ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৯

মরহুম আব্বাস আলী খান (রহঃ) একজন পরিচ্ছন্ন মানুষের গল্প....

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ জয়পুরহাট যাচ্ছি! ভিতরে ভিতরে চাপা উত্তেজনা অনুভব করছি। মনে হচ্ছে যেন, বহুদিন পর আমার আত্মার আত্মিয়র সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
বাস থেকে নেমে ভ্যানে চেপে বসলাম। তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমে গেছে। চারদিকে অন্ধকার আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। কিছুটা গা ছমছমে পরিবেশ।
নিরবতা ভেঙ্গে ভ্যান ওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘বাড়িত কায় কায় আছে?’
আমার মুখে আঞ্চলিক শব্দ শুনে সে একবার পিছন ফিরে চাইল। বলল, ‘আপনের বাড়ি কি হামার এটি?’
বললাম, ‘না! অংপুরত।’

সে বলল, ‘ও আচ্ছা! তাইলে ত হামারে মানুষ। মোর একটা ব্যাট; ক্লাস টু তে পড়ে। মুই পড়ালেখা পারো না। তোমার ভাবি ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়ছে। তোমার ভাবিই ছইলক পড়ায়।’
এই যে সে ‘তোমার ভাবি’ শব্দ উচ্চারণ করছে, এর অর্থ সে আমাকে আপন ভাবতে শুরু করেছে। এরা কতই না সরল, একটা অচেনা অজানা মানুষকে কত সহজেই না আপন ভাবতে পারে।
তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনার এলাকায় একজন বিখ্যাত মানুষের বাড়ি এবং কবর আছে, জানেন কি?’
সে বিষ্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে বলল, ‘না তো! কায় আছে?’
‘মরহুম আব্বাস আলী খান! নাম শুনেননি?’
হু শুনছি ত।
তয় মুই দেখি নাই। বাপের মুখত মানুষটার মেলা গল্প শুনছি। বাপে কয়, বড় ভালো মানুষ আছিলেন।’
আমার স্মৃতিপটে এই ভালো মানুষটা একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। আব্বাস আলী খান প্রথম কর্মজীবনে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সেক্রেটারি ছিলেন।
পরে ব্রিটিশ সরকার বিদায় নিলে আব্বাস আলী খান দেশে ফিরে আসেন এবং দেখেন, যতো অযোগ্য লোক আছে সব সচিবালয়ের বড় বড় পদগুলো দখল করে বসেছে।
এ ‍দৃশ্য দেখে তিনি সরকারি চাকরিতে জয়েন না করে জয়পুরহাট ফিরে আসেন।
এখানে এসে তাঁর শ্বশুরের অনুরোধ এবং স্নেহমাখা আদেশে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই স্কুলের একটা খুব খারাপ রেকর্ড ছিল। স্কুল প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে কেউই ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করতে পারেনি। প্রায় সবাই ইংরেজিতে ফেল করে।
আব্বাস আলী খান সাহেব প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি ক্লাস টেনের ইংরেজি ক্লাস নেওয়া শুরু করলেন।
এভাবে চলতে চলতে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা চলে আসল। পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট প্রকাশ হলে দেখা গেল, স্কুলের অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেছে।
এরপর ঢাকা থেকে আব্বা আলী খানের কাছে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত পৌঁছল। তাঁকে সংগঠনের বৃহত্তর স্বার্থে স্কুলের চাকরিটা ছাড়তে হবে এবং রাজশাহী মহানগরের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। আব্বাস আলী খান দ্বিতীয়বার ভাবলেন না, এমনকি চাকরি ছাড়া নিয়ে নিজের বিবির সাথেও পরামর্শ করলেন না।
সংগঠন যখন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তখন সেটাই উত্তম।
সমস্ত আয়োজন শেষ করে তিনি পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে চাকরি ছাড়ার ব্যবস্থা করলেন।
স্কুলের শেষ দিন শেষে তিনি যখন বাড়িতে ফিরে বিছানায় মাত্র শরীর এলিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তখনই আব্বাস আলী খান সাহেবের বিবি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললেন, ‘আপনি স্কুলে কী করে এসেছেন? সমস্ত বাড়ি স্কুলের ছাত্ররা ঘিরে ফেলেছে!’
আব্বাস আলী খান ছাত্রদের সামনে হাজির হলে, তারা সকলে বলে উঠল, ‘স্যার, আপনাকে চাকরি ছাড়তে দিবো না! আমরা আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছি। আপনাকে যেতেই হবে স্যার।’
খান সাহেব চাকরিতে ফিরে না গেলেও, রাজশাহী থেকে বাড়িতে ফিরলেই তিনি সেই স্কৃলে ক্লাস নিতেন।
(তথ্য সূত্র: স্মৃতি সাগরের ঢেউ : আব্বাস আলী খান)
এই অসাধারণ মানুষটার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছি, ‘আমাদের পূর্বসূরীরা সত্যিই সোনার মানুষ ছিলেন।
তাঁদের এই অসাধারণ কাজগুলো পৃথিবীর বুকে তাঁদের অমর করে রেখেছে এবং করেছে সম্মানিত।’
এই সোনার মানুষরাই আমাদের প্রেরণা, আমাদের সাহস এবং পথ চলার শক্তি। তাঁরাই আমাদের আত্নার আত্মিয়। আল্লাহপাক আমাদের এই সোনার মানুষদের মত মানুষ হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন