বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ
জীবনটা আজ সাদা পাতা লিখার কিছু নেই,
মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি পুরনো আমি সেই।
হঠাৎ করে কেন আজ কাঁদে আমার মন,
পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি হারিয়ে গেছে আমার আপনজন....।
আজ আমার হৃদয়ের চির ভাস্বর আমার শ্রদ্ধেয় পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা বদী আহমদ'র ১৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী।
"এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ
মরণে তাও তুমি করে গেলে দান "
কবির এই বিখ্যাত উক্তির এক জ্বলন্ত সাক্ষর এক ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্ব ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ আমার পিতা অধ্যক্ষ মাওলানা বদী আহমদ বিধাতার অমোঘ বিধানে আমাদের অন্তরের অন্তস্তলে এক বিশাল ক্ষতসৃষ্টি করে তাঁর অগণিত ভক্ত, অনুরক্ত, অনুসারী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের শোক সাগরে ভাসিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে বিগত ১৯-০৪-২০০৫ ইংরেজি, রোজ মঙ্গলবার দুপুর ২ ঘটিকায় মাত্র ৪৪ বৎসর বয়সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পর-পাড়ে পাড়ি জমান। "ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন"।
আমরা স্তব্ধ, বিস্মিত, শোকাহত ও এক অবর্ণনীয় বেদনায় অন্তর ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠছে। এই ক্ষণজন্মা মহান পুরুষ জীবনের অতি অল্প সময়ের মধ্যে এক আলোড়ন সৃষ্টি করে গেছেন।
এই মহান মনীষী বাঁশখালী উপজেলার পশ্চিম চাম্বল, জয়নগর পাড়া গ্রামের হাজী সুলতান আহমদ তালুকদার বাড়ীর সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯৬১ইং সনে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম জনাব মুহাম্মদ ইসলাম, মাতার নাম মোছাম্মৎ মেহেরুন্নেছা।
ছোট বেলা থেকে অত্যন্ত কোমল স্বভাবের বৈচিত্রপূর্ণ শিক্ষাজীবনে চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পরে পুঁইছড়ি ইসলামিয়া সিনিয়র মাদরাসা থেকে প্রথম বিভাগে দাখিল, চুনতি হাকিমিয়া আলীয়া মাদরাসা থেকে ২য় বিভাগে আলিম, ফাজিল এবং হাদীস গ্রুপে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন, আজীবন শিক্ষানুরাগী এ মহান ব্যক্তি পরবর্তীতে ছিপাতলী আলীয়া মাদরাসা থেকেও তাফসীর বিভাগে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ২য় স্থানে কামিল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৯০ সালে আরবি ও সাহিত্য বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সনে আধুনিক আরবি নিয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকারি, বে-সরকারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিশেষত রচনা ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় প্রায় ১৭/১৮টির মত কৃতিত্বের সনদ ও পুরুষ্কার লাভ করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন 'শাহজালাল হলের' পেশ ইমাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কর্তৃক পরিচালিত ইসলামি কিন্ডারগার্ডেন উসওয়াতুল ইসলামিয়া আদর্শ মাদরাসার শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষা জীবন শেষে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার রসুলাবাদ ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা'র অধ্যক্ষ, বাঁশখালী হামেদিয়া রহিমা আলীয়া মাদরাসা'র অধ্যক্ষ, পুঁইছড়ি ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা'র অধ্যক্ষ (সাময়িক) এবং সর্বশেষ চন্দনাইশ জাফরাবাদ সিনিয়র ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা'র অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও মহান ব্যক্তি বাঁশখালী ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ) মহিলা মাদরাসা, খাদিজাতুল কোবরা (রাঃ) মহিলা দাখিল মাদরাসা, শাহ আমানত দাখিল মাদরাসা, ইসলামিয়া ফোরকানিয়া মাদরাসা, আল-আমিন সংস্থা, নবজাগরণ সংস্থা, জমিয়াতুল মোদার্রেছিন বাঁশখালী'র সভাপতি, বাঁশখালী মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি, চন্দনাইশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি, বাঁশাখালী আদর্শ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ শিক্ষক পরিষদের চট্টগ্রামের সভাপতি, বাঁশখালী আধুনিক হাসপাতালের নির্বাহী সদস্য, প্রাইম মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির শরীয়াহ বোর্ডের সদস্য, আল-হুমাইরা (রাঃ) মহিলা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা চট্টগ্রামের সদস্য, বাঁশখালী সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্য সহ বহু সমাজ কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন।
তিনি ১৯৯৩ সালে সাতকানিয়া, ১৯৯৫ সালে বাঁশখালী ও ২০০৩ সালে চন্দনাইশ উপজেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ হিসাবে পুরষ্কার লাভ করেন।
তাঁর প্রকাশনা ও রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে -
০১. মানবতার মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ আল- কুরআন।
০২. মহাগ্রন্থ আল-কুআনের আশ্চর্য প্রভাব।
০৩. তাফসীর শাস্ত্রের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ।
০৪. কর্মক্ষেত্রে আদর্শ শিক্ষার প্রভাব উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া প্রায় ৩৪/৩৫ টির মত গবেষণামূলক প্রবন্ধ, সম্পাদকীয় কলাম জাতীয় ও দৈনিক পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে। যেমন: এই মাটির জন্য যুদ্ধ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো, পাহাড় বেয়ে হেঁটে চলা, আরবী ছোট গল্পের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ- দৈনিক ইনকিলাব, ইত্তেফাক, ভোরের কাগজ , আজাদী ও পূর্বকোণ।
আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর হাজারো স্মৃতি এই আমাদের প্রত্যেক অঙ্গনে প্রতিটি ধুলিকণার সাথে এখনো জীবন্ত হয়ে মিশে আছে। যতদিন আমরা বেঁচে থাকবো, ততদিন আপনার সৃষ্টি ও কাজগুলো বেঁচে থাকবে, এলাকার হাজার হাজার নর-নারীর মনের মনির কোঠায় আপনার স্মৃতি ও কাজগুলো অম্লান হয়ে থাকবে।
আমার সকল বন্ধুদের কাছে দোয়া কামনা করছি যেন আল্লাহ তা'আলা আমার আব্বুকে জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেন। আমীন।
(এস. এম. নাসিরের ওয়াল থেকে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন