বোতল উল্টিয়ে মেঝেতে পানি ফেলে ঘরময় সয়লাব, আর সেটা থেকে সঙ্গীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া? আসলে ছোট বিষয় থেকেই বড় কিছু হয়। আর এর অন্যতম কারণ হতে পারে অনুভূতিতে চর পড়া।
পুরান চাল ভাতে বাড়লেও, সঠিক মাপে পানি কিন্তু লাগবে। সম্পর্কেও তাই জলীয়ভাব ফেরাতে কিছু কৌশল অবলম্বন করাই যায়। আর সেটা দুজনের পক্ষ থেকেই করতে হবে। এই বিষয়ে প্রকাশিত সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের উপর প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে কয়েকটি কৌশল এখানে দেওয়া হল। যেগুলো চর্চা করলে আশা করা যায় দাম্পত্য সম্পর্কটা বেঁচে যাবে।
.অন্তরঙ্গতা বাড়াতে -
কিছু না বলে অন্তত দুই মিনিট দুজন দুজনের চোখে চোখ রাখুন। একসঙ্গে যখন শুয়ে থাকবেন তখন নিজেদের চাদর দিয়ে ঢেকে ফিসফিস করে কথা বলুন। আপনি যদি প্রথম ফিসফিসানি শুরু করেন তবে আপনার সঙ্গী নিজে থেকেই সেভাবে জবাব দেবে। যা ঘনিষ্টতা বাড়াবেই। ফোনেও একই কাজ করতে পারেন।
.একে অপরের কথা শুনুন -
মনে করছেন এই কাজ তো করেনই। তারপরও সক্রিয়ভাবে শুনতে বরং সঙ্গীকে যে কোনো বিষয়ে কথা বলতে বলুন। তারপর তার প্রতিটি বাক্য মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকুন। কথা মাঝে কথা না বলে, মাঝে মাঝে উচ্চারণ করুন.. হ্যা আমি শুনছি।
কোনো কিছু ভুল বুঝলে সেটা সঙ্গী ধরিয়ে দেয়। একই ভাবে আপনিও তাই করুন। তর্ক নয়, এটা শুধু মাত্র সাধারণ কথাবার্তা দিয়েই সম্ভব।
.প্রার্থণা করা: একসঙ্গে প্রার্থণা করতে পারেন। প্রার্থণার বিষয় দুজন মিলে ঠিক করে নিতে পারেন।
.
যদি পারতাম: এই বাক্য হতে পারে অন্তরঙ্গতা বাড়ানোর কৌশল। সঙ্গীকে বলুন ‘ইশ আমি যদি তোমার জন্য রান্না করতে পারতাম’, বা ‘আমি যদি তোমাকে আরও ভালোবাসতে পারতাম’। ন্যাকা ন্যাকা মনে হলেও- এই কথাগুলো বলেই দেখুন না, তারপর কি হয়!
.
স্মৃতিচারণ: দুজনের অনেক মধুর স্মৃতি আছে। সেগুলো নিয়ে অন্তরঙ্গ হয়ে আলাপ করুন। অতীতের অন্তরঙ্গ থাকার সময়গুলোর জায়গা, গন্ধ যখন স্মৃতিপটে চলে আসবে তখন বর্তমান সময়েও সেই ভাব দুজনের মধ্যে খেলা করতে থাকবে।
.
নীরবতা: দিনের একটা সময় দুজনেই চুপ থাকার সময় নির্ধারণ করে নিন। নীরব থেকেও অনেক কিছু অনুভব করা যায়।
.কথা বলে সম্পর্ক গাঢ় করতে -
যেকোনো বিষয়ে ইতিবাচক কথা বলুন। গবেষণায় দেখা গেছে, সুখী দম্পতিরা প্রতিটা নেতিবাচক কথার বিপরীতে অন্তত পক্ষে পাঁচটা করে ইতিবাচক কথা বলে। সঙ্গীর যে কোনো কাজ, যেটা আপনার ভালোলাগে, সেটা তাকে জানান। সেটা নিয়ে গল্প করুন। সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ছোট থাকতে কী করতে পছন্দ করতেন। বলতে পারেন- এই পোশাকে তোমাকে আকর্ষণীয় লাগছে। আর পোশাক নির্বাচনেও সাহায্য করুন। সঙ্গী কোনো বিষয়ে ভালো করলে সেটা নিয়ে প্রশংসা করুন। বলুন- ‘তুমি আমাকে আরও ভালো মানুষ হতে সাহায্য করেছ’। কীভাবে সেটাও জানান। কোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলে, সঙ্গীকে সে বিষয়ে বিশ্লেষণ করতে বলতে পারেন। যে বিষয় নিয়ে চিন্তিত সেটা সঙ্গীকে জানান। সে হয়ত কোনো সমাধান দিতে পারবে না, বা কোনো কথা বলবে না। তবে হাত ধরা কিংবা জড়িয়ে ধরবে। যা আপনার উদ্বগ্নভাব কাটাবে, সেই সঙ্গে সঙ্গীও হবে সহমর্মী।
.সঙ্গী কোনো আচরণ আপনাকে রাগালে -
কোনো কিছু বলার আগে থামুন। আর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন ‘কী কারণে এত রাগ করছি’। ছোট যেকোনো বিষয় গভীর সমস্যাকে ঢেকে রাখে। আর যদি মনে করেন বিষয়টা বড়, তাহলে আপাতত মুখ সামলান। পরে কথা বলুন যখন মাথা হবে ঠাণ্ডা।
তার দুঃখ প্রকাশ মেনে নিন। রেগে থাকার পরও যদি আপনার সঙ্গী পুনরায় মিলতে চায় তবে তাকে ফেরাবেন না। এমন বিষয়ে ক্ষমা চান যেটা নিয়ে আগে কখনও চাননি। এমনকি সেটা আপনার দোষ না হলেও। নিজেদের শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে বিনা সংকোচে কথা বলুন। যদি সঙ্গীকে গোপন কোনো কথা জানাতে চান, তবে বলার আগে সেটা অন্তত পাঁচভাবে লিখুন। এখন পাঁচ রকম উত্তর খুঁজে বের করুন, যা আপনার সঙ্গী বলতে পারে। তারপর যেটা মনে হবে সবচেয়ে ভালো উপায় বলার, সেভাবে সঙ্গীকে জানান। সঙ্গীর কোনো বিষয় বা আচরণে আপনার মন খারাপ হয়। সেটা নিয়ে তাকে দোষারোপ না করে বরং সুন্দর ভাবে বলুন। যেমন সঙ্গীকে বলতে পারেন, ‘তোমাকে একটা কথা বলার ছিল, মাঝে মাঝে আমার খুব খারাপ লাগে যখন তুমি আমার সাথে এরকম কর(বা যে বিষয়টা নিয়ে খারাপ লাগে সেটা বলুন)। তুমি আর এরকম করো না।’ আগের ঝগড়া-বিবাদ নিয়ে ভাবনাচিন্তুা করুন। সেখান থেকে কী কী বিষয় শিখলেন সেটা বের করার চেষ্টা করে সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ করুন। আরও ভালো হয় যেসব বিষয় নিয়ে মনমালিন্য হয়েছে সেসব বিষয়ে ভিন্নভাবে কিছু করার আছে কিনা সেটা বের করার চেষ্টা করতে পারেন। দিতে পারেন ‘স্পেশাল ট্রিট’। এমনকি সঙ্গী ডায়েটে থাকলেও তাকে নিয়ে খেতে যান। হতে পারে সেটা প্রেমের প্রথমদিকে কাটানোর সময়গুলোর কোনো একটি রেস্তোরাঁ। এক সঙ্গে রান্না করুন। কাজ ভাগ করে নিন। আপনি হয়ত রান্না পারেন না, তাতে কি! আলু, কপিতো টুকরা করে দিতে পারবেন।
.
আল্লাহ পাক দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিকের বর্ণনা করেছেন। সুরা আর রূমের মধ্যে তিনি বলেন-“তাঁর নিদর্শন সমূহের মধ্যে ইহাও একটি যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই জাতির মধ্য হইতে স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা তাদের নিকট পরম প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও স্বহৃদয়তার সৃষ্টি করে দিয়েছেন”। (রূম-২১) এ আয়াত থেকে দাম্পত্য জীবনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের মৌলিক দুটি দিক পাওয়া যায়। (১) নৈতিক চরিত্র ও সতীত্বের হেফাজত। (২) ভালবাসা ও আন্তরিকতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন