বাংলাদেশ বার্তাঃ "অবশ্যই যারা আমার বানীকে প্রত্যাখ্যান করার অহংকার করে, তাদের জন্যে 'কল্যাণের' দরজা কখনো খোলা হবে না । একটি সুঁইয়ের ছিদ্র দিয়ে উটের প্রবেশ যেমন অসম্ভব, সত্য অস্বীকারকারীদের জান্নাতে প্রবেশও তেমনই অসম্ভব । জালেমদের এভাবেই আমি প্রতিফলন দিয়ে থাকি ।" (আল-কোরআন ৭ঃ ৪০)
.
এ আয়াতের তফসীর প্রসঙ্গে এক রেওয়ায়েত হযরত আব্দুল ইবনে আব্বাস ও অন্যান্য সাহাবী থেকে এমনও বর্ণিত আছে যে, অবিশ্বাসীদের আত্মার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে না । এ সব আত্মাকে নীচে নিক্ষেপ করা হবে ।
.
এ বিষয়বস্তু সমর্থন হযরত বারা ইবনে আযেব (রা) এর ঐ হাদীস থেকে পাওয়া যায় যা আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজা ও ইমাম আহমদ বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন । হাদীসটি সংক্ষেপে এই-
.
হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) জনৈক আনসারী সাহাবীর জানাজায় গমন করেন । কবর প্রস্তুতের কিছু বিলম্ব দেখে তিনি এক জায়গায় বসে যান । সাহাবায়ে কেরামও তার চার পাশে চুপচাপ বসে যান । হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) মাথা উচু করে বললেনঃ মুমিন বান্দার মৃত্যুর সময় হলে আকাশ থেকে সাদা ধবধবে চেহারা বিশিষ্ট ফেরেশতারা আগমন করে । তাদের সাথে জান্নাতের কাফন ও সুগন্ধি থাকে । তারা মরণোম্মুখ ব্যক্তির সামনে বসে যায় । অতঃপর মৃত্যুদূত আজরাইল এসে তার আত্মাকে সম্বোধন করে বলেন- "হে নিশ্চিত আত্মা ! পালনকর্তার মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির জন্য বের হয়ে আসো ।" তখন তার আত্মা এমন অনায়াসে বের হয়ে আসে, যেমন মশকের মুখ খুলে দিলে তার পানি বের হয়ে আসে । মৃত্যুদূত তার আত্মাকে হাতে নিয়ে উপস্থিত ফেরেশতাদের কাছে সমর্পণ করেন । ফেরেশতারা তা নিয়ে রওনা হলে পথিমধ্যে একদল ফেরেশতার সামনে সাক্ষাৎ হয় । তারা জিজ্ঞেস করেঃ "এই পাকআত্মা কার ?" ফেরেশতারা তার ঐ নাম ও উপাধি উল্লেখ করে যা দুনিয়াতে সম্মানার্থে ব্যাবহার করা হত এবং বলেনঃ "ইনি হচ্ছেন অমুকের পুত্র অমুক" । ফেরেশতারা তার আত্মাকে নিয়ে প্রথম আকাশে নিয়ে দরজা খুলতে বলেন । দরজা খোলা হলে সেখান থেকে আরও ফেরেশতারা তাদের সঙ্গী হয় । এভাবে তারা সপ্ত আকাশে পৌঁছে । তখন আল্লাহ বলেনঃ "আমার এ বান্দার আমলনামা 'ইল্লিয়্যীনে' লিখে তাকে ফেরত পাঠিয়ে দাও ।" এ আত্মা আবার কবরে ফিরে আসে । কবরে হিসাব গ্রহনকারী ফেরেশতারা এসে তাকে উপবেশন করিয়ে প্রশ্ন করেঃ "তোমার পালনকর্তা কে ? তোমার ধর্ম কি ?" সে বলেঃ "আমার পালনকর্তা- আল্লাহ্ । আমার ধর্ম- ইসলাম ।" এরপর প্রশ্ন করা হয়ঃ "এই যে ব্যক্তি যিনি তোমার জন্য প্রেরিত হয়েছিলেন, তিনি কে ?" সে বলেঃ "ইনি আল্লাহর রাসুল (সঃ) ।" তখন একটি গায়েবী আওয়াজ আসে যে, "আমার বান্দা সত্যবাদী । তার জন্য জান্নাতের শয্যা পেতে দাও এবং জান্নাতের দিকে তার দরজা খুলে দাও ।" এ দরজা দিয়ে জান্নাতের সুগন্ধি ও বাতাস আসতে থাকে । তার সৎকর্ম একটি সুশ্রী আকারে ধারণ করে তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য তার কাছে এসে যায় ।
.
অন্যদিকে অবিশ্বাসীদের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে আকাশ থেকে কালো রঙ্গের ভয়ংকর মূর্তি ফেরেশতা নিকৃষ্ট চট নিয়ে আগমন করে এবং তার বিপরীত দিকে বসে যায় । পরে মৃত্যুদূত তার আত্মা এমনভাবে বের করে, যেমন কোন কাঁটা বিশিষ্ট শাখা ভিজা পশমে জড়িয়ে থাকলে তাকে সেখান থেকে টেনে বের করা হয় । ফেরেশতারা তাকে নিয়ে রওনা হলে পথিমধ্যে একদল ফেরেশতার সামনে সাক্ষাৎ হয় । তারা জিজ্ঞেস করেঃ "এই দুরাত্মাটি কার ?" ফেরেশতারা তার ঐ হীনতম নাম ও উপাধি উল্লেখ করে যা দুনিয়াতে পরিচিত ছিল এবং বলেনঃ "সে হচ্ছেন অমুকের পুত্র অমুক" । ফেরেশতারা তার আত্মাকে নিয়ে প্রথম আকাশে নিয়ে দরজা খুলতে বললে তার জন্যে দরজা খোলা হয় না বরং নির্দেশ আসে যে, এ বান্দার আমলনামা সিজ্জিনে রেখে দাও । সেখানে অবাধ্য বান্দাদের আমলনামা রাখা হয় । এ আত্মাকে নীচে নিক্ষেপ করা হয় এবং তা পুনরায় দেহে প্রবেশ করে । ফেরেশতারা তাকে কবরে বসিয়ে বিশ্বাসী বান্দার অনুরূপ প্রশ্ন করে । সে প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তরে কেবল "হায় হায় !! আমি জানি না" বলে । তাকে জাহান্নামের পোশাক ও শয্যা দেয়া হয় । ফলে তার কবরে জাহান্নামের উত্তাপ পৌছতে থাকে এবং কবরকে তার জন্যে সংকীর্ণ করে দেয়া হয় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন