বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলমের চাপাতির কোপে মারাত্মকভাবে আহত সিলেটের সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের আশংকাজনক অবস্থায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান আজ ৬ অক্টোবর প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “সিলেটের সরকারী মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিস ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বদরুল আলমের কথিত প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তার হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। এ ঘটনা গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
সিলেট সরকারী মহিলা কলেজের নিরীহ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বদরুল আলম স্পষ্ট দিবালোকে বিপুল সংখ্যক ছাত্র-শিক্ষকের সম্মুখে পশুর মত চাপাতি দিয়ে একের পর এক বেপরোয়াভাবে কুপিয়ে সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত করেছে। মেয়েটির ভাগ্যে কি আছে আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। তার মা-বাবা ও স্বজনদের চোখের পানি ও বুকের আহজারি আল্লাহর আরশকে প্রকম্পিত করছে। এ নিকৃষ্ট হামলার ঘটনা সারাদেশে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তান্ডবেরই একটি খন্ডিতাংশ মাত্র। চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, হত্যা, গুম, সন্ত্রাস, নারী হত্যা, নারী ধর্ষণ, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি, মাদকদ্রব্য সেবনসহ হেন কোন অপরাধ নেই যা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা করেনা।
২০১৬ সালের ১৩ জুন পটুয়াখালী জেলার বাউফলে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা এক হিন্দু মহিলা ও তার মেয়েকে নদীর মধ্যে নৌকায় ধর্ষণ করেছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর টাংগাইল জেলার মির্জাপুরে ছাত্রলীগ নেতা খোকনের ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩য় শ্রেণীর এক ছাত্রী। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীদের এ রকম নারী ধর্ষণের বহু উদাহরণ আছে।
ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ২০১২ সালের জুলাই মাসে সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দিয়েছিল তা দেখে ১২ জুলাই শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ কেঁদে ছিলেন। তারও আগে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী একই কায়দায় সিলেট সরকারী কলেজের একমাত্র ছাত্রাবাসটি পুঁড়িয়ে দেয়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রলীগ কর্মী সুমন চন্দ্র দাস নিহত হয়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় স্পষ্ট দিবালোকে শত শত মানুষ ও মিডিয়ার সামনে পুরান ঢাকার দর্জি বিশ্বজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এবং রড দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।
২০১৪ সালে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে ছাত্রলীগের হামলায় হেভেন চৌধুরী নিহত হয়। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয় রাজশাহীর রোজানুল ইসলাম চৌধুরী, এমসি কলেজের ছাত্র উদয়েন্দ্র সিংহ পলাশ, পাবনায় মোস্তফা কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের মেধাবী সাধারণ ছাত্র আবুবকরসহ অনেকেই। ২০০৯ সালে ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী শরীফুজ্জামান নোমানীকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নৃশংসভাবে হত্যা করে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের পাঁচশতাধিক অভ্যন্তরীন সংঘর্ষে ছাত্রলীগের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ ছাত্র নিহত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রদের বই, খাতা, কলম হাতে তুলে নেয়ার উপদেশ দিলেও তার দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী নেতা-কর্মীদের হাতে দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে, রামদা, চাপাতি, ছোড়া, পিস্তল, রিভলবারসহ নানা ধরনের স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর হামলা চালাতে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, শিক্ষক, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সাধারণ জনগণ, সাংবাদিক, পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ পর্যন্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে। আমরা সরকারকে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার জন্য বার বার আহ্বান জানানো সত্বেও তারা মোটেই কর্ণপাত করেননি। যে কারনে ছাত্রলীগ অবাধে নানা ধরনের ধ্বংসাত্মক অপকর্ম করেই চলেছে। অবিলম্বে ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরে দেশ ও দেশের মানুষকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করুন।
সিলেটের কলেজ ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসের উপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বদরুল আলমের নৃশংস হামলার ঘটনায় দেশবাসী মর্মাহত। এ ঘটনায় সিলেটসহ সারা দেশের মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও বিক্ষুব্ধ। হামলাকারী ছাত্রলীগের নেতা বদরুল আলমকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং মহান আল্লাহ পাকের দরবারে খাদিজা আক্তার নার্গিসের সুস্থ্যতা কামনা করছি।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন