বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সারাদিন রোজা থাকার পরে ইফতার করা মুমিনদের জন্য একটি বিরাট আনন্দের বিষয় তো বটেই বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও। কিন্তু অনেক মুসলিম ইফতারের সঠিক নিয়ম-পদ্ধতি না জানার কারণে বিভিন্ন ধরণের সুন্নত পরিপন্থী কার্যক্রম করে থাকে।
তাই নিম্নে ইফতারের সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করা হলো:
◈ ১) সূর্য ডোবার সাথে সাথে ইফতার করা। ইচ্ছাকৃত ভাবে বিলম্ব না করা।
কিছু মানুষ সূর্য ডোবার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পরও অতিরিক্ত সতর্কতার জন্য ৪/৫ মিনিট বিলম্ব করে। কিছু মানুষ আজান শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। নি:সন্দেহে এগুলো সুন্নত পরিপন্থী ও দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি।
◈ ২) ইফতারের পূর্বে আল্লাহর কাছে দুআ করা। সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, রোজা অবস্থায় দুআ কবুল হয়। তাছাড়াও সহিহ হাদিসে ইফতারের আগে দুআ কবুলে বিষয়টিও প্রমাণিত। সে সময় মানুষ এক দিকে রোজা অবস্থায় থাকে অন্য দিকে রোজার কারণে ক্ষুধার্ত, তৃষ্ণার্ত ও ক্লান্ত-শ্রান্ত থাকে। তাই এ অবস্থায় দুআ কবুলের অধিক আশা করা যায়। তবে প্রত্যেক রোজাদার নিজে নিজে দুআ করবে। এ ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে দুআ করা বিদআত।
◈ ৩) আধা পাকা নরম খেজুর দ্বারা ইফতার করা। তা সম্ভব না হলে শুকনা খেজুর। তাও সম্ভব না হলে পানি দ্বারা ইফতার। এ তিনটির কোনটি না পেলে অন্য যে কোন হালাল খাদ্য-পানীয় দ্বারা ইফতার করা।
উল্লেখ্য যে, বাঙ্গালীর ইফতারে বুট-মুড়ি না থাকলেই নয়। এ ক্ষেত্রে অনেকে মুড়ির সাথে কাঁচা পিয়াজ মেশান। কিন্তু হাদিসে কাঁচা পেঁয়াজের দুর্গন্ধ সহকারে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই হয় কাঁচা পেয়াজ খাওয়া বাদ দিতে হবে অথবা আগুনে সিদ্ধ করে তার দুর্গন্ধ দূর করতে হবে অথবা সালাতে যাওয়ার পূর্বে ভালভাবে ব্রাশ করে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
◈ ৪) ইফতারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহর নামে শুরু করছি) পাঠ করা (পরিপূর্ণ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ নয়)।
উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে ইফতারের জন্য বিশেষ একটি দুআ প্রচলিত রয়েছে। তাহলো, “আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিযক্বিকা আফত্বারতু”। অর্থ- হে আল্লাহ্, আমি আপনার জন্য রোযা রেখেছি এবং আপনার দেয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।) কিন্তু এ হাদিসটি সনদ গতভাবে জঈফ (দুর্বল)[(দ্র: জঈফ আবু দাউদ, হা/২৩৫৮]। তাই তা না পড়াই ভালো। বরং অন্যান্য খাবার গ্রহণের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তাই এখানেও তাই যথেষ্ট। তবে কেউ উক্ত দুআ পাঠ করলে তাকে বিদআত বলা ঠিক নয়।
◈ ৫) ইফতারের সময় সাধারণত মাগরিবের আজান হয়। তাই খাওয়া-দাওয়া চলাকালীন সময়েও আজানের জবাব দেয়া ও আজানের পরের দরুদ ও দুআ পড়া।
◈ ৬) ইফতারের সময় বা ইফতার শেষে “যাহাবায যামাউ, ওয়াব তাল্লাতিল উরূক্বু ও ছাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ্।” (অর্থ: তৃষ্ণা দূর হয়ে গেল, শিরা-উপশিরা সিক্ত হল এবং ইনশাআল্লাহ্, সওয়াব সাব্যস্ত হল)” [শাইখ আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান আখ্যায়িত করেছেন]। (আল্লামা উসাইয়মীন রহ. এ দুআটি ইফতারের পরে পড়ার কথা বলেছেন)
◈ ৭) পেট পুরে কিংবা মাত্রাতিরিক্ত না খাওয়া। হাদিসে পেট ভরে খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। সুতরাং সেহরি, ইফতার বা অন্য কখনোই পেট ভরে বা মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ নয়। এটাই আধুনিক স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্যনীতি।
◈ ৮) পানাহারে অপচয় রোধ করা জরুরি। কিছু মানুষ ইফতারে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয়ের পসরা সাজায়। কিন্তু সামান্য কিছু খেয়ে বাকি খাবার ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে। এটি নি:সন্দেহে নিন্দনীয় ও গর্হিত কাজ।
◈ ৯) অন্য রোজাদারকে ইফতারি করানো। এতে উক্ত রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব হবে। অর্থাৎ এক সাথে দুটি রোজার সওয়াব পেতে চাইলে আরেকজন রোজাদারকে ইফতার করান। এভাবে যত বেশি রোজদারকে ইফতার করানো হবে ততটি সওয়াব আপনার আমলনামায় লেখা হবে। কিন্তু যারা ইফতার করবে তাদের সওয়াব হ্রাস করা হবে না।
◈ ১০) প্রতিবেশী ও গরিব-অসহায় মানুষের বাড়িতে ইফতার পাঠানো।
প্রতিবেশীর বাড়িতে ইফতার পাঠালে পারস্পারিক ভালবাসা ও সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। আর গরীব-অসহায় মানুষের বাড়িতে ইফতার পাঠানোর মাধ্যমে তাদের মুখে হাসি ফোটানো হয়। যা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুন্নাহ মোতাবেক রোজা পালনের তওফিক দান করুন। আমীন।
▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
লেখক:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন