বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ আজ ১৭ অক্টোবর সোমবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সম্মুখে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচিত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ শপথ গ্রহণ করেন। তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাওলানা এটিএম মাসুম।
জামায়াতে ইসলামীর রুকনগণ গোপন ভোটের মাধ্যমে ২০১৭-২০১৮-২০১৯ কার্যকালের জন্য জনাব মকবুল আহমাদকেআমীর হিসেবে নির্বাচিত করেন। নির্বাচিত আমীর হিসেবে শপথ নিয়ে তিনি জামায়াতের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর দোয়া কামনা করে নিম্নোক্ত বক্তব্য পেশ করেনঃ-
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় দেশবাসী,আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আজ দেশের এক কঠিন ক্রান্তিকালে আপনাদের সামনে উপস্থিত হতে পেরে প্রথমেই আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। সেই সাথে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যে সকল জনগণ ও বীর মুক্তিযুদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ ভুমিকা ও অকৃত্রিম ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-স্বার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি তাদের কথা আজ গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি। বিশেষভাবে স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম, জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি উসমানীসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল অবিসংবাদিত নেতাদের আমি স্বশ্রদ্ধচিত্তে স্বরণ করছি।
আজকের এই মুহূর্তে গভীর শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, সাবেক আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক নায়েবে আমীর মাওলানা আবুল কালাম মোহাম্মদ ইউসুফ, সাবেক নায়েবে আমীর অধ্যাপক এ কে এম নাজির আহমাদ, সাবেক সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক দুই সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মাদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সাবেক সদস্য মীর কাসেম আলীসহ সেই সকল শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে, যারা আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে একটি ইনসাফপূর্ণ ও কল্যাণমুখী সমাজ বিনির্মাণের জন্য আজীবন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন। আর একারণে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রতিহিংসামূলকভাবে তাদের পাঁচজনকে ফাঁসির কাষ্টে ঝুলিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। দুইজন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে জুলুমের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমি মহান আল্লাহ তাআলার দরবারে তাদের শাহাদাত কবুল করার জন্য একান্তভাবে দোয়া করছি। পাশাপাশি আমাদের যে সমস্ত সহকর্র্মী ভাই ও বোনেরা কর্তৃত্ববাদী সরকারের নজিরবিহীন নির্যাতনের শিকার হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে আমি তাদেরও সকলের শাহাদাত কবুল করার জন্য বিগলিতচিত্তে দোয়া করছি।
আমি একান্ত শ্রদ্ধার সাথে আরও স্মরণ করছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর পাঁচবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য জনপ্রিয় জননেতা মাওলানা আব্দুস সোবহান এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও বিশ্ববরেণ্য মোফাসসিরে কোরআন সাবেক এমপি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামসহ সে সকল নেতাকর্মীদের, যাদেরকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘদিন অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে জামায়াত, ছাত্র শিবির, ছাত্রী সংস্থাসহ বিরোধী দল ও মতের হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হয়ে বাড়িঘর ও কর্মস্থল ছেড়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অসংখ্য নেতাকর্মীকে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই গুম, খুন ও গুরুতর আহত হয়ে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আমি আহতদের সুস্থতা, ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সম্মান ও সমবেদনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। গুম হওয়া ব্যক্তিদেরকে অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের সকলের ত্যাগ ও কুরবানীকে কবুল করে তাদেরকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন এই দোয়া করছি। একই সাথে ফিলিস্তিন, মিশর, সিরিয়া, লিবিয়া, ইরাকসহ বিশে^র বিভিন্ন রাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কবলে পড়ে যে সকল মানুষ হত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন, তাদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। কাশ্মিরের জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবিকে যৌক্তিকভাবে মেনে নিয়ে স্থায়ী শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি। মায়ানমারের নিপীড়িত মুসলমানদের ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সে দেশের সরকার এবং বিশ^ সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সহকর্মী ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সকলেই জানেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক পন্থায় পরিচালিত একটি আদর্শবাদী দল। দেশের সর্বত্র বিরাজমান শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতেও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসীম রহমতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমীরে জামায়াতের নির্বাচন ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এ নির্বাচনে জামায়াতের সদস্যগণ আমাকে আমীর নির্বাচিত করেছেন। আমি আশা করেছিলাম আমার সহকর্মীবৃন্দ অধিকতর যোগ্যতা স¤পন্ন অন্য কোন ভাইকে এ মহান কাজের জন্য বাছাই করে নেবেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত এ দায়িত্ব আমার উপরেই এসেছে। আপনারা অবগত আছেন যে, বিগত ছয় বছরের অধিক সময় আমার উপর ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব ছিল। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অসীম রহমত এবং আপনাদের দোয়া ও আন্তরিক সহযোগীতায় অনেক জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও আমি এ দায়িত্ব পালনের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। জামায়াতে ইসলামীর আমীরের এ কঠিন দায়িত্ব হতে আমি নিজেকে মুক্ত রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইচ্ছায় সংগঠনের সদস্যদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে আমার উপর আমীরের দায়িত্ব আসায় আমি আজ মহান আল্লাহর রহমত ও সাহায্যের উপর নির্ভর করে আপনাদের সামনে আমীর হিসাবে দায়িত্বের শপথ গ্রহণ করছি। সেই সাথে এই কঠিন জিম্মাদারী পূর্ণ আমানতদারীর সাথে যথাযথভাবে পালনের শক্তি ও সক্ষমতার জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট দুই হাত তুলে নিবেদন করছি। আমার প্রিয় দেশবাসীসহ জামায়াতের সকল স্তরের দায়িত্বশীল, সদস্য, কর্মী, সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের আন্তরিক ও স্বতঃস্ফূর্ত পরামর্শ এবং দোয়া কামনা করছি।
আজকের এই শপথ অনুষ্ঠানে আমি অকুন্ঠচিত্তে বলতে চাই, অতীতে আমার জীবনে বড় কোন পার্থীব চাওয়া-পাওয়া ছিলনা। এখনও নেই। মহান রব আমাকে যদি তার দ্বীনি আন্দোলনের জন্য কবুল করে থাকেন, তবে এটাই হবে আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমি আপনাদের মধ্যে কোন বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী নই, তবুও আপনারা আমার উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে দায়িত্বের যে মহান আমানত সোপর্দ করেছেন, তা যেন আমি যথাযথ পালন করতে পারি। আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ও যাবতীয় চাহিদার উপর সংগঠনের স্বার্থ এবং দেশ ও জাতির প্রয়োজনকে স্থান দিতে পারি, সেই জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের খাস রহমত এবং আপনাদের দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করছি। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, এ মহান সংগঠনের যেকোন পর্যায়ের দায়িত্বের জন্য পরকালীন জীবনে আল্লাহ পাকের নিকট জবাবদিহি করতে হবে। এ দায়িত্ব আখেরাতে নাজাতের উসিলাও হতে পারে, আবার শাস্তির কারণও হতে পারে। তাই আমি আবারও আপনাদের সকলের নিকট দোয়া চাই যেন এ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলা আমাকে আখেরাতে নাজাত দান করেন, আমীন।
সংগ্রামী দেশবাসী,
আমি আজ অত্যন্ত উদ্বেগ এর সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের প্রিয় জন্মভুমি এক কঠিন সংকটের মুখে নিমজ্জিত। দেশে জনগনের ভোটে নির্বাচিত সরকার না থাকায় গণতন্ত্র অবরোদ্ধ ও মানবাধিকার ভুলুন্ঠিত। জনগনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে ইসলামী দল সহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে নগ্নভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে কার্যত একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিনত করা হয়েছে। সন্ত্রাস ও চরমপন্থা দমনে সরকার ব্যর্থ হওয়ায় জনগনের মধ্যে হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। গনমাধ্যমের কন্ঠরোধ, অপসংস্কৃতির সয়লাব ও নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারন করেছে। গুম, খুন, নারী ও শিশু নির্যাতন, মাদক ও চোরাচালান ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। দুর্নীতি , স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, লুটপাট, দলীয়করন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অনৈক্য, মিথ্যাচার ও দমন পিড়ন ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সংখ্যালঘু সম্পদায় ও আজ সরকারী দলের দুবৃত্তদের লুটপাট, দখলদারিত্ব ও নির্যাতনের কারনে অনিরাপদ এবং অতিষ্ট। দারিদ্র, বেকারত্ব, মেধার অবমূল্যায়ন, বৈষম্য, নিত্যপন্যের বাজারে অস্থিরতা জনজীবনকে নাবিশ্বাস করে তুলেছে। দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্টান ও ব্যবসা বানিজ্যের অঙ্গন গুলো সন্ত্রাসী ও চাদাবাজদের অভয়ারণ্যে পরিনত হয়েছে। এক কথায় মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যত নিয়ে গোটা জাতি আজ উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাঠাচ্ছে।
এমনি প্রেক্ষাপটে জামায়াতে ইসলামীর ন্যায় একটি দায়িত্বশীল ও জনগনের প্রতিনিধিত্বকারী দলের আমীর নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহনকালে সকলের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, এদেশটি আমাদের সকলেরই। দেশে বিরাজমান সমস্যা ও সংকটের সমাধান আমাদের সবাইকে মিলেই করতে হবে। কোন একটি দলের পক্ষে কিংবা একা সরকাররে পক্ষ্যে এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। দল ও মতের উর্ধ্বে উঠে সকলের সাথে আলাপ আলোচনা করে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে চলমান সংকট ও সমস্যা সমাধানের উদ্যেগ গ্রহনের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি। আর এজন্য সকল দল ও পক্ষের অংশগ্রহনে একটি সফল জাতীয় সংলাপের কোনই বিকল্প নেই। তবে জাতীয় সংলাপকে সফল করতে হলে প্রয়োজন সংলাপের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। সে লক্ষ্যে জামায়াত সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, আলেম উলামা, দেশপ্রেমিক বিবেকবান সাংবাদিক নের্তৃবৃন্দসহ নাগরিকদের বিরোদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা ও হুলিয়া প্রত্যাহার করতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল নিপিড়ীত বন্দিদেরকে মুক্তি দিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে পুলিশি হয়রানী ও দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে। দেশের স্থিতিশীল ও গনতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্থান্তর করতে হবে। একই সাথে অতীতের কোন রাজনৈতিক বিষয়কে অজুহাত না বানিয়ে সকল দু:খ, কষ্ট ও বেদনাকে ভ’লে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সম্মানিত দেশবাসী,
আমাদের প্রিয় জন্মভুমি বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। প্রাকৃতিক, খনিজ ও মৎস্য সম্পদ সহ মানব সম্পদে ভরপুর প্রিয় এ্ই দেশ। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য দরকার সুশাসন ও সুবিচারপুর্ন সমাজ এবং সততা, নৈতিকতা ও মৌলিক মানবীয় যোগ্যতা সম্পন্ন মেধাবী এবং দক্ষ দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই কাঙ্খিত মানের নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে স্বাধীনতরা ঘোষনাপত্রে বর্ণিত মূলনীতি ও ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণধর্মী সমাজ বিনির্মানের জন্য কাজ করছে। দেশের বিদ্যমান পরিবেশ পরিস্থিতি সহ আঞ্চলিক, আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সেই কাঙ্খিত জনকল্যানমূলক সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে জামায়াত তার রুপকল্প হিসাবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করছে। ইনশাআল্লাহ যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্য, গনতন্ত্র, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা গভীরভাবে আশাবাদি। জাতি, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণী ও পেশার মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও মুক্তি অর্জিত হবে। ’সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি শত্রুতা নয়’, এই নীতির ভিত্তিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো সহ বিশ্বের শান্তিকামী সকল রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক এবং বাংলাদেশের জাতীয়স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে রাষ্ট্র সমুহের সাথে সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে পারস্পারিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মসহ দেশের জনগনের কাঙ্খিত উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্টার স্বপ্ন পুরন হবে, ইনশা-আল্লাহ।
প্রিয় সহকর্মী ভাই ও বোনেরা,
বাংলাদেশের রাজনীতির অনেক উত্থান-পতন ও ইসলামী সমাজ বিনির্মানে কঠিন পথ অনুসরন করে জামায়াতে ইসলামী আজকের অবস্থানে এসে পৌছেছে। সরকারের জুলুম-নির্যাতনের ফলে জামায়াতের প্রতি জনগনের আস্থা ও প্রত্যাশা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। জামায়াত বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য যে সুবিচারপুর্ন কল্যাণমুখী সমাজ বিনির্মান করতে চায়, তার জন্য প্রয়োজন প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সর্বস্তরের পরিবর্তন সাধন। নিচক সমাজের উপরি কাঠামোতে পরিবর্তন এনে কাঙ্খিত ইসলামী সমাজ বিনির্মান অসম্ভব। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে সংগঠনের সর্ব পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও সহকর্মীগন যাতে সমাজে যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন তার উপযোগী করে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য কুরআন-হাদীসের চর্চা বাড়াতে হবে। ইসলামী ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে। মজবুত ঈমান, উন্নত আমল ও নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে। দ্বীনের প্রকৃত দায়ী হিসাবে সমাজের মানুষের নিকট নিজেদেরকে ইসলামের রোল-মডেল এবং সত্যের স্বাক্ষ্য হিসাবে উপস্থাপন করতে হবে। দরদপূর্ন মন নিয়ে সুখে-দু:খে মানুষের পাশে দাড়াতে হবে। আমাদের মূল পরিচয় দায়ী ইলাল্লাহ। প্রত্যেক জনশক্তিকে স্ব-উদ্যেগে দাওয়াতি কাজ, কর্মী গঠন এবং নিজেদের পরিবার গঠনের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ব্যক্তিগত যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সকল প্রকার সাংগঠনিক কর্মসূচিকে মান সম্মত ও সময়োপযোগী করতে হবে। আমাদের কার্যক্রমের সাথে জনগনকে আরও ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করে সংগঠনকে জনগনের দলে পরিনত করতে হবে। এজন্য জনশক্তির মাঝে গনমুখী ও ভারসাম্যপূর্ন চরিত্র বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক নেতৃত্ব তৈরির প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জাতীয় সংহতি ও ভৌগলিক অখন্ডতার চেতনা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ব হয়ে দেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভোমত্ব রক্ষায় যথাযথ ভুমিকা পালন করতে হবে।
দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দায়িত্বশীলদের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এসময় যার উপরে যে সাংগঠনিক দায়িত্ব অর্পিত হবে, তা যথাযথভাবে পালনের জন্য সদা সচেতন থেকে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও নিষ্টার পরিচয় দিতে হবে। নেতৃত্বের সামান্য ভ’ল সংগঠনকে বড় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। ইসলামী আন্দোলনের যেকোন দায়িত্ব আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন আমানত। এ দায়িত্বের জন্য মহান আল্লাহ পাকের কাছে জবাবদিহির তীব্র অনুভুতি অন্তরে লালন করতে হবে। দুনিয়াতেও সর্ব পর্যায়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে সংগঠনের অভ্যন্তরে পারস্পারিক পরামর্শ ও গঠনমুলক সমালোচনার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সাংগঠনিক পরিবেশ সুন্দর ও উন্নত রাখার স্বার্থে মতের কুরবানী ও উদারচিত্তে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। দায়িত্বশীলদের উত্তম ব্যবহার ও উদার মনের পরিচয় দিতে হবে, যেন সহকর্মীগন গঠনমুলক সমালোচনা, ভুল-ত্রুটি সংশোধন ও সুপরামর্শ দানে উৎসাহ বোধ করে। সংগঠনের সদস্য-কর্মীদের মধ্যে ইনসাফপুর্ন আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের মধ্য ছোট-খাটো মতপার্থক্য পরিহার করে ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বাব¯থায় ইস্পাত কঠিন ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
আমাদেরকে একথা সব সময়ই মনে রাখতে হবে যে, আমাদের জীবনে পার্থিব সফলতা কোন বড় বিষয় নয়, আখেরাতের নাযাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টিই প্রকৃত সাফল্য। এজন্য দ্বীনের প্রয়োজনকে ব্যক্তিগত কাজ ও দুনিয়াবি স্বার্থের উপরে স্থান দিতে হবে। সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত সকলকে ইসলামের নামে যেকোন ধরনের চরমপন্থা ও সন্ত্রাসের বিরোদ্ধে জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কঠোরভাবে অনুসরন করতে হবে। সারা দুনিয়ার সকল ধর্মাবলম্বীদের জামায়াতে ইসলামী সম্মান ও মানবিক দৃষ্টিতে দেখে। তাই আমরা রাজনীতি কিংবা ধর্মের নামে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও নিরীহ মানুষ হত্যা এবং জুলুম নির্যতনের অবসান চাই। একই সাথে উদার দৃষ্টিভঙ্গি এবং মানবিক আচরন দিয়ে আমরা সকল প্রকার বিরোধীতার মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দল, মত, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা দেশ-বিদেশের সকল শান্তিকামী মানুষের মঙ্গল কামনা করি।
পরিশেষে আমি একথা বলে আমার বক্তব্যের সমাপ্তি টানতে চাই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত অভিভাবক। তাঁর সাহায্য ছাড়া এ আন্দোলনের সফলতা অর্জন সম্ভব নয়। তাই আমাদেরকে রাব্বুল আলামীনের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের মৌলিক এবাদতের পাশাপাশি নফল এবাদতের প্রতি গভির নজর দিতে হবে। তাহলে অতীতের মত আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার করুনা ও সাহায্য আসবে এবং আমরাও আখেরাতের সাফল্য এবং দুনিয়ার বিজয় অর্জনে সক্ষম হবো ইনশাহ্ আল্লাহ।
আসুন আমরা সকলেই নিজেদেরকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসাবে গড়ে তুলি এবং ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে নিজের জীবনের লক্ষ্য- উদ্দেশ্য হিসাবে খালেস ভাবে গ্রহন করি। এপথে যত কঠিন বাধা-বিপত্তি আসুক না কেন মহান আল্লাহ তাআলার উপর পুর্ন ভরসা রেখে ধৈর্য্য, সাহসীকতা ও সর্বোচ্ছ ত্যাগ কুরবানীর বিনিময়ে সফলভাবে মোকাবেলা করি। সংগঠনের পরিকল্পনা ও কর্মসূচী যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় দেশের সকল নাগরিকের জন্য একটি নিরাপদ, সমৃদ্ধ ও সুন্দর আবাসস্থল হিসাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে জোরদার করি। সর্বোপরি নিজেদেরকে ঈমানদার এবং মুত্তাকী রুপে গড়ে তোলে আখেরাতের নাজাত, আল্লাহ পাকের মাগফেরাত ও অফুরন্ত নেয়ামতে ভরা জান্নাতের পথে সর্বাবস্থায় নিয়োজিত রাখি। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ” দৌড়াও এবং একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী হওয়ার চেষ্টা করো তোমার রবের মাগফেরাতের দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের মতো। তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে। এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। যাকে ইচ্ছ তিনি তা দান করেন। আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল”( সূরা হাদিদঃ ২১)। আল্লাহ পাক আমাদের সকল দোষ ত্রুটি ক্ষমা করুন, জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন, সর্বোপরি মহান আল্লাহপাক আমাদের সহায় হোন, আমীন।
আল্লাহ হাফিজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ ॥”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন