ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শনিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২০

কল্যাণপুরের নতুন বাজার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জামায়াত নেতাঃ ডা: শফিকুর রহমান

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুন বাজার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া বস্তির ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জামায়াত নেতা ডা: শফিকুর রহমান।

গতকাল ৩০ অক্টোবর শুক্রবার রাত ১০ টা ৩ মিনিটে রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুন বাজার বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। এ ঘটনায় বস্তির অনেক ঘর পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানাতে আজ সকালে কল্যাণপুর নতুন বাজার বস্তিতে ছুটে যান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান।

তিনি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের লোকদের প্রতি শোক ও সহানুভুতি জ্ঞাপন এবং সান্ত্বনা প্রদান করেন। তিনি আহতদের চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আমীরে জামায়াত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার-পরিজনদের ধৈর্যধারণ করার এবং মহান আল্লাহ্‌ তায়ালার উপর ভরসা রাখারও আহবান জানান।

এ সময় আমীরে জামায়াতের সাথে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি জনাব লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জনাব মো. আতিকুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি জনাব মুহিবুল্লাহ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি জনাব মো. আব্দুস সালাম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আতিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পশ্চিমের সভাপতি জনাব এনামুল হক ও সেক্রেটারি মারুফ হাসান, জামায়াতে ইসলামী মিরপুর পূর্ব ও পশ্চিম থানা আমীরদ্বয়সহ স্থানীয় বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী এবং স্থানীয় সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।

এই দেশটা আমাদের; চলুন নতুন করে নির্মাণ করি

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ নূর মোহাম্মদ ভাই লেখা

তখন আমি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে।

সেখানেই বন্দি ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী নাহিদ ভাই। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে নাহিদ ভাই আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। দারুণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নাহিদ ভাইয়ের সাথে বেশ সময় কাটাতাম।
একদিন কথা প্রসঙ্গে বললেন- ''নূর, সব আমার কপালের দোষ। বিশ্বজিৎ ছেলেটা যদি হিন্দু না হয়ে জাস্ট মুসলমান হতো, তাহলে খেলাটা উল্টে যেত। বিপদে পড়ে গেছি ছেলেটা হিন্দু, নামের আগে 'শ্রী' আছে। কোনোভাবে যদি 'মুহাম্মাদ বিশ্বজিৎ' হতো, তাহলে ক্যাম্পাসে শিবির প্রতিহত করার পুরস্কারে আজ আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি পদের শক্ত দাবিদার থাকতাম। দুর্ভাগ্য ছেলেটা হিন্দু বলে শিবির বলে চালিয়ে দেওয়া গেল না; আর মিডিয়াও লেগে গেল। ছাত্রশিবির কর্মী হলে এভাবে মিডিয়া পেছনে লাগত না; বরং এই ভিডিও ফুটেজ আমিই সংগ্রহ করে কেন্দ্রে জমা দিয়ে পোস্ট বাগিয়ে নিতাম।''
নাহিদ ভাই ঠিক এভাবেই আমাকে বলেছিলেন। বিশ্বজিৎ হিন্দু বলে চিপায় পড়ে তিনি কারাগারে বিচারের মুখোমুখি; তার দুনিয়াটা সত্যিই বদলে গিয়েছিল।
পাপিয়া সুন্দরী।
ক্যাসিনো সম্রাট-খালিদ।
এনু-রূপণ আল গেণ্ডারিয়া।
ক্রসফায়ার প্রদীপ।
ধর্ষক এমসির কৃতিসন্তান।
দাঁত ফেলানো ইরফান সেলিম।
এসব মানুষ আসলে চিপায় পড়ে গেছে।
বিশ্বাস করুন, বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে এমন 'বীরসৈনিক' তৈরি হয়ে আছে। এই স্ট্যাটাস যখন পড়ছেন, তখনও আপনার এলাকায় কোনো না কোনো সরকার দলীয় 'মহান নেতা' বীভৎস অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সোৎসাহে। ভয়ে, লজ্জায়, ঘৃণায় মানুষ মুখ বন্ধ করে আছে। পাপের আতিসাহ্যে মাইক্যা চিপায় পড়লে সবাই তাদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে।
পাপীরা কনফিডেন্সের আতিশায্যে তাদের নিজ বলয়ের ভেতরেই যখন হাত দিচ্ছে, তখন খেলা উল্টে যাচ্ছে। এমপি সেলিম পুত্র ইরফান সেলিম নেভি অফিসারের দাঁত উপড়িয়ে ফেলার পরে তাৎক্ষণিক বিচারের মুখোমুখি হলো। কিন্তু মাত্র কয়েকদিন আগে যাত্রাবাড়িতে বিএনপির এমপি প্রার্থী সালাউদ্দিনের দাঁত ফেলে দেওয়া হলো প্রকাশ্যে; কই কিছু তো হলো না! আচ্ছা, নেভি অফিসারের পরিবর্তে যদি আমাকে ধাক্কা মারত অথবা আমার দাঁত উপড়িয়ে ফেলা হতো, তাহলে কি পরবর্তী ঘটনাগুলো এমন হতো?
মেজর সিনহার পরিবর্তে সেদিন যদি আমি গুলি খেতাম, পরবর্তী সিকোয়েন্স কি এমন হতো? মেজর সিনহার আগেও তো অনেকে ক্রসফায়ারে মরেছে, কমিশনার মেয়ের 'আব্বু তুমি কাঁদছো কেন' শুনেছি তো; কই তখন তো প্রদীপ বাবুর কিছু হয়নি। বরং, আমি মরলে আপনারা বলতেন ইয়াবা ব্যবসায়ী।
ক্যাসিনো সম্রাট কিংবা খালিদেই খেলা শেষ কি? চোখ মেলে দেখুন- আপনার পাশেই অসংখ্য সম্রাট-খালিদ। কত শত পাপিয়া চারপাশে দৃশ্যমান। সরকার দলীয় ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও কতটা দাপটে চলছে, একটু খেয়াল করে দেখুন।
কেন এমন হলো?
কেন এমন ভারসাম্যহীন এক বাংলাদেশ তৈরি হলো?
৩০ ডিসেম্বর (২৯ ডিসেম্বর) রাতে একটা ভয়ংকর বাংলাদেশ নির্মাণ করে ফেলেছি আমরা। সেদিন সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে এক ন্যাক্কারজনক ইতিহাস তৈরি হয়েছে। সেদিন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আর কাউকে হিসাবে গোণে না।
আমি তৃণমূলের একটা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনীতি করি। সেখানে দেখি, একেবারে অশিক্ষিত, গণ্ড মুর্খ, নোংরা চরিত্রের, প্রতারক, মানসিক রোগী পর্যায়ের মানুষ ভদ্র মানুষদের অপমান করছে, ডমিনেন্ট করছে, হুমকি দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী; প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের গণ্ড মুর্খ কর্মীরা ঘোষণা করছে, ভোট যে-ই পাক, তারা চেয়ারম্যান। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা না করে পান থেকে চুন খসলেই হুমকি দিচ্ছে- তোকে পুলিশ দিয়ে তুলে দেবো। জনপদের ভদ্র মানুষরা কতটা নির্বাক, অসহায়, আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
বিশ্বাস করুন, এমনটিই হচ্ছে। আমার এই স্ট্যাটাস প্রশাসন যন্ত্রের কারও নজরে আসলে গোস্বা হবেন হয়তো। কিন্তু যেমনটি বলছি, একটু তথ্য নিয়ে দেখুন। প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে কীভাবে একটা ভয়ংকর জনপদ গড়ে উঠছে প্রতিটি অঞ্চলে। অনেকক্ষেত্রেই প্রশাসন আগ বাড়িয়ে জুলুম করছে না; কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাসে সরকার দলীয় লোকজন এক বীভৎস পরিবেশ গড়ে তুলছে। আমি আমার এলাকায় দেখেচি, প্রশাসন মোটামুটি নিরেপেক্ষ; আমাদের ভালো কাজে হস্তক্ষেপ করছে না। কিন্তু অব্যাহতভাবে সাধারণ মানুষ মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমাঝে মনে হয়, এই জনপদে রাজনীতিই করব না, যতদিন সমাজ নতুন করে নির্মিত না হচ্ছে, ততদিন নিরব থাকব। আবার ভাবি, আমরা যদি লড়াই থামিয়ে দেই, তাহলে কাদের হাত ধরে পরিবর্তন আসবে? নিরবতাই তো চূড়ান্ত সমাধান নয়। বরং, আমরা আমাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করি, সর্বোচ্চ মূল্য চুকিয়ে দেই; পরবর্তী প্রজন্ম যেন ভালো একটা সমাজের মুখোমুখি হয়।
অবশ্যই আমাদের সমাজকে এই ভয়ংকর জায়গা থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ সমাজব্যবস্থা কখনোই শুভ পরিণতি ডেকে আনবে না। এমনটি চলতে থাকলে প্রত্যেককে বিপদের মুখোমুখি হতে হবে। মেজর সিনহা কিংবা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিকই শেষ নয়; এই দখলদার নেতাকর্মীদের মুখোমুখি হবেন অনেকেই। এমসি কলেজের হোস্টেলে এক গৃহবধূ গ্যাং রেপ-এর মুখোমুখি হয়েছে; এটা দৃশ্যমান হয়েছে বলে একমাত্র ঘটনা নয়। অহরহ এমন ঘটনা ঘটছে, ঘটবে।
সত্য তো এটাই- আজকের বাংলাদেশ বিরোধীদল শূন্য। তবুও কেন দেশ এভাবে চলছে? এখন তো এক নেতার এক দেশ। তবুও কেন এত অস্থিরতা আর বিশৃঙ্খলা? তথ্যমন্ত্রীর মতো বলবেন না প্লিজ, সব বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র। এভাবে বললে এক অসুস্থ সমাজের ভিত্তি আরও মজবুত হবে।
দেশটাকে বাঁচান। অসুস্থ-বিকৃত রুচির মানুষদের আর স্পেস দিবেন না প্লিজ। একটা দলের জন্য দেশটাকে জাহান্নাম বানাবেন না প্লিজ।
এই দেশটা আমাদের; চলুন নতুন করে নির্মাণ করি।

শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

ফ্রান্সে রাসুল সাঃ এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে ওলামা মশায়েখ পরিষদ চট্টগ্রামের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল

 

অবিলম্বে ব্যঙ্গচিত্র প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যঙ্গচিত্র কার্টুন প্রদর্শন অবিলম্বে বন্ধ, বিশ্ব মুসলমানের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ধৃষ্টতা প্রদর্শন না করার অঙ্গীকার করার দাবি জানিয়ে ওলামা মশায়েখ পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল শুক্রবার বাদ জুমা অনুষ্ঠিত হয়। নগরীর কোতোয়ালিস্থ দামপাড়া জামিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ উত্তর গেইটে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ফ্রান্স সরকারের ছত্রছায়ায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেছে। আল্লাহর নবীর অমর্যাদা ও অবমাননা বিশ্বের মুসলমানরা বরদাশত করবে না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের উষ্কানিমূলক বক্তব্য গোটা বিশ্ব মুসলমানদের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। সন্ত্রাসের সাথে ইসলাম ও মহানবী (সাঃ) এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন মি. ম্যাক্রোর সন্ত্রাসী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। ওলামা মশায়েখ নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ব্যঙ্গ প্রদর্শন বন্ধ ও বিশ্ব মুসলমানদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জোর দাবী জানান। ওলামা মশায়েখ চট্টগ্রামের নেতা মাওলানা মিয়া মুহাম্মদ হোসাইন শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আরো বক্তব্য রাখেন মাওলানা মহি উদ্দীন, মাওলানা অলিউর রহমান, মাওলানা মোজাফফর আহমদ, হাফেজ মাওলানা শিহাব উদ্দীন, মাওলানা আবদুস সালাম, মাওলানা আবু সৈয়দ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিন করে।

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০

ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব : মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ খন্দকার

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ইসলামী ব্যাংকিং বিশ্বব্যাপী আজ এক সমুজ্জ্বল বাস্তবতার নাম। সুদভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেই নয় বরং লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, সিঙ্গাপুর, টোকিও ও টরেন্টোর মতো প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার কেন্দ্রগুলোতেও ইসলামী অর্থায়ন মডেলের উপস্থিতি বেগবান হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৭৫টি দেশে ছয় শতাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকিং চালু রয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সাল নাগাদ এই সম্পদ ৫.০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছুবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
কুড়ি শতকের দ্বিতীয় ভাগে শুরু হওয়া ইসলামী ব্যাংকিং অতি অল্প সময়ের মধ্যে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বৈশ্বিক আর্থিক পরিমÐলে নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতার প্রমাণ দিতে সমর্থ হয়েছে। সাম্র্বতিকবিশ্বজনীন অর্থনৈতিক মন্দা ও নানা টানাপোড়েনের মাঝে চলতিধারার বহু ব্যাংক অস্তিত্ব হারালেও এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক টিকে থাকার বিশেষ শক্তি ও সক্ষমতা দেখিয়েছে, যা বিশ্বের বহু আর্থিক বিশ্লেষক ও চিন্তাবিদের দৃষ্টি আর্কষণ করেছে। 
আলকাস্ট (২০১২)-এর লেখক পাপ্পাশা, ইজ্জেলদিন ও ফুয়েরতেস্ব ১৯৯৫-২০১০ সময়ের মধ্যে ৪২১টি ইসলামী ও প্রচলিত ব্যাংকের ব্যর্থতার বিপত্তিগুলো নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা করেন। তারা দেখিয়েছেন যে, ইসলামী ব্যাংকগুলোর ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম। 
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের উন্নয়ন গবেষক দলের সদস্য বেক, কান্ট ও মেরুশে (২০১০) ‘ইসলামী বনাম প্রচলিত ব্যাংকিং: ব্যবসা মডেল, দক্ষতা ও স্থিতিশীলতা’শীর্ষক গবেষণার মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইসলামী ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যসাশ্রয়ী। গবেষণার মাধ্যমে তারা ইসলামী ব্যাংকগুলোর উচ্চ ‘ক্যাপিটালাইজেশন’-এর প্রমাণ পান। এই Ôক্যাপিটাল কুশন’ও উচ্চতর ‘লিকুইডিটি রিজার্ভ’-এর কারণে সঙ্কটকালে ইসলামী ব্যাংকগুলো ভালো দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হয়।

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথির মুহাম্মদ Ôইসলামিক ফাইন্যান্সের ভবিষৎ সুদ’ শীর্ষক এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইসলামী পদ্ধতি পৃথিবীকে কিছু দেয়ার সামর্থ্য রাখে, বিশেষ করে আর্থিক সঙ্কট, সার্বভৌম ঋণ ও আর্থিক মন্দার এই দুঃসময়ে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই শিল্প একসময় বিশ্বে দৃঢ় অবস্থান করে নেবে এবং বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় অবশ্যই এর উজ্জ্বল ভবিষৎ রয়েছে। 
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের স্থিতিশীলতা ও টেকসইযোগ্যতার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর জেতি আখতার আজিজ ও তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দুরমাস ইলমাজ। ব্যবসাসংক্রান্ত সাংবাদিকতার সাথে জড়িত আর্থিক বিশ্লেষক ইমা ভেন্ডর (Emma Vandore) ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে সঙ্কট থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে তা নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও সঙ্কট থেকে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই নিরাপদ রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকিং পদ্ধতি যদি ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হতো তাহলে আমরা যে সঙ্কটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তা প্রত্যক্ষ করতে হতো না। 
ইসলামী অর্থনীতি ও অর্থায়নের ওপর বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব সিরিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান অধ্যাপক মনজের কাহ্ফ বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের অস্তিত্বের মাধ্যমে একটি সম্ভাবনার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এবং এমন এক ব্যাংকব্যবস্থার বাস্তব রূপায়ণে সাফল্য দেখিয়েছে যা নৈতিকতার বন্ধন, জমাকারীদের সাড়া আদায় এবং একই সঙ্গে উৎপাদন ও বাস্তব বাজারের প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 
ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার বিশ^ব্যাপী জনপ্রিয়তা ও ক্রমগতিক সাফল্য এর অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। এসব সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কতিপয় দিক এখানে তুলে ধরা হলো:
১.শরিয়াহর নীতি-আদর্শ অনুসরণ: ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান দিক হলো এটি শরিয়াহর নীতি-আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ব্যাংকিং করে। আর শরিয়াহর মূল লক্ষ্যই হলো মানুষের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করা। এ ছাড়া ইসলামী বিশ^বীক্ষণ (worldview) ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার দার্শনিক ভিত্তি হওয়ার কারণে এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্নিহিত শক্তি হিসেবে কাজ করে। কেননা, ইসলামের বিশ^বীক্ষণ অনুযায়ী মানুষের কর্মফল শুধু ইহজীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং পরকালেও তাকে এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
২.লাভ-লোকসানে অংশীদার: ইসলামী ব্যাংক অংশীদারি পদ্ধতিতে আমানত গ্রহণ ও বিনিয়োগ করে। অর্থনৈতিক উঠানামার ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীগণ বেশি মুনাফা করলে ব্যাংক বেশি মুনাফা পায়। ফলে আমানতকারীদের আয়ও বেড়ে যায়। অনুরূপভাবে বিনিয়োগ গ্রাহকগণ লোকসান করলে ব্যাংকও তা বহন করে এবং আমনতকারীদেরকে তা বহন করতে হয়। ফলে লাভ-লোকসানের প্রভাব গোটা অর্থনীতির ওপর পড়ে। এ কারণে কোনো বিশেষ পক্ষ এককভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে না বা সে বিপর্যয়ের শিকার হয় না। 
৩.ন্যায়বিচারমূলক আচরণ: ইসলামী অর্থায়ন পদ্ধতি উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারমূলক আচরণ করে এবং নিছক লাভকে প্রাধান্য দেয়ার পরিবর্তে সমাজের সকল মানুষের চাহিদা পূরণকে অগ্রাধিকার দেয়; যা সামাজিক উন্নয়নের সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমন্বয় সাধন করে। ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থায় শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, ব্যবসায়ীর যুক্তিসঙ্গত মুনাফা অর্জনে সহায়তা করাসহ সকল অর্থনৈতিক পক্ষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিতের ওপর জোর দেয়।
৪.সুদের বিলুপ্তি ঘটায়: সুদ নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়সহ মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মারাত্মক আঘাত হানে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে লÐভÐ ও ধ্বংস করে দেয়। ফলে ইসলামী ব্যাংকিং যেমন মানুষকে সুদি লেনদেন থেকে বিরত রাখে, তেমনি এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকেও অর্থনীতিকে রক্ষা করে। 
৫.টাকার কারবার নয়, পণ্যের ব্যবসা: ইসলামী ব্যাংক টাকার ব্যবসা করে না; বরং পণ্যের ব্যবসায় নিয়োজিত থাকে। অর্থ ঋণ দিয়ে কৃত্রিম উৎপাদন সৃষ্টির পরিবর্তে প্রকৃত লেনদেন ও উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য ইসলাম ক্রয়বিক্রয় পদ্ধতিকে অনুমোদন করেছে। ক্রয়বিক্রয় পদ্ধতি অনুশীলনে প্রতিটি লেনদেন হয় বস্তুনিষ্ঠ ও উৎপাদনশীল। যে কারণে সমাজে কৃত্রিম অর্থ সৃষ্টির সুযোগ কমে যায় এবং আর্থিক মন্দা ও অস্থিতিশীলতার কবল থেকে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পদ নিরাপদ হয়। 
৬.পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং: ব্যাংকিং কার্যক্রম শুধু মুনাফা দ্বারা তাড়িত হলে লোভ-লালসার বিস্তার, সামাজিক অবক্ষয় ও পরিবেশ দূষণসহ নানাবিধ কারণে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী বসবাসযোগ্যতা হারাতে পারে। তাই ইসলামী ব্যাংক শুধু মুনাফা সর্বোচ্চকরণকেই তার মূল লক্ষ্য হিসেবে গণ্য না করে people (মানুষ) ও planet (পৃথিবী)-এর কল্যাণে কাজ করে। পরিবেশবান্ধব টেকসই কার্যক্রম গ্রহণ করে ইসলামী ব্যাংক পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখা, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মুনাফা অর্জন করার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। ফলে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার অর্থ হলো মানবিক ব্যাংকিং ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে শরিক হওয়া। 
৭.মানিবিক ব্যাংকিং: ইসলামী ব্যাংক জনকল্যাণমুখী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নের অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় রেখে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ‘তেলা মাথায় তেল দেয়া’ইসলামী ব্যাংকের নীতি নয়। উচ্চবিত্ত গুটিকয়েক ব্যক্তির মধ্যে বিনিয়োগ সুবিধা সীমিত না রেখে, সহায়ক জামানতবিহীন সাধারণ মানুষ এবং দরিদ্রদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে মানবিক ব্যাংকিংয়ের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। 
৮.যাকাত প্রদান: ইসলামী ব্যাংক তার বিভিন্ন রিজার্ভ ও সঞ্চিতির ওপর যাকাত দেয়। ফলে ব্যাংকের লাভের কিছু অংশ গরিব মানুষের হাতে যায়। এ কারণে কার্যকর চাহিদা বাড়ে, অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। যা সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্য দিকে ইসলামী ব্যাংক যাকাত দেয় বলে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যাকাত প্রদানের আবহ সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা গ্রাহকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাকাত দানে উৎসাহিত হয়। 
৯.সামাজিক অবক্ষয় রোধ: ইসলামী ব্যাংক মদ, গাজা, বিড়ি-সিগারেটসহ নানাবিধ ক্ষতিকর খাতে বিনিয়োগ করা থেকে দূরে থাকে। একইভাবে ঘুষ, দুর্নীতি, জুয়া, ফটকাকারবারি ইত্যাদি নেতিবাচক কার্যক্রমকে নিরুৎসাহিত করে। ফলে ইসলামী ব্যাংক মানবসম্পদকে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। 
১০.ঋণবাজারের বিলুপ্তি: অংশীদারি পদ্ধতির পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক সুদভিত্তিক লেনদেনের পরিবর্তে মুনাফার ভিত্তিতে পণ্যসামগ্রী কেনাবেচা পদ্ধতিতে পুঁজি বিনিয়োগ করে। ফলে ঋণ বাজারের (Loan Market) বিলুপ্তি ঘটে এবং গোটা বাজার পুঁজি বাজারে (Capital Market) পরিণত হয়। 
১১.বিনিয়োগ আদায় সহজ: ইসলামী ব্যাংক গ্রাহককের কাছে মুনাফার ভিত্তিতে পণ্য বিক্রি করে। ফলে গ্রাহক সংশ্লিষ্ট ব্যবসার পরিবর্তে অন্যত্র বিনিয়োগের অর্থ স্থানান্তর করতে পারে না। তা ছাড়া উক্ত পণ্য হাইপোথিকেশন (hypothecation) ও প্লেজ (pleadge) পদ্ধতিতে ব্যাংকের জামানতে থাকে। ফলে বিনিয়োগগ্রহীতা বিনিয়োগ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক উক্ত পণ্য বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে পারে। এ কারণে বিনিয়োগের অর্থ অনাদায়জনিত ক্ষতি থেকে ব্যাংক ও অমানতদারগণ নিরাপদ থাকে এবং সামষ্টি অর্থনীতিতে ঝুঁকি হ্রাস পায়। 
১২.ঝুঁকি ভাগাভাগি: অংশীদারি পদ্ধতির মূলনীতি হলো, ‘ঝুঁকির সাথে লাভ এবং লাভের সাথে।’ এ নীতির আলোকে ঝুঁকি শুধু উদ্যোক্তার প্রতি বর্তায় না, পুঁজির মালিককেও তা বহন করতে হয়। এভাবে লক্ষ লক্ষ আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডার লোকসান গ্রহণ করলে প্রত্যেকের ভাগে লোকসানের পরিমাণ কমই হয়, যা বহন করা প্রত্যেকের জন্য সহজ এবং কেউ দেউলিয়া হয় না। কাজেই মুনাফায় অংশীদারি পদ্ধতিকে দেউলিয়ার বিপরীতে রক্ষাকবচ হিসেবে গণ্য করা হয়। 
১৩.জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ: প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থায় লোকসানের বোঝা ঋণগ্রহীতাকে একাই বহন করতে হয়। ফলে সমাজের জন্য কল্যাণকর হলেও কেবল ঝুঁকির কারণে উদ্যোক্তাগণ বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহস পায় না। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের অংশীদারি নীতির কারণে ঝুঁকির বোঝা শুধু উদ্যোক্তাকে একাই বহন করতে হয় না; বরং সকল পক্ষই তা বহন করতে বাধ্য। কাজেই এ নীতি-আদর্শের কারণে জনকল্যাণমূলক বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন সম্ভব হয়। 
১৪.দক্ষতাপূর্ণ বিনিয়োগ বরাদ্দ: প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার পূর্বনির্ধারিত হারে সুদ পাওয়ার মতো ইসলামী ব্যাংকে মুনাফা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কোনো প্রকল্পে লাভ হলে ব্যাংকের লাভ আর লোকসান হলেও তা ব্যাংককে বহন করতে হবে। কাজেই কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করতে হলে গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ গ্রাহকের দক্ষতা ও প্রকল্পের উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। এ কারণে প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার তুলনায় ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ বরাদ্দ অধিকতর দক্ষতাপূর্ণ ও উৎপাদনশীল হয়। 
১৫.বাস্তব লেনদেন: সুদের ভিত্তিতে অর্থ ঋণ দিয়ে কৃত্রিম উৎপাদন সৃষ্টির পরিবর্তে ইসলামী ব্যাংক বাস্তবে পণ্য কেনাবেচা করে। ফলে এর প্রতিটি লেনদেন হয় বস্তুনিষ্ঠ ও উৎপাদনশীল। যে কারণে সমাজে কৃত্রিম অর্থ সৃষ্টির সুযোগ অনেকটা কমে যায়। 
১৬.স্থিতিশীল ও টেকশই অর্থনীতি বিনির্মাণ: ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি লেনদেন রিয়েল বা বাস্তবভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ ও সম্পদনির্ভর। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের অর্থ প্রস্তাবিত খাতেই ব্যবহার করতে হয়, অনুৎপাদনশীল খাতে এ অর্থ ডাইভার্ট বা স্থানান্তরের সুযোগ নেই। কাজেই ইসলামী ব্যাংকিং অর্থনীতিকে মন্দার কবল থেকে নিরাপদ করত স্থিতিশীল ও টেকশই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে।
১৭.আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শুধু আর্থিক সেবাই দেওয়া হয় না; বরং দেশের সর্বস্তরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হয়। কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশে স্বল্পোন্নত অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে সর্বোৎকৃষ্ট সেবা প্রদান, চাহিদাভিত্তিক খুচরা, এসএমই ও ক্ষুদ্র অর্থায়ন স¤প্রসারণ নিশ্চিত করা। 
১৮.সামষ্টিক সামাজি দায়বদ্ধতা: কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি আধুনিককালের হলেও ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে তা সহজাত বিষয়। সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে নিয়েই ইসলামী ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, খেলাধুলা ও পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। 
১৯.শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি: ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার কর্পোরেট কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ব্যাংকের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি। এ কমিটির প্রতিনিধি ব্যাংকের বিভিন্ন সভা যেমনÑপরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি, বার্ষিক ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং শরিয়াহসংক্রান্ত পর্যালোচনা ও অভিমত দিয়ে থাকেন। ফলে বিনিয়োগ কার্যক্রমে শরিয়াহ পরিপালনসহ ব্যাংকের সকল কার্যক্রমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি জোরদার হয়। 
২০.নৈতিক ব্যাংকিং: পশ্চিমা বিশ্বের নৈতিক ব্যাংকিংয়ের সাথে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের তুলনা করা হলেও ইসলামি ব্যাংকিং প্রচলিত নৈতিক ব্যাংকিং থেকে আরো বেশি নৈতিক (more ethical)। কেননা, প্রচলিত নৈতিক ব্যাংকিংয়ে সুদকে অনৈতিক গণ্য করে তা পরিহার করা হয় না। অথচ ইসলাম, ইহুদি, খ্রিষ্ট, বৌদ্ধ, হিন্দু প্রভৃতি ধর্মে সুদকে অনৈতিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এমনকি সুদ যে মানবিক বিষয় নয়; বরং শোষণের হাতিয়ার তা বিভিন্ন দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও মনীষীর বক্তব্য থেকেও প্রমাণিত। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টোটল, অ্যাডাম স্মিথ, কার্ল মার্কস ও কিনসের মতো বিখ্যাত পণ্ডিতগণ সুদকে সমাজ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করেছেন। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উক্ত সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনার পরও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো এরও সমালোচনা করার মতো দিক রয়েছে। খ্যাতিমান গবেষকদের দৃষ্টিতে ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনে ইসলামী ব্যাংকিংকে যেতে হবে আরো বহু দূর, সৃষ্টি করতে হবে দক্ষ ও পেশাদার ব্যাংকার, ঘটাতে হবে পণ্যবৈচিত্র্য ও মানসম্মত সেবার উন্নয়ন। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সকল স্তরে শরিয়াহর নীতিমালা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এখন এ শিল্পের বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু মুনাফা দ্বারা তাড়িত হয়ে শরিয়াহ পরিপালনে শৈথিল্য দেখালে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আরো চ্যালেঞ্জ আসছে বিশ্বব্যাপী আর্থিক উদারীকরণ (liberalization), বিনিয়ন্ত্রণ (deregulation) ও বিশ্বায়ন (globalization) থেকে। এগুলো মোকাবেলায় শাক্তিশালী ভিত্তি, উচ্চতর দক্ষতা ও বিরূপ পরিবেশে টিকে থাকার শক্তি অর্জনে আগে থেকেই সচেষ্ট হতে হবে। 
ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করতে একদল শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ ও ইসলামী ব্যাংকারের প্রয়োজনীয়তা সময়ের অপরিহার্য দাবিতে পরিণত হয়েছে। এমন অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ রয়েছেন যাদের অথনীতি ও ব্যাংকিং সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই আবার অনেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ আছেন যারা ইসলামী শরিয়াহ সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না। ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থাকে বিশ্বজনীন আদর্শ ও কল্যাণকর ব্যবস্থারূপে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও পেশাদার ব্যাংকারদের মধ্যে জ্ঞান ও চিন্তার সমন্বয় ঘটাতে হবে। বিশেষ করে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নিত্য-নতুন আর্থিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শরিয়াহ বিশেষজ্ঞদের নব জাগরণ ইসলামী ব্যাংকিংকে সমৃদ্ধ করবে। 
বিশ্বের অন্যতম শরিয়াহ স্কলার জাস্টিস তকি উসমানি বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত বিষয়গুলো অনেকট উপেক্ষিত। এমন অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ দেখতে পাওয়া যায়, যারা নামায-রোযা, বিবাহ-তালাকের ওপর গভীর জ্ঞান রাখলেও, আধুনিক যুগের জটিল ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত রীতিনীতি সম্পর্কে তারা খুব কম ধারণাই রাখেন। ফলে ব্যবসায়ীগণ তাদেরকে ব্যবসার মূল সমস্যা বোঝাতে পারছেন না। আলেমগণও নিজ থেকে এসব বিষয় জানার চেষ্টা করেন না। ফিকহের যেসব মূলনীতির ওপর এসব সমস্যার সমাধান দেয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে তারা ততটা অভিজ্ঞ নন বলে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে ব্যর্থ হন। কাজেই ব্যবসায়ীরা মনে করেন আলেমদের কাছে প্রকৃত সমাধান নেই। তাই তারা যা খুশি করেন। অথচ পূর্ববতী সময়ের আলেমগণ এসব বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। 
হানাফি মাযহাবে অন্যতম ফকিহ ইমাম মুহাম্মদ। তার নিয়ম ছিল বজারে বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে উঠাবসা করা এবং ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেয়া। একদিন এক ব্যক্তি তাকে বাজারে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আলেম মানুষ, কিতাব পড়া ও পড়ানো আপনার কাজ। আপনি বাজারে কেন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি ব্যবসায়ীদের রীতিনীতি ও তাদের পরিভাষা সম্পর্কে জানতে এসেছি। কারণ এ ছাড়া সঠিক মাসয়ালা বের করা যায় না। 
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধনে প্রয়োজন বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক সমালোচনা। কিন্তু সমালোচনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নৈতিকতা ও জবাবদিহি। ইসলামের দৃষ্টিতে সমাধান জানা না থাকলে শুধু সমস্যা উসকিয়ে দেয়া সমালোচকের কাজ নয়, তাকে প্রকৃত সমস্যার সমাধানও বলে দিতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন সমস্যা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই নবোদ্ভাবিত সমস্যাদির শরিয়াহসম্মত সমাধান প্রয়োজন। সময়ের পরিবর্তনে উদ্ভাবিত নতুন, কঠিন ও জটিল সমস্যাকে যদি শরিয়াহর আলোকে বাস্তবানুগ সমাধান না দেয়া হয় কিংবা সমাধান না দিয়ে নীরবতা অবলম্বন করা হয়, তাহলে ইসলামী শরিয়াহ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই সা¤প্রতিক উদ্ভাবিত বিষয়ের সমাধান অবশ্যই দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম র.-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, যদি কোনো সমাধান প্রত্যাশীকে কোনো জরুরি বা প্রয়োজনীয় বিষয় থেকে বিরত থাকার মাসয়ালা দিতে হয় তাহলে গবেষকের উচিত হবে তার বিকল্প পথ বলে দেয়া। 
প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার তুলনায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বয়স একেবারেই কম। সামনে এগোতে হলে ভাঙতে হবে বহু বাধা ও প্রতিকূলতার পাহাড়। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি সফলতা ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন কার্যকরী ও যোগ্য নেতৃত্ব, সকল পক্ষের আন্তরিক সদিচ্ছা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং গঠনমূলক দিকনির্দেশনা।
ইমেজ সূত্র : https://voiceofislam.com.bd/2018/10/31/

যারাই জামায়াতের সঙ্গে খেলতে মাঠে নেমেছে কেউই উইকেট বাঁচিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে পারেনি

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ  জামায়াতে ইসলামীকে ‘গরিবের বউ’ মনে করে সবাই এই দলটিকে নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। কয়েক বছর ধরে এই খেলাটি চলে আসছে। তবে যারাই জামায়াতের সঙ্গে খেলতে মাঠে নেমেছে কেউই উইকেট বাঁচিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে পারেনি। দেখা গেছে সবাই ছক্কা মারতে গিয়ে বোল্ড আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।২০০৬ সালে প্রথম জামায়াতকে নিয়ে খেলাটা শুরু করেছিলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুইয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তাদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন ছিলেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। এ পরিকল্পনার সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন। কারণ, ওই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে পল্টনে জামায়াতের সমাবেশস্থলের আশপাশে কোনো পুলিশ দেয়া হয়নি।

এমনকি জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি মহাসচিবকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি। অথচ একই দিন নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয় এলাকা ছিল পুলিশি বেষ্টনির ভেতর। জামায়াত-শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল তাদের টার্গেট। কিন্তু, এ খেলার পরিণাম একজনেরও ভাল হয়নি। মান্নান ভুইয়া ও সাইফুর রহমান দুই জনই দল থেকে বহিষ্কারের পর্যায়ে ছিল। তাদের মৃত্যুও ভালভাবে হয়নি। আর লুৎফুজ্জামান বাবরের অবস্থাতো সবার চোখের সামনেই।
এরপর জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে মাঠে নেমেছিলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। জামায়াতের কয়েকজন নিরপরাধ শীর্ষ নেতাকে অন্যায়ভাবে বিচারপতি সিনহা বিচারের নামে হত্যা করেছেন। জামায়াতে ইসলামী নিশ্চিহ্ন হয়নি। কিন্তু, সিনহার পরিণাম! একটা পর্যায়ে এসে লাঞ্চিত, বঞ্চিত ও অপমাণিত হয়ে তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তদন্তের নামে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ডকুমেন্ট তৈরি আর ভুয়া সাক্ষীর তথ্য দিয়ে জামায়াতের নিরপরাধ নেতাদেরকে অপরাধী বানিয়েছিলেন। তার পরিণামও হয়েছে বিচারপতি সিনহার মতই। রস খাওয়া শেষে একপর্যায়ে সরকার তাকেও লাথি মেরে ফেলে৷ জামায়াতে ইসলামী নিশ্চিহ্ন হয়নি।
তারপর জামায়াতের সঙ্গে খেলতে মাঠে নেমেছিলেন সাবেক এক পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী চৌধুরী। তাদের আবদার- জামায়াতকে ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ না দিলে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন না। কারণ, জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী। অবশেষে কী হলো? বাপ-বেটা শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকেই বাদ পড়েনি, নিজের হাতে গড়া দল থেকেও তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এবার জামায়াতকে নিয়ে খেলতে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা এডভোকেট আহমেদ আযম খান। শনিবার রাতে বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ২৪ এর জনতন্ত্র-গণতন্ত্র নামক টকশোতে আলোচক ছিলেন। টকশোতে জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেছিলেন-বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললেও এরপক্ষে কাউকে পাওয়া যায় না। তার একথার জেরে আযম খান বলেছেন, যারা স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করবে না তাদের এদেশে কোনো রাজনীতি করার অধিকার নেই। স্বাধীনতা আমাদের একটি বড় অর্জন। জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যারা যখন, যে প্রেক্ষিতে মনে করেছিল যে এটা সঠিক নয়, তাদের যদি এখনো রিয়েলাইজেশন (উপলব্ধি) না হয় তাহলে এদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এদেশে থাকারও তাদের কোনো অধিকার নেই।
এখানে আযম খান পরোক্ষভাবে যে জামায়াতকে বলেছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো কোনো পরিস্থিতির কারণে তিনি জামায়াতের নাম মুখে নেননি।
জামায়াতে ইসলামী কী কারণে ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি সেটার ব্যাখ্যা দলটির সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম একাধিকবার দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ ভাগ হওয়ার পর এটার ওপর ভারত আগ্রাসন চালাবে এমন আশঙ্কা থেকেই জামায়াত যুদ্ধে অংশ নেয়নি। স্বাধীনতার পরই জামায়াত স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছে। বিগত ৪৭ বছরের মধ্যে জামায়াত নেতারা একদিনও এদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে কথা বলেনি। বরং দেশবাসী জানে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
আহমেদ আজম খানেরও জানা আছে যে, জামায়াতে ইসলামী সত্যিকারের একটি দেশপ্রেমিক দল হওয়ার কারণেই তার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিগত ১৮ বছর ধরে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। দেশি-বিদেশি অনেক চাপের পরও খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছাড়েন নি।
অথচ আজম খান আজ আকারে ইঙ্গিতে বলছেন, জামায়াতের এদেশে কোনো রাজনীতি করার অধিকার নেই। এদেশে তাদের থাকার অধিকার নেই। আজম খানের উচিত জামায়াতের সমালোচনা না করে চৌধুরী পরিবারের দিকে তাকানো৷ ডঃ আসিফ নজরুল

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২০

সাংবাদিকরা সব সময়ই থাকেন ঝুঁকির মুখে; ঝুঁকি নিয়েই পথচলা

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ সাংবাদিকরা সব সময়ই থাকেন ঝুঁকির মুখে। বিশেষ করে জেলা উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের ঝুঁকির মাত্রাটা অনেক বেশি। একই জেলা বা উপজেলা শহরে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, চোরাকারবারী, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করতে হয় তাদের। ছোট শহরে একে অপরকে ভালভাবেই চেনেন। 

ফলে কোন সাংবাদিক এসবের বিরুদ্ধে লিখলে তিনি হয়ে যান ওই চক্রের চক্ষুশূল। সাংবাদিককে শায়েস্তা করতে মাঠে নামেন তারা। প্রভাবশালী কেউ হলে মামলা ঠুকে দিয়ে সাংবাদিককে গ্রেফতার করান। সন্ত্রাসী হামলাতো ঘটছে প্রায়ই। এক্ষেত্রে অনেক সময়ই প্রশাসনিক সহযোগিতা পাওয়া যায় না। 

কারণ পুলিশ প্রশাসন আর সিভিল প্রশাসন উভয়ের সঙ্গেই সন্ত্রাসী চক্রের রয়েছে দহরম-মহরম। প্রায়ই দেখা যায় প্রশাসন আর সাংবাদিকরা মুখোমুখি হয়ে আছেন। এলাকার খুন, ধর্ষণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির রিপোর্ট লিখলে পুলিশ প্রশাসন হয় ক্ষুব্ধ। আর সিভিল প্রশাসনের অনিয়মের কথা লিখলে তারাও হন ক্ষুব্ধ। 

ফলে দুকুলই হারান সাংবাদিকরা। বাকি থাকে রাজনৈতিক নেতাদের কথা। কিছু কিছু রাজনীতিক অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছেয়ে আছে। এসব দুর্নীতির রিপোর্ট লিখে অনেক সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছেন। রিপোর্ট ছেপে অনেক সাংবাদিক হয়েছেন লাঞ্ছিত। আবার অনেকেই হুমকির মুখে ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রতিনিধির রোষানলে পড়ে একাধিক সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছেন। হয়েছেন হয়রানির শিকার। এক উপজেলা প্রতিনিধিকে হত্যা মামলার আসামি করে এলকাছাড়া করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে তিনি অতি সম্প্রতি জামিন নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের অনৈক্যও অনেকটা দায়ী। কোন সাংবাদিক এমন হয়রানির শিকার হলে সাংবাদিকদেরই একটি গ্রæপ গিয়ে তাল মেলান প্রভাবশালীর পক্ষে (এ বিষয়ে পরবর্তী পর্বে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা আছে)। 

এতসব নির্যাতন হয়রানির পরও সাংবাদিকরা থমকে দাঁড়ায়নি। অনেককে দেখা গেছে অস্ত্রের মুখে সততা, নিষ্ঠা আর সাহসিকতায় এগিয়ে গেছেন অনেক দূর। আবার অনেককে অকাতরে জীবন দিতে হয়েছে। এ তালিকায় মফস্বলের সাংবাদিকদের সংখ্যাই অধিক। এছাড়া অনেকেই সন্ত্রাসী হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। কেউ কেউ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেও তারা সন্ত্রাসী হুমকিকে উল্টো ফিরিয়ে দিয়ে জানান দিয়েছেন, সাংবাদিকদের দমন করা সহজ নয়। বিশেষ করে দেশের সীমান্ত অঞ্চলের সাংবাদিকদের চোরাচালানিদের সঙ্গে আপস করে চলতে হয়। ব্যতিক্রম হলেই আসে আঘাত। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার রোষানলে পড়ে অনেক সাংবাদিককে এলাকা ছাড়া হতে হয়েছে। এসব নেতা কোন ঘটনা ঘটলে সাংবাদিকদের কাছে খবর পাঠান, ঘটনাটি এভাবে ঘটেছে।

 কিন্তু সাংবাদিকরা জানেন ঘটনাটি কি? দু’একজন সাংবাদিক যে আপস করেন না তা কিন্তু নয়। যারা আপসহীন তাদেরই ঝামেলা পোহাতে হয়। আবার রিপোর্ট ছাপা হলে সন্ত্রাসীরা হুমকি দিয়ে কখনও কখনও ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে প্রতিবাদ ছাপতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু মফস্বল সাংবাদিক জানেন, প্রতিবাদ ছাপা তার এখতিয়ার নয়। ভয়ে জবুথুব হয়ে ওই সাংবাদিক ফোন করেন মফস্বল ডেস্কে। বলেন কাহিনী, তারপর প্রতিবাদ ছেপে রক্ষা পান। এই অবস্থায় মফস্বল সাংবাদিকরা সব সময় নিরাপত্তাহীন। বড় কথা, রিপোর্ট পক্ষে গেলে কেউ ধন্যবাদ দেন না। কিন্তু বিপক্ষে গেলেই যতসব সমস্যা। আগেই বলেছি, এ সমস্যা আরও তালগোল পাকান সাংবাদিকরা নিজেরাই। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, পুলিশের কিছু নামধারী দালাল সাংবাদিক আছেন, যাদের কারণে বিপদে পড়তে হয় সত্যিকারের সাংবাদিকদের।

সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০

আপনি ভাত বা আবর্জনা খাচ্ছেন?

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ মিনিকেটের নামে বাংলাদেশে ধানের আবাদ নেই। এই চাল বাজার থেকে কোথা থেকে আসে - এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, কারখানায় নূন্যতম চাল তৈরি হয়।

দেশের ধানের চাল (ফ্যাট রাইস) চালকের কাছে আসার পর শুরু হয়েছিল টেলিসমতি। প্রথমে ধানের খোসা ছাড়ানো হয়। খোসা ছাড়ানোর পরে, ভাতটিতে খাঁটি / প্রাকৃতিক বর্ণের কিছু বাদামি / বাদামী রঙের ঝলক থাকে। তারপরে ধানের বাদামী / বাদামী ঘন্টা আচ্ছাদনটিকে রাসায়নিক এবং হোয়াইটনার মেশিন দ্বারা পৃথক করা হয়েছিল। এই কভারটি সরিয়ে চাল কিছুটা ঘন এবং সাদা হয় and এখানেই শেষ নয়, পোলিশ মেশিনের মাধ্যমে পালিশ করা ন্যূনতম ভাত হয়ে যায়।

এখন যে কেউ প্রশ্নের তীরটি দেখে বলতে পারেন - আপনি যদি এতগুলি উপায়ে ফ্যাট চাল প্রক্রিয়াজাত করেন এবং একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করেন তবে এটি চাল ব্যবসায়ীর ক্ষতি হয়। এখন ঘন চালের প্রক্রিয়াকরণ এবং একটি মিনিমালিস্ট তৈরির ক্ষতি -১০০ কেজি গণনা করা যাক, সাধারণত চাল পাওয়া যায় 933 কেজি, সাদা স্ব-স্ব 26.5 কেজি, কৃষ্ণ স্ব 14 কেজি, মৃত ভাত 4.5 কেজি, ময়লা 0.75 কেজি এবং পোলিশ 27 কেজি। এটি যুক্ত করে দেখায় যে এক হাজার কেজি চাল প্রক্রিয়াজাত করার পরে, 6 কেজির বেশি পাওয়া যায়। এই ছয় কেজি জল বাষ্প এবং জল। ধানের তুষের তেলের কারখানাগুলি পোলিশ কিনে, সাদা নিজেই বাজারে চালের অর্ধেক দামে বিক্রি করে। কৃষ্ণজাত স্ব এবং মৃত ধান চাল প্রাণীজ খাদ্য হিসাবে বিক্রি হয়। ভাত প্রক্রিয়াটির ব্যয় কত? এক হাজার কেজি ঘন চাল প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং একটি ন্যূনতমতা তৈরি করতে ব্যয় হয় 900 টাকা থেকে 1500 টাকা। তার মানে প্রতি কেজি 90 পয়সা থেকে 90 টাকা।

ফ্যাট ভাত প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রেতারা কিছুটা বেশি লাভ করলে ক্রেতার ক্ষতি কী? ছোট ক্ষতি হ'ল ক্রেতা পাতলা চালের দামে মোটা চাল কিনছেন, যা কেজি প্রতি 15 থেকে 20 টাকা পর্যন্ত প্রতারণা করছে। বড় ক্ষতি হ'ল ক্রেতা প্রতি কেজি 15 থেকে 20 টাকা বেশি দাম দিয়ে মোটা চালের আবর্জনা কিনছেন। কারণ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে, ভাতের ওপরে আবরণ (ব্রান অর্থাত্ পেরিকাপ, বীজ কোট, এলিউরোন স্তর, ভ্রূণ) বা পুষ্টিকর অংশগুলি সরানো হয়। এটি লক্ষ করা যায় যে 85% ধানের মধ্যে পেরিকার্পে ভিটামিন বি 3 থাকে, প্রোটিন এবং চর্বি আলেউরোন স্তরে থাকে, খনিজগুলির 51 শতাংশ এবং মোট ঘাটতির 80 শতাংশ ভ্রূণে থাকে, ভিটামিন বি 1 এবং ভিটামিন ই ভ্রূণে থাকে। …। চালের সমস্ত পুষ্টিকর উপাদান তেল দিয়ে বিক্রি করার প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং এটি আলাদা করার পরে, চাল এবং চাল ছেড়ে যায় না, এটি চালের আবর্জনা হয়ে যায়।

আপনি যতটুকু ভাবেন ন্যূনতম চালের নামে ধানের আবর্জনা বাস্তবে এটি আরও বেশি ক্ষতিকারক। সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড, সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড + টুথপেস্ট + আর্ট মিশ্রণ, সয়াবিন তেল, ফিটকারি, বোরিক পাউডার কয়েক মিনিটের মধ্যে ঘন চাল রূপান্তর করার বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবহৃত হয়। প্রতি মৌসুমে নতুন কৌশল বের হয়।

সংক্ষিপ্ত পদচারণায় কখনই কোনও পোকা ধরবেন না। কারণ পোকামাকড়রাও জানেন যে এই চাল খাওয়ার পক্ষে উপযুক্ত নয়, এর কোনও পুষ্টি নেই। কেন আপনি এই সুন্দর খাবার খাচ্ছেন !?

সংগৃহীত

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২০

জামাতঙ্ক রোগ এবং ফলাফল

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আবরার, নুরু, ইলিয়াস যার দিকেই তাকায়, তাকেই শিবির হিসেবে সন্দেহ করে। নিজ দলের কর্মীরা ও শিবিরের সাপ্লাই। মুক্তিযোদ্ধা চৌদ্দগুষ্ঠী প্রমানের পরেও জামাত শিবিরের গন্ধ খুজেঁ পায়। আজ স্বয়ং আওয়ামীলীগের আপাতত মস্তক শিবির আতঙ্ক এখন জলাতঙ্ক রোগের ন্যায় পরিনত হয়েছে।

স্কুল কলেজ, কাওমী আলিয়া, নাস্তিক বাম, ভারত এবং সরকার বিরুদ্ধী যেখানে যত আন্দোলন সব কিছুর হোতা জামাত শিবির। পুরো দেশের সব ভাল কাজের ক্রেডিট জামাত শিবিরকে দিয়ে দেওয়া হলো। ফেবুতে কেউ দেশের স্বার্থে কথা বল্লেই "তুই জামাত শিবির"। শাহবাগ, ঢাবি সব কিছুই জামাত, হিন্দু প্রধান বিচারপতি পযর্ন্ত জামায়াতের এজেন্ট হয়ে গেলো। এবি পার্টি আসলো শাহবাগে, বুঝালো জামায়াত আসতে না পারলেও আমরা এসেছি। মিডিয়ায় ও বক্তব্য দিয়েছি। কিন্তু তাদেরকে ও সস্তা ট্যাগ দিয়ে দিলেন।
"ইসলামী রাজনীতি ছিল হারাম"। আপনারা পৃষ্ঠপোষকতা করে যাদেরকে নামালেন তারাও তো জামায়াতের কর্মসূচি পালন করছে। পীরবাদী, কাদিয়ানীসহ ছোট খাটো মারামারিতে জামায়াতের এখন আর আগের মত সময় দিতে হয় না।
জামায়াতের আমীর এখন ঘরে বসে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বিবৃতি দেয়। সাঈদীকে কারাগারে রেখে তো দলীয় কর্মীদের বিরাগভাজন প্রধানমন্ত্রী নিজেই হয়েছেন। জনপ্রিয়তায় আজহারী যখন সাঈদী সাহেবের পর্যায় পৌছে গেল তাকেও বাহির করে দিলেন। কিন্তু এখন সে সফর করছে বিশ্ব।
নবী ইউসুফের কাহিনী শুনলে কান্না আসে। বহু "যদি" মাথায় আসে। আহকামুল হাকিমিন যদি এত সব পর্যায় না করতেন তাহলে তাকে ফিলিস্তিন থেকে এত কম বয়সী অবস্থায় মিশরের রাজা বানাতেন কিভাবে। ইউসুফ (আঃ) কিছুটা সাময়িক কষ্ট হলেও তাকে দিয়ে লক্ষ মানুষের দুর্ভিক্ষ এবং খোদায়ী শাষন এবং ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন।
রনিকে নিলেন কারগারে সে পেয়ে গেল কিছু পরশ পাথরের ছোয়া। জামায়াত ক্ষমতা থাকলে কি তুহিন আফরোজদেরকে তাদের রোকন সিলেবাসের বই পড়াতে পারতো। জামায়েত যাদের কাছে কোন দিন পৌছা সম্ভব ছিল না আপনারা তাদের কাছে জামায়েতকে পৌছিয়ে দিয়েছেন।
হাসবুনাল্লাহ শ্লোগান যাদের মুখে তাদের ক্ষতি করতে যাওয়া উচিত না। তাফহীমুল কুরআনকে জিহাদী বই বল্লেন আজ কুরআন বুঝার জন্য যুবুকদের মাঝে পেরেশানী তৈরী হয়ে গেছে আলহামদুলিল্লাহ্।
স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে সার্বভৌমত্ব টিকে রাখা এবং সাধারণ মানুষের মাঝে আল কুরআনের ম্যাসেজ পৌছে দেওয়া ছিল জামায়েতের লক্ষ্য। আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে এই বুঝ মানুষের মাঝে পৌঁছে গেছে। জামায়াত চেয়েছিল খানকার লোকেরা ইকামতে দ্ধীনের কাজ করুক তাও আজ অনেকাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। ইন শা আল্লাহ আচিরেই আরও বেশি মানুষ আল্লাহর আইন এবং সৎ লোকের শাষনের শ্লোগান দিবে।

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০

মাঠপর্যায়ের জামায়াত নেতা আব্দুল গফুরের ইন্তকালে চান্দগাঁও নেতৃবৃন্দের শোক প্রকাশ

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ চান্দগাঁও থানার চান্দগাঁও ওয়ার্ডে বসবাসরত জাময়াতের মাঠপর্যায়ের নেতা জনাব আব্দুল গফুর ০৭ অক্টোবর ২০২০ তারিখ বুধবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টায় অসুস্থতা জনিত কারণে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ইন্তেকালে সময় তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৫৮ বছর। 

তার মৃত্যুতে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারী শোক প্রকাশ করে এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন; যেন মহান আল্লাহ তার জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে এবং ভালো কাজ গুলি কবুল করে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করেন। নেতৃবৃন্দ তার পরিবারের সাথে সাক্ষাত করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং শান্তনা প্রদান করেন। মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গের ধর্য্য ধারণ করার তৌফিক কামনা করেন।



জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমান এর ইমামতিতে এডভোকেট শেখ আনসার আলীর জানাজা অনুষ্ঠিত

 

বাংলাদেশ বার্তা  ডেস্কঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সাবেক সদস্য, সাবেক এমপি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এডভোকেট শেখ আনসার আলী আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন)। তিনি বার্ধক্যজনিত ও মস্তিস্কের রক্তক্ষরণ জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

মরহুম শেখ আনসার আলীর জানাজার নামাজ আজ বাদ মাগরিব রাজধানীর বিজয়নগরের বটতলা জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। মরহুমের জানাজার নামাযে ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান। 

জানাজা পুর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। জানাজায় আরোও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর, সাবেক সংসদ সদস্য ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান, লস্কর মোহাম্মদ তসলিম, কবির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি আব্দুল জব্বার, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের সভাপতি আব্দুস সালাম প্রমুখ সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০

ভালবাসার জোয়ারে ভাসা মাওলানা আব্দুস সুবহান এবং আমার সাক্ষ্য: খান হাবিব মোস্তফা

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আজ থেকে ঠিক কুড়ি বছর আগে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনেক কারনেই নির্বাচনটি আমার কাছে গৌরবের এবং স্মরনীয়। পাবনা জেলা স্কুল কেন্দ্রে একই বুথে একসাথে ভোট দিয়েছিলাম আমি এবং চারদলীয় জোটের প্রার্থী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ জননেতা মাওলানা আব্দুস সুবহান (রঃ)।

তিনি ছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, বহুভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ,সফল উদ্যোক্তা, সংগ্রামী পুরুষ,মাটি ও মানুষের নেতা,পাবনার উন্নয়নের রুপকার,পাবনার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় নেতা,বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের পুরধা। তাঁর নামের পূর্বে এমন যত বিশেষণই যোগ করা হোকনা কেন,তবুও যেন কম হয়ে যায়। এই ক্ষণজন্মা মানুষটিই সৃষ্টি করেছিলেন পাবনার ইতিহাসে অবিস্মরনীয় এক গনজোয়ার।
নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে গনসংযোগে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলাম আমি এবং ছাত্রশিবিরের পাবনা শহর শাখার সভাপতি এস.এম.ইদ্রীস আলী। সন্ধ্যার ঠিক পূর্বমূহুর্তে দুবলিয়া বাজারে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন মাওলানা চাচা। আচমকা কিছু লোক নৌকার পক্ষে মিছিল নিয়ে আমাদের অতিক্রম করে চলে গেল। পরক্ষণেই সেটি জঙ্গীরুপে লাঠিসোটা,রামদা,হাসি নিয়ে ধেয়ে আসলো আমাদের দিকে। শুরু হলো উত্তেজনা-ছুটাছুটি। ওদের আক্রমনের লক্ষ্য ছিল মাওলানা চাচা। আমার এলাকা হওয়ায় ইদ্রীস ভাই যেন পরিস্থিতি মোকাবেলার দায়িত্বটা আমার ওপর ছেড়ে দিলেন। চাচাকে গাড়িতে বসিয়ে আমরা বুক পেতে দিলাম। জীবন চলে যাবে তবু,চাচার গায়ে আঁচর লাগতে দেবনা,এটাই ছিল আমাদের শপথ। একদিকে আওয়ামী জঙ্গীদের মুহুর্মুহু হামলা,অপরদিকে তাওহীদি জনতার প্রতিরোধে মধ্যেই দ্রুত গাড়ি ঘুড়িয়ে আমরা সুজানগরের দিকে রওয়ানা হলাম। ইতোমধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে মাওলানা সুবহান সাহেব হয়তো আমাদের মাঝে নাই। চরতারাপুর,সাদুল্লাপুর,ভাঁড়ারা,দোগাছিসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলো থেকে পঙ্গপালের মত ছুঠে আসছে মানুষ দুবলিয়ার দিকে। গাড়িতে বসেই জানতে পারলাম দুবলিয়া বাজারের নিয়ন্ত্রন নিয়ে ফেলেছে এডওয়ার্ড কলেজের সাবেক VP ও BNP নেতা নূর মোহাম্মাদ মাসুম বগা।

আমরা সুজানগর থানায় এসে বসলাম। OC সাহেব পুলিশ প্রোটেক্শন দিলেন। আমরা আবার পাবনার দিকে রওয়ানা হলাম। সুজানগর বাজার পার হয়েই পুলিশের গাড়িকে বিদায় দিয়ে ভিন্ন পথে আমরা আতাইকুলার দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। লক্ষ্য আমাদের একটাই,মাওলানা চাচাকে নিয়ে নিরাপদে শহরে পৌঁছান। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো,এতকিছু ঘটে যাচ্ছে,তবু মাওলানা চাচা নিরব,শান্ত,ধীর। সারাপথ কোন কথা বলছেন না। চারদিকে টানটান উত্তেজনা। আমার কাছে একের পর এক ফোন আসতে থাকে,সবারই উত্তেজিত কন্ঠের জিজ্ঞাসা,চাচা ঠিক আছেতো? যত দূর মনে পড়ে,যারা ফোন দিচ্ছিলেন তাদের মধ্যে জেলা জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারী আবু তালেব মন্ডল,সদ্য BNP-তে আসা শিমুল বিশ্বাস (BNP চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী),রাজা হাজি,সাবেক জাসদ নেতা মামুন ভাই,সুলতান মাহমুদ এহিয়া ভাই,আওকাত হাজি,বর্তমান পাবনা পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু,অলিভার ভাই। আমাদের গাড়ি যখন আতাইকুলা পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে উঠলো,অভাবনীয় এক দৃশ্যের অবতারনা হলো। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। নারী,পুরুষ,শিশুরা নেমে এসেছে রাস্তায়,সবার হাতেই ছিলো প্রতিরোধ সামগ্রী। মামুন ভাই মাইকে ঘোষনা দিতে থাকলেন " মাওলানা চাচা সুস্থ আছেন,ভাল আছেন,আপনারা দোয়া করুন।" লাখো জনতার ভালবাসা মিশ্রিত আল্লাহু আকবার ধ্বনীতে রাতের আকাশ যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠল। এ যেন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার! একই অবস্থা ছিল আতাইকুলা থেকে পাবনা শহরের দিলালপুর মাওলানার বাড়ি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। চারদলীয় জজোটে মিটটিং বসলো। আওয়ামীলীগকে চ্যালেন্জ করলেন সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম বিশু। দুইদিন পর দুবলিয়া স্কুল মাঠে গনসমাবেশের ডাক দেয়া হলো। ইতিহাস সাক্ষি,আজ পর্যন্ত এত বৃহত সমাবেশ দুবলিয়া স্কুল মাঠে আর হয় নাই। বিশু ভাই সেখানে বলেছিলেন " আমি মুক্তযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে সাক্ষ দিচ্ছি,৭১ সালের কোন কালিমা মাওলানাকে স্পর্শ করে নাই। তিনি আমাদের অভিভাবক।" তিনি জিতলেন ইতিহাস সৃষ্টি করে।

এই ক্ষণজন্মা মানুষটিই মিথ্যা অপবাদ নিয়ে আট বছর কারাগারে কাটালেন বাতিলের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে। অবশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তিনি চলে গেলেন মহান প্রভুর সান্নিধ্যে। আবারও সেই পরিচিত গনজোয়ার দেখল পাবনাবাসী। চারিদিকে শোকের ছায়া। সারা রাত ঘুমহীন পাবনা শহর। পরদিন সকালে মাওলানার বাড়ি থেকে যখন আমরা বেড় হলাম লাশবাহী ফ্রিজিং কার নিয়ে,সবখানে পিনপতন নিরবতা। ইমাম গাজ্জালী ট্রাষ্টের সামনে আসতেই গগনবিদারী চিৎকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এসব শিক্ষার্থীরাতো কোনদিন মাওলানাকে দেখার সুযোগও পায়নি! আমরা সামনে হাটছি,পেছনে লাশবাহী গড়ী। রাস্তার দুইপাশে ছুটে আসছে নারী-পুরুষ,পাবনার অভিভাবক-কে শেষবারের মত দেখতে। প্রতিটি ভবনের ছাঁদে,জানালায় অশ্রুসজল মানুষের উপস্থিতি। আহা! কি অভুতপূর্ব সেই বিদায়! আমরা তাঁকে নিয়ে গেলাম তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গন দারুল আমান ট্রাষ্ট মাঠে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হলো তাঁর জানাজা। যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ছুটে এসেছে লক্ষ জনতা। এ জোয়ারের ঢেউ যেন আছড়ে পড়েছে মানুষের হৃদয়ে,সকল সংকীর্ণতাকে ধুয়ে দিয়ে। ভালবাসার জোয়ারে ভেসে গেলেন পাবনার স্বপ্নপুরুষ। গনজোয়ারে আগমন,গনজোয়ার সৃষ্টি করেই চিরবিদায় নিলেন পাবনাবাসীর প্রিয় সুবাহান মওলানা। অনেকের সাথে আমিও হয়ে রইলাম সেই জোয়ারের সাক্ষি।

বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০

অধ্যক্ষ মাওলানা বদী আহমদ

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ

জীবনটা আজ সাদা পাতা লিখার কিছু নেই,

মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি পুরনো আমি সেই।
হঠাৎ করে কেন আজ কাঁদে আমার মন,
পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি হারিয়ে গেছে আমার আপনজন....।
আজ আমার হৃদয়ের চির ভাস্বর আমার শ্রদ্ধেয় পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা বদী আহমদ'র ১৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী।
"এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাও তুমি করে গেলে দান "
কবির এই বিখ্যাত উক্তির এক জ্বলন্ত সাক্ষর এক ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্ব ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আমার পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা বদী আহমদ বিধাতার অমোঘ বিধানে আমাদের অন্তরের অন্তস্তলে এক বিশাল ক্ষতসৃষ্টি করে তাঁর অগণিত ভক্ত, অনুরক্ত, অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শোক সাগরে ভাসিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে বিগত ১৯-০৪-২০০৫ ইংরেজি, রোজ মঙ্গলবার দুপুর ২ ঘটিকায় মাত্র ৪৪ বৎসর বয়সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পর-পাড়ে পাড়ি জমান। "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন"।
আমরা স্তব্ধ, বিস্মিত, শোকাহত ও এক অবর্ণনীয় বেদনায় অন্তর ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে। এই ক্ষণজন্মা মহান পুরুষ জীবনের অতি অল্প সময়ের মধ্যে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে গেছেন।

এই মহান মনীষী বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিম চাম্বল, জয়নগর পাড়া গ্রামের হাজী সুলতান আহমদ তালুকদার বাড়ীর সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬১ইং সনে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জনাব মুহাম্মদ ইসলাম, মাতার নাম মোছাম্মৎ মেহেরুন্নেছা।

ছোট বেলা থেকে অত্যন্ত কোমল স্বভাবের বৈচিত্রপূর্ণ শিক্ষাজীবনে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পরে পুঁইছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে দাখিল, চুনতি হাকিমিয়া আলীয়া মাদরাসা থেকে ২য় বিভাগে আলিম, ফাজিল এবং হাদীস গ্রুপে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন, আজীবন শিক্ষানুরাগী এ মহান ব্যক্তি পরবর্তীতে ছিপাতলী আলীয়া মাদরাসা থেকেও তাফসীর বিভাগে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ২য় স্থানে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৯০ সালে আরবি ও সাহিত্য বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সনে আধুনিক আরবি নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকারি, বে-সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিশেষত রচনা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রায় ১৭/১৮টির মত কৃতিত্বের সনদ ও পুরুষ্কার লাভ করেন।

তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন 'শাহজালাল হলের' পেশ ইমাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কর্তৃক পরিচালিত ইসলামি কিন্ডারগার্ডেন উসওয়াতুল ইসলামিয়া আদর্শ মাদরাসার শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার রসুলাবাদ ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা'র অধ্যক্ষ, বাঁশখালী হামেদিয়া রহিমা আলীয়া মাদরাসা'র অধ্যক্ষ, পুঁইছড়ি ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা'র অধ্যক্ষ (সাময়িক) এবং সর্বশেষ চন্দনাইশ জাফরাবাদ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা'র অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও মহান ব্যক্তি বাঁশখালী ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) মহিলা মাদরাসা, খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) মহিলা দাখিল মাদরাসা, শাহ আমানত দাখিল মাদরাসা, ইসলামিয়া ফোরকানিয়া মাদরাসা, আল-আমিন সংস্থা, নবজাগরণ সংস্থা, জমিয়াতুল মোদার্রেছিন বাঁশখালী'র সভাপতি, বাঁশখালী মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি, চন্দনাইশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি, বাঁশাখালী আদর্শ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষক পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি, বাঁশখালী আধুনিক হাসপাতালের নির্বাহী সদস্য, প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির শরীয়াহ বোর্ডের সদস্য, আল-হুমাইরা (রাঃ) মহিলা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা চট্টগ্রামের সদস্য, বাঁশখালী সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্য সহ বহু সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন।

তিনি ১৯৯৩ সালে সাতকানিয়া, ১৯৯৫ সালে বাঁশখালী ও ২০০৩ সালে চন্দনাইশ উপজেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসাবে পুরষ্কার লাভ করেন।

তাঁর প্রকাশনা ও রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে -
০১. মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল- কুরআন।
০২. মহাগ্রন্থ আল-কুআনের আশ্চর্য প্রভাব।
০৩. তাফসীর শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ।
০৪. কর্মক্ষেত্রে আদর্শ শিক্ষার প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া প্রায় ৩৪/৩৫ টির মত গবেষণামূলক প্রবন্ধ, সম্পাদকীয় কলাম জাতীয় ও দৈনিক পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন: এই মাটির জন্য যুদ্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো, পাহাড় বেয়ে হেঁটে চলা, আরবী ছোট গল্পের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ- দৈনিক ইনকিলাব, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ , আজাদী ও পূর্বকোণ।
আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর হাজারো স্মৃতি এই আমাদের প্রত্যেক অঙ্গনে প্রতিটি ধুলিকণার সাথে এখনো জীবন্ত হয়ে মিশে আছে। যতদিন আমরা বেঁচে থাকবো, ততদিন আপনার সৃষ্টি ও কাজগুলো বেঁচে থাকবে, এলাকার হাজার হাজার নর-নারীর মনের মনির কোঠায় আপনার স্মৃতি ও কাজগুলো অম্লান হয়ে থাকবে।
আমার সকল বন্ধুদের কাছে দোয়া কামনা করছি যেন আল্লাহ তা'আলা আমার আব্বুকে জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেন। আমীন।
(এস. এম. নাসিরের ওয়াল থেকে)

চলুন আমাদের সমাজকে আমরাই বদলে দেই

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আমাদের সমাজে বিয়ে মানেই বউ কয়েকশো মানুষের সামনে সেজেগুজে বসে থাকবে। আর সকলে এসে নতুন বউয়ের রুপ সৌন্দর্য দেখবে।

কিন্তু মীমের সাথে আমি যখন প্রথম কথা বলি তখনি আমরা দুজন একতম হই যে আমাদের পরিবার যতই জোড়াজুড়ি করুক আমরা নিজেদের সাধ্য মতো ইসলামি রীতি মেনে চলবো। একে অপরকে এবিষয়ে সহযোগিতা করবো। আসলে সাধারণ পরিবারে বেড়ে মানুষদের জন্য পরিবারের সাকলের বিরুদ্ধে গিয়ে দ্বিন পালন করা সত্যি অনেক কঠিন, এটা বলে বুঝানোর মতো না।

মীম যখন আমাকে বললো আমি বিয়েতেও নিকাব এবং বোরখা পরবো তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই তাকে বিয়ে করার। এজন্য আমাদের বিয়ে-বউভাত অনুষ্ঠানে মীমের জন্য কোন দামী শাড়ী কেনা হয়নি, সবচেয়ে দামী ব্রান্ডের দুটা বোরখা কিনা হয়েছে। যদিও আরও সিম্পল পরতে চেয়েছিলো কিন্তু আম্মু বললো না বউকে ভালো বোরখা পরতে হবে।

আমার বাসার মানুষ আগে থেকেই জানতো যে আমি বিয়েতে বউকে বোরখা পরাবো। তারা এটাও জানে এবিষয়ে জোড়াজুড়ি করলে আমি বিয়েই ক্যান্সেল করে দিবো। সেজন্য বাসার মানুষ কোন বাধা দেয়নি।

তবে এক-দুজন আত্মীয় আমাকে বলেছে আমাদের গ্রাম এবং বংশের মধ্যে আমাদের বিয়েটা হচ্ছে তাদের দৃষ্টিতে এবনরমাল বিয়ে।

কিন্তু সমস্যা বাধে বিয়ের দিন আমার কাছের কিছু আত্মীয় মীমকে বলে কালকে বউভাতে যেহেতু মহিলা-পুরুষ আলাদা তাহলে তুমি হিজাব পরবে, মুখ খোলা রাখবে।

মীম আমাকে বিষয়টি জানায় যে কি করবে, তাদের কথা অমান্য কিভাবে করবে। কিন্তু কিছুতেই এমনটা করতে চায় না। আমি ওকে বলি কেউ এসে যদি তোমাকে নেকাব খুলতে বলে তাহলে তুমি বলবে ইরফান না করে দিয়েছে, যাতে নেকাব না খুলি। এটা শুনে মীমতো মহা খুশি।

কিন্তু সমস্যা হলো, আমার কিছু আত্মীয় আমাকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো তুমি বউকে জোড় করে বোরখা পরাচ্ছ না? নতুন বউকে জোড় করে ইসলামিস্ট বানাচ্ছে। আমি যখন বললাম না এটা আমাদের দুজনের সম্মতিতে হয়েছে তখন তারা বলে কি দরকার ছিল একদিন ইতো।

একদিন দুদিন হীজাব পরে থাকলে কিছু হবে না।আমি অবাক হয়েছি যখন মীমের থেকে শুনলাম বউভাতের দিন কয়েকজন মহিলা আত্মীয় স্টেজে ওর নেকাব খুলার জন্য হীজাব নিয়ে টানাটানি করে। এক-দুজন সরাসরি আসে নেকাব খুলতে। পরে অনেক বারন করে তাদের থামায়।

শুনে এতো রাগ উঠে যে কি বলবো, এটা কোন ধরনের ভদ্রতা একজন নারীর নেকাব খুলতে তারা জোড়াজুড়ি করে। নারী হয়ে কিভাবে অন্য নারীকে এভাবে সবার সামনে পন্যের মতো উপস্থাপন করতে উদ্যত হয়।

পরে ভাবলাম তাদের দোষ না, তারা সমাজ থেকে এটাই শিখেছে, তারা কখনো ইসলামি রীতির বিয়ে দেখেনি তাই তাদের জন্য এটা সত্যি এবনারমাল বিয়ে মনে হয়েছে। ছবিটা এজন্য শেয়ার করলাম যাতে মানুষের মনে এটাও থাকে যে হ্যা বিয়েতে বউ নেকাব পরাও থাকতে পারে এই মানসিকতা তৈরি হয়। যাতে অন্যদের জন্য এমনটা করা সহজ হয়।তারাও যেনো ইন্সপায়ার হয়।

যারা সাধারণ পরিবার থেকে দ্বীন পালনে চেষ্টা করে তারা চাইলেই আল্লাহর রহমতে সবাইকে মানিয়ে ইসলামি রীতি মেনে বিয়ে করতে পারেন। এটার জন্য চাই আপনার এবং আপনার জিবীন সঙ্গীনির আপ্রান চেষ্টা ইচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ আমার পেরেছিলাম।

হয়তো এটাই আমাদের যুগলবন্দী শেষ ছবি, এরপর হয়তো কোন ছবি পোস্ট করা হবে না। এটাই করতাম না শুধু কিছু মানুষ যাতে ভাবতে শুরু করে যে এরকম ভাবেও বিয়ে হয়।

আমি জানি এবং একবার দেখেছি কয়েকজন হুজুরের ছেলের বিয়েতে বউ এবং কোন মেয়ে মানুষকে দেখা যায় না।তবে আমাদের পরিবারকে সেটা মানানোর সাধ্য আমাদের ছিলো না। তাই মীমকে নেকাব পরেই সবার সামনে আসতে হয়েছে।

আমাদের জন্য দু' চাই,এবং যেসকল ভাইবোন দ্বিনকে মনে বিয়ে করতে চায় আল্লাহ তাদের সহায় হোক সেই দু' করি।

আমাদের বিয়েতে কোন গায়ে হলুদ হয়নি।

মীম বোরখা + নেকাব নিজের এবং আমার ইচ্ছেতেই পরেছে।

মীমকে বিয়ের আগে আমার বাবাও দেখতে পারেনি।

বউভাত অনুষ্ঠানে মহিলা-পুরুষদের বসার জন্য আলাদা ফ্লোর ছিলো।

আলাদ ভাবে কোন ফোটোগ্রাফার ছিলো না। এই ছবিটা আমাকে অন্য একজন দিয়েছে।

বউভাত অনুষ্ঠানে মহিলা-পুরুষ আলাদা হবার পরেও নেকাব খুলা হয়নি কারন ওখানে যেই মহিলারা ছিলো তারা মুখ খোলা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করবে। সেজন্য নেকাব পরা ছিলো।

𝌆 এটাও যে ১০০% ইসলামি বিয়ে তা কিন্তু না, এটা শুধুই মন্দের ভালো মনে করবেন। আপনারা পুরোপুরি ইসলামের হুকুম অনুযায়ী বর্তমান সমাজের আলাদা করার চেষ্টা করবেন। ইনশাআল্লাহ।

মুহম্মদ ইরফান।

বিয়ে করেছেন, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০.