বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আব্বা ইন্তেকাল করার পর আমি ভাবতে চেষ্টা করলাম, কত পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে। একটা স্মৃতি আবছাভাবে মনে পড়ে। আব্বা আমাকে টাকা দিয়ে বলেছিলেন বাসার সামনের হকারের দোকান থেকে দৈনিক আজাদী কিনে আনতে। পত্রিকা আনার পর তিনি দাঁড়িয়েই মন দিয়ে পড়ছিলেন। আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে ঘাড় উঁচু করে ভাবছিলাম আব্বা এতো লম্বা কেন? পত্রিকা পড়ায় তাঁর মনযোগ দেখে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কি হয়েছে? তখন আব্বা বলেছিলেন, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক বিমান দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তারপর আমার হাতে পত্রিকা দিয়ে বলেছিলেন পড়তে পারি কি না। তখন সম্ভবত আমি ক্লাশ টু’তে পড়ি।
আশির দশকের শেষের দিকের আমার শৈশবের সব ঘটনা আজ পরিস্কারভাবে মনে নেই। তবে প্রতিটি মানুষের জীবনেই শৈশবের অনেক মধুর স্মৃতি থাকে। ঐ সময়টাতে মানুষের মন থাকে সরল, দৃষ্টি অবারিত, জীবনও খুব সহজ। সে সময়ের টুকরো টুকরো অসংখ্য ঘটনাই মনে পড়ে। বছরে এক দুইবার আব্বার সাথে গ্রামের বাড়ি যেতাম। কর্ণফুলী নদী পার হওয়ার সময় সাম্পানে বসে দেখতাম একটু দূরে শুশুক মাছ লাফিয়ে উঠছে। একটা মাছ লাফালেই আব্বা বলতো দেখো দেখো। আরেকদিকে আরেকটা মাছ লাফলে তখন ঐদিকে তাকিয়ে বলতেন দেখো দেখো।
নদী পার হওয়ার পর তখন রিকশায় চড়ে দেড়-দুই ঘন্টার মতো লাগতো আমাদের বাড়ি যেতে। তখন রাস্তা ছিলো এঁটেল মাটির কাঁচা রাস্তা। এইসময় অবধারিতভাবে আব্বা একটা কাজ করতেন। রাস্তার পাশে নীরব গ্রামের জমিতে বাচ্চারা গরু ছাগল চড়াতো। আব্বা তাদেরকে দেখিয়ে বলতেন, আমি ছোটবেলায় মাদ্রাসা ছুটির পর এইরকম গরু চড়াতাম। এই গরীব বাচ্চারা পড়ালেখা করার সুযোগ পায়নি, অন্যদিকে তুমি আল্লাহর রহমতে পড়ালেখা করছো। এই কথাটা সবসময় মনে রাখবে। যখনই আব্বার সাথে বাড়িতে যেতাম, নদী পার হওয়ার পর দূরে কোথাও রাস্তার পাশে গরু-ছাগল চড়ানো বাচ্চা দেখলেই মনে মনে প্রস্তুতি নিতাম ঐ কথা শোনার জন্য।
পৃথিবীতে আমার আব্বার কাছে নামাজের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিলো পড়ালেখা। এই দুইটা বিষয় নিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে সম্ভবত তিনি একটা দিনও বাদ দেননাই, যতদিন কাছে ছিলাম। তাঁর এই অবধারিত প্রশ্নের ভয়ে মোটামুটি পালিয়ে বেড়াতাম, কারণ বুঝতে পারতাম কোন সময়গুলোতে তিনি আমাকে ধরে বসবেন।
এই স্বভাব সম্ভবত তিনি তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। আমার দাদাকে আমি দেখিনি। অর্থ্যাৎ মনে নেই। আমার বয়স যখন দুই বা তিন বছর, তখন আমার দাদা ইন্তেকাল করেন। আম্মার কাছ থেকে আমি দাদার অনেক গল্প শুনেছি। দাদার অসুস্থতার সময়ে একমাত্র পুত্রসন্তান হওয়ার পরও আব্বা ঢাকা থেকে আসতে পারেননি সংগঠনের ব্যস্ততার কারণে। তারপর যখন এসে পৌছেছিলেন ততক্ষণে দাদা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
আমি আমার বাবা-মায়ের মাঝে এমন একটা প্রজন্ম দেখেছি যাদের কাছে ইসলামী আন্দোলন ছিলো আক্ষরিক অর্থেই এই জীবনের ধ্যানজ্ঞান। তবে তাই বলে তারা তাদের পরিবারের প্রতি দায়িত্বও খুব যে অবহেলা করেছেন তা নয়। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি আব্বার মনযোগ আমি খেয়াল করেছি সারা জীবন, খুব ভালোভাবে খেয়াল না করলে বুঝা যেতো না। এতো ব্যস্ততার পরও সব আত্মীয়রাই তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। আমার দাদীর কাছে আব্বা ছিলেন কলিজার টুকরার মতো। দাদী যদি বলতেন আজ সুর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে তাহলে আব্বা মুচকি হেসে তাতেই মাথা নাড়াতেন। দাদী কোন কিছু চাইলে আব্বা তা পূরণ করবেনই, যাই হোক না কেন।
আমি মাঝে মাঝে আব্বার বেড়ে উঠার সময়ের কথা কল্পনা করতে চেষ্টা করি। সাতচল্লিশের দেশভাগের মাত্র দুই বছর পরে তাঁর জন্ম। আমার দাদা ছিলেন একজন মাদ্রাসা শিক্ষক। এলাকায় না কি তার পরিচিতি ছিলো কট্টর নৈতিকতার জন্য। চট্টগ্রামের যে জায়গায় আমার বাবার জন্ম, আনোয়ারা থানায় বঙ্গোপসাগরের সৈকতের এক গ্রামে, এখানে মুসলমানরা বেরেলভী চিন্তায় প্রভাবিত। সুতরাং আব্বা নিজেও শুরুতে পড়ালেখা করেছেন সুন্নিয়া মাদ্রাসায়। যেহেতু অতিরিক্ত ভালো রেজাল্ট করতেন এবং সবসময়েই দুই তিন ক্লাশ উপরে পড়তেন তাই একসময় পড়ালেখা করতে চলে আসেন চট্টগ্রাম শহরের মাদ্রাসায়।
একবার জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালালউদ্দিন আল কাদেরী সাহেব হেসে হেসে বলেছিলেন, আমি এক বছর ক্লাশে ফার্ষ্ট হতাম তো তোমার আব্বা আরেকবছর ফার্ষ্ট হতেন। উনি যদি 'মওদুদীবাদের' পথে না যেতেন তাহলে এই মিম্বরে হয়তো আমার বদলে উনিই থাকতেন!
শিক্ষাজীবনের বাকী পর্বে আব্বা শুধু নিজ মেধার কারণে মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেছেন, আবার ঢাবি থেকে মাস্টার্স করেছেন। তারপর ইসলামী আন্দোলন ও রাজনীতি দুটোই করেছেন। তবে কখনোই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা তেমন বলতেন না। তিনি তাঁর দ্বীনি শিক্ষাকেই তিনি ভালোবাসতেন। তার অন্য পরিচয় কদাচিত টের পাওয়া যেতো। যখন হঠাৎ হয়তো দেখা যেতো বিমানের কোন একজন এমডি আব্বার ক্লাশমেট ছিলেন, অথবা কোন এনজিওর কেতাদূরস্ত পরিচালিকা ভদ্রমহিলা। কোথাও দেখা হয়ে গেলে, কথা হয়ে গেলে তারা বলতেন তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পড়ালেখার স্মৃতির কথা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বাঘা বাঘা প্রফেসরদের প্রিয় ছাত্র হিসেবে আব্বার কথা। কিন্তু মেলাতে পারতাম না চোখের সামনে যেই আব্বাকে শুধু একজন মাওলানা হিসেবে দেখেছি ছোটবেলা থেকে তার সাথে।
আমি একটা ডিজার্টেশন লেখছিলাম সেক্যুলারিজম সম্পর্কে মাওলানা আবদুর রহীম রা. এর দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে। যখন বিষয়টা চিন্তাপর্যায়ে ছিলো, আমি মাওলানার লেখা বাংলা বইপত্র যোগাড় করছিলাম তখন একদিন কথায় কথায় আব্বা বললেন, জন লক এবং থমাস হবসের মতো পন্ডিতরা সেক্যুলারিজমকে কিভাবে ডিফাইন করেছেন তাও পড়তে হবে ভালো কিছু লিখতে হলে। এইসব নাম আব্বার মুখে শুনে আমি বোকার মতো তাকিয়ে ছিলাম। আমার আব্বার মাঝে এইরকম কিছু অবোধগম্য বৈপরীত্য ছিলো। নিজে ইসলামের বিভিন্ন ধারাকে দেখেছেন এবং কোন ধারারই বিরোধীতা করতেন না। আবার আমাদের সমাজে যাকে অনৈসলামিক মনে করা হয়, তাও দেখার ও বুঝার চেষ্টা করতেন।
তিনি প্রতিদিন রাতে কিছু না কিছু পড়তেন। হয়তো আরবী ম্যাগাজিন আল-মুজতামা' পড়ছেন, নয়তো উর্দু ম্যাগাজিন পড়ছেন নয়তো ঢাকা ডাইজেস্ট কলম পৃথিবী। গোলাম আযম বা নিজামী চাচার লেখা প্রত্যেকটা বই। ইসলামী সাহিত্য পড়া শেষ করে ব্যক্তিগত রিপোর্ট লিখতে বসবেন। আবার কোনদিন উঁকি মেরে দেখতাম পড়ছেন হয়তো তসলিমা নাসরিনের লেখা ক।
আমি হয়তো রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প পড়ছি। দেখে কিছু বলবেন না। সাইমুম সিরিজ বা ইউসুফ কারাদাভীর লেখা বা আবদুশ শহীদ নাসিম চাচার লেখা কোন বই বা নিতান্তই পাঠ্যবই। দেখে খুশি হয়ে যেতেন। কিছু বলতেন না কিন্তু চেহারা দেখে বুঝা যেতো। মাসুদ রানা, ধমক খেতে হতো। মাঝে মাঝে বই সাময়িক বাজেয়াপ্ত হয়ে যেতো। অবশ্য বেশিরভাগ শাসন আমার উপরেই হতো, আমার পিঠাপিঠি ছোটবোনকে একই অপরাধে তেমন কোন শাস্তি দেয়া হতো না। সে ছিলো আব্বার নয়নের মণি। তাই মনে হয় আম্মা আমাকে একটু সাপোর্ট দিতেন। বাজেয়াপ্ত করা বই পরে গিয়ে আম্মার কাছ থেকে ফেরত পাওয়া যেতো।
আমরা ঘরের ভেতরে থাকায় এসব দেখার সুযোগ পেয়েছি। এছাড়া তার জ্ঞান বুঝতে পেতো যারা ভালো ভালো আলেম আছেন তারা। তিনি যে ঘরানারই হোক না কেন। কওমী, দেওবন্দী, নদভী, সালাফি সবাই আব্বাকে পছন্দ করতেন। আব্বাও পছন্দ করতেন তাদের সাথে কোরআন সুন্নাহ ফিকহ এসব নিয়ে কথা বলার সুযোগ করতে পারলে। রাজনৈতিক ব্যস্ততায় এমন সুযোগ হতো কালেভাদ্রে। কিন্তু পড়ালেখার প্রতি তাঁর আত্মিক টান বুঝা যেতো কালেভাদ্রের এসব উপলক্ষে। তাই সুলতান যওক নদভী হোন কিংবা মুফতি ইজহার, চট্টগ্রামের সব ঘরানার আলেমরা তাকে খুব বেশি পছন্দ করতেন। নিজের মানুষ মনে করতেন। এটা আমি বিভিন্ন সময়ে দেখেছি।
ছোটবেলাতেই বুঝে ফেলেছিলাম আমার আব্বা অন্য সবার মতো না। উনি অনেক ব্যস্ত, উনি অনেক পরিচিত। সবাই তাকে সম্মান করে। চট্টগ্রামে মাওলানা আবু তাহেরের সন্তান এই কথাটা কাঁধের উপর কিছু বাড়তি বোঝা যোগ করে। তাছাড়া সবাই যেমন তাহের ভাইয়ের আদর্শ পুত্র আশা করে, আমার মনে হতো আমাকে কেন তেমন হতে হবে? আব্বা সাধারণত চাননা আমি তাঁর পরিচয়ে কোন সুবিধা পাই, আমিও আন্তরিকভাবে এর সাথে একমত।
তাই আমি প্রথম সুযোগেই পালানোর জন্য নানা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি লেখা শুরু করেছিলাম। বৃটিশ কাউন্সিল থেকে ম্যাগাজিন যোগাড় করে পোল্যান্ড জার্মানী কিংবা আমার শিক্ষকদের কাছে থেকে ঠিকানা যোগাড় করে মিশর সউদি আরব ভারত সবখানেই। মানুষ মরিয়া হয়ে লেগে থাকলে একটা না একটা ব্যবস্থা হয়েই যায়। সুতরাং দুই হাজার চার সালে যখন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ পেয়েই গেলাম, তখন একদিন আব্বা বললেন, একটা কথা ভুলে যেও না। এই মাটিতে এই ভাষার মানুষদের মাঝে তোমাকে জন্ম দেয়ার সিদ্ধান্তটি আল্লাহর। হয়তো এর মাঝে কোন কারণ আছে। আমি বু্ঝতে পেরেছিলাম আব্বা কি বলতে চাচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়েছেন শিবির ও জামায়াতের নেতা হিসেবে, অসংখ্য সংস্কৃতি ও সমাজ দেখেছেন সুতরাং এই কথা তিনি বলার সুযোগ তাঁর ছিলো।
আব্বার সাথে যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো তা নয়। উনি আমাদেরকে সবসময় সব কথা বলতেন আমরা সবসময় সবকথা তাকে বলতাম, এমন পরিস্থিতি কখনোই ছিলো না। তবে একটু বড় হওয়ার পর যখন ধমক খেয়েও হাঁত-পা কাঁপা কিছুটা বন্ধ হলো তখন মাঝে মাঝে কিছু কথা হতো। একবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলাম আব্বার সাথে। সেদিন ছিলো স্বাধীনতা দিবস। দাউদকান্দির দিকে একদল ছেলে গাড়ি থামিয়ে সামনের আয়নায় কাগজের পতাকা লাগিয়ে দিলো। ঐ গাড়িটাতে সরকারী পতাকার স্ট্যান্ড ছিলো তাই তারা তখন গাড়িটাকে আটকাতে একটু ইতঃস্তত করছিলো। কিন্তু আব্বা ড্রাইভার ভাইকে গাড়ি স্লো করতে বলেছিলেন এবং ছেলেগুলোকে পঞ্চাশ টাকা দিয়েছিলেন।
তখন আব্বাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা এই জমিনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছেন, কিন্তু একাত্তর সালে সালে এদেশের মানুষদের গণমতের বিপক্ষে চলে গেলেন কিভাবে?
আব্বা প্রথমে বললেন, এটা অনেক বিস্তারিত বিষয়। বিভিন্ন জটিল ও সমস্যার প্রসঙ্গকে তিনি সহজে এড়িয়ে যেতেন। এই উত্তরের পর আর কিছু বলার সাহসও আমার হতো না।
কিন্তু সেদিন একটু পরে কি মনে করে তিনি নিজেই বললেন, যখন পাকিস্তানী আর্মি ক্র্যাকডাউন শুরু করলো তখন আমরা ধারণাও করতে পারিনি তারা জুলুম শুরু করবে, পোড়ামাটি নীতি নেবে। এরপর সময়ের সাথে সাথে আর কিছু করার থাকলো না। তিনি ছাত্রসংঘের একজনের কথা বললেন যিনি পাকিস্তানী আর্মির নির্যাতনের প্রতিবাদ করাতে উল্টা তাকেই হত্যা করার জন্য ধরে নিয়ে গেছিলো। বললেন, এক পর্যায়ে অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে আলবদর সদস্য হিসেবে নির্যাতিত মানুষদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করাই ছিলো তাদের মূল কাজ। যুদ্ধ শেষের কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিলো না এবং তারাও এক পর্যায়ে না কি সিদ্ধান্তহীন হয়ে পড়েছিলেন, কি করবেন। এমন সময় ভারত ঢুকে পড়াতে আচমকা যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়।
এ সময় তিনি পালিয়ে মহেশখালীর এক গ্রামে কিছুদিন ছিলেন। ওখানে তিনি লবণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তারপর স্থানীয় লীগাররা টের পেয়ে গেলে এক রাতে নৌকায় চড়ে বার্মা চলে যান। আরাকান হয়ে সোজা রেঙ্গুন। গ্রামের পরিচিত এক মানুষ তাকে কাজ জুটিয়ে দেন এক বিড়ি কারখানায়। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বিড়ির বান্ডেল বাঁধতে হতো। পাশের এক মসজিদে নামাজ পড়তেন। ছয়-সাত মাস পর একদিন ফজরের নামাজের সময় ইমাম সাহেব সুরা আল ইমরানের কিছু আয়াত পড়ার সময় একটা আয়াত ভুলে বাদ দিয়ে যান। তখন আব্বা অভ্যাসবশে লোকমা দিয়ে বসেন। নামাজ শেষে ইমাম সাহেব আব্বাকে ধরে বসলেন, বিড়িশ্রমিক কিভাবে এই আয়াত জানে। ঐ ইমাম সাহেব কিছুদিন পর দেশে ফিরে যান, যাওয়ার আগে আব্বাকে ইমামতির চাকরিটি দিয়ে যান। বাকী কয়েক বছর আব্বা ওখানেই ছিলেন।
এই ঘটনা বলে আব্বা বললেন, সবমিলে একাত্তর হয়ে দাঁড়িয়েছে একটা গ্রে এরিয়া। এখানে হক্ব ও বাতিলের যুদ্ধ হয়নি, বরং নানামুখী জটিল সংঘাত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদেরকে এর দায় বহন করতে হচ্ছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে আপনাদের ভবিষ্যত চিন্তা কি? উত্তর দিলেন, আল্লাহ যা চায় তাই হবে। সংগঠনের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সামস্টিক সিদ্ধান্তের উপর আল্লাহ রহমত দেবেন।
তাঁর নিজের কাছে সংগঠন ও আনুগত্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু ছিলো না। আরেকবার কথায় কথায় বলেছিলেন, যদি একান্তই কোন মুসলিম নিরুপায় হয়ে যায় তাহলে আবু জর গিফারী রা. এর মতো একাকী জীবন যাপন করাও ইসলামী আন্দোলনের ভেতরে মতপার্থক্য সৃষ্টি করার চেয়ে বেহতর।
তবে আরো নানা কথা, সবকিছু মিলে আমি বুঝতে পারতাম, তিনি ইসলামী সংগঠনকে ইসলামের সমার্থক মনে করতেন না। ইসলাম তাঁর কাছে ছিলো অনেক উদার, অনেক বিশাল পরিসর। সবাইকে তিনি খোলামনে গ্রহণ করতে পারতেন। কারণ তিনি ইসলামের বিভিন্ন ধারাকে, পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজকে স্বচক্ষে দেখেছন। এশিয়া থেকে আফ্রিকা, আরব থেকে ইউরোপ। ছোটবেলা থেকে নিজে ইসলামের বিভিন্ন ধারায় হেঁটে বেড়িয়েছেন। তিনি মাঝে মাঝে কোরআনের বিভিন্ন কেরাআত বা বিভিন্ন মাযহাবের মতপার্থক্যের কথাও বলতেন। কাউকেই কখনো খারিজ করতেন না। তবে নিজের জন্য ইসলামী সংগঠনকে তিনি 'ওয়াজিব' করে নিয়েছিলেন।
অন্যদিকে আমার আম্মার কাছে বিষয়টা একটু অন্যরকম। আম্মাও সত্তরের দশকে ঢাবি থেকে পাশ করা ছাত্রী। কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ অন্য ধরণের পরিবার থেকে আসা। তিনি ইসলামকে চিনেছেন ইসলামী সংগঠন দিয়ে। সুতরাং তাঁর কাছে ইসলামী আন্দোলনই শেষ কথা। জামায়াত করতেই হবে।
এই গূঢ় পার্থক্যের পরও তাদের মাঝে রসায়ন ছিলো ব্যতিক্রমী। আমার আব্বা একজন আড়ম্বরহীন বাহুল্যহীন মানুষ হিসেবে জীবন কাটিয়ে গেছেন, এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা আমার আম্মার। শেষপর্যন্ত গিয়ে আম্মার চিন্তার সাথে তিনি একমত হতেন। এটা একটা অব্যখ্যনীয় বিষয়, যা অল্প কথায় বুঝানো সম্ভব না। বেশ কয়েকবার এমন ঘটেছে অন্য দলের মন্ত্রী এমপি মেয়র এরা চট্টগ্রামে আব্বাকে এটা সেটা উপহার দিয়েই দিয়েছেন। জমি, ফ্ল্যাট, ট্রাকে করে আসবাবপত্র। আব্বা আটকাতে পারেননাই, কিন্তু শেষপর্যন্ত আম্মার কারণে ফেরত পাঠাতে হয়েছে। শুনতে মনে হয় গল্পকাহিনী, কিন্তু বাস্তবেই যে ঘটেছে আমাদের জীবনে।
আজ যখন পিছনে তাকিয়ে দেখি, আমার আব্বা কেমন মানুষ ছিলেন? তাঁর নানারকম গুণ ছিলো। কিন্তু তার সবচেয়ে বড় গুণ সম্ভবত তার প্রশান্ত হৃদয়। আন-নাফসুল মুতমাইন্নাহ। তিনি জীবনযাপন করেছেন মুসাফিরের মতো। আক্ষরিক অর্থেই। তাঁর পাঞ্জাবী ছিলো হাতেগোণা কয়েকটা। কিন্তু তাতেই কেন জানি তাকে সুন্দর মানাতো। একটা ব্রিফকেসে সার্টিফিকেট আর পুরনো সাংগঠনিক ডায়রীগুলো। আর শেলফভর্তি বই। এই হলো তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয়। আর্থিক বিবেচনায় বরং আমার দাদা তার পুত্রের চেয়ে কিছুটা বেশি স্বচ্ছল ছিলেন। পার্থিব কোন কিছুতে তাঁর আকর্ষণ দেখিনাই, হাতঘড়ি ছাড়া। আব্বা ভালো হাতঘড়ি পড়তে পছন্দ করতেন। সেই ভালোর মাত্রা আবার সিকো ফাইভ বা সিটিজেন পর্যন্ত, এর উপরে না।
একানব্বই এর ঘুর্নিঝড়ের পর যখন বিদেশ থেকে কোটি টাকার ত্রাণসামগ্রী আসলো, অফিসের একজন একটা টুনা মাছের ক্যান পাঠিয়েছিলো বাসায়। দুপুরে বাসায় খেতে এসে মাছের সেই ক্যান দেখে আব্বা খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। আমি কোনদিন অফিসে আব্বার রুমে ঢোকার সুযোগ পাইনাই। অফিসের গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে তিনি ব্যবহার করতেন না। কালেভাদ্রে কখনো করতে হলে, যেমন কাউকে হাসপাতালে নেয়ার মতো দরকারে বা আমাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করার মতো দরকারে, তেল কিনে দিতেন এবং হিসাব রাখতেন। তাঁর চারপাশে ঘিরে থাকা ক্ষমতা ও রাজনীতির বলয় থেকে তিনি আমাদেরকে একটু দূরে রাখতেন। আবার একই সাথে চেষ্টা করতেন শিবিরের দায়িত্বশীলরা অথবা মাদ্রাসার শিক্ষকরা যেন আমাদের লাগাম ধরে রাখে। অন্তঃসলিলা প্রবাহের মতো, মাঝেসাঝে টের পেয়ে যেতাম।
চট্টগ্রামে আব্বা ছিলেন রাজনীতিবিদ। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তে ঢাকা আসার পর তিনি যেহেতু জামায়াতের আভ্যন্তরীণ কাজে জড়িত ছিলেন বেশি, কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ার পরও জামায়াতের বাইরের মানুষ তাকে তেমন চিনতো না। কিন্তু জামায়াতের যারা তাকে চিনতেন, তাই এতো বেশি ছিলো যে প্রায়শ এই পরিচয় লুকাতে হতো। কোন এক অবোধগম্য কারণে মানুষ তাকে খুব বেশি ভালোবাসতো। তার প্রতি অন্যদের এই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা কখনো কখনো আমি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে খেয়াল করে দেখতাম এবং চিন্তা করতাম এর কারণ কি?
সম্ভবত এর বড় একটা কারণ হলো তিনি খুব মেধাবী ও তীক্ষ্ণধী হওয়ার পরও কিভাবে জানি খালেস ও নিরহংকারী মানুষ ছিলেন। সব বুঝতেন কিন্তু কাউকে শত্রু বা অপছন্দের মানুষ হিসেবে গণ্য করতেন না। মানুষকে কোনভাবেই জাজ করতেন না। একবার আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা প্রাণপাত করে নিয়ে এসে পত্রিকা চালু করলেন, এই দৈন্যদশা দেখে এখন হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছা করে না আপনার? হেসে বলেছিলেন, আমার যা চেষ্টা তা তো করেছি। বাকীটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়েছি।
তাঁর এই নিরহংকারী ও পিছুটানবিহীন স্বভাব আমাকে মাঝে মাঝে আশ্চর্য করতো। বিমানের বিজনেস ক্লাশে তিনি স্বাভাবিক, আবার ট্রেনের সুলভ শ্রেণীতেও তিনি খুশী। ফাইভ স্টার হোটেল না কি রাস্তার পাশের হোটেল, তাঁর কিছু আসতো যেতো না। চারপাশের নানা পার্থিক বিষয় তাকে প্রভাবিত করতো না। কোন দেশের রাষ্ট্রদূত হোক, এমনকি প্রেসিডেন্ট হোক কিংবা কর্ণফুলী ব্রিজের গোড়ার চা দোকানদার, সবার কাছে তিনি পছন্দের মানূষ হয়ে যেতেন। কারণ তার মাঝে কৃত্রিমতা ছিলো না। আল্লাহ তায়ালার উপর তাওয়াক্কুল সম্ভবত এর বড় একটা কারণ।
এছাড়াও তাঁর একটা সহজাত ক্ষমতা ছিলো, যা মাঝে মাঝে আমার মনে হতো একটা অলৌকিক ক্ষমতা। অনেক বছর আগে দেখা হওয়া কথা হওয়া মানুষের নাম ও নানা কথাবার্তা তাঁর অবলীলায় মনে থাকতো। হয়তো কুমিল্লার বরুড়ার কোন জামায়াতকর্মী, কিংবা বগুড়ার একজন শ্রমিক যে মগবাজারে কাজ করে, অনেকদিন পর দেখা হলেও তার নাম ধরে খোঁজখবর নিতেন। ঐ মানুষটা তখন আপ্লুত হয়ে যেতো। তবে এটাও তিনি কোন ট্রিক হিসেবে করতেন তা না। এইরকম কয়েকটা ঘটনা আমি খেয়াল করে দেখেছি, এইটা ছিলো তাঁর স্বভাবজাত স্বাভাবিক বিষয়। ড্রাইভার, স্টাফ এই ধরণের মানুষদেরকে তিনি নিজের সমপর্যায়ের মনে করতেন। উনারাও তাঁর জন্য জীবন দিয়ে দিতে প্রস্তুত থাকতো। অনেক জায়গায় তাঁর প্রতি জামায়াতের মানুষদের ভালোবাসা এতোটা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে যে এমনকি আমি নিজের পরিচয় প্রকাশ করিনাই। বরং এমনিতেই কথাবার্তা চালিয়ে যেতাম। বুঝতে চেষ্টা করতাম ঘটনা কি। যে মানুষটা তাঁর সাথে একটু পরিচিত হয় সেই তাকে পছন্দ করা শুরু করে কেন? এমনকি কোন মন্ত্রী, কোন মুক্তিযোদ্ধা, কোন কমিউনিষ্ট, কোন হিন্দু? কেন? তখন বারবার আমার মনে পড়েছে একটা হাদীসে নববীর কথা। রাসুল সা. বলেছেন, আল্লাহ যদি পছন্দ করেন তাহলে তিনি ফেরেশতাদেরকে বলেন তোমরা গিয়ে জমিনবাসীদের কানে কানে বলে দাও তাকে আমি ভালোবাসি। কে জানে, হয়তো এমনও হতে পারে। এই পৃথিবীর জীবনে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়পাত্র হওয়ার চেয়ে বড় অর্জন আর কিইবা আছে? আমরা মানুষেরা পার্থিব নানা স্বার্থ ও প্রবৃত্তির কারণে তার মূল্য বুঝে উঠতে পারিনা।
প্রশান্ত মানুষ হওয়ার অর্থ যে তিনি একদম শান্তশিষ্ট ছিলেন এমন না। মাঝে মাঝে তাঁর রাগ বুঝা যেতো। তবে সেই রাগকে তিনি আটকে রাখতে পারতেন। আমার ধারণা, এই রাগ সামলে একদম স্বাভাবিক থাকার কারণে তার মস্তিস্কের উপর চাপ পড়েছিলো দীর্ঘদিন ধরে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অসংখ্য ডামাডোল, বাইরের মারামারি, অনেক মানুষ নিহত আহত গ্রেফতার হওয়ার অনেক ঘটনা, দলের আভ্যন্তরীণ সমস্যা এসব তিনি সহজে পার হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এসবের প্রভাব নিঃসন্দেহে মানুষ হিসেবে তাঁর মনের উপর পড়েছিলো।
যখন জামায়াত নেতাদেরকে একের পর এক ফাঁসি দেয়া শুরু হলো, তখন থেকে আব্বা একদম চুপ হয়ে গেলেন। আম্মা বলতেন, বিছানায় শুয়ে থাকা তাঁর চোখের কোণা দিয়ে শুধুপানি গড়িয়ে পড়ে। আমি যেহেতু সাধারণত আব্বার সাংগঠনিক পরিচয় থেকে সরে থাকতাম, সুতরাং অন্য নেতাদেরকে আমি খুব কাছ থেকে দেখিনি। আব্বা যখন ঢাকায়, তখন আমি আর বাংলাদেশে নাই। তথাপি ছুটিতে গেলে অনেকের সাথে হঠাৎ করে দেখাতো হতোই। কিছুটা ভেতর থেকে জানার সুযোগ পেতাম। জামায়াতের যেসব নেতাদেরকে বাংলাদেশে ফাঁসি দেয়া হয়েছেন এরা প্রত্যেকেই ছিলেন প্রায় একইরকম মুখলেস মানুষ। একেকজনের গুণের বিকাশ ঘটেছিলো একেকদিকে। দর্শকের সারিতে বসে নয় বরং মঞ্চের একপাশে একটু আড়াল কিন্তু কাছে থেকে দেখে আমার মনে হতো সাহাবীদের কথা। যাদের একেকজনের গুণ ছিলো একেকরকম। সারাজীবনে আব্বার বন্ধু ও কাছের মানুষ বলতে ছিলেন এরাই। এমন মানুষগুলো একসাথে হয়েছিলেন বলেই বাংলাদেশে এমন কালজয়ী একটা মুভমেন্ট শুরু হয়েছে।
প্যারালাইজড হয়ে আব্বা অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন। এসবি পুলিশের অফিসাররা আসতো নিয়মিত, মেডিক্যাল রেকর্ড কাগজপত্র নিয়ে যেতো। একটু সুস্থ হলে, উঠে বসতে পারলে যদি ট্রাইবুনালে দেয়া যায়। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নাই। এই ক্ষেত্রে আব্বার আশাটাও অবশ্য পূরণ হয়নাই। তাঁর শহীদি মৃত্যুর ইচ্ছা ছিলো। আল্লাহ তাকে শাহাদাতের দারাজাত দিন।
আব্বার কথা ভাবতে গিয়ে শুধু ভালো কথাই মনে পড়ছে। মানুষ হিসেবে তাঁর কি কোন দোষত্রুটি ছিলো না? নিঃসন্দেহে ছিলো। রাসুল সা. বলেছেন, কেবলমাত্র আমল দিয়ে নাজাত পাওয়া কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু আমার মনে পড়ছে না এখন। এতো সংযমী এবং নিয়ন্ত্রিত মানুষের কোন ত্রুটি বের করা পরিশ্রমসাধ্য কাজ।
আগেই বলেছি, আমরা অন্য সবার মতো বাবা পাইনি। রাতদিন ব্যস্ততায় তাঁর জীবনে জামায়াতই ছিলো আসল পরিবার। আমার আব্বার কাছে আমার যে স্থান, শিবিরের যে কোন ছেলেরও একই স্থান। এমন মনে হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায় সারাজীবন, বারবার। তথাপি এমন বাবা এমন মা কয়জন পায় এ জীবনে? আজ আত্মাটা বিদীর্ণ হয়ে যায় আপনার কথা মনে করলে। আল্লাহ যদি আমার অবশিষ্ট আয়ুগুলো আপনাকে দিয়ে দিতেন, তবে নির্দ্বিধায় দিয়ে চলে যেতাম। যে সময়গুলো আপনার কাছে ছিলাম, তখন যদি বুঝতে পারতাম তার মূল্য। তাহলে হয়তো আপনার জান্নাতি চেহারাটা আরেকটু দেখতাম।
আম্মার কাছে শুনেছি, একাশি সালে বিয়ের পর একবার ঢাকার কোন রাস্তায় রিকশা দিয়ে যেতে যেতে আপনি আম্মাকে বলেছিলেন, এই যে বড় বড় দালানে মানুষগুলো ঘুমায়, রাস্তায় ঘুমানো মানুষগুলোকে দেখেনা, এই দেশে ইসলাম কায়েম হলে এই অবস্থা আর থাকবে না। সম্পূর্ণ বদলে যাবে।
তারুণ্যের সেই স্বপ্নের তাড়না নিয়ে আপনি সারাজীবন কাটিয়ে গেছেন। চল্লিশ বছর আগে আপনার হাত ধরেছিলেন আমার মা, এখন তিনি একা। আল্লাহর ইচ্ছা আমাদেরকে মেনে নিতে হয়। যেই সাধারণ গ্রাম থেকে আপনি নিজ মেধা ও যোগ্যতায় নির্বিকার অনেক দূর গিয়েছিলেন, জিন্দেগির এই সফর শেষে চুপচাপ সেখানেই ফিরে গেছ্নে। আপনি এই পৃথিবীতে নিজের জন্য কিছু চাননাই। আপনার এই চাওয়া আল্লাহ পূরণ করেছেন বলেই আমার মনে হয়।
তাই রাহমানুর রাহীম আল্লাহর কাছে চাওয়া, তিনি যেন আপনাকে মাফ করে রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেন। আপনার সওয়াল-জওয়াব, আপনার আলামে বরযখ যেন তাঁর প্রিয় আবেদদের মতো হয়। আমি নিতান্তই আপনার অযোগ্য এক সন্তান, তথাপি তিনি যেন আমাদের সবাইকে সেই চিরস্থায়ী জীবনে একসাথে থাকার সুযোগ দেন।
(মরহুমের বড় সন্তানের লেখা)