আল্লাহ্ তা’য়ালা আমাদের শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়েছে যথাযথ কাজে লাগানোর জন্য। শরীরের যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেরই পৃথক পৃথক কাজ রয়েছে। এর মধ্যে পা-দুটি অন্যতম প্রধান অঙ্গ। এই পা-এর ব্যবহার আধুনিক ও যান্ত্রিক যুগে এসে আমরা যেন ভুলেই গেছি। অর্থাৎ আমরা হাঁটতে ভুলে গেছি। আর তাই ঘর থেকে যে যার সাধ্যমত বাহন যোগে একস্থান থেকে অন্যত্র গমানগমন করে থাকি। এ অভ্যাস আমাদের স্বল্প পাল্লা (Walking distance) বা দূল পাল্লা (Long distance) উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। অথচ পেছন ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে, মাত্র দু’তিন দশক আগেও মানুষ পায়ে হেঁটে পথ চলতো মাইলের পর মাইল। ক্ষেত্র বিশেষে কখনো কখনো নৌকায় চড়েও। তখন কিন্তু এতসব পাকা রাস্তা ছিল না এবং যানবাহনও ছিল খুব কম। তখন হাঁটার অভ্যাস জারী ছিল বিধায় মানুষের শরীরে রোগব্যাধি ছিল তুলনামূলক কম। অসুখ-বিসুখ যেমন কম ছিল তেমন এত ডাক্তার-কবিরাজ, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার বলতে তেমন বেশী কিছু ছিল না। কালের বিবর্তনে মানুষ বেড়েছে বহুগুণ এবং মানুষ হাঁটতে ভুলে গিয়ে যানবাহন নির্ভর হয়ে পড়েছে। আমার মতে খুব তাড়া না থাকলে নিকটের রাস্তা পায়ে হেঁটে যাওয়াই শ্রেয়। এতে সুফলও পাওয়া যাবে অনেক। যেমন :
১। দুর্ঘটনার আশংকা কম থাকে।
২। টাকা বাঁচে।
৩। অচেনা রাস্তা-ঘাট হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞাসাবাদে চেনা যায়।
৪। হাঁটলে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যায়াম হয়। ফলে রক্ত সঞ্চালন হয়ে শরীর থাকে সুস্থ ও সবল।
৫। হাঁটাহাঁটির ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন তৈরী হয় ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৬। স্ববান্ধবে বা স্বপরিবারে হাঁটতে হাঁটতে কথার কাজটি সেরে নেয়া যায়।
৭। খাবার পর হালকা হাঁটাহাঁটি করলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
৮। এক সমীক্ষায় জানা যায় যে, একজন গৃহিণী ঘরের মধ্যে সংসারের সব কাজ কর্ম সারতে দিনে গড়ে ১৮ কি.মি. হেঁটে থাকেন। এ হাঁটাহাঁটি যদি শরীরের ক্ষতি করতো তাহলে অনেক গৃহিণী অকালে অসুস্থ হয়ে পড়তেন। যেহেতু অধিকাংশ গৃহিণী হাঁটাহাঁটির কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন না সেহেতু হাঁটাহাঁটিতে নিশ্চয়ই উপকার আছে যা বুঝতে আর বাকী থাকে না।
৯। বহুতল ভবনে উপরে-নীচে ওঠা-নামার সিঁড়ি ব্যবহার করলে পায়ের তথা সমস্ত শরীরের ব্যায়াম হয়। লিফ্ট ব্যবহারে সে সুযোগ থাকে না। তাছাড়া লিফ্ট ছিঁড়ে পড়ে মানুষ হতাহতের ঘটনাও ঘটে থাকে মাঝে মধ্যে। বিদ্যুৎ চলে গেলেও লিফ্ট বন্ধ হয়ে আটকা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই লিফ্টে না উঠে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামার অভ্যাস করুন।
১০। পায়ে হেঁটে চলার অভ্যাস থাকলে কারো ধাওয়া খেয়ে দ্রুত পালানো যায়।
১১। যেহেতু আমাদের দেশে ঘন ঘন হরতাল পালিত হয়ে থাকে, সেহেতু পায়ে হেঁটে চলার অভ্যাস থাকলে হরতালের দিন হেঁটেই কর্মস্থলে যাওয়া যায়।
১২। পায়ে হেঁটে মসজিদে গমনাগমনে প্রতি কদমে সওয়াব হয়।
১৩। অনেক সময় যানবাহন পাওয়া না গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে না থেকে ততক্ষণে পায়ে হেঁটে গন্তব্যস্থলে যাওয়া যায়।
১৪। ট্রাফিক জ্যামে বসে থেকে সময় নষ্ট না করে হেঁটে চলুন। দেখবেন যান্ত্রিক/অযান্ত্রিক যানগুলোকে পেছনে ফেলে দিব্যি আগে ভাগেই গন্তব্যে গেছেন।
১৫। প্রতিদিন সকালে ও বিকালে ২ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে চলার অভ্যাস থাকলে যাতায়াতের টাকাটা বেঁচে যায় যা মাস শেষে মোটামুটি ভাল একটা অংকে দাঁড়াতে পারে।
১৬। অনেককে বলতে শোনা যায়, মানুষ যখন হাঁটে তখন তাকে দেখে মনে হয় যে আদম গাড়ী চালাচ্ছে। এতে জ্বালানী তেল ও টাকা দু’টোর সাশ্রয় হয়। এমনকি কালো ধোঁয়া বা বিকট শব্দে পরিবেশ দূষণের ভয় থাকে না। মোদ্দা কথা পায়ে হেঁটে চলার কোন বিকল্প নেই।
সুতরাং, আসুন- আমরা আজ থেকে পায়ে হেঁটে চলার অভ্যাস গড়ে তুলি। নিজেরা সুস্থ থাকি। পরিবেশ সুস্থ রাখি। মূল্যবান সময় ও টাকা বাঁচাই। নিজের তথা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তিতে সামান্যতম হলেও অবদান রাখি।
(হামিদ খান, daily sangram)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন