রাজধানীর গুলিস্তানে অবৈধ ফুটপাত দখলমুক্ত করার সময় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের তা-বের দৃশ্য ধরা আছে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে। হকিস্টিক নিয়ে গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কোয়ার পাতাল সড়ক মার্কেটের ভেতরে ভাঙচুর চালিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে তারা। গত বৃহস্পতিবার গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ফুটপাত অবৈধ দখলমুক্তকরণ অভিযানকালে পাতাল মার্কেটের সিসিটিভির ফুটেজে এসব দৃশ্য দেখা যায়। এদিকে উচ্ছেদের পরপরই ফের পাতাল মার্কেটের সামনে দোকান সাজিয়ে বসেছে হকাররা। গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা যায়।
অন্যদিকে অস্ত্রবাজ সেই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও হয়নি।
মার্কেট কর্তৃপক্ষ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, একটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে পাতাল মার্কেট ঘিরে চাঁদাবাজির ছক কষে আসছে। তাদের চাহিদামতো চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষোভ থেকেই ওই হামলা হয় বলে মনে করছে মার্কেট কর্তৃপক্ষ। তবে বিষয়টিতে রাজনৈতিক রঙ লেগেছে জানিয়ে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি মার্কেট কর্তৃপক্ষ।
পাতাল মার্কেটে ১০৪টি দোকান রয়েছে। এসব দোকান সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে কেনা বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। এদিকে ওই মার্কেটের বাইরে ফুটপাতে রয়েছে বিপুলসংখ্যক দোকান। কাঠের চৌকি-আলনায় এসব দোকান সাজিয়ে বসেন হকাররা। বৃহস্পতিবার অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হলেও হকাররা ফের পসরা সাজিয়ে বসেছে।
গতকাল দুপুরে এমনই এক হকার সবুজের সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ভাই আমরাও এখানে বসতে চাই না; কিন্তু কী করব বলেন? পেট তো চালাতে হবে। অন্য কোথাও আমাদের দোকানের জায়গা করে দিলে সবচেয়ে ভালো হয়।
এদিকে অস্ত্রহাতে যে দুই ছাত্রলীগ নেতার ছবি গণমাধ্যমে এসেছে তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন। অবৈধ অস্ত্রধারী ওই ছাত্রলীগ নেতারা হলেনÑ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন ও ওয়ারী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিসি মোহাম্মাদ তারেক বিন রশিদ আমাদের সময়কে বলেন, এখন পর্যন্ত ওই ঘটনায় কেউ মামলা করতে আসেননি। এছাড়া অস্ত্র দুটি বৈধ না অবৈধ তা নিশ্চিত হতে আরও সময় লাগবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ওইদিন কমপক্ষে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। ‘হকারদের মধ্য থেকে গুলি ছোড়া হয়’Ñ ছাত্রলীগের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন ব্যবসায়ী ও হকাররা।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৪৭ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে প্রথমে সাত যুবক রুদ্রমূর্তিতে মার্কেটে প্রবেশ করেন। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন গোলাপি শার্ট পরা এক তরুণ। তার সঙ্গে থাকা কয়েকজনের হাতে হকিস্টিক দেখা যায়। তারা ভাঙচুর করতে-করতে ভেতরে ঢোকেন। এর ঠিক পরপরই সাদা ও ছাই রঙের শার্ট পরা দুই যুবক এবং হলুদ টি-শার্ট পরা আরেক তরুণসহ মোট তিনজন হকিস্টিক হাতে মার্কেটে ঢোকেন। মারমুখী ভঙ্গিতে তারা ভেতরে যেতে থাকেন। এ সময় পাশে এক নিরাপত্তাকর্মী এবং পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধকে আতঙ্কিত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে আরও ৫ যুবক হকিস্টিক হাতে ভাঙচুর করতে-করতে ভেতরে ঢোকেন। তাদের একজনের গায়ে ছিল পেস্ট কালারের পাঞ্জাবি। সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় একজনকে পেটাতে থাকেন তারা। এর মাত্র ২ মিনিট পর বাইরে থেকে কয়েক তরুণ এসে প্রথমে ঢুকে পড়া গোলাপি রঙের শার্ট পরা তরুণকে পেটাতে থাকে। কালো স্টেপ রঙের টি-শার্ট পরে একজনকে একটা ব্যাগ হাতে বের হতে দেখা যায়। মার্কেট কর্তৃপক্ষের দাবি, হামলাকারীরা সবাই স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা দাবি করে আসছিল একটি গ্রুপ; কিন্তু তদের চাঁদা দেওয়া হয়নি। উচ্ছেদ অভিযানের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারাই চড়াও হয়েছিল।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পাতাল সড়ক মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, এখন বিষয়টি যে পর্যায়ে গড়িয়েছে তাতে এ নিয়ে আমরা আর কথা বলতে চাই না। কে কী করেছে সেটি গণমাধ্যমে এসেছে, সবাই দেখেছে। প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা।
গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানে ফুটপাতের অবৈধ দোকান উচ্ছেদের সময় হকারদের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মচারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির হোসেন ও আশিকুর রহমানের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা যায়। ঘটনাস্থলের অদূরে র্যাব-পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করলেও কোনো অ্যাকশনে যাননি তারা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন