মসজিদ হতে বেরিয়ে হাঁটছি। পিছন হতে একজন ভদ্রলোককে পরিচিত মনে হল। একটু দ্রুত পা চালিয়ে ধরলাম।
– শরিফ ভাই, আসসালামু আলাইকুম। আমাদের পাড়ায় কবে আসছেন? আপনার ফ্ল্যাট তো মনে হয় রেডি। অনেক ইনটেরিওর এর কাজ ও হয়েছে মনে হয়।
ভদ্রলোক দুবাইয়ে ব্যবসা করেন। অনেক কষ্ট করে হাসলেন। ৫৫-৫৬ বছর হবে বয়স। দেশে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন।
– ফ্ল্যাট রেডি হয়েছে ২ মাস আগে। এই ফ্ল্যাটে উঠা আর না উঠা এখন এক কথা আমার জন্য।
– কেন ভাইয়া, কোন সমস্যা?
– জানো, প্রায় ১০ বছর ধরে টাকা জমিয়েছিলাম এই ফ্ল্যাটটার জন্য। এরপর ৩ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা এই এপার্টমেন্ট। ২ মাস ধরে ১৭ লাখ টাকার ইনটেরিওর, ৩ টা এসি, সেগুন কাঠের সব আলমারী আর লেকার করা কিচেন কেবিনেট। এখন সব আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
– বুঝলাম না ভাইয়া।
– আমার একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে, অন্যটা ১৫ ভাগ কাজ করছে। ডায়ালিসিস করে চলছি। বড়জোর ৬ থেকে ১২ মাস হয়ত চলবে এভাবে………।
– এত শখ করে বানালেন যখন, উঠে আসেন! চিকিৎসা চলুক………।
অশ্রুসজল চোখে শরিফ ভাই বললেন,
– ভাই, অবাক হয়ে ভাবি এই ঘরটার জন্য জীবন দিয়ে দিলাম। কয় মাস পরেই যে সাড়ে তিন হাত ঘরে যাব তার জন্য কিছুই ভাবি নি। কোন সঞ্চয় নেই। ভেবেছিলাম অন্তত ৭৫-৮০ বছর বাঁচব। নাতি নাতনিদের সাথে খেলব। সবাইকে নিয়ে বিদেশে ঘুরতে যাবো। বাচ্চারা ছোট ছিল বলে হজ্ব ও করলাম না। একটা ছোট্ট ঘরে গিয়ে কয়’শ কিংবা হাজার বছর শুয়ে থাকতে হবে তার কোন ইনটেরিওর করলাম না। এসি লাগালাম না। এখন হাতে সময় নাই। মাফ চেয়ে কুল পাচ্ছি না। অল্পতেই চোখে পানি আসে। একটা সময় একদম আসত না। আসি, আমার জন্য দোয়া করিও।
উনার কথা শুনে একটা হার্টবিট মিস করলাম। আমাদের সাথেও কি অদ্ভুত মিল!!
সারা জীবণ লেখাপড়া থেকে শুরু করে বিদেশে,সন্তান,স্ত্রী,বাড়ি ঘরের জন্য জীবণ কাটিয়ে দিলেন।পাপ পুন্যের হিসেব করলেন না,ভাবলেন শেষ বয়সে ধর্ম-কর্ম করে একবার হজ্জ করতে পারলেই কাজ সারা।যে সাড়ে তিন হাত কবরে আপনাকে থাকতে হবে তার প্রস্তুতি নিয়েছেন কি? সময় পাবেন ত?
সংগৃহিত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন