বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ডা. জাকির নায়েক ইস্যুতে মালয়েশিয়ান রাজনীতি বেশ টালমাটাল। নানান কথা আলোচনার টেবিলে। পক্ষ-বিপক্ষের তর্কাতর্কি তুঙ্গে। ড. জাকির নায়েক পুলিশের নজরদারিতে। মালয় পুলিশ প্রধান বলেছেন, "আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ইনভেস্টিগেশন করছি।” শেষ পর্যন্ত ঘটনাটি যে আদালত পাড়ায় যাচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিত। ফাইলবন্দি হয়ে জজের টেবিলে ঠাঁই নিবে পুরো ঘটনা।
মন্ত্রীপরিষদ দু ভাগে বিভক্ত। অধিকাংশরা ডা. জাকির নায়েকের মন্তব্যকে খুব সাধারণ কথা মনে করলেও বাকিরা তার মন্তব্যকে ধর্মীয় বিদ্বেষ হিসাবে আমলে নিয়েছেন। তিনজন মন্ত্রী আদাজল খেয়ে লেগেছেন ড. নায়েকের বিরুদ্ধে। একজন হিন্দু, একজন শিখ অন্যজন বৌদ্ধ। এই তিনে মিলে হয়েছেন এক। তারা ইন্ডিয়া এবং ভারতের ডিপ্লোম্যাটিক সাপোর্ট এবং কু পরামর্শ খুব ভালো করেই পাচ্ছেন। ভারত সতর্ক দৃষ্টি রাখছে। অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে শিকার ধরার চেষ্টায় আছে মোদী সরকার। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে ড. জাকির নায়েককে ভারতে ফেরত আনতে।
তবে মালয়েশিয়ান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদ বলেছেন, "আমরা তাঁকে ভারত পাঠালে তিনি নিহত হতে পারেন। একাজ করতে চাইনা। অন্যকোন দেশ তাঁকে নিতে চাইলে অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো।”
যে মন্তবের জেরে তিনি বিরোধীদের চক্ষুশূল।
•
গত ৮ আগস্টে একটি সেমিনারে তাঁর কিছু মন্তব্য কাটছাঁট করে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয়। আর তাতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে ইসলাম বিদ্বেষীরা। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ডা. জাকির নায়েককে আইনের আওতায় আনতে মালয় সরকারের উপর চাপ বাড়াতে থাকে। এই চাপাচাপি বাড়ছে বৈ কমছে না।
মন্তব্য ১।
তাঁকে বেশ কিছুদিন যাবৎ কট্টর ইসলাম বিদ্বেষীরা 'নতুন গেস্ট' (বাংলায় যাকে নতুন পাগল বলা হয়) বলে তিরস্কার করা হচ্ছিল। নতুন অতিথিকে তার দেশে ফেরত পাঠাতে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছিল। তাদের এমন অযৌক্তিক কথাবার্তার জবাবে বলেন,
"আমাকে নতুন অতিথি বলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার আগে চাইনিজদেরকে আগে পাঠানো উচিত। কারণ, চাইনিজরা এ দেশে অতিথি হয়েই এসেছিল। তারপর তারা নাগরিক হয়। সুতরাং নতুন অতিথিকে ফেরত পাঠানোর আগে পুরনো অতিথিকে ফেরত পাঠানো যৌক্তিক।"
মন্তব্য ২।
দ্বিতীয় মন্তব্যটি করেন ইসলামের মহানুভবতা নিয়ে। বিষয়টি পরিষ্কার করতে একটি উদাহরণ টানেন।
তিনি বলেন,
"মালয়েশিয়াতে মাত্র ৬.৫ ভাগ মানুষ হিন্দু। তবুও তারা ইন্ডিয়ান মুসলিমদের থেকে ১০০ গুণ বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। এতো বিশাল সুবিধা নিয়েও সাপোর্ট করার সময় তারা মাহাথির মুহাম্মদের চেয়ে নরেন্দ্র মোদীকেই প্রেফার করে। আমি বলছিনা যে, এটা বন্ধ করতে হবে। বুঝাতে চাচ্ছি, ইসলাম যথেষ্ট সহনশীল। অন্যায়ভাবে কাউকে আঘাত করে না।”
তাঁর এই দুই মন্তব্যকেই লুফে নেয় বিরোধীরা। তারা মনে করছে, এসব কথার মাধ্যমে সম্প্রীতির মালয়েশিয়াতে জঙ্গিবাদের সূচনা হবে। আর তারা সেই কাটছাঁট মন্তব্যের ক্লিপ হাওয়ার বেগে ছড়িয়ে দেয় নেট দুনিয়ায়। মুহূর্তেই হৈচৈ পড়ে যায় সর্বত্র। সুযোগকে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠে অনেকেই। ড. জাকির নায়েক যে নতুন করে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হচ্ছে তা মোটামুটি নিশ্চিত।
ডা. জাকির নায়েকের মাসলাক ভিন্ন হতে পারে। তাঁর মতাদর্শের সাথে পূর্ণ একমত নাও হতে পারি। তদুপরি তিনি আমাদের। তিনি আমাদের ভাই। তিনি আজ চূড়ান্ত মজলুম। একের পর এক শত্রুর তালিকা লম্বা হচ্ছে। তাঁর সাথে যারা শত্রুতা করছে তারা কেউ ব্যক্তিগত আক্রোশে করছে না। সম্পদের জেরে শত্রুতা তৈরি হচ্ছে না। বৈরিতা সৃষ্টি হচ্ছে শুধু ইসলামের কারণে। তাঁর লেকচারের এফেক্ট দেখেই বিরোধীরা রক্তচোষা শত্রুতে পরিণত হচ্ছে।
আমরা বাংলাদেশ থেকে তেমন কিছু করতে পারবো না। আমাদের সেই সক্ষমতা নেই। লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়াও অসম্ভব। আশ্রয়ও দিতে পারবো না। আমরা পারবো শুধু দুয়া করতে। আর আমাদের জন্য আপাতত দুয়াই প্রধান অস্ত্র। মজলুম এই দা'ঈ-এর জন্য রবের দরবারে কায়মনোবাক্যে দুয়া করি। আল্লাহ যেন তাঁকে সব ধরনের মুশকিলাত থেকে মুক্তি দেন।
সব ধরনের সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে আপাতত তাঁর জন্য দুয়া করি। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নন। সুতরাং তাঁকেও ভুলের ঊর্ধ্বে ভাবি না। ভাবাটা ঠিক নয়।
তবে এখন সেই ভুলগুলো প্রচার করা তাঁর প্রতি আরেক ধরনের জুলুম। এখন ইহসানের সময়; সমালোচনার নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন