ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

লিভারের জটিলতা অধ্যাপক নইম কাদের

লিভার দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লিভারের সুস্থতার উপর সমগ্র মানবদেহের সুস্থতা অনেকাংশ নির্ভর করে। তাই লিভারের যত্ন নিতে হয়। লিভারে সচরাচর হঠাৎ করে বড় ধরণের সমস্যা হয় না। ক্ষুদ্র সমস্যা থেকে ধীরে ধীরে তা জটিল আকার ধারণ করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় লিভারের জটিলতায় কিছু লক্ষণ বেরিয়ে এসেছে। আপনার লিভার কতটা সুস্থ, লিভার সঠিকভাবে কাজ করছে কী না, তা আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যদি একটু সচেতনভাবে কিছু বিষয় খেয়াল করেন।
লিভারের জটিলতা বুঝতে অপনাকে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল করতে হবে। যেমন- সামান্য পরিশ্রমে অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়া, কাজে-কর্মে অনীহা বা স্বাভাবিক কাজের প্রতিও অনাগ্রহ তৈরি হওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, বিভিন্ন এলার্জি ও ত্বকের সমস্যা, শরীরের হাড়ের নানা জয়েন্ট ও পেশিতে ক্রমাগত ব্যথা, ক্রমাগত চোখে ব্যথা বিশেষ করে চোখের পেছনে ব্যথা করা (মাইগ্রেন), রাগ, ভয়, উৎকণ্ঠা ও উদগ্রীব বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। এর সাথে যদি যুক্ত হয় কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বদ হজম বিশেষ করে চর্বিযুক্ত খাদ্য হজম না হওয়া, ওজন বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাসে দুর্গন্ধ ইত্যাদি তবে বুঝতে হবে আপনার লিভারে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, বর্তমানে লিভারের জটিলতা তুলনামূলকভাবে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ এর পেছনের কারণগুলো খুবই সাধারণ। গবেষণায় দুটি কারণ বেশি প্রাধান্য পেয়েছে- শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত লাইফস্টাইল। 
বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন চলে এসেছে। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় অনেক কিছুই এখন সহজলভ্য হওয়ায় মানুষের চিন্তাশক্তি যতটা কাজ করে শরীর তার ক্ষিয়দাংশও করে না। অর্থাৎ মানসিক পরিশ্রম যে হারে বেড়ে গেছে, শারীরিক পরিশ্রম সে হারে কমে গেছে। শরীরকে তুলনা করা যায় মেশিনের সাথে। যে কোন মেশিন, যদি তা ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়, আস্তে আস্তে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। নিয়ম মেনে নিয়মিত ব্যবহার করলে প্রতিটি মেশিন ভালভাবে চলে। অনুরূপ মানব শরীরকে সুষ্ঠুভাবে ব্যবহার করতে হয়। শারীরি ঠিক রাখার জন্য, শরীরকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য পরিমিত শারীরিক পরিশ্রম অপরিহার্য। আধুনিক জীবনে এমনই সিস্টেমে মানুষের জীবন অবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে যে, শারীরির পরিশ্রমের কোন সুযোগই মানুষ পাচ্ছে না। দিন দিন লেপটপ বা কম্পিউটারের ঐ একটি নির্দিষ্ট চেয়ার-টেবিলে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে মানুষ। একইভাবে ক্রমশ আমাদের জীবন হয়ে যাচ্ছে অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিত। নিদিষ্ট সময়ে খাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর কথা মানুষ যেন ক্রমশ ভুলে যাচ্ছে। এমনকি পায়খানা-প্রস্রাবের বেগ আসলেও কাজের চপের কারণ দেখিয়ে অনেকে তা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রাখে। কিন্তু প্রকৃতি কখনো অনিয়ম মানে না। মনে রাখতে হবে, প্রকৃতির সব কিছুই নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মতান্ত্রিক। মানব শরীর প্রকৃতির বাইরে নয়। বরং প্রকৃতির প্রকৃষ্ট প্রমাণ মানব দেহ। দেহের ক্ষয়-বৃদ্ধি, সব কিছুই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই ঘটে থাকে। এমতাবস্থায় মানুষের লাইফস্টাইল যখন অনিয়ন্ত্রিত হয়, দেহের বিভিন্ন অংশে জটিলতা তৈরি হয়ে যায়। লিভারের নানা জটিলতা বিষয়ে সাম্পতিক গবেষণায় এই তথ্যটি বেরিয়ে এসেছে।
লিভারের জটিলতা বিষয়ে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো যদি আপনার মাঝে পরিলক্ষিত হয়, দ্রুত লাইফস্টাইল পরিবর্তন করুন, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

গুম-খুন-হত্যার সাথে আ' লীগের লোকেরাই জড়িত: জামায়াত

বাংলাদেশ বার্তা: কলাবাগানে জোড়া খুনের মতো বিভিন্ন হত্যাকান্ডের জন্য জামায়াত-বিএনপিকে অভিযুক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় গণভবনে যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানান।
জামায়াত নেতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে আমি স্পষ্টভাষায় জানাতে চাই যে, কলাবাগানের জোড়া খুনসহ দেশে সংঘটিত কোন হত্যাকান্ডের সাথেই জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক নেই। প্রধানমন্ত্রী জামায়াতের বিরুদ্ধে নির্জলা অসত্য অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। তাই দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য জামায়াতের পরিকল্পিতভাবে গুপ্ত হত্যা চালানোর প্রশ্নই আসে না। গুপ্ত হত্যা চালানো কিংবা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করার সাথে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক নেই।
প্রধানমন্ত্রী জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন সেগুলো তার মনগড়া। দেশবাসী সকলেই জানেন যে, দেশে কোন অঘটন ঘটলেই তার জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অসত্য বক্তব্য দিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা পানি ঘোলা করে থাকেন।
ইতোপূর্বেও আওয়ামী লীগের নেতারা জামায়াতের বিরুদ্ধে এ ধরনের কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করে পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তাদের কোন বক্তব্যেরই এখন পর্যন্ত তারা সত্যতা প্রমান করতে পারেননি। তাদের এ বক্তব্যও অসত্য প্রমানিত হবে ইনশাআল্লাহ।
কোন ঘটনা সংঘটিত হলেই সুষ্ঠু তদন্তের পূর্বেই সে জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ী করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বক্তব্য দিলে তাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এতে সন্ত্রাসীরা উৎসাহের সাথে আরো সন্ত্রাস চালাতে থাকে।
কাজেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দায়ী করে অসত্য বক্তব্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকা দেয়ার হীন উদ্দেশ্যেই সরকার জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলের উপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এভাবে অসত্য বক্তব্য দিয়ে জনগণকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানো যাবে না।
ইতোপূর্বে দেশে ইতালী ও জাপানী নাগরিক হত্যাসহ বহু হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু কোন হত্যাকান্ডেরই বিচার হয়নি। এসব হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়ার কারনেই দেশে একের পর এক হত্যাকান্ড ঘটছে। অতিসাম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক ড: এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন।
দেশবাসী সকলেই জানেন যে, গুপ্ত হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, অপহরণ, টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী, খুনাখুনি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের বাড়ী-ঘরে হামলা এবং বাড়ী-ঘর ও জমি-জমা দখলের সাথে আওয়ামী লীগের লোকেরাই জড়িত।
আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। কাজেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলেই দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে দেশবাসী আশা করে।
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ উত্থাপন করা থেকে বিরত থেকে কলাবাগানের জোড়াখুনসহ সম্প্রতি সংঘটিত সকল হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের আইনানুগ শাস্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

এখনো সন্ধান মিলেনি জামায়াত নেতা ড. মাসুদের, উৎকণ্ঠায় পরিবার


পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়ার একদিন অতিবাহিত হলেও এখনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের । গতকাল রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট থেকে নম্বর বিহীন একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাসে তাকে তুলে নেয়া হয়। ড. মাসুদের খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কাW রয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।
ড. মাসুদের বৃদ্ধ বাবা অধ্যাপক সিরাজুদ্দিন খান ও মা কানিজ ফাতেমা জানান, সবগুলো মামলা থেকে মাসুদ জামিন পেয়েছে। তারপর এর সঙ্গে ‘নো এরেস্ট ও নো হ্যারেজ’ নামে হাইকোর্টের একটি আদেশও রয়েছে। এরপরও মুক্তির পর তাকে কারাফটক থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনো সন্ধান না পাওয়ায় তার জীবন নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
তারা বলেন, সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের সন্তানকে আদালতে হাজির করা হোক। আমাদের সন্তানের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে এর সম্পূর্ণ দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।
এদিকে ড. মাসুদকে গ্রেফতারের ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার (জনসংযোগ) মারুফ হাসান সরদার শীর্ষ নিউজকে বলেন, তাকে কারা ধরে নিয়েছে, তা আমার জানা নেই।
প্রসঙ্গত, জামায়াত নেতা ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে দীর্ঘ ১৯ মাস কারাভোগের পর তাকে রোববার মুক্তি দেয়া হয়। রাত সোয়া ৮ টার দিকে তার আইনজীবী, আত্মীয়-স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ পরিচয়ে নম্বরবিহীন একটি কালো মাইক্রোবাসে টেনেহিচড়ে তুলে নেয়া হয় তাকে। কিন্তু ডিবি কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেফতার বা আটকের ব্যাপারে অস্বীকার করা হচ্ছে। তাকে কোথায় রাখা হয়েছে তা জানতে পারছে না তার পরিবার।
এদিকে কারাফটক থেকে ড. মাসুদকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর শাখা। রোববার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান এ নিন্দা জানান।

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদকে জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ শফিকুল ইসলাম মাসুদকে গ্রেপ্তার করে সরকার আদালত অবমাননা করেছে-শিবির

ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পর তাকে আবার জেলগেট থেকে গ্রেপ্তারের তীব্রনিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত বলেন, জুলুম অবিচার করতে করতে সরকার অমানবিক ও বিবেক শুন্য হয়ে পড়েছে। তারই আরেকটি নিকৃষ্ট নজির জামায়াত নেতা শফিকুল ইসলাম মাসুদকে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার।সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে ভীত হয়ে সরকার তাকে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার করেছে। একের পর এক তাকে ৫৬ টি মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়। এর আগে গত বছর ২৫ ডিসেম্বর ৫৪টি মামলায় জামিন পেলেও জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।পরবর্তীতে আরো দুটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় সরকার। তিনি দ্বীর্ঘ ১৯ মাস কারারুদ্ধ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় আজ সব মামলা থেকে জামিন পান। উচ্চ আদালত থেকে ”নো এরেষ্ট নো হ্যারেজ” নির্দেশনা থাকলেও জেলগেট থেকে ২য় বারের মত তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যা সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল। শুধুমাত্র ভিন্নমতের কারণে একজন রাজনীতিবিদের উপর অবৈধ সরকারের এই নীতিহীন কাজে জাতি হতবাক। এতে করে সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহি:প্রকাশ হয়েছে। আমরা এই গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সম্প্রতি ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া শ্যোন এরেষ্ট বন্ধের ঘোষনা দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘোষনার দিনই জামায়াত নেতা অধ্যাপক মুজিবর রহমানকে শ্যোন এরেষ্ট করা হয় । জাতির সাথে এমন অমানবিক তামাশা বার বার পুলিশ প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে অবিচার বন্ধ করে শফিকুল ইসলাম মাসুদের মুক্তি দাবী করছি। একই সাথে আশা করছি সরকার আদালতের নির্দেশনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে।

রাজশাহীতে অসুস্থ শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার ও গণমাধ্যমে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যা খবর প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ নিজেদের ব্যার্থতাকে আড়াল করতেই শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ----- ছাত্রশিবির


রাবি শিক্ষক হত্যার সাথে জড়িয়ে জটিল রোগে আক্রান্ত শিবির কর্মীকে গ্রেপ্তার ও কিছু গণমাধ্যমে ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত বলেন, রাবি শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যায় প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে জটিল রোগে আক্রান্ত (থ্যালাসেমিয়া) শিবির কর্মী হাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের এই দায়িত্বহীন কাজ অত্যান্ত অমানবিক। কাউকে খুন করা ত দূরে থাক সে স্বাভাবিক চলাফেরাই করতে পারেনা। প্রতি তিন মাস পর পর তার শরীরের রক্ত পরিবর্তন করতে হয়। আর কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই একজন গুরতর অসুস্থ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা কোন দায়িত্বশীল কাজ হতে পারেনা। পুলিশ শুধুমাত্র সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ও নিজেদের ব্যার্থতাকে আড়াল করতেই তাকে গ্রেপ্তার করেছে। যা অত্যন্ত দুঃখ জনক। আমরা দৃঢভাবে বলতে চাই, ছাত্রশিবির একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্বশীল ছাত্র সংগঠন। শিবির কোন প্রকার হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেনা।
শিবির নেতৃবৃন্দ বলেন, অতীতেও কোন ঘটনা ঘটলেই তার সাথে শিবিরকে সম্পৃক্ত করার অপচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু পরবর্তিতে তা সবই মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। পাবনার ফাদার লুক সরকার হত্যাচেষ্টা, গাবতলিতে পুলিশের এস আই হত্যা ও শিয়া ধর্মাবলম্বীদের তাজিয়া মিছিলে হামলার ঘটনা তার প্রকৃত উদাহরণ।
ছাত্রশিবির বরাবরই এমন বর্বর হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানায়। ঘটনার পরই ছাত্রশিবির রাবি ও মহানগরী শাখার পক্ষ থেকে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে। এর পরও ছাত্রশিবিরকে উদ্দেশ্যে প্রণোদিত ভাবে জড়ানো হয়েছে। আমরা অবিলম্বে বিষয়টিকে নিয়ে রাজনীতি না করে প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে অবিলম্বে অসুস্থ শিবির কর্মীকে মুক্তি দেয়ার আহবান জানাচ্ছি। জটিল রোগে আক্রান্ত শিবির কর্মী হাফিজুর রহমানের যদি কোন ক্ষতি হয় তাহলে পুলিশ প্রশাসন তার দায় এড়াতে পারবেনা।

রবিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৬

আলহাজ আবু ইউসুফের মৃত্যুতে ঢাকা মহানগর আমীরের গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর শাহবাগ থানার বঙ্গবাজার ওয়ার্ডের সভাপতি আলহাজ আবু ইউসুফ গত ২২ এপ্রিল রাত ৯ টায় রাজধানীর বঙ্গবাজারস্থ নিজ বাসভবনে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তিকাল করেছেন-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলায়হি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৫০ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ৩ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার নামাজে জানাজা আজ সকাল ৮ টায় কায়েতটুলী মসজিদ প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তাকে তেজগাঁও মসজিদ সংলগ্ন কবর স্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় ঢাকা মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য এ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দীনসহ স্থানীয় জামায়াত-শিবির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

শোক বাণী
আলহাজ আবু ইউসুফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।
এক শোক বাণীতে মহানগরী আমীর আবু ইউসুফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেন। তার নেক আমলগুলোকে কবুল করে নিয়ে তাকে জান্নাত দানের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন এবং তার শোক সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জামায়াতের


বাংলাদেশ বার্তা: ২৩ এপ্রিল ২০১৬, শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী আজ ২৩ এপ্রিল সকালে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আজ ২৩ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার ঘটনার দ্বারাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, বর্তমানে দেশের মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। 
দেশবাসী উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, দেশে একের পর এক চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েই যাচ্ছে। কিন্তু কোন হত্যাকান্ডেরই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচার হচ্ছে না। এ যাবত যে সব হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তার কোনটিরই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার না হওয়ার কারণেই প্রকাশ্য দিবালোকে বারবার হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটছে।
সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার কাজে নিয়োজিত রাখার কারণেই দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অনৈতিক ও বেআইনী কাজে ব্যবহার বন্ধ করে তাদেরকে শতভাগ পেশাগত দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত রাখতে হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আমি নিহত অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। ”

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬

" যুবকদের প্রতি শহীদ হাসান আল-বান্নার ২০ টি উপদেশ"


১. তোমরা যে অবস্থায় থাক না কেন আযান শোনার সাথে সাথে নামাযের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করবে।
২. কোরআনকে পাঠ কর এবং এটা নিয়ে গবেষণা কর। যত কম সময়ই হোক না কেন সেটাকে আজেবাজে কাজে ব্যয় কর না।
৩. সবসময় স্পষ্টবাদী হওয়ার চেষ্টা কর কেননা এর দ্বারায় প্রমান হবে তুমি যে মুসলিম।
আরবি শিখার চেষ্টা কর কেননা কেবলমাত্র আরবি ভাষার মাধ্যমেই কুরআনকে ভালোভাবে বুঝা সম্ভব।
৪. কোন বিষয়েই মাত্রারিক্ত তর্কে জড়াবে না। কেননা এটা কোন সময় সফলতা বয়ে না।
৫. কখনোই বেশি হাসবে না কেননা। আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত আত্মা সবসময় শান্তচিত্ত ও ভারি হয়।
৬. কখনোই মশকরা কর না। কেননা একটি মুজাহিদ জাতি গাম্ভিরতা ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না।
৭. শ্রোতা যতটুকুন পছন্দ করে ততটুকুই তোমার আওয়াজকে কর। কেননা এটা স্বার্থপরতা ও অন্যকে নিপীড়ন করার শামিল।
৮. কখনোই কাওকে ছোট কর না। কল্যাণ কর ছাড়া অন্য কোন ব্যাপারে কথা বল না।
৯. তোমার প্রতিবেশী কোন ভাই তোমার সাথে পরিচয় হতে না চাইলেও তার সাথে পরিচিত হও।
১০. আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আমাদের যে সময় দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী। অন্য জনের সময় বাঁচানোর জন্য সবসময় ব্রত হও। যদি তোমার উপর কোন দায়িত্ব অর্পিত হয় সেটাকে সব চেয়ে সহজ পন্থায় ও সুন্দর করে করার চেষ্টা কর।
১১. সবসময় পরিষ্কার পরিছন্নতার দিকে নজর দিবে। তোমাদের ঘরবাড়ি; পোশাক পরিচ্ছদ; শরীর ও তোমাদের কাজের জায়গাকে পরিচ্ছন্ন রাখ। কেননা এই দ্বীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপরেই নির্মিত হয়েছে।
১২. তোমাদের ওয়াদা; তোমাদের কথা ও কাজে সবসময় মিল রাখবে। শর্ত যাই হোক না কেন সর্বদায় এর উপর অটল অবিচল থাকবে।
১৩.পড়ালেখায় মনোযোগ দাও। মুসলিমদের প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিন নিয়ে পরস্পর আলোচনা কর। ছোট করে হলেও নিজস্ব একটা লাইব্রেরি গড়ে তুল।নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে গভীরজ্ঞানের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা কর।
১৪. কখনো সরকারের মুখাপেক্ষী হবে না। কেননা রিজিক এর সবচেয়ে সংকীর্ণ দরজা হল তাদের দরজা। তবে তোমাদের কে যদি সুযোগ সুবিধা দেয় সেটাকে প্রত্যাখ্যান কর না। তোমাদের দাওয়াতকে ও তোমাদের নিজস্ব গতিকে স্তব্ধ করে না দেওয়া পর্যন্ত এর থেকে পৃথক হবে না।
১৫. তোমাদের সম্পদের একটা অংশ সংগঠনে দান কর। আর ফরজ যাকাত একসাথে করে দাও। সেটার পরিমান যত সল্পই হোক না কেন সেখান থেকে গরীব দুঃখীদের দান কর।
১৬. অপ্রত্যাশিত বিপদ আসার আগেই স্বল্প পরিমান হলেও সম্পদের একটা অংশ কে সঞ্চয় করে রাখ। এবং কখনোয় জাঁকজমক পূর্ণ আসবাব পত্র ক্রয়ে সম্পদ বায় কর না।
১৭. সকল অবস্থায় তাওবা ও ইস্তিগফার পাঠ কর। রাতে ঘুমানোর আগে কয়েক মিনিট আত্ম সমালোচনা কর। হারাম থেকে বেঁচে থাকার জন্য সন্দেহ জনক বিষয় থেকে বেঁচে থাক।
১৮. বিনোদন এর জায়গা থেকে এই ভেবে দূরে থাক যে এর বিরুদ্ধেই আমার সংগ্রাম। সকল প্রকার প্রসন্নতা ও আরাম দায়ক বিষয় থেকে দূরে থাক।
১৯.সকল জায়গায় তোমার দাওয়াত কে বুলন্দ করার চেষ্টা করবে। নিজের নফস এর সাথে এমন আচরন করুন যাতে সে তোমাকে মেনে চলতে বাধ্য হয়। তোমাদের চোখকে হারাম থেকে বিরত রাখ। নিজের আবেগ এর উপর প্রাধান্য বিস্তার কর।
২০.নিজেকে সর্বদায় সংগঠন এর কাজের সাথে সম্পর্কিত রাখ এবং একজন নিবেদিত প্রান সেনার মত নেতার আদেশ মানতে সর্বদায় প্রস্তুত থাক। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই নেক উপদেশ গুলো যথাযতভাবে আমল করার তৌফিক দান করুণ, আমীন।

সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬

জনাব মাহমুদুর রহমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার -ডাঃ শফিকুর রহমান ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী


বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের ষড়যন্ত্রের কথিত মামলায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কারাগারে বন্দী মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানোর ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ১৮ এপ্রিল প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।
জনাব মাহমুদুর রহমান একজন নির্ভীক সাংবাদিক। বস্তুনিষ্ঠ, সৎ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার কারণেই সরকার তার প্রতি রুষ্ট হয়েছে। সরকার তাকে বন্দী করে রাখার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে জড়িয়ে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি ও জুলুম করছে। রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করার অসৎ উদ্দেশ্যেই সরকার জনাব মাহমুদুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণের ষড়যন্ত্রের কথিত মামলায় জড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এভাবে মামলা দিয়ে তাকে করাগারে বন্দী রাখার ষড়যন্ত্র চরম অমানবিক এবং এগুলো সরকারের জন্যই একদিন বুমেরাং হবে।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি নানা জটিল রোগে ভুগছেন। তা সত্ত্বেও সরকার তার বিরুদ্ধে একের পর এক চক্রান্ত করেই চলেছে। তাকে অমানবিকভাবে বছরের পর বছর কারাগারে বন্দী করে রাখার সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি দেশী-বিদেশী সকল মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক মহল ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জনাব মাহমুদুর রহমানকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা দিয়ে কারাগারে বন্দী রাখার চক্রান্ত বন্ধ করে অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

ভারতে ১ টাকায় ৫ কেজি পেঁয়াজ! আর্থিক ক্ষতির মুখে কৃষকরা

ভারতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পেঁয়াজ চাষিরা। এক সময় পেঁয়াজের দাম ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় চাপের মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি গত বছর সাধারণ মানুষকে কার্যত কাঁদিয়ে ছেড়েছে। যদিও এ বছর দাম না থাকায় পেঁয়াজ উৎপাদক চাষিদেরকেই কাঁদতে হচ্ছে।
 পরিস্থিতি এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, পেঁয়াজ উৎপাদনের খরচ তো দূরের কথা থেকে মাঠ থেকে ফসল তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচই উঠছে না চাষিদের। ভারতের মধ্য প্রদেশের বাজারে এখন ২০ পয়সা থেকে ৩০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ! গত বছরে এক কেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। পাইকারি এবং খুচরা বিক্রিতে এই দাম স্থানভেদে কম বেশিও হয়েছে।
 পেঁয়াজের দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষক নেতা এবং সংসদ সদস্য রাজু শেট্টি সরকারি নীতিকে কার্যত দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে টন প্রতি ৭০০ ডলার করার ফলে পেঁয়াজ রফতানি থেমে যায়। এরফলে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ধীরে ধীরে কমে আসে। বাজারে পেঁয়াজ আমদানি বেড়ে যাওয়ায় গত ১৫ নভেম্বর থেকে পাইকারি মূল্য দ্রুত পড়ে যায়। তা সত্ত্বেও সরকার ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দেরি করেছে। তার মতে, অনেক আগেই সরকারকে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য হঠাতে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল।
 পেঁয়াজ চাষি রাজেন্দ্র গুপ্তা বলেন, পেঁয়াজ রাখার জন্য পর্যাপ্ত হিমঘর না থাকার জন্য চাষিরা এত কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা এই দুর্বলতার সুযোগে ফায়দা তুলতে চাষিদের কাছ থেকে কম দামে পেঁয়াজ খরিদ করছে। সংরক্ষণ করে রাখা সেই সব পেঁয়াজ পরবর্তীতে যখন বাজারে চাহিদা বাড়বে তখন বেশি দামে বিক্রি হবে।
 দিল্লির পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বাবুলাল গুপ্তার মতে গত বছর অক্টোবর থেকে পেঁয়াজের দাম কমে এসেছে। গত বছর জানুয়ারিতে ন্যাশনাল হর্টিকালচার রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন রেকর্ড পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদনের অনুমান করেছিল। তা সত্ত্বেও সরকার গত মাসে ১৫ হাজার টন পেঁয়াজ সুরক্ষিত মজুদের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি নীতির কারণেই আজ পাইকারি বাজারে ২০ পয়সা থেকে ৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
 দিল্লিতে শুক্রবার পাইকারি বাজারে ৫ টাকা থেকে ১১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ। গত বছর দিল্লিতে ৮০ টাকার বেশি কেজিতে বিক্রি হয়েছে পেঁয়াজ।
 গত শুক্রবার পর্যন্ত বাংলাদেশের ঢাকায় অবশ্য দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৩০ টাকায়।
 ভারতের মধ্যপ্রদেশের ডিকেন গ্রামের কৃষক দয়ারাম পাটিদার এ বছর ২ একর পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। ভালো দাম পেলে এ বছর তিনি জমিতে একটি নলকূপ বসানোর কথা ভেবেছিলেন। যদিও নীমচ মান্ডিতে যখন তার ফসল বিক্রির জন্য নিয়ে যান তখন তিনি অত্যন্ত হতাশ হয়ে পড়েন। চলতি সপ্তাহে নীমচ বাজারে ২০ থেকে ৩০ পয়সা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ।
 দয়ারাম বলেন, আমরা এত পরিশ্রম করে ফসল উৎপাদন করে এখন ২০ পয়সা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে খরচের পয়সাই উঠছে না।
 রাহুল নামে এক কৃষক বলেন, গ্রাম থেকে বাজারে আনার খরচের পয়সাও উঠছে না পেঁয়াজ বিক্রি করে। এজন্য আমরা বাজারে পেঁয়াজ ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যাচ্ছি।
 পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সত্যেন্দ্র লাঠির মতে বাম্পার ফলনের জন্য পেঁয়াজের দাম পড়ে গেছে।
 পেঁয়াজের দাম আকাশ ছোঁয়া হলে অবশ্য রাজনৈতিক নেতারা বাকযুদ্ধ শুরু করে দেন। সরকার এবং বিরোধী পক্ষের মধ্যে চলে নানা পাল্টাপাল্টি যুক্তি। যদিও কৃষকরা যখন খরচের দামই তুলতে পারছে না তা নিয়ে কেউ তাদের জিজ্ঞাসাও করছে না বলে কোনো কোনো মহল থেকে আক্ষেপ করা হয়েছে।RT
Courtesy  by dhakar news

ফাঁসির মঞ্চেও ঈমানের জয়গান প্রেরণার বাতিঘর শহীদ আব্দুল কাদের আওদাহ (রাহ.)


মো. তোফাজ্জল বিন আমীন : সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বের ইতিহাস অতি প্রাচীন। যুগে যুগে আল্লাহর সৈনিকরা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে প্রাণপণ সংগ্রাম করেছেন। অন্যদিকে বাতিল শক্তি সত্যের টুঁটি চেপে ধরে আল্লাহর নুরকে ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চেয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী, যুগে যুগে তাদের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। হক ও বাতিলের লড়াই চিরন্তন। ইব্রাহীম (আ.) ও নমরুদের, মূসা (আ.) ও ফেরাউনের, হযরত মুহম্মদ (সা.) ও আবু জেহেলের লড়াই এর ধারা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। তাঁরা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু তাদের উত্তরসূরিরা আজোও দেশে দেশে কালেমার ঝাণ্ডাবাহী সৈনিকদের জেল জুলুম ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে স্তব্ধ করে দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর প্রতিটি জনপদে ইসলামের ঝাণ্ডাবাহী সৈনিকরা লড়াই করে আজোও কালেমার দাওয়াত মানুষের কাছে পেশ করছে। ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস বেদনায় ভরপুর রক্তে ভেজা কঠিন সংগ্রামের ইতিহাস। শহীদ হাসান আল বান্না, শহীদ আব্দুল কাদের আওদা, শহীদ কুতুবের শাহাদাতের ইতিহাস এ কথারই সাক্ষ্য বহন করে। আমরা অনেক ইতিহাস ও ঐতিহাসিকের নাম জানি। কিন্তু যারা ইসলামী আন্দোলন করতে গিয়ে আল্লাহর রাহে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাদের ইতিহাস ভুলতে বসেছি।
সৃষ্টির সূচনা থেকে ইসলামের সাথে বাতিলের দ্বন্দ্ব বিদ্যমান। যুগে যুগে যারাই সত্য ও ন্যায়ের পথে মানুষকে দাওয়াত দিয়েছেন তাদেরই জীবনে নেমে এসেছে অমাবস্যার অন্ধকার। পৃথিবীতে এমন একটি জাতি বা দল আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে কি যারা আল্লাহর পথের দাওয়াতের বিনিময়ে গোলাপের পাপড়ি উপহার পেয়েছেন? এটা নতুন কিছু নয়। ইসলামের ইতিহাস এখনও যে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়নি এটাই বিশ্বনিয়ন্তার একান্ত করুণা। ইসলামের অনেক ইতিহাস মিসরের মাটি বালির সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। মিসরের মাটিতে হযরত হারুন (আ.), হযরত মূসা (আ.), ইলিয়াস (আ.), হযরত সালেহ (আ.), হযরত ইউসুফ (আ.), ইমাম শাফী (রাহ.) মতো বরেণ্য অনেক গুণীজন জন্মগ্রহণ করেছেন। যে দেশের মাটিতে নবী রাসূলের স্মৃতি আজোও বহমান সেই দেশে অভিশপ্ত ফেরাউন ও জন্মগ্রহণ করেছে। এ থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যেখানে মুসা সেখানে ফেরাউনের আবির্ভাব হয়েছে। ইসলামের সাথে দুশমনি করার পরিণতি কি হতে পারে তা বুঝানোর জন্য দুনিয়া ও আরশের অধিপতি অভিশপ্ত ফেরাউনের লাশ মমি করে রেখে দিয়েছেন, যাতে করে নব্য ফেরাউনেরা শিক্ষা নিতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, পৃথিবীর জালেমশাহী স্বৈরাচারেরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না।
মহান আল্লাহ তায়ালার নাযিল করা জীবন বিধানের বিরোধিতা করার অপরাধে যে মিসরের নীলনদে ফেরাউন ডুবে মরলো, সেই মিসরে নব্য ফেরাউনের প্রেতাত্মারা আল কোরানের সৈনিকদের সাথে পূর্বের ফেরাউনের মতোই ঘৃণ্য আচরণ করেছে। চাওয়া পাওয়ার এই পৃথিবীতে নানা যুগে বিভিন্ন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। সূর্যের আলোতে অন্য নক্ষত্র দেখা যায় না, কিন্তু রাতের আকাশে নক্ষত্রগুলো ঠিকই ভেসে ওঠে। ঠিক একই ভাবে শহীদ আব্দুল কাদের আওদাহ মিসরের জমিন আলোকিত করেছিলেন। তিনি এক বিস্ময়কর প্রতিভা, অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, সমকালীন বিশ্বকে কাঁপিয়ে তোলার মতো এক অবিস্মরণীয় নেতা ছিলেন। মিসরে যেমন ফেরাউন জামাল নাসেরের মতো ইসলামবিরোধী অসাধারণ প্রতিভার জন্ম হয়েছে, তেমনি আব্দুল কাদের আওদার মতো অসংখ্য ইসলামী প্রতিভার জন্ম হয়েছে। মিসরে স্বৈরাচারী সরকার কালের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের গুলী করে, ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে নির্মমভাবে শহীদ করেছে। তাদেরই একজন ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের পুরোধা বীর মুজাহিদ শহীদ আব্দুল কাদের আওদাহ (রা.)। দুনিয়ার সকল নির্যাতিত নিপীড়িত, মজুলম পরিবারের জ্ঞাতার্থে তার কিছু কাহিনী তুলে ধরছি:
মানুষের কীর্তি মানুষকে চিরভাস্বর করে রাখে। মৃত্যুর পরেও কিছু মানুষ হয়ে থাকে অমর। প্রকৃতপক্ষে মানুষ তার বয়সের জোরে কেবল মানুষের মনের স্মৃতিতে বেঁচে থাকে না। মানুষ বেঁচে থাকে তার পূর্ণ গৌরবময় কর্মের দ্বারা। শুধু মিসর বললে ভুল হবে, সারা বিশ্বের অগণিত মানুষ আজাও সাইয়েদ কুতুব, হাসানুল বান্নার মতো শহীদ আব্দুল কাদের আওদা (রাহ.)র স্মৃতি হৃদয়ে লালন করছেন। পিরামিডের দেশ মিসরে জন্মগ্রহণ করেন ইখওয়ানের প্রথম সারির নেতা বীর মুজাহিদ আব্দুল কাদের আওদাহ। তিনি শহীদী মৃত্যুর পেয়ালা পান করে এক যোগ্য ও আদর্শ নেতৃত্বের গুণসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের উদাহরণ মিসরের মানুষের সামনে রেখে গেছেন। মিসরের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনি অনন্য ও অদ্বিতীয়, যিনি আদর্শের জন্য লড়াই করতে ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও ঈমানের জয়গান গেয়েছেন। তাঁকে যখন ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন আল্লাহর এই বান্দা নির্ভিক কণ্ঠে উচ্চারণ করছিলেন, ‘আমি কোথায় কিভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছি, এটা আমার মাথাব্যথার কারণ নয়। আমি যে মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করার সুযোগ পেয়েছি এটাই আমার জীবনের সব চাইতে পরম পাওয়া। 
আব্দুল কাদের আওদাহ আইন বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি তৎকালীন মিসর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত দ্বীনদারীর সাথে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি সরকারের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনকারী সময়ে সুয়েজ খালের পূর্বদিকের কলেজ এলাকায় নির্বাচনী পরিদর্শক হিসেবে গেলে দেখতে পান, মিসরের পার্লামেন্টের সদস্য প্রার্থী ইখওয়ানুল মুসলিমীনের নেতা ইমাম হাসানুল বান্নার বিরুদ্ধে সরকার ন্যক্কারজনকভাবে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। নির্বাচনে হাসানুল বান্নার নিশ্চিত বিজয় জেনে সরকার তাকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যে হীনপথ অবলম্বন করছে। নির্বাচনের এই অবস্থা দেখে সত্য ও ন্যায়ের পূজারী আবদুল কাদের আওদাহ বীর মুজাহিদের মতো গর্জে ওঠলেন। সশরীরে তিনি হাসানুল বান্নার নির্বাচনী এলাকা ইসমাইলিয়ায় উপস্থিত হয়ে এক বিরাট জনসভার ব্যবস্থা করেন। তিনি সরকারের ন্যক্কারজনক হীন আচরণের প্রতিবাদে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, যদি কোনো ব্যক্তি সরকারের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সরকারের পেটুয়া বাহিনী কর্তৃক কোনো রকমের অসুবিধার শিকার হন তাহলে আমি আপনাদের সহযোগিতা করবো।
একজন ন্যায়নিষ্ঠ বিচারক হিসেবে গোটা মিসরে তাঁর সুনাম সুখ্যাতি ছিল অতুলনীয়। জজ থাকাকালীন সময়ে তিনি কখনো পথভ্রষ্ট বা লোভের বশবর্তী হয়ে কোন রায় দেননি। তিনি সর্বদা বলতেন আমি একদিকে বিচারক আরেক দিকে আমি একজন মুসলমান। যেখানে আইনের শাসন নেই, সেখানে বিবেকবান একজন জজের পক্ষে ন্যায় বিচার করা সম্ভব নয়। যেখানে যার লাঠি তারই মেষ নীতি প্রবর্তিত- যেখানে লুটতরাজ জুলুমের বৈধতাকে আইন বলে চালিয়ে দেয়া হয়, জালেমদের ক্রীড়নক হয়ে যেখানে আইনের বাণী নির্জীব হয়ে পড়ে, যেখানে শাসকদের জ্বী হুজুর করার সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়, মিথ্যাচার ও স্বেচ্ছাচারিতাকে যেখানে আইন বলে চালিয়ে দেয়া হয়, স্বৈরাচার ও চরিত্রহীনতাকে যেখানে উন্নতির মানদণ্ড বলে গ্রহণ করা হয়, সেখানে একজন বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তি কি করে নির্বিকার থাকতে পারে? ইখওয়ানুল মুসলিমীনের কর্মীদের ওপর কায়েমী স্বার্থন্বেষীদের নির্মম বর্বরতা দেখে আবদুল কাদের আওদাহ (রাহ.) বলেন, একটি দেশে ইসলামের শাসনতান্ত্রিক স্বীকৃতি থাকা সত্ত্বেও সরকার ও শাসকবর্গ যেখানে ইসলাম বিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকবে, সেখানে কোনো সুস্থ বিবেকবান জজ বিচার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে না। তিনি আরো বলেন, যে দেশের জনগণ নিজেদের জীবনকে আল্লাহর পথে উৎসর্গ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না, সে দেশের ইসলামী আন্দোলনও বিলীন হয় না। 
ইখওয়ানের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের যে স্টিম রোলার চালিয়েছে রাষ্ট্রশক্তি তা পৃথিবীর ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। একদিকে বিপ্লবী সরকার ফেরাউন, নমরুদ, চেঙ্গিস ও হালাকু খানের স্মৃতি সজীব করে তুলছিল। অপরদিকে ইখওয়ানের হাজারো বন্দী নেতাকর্মীরা বেলাল, খোবাইব এবং সাঈদ বিন জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো ইসলামের পতাকাকে মিসরের বুকে উড্ডীন করে রাখার জন্য জীবন দিয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষী, ১৯৫০ সনে মিসরের জালিম স্বৈরাচার শাসক অন্যায়ভাবে ইখওয়ান মুসলিমীনকে বেআইনী ঘোষণা করে। তাদের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। তখন আবদুল কাদের আওদাহ ছিলেন বিচারপ্রতি। ইখওয়ানুল মুসলিমীন সরকারের ঘোষণার বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন দায়ের করে। আবদুল কাদের আওদাহ মামলার শুনানি গ্রহণ করে ইসলামী আন্দোলনের অপ্রতিরোধ্য সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের পক্ষে রায় দিয়ে মিসরের জনগণের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নেন। মহান আরশের অধিপতির করুণায় তিনি ইখওয়ানুল মুসলিমীনের বিস্তারিত কর্মসূচি সম্পর্কে অবহিত হয়ে ইখওয়ানে যোগদান করেন। শুধু যোগদান করেই তিনি নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে বিচারপতির আসন ত্যাগ করে উকিল হিসেবে কোর্টে যোগদান করলেন। কারও কারও মনে অবিশ্বাস্য হতে পারে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, শহীদ আবদুল কাদের আওদাহ দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে এক আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় সব কিছু ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এরকম দৃষ্টান্তের নজির যদি আজোও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা দিতে পারে, তাহলে তাদের বিজয় হবেই ইনশাআল্লাহ। 
শহীদ আবদুল কাদের আওদাহর ন্যায় নীতির ইতিহাস: শহীদ আবদুল কাদের আওদাহ ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। তিনি ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব প্রজ্ঞা ধৈর্য্য ও খোদাভীরুতার সাথে পালন করেছেন। তিনি কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে বইটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তা হলো-ইসলামের ফোজদারী আইন (আততাশরীহুজ জিনায়িল ইসলামী) এটি দুটি বৃহৎ খণ্ডে সমাপ্ত। এই গ্রন্থটি পৃথিবীর আইনজীবী মহলের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত হয়েছে। 
তিনি এ গ্রন্থ ১৯৫১ সালে রচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থের শ্রেষ্ঠত্ব এবং বিশেষ অবদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, লেখককে ‘ফয়াদুল আউয়াল’ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। কিন্তু এ গ্রন্থের লিখিত দুটি কথার উপর মিসর সরকারের অবজেকশন ছিলো। সরকারের পক্ষ থেকে আবদুল কাদের আওদাহর উপর চাপ প্রয়োগ করে শর্ত আরোপ করা হলো গ্রন্থ থেকে দুটি বাক্য বাদ দিতে হবে। একটি হলো- ইসলামে রাজতন্ত্রের কোনো স্থান নেই। অপরটি হলো, ইসলামে কোন বিচারকই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। ইসলামী আন্দোলনের এই বীর মুজাহিদ স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি যা লিখেছেন, তা কোরআন হাদীস অনুযায়ী লিখেছেন। সে জন্য তিনি এই বাক্যগুলো মুছে ফেলতে অস্বীকার করেন। এবং সরকারি পুরস্কারও প্রত্যাখ্যান করেন। যার মূল্য ছিল তৎকালীন মূল্যে এক হাজার মিসরীয় পাউন্ড। 
ফাঁসির মঞ্চে আবদুল কাদের আওদাহ : শহীদ আবদুল কাদের আওদাহ দুনিয়ার পূজারী ছিলেন না। তিনি মিসরের জনগণের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান দখল করতে পেরেছিলেন। একজন সরকারি জজ হয়েও মিসরের প্রচলিত আইন কানুনের সমালোচনার ঝড় তাঁর বক্তব্য বিবৃতির বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছিল। তিনি জনগণের উদ্দেশ্যে বলতেন মিসরের জনগণের মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে ইসলামী আইনের বাস্তব রূপায়ণ। তিনি যখন জজ ছিলেন তখন প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে আদল, ইনসাফও সুবিচারের ফর্মুলায় ফেলে বিচার করতেন। যুগে যুগে যারাই ইসলামের কথা বলেছে তারই রাষ্ট্রশক্তির রোষানলের শিকার হয়েছে। এ ইতিহাস নতুন কিছু নয়। তবে মিসরের স্বৈরশাসক জামাল নাসেরের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার ইখওয়ানের হাজারো নেতাকর্মী। 
ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তা নাসের কল্পিত অভিযোগ এনে তাদেরকে জেলের কুঠরিতে বন্দী করে রাখে। সত্য পথের যাত্রীদের জীবনে নেমে আসে অমাবস্যার নির্মম কালো এক অধ্যায়। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির গোলাম মিসরের জালেমশাহী সরকার বিচারের নামে প্রহসন করে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের জেল ও ফাঁসি দেয়া শুরু করে। 
মিসরের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে যে সকল মুজাহিদ ফাঁসির রশিকে হাসি মুখে গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে শহীদ আবদুল কাদের আওদাহ ছিলেন অন্যতম। তার মৃত্যুর এত বছর পরও আমরা পৃথিবীবাসীরা তাকে আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। কারণ আবদুল কাদের আওদাহ একটি নাম একটি জীবন্ত ইতিহাস। অবিনাশী এক শক্তির নাম। 
১৯৫৪ সনে নাসের সরকার ইখওয়ানকে বেআইনী ঘোষণা করে। সে সময়ে আব্দুল কাদের আওদাহকেও বন্দী করা হয়। কারণ মিসরের জনগণ তাকে খুব সম্মানের চোখে দেখতো। কিন্তু আল্লাহর এই বান্দা ইসলামের প্রতি অগাধ ভালোবাসার কারণে বাধ্য হয়ে তখন জেনারেল নজীব ও কর্নেল নাসেরের মধ্যে পার্লামেন্টারি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। 
জেলখানার ভেতরে ইখওয়ানের নিরীহ নেতাকর্মীদের উপর যেভাবে জুলুম নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়েছে ঠিক একই কায়দায় ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণ পুরুষ শহীদ আবদুল কাদের আওদাহর উপর নির্যাতন চালানো হয়। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ এনে বিচারের নামে অবিচার করা হয়। ইখওয়ান নেতৃবৃন্দের শাহাদাত সম্পর্কে মিসরের বিখ্যাত দৈনিক ‘আল-মিসরী’র সম্পাদক আহমদ আবুল ফাতাহ রচিত গ্রন্থ ‘জামাল আবদুন নাসর’ থেকে একটি উদ্ধৃতি পাঠকদের খেদমতে পেশ করছি। কারণ তার ক্ষুরধার লেখনির মধ্যে বিচারের নামে যে প্রহসন করা হয়েছে তা ফুটে উঠেছে। আহমদ আবুল ফাতাহ লিখেন: ‘‘গ্রেফতারকৃত ইখওয়ানদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা পরিচালিত হয় সে আদালতে, জামাল আবদুন নাসের যার নাম পিপলস কোর্ট (মাহকামাতুশ শা’বা) অভিহিত করে। এ আদালত ছিল তিনজন জজের সমন্বয়ে গঠিত। আর এই তিনজনই ছিল জামাল নাসেরের সহকর্মী এবং বিপ্লবী পরিষদের সদস্য। প্রকাশ থাকে যে, এ ধরনের বিচার কার্যক্রম লজ্জাজনক নাটক ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আরোপ করা হয়। কিন্তু তারা যখন আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন তখন তাদের দেহ ও মুখম-লের ওপর পাশবিক নির্যাতনের চিহ্ন সুস্পষ্ট হয়ে উঠতো। অথচ ‘জজ’রা একবারও আদালতে এ নির্মম শাস্তি নির্যাতনের বিষয় উত্থাপন করেনি।”বিচারে নামে যে অবিচার করা হয়েছে তা আহমদ আবুল ফাতাহার লেখনির মধ্যেই সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এ কথা তো দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের বিরোধিতার কারণে ইখওয়ানের নেতাদের ফাঁসির রশিতে ঝুলতে হয়েছে। যে আদালতের মাধ্যমে নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছিল, সে আদালত নাসেরের আজ্ঞাবহ আদালত ছিল।
আদালত সাত ব্যক্তিকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন আবদুল কাদের আওদাহ। তিনি ছিলেন ইখওয়ানের আধ্যাত্মিক নেতা। নাজীব ও ইখওয়ানের মাঝে তিনিই ছিলেন মধ্যস্থতাকারী। আদালতের ভেতর তিনি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর অত্যন্ত বিজ্ঞজনোচিত বক্তব্য পেশ করেন এবং তাকে যখন মৃত্যুর পরওয়ানা শোনানো হয়, তখন তিনি মুচকি হেসে কৃতজ্ঞ চিত্তে তা গ্রহণ করেন। ইতিহাস সাক্ষী আল্লাহর এই বান্দা দুনিয়ার আরাম আয়েশের চেয়ে পরকালের মুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। ফাঁসির মঞ্চের দিকে যাওয়ার সময় আরবী কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন তিনি। যার মর্ম হলো-‘আমি যদি আল্লাহর পথে জীবন দিতে পারি, তবে আমার কোনো কিছুর পরওয়া নেই।’
তিনি তার মাথা উঁচু করে আরো বলেছিলেন- ‘ আমার রক্ত বর্তমান সরকারের জন্য অভিশাপে পরিণত হবে।’ আবদুল কাদের আওদাহ ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান ছিলেন বলেই আল্লাহর রাহে নিজের প্রিয় জীবনটুকু বিলিয়ে দিয়েছেন। ঈমানদার ব্যক্তি কখনও বিপদে আপদে ধৈর্য হারায় না। জীবনের চরম মুহূর্তে সে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে। যে কোনো ধরনের বিপদই আসুক না কেন ঈমানদারেরা কেবল আল্লাহর ওপরে ভরসা করে থাকে। দুনিয়ার কল্যাণের চেয়ে আখেরাতের কল্যাণকে বেশি পছন্দ করে ঈমানের বলীয়ান থাকে বীর মুজাহিদ। কারণ ঈমানদার এ কথা জানে যে, বিপদের মধ্যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। 
আম্বেয়ায়ে কেরামগণের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে দেখতে পাই, যারাই ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করে কালেমার দাওয়াত দিয়েছেন তারাই যড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। মহান অধিপতির নিকট প্রার্থনা করছি তিনি যেন শহীদ আবদুল কাদের আওদার দোষ ত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।

রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

আতঙ্কের জনপদ ঝিনাইদহ : তুলে নেয়ার পর লাশ মিলেছে ২৩ জনের


ছেলের চিৎকার শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন মা। দেখেন- ছেলের হাতে হাতকড়া। পাশে দুটি মোটরসাইকেল। চালকের আসনে দুজন। আরও দুজন আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে আছেন তার একমাত্র ছেলেকে। মা কিছুই বোঝেন না। জড়িয়ে ধরেন ছেলেকে। আর্তনাদের সঙ্গে আগন্তুকদের জিজ্ঞেস করেন তোমরা আমার ছেলেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? অনুনয়-বিনয় করে বলেন, আমার ছেলেকে রেখে যাও। কিন্তু সেই মায়ের আর্তনাদ আর অনুনয়-বিনয়ে মন গলেনি তাদের। নিজেদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে দ্রুত এলাকা ছাড়ে মোটরসাইকেল বাহিনী। পরে ২৬ দিন নিখোঁজ থাকার পর ছেলের গুলিবিদ্ধ লাশ মিলেছে বুধবার। এ ধরনের ঘটনা এখন নিয়মিতই ঘটছে ঝিনাইদহে।
গত ১৮ই মার্চ। দুপুর বেলা। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামে এই মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিখোঁজ হন আবুজার গিফারী নামে অনার্সপড়ুয়া ছাত্র। শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এখন সেই মা-ও শয্যাশায়ী। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মা এখন পাগলপ্রায়। বাবা নূর ইসলাম কালীগঞ্জ বাজারের সেলুন ব্যবসায়ী। তিনিও ভেঙে পড়েছেন একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে। লাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত সারাক্ষণ ডুবে ছিলেন ছেলের চিন্তায়। ছুটেছেন প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে। যে যা বলেছেন তাই শুনেছেন। তবুও লাভ হয়নি কোনো। এদিকে একইদিনে একই ভাগ্যবরণ করেছেন অনার্সপড়ুয়া আরও এক মেধাবী ছাত্র শামীম। তার বাড়ি একই উপজেলার বাকুলিয়া গ্রামে। তার পরিবারও বিপর্যস্ত। গত ২৪শে মার্চ নিখোঁজ হয়েছিলেন শামীম। তার গুলিবিদ্ধ লাশও মিলেছে আবুজার গিফারীর সঙ্গেই। এই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গত তিন বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর লাশ হয়েছেন আরও ২১ জন।
২৭ অপহরণ, মিলেছে ২৩ জনের লাশ: ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম (৩৭), ইউসুফ আলী বিশ্বাস (৪০), উজ্জ্বল হোসেন (৩২), আসাদুল ইসলাম (৩০), মফিজুল হক, এনামুল হক বিশ্বাস (৫৫), ইউপি সদস্য হাফেজ আবুল কালাম (৩৮), হাদিউজ্জামান হাদি (৪০), সোহাগ সরদার (৩০), মইনুদ্দিন, গোলাম আজম ওরফে পলাশ (২৮), দুলাল হোসেন (২৯), মিরাজুল ইসলাম, তৈমুর রহমান তুরান (৩৫), ছব্দুল হোসেন (৪৫), এনামুল হোসেন (২৩), রবিউল ইসলাম রবি (৪৭), শরিফুল ইসলাম নজু, আবু হুরাইরা (৫২), হাফেজ জসিম উদ্দীন। একজনের লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ লাশ পাওয়া যায় আবুজার গিফারী ও শামীম মাহমুদ নামে অনার্সপড়ুয়া দুই ছাত্রের। নিখোঁজ রয়েছেন আইয়ুব, আজাদ হোসেন এবং মোফাজ্জেল হোসেন এবং একাদশ শ্রেণির ছাত্র মহিউদ্দিন সোহান।
আতঙ্কের জনপদ: এ অবস্থায় আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে পুরো জেলা। এসব অপহরণ বা তুলে নেয়ার ঘটনা বেশির ভাগ প্রকাশ্যে ঘটলেও ভয়ে অনেকেই মুখ খুলতে চান না। চাপালী গ্রামের আবুজার গিফারী যশোর এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্র। তিনি এবার ৩য় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগেই এই ঘটনার শিকার হলেন। গিফারীর পিতা মো. নূর ইসলাম জানান, ঘটনার দিন (১৮ই মার্চ) জুমার নামাজের পর বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির কাছাকাছি এলে দুই মোটরসাইকেলে করে চার ব্যক্তি তার ছেলেকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাতকড়া পরায়। এ সময় সে চিৎকার দিলে বাড়ির ভেতর থেকে তার মা বেরিয়ে আসেন। ছেলেকে এই অবস্থায় দেখে তিনি জড়িয়ে ধরেন। তাকে ধাক্কা দিয়েই অস্ত্রধারীরা গিফারীকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যায়। নূর ইসলাম বলেন, এ ঘটনার পর সঙ্গে সঙ্গেই তিনি থানায় যান। কিন্তু তারা অস্বীকার করে। পরদিন জিডি করতে গেলে তারা জিডির কপি রেখে দেয়। ডিউটি অফিসার জানান, ওসির সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু জিডি এন্ট্রি করেনি। পরে ওসির কাছে গেলে তিনি জানান, বিষয়টি নলেজে আছে। এদিকে অসহায় ওই পিতা ছেলেকে ফিরে পেতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রভাবশালীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। এ ঘটনায় তিনি এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। ছেলেকে ফেরত পেতে তিনি ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের কাছে আবেদনও করেছিলেন। আশ্বাসও পেয়েছেন কোনো কোনো জায়গা থেকে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে অবেশেষে মিলেছে লাশ। গত ২৫শে মার্চ একই কায়দায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয় ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র বাকুলিয়া গ্রামের শামীমকে। শামীমের পিতা রুহুল আমিন জানান, ঘটনার দিন তার ছেলে মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের পাশে একটি ফার্নিচারের দোকানে পত্রিকা পড়ছিল। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চার ব্যক্তি এসে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে নিখোঁজ ছিল ছেলে। রুহুল আমিন বলেন প্রত্যক্ষদর্শীরা তাকে জানিয়েছেন, তাদের কোমরে পিস্তল এবং সাদা চেইন ছিল। পরে তিনি থানা পুলিশের কাছে গেলে থানা ডিজি নেয়নি। র‌্যাব অফিসেও খোঁজ নিয়েছেন। তারাও জানিয়েছিলেন এ বিষয়ে কিছু জানে না। এদিকে রোববার একই উপজেলার ইশ্বরবা গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে মহিউদ্দিন সোহানকে তার নিজ গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়দানকারীরা। এলাকাবাসী জানায়, ইজিবাইকে করে চার ব্যক্তি এসে তাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়।
জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, এখানে স্থানীয় সাংবাদিক আছে। আপনি যেকোনো ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আপনার সঙ্গে কেন আমি কথা বলবো? সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে তুলে নিয়ে কালিগঞ্জের তিন শিক্ষার্থীর প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলেই তিনি বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। এই বলে তিনি মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।


বাংলাদেশ বার্তা: এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত বলেন, দেশে গণমাধ্যমের উপর ফ্যাসিবাদের নগ্ন থাবা বিস্তার করেছে সরকার। যারাই সরকারের দেশ ও গণতন্ত্র বিরোধী ষড়যন্ত্র নিয়ে কথা বলছে তাদের উপরই নেমে এসেছে জুলুম নির্যাতন। আজ অন্যায় ভাবে বাংলাদেশের প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে একটি হাস্যকর মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সাংবাদিক নির্যাতনে সরকার অতিতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। দীর্ঘদিন থেকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে আমারদেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ অনেক সাংবাদিককে। ইতমধ্যে দমন নিপিড়ণের কারণে বহু সাংবাদিক দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে উদ্বেগ জনালেও সরকার তাতে কর্ণপাত করছে না। বরং তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্য প্রচার করায় অনেক টিভি চ্যানেল ও পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব ঘৃণ্য অপকর্মের নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। প্রবীণ সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার সরকারের সাংবাদিক নির্যাতনের এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সত্যকে মোকাবেলা না করে সংবাদ কর্মীদের গ্রেপ্তার নির্যাতন কাপুরুষতা এবং স্বৈরাচারী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। এর পরিণতি শুভ হবেনা। অবিলম্বে শফিক রেহমানসহ সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার আদায়ে ছাত্রসমাজ সাংবাদিক সমাজের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে রাজপথে নেমে আসবে।
নেতৃবন্দ অবিলম্বে শফিক রেহমানসহ সকল সাংবাদিকদের মুক্তি এবং বন্ধ গণমাধ্যম গুলোকে খুলে দিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬

বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিল করুন : ওআইসি মহাসচিব

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় বাতিলের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভক্কারীদের ওপর যেভাবে গুলি ও সহিংসতা চালনো হচ্ছে তা বন্ধ করে অচিরেই বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবি জানান অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কনফারেন্সের (ওআইসি) মহাসচিব ড. একমেলুদ্দীন এহসানুগ্লু। গতকাল ওআইসি মহাসচিব এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান।
তিনি বিবৃতিতে আরো বলেন, বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়নের ফলে বাংলাদেশে যে ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আমরা তা গভীরভাবে পর্যবেণ করছি। সেই সাথে অচিরেই জাময়াত সমর্থক সাধারণ নাগরিক ও পুলিশসহ নিরাপত্তা কর্মীদের সাথে যে সংঘর্ষ চলছে তা বন্ধের উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, সরকার বিরোধী দলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে দেশের স্বার্থে উত্তম পন্থা খুঁজে বের করবে। পুলিশ বাহিনী দিয়ে সহিংসতা এমন চরম আকার ধারণ করেছে যে দেশ এক অকল্যাণকর রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। গত মাসে জামায়াত নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে দেয়া ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে আর আহত হয়েছে কয়েক হাজার। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনকে তোয়াক্কা না করে যে রায় দেয়া হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা আইনজীবীদের কার্যক্রম ইতোমধ্যে ন্যায়বিচারের েেত্র সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে সন্দেহ পোষণ করছে।
তিনি আরো বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছে আর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়ার এমন লোকদের বিচারের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে যে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে তা সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুনের পরিপন্থী। দলীয় ট্রাইব্যুনালে কোনো অবস্থাতেই ন্যায়বিচার আশা করা যায় না। তা ছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করার কারণে বিদ্বেষ পোষণ করা হচ্ছে। আর যাদের ওপর অভিযোগ আনা হয়েছে তারা বাংলাদেশের বৃহৎ ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। ১৯৭১ সালে তারা পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতে না চাইলেও স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের স্বাধীনতা হেফাজতে ভূমিকা পালন করে আসছেন। তিনি সবাইকে দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার ও ইসলামী ব্যাংকসহ সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান।

যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে জয়ের অসত্য বয়ান -ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম


গত ৭ মার্চ ২০১৬ ওয়াশিংটন টাইম ম্যগাজিনে “ওয়ারক্রাইমস জাস্টিজ ইন বাংলাদেশ” শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও সরকারের প্রধান তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ। বাংলাদেশের অনেক জাতীয় সংবাদপত্রে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। স্যোসাল মিডিয়ায় এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এরআগে ২০০৭ সালে জনাব জয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যাগাজিনে লিখেছিলেন, “বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে ৪০০ গুণ বোরকার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের।” বিদেশী একজন ব্যক্তির সাথে যৌথভাবে লেখা প্রবন্ধ নিয়ে সেই সময়ও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রিয় তাই লেখাটি মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। সজীব ওয়াজেদ জয় এমন সময় অসত্য তথ্য দিয়ে বিদেশী পত্রিকায় এই প্রবন্ধটি লিখলেন, যখন যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে একের পর এক বিরোধী নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, সমালোচনা, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত। 
প্রবন্ধের শুরুতেই জনাব সজীব ওয়াজেদ লিখেছেন-“বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি) নিয়ে বাইরে বেশ কিছু সমালোচনা হচ্ছে”। জনাব জয় তার প্রবন্ধে আংশিক সত্য স্বীকারের জন্য প্রথমেই তাকে ধন্যবাদ। প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে তিনি অনেক অসত্য ও ইতিহাস বিকৃত তথ্য দিয়েছেন যা সরকারের একজন তথ্য উপদেষ্টার কাছ থেকে জাতি ও তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাশা করে না। জনাব জয় সাহেব হয়ত ভাবতে পারেননি ওয়াশিংটনের প্রবন্ধ দেশের মানুষ ইন্টারনেটের বদৌলতে এত সহজে পেয়ে যাবে? স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে এত আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠবে? সম্ভবত ইতিহাস বিকৃতিই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অপরাধ। 
বর্তমান আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে মানবাধিকার এখন মানুষের জীবনের অ-খন্ডিত চেতনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে মনে করা হতো, মানবাধিকার কেবল কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাই কোন রাষ্ট্রে নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে অপর কোন রাষ্ট্র তা নিয়ে মাথা ঘামাতো না। কিন্তু এখন তা মনে করার কোন সুযোগ আছে কি? আইনের বিপত্তি ও বির্যয়ের কারণে পৃথিবীতে মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুন্ঠিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী সরকারের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, হত্যা, গুম, জুলুম, লুটপাট, লুন্ঠন ও রাহাজানি অক্টোপাশের মত গোটা জাতিকে ঘিরে ফেলেছে।
এই বিচারের ব্যাপারে জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশ, মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজ্ঞরা যখন সমালোচনা করছেন তখন সরকারের একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির প্রবন্ধ গুরুত্ব সহকারেই বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন- “বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারে প্রশ্ন তোলার অধিকার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নেই’। ‘যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে বলে দিতে চাই, যখন এ দেশে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হলো, দুই লাখ মা-বোনের ইজ্জত নেয়া হলো, এক কোটি মানুষকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হলো তখন আপনাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল?” তাহলে জনাব জয় ইনিয়ে বিনিয়ে সে দেশের ম্যাগাজিনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রবন্ধ লিখে বিদেশিদের সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করছেন কেন? 
১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের মানবাধিকারের সার্বজনীন সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও যুদ্ধাপরাধ ইস্যু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বলে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন করবার কোন সুযোগ নেই। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মনোভাব যেন “আমার মুরগী আমি যেভাবে ইচ্ছা জবাই করব কার কি বলার আছে।” এই প্রবাদের মতোই। বর্তমান সভ্য দুনিয়ায় এটি একটি বিকৃত চেনতা।
এই বিচারের জন্য প্রণীত আইন ও বিধিমালা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিশেষজ্ঞগণ প্রশ্ন তুলেছেন। ১৯৭৩ সালের আইনে সংশোধন, দলীয় তদন্ত সংস্থা, মিথ্যা অভিযোগ এবং সাজানো সাক্ষী, স্কাইপি কেলেংকারী, আসামী পক্ষের সাক্ষী গুমের ঘটনায় এ বিচার দারুণভাবে এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সরকার যুদ্ধাপরাধ বিচারকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহার করছে এটি এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য। টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে” বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার, আশঙ্কা করা হচ্ছে সরকার তার পরিচিত প্রতিপক্ষ এবং রাজনৈতিক শত্রুদেরকে দমন করতেই এ বিচারকে ব্যবহার করছে। 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিফেন জে র‌্যাপ, আইনজীবিদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল বার এসোসিয়েশন, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট্স ওয়াচসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থা এ নিয়ে নানা সুপারিশও দিয়েছে। কিন্তু সরকার তাতে কর্ণপাতই করছেনা। বরং সরকার কখনও বলছে এটা দেশীয় ট্রাইবুন্যাল, আবার বলছে, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল, আবার কখনও বলছে, আন্তর্জাতিক মানের দেশীয় ট্রাইব্যুনাল। অথচ আইনজ্ঞগণ স্পষ্টই বলেছেন, এই ট্রাইব্যুনালের না দেশীয় মান আছে, আর না আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং এর দ্বারা একজন নাগরিকের সামান্য অধিকার সংরক্ষণও সম্ভব নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জন বুজম্যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক চিঠিতে ১৯৭১ সালে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আটকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করার অভিযোগ করেছেন। সিনেটর বুজম্যান প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আরো বলেন, যেহেতু আপনার সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলের একনিষ্ঠ মিত্র জামায়াত, সেহেতু জামায়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মাধ্যমে প্রধান প্রতিপক্ষকে দুর্বল করাই হলো ট্রাইব্যুনালের প্রথম কাজ; এ বিশ্বাসই সমাজে এখন বিদ্যমান। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হতে পারে”। তাছাড়া এ বিচারের সাথে আন্তর্জাতিক কোন বিশেষজ্ঞ কে সম্পৃক্ত করা হয়নি। অনুমতি দেয়া হয়নি আসামী পক্ষের বিদেশি আইনজীবিকে দেশে আসার। বরং সরকার কর্তৃক আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ টবি ক্যাডম্যান সহ অনেকেই বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। 
জনাব জয় লিখেছেন-”কিন্তু দেশের ভিতরে যুদ্ধাপরাধের এই বিচার ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে। এ আদালত যে রায় দিয়েছেন তাকে জাতীয় ছুটির মতো উদযাপন করা হয়েছে। দেশাত্নবোধক গান গাওয়া হয়েছে। রাজপথে তাৎক্ষণিক পার্টি হয়েছে। শিশুদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের এপ্রিলে যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের রায় কার্যকরের পর দু’দিন পর্যন্ত ঢাকার রাজপথে ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার মানুষ নেমে আসেন। গত নভেম্বরে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পর একই রকম সমর্থন প্রকাশ পায়”। জনাব জয় আমেরিকায় বসে টিনের চশমা পড়ে বাংলাদেশের বাস্তব পরিস্থিতি কি অস্বীকার করছেন? এই বিচারের প্রতি জনগণ তো দূরের কথা, আওয়ামীলীগেরও সকল নেতা-কমীরও সমর্থন নেই। 
সরকারের রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে করা এই বিচারের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ডাকা প্রতিটি হরতালে জনগণের সমর্থন ছিল স্বত:স্ফুর্ত। ঢাকার রাজপথ ছিল জন-মানব শুণ্য আর দোকান-পাট ও কলকারখানা ছিল বন্ধ। জনগনের সাংবিধানিক অধিকার সভা সমাবেশ করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, এই সবই কেড়ে নিয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার। মিডিয়ার উপর চলছে অ-ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। জামায়াতের দলীয় সূত্র মতে, জনগনের রাজপথের প্রতিবাদ দমন করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যয় করে পুলিশ-র‌্যাবের গুলি, ক্রসফায়ারে এ পর্যন্ত ৬৬৮ জন নিহত, ৭০ হাজার ৩’শ এর অধিক আহত, আটক করা হয়েছে ১ লক্ষ ৫১ হাজারের অধিক, ২ লক্ষ ৩’শ এর অধিক রাজনৈতিক মামলায় ১০ লক্ষ ২ হাজারের অধিক নেতা-কর্মীকে আসামী করা হয়েছে।” দেশের জনগণ এটিকে নিছক রাজনৈতিক হত্যাকা- মনে করে। এই বিচারের প্রতি দেশের ৫% মানুষের সমর্থন নেই। তারপরও জনাব জয় জনগণের সমর্থনের কথা বলেন? 
আওয়ামীলীগের সাবেক প্রবীণ নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন- “আওয়ামীলীগ আগামী নির্বাচনে জিতার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। তিনি আওয়ামীলীগকে নিজের ঘর থেকে বিচার শুরুর আহবান জানান”। কথিত আছে শেখ-হাসিনার বেয়াই, সরকারের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন সহ অনেকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আ.স.ম রব বলেন- “যুদ্ধাপরাধের বিচার রাজনৈতিক ইস্যু”। দেশে-বিদেশে এতসব সমালোচনার পরও সরকার রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে জনমতকে উপক্ষো করে বিচারের নামে নাটক মঞ্চস্থ করে জামায়াত-বিএনপি নেতাদের হত্যা করে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে ফাঁসির মত ঘৃণ্য মৃত্যুদন্ডকে সবাই যখন প্রত্যাখ্যান করছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ফাঁসি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ আওয়ামীলীগের ঘৃণ্য জিঘাংসার বহি:প্রকাশ ছাড়া বৈই কি। এজন্য হযরত আলী (রা:) বলেছেন-“অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অত্যাচারিতের অন্তরে যে-বিদ্বেষাগ্নির জন্ম হয়, তা অত্যাচারীকে ভস্ম করেই ক্ষান্ত হয় না, সে আগুনের শিখায় অনেক কিছুই বষ্মিভূত হয়। সে আগুনে পুড়ছে এখন গোটা দেশ।
মুলত আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে আদর্শিক প্রতিপক্ষকে যেকোন মূল্যে দমন করতে দ্বিধা করছে না তা যতোই আইন, নীতি-নৈতিকতা, সভ্যতা-ভব্যতা ও মানবিকতা পরিপন্থী হোক না কেন। সেই পরিকল্পনা নিয়ে জয় সাহেবরা এগিয়ে যাচ্ছেন। তাদের লক্ষ্য একটাই বিরোধী মতশূন্য বাংলাদেশ। কিন্তু শক্তি প্রয়োগ করে জনগণের বিজয়কে কেউ দমাতে পারেনি। এজন্য জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন-“মিথ্যাবাদীর শাস্তি এই নয় যে, তাকে কেউ বিশ্বাস করে না, সে নিজেই কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না”। 
জনাব জয় লিখেছেন-“কিন্তু ভয়াবহ নৃশংসতা সংঘটনকারী এসব ষড়যন্ত্রকারীরা ৪০ বছরেরও বেশি সময় বিচারের হাত থেকে পালিয়ে ছিল”। জনাব জয় এখানে দারুণ ভাবে ইতিহাস বিকৃত করেছেন। এজন্য শেখ সাদি-বলেছেন-“যুক্তিতে না পারলে শক্তিতে দেখে নেব, এটাই বর্বর নীতি”। জনাব জয় কি ভূলে গেছেন আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীর সাথে একত্রে রাজপথে আন্দোলন করেছে? কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তদানীন্তন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী একসাথে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করেননি? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ নেতা জনাব তোফায়েল, আমু ও আব্দুর রাজ্জাক সাহেবরা জামায়াত নেতাদের সাথে আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে দফায়-দফায় লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক ও একত্রে খাওয়া-দাওয়াসহ পরস্পর অনেক উঠাবসা করেননি? 
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদে আওয়ামীলীগের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দারকে সমর্থনের প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামীলীগের নেতারা অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের কাছে ধরনা দেননি?। জামায়াত নেতাদের মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব করেননি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সেদিন যদি জামায়াত তাদের সাথে সরকার গঠনে রাজি হতো তাহলে হয়তো আজকে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হতো না। তারও আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতা মরহুম শেখ মুজিবর রহমানের সাথে স্বৈরশাসক আইয়ুব ও ইয়াহিয়া বিরোধী আন্দোলনে COP, DAC, PDM-গঠন করে এর মাধ্যমে রাজনৈতিক কর্মকা- যুগপৎভাবে পরিচালনা করেছে এই জামায়াত নেতৃবৃন্দই”। ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সব ভুলে গেলেও দেশের জনগন কিন্তু ইতিহাস ভুলে যায়নি যাবেও না। কথায় বলে- “এক মাঘে শীত যায়না” আর ক্ষমতাও চিরস্থায়ী নয়। 
প্রধানমন্ত্রীপুত্র আরো লিখেছেন-“১৯৭০-এর দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা পুনর্গঠন করেন তিনি। শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালে তার রাজনৈতিক শত্রুরা হত্যা করার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ওই উদ্যোগ ভেস্তে গিয়েছিল”। হ্যাঁ এ কথা সত্য যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান নিয়েছিলেন। তদন্ত করে যুদ্ধাপরাধীদের ১৯৫ জনের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। তালিকাভূক্ত সবাই ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসার। কোন বেসামরিক নাগরিকের নাম ঐ তালিকায় ছিল না। বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে যারা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সহযোগীতা করেছিল তাদের বিচারের জন্য দালাল আইন করা হয়। এই আইনে লক্ষাধিক লোককে গ্রেফতার করা হয়। ৩৭ হাজার ৪ শ ৭১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ২ হাজার ৮ শ ৪৮ জনকে বিচারে সোপর্দ করা হয়। বিচারে ৭ শ ৫২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এদের মধ্যে এই জামায়াত নেতাদের কেউই ছিলেন না। 
জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে সারা দেশের কোন থানায় কোন মামলা দায়ের তো দূরের কথা একটি সাধারণ ডায়েরীও করা হয়নি। উপরন্তু ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ৫ বছর মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ পুনরায় ক্ষমতায় থাকার পরও বর্মতান গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধের যুদ্ধাপরাধ অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উত্থাপন করেননি। এখন জামায়াত আওয়ামী বিরোধী জোটে আছে বলেই বিচারের নামে নেতৃবৃন্দকে হত্যার এই ঘৃন্য প্রয়াস। শেখ মুজিবুর রহমান উপমহাদেশের শান্তির কথা চিন্তা করেই সিমলা চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের রাজনৈতিক সমাধান করে যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তার কন্যা শেখ হাসিনা তা লঙ্ঘন করে তার সাথে দ্ধন্ধে জড়িয়ে পড়ছেন? ইতিহাস হয়ত একদিন প্রমাণ করবে তা উদ্যোগ যথার্থ ছিলনা। 
শেখ মুজিবুর রহমান ঐ সময় রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে কোন দল বা ব্যাক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেনি। মালেক মন্ত্রিসভায় সদস্য এবং পিস কমিটির কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ের কোন নেতাকে ওখানে শামিল করা হয়নি। রাজনৈতিকভাবে শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন সবুর খান সাহেব, তাকে বাংলাদেশের স্থপতি মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব নিজেই জেলখানা থেকে মুক্ত করে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে বাড়ি পৌছে দিয়েছিলেন। জুলফিকার আলী ভুট্টো সাহেবের নেতৃত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্যই ১৯৫ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অথচ জুলফিকার আলী ভুট্টোই জেনোসাইডের নায়ক। সেই ভুট্টো সাহেব চুয়াত্তরে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং নজিরবিহীন রিসিপশন পেয়েছিলেন। আওয়ামীলীগ কি এসব ইতিহাস অস্বীকার করতে পারবে? 
ব্ল্যাক স্টোন-বলেছেন “একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে ভোগানোর চেয়ে দশজন দোষী ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া ভালো”। মতিউর রহমান নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন-“ন্যায়বিচার হলে নিজামী খালাস পাবেন। একই কথা বলেছেন প্রধান আইনজীবী ব্যরিস্টার আব্দুর রাজ্জাক- “একজন আইনজীবী হিসেবে আমি বলতে চাই, মানবতাবিরোধী অপরাধে যে চারজনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আইনের অধীনে বিচার হলে, তাদের কারোরই ফাঁসি হতো না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেভাবে বিচার করতে বলেছে, সেভাবে বিচার করা হলে কারোরই ফাঁসি হতো না বলে আমি মনে করি। সকলেই মুক্তি পেতেন।” 
জয় লিখেছেন-“আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের উত্তম মানদন্ড হলো রোম স্ট্যাটিউট। সে অনুযায়ী শেখ হাসিনা গঠন করেছেন দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। এখানে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয় তা উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ। যে কেউ বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারেন”। এ সম্পর্কে প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট এবনে গোলাম সামাদ- যুদ্ধাপরাধের বিচার” শিরোনামে এক কলামের অংশ প্রণিধান যোগ্য। তিনি লিখেছেন- “অনেকে আমাদের দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে তুলনা করতে চাচ্ছেন নুরেমবার্গের বিচারের সাথে। কিন্তু এই তুলনাকে কোনোভাবেই যথাযথ বলা চলে না। কেননা, জার্মানি করেছিল অন্য রাষ্ট্রকে আক্রমণ। কিন্তু সাবেক পাকিস্তান ছিল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি রাষ্ট্র। পূর্বপাকিস্তান ছিল তার একটি প্রদেশ। আর এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আগে থেকেই ছিল। বিদেশী কোনো বাহিনী হিসেবে নয়, স্বদেশী বাহিনী হিসেবে। ১৯৭১-এ এ দেশের একটি উল্লেখযোগ্য জনসমষ্টি পাকিস্তান জাতীয়তাবাদে আস্থাশীল ছিলেন। তারা সমর্থন করেছিলেন তদানীন্তন সামরিক সরকারকেই। তারা ছিলেন ভারতের আগ্রাসনবিরোধী”। (১৮মার্চ-২০১৬ দৈনিক নয়া দিগন্ত)
জনাব সজিব লিখেছেন-”বাংলাদেশের মানুষ নিবিড়ভাবে দেখেছেন ট্রাইব্যুনাল কত স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষ এই ন্যায়বিচারের পক্ষে। এ জন্যই এ বিচার বাংলাদেশে এত জনপ্রিয়। তাই এ বিচার অব্যাহত থাকা উচিত”। যে বিচার নিয়ে দেশে-বিদেশে এত সমালোচনা জনাব জয় এরপর এই বিচার কে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য বলছেন? প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হোক এটাই জনগণ প্রত্যাশা করেন। 
এই আইন এতটাই মৌলিক অধিকার হরণ করছে ট্রাইবুনালের বিচারক পর্যন্ত বলেছেন, সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া আর কত আটকিয়ে রাখা যায়। যদি ও এটি বিচারকরের বিবেকের কথা। এর মাধ্যমে জনমনে দারুণভাবে দেখা দিয়েছে বিচারকরা কি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন? এ জন্য এন্ড্রিউ কলিন্স বলেছে-”বিবেকহীন মানুষকে অস্বীকার করে যে কাজ করে, খুব শীগগিরই সে বিবেকের কাছে নতি স্বীকার করে”। 
জামায়াতের আমীর নিজামীর আপিল শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছেন। এতে তিনি জিজ্ঞেস করেন, নিজামীর সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে আপনাদের কাছে তো কোনো প্রমাণ নেই। এতে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া যাবে কি? এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে এবং হত্যাও সংঘটিত হয়েছে এ বিষয়গুলো তো নিজামীর আইনজীবীরা স্বীকার করেছেন। কিন্তু নিজামী সরাসরি হত্যা, ধর্ষণে জড়িত ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ আপনাদের কাছে আছে? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ট্রাইব্যুনাল আইনে সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকতে হবে এমন কোনো বিধান নেই। এ আইনে হত্যায় কাউকে উৎসাহিত করলে বা উস্কানি দিলে তাও অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। প্রধান বিচারপতি আবারও বলেন, আল-বদর বাহিনীর হয়ে নিজামী বক্তব্য দিয়েছেন এটা ঠিক আছে। কিন্তু তাঁর সরাসরি অংশগ্রহণ কোথায়? প্রধান বিচারপতি আবার প্রশ্ন করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি অংশ গ্রহণ না থাকলে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া যাবে কি?
প্রধান বিচারপতি বলেন, এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ‘৭১-এ শহীদ ডা. আলীম চৌধুরী’ নামক বইয়ে নিজামীর নাম উল্লেখ করেননি। কিন্তু সাক্ষ্য দেওয়ার সময় তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, বুদ্ধিজীবী হত্যায় মতিউর রহমান নিজামী উস্কানি দিয়েছেন।’ একই ব্যক্তির দুই রকম বক্তব্য হওয়ায় এতে করে নিজামীর জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। তখন কি বইয়ে নিজামীর নাম বলা যেত না? প্রধান বিচারপতি বলেন, নিজামীর ৭১ সালের ঘটনা অস্বীকার করছেন না। কিন্তু সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়ে উল্লেখ করতে পারলেন না। (সূত্র : শীর্ষ নিউজ) তাই বেকন বলেছে-”আইনের মাধ্যমে অত্যাচার করার চেয়ে বড় অত্যাচার আর নেই”। সেই নির্যাতনই এখন যুদ্ধাপরাধ বিচারের নামে বাংলাদেশে চলছে..

তথ্যমন্ত্রী ইনুকে দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে । ...........ড তুহিন মালিক ।

(১) "একমাত্র ধর্মীয় স্বীকৃত আলেমরাই ফতোয়া দিতে পারবেন এবং ধর্মীয় স্বীকৃত আলেম ছাড়া অন্য কেউ কোন ফতোয়া দিলে তা অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে" - উল্লেখ করে ২০১১ সালের ১২ মে প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগ রায় দেয়।
(২) অথচ সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের অবমাননা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত দিনব্যাপী বর্ষবরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ফতোয়া জারী করে বলেছেন, ‘বৈশাখ বরন ঈমানের অঙ্গ।’ 
তার এই অবৈধ ফতোয়া জারী সকল প্রচার মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হলেও তথ্যমন্ত্রী অদ্যাবধি তা অস্বীকারও করেন নাই। যা তার বক্তব্যকে সমর্থনের জন্য যথেস্ট।
(৩) সর্বোচ্চ আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, "আলেম-ওলামারাই ফতোয়া দেবেন। ফতোয়ার নামে কারো সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা যাবে না।" 
২০০১ সনের জানুয়ারি মাসে বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ ফতোয়া নিষিদ্ধ করে দেয়া রায়ে বলেছিলেন, "কেউ ফতোয়া দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে ।"
(৪) দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর দীর্ঘদিন ধরে অসংখ্য মানুষকে ফতোয়া দেবার অপরাধে জেলে যেতে হয়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে ফতোয়া দেয়ার অভিযোগে ৩ জনের শাস্তি হয়েছে।
এই অপরাধে খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও বাদ যায় নি। ফতোয়ার অভিযোগে বরিশাল নগরীর ১নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা আউয়াল মোল্লাকে গ্রেফতার পর্যন্ত করে কাউনিয়া থানা পুলিশ।
আলেম, উলামা, পীর, মাশায়েখদের ওপর ফতোয়ার অভিযোগে পুলিশ দিয়ে হামলা ও নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ মিছিল ও প্রতিবাদ পযর্ন্ত করতে হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ফতোয়া বোর্ডের ৫০১জন মুফতিকে।
(৫) অবৈধ ফতোয়া দেবার অপরাধে সবাইকে যদি জেলে যেতে হয়, তাহলে একই অপরাধে তথ্যমন্ত্রী ইনু কেন জেলে যাবে না ?
(৬) দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় মানা সরকার ও পুলিশসহ প্রজাতন্ত্রের সকল কমর্কতা-কর্মচারীর উপর বাধ্যকর।
তাই অন্যান্যদের বেলায় যেরকম তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরন করা হয়েছে, তথ্যমন্ত্রী ইনুকেও একইভাবে গ্রেফতার করা হোক। 
'আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান' - সংবিধানের এই বিধানটি ইনুর ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য হওয়াটাই ন্যায়বিচারের পুর্বশর্ত।
(৭) তবে পুলিশ ও সরকার যদি ইনুকে গ্রেফতার করতে সাহস না দেখায়, হাইকোর্ট সুয়োমটো রুল জারি করেও তাকে গ্রেফতারের নির্দেশনা দিতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিলের শুনানিকালে একটি বড় প্রশ্ন উঠেছিল পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ভিত্তিতে হাইকোর্ট সুয়োমটো রুল জারি ও তার ওপর ভিত্তি করে রায় দিতে পারে কিনা ?
এ ব্যাপারে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের রায়ে বলা হয়েছে, 'একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হলে হাইকোর্ট সে ক্ষেত্রে সুয়োমটো রুল ইস্যু করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন, পোস্ট কার্ড এবং লিখিত উপাদান আবেদনপত্র হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে।'
(৮) তাই তথ্যমন্ত্রী ইনুর বিরুদ্ধে সুয়োমটো রুল ইস্যু করে তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বাস্তবায়ন করতেও কোন বাধা নাই।
..........বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও কলামিষ্ট .........ড তুহিন মালিক ।

বৃহস্পতিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৬

আগামী ১৬ এপ্রিল শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষনা।

বাংলাদেশ বার্তা: পুলিশ কর্তৃক ঝিনাইদহে ২ শিবির নেতাকে ২৫ দিন বেআইনি ভাবে আটক রেখে রাতের আধারে হত্যা করার প্রতিবাদ ও অবিলম্বে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবীতে আগামী ১৬ এপ্রিল শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।

এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আতিকুর রহমান ও সেক্রেটারী জেনারেল ইয়াছিন আরাফাত বলেন, নিরপরাধ ছাত্রদের জীবন ধ্বংসের নির্মম খেলায় মেতে উঠেছে সরকার ও নীতিহীন পুলিশ। গত ১৮.০৩.১৬ তারিখ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে ঝিনাইদহ জামতলা মোড় থেকে ছাত্রশিবির কালিগঞ্জ পৌরসভার সভাপতি আবুজর গিফারিকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ও সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিবৃতির মাধ্যমে তার সন্ধান দাবী করা হয়। কিন্তু পুলিশ তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো ২৫.০৩.১৬ তারিখে ঝিনাইদহ কে সি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র শামীম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তার গ্রেপ্তারের কথাও পুলিশ অস্বীকার করে। তাদের সন্ধানের দাবীতে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রশিবির। কিন্তু পুলিশ তাদের নীতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে তাদের নির্মম ভাবে হত্যা করে পুকুরে ফেলে রাখে। পুলিশের এই অমানবিক কাজে ঝিনাইদহসহ দেশবাসী হতবাক ও বিক্ষুদ্ধ। তা মেনে নেয়া যায়না। অবিলম্বে এমন বর্বরতা বন্ধ করে খুনিদের গ্রেপ্তার করা না হলে বিক্ষোভ কর্মসূচিই শেষ কর্মসূচি নয়।
অবৈধ সরকারের এই বেআইনি ও নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে আগামী ১৬ই এপ্রিল শনিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি ঘোষণা করছি। আমরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সকল নেতা-কর্মীদের, দেশপ্রেমিক জনতা ও ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে এ কর্মসূচি পালন করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

বাংলা শুভ নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা: ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক, জুলুম মুক্ত দেশ গঠনে এগিয়ে আসার আহবান - মকবুল আহমাদ

বাংলাদেশ বার্তা: ১লা বৈশাখ বাংলা শুভ নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ গতকাল ১২ এপ্রিল, ২০১৬ নিম্নোক্ত শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেছেনঃ-
“বাংলা নববর্ষ আমাদের সামনে উপস্থিত। বাংলা নববর্ষে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীগণ হালখাতা অনুষ্ঠান করেন। মোঘল সম্রাট আকবরের আমল থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হিসেবে চালু করা হয়।
যে সালটি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে তা জাতির জন্য সুখকর ছিল না। অনেক দেশপ্রেমিক, প্রতিশ্রুতিশীল, সৎ, বিচক্ষণ, জাতীয় নেতৃত্বকে জাতি এ সময়ে হারিয়েছে। গণতন্ত্রের চাদর গায়ে পড়ে জনগণের ওপর চলছে জুলুম-নির্যাতন। লুট হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ, ধর্ষিতা হয়েছে অনেক মা-বোন, জীবন কেঁড়ে নেয়া হয়েছে অসংখ্য মানুষের। সব দিকে চলছে লুটপাটের মহড়া। গণতন্ত্রকে করা হয়েছে মৃতপ্রায়। মিডিয়ার কণ্ঠ আজ রুদ্ধ। মানুষের সকল মৌলিক অধিকার পদদলিত। এ অবস্থা থেকে জাতি মুক্তি চায়। তাই বাংলা নববর্ষ মুক্তির সেই আহবান নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে।
আসুন জাতি হিসেবে আরেকবার ঘুরে দাঁড়াবার শপথ নিই, যাতে বাংলাদেশের আপামর জনগণ শান্তি ও স্বস্তির সাথে বাঁচার জন্য নিজেদের মত করে বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলতে পারে। আমি দেশবাসী সকলের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুস্বাস্থ্য কামনার পাশাপাশি জুলুম মুক্ত বাংলাদেশ কামনা করছি এবং আমার দলের পক্ষ থেকে প্রিয় দেশবাসীকে উষ্ণ শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করছি। দেশবাসীকে ন্যায় ও ইনসাফের ভিত্তিতে একটি জুলুম মুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে এগিয়ে আসার জন্য আন্তরিক আহবান জানাচ্ছি।”