বেলা ১১টা ৪২ মিনিট। স্কুল থেকে সন্তানকে নিয়ে গুলশানের বাসায় ফিরছিলেন সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। গাড়িতে বিষণ্নম্ন হৃদয়ে নিখোঁজ বাবার কথা মনে পড়ে সালাহ উদ্দিনের কন্যার। আদর-সোহাগে সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন হাসিনা। এ সময় বেজে উঠল ফোন। অচেনা নম্বর থেকে চিরচেনা গলা! গত ৬২ দিন যে ফোনটির অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন হাসিনা আহমেদ; সেই ফোন। ফোনের ওপাশ থেকে সালাহ উদ্দিনের বেঁচে থাকার খবর দেওয়া হয়। মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে (মিমহ্যানস) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া ওই ফোনে স্বামীর সঙ্গে ১১ মিনিট কথা বলেন হাসিনা আহমেদ। দীর্ঘদিন পর অনেক কথা হলো, তবে আপাতত স্ত্রীর কাছে বড় স্বস্তির খবর_ স্বামী বেঁচে আছেন। রহস্যজনক 'নিখোঁজ' বা 'অন্তর্ধান' নিয়ে অনেক উত্তর আপাতত না মিললেও সালাহ উদ্দিন সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে জীবিত আছেন_ এটাই বা স্বজনদের কাছে কম কি!
সালাহ উদ্দিন ফোনে হাসিনাকে বলেন, দ্রুত অনেক টাকা নিয়ে ভারতে চলে এসো। তাড়াতাড়ি ভিসার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করো। আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল কোথায় রয়েছে জানতে চান সালাহ উদ্দিন। তাবিথের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন। উত্তরে হাসিনা বলেন_ 'ও এখন দেশের বাইরে রয়েছে।' এরপর শিমুল বিশ্বাসের প্রসঙ্গ আসে। একপর্যায়ে সালাহ উদ্দিন শিমুল বিশ্বাসের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি।সালাহ উদ্দিন আরও বলেন, 'আমাকে বাঁচাতে দ্রুত আসো। দ্রুত ভিসা পেতে পার্টির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করো। ভারতে আসার সময় সম্ভব হলে বাংলাদেশি কয়েকজন সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে এসো।' এসব বিষয়ে পরামর্শের জন্য ম্যাডামের (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন সালাহ উদ্দিন।
স্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের এক পর্যায়ে সালাহ উদ্দিন তার সন্তানদের খোঁজ-খবর জানতে চান। স্ত্রীর পাশে কন্যা আছেন জানতে পেরে তার সঙ্গেও সামান্য সময় কথা বলেন সালাহ উদ্দিন। কন্যাকে জিজ্ঞাসা করেন, 'কেমন আছো?' উত্তরে সন্তান জানান, 'বাবা ভালো আছি।' কন্যার সঙ্গে দু'তিনটি বাক্যালাপের পর ফের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন সালাহ উদ্দিন। এ সময় সালাহ উদ্দিনের শারীরিক অবস্থার খবর জানতে চান হাসিনা আহমেদ। উত্তরে সালাহ উদ্দিন বলেন, 'ভালো আছি। বেঁচে আছি। সবাইকে দ্রুত জানিয়ে দাও। ভারতে আসার সময় ওষুধ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে এসো।'মেঘালয়ের আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, 'আমরা তার (সালাহ উদ্দিন) সঙ্গে খুব বেশি কথার বলার সুযোগ পাইনি। তিনি যেহেতু নিজেকে বাংলাদেশের সাবেক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দাবি করেছেন, তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করছেন।'মেঘালয়ের পুলিশপ্রধান জি এইচ পি রাজু স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা বিষয়টি বাংলাদেশ হাইকমিশনে জানিয়েছি। এখন উত্তরের অপেক্ষায় আছি।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন