* ইক্বামাতে দ্বীনের কাজ শখের বশে নয়, এটাকে ফরজ জেনে করতে হয়। আর ফরজ কাজ থেকে কোন মুসলিম বিরত থাকতে পারে না।
* বহমান নদী বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে যেমনি নিজের পথ নিজে করে নেয়, ইক্বামাতে দ্বীনের কাজও ঠিক তাই, এটা বহমান থাকবেই, তার গতিরোধ করার সাধ্য কার?
* ষড়যন্ত্র ও নির্যাতন বিহীন ইসলামী আন্দোলন তেমনি অসম্ভব, ছায়াহীন গাছের কল্পনা যেমন অসম্ভব।
* বিশ্ব নবীর জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল দ্বীনের বিজয়, যে ব্যক্তি দ্বীনের বিজয়কে নিজ জীবনের মূল লক্ষ্য বানায় নি, সে রাসূল সা, কে জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে নি।
* সৃষ্টি যার, আইন চলবে শুধু তাঁর। এ বিষয়ের উপর ঈমান আনা ফরজ। বিপরীত মনোভাব পোষণ করা কুফরী।
* দ্বীন চাপিয়ে দেয়ার বিষয় নয়, স্বত:স্পূর্ত ভাবে গ্রহণ করার বিষয়। তাই ব্যাপকভাবে দাওয়াতি কাজের বিকল্প নেই।
* আখেরাতের সফলতা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং দ্বীন বিজয়ের প্রচেষ্টার সাথে সম্পৃক্ত। তাই যেন-তেন উপায়ে তাড়াহুড়ো করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রবণতা পরিত্যাগ করা আবশ্যক।
* নির্বাচনে পরাজয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কিচ্ছু আসে যায় না, কেননা মুখলেস কর্মীরা তাদের কর্মের সাওয়াব নিশ্চয়ই পেয়ে গেছে।
* টিসি, টি এস, শব্বেদারী, দারসে কুরআন, দারসে হাদীস, বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ইত্যাদি আবার কোন কৌশলে চালু করা যায়, তা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
* সমাজ বিপ্লবের জন্য মাসজিদের মিম্বারগুলোকে দাওয়াতী কাজের প্রধান ক্ষেত্র বানাতে হবে। সাড়ে তিন লাখ মাসজিদে কমপক্ষে পাঁচ কোটি মুসলমান সপ্তাহে প্রায় এক ঘন্টা দ্বীনি কথা শুনতে বাধ্য হয়। তাই পরিকল্পিত ভাবে ইমাম তৈরী করা আবশ্যক।
* রাজনীতি ও নির্বাচন কেন্দ্রীক 25% বা 30% কর্মসূচী রেখে, বাকী 70% বা75% কর্মসূচী থাকা দরকার দাওয়াত ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রীক।
* নিজের ব্যক্তিগত জীবনে ও পরিবারের সকল সদস্যকে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলায় অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
* রাজনীতির ময়দানে মুনাফিক বন্ধুদের উপর ভরসা না করে, আল্লাহর উপর ভরসা করা আবশ্যক। মুনাফিক বন্ধুর চেয়ে, প্রকাশ্য শত্রু অনেক ভালো।
* ইসলামের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়-
বান্দার চেষ্টা যেখানে শেষ হয়, আল্লাহর সাহায্য সেখান থেকে শুরু হয়।
বান্দার চেষ্টা যেখানে শেষ হয়, আল্লাহর সাহায্য সেখান থেকে শুরু হয়।
আমরা অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যাব এবং আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষা করব।
আমরা দরাজ কণ্ঠে ঘোষণা করতে চাই-
মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। রাত্রি যত গভীর হয়, প্রভাত তত ঘনিয়ে আসে।
ড.মুফতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার।।।
হে দ্বীনের বীর সেনানীরা!
কিসের হতাশা!
জেগে উঠো, তাকবীর দাও!
ঘোষণা কর- "সৃষ্টি যার, আইন চলবে শুধু তার"।
আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি
পর্ব-2
* ব্যক্তিগত জীবনে দ্বীন মেনে চলা যেমন ফরজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা করাও তেমনি ফরজ। তবে সে প্রচেষ্টার পরিধিটা হবে ব্যক্তির সামর্থ্য অনুযায়ী। এ প্রচেষ্টায় আন্তরিকতা থাকা লাগবে 100% তে 100% । না হয় হাশরের মাঠে ধরা পড়া লাগবে।
* ব্যক্তিগত জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট দ্বীনি বিধিবিধান না মানলে হাশরের মাঠে ব্যক্তি জিজ্ঞাসীত হবে, রাষ্ট্রীয় জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিধিবিধান না মানলে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ জিজ্ঞাসীত হবে। তবে সাধারণ জনগণ জিজ্ঞাসীত হবে- তারা কেমন মানুষকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সমর্থন করেছিল?
* যারা খারাপ লোকদের সমর্থনকারী ছিলো, অথবা যাদের নিরবতার কারণে খারাপ লোকেরা ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছিল, তারা খারাপ লোকদের পাপের বোঝাও বহন করতে বাধ্য হবে। কেননা খারাপ লোকেরা তাদের কারণেই নেতৃত্ব পেয়েছিল।
* 100% আন্তরিকতা নিয়ে, সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা করার পরও যদি রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম না হয়, হাশরের দিন বান্দা তার প্রভুর পাকড়াও থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যাবে। কেননা আল্লাহ সামর্থ্যের বাহিরে কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।
* আখেরাতে মুক্তির জন্য দ্বীন কায়েমের আন্তরিক প্রচেষ্টা একান্ত জরুরি। তবে দ্বীন কায়েম হওয়া আখেরাতের মুক্তির সাথে শর্তযুক্ত নয়।
* তাই প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে শরীয়াত পরিপূর্ণ সমর্থন করে না, এমন কোন উপায় অবলম্বন করে বা এমন কোন কর্মসূচী দিয়ে দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা করা অনুচিৎ। যেমন- জন জীবনে দূর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন কোন কর্মসূচী প্রদান করা।
* সমাজে দ্বীন কায়েম করা মোটেও সহজ কাজ নয়। এ কাজে আল্লাহর সরাসরি সাহায্য লাগবেই। আর আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে সকল প্রচেষ্টা ও সকল কর্মসূচী হওয়া লাগবে আল্লাহর বিধান সমর্থিত।
* দ্বীন কায়েম করতে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সা, এর মত মহামানবেরও 23 বছর লেগেছিল। আমাদের 100/200 বছর লাগলেও ধৈর্য্য হারা হওয়া যাবেনা। তাই যেন-তেন উপায়ে, তাড়াহুড়ো করে নির্বাচনে কিছু আসন জিতে নেয়ার পরিকল্পনা নয়, বরং জনশক্তিকে কত বেশি তাকওয়ার মানে উন্নীত করা যায়, প্রশিক্ষীত করা যায় সে পরিকল্পনা করা দরকার।
* আবারো আগের মত টি সি, টি এস, শব্বেদারী সহ প্রশিক্ষণ মূলক প্রোগ্রাম গুলেো যে কোন উপায়ে, যে কোন কৌশলে শুরু করতে হবে। যে প্রোগ্রামগুলোর আলোচনা শুনে চোখের পানিতে ক্বলব ধৌত হয়ে যেত। "যে অতীত প্রেরণা যোগায়"- এ আলোচনা শুনে ঈমানী তেজ হাজার গুণ বেড়ে যেত। শব্বেদারীর ভোর রাতের মুনাজাতের তৃপ্তি আজও ভুলতে পারিনি।
* ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত 100% জনশক্তিকে কিভাবে জান্নাতি মানুষের চরিত্রে গড়ে তোলা যায়, সে পরিকল্পনা হাতে নেয়া আবশ্যক। আমাদের হাজারো প্রচেষ্টার পরও যদি দ্বীন কায়েম না হয়, কিন্তুু আন্দোলন জনশক্তির সবাই যদি জান্নাতি হতে পারে, এটাই হলো ইসলামী আন্দোলনের চুড়ান্ত সফলতা। আর যদি দ্বীন বিজয়ী হয়ে যায়, এটা হবে আল্লাহর অশেষ করুণায় আমাদের বাড়তি পাওনা।
* 18 থেকে 3, আবার 3 থেকে 0, এটা দেখে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। কারণ আমরা বিশ্বাস করি আগের তুলনায় আন্দোলনের জনশক্তি অনেক বেড়েছে, মোটেও কমেনি। জেল- যুলুমের কারণে জনশক্তির ঈমানী দৃঢ়তাও আগের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং হতাশা কিসের?
* জনসমর্থন নিয়ে নির্বাচনে 200 আসন পাওয়ার পরও তাগুতি শক্তির ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের অবস্থা মিশসেরর ইখওয়ানের মত হবে না, তারই বা গ্যারান্টি কোথায়? আল্লাহ না করুন, যদি তা-ই হয়, তখন কি আমরা হতাশ হয়ে ইসলামী আন্দোলন ছেড়ে দেব?
কক্ষনো নয়, কেননা আসন পাওয়া-না পাওয়া, বা রাষ্ট্র ক্ষমতায় টিকে থাকা-না থাকার মধ্যে আমাদের সফলতা নয়। আমাদের সফলতা আখেরাতে মুক্তি পাওয়ার মধ্যে। আর আখেরাতে মুক্তি পাওয়ার জন্যই আমরা ইসলামী আন্দোলন করি।
সুতরাং হে দ্বীনের বীর সেনানীরা!
কিসের হতাশা!
জেগে উঠো, তাকবীর দাও!
ঘোষণা কর- "সৃষ্টি যার, আইন চলবে শুধু তার"।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন