মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ মুসলমানকে হত্যা করেছে।
কিছুদিন আগে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালালে হামলাকারীদের খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে সেনাবাহিনী। গত ১ অক্টোবর ওই হামলার ঘটনায় নয় পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিল। এরপরই রাখাইন প্রদেশে নতুন করে সেনা পাঠানো হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে পুলিশ সদস্যদেরকে হত্যায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের হাত ছিল।
বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে নতুন করে সেনাবাহিনীর আগ্রাসন বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার একটি বড় অংশের স্কুল, বাজার ঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের স্থানীয় কর্মকর্তারা সামরিক শাসন জারির কথা জানিয়ে বলেছেন, কোথাও পাঁচ জনের বেশি লোক সমবেত হতে পারবে না।
২০১২ সাল থেকে মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধরা রাখাইনের মুসলমানদের ওপর হত্যা ও জুলুম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। সরকারের সমর্থন নিয়ে উগ্র বৌদ্ধরা এ পর্যন্ত শত শত মুসলমানকে হত্যা করেছে। আহত হয়েছে হাজার হাজার মুসলমান। এ ছাড়া লাখ লাখ মুসলমান শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমার সরকার সেদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলমানদেরকে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে না বরং বিদেশি অভিবাসী হিসেবে দাবি করে তাদেরকে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে জোর করে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে। সরকারের এ অন্যায় ও বর্ণবাদী আচরণের কারণে উগ্র বৌদ্ধরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ করতে আরো উৎসাহিত হচ্ছে।
বিভিন্ন রিপোর্টে এসেছে মিয়ানমার সরকার এমনকি মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইনের জনসংখ্যার কাঠামোতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে যাতে সেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে না পারে। মুসলিম জনসংখ্যার কাঠামোতে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি স্থানীয় মুসলমানদের ওপর এমন সময় হত্যা নির্যাতন চালানো হচ্ছে যখন ২০১৫ সালের নভেম্বরে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
অং সান সুচির নেতৃত্বে 'ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি' পার্টি নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে। ক্ষমতায় এসেই তারা রোহিঙ্গা মুসলমানদের দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু অং সান সুচি তার প্রতিশ্রুতি পালন তো করেননি বরং মুসলিম বিরোধী সহিংসতা আরো বেড়েছে। অং সান সুচি মিয়ানমার সরকারের সুপ্রিম কাউন্সিলের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও তিনি পার্টির মূল নেতৃত্বে রয়েছেন। এ কারণে তিনি সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের দুঃখ কষ্ট নিরসনে তার প্রতিশ্রুতি পালন করবেন বলে ব্যাপকভাবে আশা করা হয়েছিল। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর সরকার ও উগ্র বৌদ্ধদের নৃশংস হামলা ও জুলুম নির্যাতনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব রয়েছে। অথচ তিনি যখন সেনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন এমনকি গৃহবন্দী থাকা অবস্থায়ও তিনি যে কোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। এ অবস্থায় অং সান সুচি দেশের ক্ষমতায় থাকার পরও কেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতারে বিরুদ্ধে কোনো কথা বলছেন না সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।#
পার্সটুডে/মোঃ রেজওয়ান হোসেন/১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন