বাংলঅদেশ বার্তা ডেস্কঃ ‘দেশে প্রতি ৮ জন মহিলার ১ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২২ হাজার মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে প্রায় ১৭ হাজার মারা যান। মহিলাদের জন্য যেসব রোগ আতঙ্ক হিসেবে চিহ্নিত, স্তন ক্যান্সার অন্যতম। ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের অবস্থান দ্বিতীয়। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ স্তন ক্যান্সার রোগী শনাক্ত হয়। ১৫ থেকে ৯০ বছর বয়সের মহিলাদের স্তন ক্যান্সার হতে পারে। এর মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ বছর বছরের মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, প্রায় শতকরা ৩৩ ভাগ।’
গত ৫ অক্টোবর ২০১৬, উত্তরায় আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গনে ‘স্তন ক্যান্সার সচেতনতা মাস’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এ তথ্য জানান।
অপরদিকে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটাল এর ২০০৫-২০০৭ এর ক্যান্সার রেজিস্ট্রি রিপোর্ট এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মহিলাদের স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর হার শতকরা ২৫.৬ ভাগ। রিপোর্টে দুঃখের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে যে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
স্তন ক্যান্সার কী : জীবদেহ অসংখ্য সেল বা কোষদ্বারা গঠিত। কোষগুলো নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মিতভাবে বিভাজিত হয়ে নতুন কোষ জন্ম নেয়। জীবদেহে কোষগুলো নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে। যদি কোন করণে কোষগুলো অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়, বাড়তে থাকে, ত্বকের নিচে চাকার মত বা দলার ন্যয় ফুলে যায়। স্তনের কোষগুলো যদি অনিয়মিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়, অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে, তখন স্তনে চাকার মত বা দলার ন্যয় স্ফীতি দেখা যায়। যদি এই স্ফীতি বিনাইন নাহয়ে ম্যালিগন্যান্ট হয়, তাহলে ক্যান্সারে পরিণত হয়। অর্থাৎ স্তনের কিছু কোষের অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া ও বেড়ে ওঠাই হল স্তন ক্যান্সার।
স্তন ক্যান্সারে যারা বেশি ঝুঁকিপূর্ণস্তন ক্যন্সারে পুরুষ অপেক্ষা মহিলা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
যে কোন মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় কিছু মহিলা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে।
অবিবাহিতা ও নিঃসন্তান মহিলা বিবাহিতা ও সন্তানের মা অপেক্ষা স্তন ক্যান্সারে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ।
যে সব মহিলা সন্তানকে বুকের দুধ পান করান নি, তাদের স্তন ক্যন্সারের ঝুঁকি বেশি। একাধারে দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন করলে স্তন ক্যন্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। জীন বা বংশগত কারণ, অর্থাৎ মা বোনসহ বংশে কেউ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তারাও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। বেশি মোটা ও মেদবহুল মহিলা। যে সব মহিলা প্রথম সন্তান নিতে দেরি করে বেশি বয়সে প্রথম সন্তান নেয়। বিশেষ করে ৩০ বছর বয়সের পর প্রথম যারা প্রথম মা হয়েছেন।
যে সব মহিলা ধূমপান করে, অ্যালকোহল গ্রহণ করে। ধূমপান ও মাদকাসক্তি স্তন ক্যান্সারে ঝুঁকি বাড়ায়। যদি কারো একটি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তার অপরটিও আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে।
‘ স্লিম ফিগার’ করতে গিয়ে অনেকে অতিরিক্ত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিটি মানুষের একটি স্বাভাবিক ফিগার থাকে। অতিরিক্ত মোটা হওয়া যেমন ক্ষতিকর, তেমনি স্বাভাবিক খাবার বাদ দিয়ে বা আহার একেবারে কমিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত স্লিম হওয়ার চেষ্টা করলে স্তনে ক্যান্সার হবার ঝুঁকি থাকে।
১৫ থেকে ৯০ বছরের যে কোন মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। তবে ৫০ উর্ধ্বে বয়সের নারী অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৮০ভাগেরই বয়স ৫০ এর উপর।
বর্তমানে সারা বিশ্বে দ্রুত বিস্তারলাভকারী একটি জটিল ও মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যার নাম স্তন ক্যান্সার। স্তন ক্যান্সারে কি শুধু মহিলারা আক্রান্ত হয়? পুরুষকি এক্ষেত্রে নিরাপদ? না, কেউই নিরাপদ নয়। নারী ও পুরুষ উভয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, যুক্তরাজ্যে যেখানে প্রতিবছর ৪১ হাজার মহিলা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, সেখানে পুরুষ আক্রান্ত হয়েছে ৩০০ জন। সুতরাং এখন মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরও স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন