বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ খুব কষ্টের সাথে লিখতে হচ্ছে যে, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম এর লাইব্রেরীর জুনিয়র লাইব্রেরীয়ান জনাব আব্দুর রাহমান ভাই গতকাল ৪ ডিসেম্বর ২০২০ চট্টগ্রাম শহরের সার্জিস্কোপ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় আসরের পর ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রা-জে-উ-ন।
তার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছে সেপ্টেম্বরের ২৩ তারিখে। দুপুরে ক্যাম্পাস হতে বাসায় ফেরার জন্য তিনি শিক্ষকদের এসি গাড়িতে উঠেছিলেন। ভাটিয়ারী এসে যখন গাড়ি হতে নামছিলেন তখন তাকে দেখে খুবই খারাপ লাগছিলো। কারণ তার শারীরিক অবস্থা ভালো ছিলো না। দুর্বলতার কারণে পা তখনও সামনে চলছিলো না ঠিক মত। তাই আমি গাড়ির সহকারীকে জসীমকে খুব সতর্কের সাথে নামিয়ে দিতে বললাম। নেমে যাওয়ার সময় আব্দুর রাহমান ভাই বললেন স্যার! খুব অসুস্থ দো‘য়া করবেন।
আমার সাথে তখন প্রফেসর ড. মাহবুবুর রাহমান স্যারও ছিলেন। আমরা কিছুক্ষণ তার অসুস্থতা ও শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে কথা বলে আবার নিজেদের মত করে কথা বলতে বলতে চলে আসলাম। আর সেই পৃথক হওয়াটাই তার সাথে আমাদের শেষ দেখা এবং শেষ কথা ছিলো।
আমার সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিলো। পারিবারিকভাবেও আমাদের যোগাযোগ ছিলো। তার ওয়াইফের সাথে আমার ওয়াইফের খুব মিল ছিলো। ক্যাম্পাসের সামনে নির্মিত আমার বাসায় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে তার ওয়াইফ আসতেন। মায়ের সাথে বাচ্চারাও আসতো। আমার ওয়াইফও তার বাসায় যেতেন। আমাদের মাঝে কখনো শিক্ষক-অফিসার ভাব ছিলো না। তাকে আমি একজন ভাইয়ের মতই ভাবতাম। তার বাচ্চাগুলোকে আমি খুব আদর করতাম। কুমিরা ছেড়ে আসার পরও যখনই আমার ওয়াইফ ক্যাম্পাসে যেতেন তখনই তার বাসায় অব্যশ্যই যেতেন। ফিরে আসার পর আমি তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেসও করতাম।
কুমিরা ক্যাম্পাসে স্থায়ীভাবে বসবাস করে যারা আবাদ করার জন্য সর্ব প্রথম পরিবার নিয়ে থাকার সাহসিকতা দেখিয়েছেন তিনি তাদের একজন ছিলেন। তিনি আমাদেরও আগে গিয়ে সেখানে পরিবার নিয়ে থাকতে শুরু করেছেন।। আর যে দুইজন ছিলেন তাদের একজন হলেন প্রফেসর ড. শাফী উদ্দীন মাদানী এবং আরেক জন আমি।
আমি এক নং হলের প্রোভেস্ট ছিলাম আর শাফী উদ্দীন মাদানী ভাই ২ নং হলের প্রভোস্ট ছিলেন। আমি ভার্সিটির এক প্রান্তে আব্দুর রাহমান ভাই আরেক প্রান্তে শাফী উদ্দীন ভাই অন্য প্রান্তে থাকতেন। আমি দক্ষিণে আব্দুর রাহমান ভাই পূর্বে আর শাফী উদ্দীন ভাই পশ্চিম উত্তরে থাকতেন। আব্দুর রাহমান বর্তমানে শিক্ষক ডর্মের নামে পরিচিত সেখানের সিঁড়ির নীচে একটি ছোট্ট বাসায় থাকতেন। তদানীন্তন প্রো-ভিসি আবু বকর রাফীক আহমাদ সাহেব তাকে সেখানে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। রাফীক সাহেব তাকে খুব পছন্দ করতেন।
এসব কারণে আমার সাথে তার গভীর সম্পর্ক ছিলো। আমার কাছে বিভিন্ন সময় আসতেন। পারিবারিক বিষয়ে অনেক কিছুই শেয়ার করতেন। নিজের বাচ্চাদের জন্য শ্বশুরের বাড়িতে কেনা জায়গায় একটি ঘর করার তার পরিকল্পনা ছিলো। কারণ তিনি নও মুসলিম ছিলেন। তাই পৈত্রিক সম্পত্তি হতে মাহরূম হয়েছেন। থাকতেন শ্বশুর বাড়িতে।
খুব কষ্ট করে তার দুটি ছেলে ও একটি মেয়েকে মানুষ করেছেন। বড় ছেলেটা চট্টগ্রাম ভার্সিটি হতে সিএসই শেষ করে এখন একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে শিক্ষকতা করে। দ্বিতীয় ছেলেটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকুরী করে। আর মেয়েটি কলেজে পড়ে।
পরিশেষে সবার কাছে আব্দুর রাহমান ভাইয়ের জন্য দো‘য়ার আবেদন করছি। আল্লাহ্ যেন তার ঈমানকে ক্বাবুল করে তাকে জান্নাতের মেহমান বানিয়ে নেন এবং তার সন্তানদেরকে সাবরে জামীল দান করেন। আ-মী-ন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন