ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

সোমবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ মুজতবা আলী পাঠকক্ষে এক অপরাহ্ন: সাঈদ চৌধুরী

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ কিংবদন্তী তুল্য রম্যলেখক সৈয়দ মুজতবা আলীকে জানার সুবিধার্থে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ মুজতবা আলী আবাসিক হলে একটি পাঠকক্ষ চালু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ও আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য পাঠকক্ষ তত্ত্বাবধান করেন।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের কৃতিমান সাধক বিখ্যাত ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী সিলেটের এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। তিনি ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খানবাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তার পৈতৃক নিবাস সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার উত্তরসুর গ্রামে। তবে তিনি সিলেট শহরেই বড় হয়েছেন।
সৈয়দ মুজতবা আলী সিলেট গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯২১সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। সেখানে তিনি ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, হিন্দি, সংস্কৃত, গুজরাটি, জার্মান ও ইতালীয় ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। সেখান থেকে ১৯২৭ সালে কাবুলের শিক্ষাদপ্তরে যোগ দেন। কাবুল কৃষি বিজ্ঞান কলেজে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। পরে স্কলারশিপ নিয়ে যান জার্মানির বার্লিন ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন ১৯৩২ সালে। তিনি ১৯৩৪-১৯৩৫ সালে মিশরের রাজধানী কায়রোতে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৩৫ সালে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি আট বছর কাটান। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক মাওলানা আবুল কালাম আজাদের আমন্ত্রণে সৈয়দ মুজতবা আলী সচিব হিসেবে যোগ দেন ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেসান্সে। এরপর পরিচালক হিসেবে যোগ দেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। ১৯৬১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করে বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ সালে তিনি অবসরগ্রহণ করেন।
বহুভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলীর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট। ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার নানা দেশে কর্মসূত্রে সঞ্চয় করেন বিচিত্র অভিজ্ঞতা। ভ্রমণকাহিনীর জন্য তিনি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
সৈয়দ মুজতবা আলী দেশ বিভাগের পর বেশির ভাগ সময় কাটান জন্মভূমি তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে। ১৯৪৭ সালেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে বক্তৃতা করেন সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে। বগুড়া আজিজুল হক কলেজে থাকাকালীন বাংলা ভাষার সমর্থনে ‘পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ লিখে ব্যাপক আলোচনায় আসেন।
সৈয়দ মুজতবা আলী বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমনকাহিনী। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তিনি বাংলা রসরচনায় মৌলিক অবদানের জন্য অবিস্মরণীয়। তার উল্লেখযোগ্য গ্ৰন্থের মধ্যে ভ্রমণকাহিনী: দেশে বিদেশে (১৯৪৯), জলে ডাঙ্গায় (১৯৬০).মুসাফির, উপন্যাস: অবিশ্বাস্য (১৯৫৪), শবনম (১৯৬০), শহর ইয়ার (১৯৬৯), অবিশ্বাস্য, ছোটগল্প: চাচা কাহিনী (১৯৫২), টুনি মেম (১৯৬৪), রম্যরচনা: পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২), ময়ূরকন্ঠী (১৯৫২),‘ভবঘুরে ও অন্যান্য , গল্পমালা: রাজা উজির, ধূপছায়া, বেচে থাক সর্দি-কাশি, পুনশ্চ, পাদটীকা, তীর্থহীনা, কর্ণেল, রাক্ষসী, বিধবা বিবাহ, ক্যাফে-দে-জেনি, মা জননী, বেল তুলে দু-দু'বার, স্বয়ংবরা, রস-গোল্লা (ইংরেজি), প্রবন্ধ রচনা: 'হিটলার', পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা, ইত্যাদি।
সৈয়দ মুজতবা আলী শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে নিয়মিত লিখতেন। পরবর্তীতে ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেছেন। এছাড়া চতুরঙ্গ, মাতৃভূমি, কালান্তর, আল-ইসলাহ্ সহ বিভিন্ন কাগজে নিয়মিত লেখক ছিলেন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের কারণে ১৯৪৯ সালে তিনি অর্জন করেন নরসিং দাস পুরস্কার। ১৯৬১ সালে অর্জন করেন আনন্দ পুরস্কার। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিশেবে তাকে প্রদান করা হয় একুশে পদক ২০০৫ (মরণোত্তর)।
লেখক, ভাষাবিদ, গবেষক ও শিক্ষক সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি চলে যান না ফেরার দেশে। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যে হাস্যরসের প্রাণভ্রমরা। একজন অমর কথাশিল্পী। এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার চিন্তা ও পরিবেশন শৈলীর নৈপুণ্যে পাঠক বিস্মিত না হয়ে পারেন না। যতদিন বাংলা সাহিত্য থাকবে, ততোদিন অনবদ্য সাহিত্য কর্মের মধ্য দিয়েই তিনি থাকবেন চির জাগ্রত, চির ভাস্বর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন