈতিক বৈধতা হারিয়েছে। তিনি সাক্ষ্য দিলেন, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
শফিকুর রহমান আরো বলেন, ‘কারা আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছে, এ জন্য কারা দায়ী, কাদের কী করা প্রয়োজন, সেই শিক্ষা দেয়ার ক্ষমতা, যোগ্যতা নির্বাচন কমিশনের নেই। কী কারণে এগুলো হচ্ছে তা বলারও কোনো সুযোগ নেই।’
এই কথা বলার পর বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ গোটা নির্বাচন কমিশনেরই স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে চলে যাওয়া উচিত। নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়িত্বে থাকার নৈতিক ও সাংবিধানিক কোনো অধিকারই তাদের নেই। তাদের ষোলকলা ব্যর্থতার কথা তারা নিজেরাই স্বীকার করে নিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে ৩০ ডিসেম্বরে ব্যালট ডাকাতির নির্বাচনের দায়-দায়িত্ব বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকারের ওপর চাপালেন। এ থেকে দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, দেশে সম্পূর্ণ কর্তৃত্ববাদী সরকারের শাসন চলছে। যেখানে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও মুখ খুলে কথা বলতে পারছেন না। আজকে জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, এ সরকারে অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা আদৌ সম্ভব নয়।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল বলেন, ৩০ ডিসেম্বর জালিয়াতি, ভোটকেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতির মাধ্যমে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বর সকালে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করার আগেই প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র দখল করে বিরোধী দলীয় জোটের প্রার্থীদের এজেন্টদেরকে জোর করে বের করে দেয়। প্রার্থীদের মারপিট করে আহত করে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৯ ডিসেম্বর রাতে ও ৩০ ডিসেম্বর সকালে এক নিকৃষ্টতম ব্যালট ডাকাতির নির্বাচনের নাটক করা হয়েছে। এ নির্বাচন সব বিরোধী দলীয় জোট, দল ও জনগণ ঘৃণার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ নির্বাচনের কোনো ধরনের বৈধতা নেই।
এ অবস্থায় অবিলম্বে দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনরায় গঠন করে তাদের অধীনে জাতীয় সংসদের নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান শফিকুর রহমান। অন্যথায় দেশ গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ -Md Matiur Rahman Akanda



।।এক।।
জামায়াত নিছক কোন রাজনৈতিক দল নয়।এটা একটি পূর্নাংগ ইসলামী আন্দোলন।রাজনীতি ইসলামী আন্দোলনের একটি অংশ ।আল্লাহভীরু সৎ, যোগ্য নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের ইহলৌকিক কল্যান সাধনের লক্ষেই জামায়াত রাজনীতি করে।জামায়াত মনে করে মানুষের সামগ্রিক জীবনের মুক্তি ও কল্যাণ আল্লাহর বিধান অনুসরনের মাধ্যমেই হতে পারে।
নেতৃত্বের পরিবর্তনের জন্য জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক পথ অনুসরন করে।জবর দস্তি করে ক্ষমতা দখলের কোন লক্ষ জামায়াতের নেই।এ ধরনের কোন কর্মসূচিও জামায়াতের নেই।
যে কোন আন্দোলনের সফলতা কতগুলো বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে যার অনেকগুলোই জামায়াতের মধ্যে বিদ্যমান:
1. আদর্শ: আদর্শ ছাড়া কোন আন্দোলন সফল হতে পারেনা।ইসলাম মানবজাতির মুক্তির একমাত্র আদর্শ। জমায়াতের আদর্শ হচ্ছে ইসলাম।জামাতের আকীদা ত্রুটিপূর্ণ বলে যত কথা বলা হয়েছে তা সঠিক প্রমানিত হয়নি।
2. তরুনদের অংশগ্রহন: কোন আন্দোলনে তরুনরা যখন ব্যাপক ভাবে অংশগ্রহন করে তখন বুঝতে হবে ঐ আন্দোলন সাফল্যের দিকে যাচ্ছে।শত প্রতিকুলতা সত্বেও প্রতি বছর হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রশিবিরে যোগদিচ্ছে।ছাত্রজীবন শেষ হবার পর এদের প্রায় সকলেই জামায়াতে যোগ দিচ্ছ ।ছাত্র জীবনে যারা ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পায়নি এমন বহু যুবক কর্মজীবনে প্রবেশ করে জামায়াতে যোগ দিচ্ছে।
3. সংগঠন: যে কোন আন্দোলনের সফলতার জন্য প্রয়োজন সংগঠন।মজবুত সংগঠন ছাড়া কোন আন্দোলনই সফলতা অর্জন করতে পারেনা।সংগঠনের জন্য চিন্তার ঐক্য,ভ্রাতৃত্বপূর্ন সম্পর্ক,পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ,স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার,আভ্যন্তরীন প্রানবন্ত পরিবেশ ইত্যাদি অপরিহার্য।এর সবগুলোই জামায়াতে ইসলামীতে বিদ্যমান।
4. নেতৃত্ব :আন্দোলন-সংগঠন মানেই নেতৃত্ব। নেতৃত্বকে কেন্দ্র করেই সংগঠন গড়ে উঠে।ইসলামী আন্দোলন নেতৃত্ব কেন্দ্রীক।গতিশীল নেতৃত্বের মাধ্যমে জামায়াত তার যাত্রালগ্ন থেকেই শত বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করে সামনে অগ্রসর হয়েছে।সাধারন শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও জামায়াত নেতৃবৃন্দ কুরআন হাদীসের উপর গভীর জ্ঞান রাখতেন।একাধারে ইসলাম ও আধুনিক জ্ঞানের উপর দখল, লেখনী ও বিশ্লেশনী শক্তি, বাগ্নিতা,উত্তম আমল, উন্নত নৈতিকতা, ঈমানের দৃঢতা,আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা,কর্মীদের সাথে আচরন জামায়াত নেতৃবৃন্দকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিল।শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ফাঁসি হওয়ার পর নেতৃত্বের সংকট তৈরী হয়েছে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু জামায়াত এমন এক ‘সিস্টেম’- তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে যে জামায়াতের সিস্টেমটাই নেতৃত্ব। সুতরাং জামায়াতে নেতৃত্বের সংকট হবেনা ইনশাআল্লাহ।মানুষকে প্রভাবিত করার যে সম্মোহনী চরিত্র তা যৌথভাবেই জামায়াত নেতৃত্বের মধ্যে তৈরী হবে ইনশাআল্লাহ।
5. ত্যাগ কোরবানী: আন্দোলনের জন্য প্রয়োজন ত্যাগ ও কুরবানীর।নবীকরিম (সা:) ও তার সংগী সাথীদের সীমাহীন ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে রাসুল (সা:) এর নেতৃত্বে ইসলাম কায়েম হয়েছিল।বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির দীর্ঘদিন যাবত সীমাহীন জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হাত-পা-চোখ সর্বোপরি শাহাদতের নজরানা পেশ করে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।জামায়াত নেতৃবৃন্দ মাথা উঁচু করে ফাঁসির মন্চে গিয়েছেন। এসব ঘটনা মানুষের হৃদয়কে আন্দোলিত করছে। কালামে হাকীমে আল্লাহ বলেছেন:"নিশ্চয়ই যেসব লোক মহান আল্লাহর মনোনীত জীবনাদর্শ ইসলামের প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করেছে, এ বিধান অনুসারে সৎকর্মসমূহ সম্পাদন করেছে এবং
এ বিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষে আন্দোলন -সংগ্রাম করতে গিয়ে নির্যাতন সহ্য করেছে, করুনাময় আল্লাহ তায়ালা অতি শীঘ্রই তাদের জন্যে সাধারন মানুষের অন্তরে প্রবল আকর্ষণ ও মমত্ববোধ সৃষ্টি করে দেবেন। "(সূরা মার্ ইয়াম-৯৬)। জামাতের প্রতি সাধারন মানুষের সহানুভূতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
6. দেশ ও জাতি গঠনে অবদান: যে দল বা সংগঠন দেশ ও জাতি গঠনে কোন অবদান রাখতে পারেনা তারা সফলতার আশা করতে পারেনা।জামায়াত বিগত ৪৮ বছর যাবত দেশকে গড়ে তোলার জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে চলছে।স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্হার প্রবর্তক হচ্ছে জামায়াত। এ ব্যবস্হার অধীনে ৩ টি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহনযোগ্য নির্বাচন সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়ে প্রমানিত হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য জামায়াত উদ্ভাবিত কেয়ারটেকার সরকারের বিকল্প নেই। জামায়াতের মন্ত্রীগণ সততা নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে জাতির উন্নয়নে যে অবদান রেখেছেন তা সর্ব মহলে স্বীকৃত।

মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০১৯

গণতন্ত্রের নির্বাসন এবং স্বৈরতন্ত্রের উত্থানের পটভূমিতে জামায়াত বিলোপের প্রশ্নই আসে না - জুলফিকার মুরাদ

॥এক॥


জামায়াতে ইসলামী তার অস্তিত্ব বজায় রাখবে নাকি নিজেকে বিলোপ করে দেবে এবং আর একটি নতুন দল প্রতিষ্ঠা করবে এই নিয়ে সাম্প্রতিককালে একশ্রেণীর পত্র পত্রিকায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সুচিন্তিত মতামত দেওয়ার আগে দেশের বর্তমান রাজনীতি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা প্রয়োজন। একই সাথে পাক-ভারত উপমহাদেশের বিগত অর্ধ শতাব্দীর রাজনীতির একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রয়োজন।

॥দুই॥

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিল দুটি রাজনৈতিক দল। একটি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। এটি অবিভক্ত ভারতীয় হিন্দুদের প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। পক্ষান্তরে নিখিল পাকিস্তান মুসলিম লীগ অবিভক্ত ভারতের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছিল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভারত সেদিন স্বাধীন হয় এবং মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ভারতবর্ষ বিভক্ত করে আজাদ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়।

কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকেই দুটি সংগঠনে দুই রকম স্রোত সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস একদিকে যেমন ভারতের কেন্দ্রে এবং রাজ্যগুলিতে ক্ষমতায় ছিল অন্যদিকে তেমনি ক্ষমতায় থেকে দলীয় সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও তৎপরতার দিকেও তারা অবহেলা করেনি। পক্ষান্তরে মুসলিম লীগ এতটাই ক্ষমতা কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে যে তারা সংগঠনের প্রতি এবং সংগঠণের কর্মীদের প্রতি কোনো নজর দেয়নি। আজ ৭১ বছর পর দেখা যাচ্ছে যে, কংগ্রেস যদিও ভারতের বিরোধী দলে রয়েছে তবুও তারা ২৯টি রাজ্যে নিখিল ভারত সংগঠন হিসাবে বিরাজ করছে এবং সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে পাকিস্তানে মুসলিম লীগের অস্তিত্ব অন্তত সাবেক পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ পাকিস্তান কায়েম হয়েছিল প্রধানত পূর্ব পাকিস্তানের বা সেদিনের পূর্ব বাংলার জনগণের ভোটে। জনগণ থেকে এবং রাজপথ থেকে মুসলিম লীগ এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নেতৃত্ব একক ভাবে আওয়ামী লীগ তথা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে চলে গিয়েছিল। মুসলিম লীগ সাংগঠনিক ভাবে সেখানে দাঁড়াতেই পারেনি।

এখানে এসে পড়ে আর একজন ক্ষণজন্মা পুরুষের নাম। তিনি মরহুম শেরে-বাংলা এ.কে ফজলুল হক। ব্রিটিশ শাসনামলে যে ৩ জন বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী ছিলেন তাদের একজন হলেন শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক। উল্লেখ্য যে ব্রিটিশ আমলে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সরকার প্রধানকে বলা হতো মূখ্য মন্ত্রী বা চিফ মিনিষ্টার। কিন্তু অবিভক্ত বাংলার সরকার প্রধানকে বলা হতো প্রধান মন্ত্রী বা প্রাইম মিনিষ্টার। তো বাংলার একজন প্রাইম মিনিষ্টার ছিলেন ফজলুল হক। অপর দুজন প্রাইম মিনিষ্টার ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং খাজা নাজিমুদ্দিন। ফজলুল হকের দলের নাম ছিল কৃষক প্রজা পার্টি। পরবর্তীতে ঐ দলটির নাম হয় কৃষক শ্রমিক পার্টি। ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বদানকারী দল মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়। তখন পূর্ব বাংলা মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল আমিন এবং তিনিই পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র গৃহীত হওয়ার আগে পর্যন্ত পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলকে বলা হতো পূর্ব বাংলা এবং ১৯৫৬ সালের শাসন তন্ত্র গৃহীত হওয়ার পর পূর্ব বাংলার নাম বদলে রাখা হয় পূর্ব পাকিস্তান।

॥তিন॥

১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে যুক্তফ্রন্ট। ৪ নেতার নামে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। এই ৪ নেতা ছিলেন কৃষক শ্রমিক পার্টির নেতা শেরে বাংলা ফজলুল হক,আওয়ামী লীগ নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং নেজামে ইসলাম পার্টির নেতা মওলানা আতাহার আলী। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেলেও নেতা হিসাবে ব্যক্তিগত ভাবে অসাধারণ জনপ্রিয় ছিলেন শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক। তাই সেই প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ভোট পেলেও তাকেই করা হয় পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী। নাজিমুদ্দিন নুরুল আমিন তথা মুসলিম লীগ এবং মওলানা ভাসানী ন্যাপের সাংগঠনিক কার্যক্রমের প্রতি কোনো রূপ নজর দেননি ফলে এই দলগুলিকে আজ অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হয়।

॥চার॥

এখন আসা যাক স্বাধীন বাংলাদেশে। শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনের স্থপতি ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সেই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ছাড়াও আর যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তারা হলো মওলানা ভাসানীর ন্যাপ, কমিউনিস্ট পার্টি ইত্যাদি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক চিত্র। ২০১৯ সালের রাজনীতি দেখে মনে হচ্ছে যে, দেশে দল আছে মনে হয় একটিই। সেটি হলো আওয়ামী লীগ আর নেত্রীও আছেন একজনই। তিনি হলেন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা। এর কারণ হলো এই যে, এই ৪৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক অথবা বিরোধী দলে থাকুক, তারা তাদের সংগঠনের প্রতি এতটুকু অবহেলা দেখায়নি বরং সরকারে থেকেও সংগঠনের প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখতেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই অনেক গুলি দল বিরোধী দলের ভূমিকা নেয় যারা স্বাধীনতা সংগ্রামে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে সর্ব প্রথমে উল্লেখ করতে হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদকে। জাসদের নেপথ্যে ছিলেন রহস্য পুরুষ সিরাজুল আলম খান এবং সামনে ছিলেন ফায়ারব্রান্ড আসম আব্দুর রব। সংগঠন হিসাবে জাসদের শক্তিমত্তাএবং আসম আব্দুর রবের অনল বর্ষী বক্তৃতা শুনে জনগণ তখন আসম আব্দুর রবকে বাংলাদেশের পরবর্তী প্রধান মন্ত্রী হিসাবে কল্পনা করতেন। ৪৭ বছর পর সেই জাসদের কি করুন দশা। আদর্শিক দ্বন্দ্ব, নেতৃত্বের কলহ এবং ক্ষমতার লোভে জাসদ আজ ছয় টুকরা। দেশের রাজনীতিতে তারা আজ আর কোনো উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্টর নয়।

মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ছিল আর একটি দল। সেটির নাম ছিল মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর ন্যাপ। পাকিস্তান আমলে একটি সময় ছিল যখন শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা ভাসানীর শীষ্য ছিলেন। কিন্তু ৬ দফা এবং স্বায়ত্ব শাসনের আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা ভাসানীকে ছাপিয়ে উপরে উঠে যান। এবং পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তারপরেও মওলানা ভাসানী ছিলেন সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা। কিন্তু মওলানা ভাসানী তার সংগঠনকে মজবুত করার দিকে কোনো দিন নজর দেননি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর ভাসানী ন্যাপ আজ অস্তিত্বহীন। এই দলের অধিকাংশ নেতা ও কর্মী বিএনপিতে চলে গেছে। অন্যেরা কে কি করছে সে খবর আজ আর পাওয়া যায় না।

বাম রাজনীতিকরা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।কিন্তু স্বাধীনতার পর বাম রাজনীতিকরা একটি সংহত এককে পরিণত হতে পারেনি। তাই বাম রাজনীতিতে একদিকে ছিল মওলানা ভাসানী অন্যদিকে বিভিন্ন নামে ছিলেন কাজী জাফরের ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পাটি।অন্যান্য বামদের মধ্যে খালেকুজ্জামানের বাসদ এবং মনিসিংয়ের উত্তরাধিকারী মোজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি।

এরা এখন সব স্পিলন্টার পার্টি এবং মার্জিনালাইজড। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের কোনো ইমপ্যাক্ট নাই।

॥পাঁচ॥

২০১৮ সালে আমরা কি দেখছি? আমরা দেখছি মুসলিম লীগ, ভাসানীর ন্যাপ এবং কৃষক শ্রমিক পার্টি বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বিদূরিত। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বরং নতুন কিছু ডেভেলপমেন্ট ঘটেছে। ১৯৪৯ সালে যে আওয়ামী মুসলিম লীগের জন্ম হয় এবং পরবর্তীকালে যে আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি ছাঁটাই করে আওয়ামী লীগ বানানো হয় সেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরেও অত্যন্ত দাপটের সাথে দেশ শাসন করছে। পক্ষান্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যেসব দল সক্রিয় ছিল তাদের প্রায় সবগুলিই আজ মার্জিনালাইজড বা ঝরে পড়েছে। সেখানে জন্ম হয়েছে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের। দলটির নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি।

বিএনপির জন্ম একটু ভিন্ন প্রকৃতির। আমরা সাধারণত দেখি যে, মুসলিম লীগের জঠোর থেকে জন্ম নিয়েছে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের জঠোর থেকে জন্ম নিয়েছে প্রথমে ন্যাপ এবং পরে জাসদ। কিন্তু বিএনপি কারো জঠোর থেকে জন্ম নেয়নি। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাট পট পরিবর্তনের পর একটি মারাত্মক শূন্যতা দেখা দেয়। সেই শূন্যতা পূরণ করেন একজন সোলজার। তিনি হলেন মেজর জেনারেল মরহুম জিয়াউর রহমান। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পর রাজনীতি তাৎক্ষণিকভাবে হাল ছাড়া জাহাজের মতো হয়ে পড়ে। কারণ স্বায়ত্ব শাসনের আন্দোলন তুঙ্গে তুলে, পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সারা পাকিস্তানে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করলেও যখন আওয়ামী লীগের হাতে পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে তখন শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। একদিকে যেমন অসহযোগ আন্দোলন চলছিল অন্যদিকে তখন ঢাকায় সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খাঁনের সাথে প্রথমে শেখ মুজিবুর রহমান এবং পরে পশ্চিম পাকিস্তানের একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে বৈঠক হয়। ২৩শে মার্চ সেই বৈঠক ব্যর্থ হয় এবং ২৫শে মার্চের মধ্যেই মিলিটারি শাসক জেনারেল জিয়াউল হক এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা ত্যাগ করেন। সেই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন এবং তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগে শেখ মুজিবুর রহমান তার দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং দেশবাসীর কাছে আন্দোলনের পরবর্তী দিক নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই বলে যাননি। এমন একটি দিক নির্দেশনাহীন অবস্থায় ৭০ এর নির্বাচনে নির্বাচিত এমএলএ ও এমপিরা এবং কিছু বাঙ্গালী সামরিক অফিসার ভারতে চলে যান। তৎকালীন বাঙ্গালী সামরিক অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান জেড ফোর্স নামে একটি বাহিনী গঠন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক কর্ণেল ওসমানীর অধীনে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

এই সেই মেজর জিয়াউর রহমান যিনি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথমে নিজের নামে এবং পরে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার এই ঘোষণা সাড়ে ৭ কোটি বাঙ্গালীকে মুহুর্তের মধ্যেই ঐক্যবদ্ধ করে এবং বাংলাদেশে এবং ভারতে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং বেসামরিক নাগরিকগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।

॥ছয়॥

১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার বাংলাদেশে ইসলামী তথা ধর্মীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি করেন। অর্থনৈতিক ফ্রন্টের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয় এবং ১৯৭৪-৭৫ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয় এবং প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা যান।

এমন একটি নৈরাশ্যজনক রাজনৈতিক পটভূমিকায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটের আমূল পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে যে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হয় সেখানে জেনারেল জিয়াউর রহমান একটি নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেন। সেই দলটি হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি। বিএনপি এদেশের ৯২ শতাংশ মানুষের ধর্ম ইসলামী মূল্যবোধকে তার রাজনৈতিক দলের অন্যতম ভিত্তি করেন, সমাজতন্ত্র উঠিয়ে দেন এবং বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেন। তিনি ধর্মীয় রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেন। ফলে মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী, জামায়াতে ইসলামী প্রভৃতি রাজনৈতিক দল পুনরুজ্জীবিত হয়।

॥সাত॥

১৯৭৯ সালে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ব্যাপক ভাবে একদিকে ইসলামের দাওয়াতী কাজে আত্ম নিয়োগ করে অন্যদিকে সংগঠন শক্তিশালী ও মজবুত করার দিকে পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করে। দেখতে দেখতে জামায়াতে ইসলামী একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসাবে উত্থিত হয় এবং তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি হিসাবে নিজেদের আসন প্রতিষ্ঠা করে। রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে থাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামী সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক ভাবে তার কার্যকলাপ চালিয়ে যায় এবং দেশের প্রতিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে আবির্ভূত হয় এবং জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে।

১৯৯১ সাল থেকে ২০১৯ সাল। এই ২৮ বছরে দেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটে দেখা গেছে এক বিশাল পরিবর্তন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং আজ ২০১৯ সালের ৮ মার্চ পর্যন্ত ১১ বছর একটানা ক্ষমতায় আছে।

॥আট॥

আওয়ামী লীগের এই ১১ বছরের শাসনামলে ঘটেছে বিরাট পরিবর্তন। যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর ৫ জন এবং বিএনপির ২ জন নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এখনও অনেকের বিচার চলছে। আশংকা করা হচ্ছে যে, আরো অনেকের ফাঁসি হবে। বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের অবিসংবাদিত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তথা কথিত দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছর জেল দেওয়া হয়েছে। বিএনপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারা দন্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। মাদক ও সন্ত্রাস দমণের নাম করে অসংখ্য মানুষকে ক্রসফায়ার বা বন্দুক যুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে ও রিমান্ডে অমানুসিক নির্যাতনের ফলে তাদের অনেককে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াতের হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা কারার অন্ধ প্রকোষ্ঠে ধুকে ধুকে মরছেন। হাজার হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে মামালা দেওয়া হয়েছে এবং হুলিয়া জারি করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে তারা ঘর ছাড়া এবং গৃহ হারা এবং পলাতক জীবন যাপন করছেন। বিএনপি নেতার হিসাব মতে ৫ লক্ষ মামলায় ১৮ লক্ষ আসামী করা হয়েছে। ২০১৪ সালে একটি প্রতারণামূলক নির্বাচনে ১৫৩ ব্যক্তিকে বিনা ভোটে বিনা ইলেকশনে এমপি বানানো হয়েছিল। অবশিষ্ট ১৪৭ জনকে মাত্র ৫% ভোটে নির্বাচিত করা হয়েছিল। জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রশাসন অর্থাৎ আমলা ও পুলিশের সহযোগিতায় ২০১৪ সালের হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসেছিল।

ক্ষমতায় এসে তারা জনগণের সমস্ত মৌলিক অধিকার হরণ করে এবং সভা-সমিতি মিছিল মিটিংসহ সমস্ত রাজনৈতিক কর্ম তৎপরতা বন্ধ করে দেয়। অতীতের সামরিক সরকার গুলো যেখানে ঘরোয়া রাজনীতি চালু করেছিল ২০১৪ সালের পর আওয়ামী সরকার সেই ঘরোয়া রাজনীতিও আর চালু রাখে নাই।

॥নয়॥

এভাবেই কেটে গেছে ৫টি বছর। তার পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ধার্য্য করা হয় বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচন। দেশ এবং বিদেশী অনেক বন্ধুর অনুরোধে এবং তাদের কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে বিএনপি, ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোট অংশ গ্রহণ করে। সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। বিএনপি বিগত এক বছর হলো হাজার বার বলেছে যে বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। বরং তাকে ছাড়া নির্বাচনের চেষ্টাও করা হলে সেই নির্বাচনকে প্রতিহত করা হবে। বেগম জিয়ার মুক্তি হলো না, বিএনপি নির্বাচনে গেল এবং প্রতিহতের কোনো চেষ্টাও করলো না। বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের নেতারা প্রধান মন্ত্রীর সাথে সংলাপে বসে। ঐ সংলাপে ৭ দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্য পেশ করা হয়। কিন্তু সরকার ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা ও ১১ দফার একটি দাবিও মানে নাই। তারপরেও বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যায়। তারা নির্বাচনে যাওয়ার কারণে জামায়াতও তাদের সাথেই নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়। প্রধান মন্ত্রীর সাথে সংলাপে শত শত গায়েবি মামলায় গ্রেফতারকৃত হাজার হাজার কর্মীর মুক্তি দাবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী এই ধরণের বন্দীর একটি তালিকা চান। ঐক্যফ্রন্টের তরফ থেকে একটি তালিকাও দেওয়া হয়। কিন্তু একজনকেও মুক্তি দেয়া হয়নি। বলা হয়েছিল তফসিল ঘোষণার পর আর কোনো গ্রেফতার করা হবে না।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তালিকা দেওয়ার পরেও কাউকে মুক্তি দেওয়া হয়নি বরং তফসিল ঘোষণার পর আরও নতুন করে গ্রেফতার শুরু হয়। তার পরেও বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যায়। একাধিক প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয় এবং তারা কারাগারের অভ্যন্তরে থেকেই নির্বাচন করেন। নির্বাচনের ৭ দিন আগে থেকে অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় এবং উপজেলায় বিরোধী দলীয় প্রার্থীর বিশেষ করে ধানের শীষের লক্ষ লক্ষ পোস্টার ছিড়ে ফেলা হয়। সারা বাংলাদেশের ঐক্যফ্রন্টের ৩০০ জন প্রার্থীর কেউই নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারেননি। যেখানেই নির্বাচনী প্রচার উপলক্ষ্যে তারা সভা ও মিছিল বের করার চেষ্টা করেছেন সেখানেই পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর নৃশংসভাবে এলোপাথারী হামলা করেছে। এই হামলার ফলে ঢাকায় গয়েশ^র চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস থেকে শুরু করে নোয়াখালীতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমাদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, পাবনার হাবিবুর রহমান হাবিব পর্যন্ত কেউই রেহাই পাননি। এই পরিস্থিতিতে প্রায় সমস্ত প্রার্থী নির্বাচন বয়কটের জন্য বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের ওপর চাপ দেয়। কিন্তু ফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ তাদের আবেদনে কর্ণপাত করেনি এবং ৩০ ডিসেম্বর বেলা ৫টা পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে বলেন।

৩০০ জন প্রার্থীর ভেতরে ধানের শীষের অন্তত ১৪০ জন প্রার্থীর নির্বাচনী গণসংযোগ সভায় হামলা করা হয়। ইলেকশনের ৩ দিন আগে অর্থাৎ ২৬,২৭ ও ২৮ তারিখে বলতে গেলে কোনো প্রার্থীই জনসংযোগে বেরোতে পারেননি। এমনকি যেসব প্রার্থী নিরাপত্তার জন্য ৪ তারা বা ৫ তারা হোটেলে থেকে জনসংযোগ করতে চেয়েছেন তাদেরকেও ডিবি পুলিশ ৩ দিন ধরে হোটেলে আটকে রেখেছেন। তখন বাংলাদেশের আনাচে কানাচে থেকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদেরকে নির্বাচন বর্জনের জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নির্বাচনে থাকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।

এই পটভূমিতেই তথাকথিত নির্বাচন হয়ে গেল।কিন্তু সেই নির্বাচন নির্ধারিত ৩০ তারিখে হয়নি। হয়েছে আগের রাত অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর রাতে। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রেই শুধু মাত্র পুলিশ প্রটেকশনেই আওয়ামী বাহিনী ব্যালট পেপারে সীল মারেনি, পুলিশ স্বয়ং সমানে ব্যালট পেপারে নৌকার সীল মেরেছে। ৩০ তারিখ বেলা ১১টার মধ্যেই জামায়াতে ইসলামীর ২৫ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তাদের উদাহরণ অনুসরণ করে মোট ১৬৯ জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তার পরেও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন থেকে সরে যায়নি।

এসব ঘটনা দেশের ১৭ কোটি মানুষ স্বচক্ষে দেখেছেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে যে গণশুনানি হয়েছে সেই গণশুনানিতে ৪২ জন প্রার্থী দলিল প্রমাণ সহ ভোট ডাকাতির বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।

॥দশ॥

এভাবেই সমাপ্ত হয়েছে একটি নির্বাচন। ৩০ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশে প্রবর্তিত হয়েছে এক নতুন রাজনীতি। বড় অদ্ভুত সেই রাজনীতি। নির্বাচনের পর ২ মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। জনগণ দেখছেন যে এখন দেশে এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়েছে যেখানে ভোটের প্রয়োজন পড়ে না, জনগণের কোনো প্রয়োজনও পড়েনা। ১৭ কোটি মানুষের সাথে সেই নির্বাচনের নাটকের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ, বিজিবি, আনসার এবং সরকারি আমলারা হাতে থাকলেই নির্বাচনে জয় শত ভাগ। আমেরিকায় বসবাসকারী ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র নিখোঁজ হয়েছে। নির্বাচনে জনগণের আর কোনো আস্থা নাই। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো এই যে, রাষ্ট্র সরকার এবং শাসক দলের মধ্যে যে সীমা রেখা ছিল সেটা ঘুচে গেছে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকাশ বলেছেন আইজিপি, ডিএমপি কমিশনার, র‌্যাবের ডিজি, এসপি এবং ডিসি হাতে থাকলেই নির্বাচনে বাজিমাত করা যায়। 

এতো গেল সরকারি দিক। বিরোধী দল সমূহের অবস্থা আরও করুণ। আজ থেকে ৫ বছর আগে জনগণ বিএনপি বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ২০ দলীয় জোটের ওপর তাদের সমস্ত আস্থা অর্পণ করেছিলেন। ভেবে ছিলেন যে এই জোট বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে এবং গণতান্ত্রিক পন্থায় রাজপথে আওয়ামী স্বৈরতন্ত্রকে মোকাবেলা করে তাহলে স্বৈরতন্ত্র বেশি দিন টিকবে না। সরকার বিরোধী দলকে দমন করার জন্য কৌশলে অগ্রসর হয়। প্রথমে তারা টার্গেট করে জামায়াতে ইসলামীকে। যুদ্ধাপরাধ, পাকিস্তানের দালাল, মৌলবাদী, রাজাকার ইত্যাদি বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে তারা জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক এবং শারিরীক উভয় ভাবেই নিশ্চিহ্ন করা শুরু করে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই যে জামায়াতের বিরুদ্ধে সরকার যখন সাড়াশি আক্রমণ চালায় তখন বিএনপি সম্পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করে। তারা ভেবেছিল, ঝড় ঝাপটা যাই আসুক না কেন সেটা জামায়াতের ওপর দিয়েই যাক। কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছিল যে, স্বৈরতন্ত্র এক আঘাতে দুই সাপ মারে না। দুই দলকে এক সাথে আঘাত না করে তারা এক এক করে আঘাত হানতে শুরু করে। জামায়াতের ৫ জন শীর্ষ নেতাকে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অপবাদে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলায়, হাজার হাজার নেতাকে গ্রেফতার করে জেলে ঢুকায়, হাজার হাজার নেতাকে ঘর ছাড়া করে এবং শত শত নেতাকে রিমান্ডে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়। জামায়াতে ইসলামীকে ঘরে বাইরে কোথাও একত্রিত হতে দেয়না। কোনো একটি বাসায় বা বৈঠক খানায় ৪/৫ জন জামায়াত বা শিবির কর্মী একত্রিত হলে সেখানেও পুলিশ হামলা করে এবং তাদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এভাবে সরকার প্রথমে জামায়াতকে ধরাশায়ী করে দেয়।

তারপর তারা হাত দেয় বিএনপির ওপর। বিএনপির ২ জন নেতাকে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। এরপর বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে যথাক্রমে ১৭ বছর এবং যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। বিএনপিরও হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেফতার, হাজার হাজার কর্মীকে ঘর ছাড়া এবং শত শত নেতা-কর্মীকে রিমান্ডে দেওয়া হয়। তাদেরকে রাস্তায় কোনো বিক্ষোভ সমাবেশ বা মিছিল করতে দেওয়া হয় না। তবে বিএনপির ক্ষেত্রে একটি অবাক ব্যাপার হলো এই যে বিএনপির সমর্থক সংখ্যা লাখ লাখ। তারা যদি তাদের কর্মীদেরকে রাজপথে নামার জন্য সিরিয়াসলি রাস্তায় ডাক দিতো তাহলে পুলিশ তাদের ওপর হামলা করেও কুলিয়ে উঠতে পারতো না। জনতার পাল্টা রাজনৈতিক আঘাতে পুলিশই পিছু হটতে বাধ্য হতো। র‌্যাব এবং বিজিবি যদি জনগণকে দমনের জন্য রাস্তায় নামতো এবং বিএনপি নেতা কর্মীরাও যদি শহীদি স্পিরিট নিয়ে রাস্তায় থাকতেন তাহলে শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে বিদায় হতো না, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বৈপ্লবিক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটতো।

কিন্তু এটি অত্যন্ত রহস্যময় ব্যাপার যে, ২০১৬ সাল থেকে বিএনপি রাজপথ থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গিয়েছে। কোনো ব্যাপারেই তারা কোনো প্রতিবাদ করে না। তাদের প্রতিবাদ এখন নয়াপল্টন অফিসে এবং কোনো কোনো সময় গুলশান চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। নির্বাচনের আগেও তারা নিষ্ক্রিয়তা এবং নীরবতা অবলম্বন করেছিল এবং নির্বাচনের পরেও তারা সেই দুর্বোধ্য এবং রহস্যময় নিষ্ক্রিয়তা অবলম্বন করে যাচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন মানিনা এবং পুননির্বাচন চাই, এই কথা মুখে মুখে বলেই তারা খালাশ। আজ ২মাস ৩দিন হয়ে গেল ঐ মহা ভোটডাকাতির বিরুদ্ধে তারা একটি ন্যূন্যতম কর্মসূচিও দেয়নি। এখন জনগণ ধারণা করছেন যে, আওয়ামী লীগ সনরকারের বিরুদ্ধে সক্রিয় কর্মসূচি দেওয়ার ইচ্ছা এবং ক্ষমতা কোনোটাই বিএনপির নাই। এই প্রবণতা যদি আরও কিছু দিন অব্যাহত থাকে তাহলে বিএনপির অবস্থা কৃষক শ্রমিক পার্টি বা মুসলিম লীগের মতই হবে।

॥এগারো॥

এমন একটি পরিণতিতে জনগণের একমাত্র আশা ভরসা রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ওপর। যুদ্ধাপরাধ, পাকিস্তানি দালাল বা রাজাকার নিয়ে আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যতই চিল্লা পাল্লা করুক না কেন, তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার বাইরে জনগণের মাঝে এর কোনো ইমপ্যাক্ট নাই। আওয়ামী লীগের বিগত ১০ বছরের জুলুমে জামায়াতের কিছু নেতা এবং কর্মীর শারিরীক এবং বৈষয়িক ক্ষতি হয়েছে সন্দেহ নাই, কিন্তু জনগণের মধ্যে জামায়াত ও শিবিরের জনপ্রিয়তা বিপুল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যারা এক সময় বলতো যে, জামায়াত এবং শিবির ক্যাডার ভিত্তিক রাজনৈতিক দল তারাই আজ বলছে জামায়াত ধীরে ধীরে জনভিত্তিক রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হতে চলেছে। বিএনপি যতই দুর্বল হবে এবং কার্যকর কর্মসূচির ব্যাপারে জনগণের আশা বিএনপির ওপর থেকে যতই ভঙ্গ হতে থাকবে ততই মানুষ জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হতে শুরু করবে। ইতো মধ্যেই সেই আলামত দেখা যাচ্ছে।

এমন একটি পটভূমিতে জামায়াতের বিলোপ এবং নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার চিন্তা ভাবনা অপ্রাসঙ্গিক এবং অবান্তর। তুরস্ক বা তিউনিশিয়ার উদাহরণ দিয়ে লাভ নাই। বাংলাদেশ তুরস্ক বা তিউনিশিয়া নয়। জামায়াতকে বিলোপ না করে কৌশলগত ভাবে যদি দলটি এই মুহুর্তে মাঠে না নেমে নেতা ও কর্মীদেরকে প্রস্তুত করে তাহলে সেদিন হয়তো বেশী দূরে নয়, যেদিন জামায়াত একক শক্তিবলে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক পথে রাজপথে স্বৈরতান্ত্রিক শক্তির মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে।

লেখক: বিশিষ্ট সাংবাদিক ও গবেষক