আজ সবার মন খারাপ। কাশিমপুর পৌঁছে গাড়িতে সবাই চুপচাপ বসে আছি। আজ বাসা থেকে অন্যান্য দিনের থেকে অনেক আগেই কাশিমপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি আমরা। ঈদের ছুটির পর মাঝে আবার তিন দিনের ছুটি। রাস্তায় ব্যপক জ্যাম হতে পারে আশংকায় আমার ৭০ বছরের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া মাকে নিয়ে কোনরকমে পৌছলাম কাশিমপুরে। সাক্ষাতের জন্য আবেদনও জমা দিলাম যথারীতি। কিন্তু দেখা করতে পারলাম না। সাক্ষাত করতে দিলো না।
বুক ভরা ব্যথা নিয়ে রওয়ানা হলাম বাড়ির পথে। জানিনা, আমার আব্বাকে ওরা জানতে দিয়েছে কিনা আমরা তাঁকে দেখার জন্য সকাল সকালই কাশিমপুর পৌঁছেছিলাম। আব্বার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। নিশ্চয়ই আব্বাও অনেক কথা বুকে জমিয়ে প্রতীক্ষায় ছিলেন আমাদের সাক্ষাতের। নির্জন এক রুমে একাকী তিনি আজ ৮টি বছর। মন খুলে কথা বলার মতোও কেউ নেই।
আহারে! কী করবো ... !
বুকে পাথর চাপা দিয়ে আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির আশায় আকাশপানে তাকিয়ে আছি।
আব্বার কারাজীবনের গত ৮ বছরের ঈদের সাক্ষাতকে কখনো গননার মধ্যে আনা হয়নি। নিয়মানুযায়ী ১৫ দিন পর পর দেখা করার অনুমতি পাই। মাঝে ২ ঈদ। দুটো ঈদেরই সাক্ষাত থাকে সৌজন্যমূলক। এতোদিন তাই-ই হয়েছে। কিন্তু এবার গভীর বেদনার সাথে খেয়াল করলাম, আমাদের রেগুলার সাক্ষাতের সাথে ঈদের সৌজন্যমূলক সাক্ষাতকে ওরা মিলিয়ে ফেলেছে।
এবার ঈদের সৌজন্য সাক্ষাত আমরা করেছিলাম ঈদের পরের দিন অর্থাৎ ২৩ আগষ্ট। আর রেগুলার সাক্ষাত করেছিলাম ১৯ আগষ্ট। সে হিসেবে আজ ৩ সেপ্টেম্বর ছিল নির্ধারিত সাক্ষাতের দিন। কিন্তু ওরা ২৩ তারিখকেই আমাদের রেগুলার সাক্ষাতের দিন হিসেবে গন্য করার অজুহাতে আজ আর আমাদের সাক্ষাত করতে দিল না। অথচ আমাদের রেগুলার সাক্ষাতের ১৫ দিন আজ পূর্ণ হয়েছিল।
অনেক অনুরোধ করা হলো, কোনভাবেই রাজি হলেন না উনারা। বুঝিনা, মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয় কি করে !!
এই কষ্টগুলো কি না দিলে হয়না? আমরা তো এমনিতেই কষ্টের সাগরে ভাসছি। আর কতো !?
Masood Sayedee
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন