ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২০

ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব : মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ খন্দকার

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ইসলামী ব্যাংকিং বিশ্বব্যাপী আজ এক সমুজ্জ্বল বাস্তবতার নাম। সুদভিত্তিক ব্যাংকব্যবস্থার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকিং ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশেই নয় বরং লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, প্যারিস, ফ্রাঙ্কফুর্ট, সিঙ্গাপুর, টোকিও ও টরেন্টোর মতো প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার কেন্দ্রগুলোতেও ইসলামী অর্থায়ন মডেলের উপস্থিতি বেগবান হচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৭৫টি দেশে ছয় শতাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকিং চালু রয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিং ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২০ সাল নাগাদ এই সম্পদ ৫.০০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছুবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
কুড়ি শতকের দ্বিতীয় ভাগে শুরু হওয়া ইসলামী ব্যাংকিং অতি অল্প সময়ের মধ্যে নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে বৈশ্বিক আর্থিক পরিমÐলে নিজের যোগ্যতা ও সক্ষমতার প্রমাণ দিতে সমর্থ হয়েছে। সাম্র্বতিকবিশ্বজনীন অর্থনৈতিক মন্দা ও নানা টানাপোড়েনের মাঝে চলতিধারার বহু ব্যাংক অস্তিত্ব হারালেও এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক টিকে থাকার বিশেষ শক্তি ও সক্ষমতা দেখিয়েছে, যা বিশ্বের বহু আর্থিক বিশ্লেষক ও চিন্তাবিদের দৃষ্টি আর্কষণ করেছে। 
আলকাস্ট (২০১২)-এর লেখক পাপ্পাশা, ইজ্জেলদিন ও ফুয়েরতেস্ব ১৯৯৫-২০১০ সময়ের মধ্যে ৪২১টি ইসলামী ও প্রচলিত ব্যাংকের ব্যর্থতার বিপত্তিগুলো নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা করেন। তারা দেখিয়েছেন যে, ইসলামী ব্যাংকগুলোর ব্যর্থ হওয়ার ঝুঁকি তুলনামূলক কম। 
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের উন্নয়ন গবেষক দলের সদস্য বেক, কান্ট ও মেরুশে (২০১০) ‘ইসলামী বনাম প্রচলিত ব্যাংকিং: ব্যবসা মডেল, দক্ষতা ও স্থিতিশীলতা’শীর্ষক গবেষণার মধ্য দিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইসলামী ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি মূল্যসাশ্রয়ী। গবেষণার মাধ্যমে তারা ইসলামী ব্যাংকগুলোর উচ্চ ‘ক্যাপিটালাইজেশন’-এর প্রমাণ পান। এই Ôক্যাপিটাল কুশন’ও উচ্চতর ‘লিকুইডিটি রিজার্ভ’-এর কারণে সঙ্কটকালে ইসলামী ব্যাংকগুলো ভালো দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হয়।

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ড. মাহাথির মুহাম্মদ Ôইসলামিক ফাইন্যান্সের ভবিষৎ সুদ’ শীর্ষক এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন, অর্থনৈতিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইসলামী পদ্ধতি পৃথিবীকে কিছু দেয়ার সামর্থ্য রাখে, বিশেষ করে আর্থিক সঙ্কট, সার্বভৌম ঋণ ও আর্থিক মন্দার এই দুঃসময়ে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই শিল্প একসময় বিশ্বে দৃঢ় অবস্থান করে নেবে এবং বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় অবশ্যই এর উজ্জ্বল ভবিষৎ রয়েছে। 
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের স্থিতিশীলতা ও টেকসইযোগ্যতার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর জেতি আখতার আজিজ ও তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর দুরমাস ইলমাজ। ব্যবসাসংক্রান্ত সাংবাদিকতার সাথে জড়িত আর্থিক বিশ্লেষক ইমা ভেন্ডর (Emma Vandore) ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে সঙ্কট থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে তা নিয়ে একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রচনা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও সঙ্কট থেকে ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই নিরাপদ রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকিং পদ্ধতি যদি ইসলামী নীতিমালার ভিত্তিতে পরিচালিত হতো তাহলে আমরা যে সঙ্কটময় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি তা প্রত্যক্ষ করতে হতো না। 
ইসলামী অর্থনীতি ও অর্থায়নের ওপর বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব সিরিয়ান বংশোদ্ভূত আমেরিকান অধ্যাপক মনজের কাহ্ফ বলেন, ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের অস্তিত্বের মাধ্যমে একটি সম্ভাবনার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এবং এমন এক ব্যাংকব্যবস্থার বাস্তব রূপায়ণে সাফল্য দেখিয়েছে যা নৈতিকতার বন্ধন, জমাকারীদের সাড়া আদায় এবং একই সঙ্গে উৎপাদন ও বাস্তব বাজারের প্রকৃত অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। 
ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার বিশ^ব্যাপী জনপ্রিয়তা ও ক্রমগতিক সাফল্য এর অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। এসব সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের কতিপয় দিক এখানে তুলে ধরা হলো:
১.শরিয়াহর নীতি-আদর্শ অনুসরণ: ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্বের প্রধান দিক হলো এটি শরিয়াহর নীতি-আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ব্যাংকিং করে। আর শরিয়াহর মূল লক্ষ্যই হলো মানুষের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ সাধন করা। এ ছাড়া ইসলামী বিশ^বীক্ষণ (worldview) ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার দার্শনিক ভিত্তি হওয়ার কারণে এর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি অন্তর্নিহিত শক্তি হিসেবে কাজ করে। কেননা, ইসলামের বিশ^বীক্ষণ অনুযায়ী মানুষের কর্মফল শুধু ইহজীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং পরকালেও তাকে এ জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
২.লাভ-লোকসানে অংশীদার: ইসলামী ব্যাংক অংশীদারি পদ্ধতিতে আমানত গ্রহণ ও বিনিয়োগ করে। অর্থনৈতিক উঠানামার ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীগণ বেশি মুনাফা করলে ব্যাংক বেশি মুনাফা পায়। ফলে আমানতকারীদের আয়ও বেড়ে যায়। অনুরূপভাবে বিনিয়োগ গ্রাহকগণ লোকসান করলে ব্যাংকও তা বহন করে এবং আমনতকারীদেরকে তা বহন করতে হয়। ফলে লাভ-লোকসানের প্রভাব গোটা অর্থনীতির ওপর পড়ে। এ কারণে কোনো বিশেষ পক্ষ এককভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে না বা সে বিপর্যয়ের শিকার হয় না। 
৩.ন্যায়বিচারমূলক আচরণ: ইসলামী অর্থায়ন পদ্ধতি উৎপাদন, বণ্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারমূলক আচরণ করে এবং নিছক লাভকে প্রাধান্য দেয়ার পরিবর্তে সমাজের সকল মানুষের চাহিদা পূরণকে অগ্রাধিকার দেয়; যা সামাজিক উন্নয়নের সাথে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমন্বয় সাধন করে। ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থায় শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, ব্যবসায়ীর যুক্তিসঙ্গত মুনাফা অর্জনে সহায়তা করাসহ সকল অর্থনৈতিক পক্ষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিতের ওপর জোর দেয়।
৪.সুদের বিলুপ্তি ঘটায়: সুদ নৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়সহ মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মারাত্মক আঘাত হানে এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে লÐভÐ ও ধ্বংস করে দেয়। ফলে ইসলামী ব্যাংকিং যেমন মানুষকে সুদি লেনদেন থেকে বিরত রাখে, তেমনি এর ধ্বংসাত্মক পরিণতি থেকেও অর্থনীতিকে রক্ষা করে। 
৫.টাকার কারবার নয়, পণ্যের ব্যবসা: ইসলামী ব্যাংক টাকার ব্যবসা করে না; বরং পণ্যের ব্যবসায় নিয়োজিত থাকে। অর্থ ঋণ দিয়ে কৃত্রিম উৎপাদন সৃষ্টির পরিবর্তে প্রকৃত লেনদেন ও উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য ইসলাম ক্রয়বিক্রয় পদ্ধতিকে অনুমোদন করেছে। ক্রয়বিক্রয় পদ্ধতি অনুশীলনে প্রতিটি লেনদেন হয় বস্তুনিষ্ঠ ও উৎপাদনশীল। যে কারণে সমাজে কৃত্রিম অর্থ সৃষ্টির সুযোগ কমে যায় এবং আর্থিক মন্দা ও অস্থিতিশীলতার কবল থেকে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পদ নিরাপদ হয়। 
৬.পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং: ব্যাংকিং কার্যক্রম শুধু মুনাফা দ্বারা তাড়িত হলে লোভ-লালসার বিস্তার, সামাজিক অবক্ষয় ও পরিবেশ দূষণসহ নানাবিধ কারণে আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী বসবাসযোগ্যতা হারাতে পারে। তাই ইসলামী ব্যাংক শুধু মুনাফা সর্বোচ্চকরণকেই তার মূল লক্ষ্য হিসেবে গণ্য না করে people (মানুষ) ও planet (পৃথিবী)-এর কল্যাণে কাজ করে। পরিবেশবান্ধব টেকসই কার্যক্রম গ্রহণ করে ইসলামী ব্যাংক পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখা, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় মুনাফা অর্জন করার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। ফলে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার অর্থ হলো মানবিক ব্যাংকিং ও পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে শরিক হওয়া। 
৭.মানিবিক ব্যাংকিং: ইসলামী ব্যাংক জনকল্যাণমুখী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং উন্নয়নের অগ্রাধিকার খাত বিবেচনায় রেখে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ‘তেলা মাথায় তেল দেয়া’ইসলামী ব্যাংকের নীতি নয়। উচ্চবিত্ত গুটিকয়েক ব্যক্তির মধ্যে বিনিয়োগ সুবিধা সীমিত না রেখে, সহায়ক জামানতবিহীন সাধারণ মানুষ এবং দরিদ্রদের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে মানবিক ব্যাংকিংয়ের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকে। 
৮.যাকাত প্রদান: ইসলামী ব্যাংক তার বিভিন্ন রিজার্ভ ও সঞ্চিতির ওপর যাকাত দেয়। ফলে ব্যাংকের লাভের কিছু অংশ গরিব মানুষের হাতে যায়। এ কারণে কার্যকর চাহিদা বাড়ে, অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ে, উৎপাদন বাড়ে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। যা সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অন্য দিকে ইসলামী ব্যাংক যাকাত দেয় বলে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে যাকাত প্রদানের আবহ সৃষ্টি হয়। এর দ্বারা গ্রাহকেরাও ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাকাত দানে উৎসাহিত হয়। 
৯.সামাজিক অবক্ষয় রোধ: ইসলামী ব্যাংক মদ, গাজা, বিড়ি-সিগারেটসহ নানাবিধ ক্ষতিকর খাতে বিনিয়োগ করা থেকে দূরে থাকে। একইভাবে ঘুষ, দুর্নীতি, জুয়া, ফটকাকারবারি ইত্যাদি নেতিবাচক কার্যক্রমকে নিরুৎসাহিত করে। ফলে ইসলামী ব্যাংক মানবসম্পদকে সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে থাকে। 
১০.ঋণবাজারের বিলুপ্তি: অংশীদারি পদ্ধতির পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংক সুদভিত্তিক লেনদেনের পরিবর্তে মুনাফার ভিত্তিতে পণ্যসামগ্রী কেনাবেচা পদ্ধতিতে পুঁজি বিনিয়োগ করে। ফলে ঋণ বাজারের (Loan Market) বিলুপ্তি ঘটে এবং গোটা বাজার পুঁজি বাজারে (Capital Market) পরিণত হয়। 
১১.বিনিয়োগ আদায় সহজ: ইসলামী ব্যাংক গ্রাহককের কাছে মুনাফার ভিত্তিতে পণ্য বিক্রি করে। ফলে গ্রাহক সংশ্লিষ্ট ব্যবসার পরিবর্তে অন্যত্র বিনিয়োগের অর্থ স্থানান্তর করতে পারে না। তা ছাড়া উক্ত পণ্য হাইপোথিকেশন (hypothecation) ও প্লেজ (pleadge) পদ্ধতিতে ব্যাংকের জামানতে থাকে। ফলে বিনিয়োগগ্রহীতা বিনিয়োগ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক উক্ত পণ্য বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে পারে। এ কারণে বিনিয়োগের অর্থ অনাদায়জনিত ক্ষতি থেকে ব্যাংক ও অমানতদারগণ নিরাপদ থাকে এবং সামষ্টি অর্থনীতিতে ঝুঁকি হ্রাস পায়। 
১২.ঝুঁকি ভাগাভাগি: অংশীদারি পদ্ধতির মূলনীতি হলো, ‘ঝুঁকির সাথে লাভ এবং লাভের সাথে।’ এ নীতির আলোকে ঝুঁকি শুধু উদ্যোক্তার প্রতি বর্তায় না, পুঁজির মালিককেও তা বহন করতে হয়। এভাবে লক্ষ লক্ষ আমানতকারী ও শেয়ারহোল্ডার লোকসান গ্রহণ করলে প্রত্যেকের ভাগে লোকসানের পরিমাণ কমই হয়, যা বহন করা প্রত্যেকের জন্য সহজ এবং কেউ দেউলিয়া হয় না। কাজেই মুনাফায় অংশীদারি পদ্ধতিকে দেউলিয়ার বিপরীতে রক্ষাকবচ হিসেবে গণ্য করা হয়। 
১৩.জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে বিনিয়োগ: প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থায় লোকসানের বোঝা ঋণগ্রহীতাকে একাই বহন করতে হয়। ফলে সমাজের জন্য কল্যাণকর হলেও কেবল ঝুঁকির কারণে উদ্যোক্তাগণ বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহস পায় না। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের অংশীদারি নীতির কারণে ঝুঁকির বোঝা শুধু উদ্যোক্তাকে একাই বহন করতে হয় না; বরং সকল পক্ষই তা বহন করতে বাধ্য। কাজেই এ নীতি-আদর্শের কারণে জনকল্যাণমূলক বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন সম্ভব হয়। 
১৪.দক্ষতাপূর্ণ বিনিয়োগ বরাদ্দ: প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার পূর্বনির্ধারিত হারে সুদ পাওয়ার মতো ইসলামী ব্যাংকে মুনাফা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। কোনো প্রকল্পে লাভ হলে ব্যাংকের লাভ আর লোকসান হলেও তা ব্যাংককে বহন করতে হবে। কাজেই কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন করতে হলে গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ গ্রাহকের দক্ষতা ও প্রকল্পের উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। এ কারণে প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার তুলনায় ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ বরাদ্দ অধিকতর দক্ষতাপূর্ণ ও উৎপাদনশীল হয়। 
১৫.বাস্তব লেনদেন: সুদের ভিত্তিতে অর্থ ঋণ দিয়ে কৃত্রিম উৎপাদন সৃষ্টির পরিবর্তে ইসলামী ব্যাংক বাস্তবে পণ্য কেনাবেচা করে। ফলে এর প্রতিটি লেনদেন হয় বস্তুনিষ্ঠ ও উৎপাদনশীল। যে কারণে সমাজে কৃত্রিম অর্থ সৃষ্টির সুযোগ অনেকটা কমে যায়। 
১৬.স্থিতিশীল ও টেকশই অর্থনীতি বিনির্মাণ: ইসলামী ব্যাংকের প্রতিটি লেনদেন রিয়েল বা বাস্তবভিত্তিক, বস্তুনিষ্ঠ ও সম্পদনির্ভর। ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগের অর্থ প্রস্তাবিত খাতেই ব্যবহার করতে হয়, অনুৎপাদনশীল খাতে এ অর্থ ডাইভার্ট বা স্থানান্তরের সুযোগ নেই। কাজেই ইসলামী ব্যাংকিং অর্থনীতিকে মন্দার কবল থেকে নিরাপদ করত স্থিতিশীল ও টেকশই ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে।
১৭.আর্থিক অন্তর্ভুক্তি: ইসলামী ব্যাংকিংয়ে শুধু আর্থিক সেবাই দেওয়া হয় না; বরং দেশের সর্বস্তরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হয়। কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থায় প্রান্তিক জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ উদ্দেশে স্বল্পোন্নত অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে সর্বোৎকৃষ্ট সেবা প্রদান, চাহিদাভিত্তিক খুচরা, এসএমই ও ক্ষুদ্র অর্থায়ন স¤প্রসারণ নিশ্চিত করা। 
১৮.সামষ্টিক সামাজি দায়বদ্ধতা: কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি আধুনিককালের হলেও ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে তা সহজাত বিষয়। সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে নিয়েই ইসলামী ব্যাংক যাত্রা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য উন্নয়ন, খেলাধুলা ও পরিবেশসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে। 
১৯.শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি: ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থার কর্পোরেট কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ব্যাংকের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র শরিয়াহ সুপারভাইজরি কমিটি। এ কমিটির প্রতিনিধি ব্যাংকের বিভিন্ন সভা যেমনÑপরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী কমিটি, অডিট কমিটি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটি, বার্ষিক ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং শরিয়াহসংক্রান্ত পর্যালোচনা ও অভিমত দিয়ে থাকেন। ফলে বিনিয়োগ কার্যক্রমে শরিয়াহ পরিপালনসহ ব্যাংকের সকল কার্যক্রমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি জোরদার হয়। 
২০.নৈতিক ব্যাংকিং: পশ্চিমা বিশ্বের নৈতিক ব্যাংকিংয়ের সাথে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের তুলনা করা হলেও ইসলামি ব্যাংকিং প্রচলিত নৈতিক ব্যাংকিং থেকে আরো বেশি নৈতিক (more ethical)। কেননা, প্রচলিত নৈতিক ব্যাংকিংয়ে সুদকে অনৈতিক গণ্য করে তা পরিহার করা হয় না। অথচ ইসলাম, ইহুদি, খ্রিষ্ট, বৌদ্ধ, হিন্দু প্রভৃতি ধর্মে সুদকে অনৈতিক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এমনকি সুদ যে মানবিক বিষয় নয়; বরং শোষণের হাতিয়ার তা বিভিন্ন দার্শনিক, অর্থনীতিবিদ ও মনীষীর বক্তব্য থেকেও প্রমাণিত। সক্রেটিস, প্লেটো, অ্যারিস্টোটল, অ্যাডাম স্মিথ, কার্ল মার্কস ও কিনসের মতো বিখ্যাত পণ্ডিতগণ সুদকে সমাজ ও অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করেছেন। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের উক্ত সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনার পরও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো এরও সমালোচনা করার মতো দিক রয়েছে। খ্যাতিমান গবেষকদের দৃষ্টিতে ঝুঁকি বিশ্লেষণ ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনে ইসলামী ব্যাংকিংকে যেতে হবে আরো বহু দূর, সৃষ্টি করতে হবে দক্ষ ও পেশাদার ব্যাংকার, ঘটাতে হবে পণ্যবৈচিত্র্য ও মানসম্মত সেবার উন্নয়ন। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সকল স্তরে শরিয়াহর নীতিমালা ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এখন এ শিল্পের বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু মুনাফা দ্বারা তাড়িত হয়ে শরিয়াহ পরিপালনে শৈথিল্য দেখালে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের আরো চ্যালেঞ্জ আসছে বিশ্বব্যাপী আর্থিক উদারীকরণ (liberalization), বিনিয়ন্ত্রণ (deregulation) ও বিশ্বায়ন (globalization) থেকে। এগুলো মোকাবেলায় শাক্তিশালী ভিত্তি, উচ্চতর দক্ষতা ও বিরূপ পরিবেশে টিকে থাকার শক্তি অর্জনে আগে থেকেই সচেষ্ট হতে হবে। 
ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থাকে আরো গতিশীল করতে একদল শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ ও ইসলামী ব্যাংকারের প্রয়োজনীয়তা সময়ের অপরিহার্য দাবিতে পরিণত হয়েছে। এমন অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ রয়েছেন যাদের অথনীতি ও ব্যাংকিং সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই আবার অনেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ আছেন যারা ইসলামী শরিয়াহ সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখেন না। ইসলামী ব্যাংকব্যবস্থাকে বিশ্বজনীন আদর্শ ও কল্যাণকর ব্যবস্থারূপে প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসলামী চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও পেশাদার ব্যাংকারদের মধ্যে জ্ঞান ও চিন্তার সমন্বয় ঘটাতে হবে। বিশেষ করে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নিত্য-নতুন আর্থিক উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে শরিয়াহ বিশেষজ্ঞদের নব জাগরণ ইসলামী ব্যাংকিংকে সমৃদ্ধ করবে। 
বিশ্বের অন্যতম শরিয়াহ স্কলার জাস্টিস তকি উসমানি বলেন, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামী আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত বিষয়গুলো অনেকট উপেক্ষিত। এমন অনেক ইসলামী চিন্তাবিদ দেখতে পাওয়া যায়, যারা নামায-রোযা, বিবাহ-তালাকের ওপর গভীর জ্ঞান রাখলেও, আধুনিক যুগের জটিল ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত রীতিনীতি সম্পর্কে তারা খুব কম ধারণাই রাখেন। ফলে ব্যবসায়ীগণ তাদেরকে ব্যবসার মূল সমস্যা বোঝাতে পারছেন না। আলেমগণও নিজ থেকে এসব বিষয় জানার চেষ্টা করেন না। ফিকহের যেসব মূলনীতির ওপর এসব সমস্যার সমাধান দেয়া যায় সেগুলো সম্পর্কে তারা ততটা অভিজ্ঞ নন বলে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের বাস্তবসম্মত সমাধান দিতে ব্যর্থ হন। কাজেই ব্যবসায়ীরা মনে করেন আলেমদের কাছে প্রকৃত সমাধান নেই। তাই তারা যা খুশি করেন। অথচ পূর্ববতী সময়ের আলেমগণ এসব বিষয়ে খুবই সচেতন ছিলেন। 
হানাফি মাযহাবে অন্যতম ফকিহ ইমাম মুহাম্মদ। তার নিয়ম ছিল বজারে বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে উঠাবসা করা এবং ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা নেয়া। একদিন এক ব্যক্তি তাকে বাজারে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আলেম মানুষ, কিতাব পড়া ও পড়ানো আপনার কাজ। আপনি বাজারে কেন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি ব্যবসায়ীদের রীতিনীতি ও তাদের পরিভাষা সম্পর্কে জানতে এসেছি। কারণ এ ছাড়া সঠিক মাসয়ালা বের করা যায় না। 
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধনে প্রয়োজন বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক সমালোচনা। কিন্তু সমালোচনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নৈতিকতা ও জবাবদিহি। ইসলামের দৃষ্টিতে সমাধান জানা না থাকলে শুধু সমস্যা উসকিয়ে দেয়া সমালোচকের কাজ নয়, তাকে প্রকৃত সমস্যার সমাধানও বলে দিতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন সমস্যা ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই নবোদ্ভাবিত সমস্যাদির শরিয়াহসম্মত সমাধান প্রয়োজন। সময়ের পরিবর্তনে উদ্ভাবিত নতুন, কঠিন ও জটিল সমস্যাকে যদি শরিয়াহর আলোকে বাস্তবানুগ সমাধান না দেয়া হয় কিংবা সমাধান না দিয়ে নীরবতা অবলম্বন করা হয়, তাহলে ইসলামী শরিয়াহ থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই সা¤প্রতিক উদ্ভাবিত বিষয়ের সমাধান অবশ্যই দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম র.-এর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, যদি কোনো সমাধান প্রত্যাশীকে কোনো জরুরি বা প্রয়োজনীয় বিষয় থেকে বিরত থাকার মাসয়ালা দিতে হয় তাহলে গবেষকের উচিত হবে তার বিকল্প পথ বলে দেয়া। 
প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থার তুলনায় ইসলামী ব্যাংকিংয়ের বয়স একেবারেই কম। সামনে এগোতে হলে ভাঙতে হবে বহু বাধা ও প্রতিকূলতার পাহাড়। আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি সফলতা ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজন কার্যকরী ও যোগ্য নেতৃত্ব, সকল পক্ষের আন্তরিক সদিচ্ছা ও দায়িত্বশীল ভূমিকা এবং গঠনমূলক দিকনির্দেশনা।
ইমেজ সূত্র : https://voiceofislam.com.bd/2018/10/31/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন