বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আলহামদুলিল্লাহ্ শুরু হয়ে গেল বরকতময় জিলহজ্ব মাস। জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশকের গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন কারীমে যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের ফদ্বীলতের ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যেমন-
...وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ
অনুবাদ : ..... এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে..।
তাফসীরে ইবন কাছীর এ হযরত ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে এখানে أَيَّامٍ مَعْلُومَاتٍ 'নির্দিষ্ট দিনসমূহ' দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে যিলহজ্জের ‘দশ রাত’।
অনুরূপ আল কুরআন আল কারীমের সূরা ফাজরে আল্লাহ তা’আলা এই দশ রাত্রির কসম করেছন। -
والفجر * وليال عشر
ফজরের শপথ, আর দশ রাত্রির শপথ। (সূরা ফজর, আয়াত : ১-২)
এ আয়াতের ব্যাপারেও ইমাম তাবারী বলেন- ‘দশ রাতের শপথ’ এর দ্বারাও যিলহজ্জ- এর প্রথম দশ রাত উদ্দেশ্য। কেননা এ ব্যাপারে কুরআন বিশেষজ্ঞগণ ইজমা পোষণ করেছেন।
আর ইবন কাসীর তার তাফসীরে সূরা ফজরের এ আয়াতের ব্যাপারে বলেন- হযরত ইবন আব্বাস (রা.), ইবনু যুবায়র (রা.), মুজাহিদসহ পূর্বাপর প্রায় সবাই এমত পোষণ করেন যে এর দ্বারা যিলহজ্জের ১ম দশ রাত উদ্দেশ্য।
ইবন হিব্বান সূত্রে বর্ণিত হয়েছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
"যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের মত উত্তম দিন আল্লাহর কাছে আর কোনটিই নয়। (ইবন হিব্বান, খ-৯, হাদীস নং-৩৮৫৩)"
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।"
(বুখারী ৯৬৯)
যিলহজ্বের প্রথম দশকের এতো ফদ্বীলত বর্ণিত হয়েছে যে আলিমগণ রমযানের শেষ দশকের এবং এর মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে বলেন-
রমযানের প্রথম দশক ‘রাতের’ বিবেচনায় সর্বোত্তম কেননা, এর মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল কদর। আর এটা রাতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম। অন্যদিকে যিলহজ্জের প্রথম দশক ‘দিনের’ বিবেচনায় উত্তম, কেননা এর মধ্যে রয়েছে আরফার দিন যা দিনসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম। (মিরকাত)
এই দশ রাত্রির এতো মর্যাদার কারণ হিসাবে উলামায়ে কিরাম বলেন এই সময়ের মধ্যে সকল আমল করা যায়। নামায, রোযা, যাকাত, সদকাহ সব আমল অন্য সময়ে করা যায় কিন্তু কুরবানী, হজ্জ করা যায় না। আর এই দশ দিনের মধ্যে নামায, রোযা, যাকাতের সাথে সাথে কুরবানী ও হজ্জ সহ অন্যান্য সকল ইবাদত করা যায়। সে জন্যে এর মর্যাদা আলাদা। (দ্র. ইবন হাজার; ফাতহুল বারী)
এ দশকে আমরা নিম্নলিখিত আমল করতে পারি--
১. বেশি বেশি আল্লাহর যিকর করাঃ
এ সময়ে যিকর করার জন্য সরাসরি কুরআন শরীফের নির্দেশনা পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُومَاتٍ
তোমরা নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নামের যিকর করো। জমহুর মুফাস্সিরীনের মতে এই আয়াত দ্বারা যিলহজ্জের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে।
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন-
এই দশ দিনের মর্যাদার সমতুল্য এবং এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অধিক প্রিয় আমল আল্লাহর কাছে নেই। সুতরাং তোমরা এই দিন সমসূহে অধিক পরিমাণে তাসবীহ (সুবহানআল্লাহ), তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্) এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) পড়।
২. রোযা রাখাঃ যিলহজ্জের প্রথম দিন থেকে নবম দিন পর্যন্ত আমরা রোযা রাখতে পারি। কিছু দূর্বল হাদিসে এসেছে রাসূল (সা.) এই সময়ে টানা রোযা রাখতেন। এছাড়া দিনের আমল হিসেবে রোজা বেশ ফজিলতপূর্ণ।
৩. রাত জেগে ইবাদত করাঃ যিলহজ্জের দশ রাত্রিসমূহে রাত জেগে ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। হানাফী ও হাম্বলী মাযহাব অনুযায়ী এ দশকের রাতসমূহে জাগ্রত থেকে ইবাদত করা মুস্তাহাব।
প্রখ্যাত তাবিঈ হযরত সাঈদ ইবন জুবায়র (রা.) বলেন-لاَ تُطْفِئُوا سُرُجَكُم لَيَالِيَ العَشْرِ
তোমরা দশ রাত্রিতে তোমাদের ঘরের বাতি সমূহ নিভিয়ে ফেলো না।
৪. আরাফার দিন রোজা রাখা।
আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
"ইয়াওমে আরাফার (নয় যিলহজ্ব) রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা এর আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।"
সহীহ মুসলিম, ১১৬২; জামে তিরমিযী, ৭৪৯; সুনানে আবু দাউদ, ২৪২৫৫. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা।
এছাড়া অন্যান্য ফরজ, সুন্নত আমলের ব্যাপারে আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিত এবং গোনাহ থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা দরকার। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের এই দশক থেকে যথাসম্ভব উপকৃত হওয়ার তৌফিক দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন