বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।এ কাফেলা থেকে বিদায় নিয়েছি ২০ বছর হলো। আমার জীবনের সোনালী সময় হচ্ছে ছাত্রশিবিরের সাথে সংযুক্ত থেকে কাটিয়ে আসা সংগ্রাম মুখর দিনগুলো। যেদিন শিবিরে যোগদান করি সেদিন কখনো ভাবিনি একদিন একাফেলার কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে হবে। যোগদানের সময় ইসলামী আন্দোলনকে জান্নাতে যাবার পথ হিসেবে মনে করেছি।আর শিবির সে কাজটি করছে বলেই শিবিরে যোগদান।আমার মতো লাখ লাখ তরুনের একই মনোভাব ছিল একাফেলায় যোগদানের সময়।
অনুপম চরিত্র গঠন , জীবন বদলে দেবার শিক্ষা আমরা পেয়েছি এ কাফেলা থেকে।দিশেহারা, বিভ্রান্ত , পথহারা মানুষকে শিবির দিয়ে যাচ্ছে আলোর দিশা।
জেল-জুলুম, শাহাদতের রক্ত পিচ্ছিল পথ বেয়ে শিবির এগিয়ে যাচ্ছে।এ অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করার সাধ্য কারো নেই।
প্রতি বছর ৬ ফেব্রুয়ারী আসলে আমি হারিয়ে যাই অসংখ্য স্মৃতিবাহী রক্তাক্ত ঘটনার মাঝে।
মনে পড়ে ১৯৯৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারীর কথা। মতিহার সবুজ চত্বর সেদিন অসংখ্য শিবির কর্মীর রক্তে লালে লাল হয়ে গিয়েছিল।ঐদিনই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অর্থনীতি শেষ বর্ষে ভর্তি হতে এসেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান।
সকাল থেকেই শিবিরের উপর হামলা চলছিল। শহীদ রবিউল ভাইয়ের শাহাদাত ও দু’শতাধিক শিবিরের নেতা-কর্মীর রক্তের বিনিময়ে ক্যাম্পাসের পরিস্হিতি আমাদের অনুকূল আসে।
আমি শহীদ হবিবুর রহমান হলের সম্মুখস্থ মাঠের একপ্রান্তে দাড়িয়ে বিধ্বস্ত ক্যাম্পাসের মর্মান্তিক দৃশ্যগুলো অবলোকন করছিলাম। একজন আমাকে এসে বললো মাঠের অপরপ্রান্তে একজন আহত অবস্হায় কাতরাচ্ছে । দৌড়িয়ে সেখানে উপস্হিত হলাম।তিনি যশোর থেকে এসেছেন - অর্থনীতিতে অনার্স পাস করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হতে ।আজই ভর্তির শেষ দিন। তিনি ভর্তিও হয়েছেন। এরপরই ক্যাম্পাসে মারামারি শুরু হয়।তিনি যাচ্ছিলেন জোহা হলে আমার সাথে দেখা করতে। ঐ সময় আমি হল সংসদের ভিপি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি। যাত্রাপথে তিনি আহত হন। তার বুকে ব্রাশ ফায়ার করা হয়েছে। তার বুক ঝাঁঝড়া হয়ে গিয়েছে।রক্তে তার জামা ভিজে গিয়েছে।তার শেষ বাক্যছিল “বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতির সাথে আমার সাক্ষাত হলোনা।আমি এসেছিলাম মাষ্টার্সে ভর্তি হতে। আল্লাহ আমাকে ভর্তি হবার সুযোগ দিয়েছেন। তেমনি শহীদ হিসেবে আমাকে কবুল করেছেন।হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকো। আমার বাবা-মাকে ধৈর্য ধরার তৌফিক দাও।”
তার রক্তাক্ত শরীরে স্পর্শ করার সাথে সাথে তিনি একবার চোখ মেলে তাকালেন। তার রক্তে আমার জামা কাপড় লাল হয়ে গেলো ।তার রক্ত মাখা হাত স্পর্শ করতেই বললেন “ আমার আব্বাকে আমার সালাম পৌছে দিয়ে বলবেন আমি জান্নাতের সিড়িতে তার জন্য অপেক্ষা করবো।আশহাদুআল্লা.......,”
সেই ৬ ফেব্রুয়ারী আমাকে ডাক দিয়ে যায় শহীদের রক্ত ঝরা পথে তীব্র গতিতে ছুটে চলতে। এ দিনটিতে আমি সীমাহীন প্রেরনায় উজ্জীবিত হই। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি অতীতের ঘটনাবহুল জিন্দেগীর দিকে।অপরিসীম চেতনা আর স্বস্তিতে হৃদয়টা ভড়ে উঠে। শহীদের রক্তে ভেজা বংলায় দ্বীনের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখে আপ্লুত হই।
৬ই ফেব্রুয়ারিতে আমার অন্তরের অন্তস্হল থেকে কামনা !লক্ষ তরুনের হে প্রিয় কাফেলা!এগিয়ে চলো!জাতি তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের চলার পথকে সহজ করে দিন । আমীন।। মতিউর রহমান আকন্দ
সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাএশিবির,
সিনিয়র এ্যাড়ভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টCopy post
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন