একজন মানুষ যখন অন্যকে গালি দেয়, অভিশাপ দেয়, ভেঙচি কাটে কিংবা কটুকথা বলে, তখন তাতে ওই ব্যক্তির প্রতি তার আক্রোশ, ক্ষোভ, হতাশা, হিংসা ইত্যাদিই প্রকাশ পায়। সাধারণত অশান্তি বা আনকমফোর্টে থাকা ব্যক্তি অধিকতর কমফোর্টে থাকা ব্যক্তির প্রতি এ ধরনের রসায়ন দেখিয়ে থাকে।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বেগম খালেদা জিয়া- এ দু’জনের মধ্যে যেকোনো বিচারে নিঃসন্দেহে অধিকতর সুখশান্তিতে কিংবা কমফোর্টে আছেন শেখ হাসিনা।
এ অবস্থায় প্রতিপক্ষকে উদ্দেশ করে কটুকথা বেশি উচ্চারিত হওয়ার কথা বেগম খালেদা জিয়ার মুখ থেকে। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো। দুই নেত্রীর একজন আরেকজন সম্পর্কে এযাবৎ যত মন্তব্য করেছেন এবং এখনো সময়ে সময়ে করছেন, সেসবের দিকে সামান্য দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই পার্থক্যটি যে কারো কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়বে। খালেদা জিয়ার পরনের শাড়ি-ব্লাউজ, ঘুমানোর অভ্যাস থেকে শুরু করে পরীক্ষার মার্কশিট- এমন কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নেই যা উচ্চারিত হয়নি। তবে বেগম জিয়ার স্বল্প কথা বলার অভ্যাস জাতিকে এ ব্যাপারে অনেকটা রক্ষা করেছে। তিনিও প্রতিপক্ষের মতো একই মাইন্ডসেট বা মানসিক গড়নের হলে নারীজাতির জন্য আসলেই ‘খবর’ ছিল।
কাজেই কী এমন বিষয় রয়েছে যা এখনো বেগম জিয়ার প্রতি আক্রোশ, ক্রোধ বা ক্ষোভ কমাতে পারেনি তা মনোবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের গবেষণার বিষয়। বেগম খালেদা জিয়া নীরবে বা নিভৃতে এমন কী কথা উচ্চারণ করেন, যার কারণে প্রতিপক্ষ এমনভাবে অগ্নিশর্মা হয়ে পড়ে।
এই উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমার মনে পড়ে যায় আমাদের এক স্কুলশিক্ষকের গল্প। সেই স্যার পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মজার মজার গল্প বলতেন। স্যারের বলা সেই গল্পগুলো হতো জীবনমুখী ও হাস্যরসে ভরপুর। ক্লাসের কোনো মেয়ে ভবিষ্যতে দজ্জাল শাশুড়ির পাল্লায় পড়লে কিভাবে আত্মরক্ষা করতে হবে, সেই কৌশলও শিখিয়ে দিতেন। সেই স্যারের বলা মজার একটি গল্প এখানে প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে হচ্ছে।
এক দজ্জাল শাশুড়ি। ছেলেবউকে উঠতে বসতে বকাঝকা করে। তখন গ্রামের এক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি ওই বউকে কিছু বুদ্ধি বাতলে দেন।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে শাশুড়ি যথারীতি বউকে গালিগালাজ শুরু করে দেয়। বউ কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে- ‘আম্মা, এতক্ষণ আপনি আমাকে যা যা বলেছেন আমি আপনাকে তার ডাবল মানে দুই গুণ বললাম।’ এই কথা শুনে শাশুড়ি ক্ষেপে গিয়ে আরো জোরে বকাবকি শুরু করে দেয়। বউ আবারো কাছে গিয়ে আস্তে করে বলে, ‘আম্মা ডাবল’।
এখন শাশুড়ি যতবার গালি দেয় বউ ততবার কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘আম্মা ডাবল’। গ্রামের মানুষ বলাবলি শুরু করে দিয়েছে, ‘এত মাটির মতো একটা মেয়েকে এমন গালাগালি কেন করছে? বুড়িটা কি শেষমেশ পাগল হয়ে গেল নাকি?’
এভাবে বকতে বকতে এক সময় শাশুড়ি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একদিন বউকে ডেকে বলেÑ ‘দেখো বউমা, তোমার পায়ে পড়ি। তুমি আমাকে আর ‘আম্মা ডাবল’ এ কথাটি বোলো না। আমিও তোমাকে আর কোনো দিন গালি দেবো না।’
আমার মনে হচ্ছে, স্বল্পভাষী নেত্রী তার প্রতিপক্ষকে ‘আম্মা ডাবল’ স্টাইলের কোনো কথা বলে থাকতে পারেন। যে শব্দটি ছোট্ট কিন্তু প্রতিপক্ষের ওপর সেটা কাজ করে মারাত্মক। সেই ছোট্ট কথাটি সম্ভবত ‘অবৈধ’। এই অবৈধতার একটা ভার রয়েছে। সেই ভারের কারণেই সরকার এবং সরকারবান্ধব সুশীলসমাজের এত উসখুস, এত ছটফট, এত লেফরাইট। এই ভার লাঘবের কারণেই হয়তো এখন বিএনপিকে যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে নেয়া দরকার হয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল অধিবেশনে দলটির দীর্ঘ দিনের সভাপতি এবং ২০১৪ সালের বিতর্কিত ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসা প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু সুন্দর ও প্রীতিকর কথা উচ্চারণ করেছেন। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আর কোনো দুর্নাম কুড়াতে চান না। তিনি সামনে একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাসনা পোষণ করেছেন। আবার একই মুখে বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতকে আর কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে দেয়া হবে না।
নেত্রীর এই জটিল মনোবাসনা পূর্ণ করতেই পুরো পলিটিক্যাল, ইন্টেলেকচুয়াল ও কালচারাল মেশিনারিজ কাজে নেমে পড়েছে। অবৈধতার যে একটা ভার আছে, সেটাই স্পষ্ট হয়ে পড়েছে খোদ নেত্রীসহ শাসক শ্রেণীর বিভিন্ন উচ্চারণ ও আচরণে। তাই মরিয়া হয়ে উঠছে যেকোনোভাবে বিএনপিকে সামনের নির্বাচনে নিয়ে এসে বৈধতা সংগ্রহ করতে।
এ কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে প্রেসিডেন্টের সংলাপ, সার্চ কমিটি গঠন এবং অন্য সব লেফরাইট। পুরো বিষয়টি হয়েছে পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো। এটাকে গ্রহণযোগ্য বানানোর জন্য পুরো জাতিকে নিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক লেফরাইটটুকু করা হয়েছে। কিন্তু দেশের ভেতরে ও বাইরে সবার কাছেই সরকারের মতলবটি স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। অনেক লেফরাইট করে সিইসি নির্বাচনের পর পরই বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ইকোনমিক্স তাদের সর্বশেষ একটি আর্টিক্যালে এটাকে আখ্যায়িত করেছেন ‘কন্ট্রোলড ডেমোক্র্যাসি’। কাজেই এই ভার লাঘব এত সহজ হবে না।
এ দেশের কিছু সুশীল এবং তাদের তথাকথিত দু’টি নিরপেক্ষ পত্রিকার নড়াচড়াও লক্ষ করার মতো। এরা এখন জনতার মঞ্চের নেতা ও বিশেষ ক্যাডার হিসেবে বিশেষভাবে চিহ্নিত কমিশনকে গ্রহণযোগ্য করার মিশনে নেমে পড়েছেন। সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করে ফেললে সুশীলসমাজ পাপ, পাপ বলে আঁতকে উঠছেন। নির্বাচন কমিশনারদের একটি বিশেষ শব্দ বলে ফেলায় ৫০০ কোটি টাকার মানহানি মামলাও দায়ের হয়ে গেছে।
অথচ এই পত্রিকাগুলো একই সাংবিধানিক পদে থাকা বিচারপতি এম এ আজিজকে নিয়ে কী কাণ্ডকীর্তিই না করেছিলেন। যদিও বিচারপতি হিসেবে তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনো অনৈতিকতার প্রমাণ মেলেনি। এই সমালোচনার আগে তাকেও তার নিরপেক্ষতা প্রমাণের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। আরেক মহামান্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বিচারপতি আজিজের মুখকে যতভাবে বিকৃত করা সম্ভব এই পত্রিকাগুলো তা করে বিভিন্ন কার্টুন আঁকা হয়েছে। এই পত্রিকা ও তাদের সুশীলসমাজ ইনিয়ে-বিনিয়ে নতুন কমিশনকে নিরপেক্ষ প্রমাণ করার সুযোগ কামনা করছে।
এই নির্বাচন কমিশন কেমন হবে সে সম্পর্কে সবচেয়ে দামি ভবিষ্যদ্বাণীটি করে গেছেন বিদায়ী সিইসি রকীবউদ্দিন। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, নতুন সিইসি তাদের মতোই ‘সুনামের’ সাথে দায়িত্ব পালন করবেন। দেশবাসীও সেটাই অনুমান করছেন।
এ দেশে সিভিল সোসাইটি তথা সুশীলসমাজ শব্দটিকে জোকারের প্রতিশব্দ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এরা জাতির মোরাল ব্রিগেইড হিসেবে কাজ না করে বিভিন্ন সময় জোকারদের মতোই প্যারেড বা লেফরাইট করেন। মিডিয়াগুলো সুশীলসমাজ হিসেবে ঘুরেফিরে এদের কয়েকজনকেই প্রদর্শন করে।
ব্যাপারটা অনেকটা গল্পের ধূর্ত শিয়ালের মতো। এক কুমির তার বাচ্চাদের শিয়াল পণ্ডিতের আবাসিক পাঠশালায় পড়তে পাঠায়। কিন্তু পণ্ডিত সাব খেয়ে খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। মাত্র একটি কুমিরছানাকে প্রদর্শনের নিমিত্তে রেখে দেয়। কুমির নিজের সন্তানদের দেখতে এলে সেই একটি ছানাকে আমাদের মিডিয়ার সুশীল প্রদর্শনের মতো বারবার এনে দেখায়। এক সময় শেষ ছানাটিকেও খেয়ে ফেলে। তখনই কুমির বিষয়টি ঠাওর করতে পারে। তখন শিয়ালকে ধরার সুযোগ খুঁজে। একদিন শিয়াল নদী পার হতে গেলে কুমিরের কাছে ধরা পড়ে যায়। কুমির শিয়ালের পা জড়িয়ে ধরে। তখন নদীর স্রোতকে উদ্দেশ করে শিয়াল বলে, আরে দেখো কী বোকা কুমির। আমার পা রেখে লাঠিতে জড়িয়ে ধরেছে। এ কথা শুনে কুমির বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং শিয়ালের পা ছেড়ে লাঠি জড়িয়ে ধরে। সেই সুযোগে শিয়াল পগারপার হয়ে যায়।
এ দেশের কিছু মিডিয়া গণমাধ্যম না হয়ে, ফ্যাসিবাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে ধূর্ত শিয়ালের ভূমিকায় নেমেছে। বিরোধী দল যখন শিয়ালের পা জড়িয়ে ধরে তখন এরা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে লাঠিতে ধরায়।
নির্বাচন কমিশনার খুঁজে বের করতে প্রথম ছয়জনকে নিয়ে সার্চ কমিটি করা হলো। এরা আবার আরো ১৬ জনকে প্রদর্শন করলেন। এরা প্রত্যেকেই হেভি ভাব নিয়ে জাতির সামনে হাজির হলেন। পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো নতুন কমিশনকে উপস্থাপন করে বিদায় নিয়েছেন। তাদের কথা যে রাখা হয়নি তা নিয়ে কোনো অনুতাপ, ক্ষোভ বা মনোকষ্ট নেই। যারা তাদেরকে এ রকম জোকার বানিয়ে ফেলল তাদেরকে কোনো প্রশ্নও জিজ্ঞেস করে না।
আসলে মতলববাজ এই গোষ্ঠীটি দেশের সিভিল সোসাইটির বিরাট শক্তিকে সম্পূর্ণ অকেজো করে রেখেছে এবং জাতিকে আজকের এই বিপদে ফেলেছে। এদের কল্যাণেই এ দেশে এক-এগারো এসেছে এবং দেশ ও জাতিকে সম্ভবত ৪০ বছর পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। এদের বদৌলতে ও পৃষ্ঠপোষকতায় আইয়ুব খানের প্রেতাত্মা জাতির মাথায় আবারো চেপে বসেছে। ২০২১ সালে এ জাতিকে শুনতে হয়, গণতন্ত্রের আগে উন্নয়ন। সেই এক-এগারোর সময় থেকে শুরু হয়েছে।
এখনো সেই কাজ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিটি দলেই কিছু বসন্তের কোকিল থাকে। অনুকূল পরিবেশে এদের চেনা কষ্ট হলেও প্রতিকূল পরিবেশে এদেরকে সহজেই চেনা যায়। বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামোকে এমনভাবে তছনছ করা হয়েছে যে দলের ভেতর থেকে এ ধরনের একটা ‘গৃহপালিত বিএনপি’কে বের করে আনা মোটেই কঠিন নয়। কিন্তু এদের পথে মূল বাধা স্বয়ং বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার। কারণ তাকে বাগে আনতে না পারলে অন্য কাউকে বসালেও তিনি অন্য এক রাজনৈতিক ভাঁড় হয়ে পড়বেন। পরিস্থিতির চাপে পড়ে এ দেশের মানুষ মুখ বন্ধ করে রেখেছে, কিন্তু মগজ বন্ধ করে রাখেনি। মগজের কোষগুলো এখনো সক্রিয়। যেকোনো ড্রামা তারা ধরতে পারে। সময়ের বাঁকে বাঁকে রাজনৈতিক ভাঁড়কে এ দেশের মানুষ সহজেই চিনে ফেলে। কাজেই বিএনপির ভেতর থেকে নতুন এক এরশাদ কিংবা রাজনৈতিক ভাঁড় তৈরি করে সরকারের খুব একটা লাভ হবে না।
সরকার বাইরে থেকে স্বাভাবিকতার বেশ ধারণ করলেও ভেতরে ভেতরে একটা দারুণ অস্বস্তিতে রয়েছে। কারণ অবৈধতার একটা ভার রয়েছে। সেই ভারটিই অনুভূত হচ্ছে শাসক দলটির বিভিন্ন আচরণ ও উচ্চারণে। এদের কথাবার্তা অসংলগ্ন।
একটা সভ্য ও প্রায় শত বছর ধরে গণতন্ত্রের চর্চা করা একটা জাতিকে এরা সাব-হিউম্যান লেবেলের প্রাণী জ্ঞান করেছে। এর শাস্তি বা প্রতিফল আজ হোক বা কাল হোক এদেরকে পেতেই হবে। ইতিহাস এদের এই পাপকে কখনোই ক্ষমা করবে না।
যুগে যুগে স্বৈরশাসকেরা নিজেদের রক্ষা করার জন্য বাহিনী তৈরি করেছে। কিন্তু প্রয়োজনের সময় এই বাহিনী কোনো কাজে আসে না। এরা তখন নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ক্ষমতায় থাকতে এরা জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালায়। ফলে এদের ওপর জনতার রোষ বাড়তেই থাকে। নীরব জনগণ সুযোগ খুঁজতে থাকে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন, বিএনপির কি উচিত হবে অবৈধতার এই ভার মুক্ত করা?
অনেকেই ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ না করাকে বোকামি বলে মনে করছেন। এখানে একটা জিনিস লক্ষ করা দরকার। এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে। সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণকারী ফোরাম। ভুল হোক শুদ্ধ হোকÑ সেটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনার মন্তব্যটি লক্ষণীয়, ‘বিশ্বাস করুন আমরা ইচ্ছা করলেই এরশাদকে বিরোধী দল বানাতে পারতাম। বিশ্বাস করুন, একটু ইচ্ছা করলেই পারতাম।’ ইউটিউব থেকে সেই ভিডিওটি আরেকবার দেখে নিতে পারেন।
নামমাত্র হলেও তখন একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। তার পরও সেই নির্বাচনের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে তুলনায় ২০১৪ ছিল সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে। ২০১৪-তে এরশাদকে বিরোধী দলে বসিয়ে বিএনপিকে আট-দশটি সিট ধরিয়ে দিলে আসলেই কী করার ছিল, বরং আজ যে অবৈধতার ভার সরকারের মাথায় চেপেছে, তা তখন থাকত না।
কাজেই সামনের নির্বাচনের আগে নির্বাচন সহায়ক সরকার না এলে বিএনপির কখনোই উচিত হবে না সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। দলের কয়েকজন নেতার এমপি হয়ে একটু নিরাপত্তা ও আরামের ব্যবস্থা হলেও সারা দেশের মানুষ ও গণতন্ত্র মারাত্মক সঙ্কটে পড়বে। জোর করেই যদি ক্ষমতায় থাকতে চায়, তবে গা থেকে অবৈধতার ভারটি লাঘব করে বিএনপির ফায়দা কোথায়?
এই সরকারের পলিসি হলো, নিজেদের অবস্থান থেকে সরবে না। কিন্তু তাদেরকে গণতান্ত্রিক ডাকতে হবে। দশ ঘাটের জল খাবেন, পুরনো অভ্যাস বন্ধ করবেন না, অনুতপ্ত হবেন না। কিন্তু তাদেরকে বৈধতার সার্টিফিকেট বা স্বীকৃতি দিতে হবে। ভালো কাজ না করে শুধু ভালো কথা বলে এই সরকার পার পেতে চাচ্ছে। কথায় আর কাজে দূরত্ব বেড়েই চলছে।
বর্তমান এমপিদের জনগণ নির্বাচিত করেননি। এই এমপিরা ওবায়দুল কাদেরদের তৈরি করা সিইসি রকীবের ফ্যাক্টরিতে সৃষ্টি। এনালগ সিস্টেমে রকীবদের অনেক দুর্নাম শুনতে হয়েছে। এখন খেদমতের সামনে আসছে ডিজিটাল ভোটিং মেশিন। তখন এই এমপিরা আরো বড় আব্দুল হয়ে পড়বেন। কপালে আরো চড়-থাপ্পড় অপেক্ষায় আছে।
কাজেই শুধু বিরোধী দলকেই নয়, সরকারি দলের গণতান্ত্রিক অংশকে বিষয়টি নিয়ে ভাবা দরকার। একটি উত্তম সিস্টেম ধ্বংস করে খারাপ সিস্টেম চালু কারো জন্যই কল্যাণকর হবে না।
বিএনপি তথা সব বিরোধী দলের সামনে পথ এখন একটাই। তা হলো জনগণকে সম্পৃক্ত করা। অন্য কোনো সহজ পথ সামনে নেই। বিএনপির এই সার্বিক দৃঢ়তাই সরকারের বাড়াবাড়ির ফণা নোয়াতে পারে। নেতৃত্ব নিয়ে টেনশনের কিছু নেই। পুরনো ও টায়ার্ড নেতৃত্বের কিছু ঝরে পড়বে, যারা টিকে থাকবেন তারা আরো দৃঢ় হবেন। প্রয়োজনে আরো নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে।
এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবেন দেশনেত্রী।
এ দেশের মানুষ কামনা করে, তার জীবনের শেষ উচ্চারণটা থাকবে নিঃসন্দেহে কালেমা শাহাদত। কিন্তু এর আগের শব্দটি থাকবে,এই সরকার ‘অবৈধ’। নেত্রীর এই দৃঢ়তাতেই এ দেশে একদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ।