মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আমার ভক্তিভরা সালাম গ্রহণ করিবেন। আমি আপনার রাজ্যের অধীন একজন নগন্য প্রজা। আপনি যদিও অবৈধভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী তবুও আপনার বশ্যতা স্বীকার করিতে বাধ্য। তাহা না হইলে আমার মতো একজন দূর্বল প্রজাকে আপনার পেটোয়া বাহিনী কারাবরণ করিতে বাধ্য করিবে।
মাননীয় মন্ত্রী,
কয়েকটি বিষয়ে আপনাকে অবহিত করিবো মাত্র। দয়া করিয়া আমার বেয়াদবি মাফ করিবেন। মাত্র কয়েকটা দিন আগে পত্রিকায় দেখিলাম, আপনার এক অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে অল্পক্ষনের জন্য বিদ্যুৎ চলিয়া গিয়াছিল বলিয়া আপনি দুইজন কর্মকর্তাকে চাকুরী হইতে বরখাস্ত করিয়াছেন। আপনি যদি প্রকৃত অর্থেই জনগণের কল্যাণে কাজ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে জনস্বার্থে একটি ফায়সালা করিয়া দেন। সাধারণ জনগন যে প্রায় প্রতি ঘন্টায় ৩০ মিনিটের মত লোডশেডিং এর ভোগান্তিতে পড়িতেছে ইহার জন্য কাহাকে বরখাস্ত করিবেন? আবার, আপনার প্রায় প্রত্যেক বক্তৃতাতেই শুনিয়া থাকি আপনার আমলে নাকি হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হইয়াছে যেখানে বিগত সকল সরকারের আমলে তাতে অনেক ঘাটতি ছিলো। নিঃসন্দেহে আপনার এই অবদান প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই, এতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে জমা থাকিবার পরেও এই প্রচন্ড গরমে দেশবাসীকে লোডশেডিং এর মত মানবসৃষ্ঠ গজবে ফেলিতেছেন কেন? আবার শুনিতেছি, আপনি নাকি আমাদের প্রতিবেশী দেশের কাছে বিদ্যুৎ রপ্তানি করিবেন! ইহা রপ্তানি নাকি পাচার অথবা উপহার তাহা কেবল আপনিই জানেন। দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাইবার পরেই দয়া করিয়া দাদার দেশে বিদ্যুৎ পাঠাইবেন, এটাই বিনীত অনুরোধ করতেছি। এই দেশটাতো আপনারই, আপনার পিতা আপনাদের পরিবারের ভোগের জন্যই পাকিস্তানের কাছে থেকে সাধারণ জনগনকে লইয়া এই দেশ স্বাধীন করিয়াছিলো। ইহার জন্যই যাহা কিছু ইচ্ছা আপনি তাহা করিতে পারেন তাহাতে বাধা দিবোনা। কিন্তু, লোডশেডিংয়ে জন্য কতো প্রকারের ক্ষতি হয় তাহা হয়ত আপনার জানা নাই। কারণ আপনি লোড শেডিংয়ের ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রায় অজ্ঞাত।যদিও কখনো লোডশেডিংয়ের শিকার হইয়া থাকেন তাহা হইলে ঐটা ছিলো নিছক একটি দূর্ঘটনা বৈ আর কিছু নয়। কোমলতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি, বাসা-বাড়িতে গরমের কারণে বৃদ্ধদের আহাজারি, হাসপাতালে রোগীদের আর্তনাদ, সর্বোপরি রাস্তা অন্ধকার হইয়া গেলেই চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই থেকে রেহাই পাইয়া যাওয়া সোনার হরিণ পাইয়া যাইবার মতই অনুভুতি মনে করিতে হইবে।
আবার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আপনার সোনার ছেলেদের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হইয়া পড়িতেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ঠ সকলেই অতিষ্ঠ হইয়া পড়িয়াছে। তাহারা দেশের সকল প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসকে যেন একটি মিনি ক্যান্টনমেন্টেই পরিণত করিয়া ফেলিয়াছে। সোনার ছেলেদের ছাত্রহলে বইপত্র না পাইয়া পাওয়া যায় দেশীয় সকল প্রকার ধারালো অস্ত্রসহ আধুনিক বিদেশী মরণাস্ত্র! সোনার ছেলেদের অত্যাচারে অনেক ছাত্রী কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়াই বন্ধ করিয়া দিয়াছে। তাহাদের দৌরত্ম রুখিবার সাধ্য কাহার আছে!
বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী,
আরেকটি বিষয় অবগত না করিলেই নয়, আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম যে হারে বাড়িয়া চলিতেছে তাহার দিকেও কোনই ভ্রক্ষেপ নাই বলিলেই হইবে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবোরের কি হইবে তাহা আল্লাহ ছাড়া কেহ অনুভবও করিতে পারিতেছেনা।যথাসময়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে না পারিলে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন হইয়া পড়িবে।
জানি এইসব অবান্তর কথা কোনভাবেও আপনার কান পর্যন্ত পৌঁছিবেনা।
কিন্তু আমি যদি আপনাকে লইয়া সামাজিক মাধ্যমে কিংবা অন্য কোথাও কটাক্ষ করিয়া কোন কথা বলিতাম, তাহা হইলেই যেন কিভাবে আপনার অনুগত আওয়ামী-প্রশাসনের কাছে পৌছাইয়া যায়। আর তাতেই ঐ হতভাগার ঠাই হয় চার দেওয়ালের মাঝখানে কারাগার নামক স্থানে। এই বাংলার জমীনে নবী-রাসূল কিংবা ইসলামকে লইয়া কটাক্ষ করিলে কিংবা আঘাত করিয়া লেখালেখি করিলে আপনি তাহাদের উপাধি দেন দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা! আর অপরপক্ষে আপনাকে কেহ যদি দেশ শাসনে ব্যর্থ হইয়াছেন বলিয়া গালি দেয় তাহলেই সে হইয়া যায় রাষ্ট্রদ্রোহী। এরই নাম কি গনতন্ত্র? আপনি যদি কাহারো সমালোচনা করার অধিকারটুকু না রাখিতে দেন, তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানের নাম “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” সংশোধন করিয়া “সৈরাচারতন্ত্রী বাংলাদেশ” রাখিতে পারেন। তাহা হইলে সাধারণ জনগণ সচেতন হইবে বলিয়া আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিকে বলিতেছে।
“সৈরাচারতন্ত্রী বাংলাদেশ” নামটি যথার্থ হইবে কারণ আজ দেশে বাক-স্বাধীনতা নাই, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানানোর অধিকারটুকুও নাই। সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করলেই হয় গুম না হয় খুন। এ যেন এক হীরক রাজার দেশ!
মমতাময়ী দেশনেত্রী,
পঁচাত্তরের সেই ভয়াল রাতে নরপশুরা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালাইয়া বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানসহ পুরো পরিবারকে হত্যা করিয়াছিলো। তাই, আপনি স্বজন হারানোর বেদনা বুঝিয়াছেন ভালো করিয়াই। আপনি মনে যে রকমের কষ্ট ধারণ করিয়া চলিতেছেন সেই রকমের কষ্টই পাচ্ছে হাজার হাজার মা-বাবা, ভাই-বোন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে আপনার বাহিনী ক্রসফায়ারের নামে হত্যা করিয়া তাহাদের বুক খালি করিতেছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে রিমান্ডের নামে জীবন্ত মৃত মানুষে পরিণত করিয়াছেন। ২ জামায়াত নেতাকে হত্যা করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রথম কাতারের সকল নেতৃবৃন্দকে বন্দী করিয়া যুদ্ধাপরাধ নামের প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যার ব্যবস্থা করিয়াছেন। আন্তর্জাতিক খ্যতিসম্পন্ন মুফাসসিরে কোরআন বিশ্বনন্দিত বক্তা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে কারাগারে দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ বন্দী রাখিয়াছেন। আজ জামায়াত-শিবিরের মিছিল দেখিলেই আপনি গুলি করিবার নির্দেশ প্রদান করিয়া থাকেন। আপনি হয়তো জানেন না, জামায়াত-শিবিরের প্রতি এমন অসহনীয় নির্যাতনের জন্য সাধারণ ছাত্রজনতা ও সকল শ্রেণীপেশার মানুষ দলে দলে জামায়াত-শিবিরের ছায়াতলে আসিতে শুরু করিয়াছে।
হে ধর্মপ্রেমিক,
আপনি কোরআনের তাফসির মাহফিলে ১৪৪ ধারা জারি করিয়া থাকেন কিন্তু সাংস্কৃতিক উৎসব কিংবা কনসার্টের নামে বেশ্যাবৃত্তির চর্চার জন্য সরকারী অনুদান প্রদান করিয়া থাকেন। আপনি মদ, গাজা, হিরোইন ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দিয়া তাহাদের ব্যবসাকে বৈধতা দিয়েছেন। ইসলামী আইন-কানুন দেশে চালু না করে যেটুকু চালু আছে তাও উঠিয়ে দেবার জন্য প্রতিদিন ধর্ষণ, ইভটিজিং, হত্যা, রাহাজানি, ছিনতাই, লুটপাট বেড়েই চলিতেছে যাহার অধিকাংশ আপনার সোনার ছেলেদের দ্বারাই সংঘটিত হইতেছে। স্বজনপ্রীতি বাদ দিয়া তাহাদেরকে আইনের আওতায় আনিয়া বিচার করুন। যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করুন। মনে রাখিবেন, সবকিছুর হিসাব-নিকাশ কিয়ামতের সেই ময়দান সবার সামনে বিশ্বজগতের পালনকর্তা মহান আল্লাহতায়ালা করিবেন। সময় থাকিতেই ন্যায়ের পথে, ইসলামের পথে চলে আসুন নচেৎ ফেরাউন-নমরূদের মতো অবস্থা গ্রহণের জন্য জন্য প্রস্তুত হইয়া থাকিয়েন।
পরিশেষে, আল্লাহর আপনার সুস্বাস্থ্য ও হেদায়াত কামনা করিয়া শেষ করিতেছি।
মোঃ আখতার হোসেন আজাদ, সদর, চাপাইনবাবগঞ্জ (মতামত লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন