ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০

ভালবাসার জোয়ারে ভাসা মাওলানা আব্দুস সুবহান এবং আমার সাক্ষ্য: খান হাবিব মোস্তফা

 

বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আজ থেকে ঠিক কুড়ি বছর আগে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অনেক কারনেই নির্বাচনটি আমার কাছে গৌরবের এবং স্মরনীয়। পাবনা জেলা স্কুল কেন্দ্রে একই বুথে একসাথে ভোট দিয়েছিলাম আমি এবং চারদলীয় জোটের প্রার্থী বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ জননেতা মাওলানা আব্দুস সুবহান (রঃ)।

তিনি ছিলেন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, বহুভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ,সফল উদ্যোক্তা, সংগ্রামী পুরুষ,মাটি ও মানুষের নেতা,পাবনার উন্নয়নের রুপকার,পাবনার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় নেতা,বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের পুরধা। তাঁর নামের পূর্বে এমন যত বিশেষণই যোগ করা হোকনা কেন,তবুও যেন কম হয়ে যায়। এই ক্ষণজন্মা মানুষটিই সৃষ্টি করেছিলেন পাবনার ইতিহাসে অবিস্মরনীয় এক গনজোয়ার।
নির্বাচনের কয়েকদিন পূর্বে গনসংযোগে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলাম আমি এবং ছাত্রশিবিরের পাবনা শহর শাখার সভাপতি এস.এম.ইদ্রীস আলী। সন্ধ্যার ঠিক পূর্বমূহুর্তে দুবলিয়া বাজারে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন মাওলানা চাচা। আচমকা কিছু লোক নৌকার পক্ষে মিছিল নিয়ে আমাদের অতিক্রম করে চলে গেল। পরক্ষণেই সেটি জঙ্গীরুপে লাঠিসোটা,রামদা,হাসি নিয়ে ধেয়ে আসলো আমাদের দিকে। শুরু হলো উত্তেজনা-ছুটাছুটি। ওদের আক্রমনের লক্ষ্য ছিল মাওলানা চাচা। আমার এলাকা হওয়ায় ইদ্রীস ভাই যেন পরিস্থিতি মোকাবেলার দায়িত্বটা আমার ওপর ছেড়ে দিলেন। চাচাকে গাড়িতে বসিয়ে আমরা বুক পেতে দিলাম। জীবন চলে যাবে তবু,চাচার গায়ে আঁচর লাগতে দেবনা,এটাই ছিল আমাদের শপথ। একদিকে আওয়ামী জঙ্গীদের মুহুর্মুহু হামলা,অপরদিকে তাওহীদি জনতার প্রতিরোধে মধ্যেই দ্রুত গাড়ি ঘুড়িয়ে আমরা সুজানগরের দিকে রওয়ানা হলাম। ইতোমধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে মাওলানা সুবহান সাহেব হয়তো আমাদের মাঝে নাই। চরতারাপুর,সাদুল্লাপুর,ভাঁড়ারা,দোগাছিসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলো থেকে পঙ্গপালের মত ছুঠে আসছে মানুষ দুবলিয়ার দিকে। গাড়িতে বসেই জানতে পারলাম দুবলিয়া বাজারের নিয়ন্ত্রন নিয়ে ফেলেছে এডওয়ার্ড কলেজের সাবেক VP ও BNP নেতা নূর মোহাম্মাদ মাসুম বগা।

আমরা সুজানগর থানায় এসে বসলাম। OC সাহেব পুলিশ প্রোটেক্শন দিলেন। আমরা আবার পাবনার দিকে রওয়ানা হলাম। সুজানগর বাজার পার হয়েই পুলিশের গাড়িকে বিদায় দিয়ে ভিন্ন পথে আমরা আতাইকুলার দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। লক্ষ্য আমাদের একটাই,মাওলানা চাচাকে নিয়ে নিরাপদে শহরে পৌঁছান। লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো,এতকিছু ঘটে যাচ্ছে,তবু মাওলানা চাচা নিরব,শান্ত,ধীর। সারাপথ কোন কথা বলছেন না। চারদিকে টানটান উত্তেজনা। আমার কাছে একের পর এক ফোন আসতে থাকে,সবারই উত্তেজিত কন্ঠের জিজ্ঞাসা,চাচা ঠিক আছেতো? যত দূর মনে পড়ে,যারা ফোন দিচ্ছিলেন তাদের মধ্যে জেলা জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারী আবু তালেব মন্ডল,সদ্য BNP-তে আসা শিমুল বিশ্বাস (BNP চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী),রাজা হাজি,সাবেক জাসদ নেতা মামুন ভাই,সুলতান মাহমুদ এহিয়া ভাই,আওকাত হাজি,বর্তমান পাবনা পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু,অলিভার ভাই। আমাদের গাড়ি যখন আতাইকুলা পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে উঠলো,অভাবনীয় এক দৃশ্যের অবতারনা হলো। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। নারী,পুরুষ,শিশুরা নেমে এসেছে রাস্তায়,সবার হাতেই ছিলো প্রতিরোধ সামগ্রী। মামুন ভাই মাইকে ঘোষনা দিতে থাকলেন " মাওলানা চাচা সুস্থ আছেন,ভাল আছেন,আপনারা দোয়া করুন।" লাখো জনতার ভালবাসা মিশ্রিত আল্লাহু আকবার ধ্বনীতে রাতের আকাশ যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠল। এ যেন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ার! একই অবস্থা ছিল আতাইকুলা থেকে পাবনা শহরের দিলালপুর মাওলানার বাড়ি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। চারদলীয় জজোটে মিটটিং বসলো। আওয়ামীলীগকে চ্যালেন্জ করলেন সাবেক আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল ইসলাম বিশু। দুইদিন পর দুবলিয়া স্কুল মাঠে গনসমাবেশের ডাক দেয়া হলো। ইতিহাস সাক্ষি,আজ পর্যন্ত এত বৃহত সমাবেশ দুবলিয়া স্কুল মাঠে আর হয় নাই। বিশু ভাই সেখানে বলেছিলেন " আমি মুক্তযোদ্ধা কমান্ডার হিসাবে সাক্ষ দিচ্ছি,৭১ সালের কোন কালিমা মাওলানাকে স্পর্শ করে নাই। তিনি আমাদের অভিভাবক।" তিনি জিতলেন ইতিহাস সৃষ্টি করে।

এই ক্ষণজন্মা মানুষটিই মিথ্যা অপবাদ নিয়ে আট বছর কারাগারে কাটালেন বাতিলের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে। অবশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০ তিনি চলে গেলেন মহান প্রভুর সান্নিধ্যে। আবারও সেই পরিচিত গনজোয়ার দেখল পাবনাবাসী। চারিদিকে শোকের ছায়া। সারা রাত ঘুমহীন পাবনা শহর। পরদিন সকালে মাওলানার বাড়ি থেকে যখন আমরা বেড় হলাম লাশবাহী ফ্রিজিং কার নিয়ে,সবখানে পিনপতন নিরবতা। ইমাম গাজ্জালী ট্রাষ্টের সামনে আসতেই গগনবিদারী চিৎকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এসব শিক্ষার্থীরাতো কোনদিন মাওলানাকে দেখার সুযোগও পায়নি! আমরা সামনে হাটছি,পেছনে লাশবাহী গড়ী। রাস্তার দুইপাশে ছুটে আসছে নারী-পুরুষ,পাবনার অভিভাবক-কে শেষবারের মত দেখতে। প্রতিটি ভবনের ছাঁদে,জানালায় অশ্রুসজল মানুষের উপস্থিতি। আহা! কি অভুতপূর্ব সেই বিদায়! আমরা তাঁকে নিয়ে গেলাম তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গন দারুল আমান ট্রাষ্ট মাঠে। সেখানেই অনুষ্ঠিত হলো তাঁর জানাজা। যতদূর চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ছুটে এসেছে লক্ষ জনতা। এ জোয়ারের ঢেউ যেন আছড়ে পড়েছে মানুষের হৃদয়ে,সকল সংকীর্ণতাকে ধুয়ে দিয়ে। ভালবাসার জোয়ারে ভেসে গেলেন পাবনার স্বপ্নপুরুষ। গনজোয়ারে আগমন,গনজোয়ার সৃষ্টি করেই চিরবিদায় নিলেন পাবনাবাসীর প্রিয় সুবাহান মওলানা। অনেকের সাথে আমিও হয়ে রইলাম সেই জোয়ারের সাক্ষি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন