বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেন, ভাষার জন্য জীবন দিয়ে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল ভাষা সৈনিকরা। এই ত্যাগ আজ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। কিন্তু নিজ দেশেই বিভিন্ন স্তরে বাংলা ভাষা আজও উপেক্ষিত। তাই ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু করতে হবে।
তিনি আজ এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত বাংলাদেশে অধ্যায়নরত বিদেশি ছাত্রদের বাংলা ভাষা প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি।
শিবির সভাপতি বলেন, অনন্য আত্বত্যাগ ও কোটি কোটি মানুষের প্রাণের এই বাংলা ভাষা এক ঐতিহাসিক অর্জন। এ অর্জন আজ আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত এবং বাংলা ভাষা বিশ্ব দরবারে স্বাধীন ভাষার মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু নিজ দেশেই সেই ভাষার যথার্থ মর্যাদা পাচ্ছে না। নিছক বুলিতে পরিণত হয়েছে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের রাষ্ট্রীয়
অঙ্গীকার। সুদীর্ঘ ছয় দশক পেরিয়ে গেলেও আধুনিকতার নামে চলা বাণিজ্যনির্ভর শিক্ষার দাপটে শিক্ষাঙ্গন থেকে বিদায় নিচ্ছে বাংলা ভাষা। একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে ঘিরে কিছুদিন আবেগ-উচ্ছাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও সরকারি ও বেসরকারি অধিকাংশ জায়গায় মাতৃভাষাকে বিসর্জন দিয়ে অকারণেই চলছে ইংরেজি শব্দের ছড়াছড়ি। সংবিধান, আইন আর সরকারি নির্দেশনার পরেও সর্বেক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষা চালু হচ্ছেনা। সর্বস্তরে মাতৃভাষা চালুর স্বপ্ন এখনো স্বপ্নই রয়ে গেছে। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে মাতৃভাষাকে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলা ভাষা এখন ভয়াবহ আগ্রাসনের স্বীকার। দেশে অবাধে ভিনদেশি অপসংস্কৃতির প্রসারের ফলে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ বিদেশি ভাষায় প্রভাবিত হয়ে পড়ছে। এমনকি ছোট ছোট বাচ্চারা পর্যন্ত বাংলার বদলে হিন্দিতে কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। কারণ রাষ্ট্রযন্ত্রের একটি শ্রেণী পরিকল্পিত ভাবে আকাশ সংস্কৃতিকে উন্মুক্ত করার মাধ্যমে ভারতীয় চ্যানেল গুলোকে একতরফা লাইসেন্স দিয়ে বাংলা ভাষার উপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। যার বড় প্রমাণ সম্প্রতি ভারতীয় হাই কমিশনার বলেছেন, ‘হিন্দি সিরিয়াল ও সিনেমার প্রসারের ফলে বাংলাদেশে হিন্দি ভাষার ভবিষ্যৎ উজ্জল’ যা খুবই উদ্বেগের বিষয়। কারণ এদেশের দামাল ছেলেরা বাংলা ভাষার জন্য দিয়েছে, হিন্দি ভাষা লালনের জন্য নয়। আর আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিতেও বিদেশী ভাষার প্রভাব লক্ষ্যনীয়। এখনই এর প্রতিরোধ করা না হলে শহীদদের আত্মত্যাগ ও কোটি কোটি মানুষের প্রাণের ভাষা বাংলা হারিয়ে এক জগাখিচুড়ি ভাষাতে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, রক্তে অর্জিত এই বিরল গৌরবকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। এর পরিবর্তন আমাদের করতেই হবে। বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ অনেকটা নির্ভর করছে মাতৃভাষার প্রতি বাংলা ভাষাভাষীদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। আমাদের হীনমন্যতামুক্ত হয়ে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে গভীরভাবে মাতৃভাষা চর্চা করতে হবে। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকসহ সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন করতে হবে। ভাষাকে আগ্রাসন মুক্ত রাখতে ভিনদেশী অপসংস্কৃতির প্রসার নিয়ন্ত্রন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, যার যার অবস্থানে থেকে জাতীয় ও ব্যক্তি জীবনে ভাষার চর্চা অব্যাহত রাখলে বাংলা ভাষা তার প্রাপ্য গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হবে।
কর্মশালা শেষে তিনি বাংলা ভাষা শেখার জন্য বিদেশি ছাত্রদের হাতে বর্ণমালার বই তুলে দেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন