জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ:: কার কথা কে শোনে! এমন অবস্থা এখন কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়াতে। রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের নামে চরম বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশনা না মেনে রাস্তার ধারে যেখানে সেখানে ত্রাণ বিতরণ করায় দীর্ঘ যানজটে জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার টেকনাফ সড়কে রোহিঙ্গাদের বিক্ষিপ্ত চলচল, হ-য-ব-র-ল ত্রাণ ব্যবস্থাপনায় দুর্ঘটনার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা ও পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলা পরবর্তী সহিংসতায় নির্যাতিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এখনো অনেক রোহিঙ্গা সীমান্তের ওপারে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। নিজ দেশে নির্যাতিত নিপীড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা এখন টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং গ্রামে গঞ্জে বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কেউ ক্যাম্পে, কেউ পাহাড়ে, কেউ গ্রামে গঞ্জে, কেউ বা রাস্তার ধারে বসে বসে দিন রাত পার করছে। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে খেয়ে না খেয়ে লাখো রোহিঙ্গা মানবেতর জীবন যাপন করছে। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্বয়ং সরকার প্রধান থেকে শুরু করে দেশের সব শ্রেনীর মানুষ। রাজনীতিবিদ ও কুটনীতিকরা দলে দলে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের স্বচক্ষে দেখতে ছুটে আসছেন। সাধ্যমত সকলে সহযোগীতাও করছেন।
তবে রোহিঙ্গারা কিছু পাওয়ার আশায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের দু’পাশে বসে থাকে। কোন গাড়ী দেখলে তারা দৌঁড়ে আসে। কার আগে কে নিতে পারে তাদের মধ্যে এমন প্রতিযোগীতা চলে। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন চলন্ত গাড়ী থেকে বিক্ষিপ্তভাবে ত্রাণের প্যাকেট ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এসময় দৌঁড়াদৌড়িতে অনেক রোহিঙ্গা হতাহতও হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার অভাবে গত দুই দিনে তিন রোহিঙ্গা নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রোহিঙ্গা যুবকরা নারী এবং শিশুদের কাছ থেকে ত্রাণের প্যাকেট ছিনিয়ে নিচ্ছে। অনেকে ত্রাণ দেওয়ার নামে ফটোসেশন করতে গিয়ে সড়কে গাড়ী দাঁড় করিয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে নিছক অপ্রয়োজনীয় কিছু বিতরণ করেই যাচ্ছে। গাড়ী দেখলে ছুটে আসা রোহিঙ্গাদের হুড়াহুড়িতে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজট লেগেই থাকে। এ কারণে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে যান চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সীমান্তে ত্রাণ বিতরণে চরম হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের মাঝে যত্রতত্র ত্রাণ না দিতে জেলা প্রশাসন নির্দেশনা দিলেও কেউ মানছেন না। আগ্রহী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্টদের জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে জমা দিতে বললেও কেউ কারো কথা শুনছেন না। “কে শোনে কার কথা” উখিয়া-টেকনাফে রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে চলছে এমন অবস্থা। হ্নীলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সি: সহ সভাপতি বাহাদুর শাহ তপু জানান, লোক দেখানো ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ করে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে সাধ্যমত খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে গাড়ী দিয়ে রাস্তার ধারে বসে থাকা এবং গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে তিনি লোকজনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের টেকনাফ উপজেলা সভাপতি ও নাফ মেরিট স্কুলের অধ্যক্ষ মমতাজুল ইসলাম মনু জানান, ত্রাণ বিতরণের নামে সড়কে চরম অব্যবস্থাপনা দেখা যাচ্ছে। ত্রাণের নামে বিশৃংখলা এবং জনদুর্ভোগ বাড়ছে। তিনি সড়কের উপর সব ধরণের ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। টেকনাফ উপজেলা ত্রাণ সেলের সমন্বয়ক সহকারী কমিশনার (ভুমি) প্রণয় চাকমা জানান, যত্রতত্র ত্রাণ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। রোহিঙ্গাদের ত্রাণ বিতরণের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে টেকনাফেও একটি ত্রাণ সেল খোলা হয়েছে। ঐ সেলের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তায় সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহবান জানান। জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন জানান, যেখানে সেখানে ত্রাণ দেওয়া যাবেনা। জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ দেওয়া যাবে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন