বাংলাদেশ বার্তাঃ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে মাওলানা নিজামীর আপীল খারিজ হয়ে যাবার পর পরিস্কার হয়ে গেলো নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন অতিবাহিত হলেই সরকার তার ফাঁসি কার্যকর করবে । আমরা যারা তার আইনজীবি হিসেবে আদালতে ভূমিকা পালন করেছি ,আইনী পরামর্শের জন্য কারাগারে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাত করেছি,তাদেরও আইনী লড়াই ও সাক্ষাতের সুযোগ শেষ হয়ে আসছে।
হৃদয় রাজ্যে সীমাহীন বেদনা নিয়ে বিচার প্রক্রিয়ার সর্ব শেষ ধাপ রিভিউ সম্পর্কে মাওলানা নিজামীর মতামত নেয়ার জন্য আমরা তিনজন আইনজীবী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাত করতে গেলাম।
আমাদের বহনকারী গাড়ীটি অন্যান্য দিনের মত উত্তরা আব্দুল্লাপুর হয়ে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের দিকে ছুটে চলছে। আবদুল্লাহপুর পার হবার পর টংগী পেরিয়ে সামনে বামদিকে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসা অতিক্রমের সময় মাদ্রাসা ময়দানের দিকে তাকাতেই আমি ঘটনাবহুল অতীতে হারিয়ে গেলাম।
১৯৯৮ সালে এখানেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল কেন্দ্রীয় সদস্য সম্মেলন।ঐ বছর ১জানুয়ারী আমার উপর কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয়।সে সময় তিনি জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল। তিনি একজন অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালনে আমাকে সর্বদাই গাইড করেছেন। এমনি অতীতের অনেক ঘটনা স্মরন করতে করতেই আমরা কাশিমপুর কারাগারে উপস্হিত হলাম।
কারাগারে পৌঁছে প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের পর,সাক্ষাতের অপেক্ষা করতে লাগলাম।সামান্য সময় পরেই আমাদের ভিতরের একটি রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে শহীদ নিজামীকে পূর্বেই নিয়ে আসা হয়েছে।
সালাম বিনিময়,কোলাকুলি সম্পন্ন করে আমরা নিজ নিজ আসন গ্রহন করলাম। বরাবরের মত এবারও আমি তার ডান পাশের চেয়ারে বসলাম। এক জান্নাতি পরিবেশে আমাদের হৃদয় উদ্বেলিত হয় উঠলো।মামলার বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই তিনি বললেন ‘রিভিউ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা।আপীল খারিজ হবার পর আমি শহীদি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছি।’
আমি বললাম “শেষবারের মত মামলার ত্রুটি,সাক্ষীদের অসংগতি, রায়ের ভুল-ভ্রান্তি ইত্যাদি তুলে ধরে আমরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই। আল্লাহর আদালতে যেন আমরা বলতে পারি’হে আমাদের রব আমরা শেষবারের মত সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি’।”
এ কথা শুনে শহীদ নিজামী রিভিউ দায়রের নির্দেশ দিলেন।
এরপর বললেন গতকাল সন্ধ্যার পর আমাকে জানানো হয় আইনজীবীরা সাক্ষাতে আসবে।আমি তাদের কাছ থেকে তোমাদের নামের তালিকা জানতে পারি। তোমাদের সাথে কি কি বিষয়ে কথা বলবো তা নিয়ে চিন্তা করতে থাকি। নানান ভাবনায় রাতে আমার ঘুম হয়নি।শেষরাতে চোখে একটু ঘুম আসতেই স্বপ্নে দেখি:
“আমি সাথিয়ায় চলে গেছি।আমার গ্রামের বাড়িতে।সেখান থেকে যমুনা নদীর তীরে বেডাতে গিয়েছি। আমি নদীর তীরে দাডিয়ে আছি। নদীর ঢেউ দেখছিলাম। হঠাৎ দেখি নদীতে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।পানি উঁচু হয়ে এগিয়ে আসছে।একপর্যায়ে পানি আমার পায়ে এসে ধাক্কা খাচ্ছে। আমি একটু নড়াচড়া করতেই আমার ঘুম ভেংগে যায়।’
আমি জিজ্ঞেস করলাম এ স্বপ্নের কি ইংগিত আছে বলে আপনি মনে করেন?
তিনি বললেন” এর অর্থ হচ্ছে আমার শহীদি মৃত্যু হবে।আমার লাশ নিয়ে যাওয়া হবে সাথিয়ায়। সেখানে বাধ ভাংগা জোয়ারের মত লোকেরা আমার জানাযা পডতে আসবে।আমার কবর জিয়ারত করবে।”
তার মুখে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শুনে আমরা হতবাক হয়ে গেলাম।
কিছুক্ষন নীরব থাকার পর তিনি বললেন “ কয়কদিন আগে স্বপ্নে দেখি আমি অফিসে বসে কাজ করছি। এমন সময় অফিসের একজন ষ্টাফ দৌড়িয়ে এসে বললো: “স্যার! সাপ আপনাকে কামড় দিয়েছে।আমি আমার পায়ের দিকে তাকিয় দেখি গোখর সাপ আমার পায়ের বুড়ো আংগুলে কামড় দিয়েছে। অথচ আমি কোন কিছুই উপলব্ধি করতে পারি নাই। সাপ এমন ক্ষিপ্রতার সাথে কামড় দিয়েছে যে তার মুখ ও লেজ একাকার হয়ে গেছে। আমি দেখতে পেলাম বিষের প্রতিক্রিয়া হওয়ার আগেই সাপটি ছটফট করে মারা গেলো।”
আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন” এ জালেম সরকার সর্ব শক্তি দিয়ে আমাদের উপর আঘাত হানবে। ঠিক সাপটির ছোবল মারার মত ।কিন্তু তাদের সে ছোবলে ইসলামী আন্দোলনের কোন ক্ষতি হবেনা। বরং আক্রমণকারী সাপটির মত এ জালেম সরকারের পতন হবে।”
সাক্ষাতের জন্য নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা বিদায় নিয়ে কারাগার থেকে বের হয়ে আসলাম। করাভ্যন্তরে প্রবেশের সময় তিনি হাত উত্তোলন করে বললেন” দেখা হবে জান্নাতে।”
মহান রাব্বুল আলামীন শহীদ নিজামীর শাহাদাতকে কবুল করুন ।আমীন।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন