বাংরাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আমার দুই ছেলের জন্মদিন কখনি করিনি। একটু বুঝতে শিখলে দাদা দাদুসহ বসে বুঝিয়ে বলেছি -কেন আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন এখানে তোমাদের কি কাজ করতে পাঠিয়েছেন। আর কিভাবে আল্লাহর কাছে আবার যেতে হবে আমাদের সেই আসল বাসস্থানে। তাই আজ একটা ধন্যবাদ আল্লাহ কে। আর একটা ধন্যবাদআব্বু আম্মুকে। তারাও আব্দার ধরেনি কেন জানি। কিন্তু মেয়েদের বেলায় হলো অন্যরকম। তাদের বাবার কথা হলো ওদের মন ছোট যাতে না হয়। কেক খেতে তো অসুবিধা নেই মোম না জ্বাললেই হলো। মেয়েরা অন্যবাড়ী যাবে ভবিষ্যত জাতি গড়ে তুলবে তাদের মন হতে হবে উদার।
দু'ছেলেরি জন্মতারিখ ১৮। একজন মার্চ ১৯৮৪। অন্যজন ১৮ অক্টোবর ১৯৭৯। কিন্তু একজন সুস্থ স্বাভাবিক - বড় ছেলে সালমান। কিন্তু ছোট ছেলের বেলায় কি যে বিপত্তি ঘটলো - এক প্রিম্যাচিউরড বেবী। অতি ছোট্ট আকৃতি। বাহ্যিক ভাবে সব অংগ প্রতংগ ঠিকঠিক হয়েছে। বাট কিছুই ম্যাচিউরড হয়নি। শ্বাস নিতে পারছেনা অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। নাক বন্ধ, গলায় ঘড় ঘড় করছে। সাকার দিয়ে সাক করা হচ্ছে। মাথার হাড় পুরোটা কাভার করেনি । খাওয়াতে গিয়ে দেখা গেল সে চুষতে পারেনা গিলতেও পারেনা। তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ইনকিউবেটর দরকার। কিন্তু তখন ইনকিউবেটর কোথায় পাব? অক্সিজেন দিয়ে গলা নাক পরিস্কার করে দুধ সাক করে চামুচ দিয়ে আধা চামচ দুধ দুইতিনবার দিয়ে গলাটা কোন মতে ভিজিয়ে রাখা হত।শোয়ানো যেত না। তিন দিকে বড় বালিশ দিয়ে দাড় করিয়ে রাখার গত রাখতে হতো। এতো ছোট ছিল যে একহাতেই আমি তাকে তুলে নিতাম। নিজামী আপা বলতেন ঃ ও না হয় একটু ছোটই হয়েছে তাই বলে তুমি একহাতে তুলবা?
আমি কেবলী এম এ শেষ করে ছাত্রীসংস্থা র দায়িত্বমুক্ত হয়ে বৃহত্তর অংগনে পা দিয়েছি। দায়ীত্বের ভার কমেছে - কাজ বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে চলে এলাম আমরা আজিমপুর ছেড়ে আজকের এই মীরপুরের বাসায়।নুতন এলাকাকে গড়ে তোলা। দৌড়াদৌড়ি ছুটাছুটি আর ওর যত্ন এক সাথেই চলেছে । তিন বছর তক আরমানকে আমি এক মুহুর্তে র জন্য কাছছাড়া করতে পারিনি। খাবারের আগে এক মহা প্রস্তুতি নিতে হত আবার প্রতিবার খাওয়ানের পড়েই বমি করে মাখিয়ে দিত সব। কোলে নিয়ে মিটিং আবার কোলে নিয়েই সাধারন সভার বক্তৃতা। আর তার মাঝেই আবার হয়তো বমি করে ভাসিয়ে দেয়া। জ্বর থাকতো সবসময়।অনেকডাক্তার দেখানো চিকিৎসার চেস্টা করেছি। ডাক্তার বলতেন ঃ ও আস্তে আস্তে বড় হবে আর এক্টু করে ভাল হবে। মানে তার যন্ত্রপাতি গুলো পুরোম্যাচিউরড না হলে এগুলো কাজ করতে পারছেনা। তাই সুস্থ হতে পারছেনা। অসুধের চেয়ে আপ্নার মমতা যত্নই ওকে সুস্থ করে তুলবে। তাই না ডাক্তার ছাড়া চলতে পারতাম না আর না তাকে কারো কাছে দিতে পারতাম। দিবো কি কেউ আগ্রহ করে কোলেও নিতো না। একদম একটা বেবুনের মত দেখতে ছিল। মাথায় চুল আশের মত কয়েকগাছি।গায়ে গোশ নেই। হাত পা শুকনা। গলাটা চিকন। মাথা এক্টু বড়। তা আবার অনেক ফর্সা হওয়ায় চামড়ার নীচে যে হাড় এখনো ফাঁকা হয়ে আছে তা দেখা যেত। তাই সবাই ভয় পেত। মেজ আপা বলতেন ঃ আয়েশা কেমন করে ওর ছেলেটাকে আদর করে? আমার তো ভয় লাগে.........
নাসের ভাই বললেন ওকে নিয়ে হজ্বে যাও। তাই করলাম আলহামদুলিল্লাহ।সুস্থতার এক প্রলেপ যেন চেহারায় । যদিও তাকে নিয়ে হজ্ব! কি যে এক দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত ছিল ভাবলে অবাক হই।আল্লাহ আমাদের আকুতি কবুল করলেন।সুস্থ হতে লাগলআলহামদুলিল্লাহ।
দাদাভাই তাকে আপনা ভাই ডাকতেন তার বুদ্ধিমত্তার জন্য। সেই বয়সেই সে বলতো ঃ আমরা বলি " লাব্বাএক আল্লাহুম্মা " ওলা বলে " লাব্বা ইক আল্লাহুম্মা। " কি ভাবে সে আরবী উচ্চারণের পার্থক্য খেয়াল করেছে! আল্লাহু হামদান কাছিরা।
আস্তে আস্তে পড়াশুনা শুরু স্কুলে যাওয়া আর এক জিহাদ। কেমন করে যে স্কুল জীবন পার হয়েছে আল্লাহ ভাল জানেন আর জানেন তার ঘনিসঠ শিক্ষক শিক্ষিকাগন -তাদের জন্য দোয়া অবিরাম। জনাব সুলাইমান স্যার তো এমন অতিস্ট হয়েছিলেন ওর দুস্টামীতে আর আমিও আর নালিশ নিতে পারছিলাম না। প্রিন্সিপ্যাল আপার সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।
আল্লাহ রহমান ও-লেভেলে এসে কেমন করে পাল্টে ভদ্র মাইডিয়ার ছেলে হয়ে গেল! আর আমার চিন্তা করতে হয়নি শিক্ষা- সাংস্কৃতিক -সাংগঠনিক -লন্ডন বার- ঢাকা বার হয়ে মিশর হয়ে আরবী & হেফজুল কুরআন তিন জুজদ সব মিলে আমার নয়ন শীতল করা সন্তান........ আলহামদুলিল্লাহ আবাদান আবাদা। আল্লাহ সুবহান নিজ হাতে তৈরী করে বাবার খেদমতে লাগালেন। সেটাই হয়ে গেল তার অপরাধ!? অস্ত্রবাজী নয়, মারামারি নয়, চাঁদাবাজী নয় এমনকি রাজনীতিও নয় আইনীনির্যাতনের মুকাবিলা আইন দিয়েই তো করতে চেয়েছিল সে! আর সে অপরাধের জন্য তাকে তার বাবার জানাজাটাও পড়তে দেয়া হলনা। দেখতে দেয়া হলনা শেষ বারের মত প্রিয় মুখ। একমুঠো মাটিও দিতে পারলোনা কবরে? হে আল্লাহ ৩২ বছরের টগবগে ছেলে আমার! নাড়ী ছেঁড়া আপনার চেয়ে আপন এ ধন কেমন করে কোথায় না জানি কত
কঠোরতারসাথে দমিয়েঅসহায় করে রেখেছে। আমার বহু যত্ন আদরে গড়া। শ্রমে ধৈর্যে মমতায়বাড়িয়ে তোলা তিল তিল করে মানুষ করা। কতইনা অত্যাচার সইতে হচ্ছে তাকে! কত নিপীড়ণে আছে কে বলবে আমাকে সে কথা? কে জানাবে - অযত্নে আবার শুরু হয়েছে কিনা সে শ্বাস কস্ট?শরীরটা বেড়ে গেলেও সেই অপুস্ট শিশু যে কোন অবহেলা একদমই সইতে পারেনা - অসুস্থ হয়ে পরে। কত অনাচার আর অবহেলা সহ্য করে করে সে কী নিদারুন কাটাচ্ছে তার দিন রাত কে বলবে আমাকে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন