বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ মিতু আর ডাক্তার আকাশের সাম্প্রতিক ঘটনা দেখে আমার রুমানা মঞ্জুর আর হাসান সাইদের কথা মনে পড়ে গেলে। আজ থেকে ৮ বছর আগের কথা। রুমানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআর এর শিক্ষক আর সাইদ বুয়েট থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। মিতু যেমন প্যাটেল নামক এক বিদেশী ছেলের সাথে পরকীয়া করতো, ঠিক তেমনি রুমানাও ইরানি বয়ফ্রেন্ড তারেক বিন নাভেদের সাথে পরকীয়া করতো। তবে দুটো ঘটনাই স্বামী-স্ত্রীর মারামারি পর্যন্ত এসে দুইদিকে ডায়ভার্ট হয়ে গেছে। আকাশ যেমন মিতুকে মেরে মুখে সেলাই ফেলে দিয়েছে, সাইদও রুমানাকে মেরে তাকে অন্ধ করে দেয়। তবে আকাশ আর সাঈদের মধ্যে তফাৎ হলো- আকাশ আত্মহত্যা করে, আর সাইদকে সমাজের প্রচণ্ড চাপে গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু সামান্য কয়েকদিন পর জেলের ভেতরে রহস্যজনকভাবে সাইদের লাশ পাওয়া যায়। তবে কোন কোন পুরুষবাদী এমনও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, আকাশ তখন আত্মহত্যা না করলে এবং আহত মিতু মিডিয়ার সামনে আসলে হয়ত নারীদেরবাদীদের চাপে আকাশকে গ্রেফতার করা হতো এবং হয়ত সাইদের মত আকাশকেও মৃত্যুকে বরণ করতে হতো।
গত কয়েকদিন ধরে দেখেছি সাধারণ মানুষ ফেসবুকে আকাশের পক্ষ নিয়েছে, আর নারীবাদীরা মিতুর পক্ষ নিয়ে তুমুল দ্বন্দ্ব করছে। কোন কোন নারীবাদী তো আকাশকে হিটলার বলে উপাধি দিয়েছে। হিটলার যেমন আত্মহত্যা করেছে, তেমনি আকাশও নাকি আত্মহত্যা করেছে। কেউ বলেছে, আকাশের আত্মহত্যা ছিলো নারীর প্রতি পুরুষতন্ত্রের প্রতিশোধ।
নারী ও পুরুষবাদীরা যাই বলুক, আসলে আমরা সাধারণ মানুষ যেমন চাই না- সাইদ-আকাশরা মারা যাক, ঠিক তেমনি মিতু-রুমানারা আহত হোক, এটাও কাম্য নয়। প্রত্যেকটা মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর হয়ে বেচে থাকুক এটাই আমাদের কাম্য। কিন্তু এটা তখন সম্ভব হবে, যখন সমাজে একটা ভারসাম্য বজায় থাকবে। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, “বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”। নারী-পুরুষ মিলিয়েই সমাজ। একটা ছাড়া অন্যটা চলতে পারবে না, একজন অন্যজনের সহযোগী, কখনই প্রতিযোগী নয়। কিন্তু একটা গোষ্ঠী আছে, যারা সমাজে নারী-পুরুষের লাগিয়ে দিয়ে, উপর থেকে ফায়দা নিতে চায়। সমাজে কিছু কিছু পুরুষ আছে যারা তাদের স্ত্রী/নারীদের নির্যাতন করে, যার উদহারণগুলো টেনে নারীবাদ সৃষ্টি করা হয়। এরপর সেই নারীবাদীরা নারীদের উস্কানি দেয়, বাধন ছিড়ে ফেলার আহবান জানায়। এরপর সেই সব বাধণ ছেড়া নারীদের দেখিয়ে ফের পুরুষবাদ তৈরী করা হয়, ব্যস নারী-পুরুষ তখন হয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী, সমাজে তৈরী হয় কলহ। কিন্তু বাস্তবতা হলো আপনি কলহ করে সাময়িক জয়লাভ করতে পারেন, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের প্রেক্ষিতে কখনই সমাজের জন্য তা ভালো ফল বয়ে আনবে না।
এই তো কিছুদিন আগে দেখলাম, বাংলাদেশে নারী নির্যাতন হ্রাস করতে নাকি নারীদের কুংফু-ক্যারাতের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। কি আশ্চর্য ! নারী ধর্ষণের অন্যতম একটা বড় কারণ হচ্ছে প্রতিহিংসা বা শত্রুতা। এই যে আপনি নারীদের কুংফু প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তার আলটিমেট রেজাল্ট কি বুঝতে পারছেন ? একজন নারী কোন পুরুষকে হয়ত কুংফু দিয়ে সাময়িক পরাজিত করতে পারলো, কিন্তু এতে ঐ পুরুষটা কিন্তু ঐ নারীর উপর ক্ষেপে গেলো, পরে প্রতিশোধ নিতে হলেও সে মেয়েটির উপর আক্রমণ করতে পারে। আসলে যে ইস্যুগুলো সমাজের গণমানুষের সাইকোলোজির সাথে সংযুক্ত সেগুলো সফটলি হ্যান্ডেল করতে হয়। দ্রুতকোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে সমাজে বরং বিশৃঙ্খলতা হতে পারে। আর নারীবাদীদের কথা কখনই পাত্তা দেয়া যাবে না, কারণ নারীবাদীরা হলো লেজকাটা শেয়াল। তারা নিজেরা উচ্ছন্নে গেছে, তারা চায় সমাজের অন্য নারীরাও উচ্ছন্নে যাক।
আমি আগেও বলেছি, আমাদেরকে এখন যে সমাজ ব্যবস্থার দিকে ঢেলে দেয়া হচ্ছে, তাতে সামনে আরও কঠিন পরিবেশ আসছে। রুমানা-সাইদ আর মিতু-আকাশের ঘটনা সামনে আরো অসংখ্য দেখা যাবে। তাই শুধু আইন-শালিস করে নয়, কি কি কারণে সমাজে পরকীয়া/নারী নির্যাতন বাড়ছে, সেগুলো আগে চিহ্নিত করে বন্ধ করতে হবে বা আপডেট করতে হবে। যেমন:
১) যেসব মিডিয়া পরকীয়া/নারী নির্যাতনের শিক্ষা দেয়া হয় বা উস্কানি দেয়া হয় সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
২) বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধ করা যাবে না। যার প্রয়োজন সে করবে। বিয়ের বিষয়গুলো আরো সহজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে নিষেধ থাকায় অনেক নারী/পুরুষ বিয়ের আগে কম বয়সে অবৈধ মেলামেশা করে অভ্যস্থ হয়ে যায়, যার কারণে বিয়ের পরও বহুগামীতা ছাড়তে পারে না।
৩) ঢাকা শহরে জীবননির্বাহ ব্যয় কমাতে হবে। ঢাকাতে জীবন নির্বাহ ব্যয় বিশেষ করে বাড়িভাড়া বেশি থাকায় অনেক বিবাহিত পুরুষ কর্মক্ষেত্রে ঢাকায় আসলেও স্ত্রীকে গ্রামে রেখে আসে। এতে তার স্ত্রী যেমন স্বামীহীনতা ভুগে ঠিক তেমনি শহরে স্ত্রীহীন পুরুষটির দ্বারাও অনেক অপকর্ম ঘটতে পারে।
৪) বিদেশে শ্রমিক রফতানির সময় একদম প্রশিক্ষণহীন শ্রমিক না পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে শ্রমিক পাঠানো উচিত। আরো ভালো হয় যদি শ্রমিক রফতানি না করে দেশী লোক দিয়েকোম্পানি করে সার্ভিস রফতানি করা যায়। এতে বেতন বেশি পাওয়া যাবে। তখন অনেক প্রবাসী চাইলে তার স্ত্রীকে বিদেশ নিয়ে যেতে পারবে। এতে সমস্যা অনেকটা দূর হবে।
৫) অনেক নারী কম বয়সে বিধবা হয়ে যায়। কিন্তু দেখা যায় সমাজের কথা চিন্তা করে, বাচ্চাদের কথা বলে তাকে আর বিয়ে দেয়া হয় না। বিধবা নারীদের বিয়ে নিয়ে সমাজের কুসংস্কার বন্ধ করতে হবে, তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬) নেশা জাতীয় দ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে। নেশার কারণে পুরুষত্বহীনতা তৈরী হয়। পর্নোগ্রাফীও নিষিদ্ধ করতে হবে।
৭) জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, এবরেশনসহ যাবতীয় সিস্টেম যা পশ্চিমারা বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে এগুলো সাইডএফেক্ট হলো সমাজে ব্যাভিচার বৃদ্ধি পাওয়া। এগুলো অবাধ ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
৮) কোন পুরুষের প্রয়োজন লাগলে এবং সামর্থ থাকলে সে বহুবিবাহ করবে, এ বিষয়টি সমাজে সহজ করতে হবে। অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে ডিভোর্সের বিষয়টিও সহজ করতে হবে।
৯) ধর্মীয় পর্দা বাধ্যতামূলক করতে হবে। নারী পুরুষের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শপিং কমপ্লেক্স, হাসপাতাল, যাতায়াত ব্যবস্থা করতে হবে। নারীদের প্রতিষ্ঠানগুলো নারীরাই পরিচালনা করবে, সেখানে কোন পুরুষ থাকতে পারবে না।
১০) সমাজের সর্বত্র ধর্মীয় চর্চা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল করে ধর্ম নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে শুধু আইন-শালিস করে মানুষের মন নিয়ন্ত্রণ করা করা যায় না। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ যত বাড়বে, স্বামী-স্ত্রী তত সুখী হবে। সেক্যুলার-নারীবাদীরা সব সময় ধর্মীয় বিধানকে নারীবিদ্বেষী বলে অপপ্রচার করেছে। কিন্তু তারা ধর্মহীন যে সমাজ আনতে চাইছে তাতে নারীরা অনেক বেশি অনিরাপদ ও নির্যাতিত। সুতরাং তাদের সকল নীতি বর্জন করতে হবে, এর কোন বিকল্প নাই।
লেখক:নয়ন দাদা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন