বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার যশরা ইউনিয়নের পাড়াভরট গ্রামের দরিদ্র পিতা আব্দুল মতিন তার মেয়ে তাকমিনাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন অনেক : মেয়ে পবিত্র কোরআনের হাফেজা হবে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, কোনো ঈমানদার ছেলের হাতে তুলে দিবে, মেয়ে স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার গড়বে।
পিতা মতিনের স্বপ্ন প্রায় পূরণের পথেই ছিল। মেয়ে এসএসসি পরিক্ষা দিয়েছে, সে নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে, হিজাব করে। মেয়েটিও তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণে ছিল অপ্রতিরোধ্য! তাকমিনা সরলবিশ্বাসে প্রেম করে গ্রামের 'জামিয়া আরাবিয়া কাসেমুল উলুম কওমী মাদ্রাসা'র কিতাব বিভাগের ছাত্র এবং মসজিদের মুয়াজ্জিন আশিকুলের সাথে।
হালকা-পাতলা ও লম্বা দেহের অধিকারী আশিকুল। গালভরা দাড়ি। চেহারায় নূর ভাসে! হাসলে মুক্তা ঝরে। চোখে ঈমানী জৌলুশ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। মসজিদে আযান দেয়। ঈমামতি করে। কোরআন তেলাওয়াত করে। কথার ফাঁকেফাঁকে আলহামদুলিল্লাহ, মাশাল্লা, সুবহানআল্লাহ ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণ করে! মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র সে। আর কিছুদিন পরেই ফতুয়া দেয়া শুরু করবে। ওয়াজ নসিহত করবে। দাপিয়ে বেড়াবে দেশের অলিগলি। সাধারণ মুসলমান তাকে সম্মান করবে, ভয় করবে, হাদিয়া দিবে!
শয়তান বেশি-বেশি ধোকা দেয় মুমিনবানন্দাদের ; আশিকুলও শয়তানের ধোকা থেকে বাঁচতে পাড়েনি! তাকমিনা আল্লাহর উপর ভরসা রেখে হুজুর আশিকুলকে সত্যিকারের ভালবাসলেও, শয়তানের কুমন্ত্রণায় আশিকুল ভালবাসেনি, তার ভিতরে ছিল কামনার আগুন নেভানোর কুমতলব! তাই সে অভিনয় করতে থাকে।
ফোনে কথা হয়। দু'জনার দেখা হয়। কথা হয় পাশাপাশি বসে। একে অপরকে আলিঙ্গন করে। স্পর্শ করে। চুম্বন করে। চোখে চোখ রাখে। সোহবত করে! নেমে আসে ঐশ্বরিক প্রশান্তি!
আশিকুল বারবার তাকমিনাকে নির্জন জায়গায় ডেকে নিয়ে সোহবত করে, আঁজল করে ; তাকমিনার গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। দু'জনার মিলিত হওয়া প্রসঙ্গে কেউ সন্দেহ করে না। কারণ, ওরা ঈমানদার বান্দা -বান্দি। অসচেতন পিতাও টের পায়না তার মেয়ের কি সর্বনাশ হতে চলেছে!
প্রহর দিন মাস বছর, এমনি করে বহতা নদীর মতো সময় চলে যায় বহুদূর! তাকমিনার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। বিয়ের জন্য চাপ দেয় কোরআনের পাখি হুজুর আশিকুলকে। আশিকুল সিদ্ধান্ত দেয় না ; বারবার অপেক্ষায় রাখে। তাকমিনার অপেক্ষার পালা শেষ হয় না। মাদ্রাসার বড় হুজুরের কাছে ঘটনা ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখায় আশিকুলকে। আশিকুল মনেমনে ক্ষিপ্ত হয়!
দিন যায় রাতে আসে। আশিকুল এশার সালাত আদায় করে শুতে যায় ; ঘুম আসে না। চোখ বুঝলেই জান্নাতি হুর কল্পনার আকাশে উঁকিঝুঁকি মারে! জান্নাতি রমণীদের জঙ্ঘা, উরু, স্তন, বগল, নাভি ও যৌনাঙ্গের চিত্র তার চোখে আঁকিবুঁকি করে! পানপাত্র কুঁজা ও শরাবপূর্ণ পেয়ালা হাতে গেলমানেরা ভাসে চোখের তাঁরায়! শিশ্নমোবারক জিহাদীদের মতো টগবগ করে, উত্তেজিত হয়! ঈমানের তেঁজ সহ্য করতে পারেনা সে!
গভীর রাতে তাকমিনাকে ফোন করে আশিকুল। তাকমিনাকে মসজিদের সামনে আসতে বলে। তাকমিনা রাজি হয় না। তাকমিনা বুঝে গেছে তাকে ডেকে নিয়ে খায়েস পূরণ করবে আশিকুল। আশিকুল বারবার আল্লাহর কসম কাটে। ওয়াদা দেয় সোহবত করবে না। তাকমিনা কোনোভাবেই রাজি হয় না। অতঃপর পালিয়ে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয় আশিকুল। তাকমিনা আল্লাহ্কে স্মরণ করে চুপিচুপি ঘরের বের হয়।
আজ তাকমিনা ঘরের বের হচ্ছে স্বামীর হাতে নিজেকে সমর্পিতা করার জন্য। সে জানেনা কোন অচেনা গন্তব্যপথে চলছে...! গর্ভধারিণী মা ঘুমায়। হতভাগ্য পিতা ঘুমায় নিশ্চিন্তে। তারা টের পায়না তাদের ধন পরপারের দিকে পা বাড়িয়েছে! তাকমিনা রাতের বুক চিরে টিপটিপ করে হাটতে থাকে মসজিদের উদ্দেশ্যে।
আশিকুল তার দুই সাহাবী মাহফুজ ও আরিফকে প্রস্তুত করেছে এদিকে! দুই বন্ধুকে বুঝিয়েছে - তাকমিনা যদি আমার মারেফাত প্রকাশ করে দেয়,তাহলে শরিয়তের বদনাম হবে! বদনাম হবে আমাদের মসজিদ ও মাদ্রাসার! আলেম সমাজের প্রতি মানুষ ঘৃণার চোখে তাকাবে! সুতরাং, তাকমিনাকে কতল করতে হবে। আশিকুলের অনুরোধে দু'জন রাজি হয়। মসজিদের আড়ালে ঘাপটি মেরে বসে থাকে তারা।
গ্রামের সহজসরল মেয়ে তাকমিনা মসজিদের সামনে এসে হাজির হয়। রাত্র দ্বিপ্রহর! আশিকুল তাকমিনার হাত ধরে বলে - চল। তাকমিনা আশিকুলের পিছে হাটে। মসজিদের পাশে রমজান আলীর ভিটায় যায় আশিকুল, সঙ্গে তাকমিনা।
রমজান আলীর ভিটায় গিয়েই আশিকুল তাকমিনাকে ঝাপটে ধরে, ঠোঁটে কামড় দেয়, স্তন মর্দন করে,চাপাচাপি করে! তাকমিনা বিরক্ত হয়ে বলে, - 'এসব কি হচ্ছে? আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা বলো'। আশিকুল তাকমিনার মুখ চেপে ধরে!
জিহাদের ময়দানে কাফেরদের যেভাবে পরাজিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চলে,সেভাবে জোরজবরদস্তি করে আশিকুল! হিংস্র হয়েনার মতো খুবলে খেতে থাকে মেয়েটিকে! মেয়েটি চিৎকার করতে চায়! আশিকুল মুখ চেপে ধরে! দৌড়ে আসে দুই সাহাবী মাহফুজ ও আরিফ। ওরা তাকমিনার হাতপা শক্ত করে ধরে। আশিকুল তাকমিনার শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। অতঃপর আশিকুল তার পাগড়ি মোবারক দিয়ে তাকমিনার গলা পেঁচিয়ে ফেলে, এবং টেনেহিচড়ে জামগাছে ফাঁসিতে ঝুলায়!
এতক্ষণে ফজরের সময় হয়েছে। আল্লাহর হুকুম আদায় করতে হবে, আজান দিতে হবে, দুই রাকাত সুন্নত এবং ফরজ পড়তে হবে। আশিকুল তাড়াহুড়ো করে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে! ততক্ষণে আশিকুলের পোষাকে এবং লিঙ্গমোবারকে লেগে থাকা বীর্য হয়তো শুকিয়ে যায়নি! অজু-গোসল ছাড়াই আশিকুল আজান দেয়।
মহামারি করোনাভাইরাস বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে! বন্ধ হয়ে গেছে সি বিচ,ক্লাব,সিনেমাহল, বিদ্যালয়, ইয়োগা সেন্টার, মেডিটেশন সেন্টার, পর্যটনশিল্প, কলকারখানা, যানবাহন এবং অফিস আদালত! বহির্বিশ্বে অচল হয়ে গেছে মসজিদ,মন্দির,প্যাগোডা, সিনাগোগ,গুরুদুয়ারা এবং কাবা! বিশ্ব যখন অচল,তখন বাংলাদেশের মসজিদ সমূহ সচল! এদেশে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়েছে! আল্লাহ্ হেদায়েত করেছেন এদেশের মুসলমানদের! তারা জেনে গেছে - করোনা ভাইরাস অাল্লাহর গজব ; এটা মুসলমানদের ক্ষতি করবে না ; এটা কাফেরদের জন্য এসেছে, করোনাভাইরাস আল্লাহর সৈনিক! ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নাই। মসজিদে জামায়াতের সহিত নামাজ অবশ্যই পড়তে হবে। দোয়াদরুদ বেশি-বেশি পড়তে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে মসজিদ বন্ধের ঘোষণা আসলে কঠিন জবাব দেয়া হবে! তাই মসজিদ খোলা।
আশিকুলের আজান দেওয়া শেষ। মুসুল্লিরা এসেছেন নামাজ পড়তে। সময় পার হয়ে যায় - বড় ঈমাম আসেননি। ঈমামতির দায়িত্ব পরে আশিকুলের ওপর। অকুতোভয় আশিকুল ঈমামতি করে।
নামাজ শেষে মুসুল্লিরা যখন বাড়ী ফিরছিলেন,তখন দেখতে পান জামগাছতলা ঝুলন্ত এক লাশ! হৈঁইচই লেগে যায়। চারদিক থেকে লোকজন আসতে থাকে। এই ফাঁকে আশিকুল পালিয়ে যায়। তাকমিনার বাবা-মা এসে দেখে - এযে তাদের সন্তান তাকমিনা! চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়! জ্ঞান ফিরলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে তাকমিনার দিকে! এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না!
তাকমিনার বাবার জায়গায় নিজেকে একবার দাঁড় করিয়েছি। বুঝতে চেষ্টা করেছি এভাবে সন্তান হারানোর বেদনা কতটুকু! বিশ্বাস করেন, সমস্ত পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে আসছিল! আকাশ ভেঙে মনে হচ্ছিল আমার মস্তকটাকে ছিন্নভিন্ন করে দিচ্ছে! বুকের বাম পাশটা ব্যাথায় মোচড় দিয়ে উঠছিল! চোখেরজল মুছতে মুছতে নিজের কাছে নিজেকে প্রশ্ন করলাম,'৯৫ শতাংশ মুসলমানদের দেশে ধর্মপ্রচারক আশিকুলদের কি দ্রূত বিচার হবে? ফেনির নুসরাতের খুনিরা কি এখনো জেলখানার ভেতর টুপি পাঞ্জাবি পরে নামাজ আদায় করে'?
কৃতজ্ঞ: Shahidul Islam.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন