ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ স

আচ্ছালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। ইসলামী ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট দক্ষিণগাও বাজার এর পক্ষ থেকে সকল গ্রাহক, শুভাকাংখীসহ সবাইকে জানাই সালাম শুভেচ্ছা। এইগ্রুপে যারা আছেন তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার এলাকারসকলকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে রেমিটপন্স পাঠানোর আহবান জানাচ্ছি। রাজারবাগ, কুসুমবাগ, দক্ষিনগাও, শাহীবাগ, মানিকদিয়া, বাইকদিয়া, নন্দিপাড়াসহ সকল এলাকার গ্রাহক, শুভাকাংখী, শুভানুধ্যায়ীদের প্রদত্ত মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হলোঃ ০১৭১১-৪৫৮১৫১, ০১৭০০৯২৫২৪১

রবিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৭

সংবিধান ও মানবাধিকার লংঘনের দরুন পুলিশের বিরুদ্ধে কেন ব্যাবস্থা নেয়া হবে না?

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ছাত্রশিবির সন্দেহে গতকাল পুলিশ ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে । এ সময় তাদের কাছ থেকে বই ( পুলিশের ভাষ্যমতে জিহাদি বই ), ইসলামী ছাত্র শিবিরের একটি ব্যানার, লিফলেট, সদস্য সংগ্রহ ফরম, সদস্যদের নামের তালিকা, খাতা কলম ও কয়েকটি বই উদ্ধার করে পুলিশ। 
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদের নিজ ফেসবুক আইডিতে " জেএমবি ও ছাত্র শিবিরের সদস্যদের গ্রেফতারের চিত্র " শিরোনামে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গ্রেপ্তারকৃত তরুনেরা দুই হাত তুলে একটা বাসা থেকে বেরুচ্ছে তাদের ঘিরে আছে উদ্যত অস্ত্র হাতে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্ম পরিহিত একদল পুলিশ।
একজন পুলিশের হাতে একটা দীর্ঘ লাঠি সেই লাঠি দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে প্রত্যেকের পিছনে বাড়ি দেয়া হচ্ছে। কেউ একজন পিছন থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের মাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা পোষণ করে গালি দিচ্ছে। ছাত্ররা শান্তভাবেই কোন প্রতিরোধ ছাড়াই মাথার উপরে হাত তুলে পুলিশের নির্দেশ অনুসারে ভ্যানের ভিতরে গিয়ে বসছিলো।
ছাত্রশিবির কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাই পুলিশ কাউকে শুধুমাত্র সেই সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে পারেনা। সংবিধানের ৩৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার পূর্ন অধিকার দেয়া হয়েছে। ৩৬ নং ধারায় বলা হয়েছে "জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে "।
এ ছাড়াও সংবিধানের ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার দেয়া হয়েছে । ছাত্রশিবির কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাহলে এই সংগঠনের নেতা কর্মীদের উপর এই বেআইনি অভিযান, গ্রেফতার, প্রহার ও মিথ্যাচার কেন সংবিধান ও আইন বিরোধী হবেনা? এবং সংবিধান ও আইন বিরোধী কাজে জড়িত অতি উৎসাহী পুলিশ অফিসার ও সদস্যদেরকে কেন বিচার ও শাস্তির মুখামুখি করা হবেনা? পুলিশ কি কোন অবস্থাতেই নিরস্ত্র এবং আত্মসমর্পণকারীদের এভাবে পেটাতে পারে, বা গালি দিতে পারে?
বাংলাদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে তার কর্তব্য পালনের নামে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ আছে। গুম, খুন এসব নিয়ে গত ২৮ জুলাই নিউইয়র্ক টাইমস এ একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়। র‍্যাব, পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড বহিরবিশ্বে আদৌ বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করছে কি? । নিচের এই ভিডিওতে সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সামান্যই দেখতে পাবেন।। আমরা জানতে চাই যে সমস্ত পুলিশ সদস্য প্রকাশ্যে এভাবে চরম মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটালো তার প্রতিকার কী হবে?
আবার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ তার নিজ ফেসবুক আইডিতে ( Azad Bp ) এ নিয়ে একাধিক লিঙ্ক, ভিডিও পোষ্ট করেন । যাতে দেখা যায় দুটি ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেন " সোনারগাঁয়ে জাদুঘরের সামনে রেস্টুরেন্টের ভিতর হতে জেএমবি ও ছাত্র শিবিরের সদস্যদের গ্রেফতারের চিত্র " । এ ছাড়াও তিনি সোনারগাঁ প্রতিদিনের আরেকটি লিঙ্ক শেয়ার করেন যার শিরোনাম " সোনারগাঁ জাদুঘর সংলগ্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে জিহাদী বইসহ ৪৩ জঙ্গী ও শিবির কর্মী গ্রেফতার " । একটি নিবন্ধিত ছাত্রসংগঠনকে বিনা প্রমানে ও অযৌক্তিকভাবে জঙ্গী, জেএমবি আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কারনে তার এই কর্মকাণ্ড আইসিটি এ্যাক্ট ২০০৬ এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ । যার শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা ।
এই, এস আই আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি এএসআই থেকে এসআই পদে পদান্নতি লাভ করেন । তিনি বিভিন্ন সময়ে জনকল্যাণ, সমাজকল্যাণ নিয়ে কাজ করে বেশ পরিচিতি লাভ করেন । চলতি বছরে মানব সেবায় অবদানের জন্য মহাত্ম গান্ধী শান্তি পদক-২০১৭ এ ভূষিত হন । এ ছাড়াও মানব সেবায় বিশেষ আবদান রাখায় আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংগঠন প্রটেকশন অব রাইটস্‌ ইন বাংলাদেশ(পিআরবি)’র পক্ষ থেকে আয়োজিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তন-ঢাকায় অনুষ্ঠিত “ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা সভায় ‘ফিদেল কাস্ত্রো এ্যাওয়ার্ড-২০১৭ এ ভূষিত হন ।
তবে তার এসব অর্জন ও কর্মকে ছাপিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে তার নেতৃত্বে শিবির কর্মীদের অন্যায়ভাবে প্রহার ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা নিয়ে । অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কোন ভাবে এর দায় এড়াতে পারেন না । একজন মধ্যবয়স্ক পুলিশ সদস্য যখন সর্বশক্তি দিয়ে প্রত্যেকের পিছনে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন ও গ্রেপ্তারকৃতদের মাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা পোষণ করে গালি দেন, এসআই আবুল কালাম আজাদ তাদেরকে একটি বারও বাধা দেননি বা নিষেধ করেন নি । তাহলে এখানে কোথায় তার মানব সেবায় বিশেষ আবদান, আর কোথায় তার ফিদেল কাস্ত্রো এ্যাওয়ার্ড, মহাত্মগান্ধী শান্তি পদকের মুল্যায়ন। তার ভালো কাজের স্বীকৃতি অবশ্যই দিচ্ছি, কিন্তু তার এসব দলকানা, পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকাণ্ডের জন্য সংবিধান ও মানবাধিকার লংঘনের দরুন তার বিচার হওয়া আবশ্যক ।
কিন্তু বিচার দেবেন কার কাছে?
ঘটনাস্থল, সোনারগাঁও থানায় এসআই আবুল কালাম আজাদের কাছে অভিযোগ করে আদালতে?
পাবেন তো মানবাধিকার আর সংবিধান লঙ্ঘনের বিচার?
এতো শুটকির বাজারে বিড়াল পাহারা দেওয়ার দশা । আর এভাবেই স্বাধীন বাংলায় পদদলিত হতে থাকবে মানবাধিকার ।

নাকি এত কিছুর পরেও ভরসা রাখবো সেই " নৌকায় " ?
এতদসংক্রান্ত লিঙ্কঃ
১। https://www.facebook.com/azad.ha.39
২। http://www.bhorerkagoj.net/print-editi…/2017/…/30/158889.php#
৩। https://youtu.be/870jptrpTAY
৪। আইসিটি এ্যাক্ট ২০০৬ এর ৫৭ ধারা - http://bdconstitutionbangla.blogspot.bd/
৫। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬,৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১ নং ধারা ।
৬। https://www.nytimes.com/…/the-opposition-disappears-in-bang…
৭। সোনারগাঁ প্রতিদিন - http://www.sonargaonpratidin.com/?p=1916
( Collected)

জামায়াতের কোন নেতার উপস্থিত থাকার প্রশ্নই আসে না: সেন্ট্রাল লন্ডনে কোন বৈঠকের খবর আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয় -হামিদুর রহমান আযাদ

বাংলাদেশ বার্তাঃ পূর্ব-পশ্চিম বিডি ডট নিউজ পত্রিকায় গত বুধবার ২৬ জুলাই প্রকাশিত একটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে কালেরকণ্ঠ পত্রিকায় এবং কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২৮ জুলাই প্রকাশিত রিপোর্টে “সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে একটি গোপন বৈঠকে লন্ডনের জামায়াতের কয়েকজন নেতা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে উপস্থিত ছিলেন” মর্মে যে অসত্য তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ও সাবেক এমপি জনাব হামিদুর রহমান আযাদ ২৮ জুলাই প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে একটি বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার সাথে কথিত গোপন বৈঠকে লন্ডনের জামায়াতের কয়েকজন নেতা বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে উপস্থিত থাকার যে তথ্য পূর্ব-পশ্চিম বিডি ডট নিউজসহ কয়েকটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের বরাত দিয়ে কালেরকণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় ২৮ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে তা সর্বৈব মিথ্যা। সেন্ট্রাল লন্ডনে এ ধরনের কোন বৈঠক হয়েছে কিনা তাও আমরা জানি না। এ ধরনের কোন বৈঠকের খবর আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। কাজেই ঐ বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোন নেতার উপস্থিত থাকার প্রশ্নই আসে না।
উল্লেখিত বৈঠকে জামায়াতের কয়েকজন নেতার উপস্থিত থাকার প্রশ্ন অবান্তর। জামায়াতের কোন নেতার নাম উল্লেখ না করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার হীনউদ্দেশ্যেই এ ভিত্তিহীন মিথ্যা তথ্যটি প্রকাশ করা হয়েছে।
আমি স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, পূর্ব-পশ্চিম বিডি ডট নিউজ কর্তৃপক্ষ, কালেরকণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাদের রিপোর্টের সত্যতা প্রমাণ করতে পারবেন না। যদি তাদের হাতে কোন তথ্য আদৌ থেকে থাকে তাহলে সেন্ট্রাল লন্ডনের একটি হোটেলে কথিত গোপন বৈঠকে জামায়াতের কোন কোন নেতা উপস্থিত ছিলেন তাদের নাম উল্লেখ করুন। আমি আশা করি তারা কোন নেতার নাম উল্লেখ করতে পারবেন না। জামায়াতের কোন নেতার নাম উল্লেখ না করা থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় যে, রিপোর্টটি আদৌ সত্য নয়।
কাজেই জামায়াতে ইসলামীর নোতাদের জড়িয়ে এ ধরনের ভিত্তিহীন মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমি পূর্ব-পশ্চিম বিডি ডট নিউজ কর্তৃপক্ষ, কালেরকণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আমি আশা করছি যে, তারা অত্র প্রতিবাদটি যথাস্থানে ছেপে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন করবেন।”

শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭

ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ এর মায়ের ইন্তেকালে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের শোক প্রকাশ

বাংলাদেশ বার্তাঃ চান্দগাঁও বাড়ইপাড়া নিবাসী ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ এর মাতা মকিমা খাতুনের(৯৫) ইন্তেকালে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের শোক প্রকাশ।
২৮ জুলাই ২০১৭ ইং তারিখ শুক্রবার আনুমানিক দুপুর ২টায় চান্দগাঁও বাড়ইপাড়া নিবাসী ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ এর মাতা মকিমা খাতুন বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। মৃত্যুকালে মরহুমার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। তিনি ৩ ছেলে, ৪মেয়ে, নাতি-নাতনি ও অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাংখী রেখে যান।
ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ এর মাতা মকিমা খাতুনের ইন্তেকালে চান্দগাঁও থানা জামায়াতের আমীর ও সেক্রেটারী আবু জাওয়াদ ও ইবনে হোসাইন এক যুক্ত বিবৃতির মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন। 
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ মরহুমার রুহের মাগফিরাত কামনা করে মহনি আল্লাহর কাছে তার জান্নাতুল ফেরদৌস নসীবের জন্য দোয়া করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
মরহুমার নামাজে জানাজা আজ বাদ এশা স্থানীয় বহদ্দার বাড়ি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন উক্ত মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব জনাব হাফেজ মাওলানা মোকতার সাহেব। 

মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন আর নেই

বাংলাদেশ বার্তাঃ  মুক্তিযোদ্ধা মেজর জিয়াউদ্দিন আর নেই (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন)

মুক্তিযুদ্ধে সুন্দরবনের সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি আজ শুক্রবার দুুপুর ১টা ১৫ মিনিটে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল হাসপাতালে মারা যান। মৃতুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭।

জিয়াউদ্দিন গত ১ জুলাই অসুস্থ হওয়ার পর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরদিন অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছিল।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ মুক্তিযুদ্ধের সময় সুন্দরবনে ক্যাম্প করে সেখানে লোকজনকে সংগঠিত করে যুদ্ধ করেন। ১৯৮৯-৯১ সালে তিনি পিরোজপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

উল্লেখ্য: তিনি আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে কথিত মানবতাবিরোধী মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষী ছিলেন। কিন্তু তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করেন এবং সাঈদীর এরকম কোনো ঘটনায় সম্পৃক্ততা ছিলেন না একথা আদালতে সাক্ষ্য দেন।

ইসলাম সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে প্রত্যাখ্যান করে!!

বাংলাদেশ বার্তাঃ   ইসলাম যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে ধর্মের নামেই রয়েছে শান্তির সুবাস, যে ধর্মের নবীকেই প্রেরণ করা হয়েছে জগতবাসীর জন্য শান্তি ও রহমত স্বরূপ [ . পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭। ], সে ধর্ম সম্পর্কে এমন অপপ্রচার একান্তই বিদ্বেষপ্রসূত। ইসলাম বিদ্বেষী ভাইদের অপপ্রচারে যাতে সরলমনা মুসলিম ভাই-বোনেরা বিভ্রান্ত না হন, তাই আজ পবিত্র কুরআনে এদু’টি শব্দ কতভাবে এসেছে তা আলোচনা করে এ ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান তুলে ধরার প্রয়াস পাব এ নিবন্ধে ইনশাআল্লাহ।
.
অনেক রাজনৈতিক নেতা ও চিন্তাবিদই আরবী ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ (Violence) শব্দ ও ‘ইর‘আব’ বা ‘আতঙ্কসৃষ্টি’ (Terrorism) শব্দের মধ্যে, তেমনি ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ ও ‘আল-ইর‘আব আল-উদওয়ানী’ বা ‘আগ্রাসন’ শব্দের মধ্যে এবং ‘উনুফ’ বা ‘সহিংসতা’ ও ‘আল-ইর‘আব আয-যরুরী’ বা ‘ত্রাস’ শব্দের মধ্যে পার্থক্য করেন না।
.
বস্তুত বিদেশি শব্দ সন্ত্রাস বা Terrorism-এর আরবী প্রতিশব্দ ‘ইরহাব’ নয়; ‘ইর‘আব’ . কেননা (‘ইরহাব’ শব্দের ধাতুমূল তথা) ‘রাহ্ব’ (الرهب) শব্দ ও তা থেকে নির্গত শব্দাবলি পবিত্র কুরআনে ত্রাস নয় বরং সাধারণ ভীতি-সঞ্চার অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাতে একটি নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অর্থ মিশে থাকে। অন্যের বেলায় মানুষ শব্দটি ব্যবহার তার অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাবার জন্য [ সূরা তাওবা : ৩৪; নাহল : ৫১; আম্বিয়া : ৯০; কাসাস : ৩২; হাদীদ : ২৭; হাশর : ১৩। ]। আর এ শব্দ কিন্তু ‘র‘ব’ (الرعب) শব্দ থেকে ভিন্ন অর্থ বহন করে। কেননা ‘র‘ব’ শব্দের অর্থ তীব্র ভীতি-সঞ্চার অর্থাৎ ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা[ . সূরা আলে-ইমরান : ১৫১; আনফাল : ১২; আহযাব : ২৬; হাশর : ২। ] । মানুষ এ শব্দটিকে ব্যবহার করে অন্যকে শায়েস্তা করা এবং তাদের ওপর জুলুম চালানোর জন্য। আবার এর কতক সংঘটিত হয় উদ্দেশ্যহীন, অনির্দিষ্ট ও সম্পূর্ণ অজ্ঞাত কারণে[ইবন মানযুর, আল-বুসতানী। ] ।
.
তবে এতদসত্ত্বেও ‘ইরহাব’ ও ইর‘আব’ শব্দ আরবী ভাষায় ধাতুগতভাবে শুধু মন্দ বা শুধু ভালোর জন্য ব্যবহৃত হয় না। এদুটি এমন মাধ্যম যা ভালো বা মন্দের পক্ষাবলম্বন করে না। উভয় শব্দ সত্য প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধ এবং নিপীড়িতের সাহায্যার্থে ব্যবহৃত হয়। তেমনি শব্দদুটিকে নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষের ওপর অত্যাচার, অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ ও অধিকার হরণ এবং তাদের ভূমি দখলের জন্যও ব্যবহৃত হয়।
.
তবে ‘উনুফ’ ও ‘ইরহাব’ শব্দের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ‘উনুফ’ অর্থ চিন্তা, মতবাদ, দর্শন কিংবা সাধারণ বা বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যে সহিংস মাধ্যম বা উপায় অবলম্বন করা। যেমন : আঘাত, শারীরিক নির্যাতন বা অস্ত্র ব্যবহার। পক্ষান্তরে ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ শব্দদুটি এর চেয়ে ব্যাপক অর্থ বহন করে। কারণ তা হতে পারে সহিংস উপায়ে আবার হতে পারে অহিংস উপায়ে। যেমন :
.
আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে ভয় দেখানো। (তাকে এভাবে ইঙ্গিতে জবাই করার ভয় দেখানো।) অথবা কথার দ্বারা ভয় দেখানো। যেমন : অর্থনৈতিকভাবে বয়কটের হুমকি, কঠোরতা আরোপের হুমকি, না খেয়ে মারার হুমকি কিংবা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি ইত্যাদি। ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ শব্দদুটি ভেটোর ক্ষমতা প্রয়োগ অথবা জালেমের নিন্দা প্রস্তাবে ভোট দেয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করে। অসত্য অভিযোগ প্রচারের মাধ্যমেও ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ সংঘটিত হতে পারে। যেমন : টার্গেট গোষ্ঠীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে বা তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াতে অপপ্রচার ও প্রচলিত মিডিয়া যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করা।
.
এই ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ কখনো হামলার শিকার ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক হত্যা করে না। বরং তাকে দীর্ঘ শাস্তি ও ধারাবাহিক নির্যাতন করে ধুঁকিয়ে ধুঁকিয়ে মারে। অর্থাৎ এ দুটি কখনো তৎক্ষণাৎ না মেরে ধীরে ধীরে মৃত্যু ডেকে আনে। এটি করা হয় তাকে গৃহহীন অবস্থা ও ক্ষুধার মুখে ঠেলে দেয়ার মাধ্যমে।
:
:
আমাদের চারপাশে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ব্যাপকার্থে যারা ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ করছে- যার মধ্যে রয়েছে সত্য প্রতিষ্ঠা করা ও নির্যাতন প্রতিরোধ করা অথবা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া ও অত্যাচারীকে আশ্রয় দেয়া- এরা প্রধানত তিন দলে বিভক্ত। যথা :
.
১. যারা নীতি-নৈতিকতার বাইরে গিয়ে শব্দদুটিকে ব্যবহার করে তাদের নির্যাতন বা অন্যায়কে বৈধতা দেবার জন্য। আখিরাতে বিশ্বাসী হোক বা না হোক- এরা মানবস্বভাব ও ঐশী শিক্ষার বিরোধী। যার মধ্যে ইসলামের শিক্ষা ও আদর্শও রয়েছে।
.
২. যারা যথাসাধ্য প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে থেকে শব্দদুটি ব্যবহার করে আত্মরক্ষা কিংবা অক্ষম ও নিরপরাধ লোকদের থেকে জুলুম প্রতিরোধের উদ্দেশে। তারা আখিরাত বা শাশ্বত জীবনে বিশ্বাস রাখে না। তারা এসব করে আল্লাহ প্রদত্ত সুস্থ বিবেকের তাড়নায়।
.
৩. যারা শব্দদুটি ব্যবহার করে আত্মরক্ষা বা অক্ষম ও নিরপরাধ লোকদের ওপর জুলুম প্রতিরোধে যথাসম্ভব শরীয়ত ও প্রাকৃতিক নিয়মের মধ্যে থেকে। তারা বিশ্বাস করে এজন্য তারা আখিরাত বা শাশ্বত জীবনে বিশাল প্রতিদান লাভ করবে। অতএব, তারা এসব করে সুস্থ বিবেক ও অনন্ত জীবনের বিশাল প্রতিদানের প্রত্যাশায়।
::
এ জন্যই দেখা যায় শেষোক্ত দলটি আত্মোৎসর্গ ও আত্ম নিবেদনে সবচে বেশি আগ্রহী ও সাহসী হয়। কেননা ,তার দৃষ্টিতে পার্থিব জীবন কেবল উসিলা বা বিধেয় মাত্র; মাকসাদ বা উদ্দেশ্য নয়। সম্ভবত এটিই মানুষকে নিজেদের সম্মানিত স্থান, নিজেদের মাতৃভূমি ও নিপীড়িত স্বজনদের রক্ষায় প্রাণোৎসর্গমূলক জিহাদী কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে।
:
সাধারণভাবে আত্মঘাতমূলক তৎপরতার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি ইসলামের আইন ব্যাখ্যাকারী তথা ফিকহবিদদের মতভিন্নতা হেতু বিভিন্ন হয়। তাদের অনেকে কাজটিকে বৈধ বলেন এবং এ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধও করেন। যতক্ষণ তা হয় আত্মরক্ষার্থে এবং অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর সীমালঙ্ঘনের ইচ্ছে ছাড়া। উপরন্তু তা নিরপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধেও পরিচালিত না হয়, যাদের ওপর ইসলাম যুদ্ধক্ষেত্রে পর্যন্ত হামলার অনুমতি দেয় না। যেমন : নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও নিরস্ত্র ব্যক্তি। অনুরূপভাবে সব রাজনৈতিক ব্যবস্থাতেই মানবরচিত আইন সেনাদেরকে নিজের দৃষ্টিতে বৈধ যুদ্ধক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিতে এমনকি জীবন উৎসর্গ করতে পর্যন্ত উৎসাহিত করে। পক্ষান্তরে অনেক শরীয়তবিদ কাজটিকে আত্মহত্যার সঙ্গে তুলনা করে হারাম বলে অভিহিত করেন। তাদের মতে, জীবনের ঝুঁকি নেয়া ভিন্ন জিনিস। কারণ সেখানে জীবন রক্ষার সম্ভাবনাই প্রবল। তাছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঝুঁকি গ্রহণকারীর মৃত্যুর কোনো অভিপ্রায়ই থাকে না।
.
আসমানী রিসালত বা ঐশী বার্তাপ্রাপ্ত ধর্ম পালনকারী ব্যক্তিমাত্রেই জানেন, দুনিয়ার এ জীবন মূলত একটি পরীক্ষাতুল্য। এর মাধ্যমে চিরস্থায়ী জীবনে পুরস্কারযোগ্য সৎকর্মশীল এবং অনন্ত জীবনে তিরস্কারযোগ্য অসৎ ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য রচনা করা হয়। আর সত্যপন্থী ও মিথ্যাপন্থীর সংঘাত এবং নিপীড়ক ও নিপীড়িতের দ্বন্দ্ব এ পরীক্ষার একটি অংশ মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
.
وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ (40)
.
‘আর আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা দমন না করতেন, তবে বিধস্ত হয়ে যেত খৃস্টান সন্ন্যাসীদের আশ্রম, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় ও মসজিদসমূহ- যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়।’[হজ : ৪০।]
:
‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ কখনো সংঘটনের ইচ্ছা ছাড়া সংঘটিত হতে পারে। ভুলক্রমেও হতে পারে কখনো। তবে এ ব্যাপারে তাকে সতর্ক করার পরও যদি সে এমন কাজ থেকে নিবৃত না হয়, যা ‘ইরহাব’ বা ‘ইর‘আব’-এর কারণ হয়, তখন তা ইচ্ছাকৃত ‘ইরহাব’ বা ‘ইর‘আব’ বলেই গণ্য হবে।
.
ইসলাম যেহেতু মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপক শান্তি কিংবা অন্তত নানা ধর্মের মানুষের মধ্যে শুধু দুনিয়ার শান্তির প্রতি আহ্বান জানায়। তাই এ ধর্ম অন্যের ওপর অত্যাচার বা সীমালঙ্ঘনমূলক ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ সংঘটনকে কঠোরভাবে হারাম ঘোষণা করে। তীব্রভাবে একে প্রত্যাখান করে এবং সীমালঙ্ঘন বা উৎপীড়নমূলক ‘ইরহাব’ ও ‘ইর‘আব’ এর জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে।
.
হ্যা, ইসলাম এতদুভয়ের অনুমতি দেয় ঠিক; তবে তা শাস্তিকে অপরাধী পর্যন্ত সীমিত রাখা এবং অনুমোদিত ক্ষেত্র অতিক্রম না করার শর্তে। অনুমোদিত ক্ষেত্র হলো, আত্মরক্ষা, শত্রু দমন ও নির্যাতিতের সাহায্যের জন্য। বিশেষত জুলুম প্রতিরোধের কোনো ক্ষমতাই সেসব দুর্বল ও অক্ষম ব্যক্তির নেই। একেই ইসলামে ‘জিহাদ’[যিনিই আরবী ‘জিহাদ’ শব্দ ও এর ধাতুমূল নিয়ে চিন্তা করবেন, দেখবেন তাতে পূর্বে সংঘটিত কোনো কিছুর প্রতিরোধ অর্থ লেপ্টে আছে। কোনো হামলার সূচনার অর্থ নেই তাতে। যেমন দেখতে পারেন, ইবনুল কায়্যিম : ৩/৫-৯।] অথবা ‘কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ’ বলা হয়। যার উদ্দেশ্য কেবল নিরস্ত্র, অক্ষম ও দুর্বলদের থেকে জুলুম তুলে দেয়া। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
.
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا (75)
:
‘আর তোমাদের কী হল যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করছ না! অথচ দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুরা বলছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে বের করুন এ জনপদ থেকে’ যার অধিবাসীরা যালিম এবং আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক নির্ধারণ করুন। আর নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে একজন সাহায্যকারী।’[নিসা : ৭৫।]
.
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
.
إِنِّى حَرَّمْتُ عَلَى نَفْسِى الظُّلْمَ وَعَلَى عِبَادِى فَلاَ تَظَالَمُوا.
.
‘হে আমার বান্দা, আমি নিজের ওপর জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের জন্যও একে হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না।’[মুসলিম : ৬৭৪০।]
:
এ কারণেই মুসলমানদের ক্ষেত্রে এমন বিচিত্র নয় যে তারা তাদের প্রজা সাধারণ (যিম্মী) বা সংখ্যালঘুদের বাঁচাতেও জিহাদ করছে।[ইবন কুদামা মুকাদ্দেসী; ইবন তাইমিয়া হাররানী, আশ-শিরাজী; আল-হানাফী।] এককথায়, কারও ওপর জুলুম চালানোর জন্য নয়; ইসলামে ‘জিহাদ’ নামক বিধান রাখা হয়েছে বৈধ প্রতিরোধের জন্য। আর নির্যাতন প্রতিরোধের পদক্ষেপকে গণতান্ত্রিক ও অন্যান্য দেশের মানব রচিত সকল ব্যবস্থাই সমর্থন করে। এ উদ্দেশ্যেই তো সকল রাষ্ট্র শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠন করে। নিজেকে সুসজ্জিত করে বিধ্বংসী সব অস্ত্র দিয়ে।
.
আত্মরক্ষামূলক এবং আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শনের মধ্যে পার্থক্য করবো কিভাবে ইতোমধ্যে আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে, ভীতিপ্রদর্শন ও ভয় দেখানো শব্দটিকে সন্ত্রাসী (জালেম) ও সন্ত্রাসের শিকার (মাজলুম) উভয়েই ব্যবহার করে। এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে আমরা এদুয়ের মধ্যে জালেম ও মজলুমকে পার্থক্য করবো কিভাবে?
:
আত্মরক্ষার্থে ভীতিপ্রদর্শন আর সন্ত্রাসমূলক ভীতিপ্রদর্শনের মধ্যে মোটাদাগে পার্থক্য এই :
.
অন্যের বিরুদ্ধে কে প্রথমে ত্রাস বা সন্ত্রাসের সূচনা করেছে? যে সূচনা করেছে সে চর্চা করছে আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শন আর যিনি প্রতিরোধ করছেন তিনি হলেন আত্মরক্ষাকারী। একইভাবে যিনি জালেমকে বস্তুগত বা নৈতিকভাবে সমর্থন করবেন তিনি আক্রমণাত্মক ভীতিপ্রদর্শনকারীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবেন। পক্ষান্তরে যিনি মজলুমকে সাহায্য করবেন তিনি আত্মরক্ষাকারী বলে গণ্য হবেন।
এটা ঠিক সচরাচর সহজে সূচনাকারী শনাক্ত করা যায় না। কারণ, জালেম পক্ষের গরিমা ও অহঙ্কার বেশি হয়। নিপীড়কের শক্তি হয় পর্বতপ্রমাণ। এমনকি মজলুমের চেয়ে জালেমের প্রমাণও হয় দৃঢ়তর। তথাপি বিষয়টি অন্যভাবে খোলাসা করা সম্ভব।
তবে সূচনাকারী শনাক্ত করা মুশকিল হলে অন্যভাবে তা চি‎হ্নিত করা যায়। যেমন আমরা উভয় পক্ষের মধ্যে মিমাংসার চেষ্টা করে দেখবো। যে পক্ষ ইনসাফভিত্তিক সালিশের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে সে-ই জালেম, হোক সে মুসলিম। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
.
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ (9)
.
‘আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের ওপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন।’[সূরা আল-হুযরাত, আয়াত : ০৯।]
:
সন্ত্রাস ও আগ্রাসী হামলা কখনো ভিন্ন রূপ ধারণ করে। তা হলো, অভিযোগ প্রমাণ না করেই কোনো মানুষকে শাস্তি দেয়া। কিংবা কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ওপর নির্ভর করে একটি জাতিকে বা পুরো মানব সমাজকে শাস্তি দেয়া। এ কাজ ইসলাম কিছুতেই সমর্থন করে না। শাস্তি দিলে তা অবশ্যই অনুমোদিত সীমা অতিক্রম না করতে হবে। অভিযোগ প্রমাণের পরও শাস্তি থাকতে হবে যুক্তিগ্রাহ্য সীমারেখার ভেতর। পরন্তু শাস্তির প্রকৃতিও হওয়া চাই অভিন্ন। অত্যাচারী বা জালেমের ভিন্নতায় তা যেন ভিন্ন ভিন্ন না হয়। অতএব যালেম দুর্বল হলে বা মিত্র না হলে তার শাস্তি কঠোর হবে না। তেমনি যালেম শক্তিধর, মিত্র বা তার কাছে কোনো স্বার্থ থাকলে তার শাস্তি লঘু করা হবে না। সর্বদা শাস্তি হবে ইনসাফের আলোয় উদ্ভাসিত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বাবস্থায় ইনসাফের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
.
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآَنُ قَوْمٍ عَلَى أَلَّا تَعْدِلُوا اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (8)
‘হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের সাথে সাক্ষদানকারী হিসেবে সদা দণ্ডায়মান হও। কোন কওমের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদেরকে কোনভাবে প্ররোচিত না করে যে, তোমরা ইনসাফ করবে না। তোমরা ইনসাফ কর, তা তাকওয়ার নিকটতর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।’[সূরা আল-মায়িদা, আয়াত : ৮।]

তবে ইসলামের এসব সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকার পরও মুসলিম নামধারী অনেকে ইসলামের মহান আদর্শকে উপেক্ষা করে। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অমান্য করে তারা সন্ত্রাস ও আগ্রাসনের পথ বেছে নেয়। এটা স্বাভাবিক যে প্রতিটি রাষ্ট্রই তার নাগরিকদের সঠিক আচরণ শিক্ষা দেয়। তারপরও তো প্রতিটি দেশেই অপরাধীতে পূর্ণ অনেক কয়েদখানা থাকে। তাই বলে কি আমরা বলবো যে অমুক জাতি পুরোটাই অপরাধী? কিংবা অমুক জাতি তার সদস্যদের অপরাধ শিক্ষা দেয়? আমেরিকার এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৯৮২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭৫টি অন্যায় হামলা বা সন্ত্রাস সংঘটিত হয়েছে। এর অধিকাংশ সংঘটিত হয়েছে খ্রিস্টান দ্বারা, তারপর ইহুদিদের দ্বারা। তাই বলে কি আমরা বলবো সকল খ্রিস্টান বা সব ইহুদিই সন্ত্রাসী বা আগ্রাসী? অবশ্যই না।
.
অতএব আজ যারা ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের সম্পর্ক আবিষ্কার করতে চান, কুরআনের ভেতর অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে মানবাধিকার পরিপন্থী কথা তালাশ করে হয়রান হন, তারা হয়তো অমুসলিমদের প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে কিংবা ইসলাম বিরুদ্ধ শক্তির প্রভাবে এমনটি করে থাকেন। ইদানীং মুসলিম নামধারী অনেককেও দেখা যায় ইসলাম-আরাতীদের কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাতে। তাদের সুরে কথা বলতে। বরং ইসলামের অনিষ্ট চিন্তায় অমুসলিমদের চেয়ে এসব মুসলিম নামধারীরাই একধাপ এগিয়ে। তাদের জন্য থাকছে আমাদের বুকভরা ভালোবাসা, একরাশ করুণা আর অনন্ত শুভ কামনা। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এবং সকল মুসলিমকে হেদায়াত দিন। সবাইকে ইসলাম বিরোধী শক্তির অপ্রচারের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার তাওফীক দিন। আমীন

▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭

আগামী ৫ আগস্ট শুরু হতে যাচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন


বাংলাদেশ বার্তাঃ  ‘ভিটামিন ‘এ’ খাওয়ান, শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমান’ এই স্লোগনকে সামনে রেখে আগামী ৫ আগস্ট শুরু হতে যাচ্ছে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাম্পেইন। এই কর্মসূচির আওতায় ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর।বয়সী শিশুদেরকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

এই ক্যাম্পেইন দেশের সকল টিকাদান কেন্দ্রে সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত এক টানা এই ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

যেখানেই থাকুন না কেন দেশের যে কোন টিকাদান কেন্দ্র
থেকে আপনার শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে পারবেন। শিশুর বয়স ৬ থেকে ১১ মাসসবয়স হলে প্রতিটি শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুকে বছরে দুইবার একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাসুল খাওয়ানো হবে।

ভিটামিন ‘এ’ যে শুধুমাত্র অপুষ্টিজনিত অন্ধত্ব থেকে শিশুদের রক্ষা করে তাই নয়, ভিটামিন ‘এ’ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ডায়রিয়ার ব্যাপ্তিকাল ও জটিলতা কমায় এবং শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়।

বাংলাদেশে ভিটামিন ‘এ’ এর।অভাবজনিত সমস্যা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় পুষ্টি সেবা, জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান বছরে দুইবার জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন করে থাকে।

পুলিশের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ: সরকারের জুলুম-নির্যাতন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান

বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীল চট্টগ্রাম উত্তর সাংগঠনিক জেলা শাখা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী অধ্যাপক নূরুল আমীন চৌধুরী এবং হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর জনাব শহিদুল ইসলামসহ জামায়াতে ইসলামীর ৭জন নেতা-কর্মীকে গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় পুলিশের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর এবং সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম আজ ২৬ জুলাই প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, “চট্টগ্রাম উত্তর সাংগঠনিক জেলা শাখা জামায়াতে ইসলামীর উপরে উল্লেখিত নেতৃবৃন্দ ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় একটি বিবাহের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য একত্রিত হলে পুলিশ তাদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। তাদের গ্রেফতার করার পর পুলিশ মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে যে, তাদের বেআইনী সমাবেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ তারা কোন রাজনৈতিক সভা বা সমাবেশ করেননি।
পুলিশ চট্টগ্রাম উত্তা সাংগঠনিক জেলা শাখা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জনাব নূরুল আমীন চৌধুরীসহ স্থানীয় জামায়াতের ৭ জন নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অধ্যাপক নূরুল আমীন চৌধুরীর মাতা সালেমা খাতুন (৮৫) ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি............রাজীঊন)। তা সত্ত্বেও পুলিশ নির্দয়ভাবে তাদের আটক করে রেখেছে। এ থেকেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, সরকারের জুলুম-নির্যাতন কী সাংঘাতিক অমানবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোন সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের অমানবিক আচরণ কি কখনো কল্পনা করা যায়? সরকারের মধ্যে যদি সামান্যতম মানবিক মূল্যবোধ থাকত তাহলে অধ্যাপক নূরুল আমীন চৌধুরীকে জরুরীভাবে মুক্তি দিয়ে তার মৃত মাকে একবার দেখার ও নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণ করে মায়ের জন্য দোয়া করার সুযোগ দিত। সরকারের এ ধরনের জুলুম-নির্যাতন ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
অধ্যাপক নূরুল আমীন চৌধুরীসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর গ্রেফতারকৃত সকল নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

আমার ভাবনায় শহীদ কামারুজ্জামান - ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক...!!

বাংলাদেশ বার্তাঃ   শহীদ কামারুজ্জামানের সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ কখন সঠিক মনে পড়ছে না। সম্ভবত ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে, লন্ডনে। আমার বার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ব্রিটেনে যুব আন্দোলন সংগঠিত করার দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে। পড়াশুনার ঝামেলা শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছি। তখনকার ব্রিটেনের অবস্থা অনেক ভিন্ন ছিল। বাংলা ভাষাভাষী বেশির ভাগ মানুষই তখন শ্রমজীবী। তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য খুব একটা উৎসাহিত করা হতো না। ১৭-১৮ বছর পার হলেই কাজে লাগিয়ে দেয়া হতো। ছাত্র ও যুবকদের সংগঠিত করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হচ্ছিল।
এমতাবস্থায় আমরা কিছু যুবককে হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেছি হাঁটি-হাঁটি-পা-
পা করে। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম একটি যুব সম্মেলন করব। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বড়দিনের ছুটিতে সেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো বার্মিংহামে, যা পরবর্ত সময়ে ব্রিটেনের যুব আন্দোলনের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। ওই সম্মেলনের মাধ্যমেই যুবকদের কাজের ভিত্তি স্থাপিত হয়।
সম্মেলনের জন্য বক্তা পাচ্ছিলাম না। ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়লাম। হঠাৎ খবর পেলাম ইসলামী ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ইংল্যান্ড সফর করছেন। যুব সম্মেলনে তিনি যে একজন উপযুক্ত মেহমান হবেন তাতে আমাদের কোনো সন্দেহ ছিল না। তাকে পেয়ে আমরা যারপরনাই আনন্দিত হলাম। অপর মেহমান ছিলেন তৎকালীন সময়ে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত একজন ছাত্র।
যুবকদের সামনে উৎসাহব্যঞ্জক বক্তব্য রাখলেন কামারুজ্জামান ভাই। ব্যক্তিগতভাবে তাদের অনেকের সাথে মিশে গেলেন তিনি। যুবকেরাও তাকে পেয়ে খুবই আনন্দিত।ওই সম্মেলনের ৩৬ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর পেছনের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা ব্রিটেনে ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপনে শহীদ কামারুজ্জামান থেকে এক ঐতিহাসিক খেদমত নিয়েছিলেন।
১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইরানে শাহের পতন হয় এবং ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হয়। ইরান বিপ্লব বিশ্বরাজনীতিকে প্রভাবিত করে। বিপ্লবের মাত্র কয়েক মাস আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার তার ইরান সফরকালে বলেছিলেন, ‘সঙ্ঘাতময় বিশ্বে ইরান একটি শান্তির দ্বীপ।’ ইরান বিপ্লব, গোটা মুসলিম বিশ্বের ওপর এর প্রভাব, মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশের ইসলামি আন্দোলন এবং পাশ্চাত্যে ইসলামের ভবিষ্যৎ এসব খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কামারুজ্জামান ভাইয়ের সাথে অনেক দীর্ঘ আলোচনার সুযোগ হয়। সেই সময়ে তার বিচক্ষণতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং সর্বোপরি তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার সাথে আমি পরিচিত হই।
তারপর ১৯৮২ সালে গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে যাই। তখন তিনি দৈনিক সংগ্রামের একজন সাংবাদিক। সংগ্রাম অফিসেই তার সাথে সাক্ষাৎ করি। সাক্ষাতের সময় আমার হাতে বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসেবে এনরোলমেন্টের জন্য কিছু কাগজপত্র ছিল। এসব কাগজ দেখে আমি কিছু বলার আগেই মেধাবী এই সাংবাদিক বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমি দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছি। তিনি খুশি হন এবং আমাকে দেশে ফিরতে উৎসাহিত করেন। ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি ইংল্যান্ডের প্রবাসজীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বাংলাদেশে ফিরে আসি। তখন থেকে তার সাথে আমার সম্পর্ক গভীর হয়।
১৯৮৬ সালের শুরুতে আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত কথা বলার জন্য তাকে আমার বাসায় দাওয়াত করি। তিনি তখন জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতা। বিনা সঙ্কোচে তিনি আমার বাসায় আসেন। অনেক রাত পর্যন্ত তার সাথে আলোচনা হয়। সেদিন থেকেই আমি লক্ষ্য করলাম তার সাথে আমার চিন্তার অদ্ভুত মিল রয়েছে। অবশ্য তার সাথে যে আমার দ্বিমত হতো না তাও নয়। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী যখন যুগপৎভাবে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিল, তখন আন্দোলনের ধরণ নিয়ে তার সাথে আমার মতপার্থক্য হয়।
১৯৯৬-এর জুন মাসের সংসদীয় নির্বাচনের ফলাফল জামায়াতে ইসলামীর জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। নানা কারণে আমার মনটা খুব খারাপ ছিল। অনেক দিন কারো সাথেই কোনো যোগাযোগ রাখিনি। হঠাৎ একদিন দেখি উনি আমার মতিঝিলের ল-চেম্বারসে এসে হাজির। আলাপ-আলোচনার একপর্যায়ে বললেন,‘আমাদের ওপর বোধহয় রাগ করেছেন, কোনো যোগাযোগ রাখছেন না এবং আইন পেশায় নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত রেখেছেন।’ তার কথার কী জবাব দিয়েছিলাম তা আজ আমার মনে নেই, তবে তিনি যে একজন অসাধারণ বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলেন এবং আপনজনকে যে কখনো উপেক্ষা করতেন না, সে বিষয়টি আমি খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করেছিলাম।
তিনি ছিলেন সাহসী ও দূরদর্শী। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর জামায়াতে ইসলামী সরকারে অংশগ্রহণ করে। ২০০৩-০৪ সালে জোট সরকার দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল। জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদে তিনি প্রস্তাব দিলেন, আমরা সরকারে থাকলেও যারা মন্ত্রিসভায় নেই তাদের পক্ষ থেকে এসবের প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমার মতও তাই ছিল। আমি আরো এক ধাপ অগ্রসর হয়ে ব্রিটেনের উদাহরণ দিয়ে বলেছিলাম : সেখানকার রাজনৈতিক দলের প্রবীণ নেতৃবৃন্দ, যারা মন্ত্রিসভার সদস্য নন, নিজ দলের মন্ত্রিসভারও সমালোচনা করেন। একদিন পত্রিকায় দেখলাম কামারুজ্জামান ভাই জোট সরকারের আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য সংক্রান্ত ব্যর্থতার সমালোচনা করেছেন। এ সমালোচনা তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও সাহসিকতার পরিচয় বহন করে।
ছাত্রশিবিরকে নিয়ে তিনি সব সময় ভাবতেন। ২০০৯ সালে একটি সম্মেলনে যোগদানের জন্য তিনি সিঙ্গাপুর যেতে চেয়েছিলেন। সরকার তাকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেয়। তখন তার মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। আমি বিষয়টি নিয়ে তার সাথে আলাপ করলাম। তিনি জবাব দিলেন,‘আমাদের ভাগ্যে যা হওয়ার তাই হবে, ছাত্রশিবিরের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করছি।’ ছাত্রদের পড়াশুনা, তাদের ক্যারিয়ার এবং তারা সঠিকভাবে গড়ে উঠছে কি না- এসব বিষয় নিয়ে তিনি গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন।
২০১০ সালের মার্চ মাসে ‘যুদ্ধাপরাধ’ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ওই সময় আন্দোলনকে নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত ছিলেন এবং বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে অনেক মন্তব্য করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতি বছরই গ্রীষ্মকালে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন সময়ে আমি ইউরোপ ও আমেরিকা সফর করি। ২০১০ সালের জুন মাসের শুরুতে আমি আমেরিকা ছিলাম। ওই মাসের শেষে লন্ডন আসি। লন্ডন আসার কয়েক দিন পর আমীরে জামায়াত, সেক্রেটারি জেনারেল ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একই সাথে গ্রেফতার হন। আমার তখন জার্মানি সফরের কথা ছিল। জার্মানির পররাষ্ট্র দফতরে সাক্ষাৎকারের একটা দিন-তারিখ ঠিক হয়েছিল।
নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের কারণে জার্মানি সফর বাতিল করে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরে আসি। দ্রুত ফিরে আসার পেছনে আরো একটা কারণও ছিল- আবদুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান ভাইয়ের জন্য হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেয়া। ১৩ জুলাই তারা হাইকোর্টে জামিনের জন্য হাজির হন। আমি তাদের আইনজীবী। এটর্নি জেনারেল কোনো কারণ ছাড়াই সময়ের প্রার্থনা করলেন। আমরা সময়ের প্রার্থনার বিরোধিতা না করে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালী
ন জামিন প্রদানের আবেদন করলাম। দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এতে রাজি হলেন। কিন্তু কনিষ্ঠ বিচারপতির বিরোধিতার কারণে জামিন পাওয়া গেল না। খবর পেলাম, পুলিশ সুপ্রিম কোর্টের সব দরজা বন্ধ করে শুধু প্রধান ফটক খোলা রেখেছে। কী ঘটতে যাচ্ছে তা বুঝতে আমাদের অসুবিধা হলো না।
এটর্নি জেনারেলের সময় প্রার্থনার মাহাত্ম্যও বোঝা গেল। আমরা নিশ্চিত হলাম মোল্লা ভাই ও কামারুজ্জামান ভাই বের হলেই গ্রেফতার হবেন। এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠলো- কে প্রথমে সুপ্রিম কোর্ট ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করবেন। কারো কোনো কথা বলার আগেই শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা দ্বিধাহীন চিত্তে বললেন, ‘আমি আগে যাবো। কামারুজ্জামান ভাই আমার পরে যাবেন। এ বিষয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।’ শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার এই দ্বিধাহীন বলিষ্ঠ বক্তব্যে আমি অনেকটাই বিস্মিত
হয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্টের গেটে যাওয়ার সাথে সাথে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তারপর কামারুজ্জামান ভাইকে বিদায় দেয়ার পালা। আমরা সবাই যৌথভাবে তার জন্য দোয়া করে অশ্রুভারাক্রান্ত হৃদয়ে তাকে বিদায় জানালাম। অনেকের মধ্যে সেখানে ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহেরও উপস্থিত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের গেটে আসতেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল।
যদিও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের এই গ্রেফতার থেকে বিরত থাকা উচিত ছিল। ১৩ জুলাই ২০১০ সাল ছিল দুই শহীদ- আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের স্বাভাবিক মুক্ত জীবনের শেষ দিন।
ট্রাইব্যুনালের মামলা নিয়ে তিনি প্রায়ই বলতেন, আপনারা এত কষ্ট করে কেন বিচারকার্য পরিচালনা করছেন? বিচারের ফলাফল তো সবারই জানা। ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালে তার মামলা চলছিল। সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণের পর যুক্তিতর্কের পালা। যুক্তিতর্কের দু’টি দিক ছিল। ১. মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধের আইনের ব্যাখ্যা; ২. সাক্ষ্যপ্রমাণের যথাযথ বিশ্লেষণ। বাংলাদেশের ফৌজদারি মামলা পরিচালনায় আমার বিশেষ কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু কামারুজ্জামান ভাইয়ের মামলায় আইনগত দিক এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সংক্রান্ত দলিলদস্তাবেজ খুব ভালোভাবে রপ্ত করার চেষ্টা করলাম।
টানা চার-পাঁচ দিন তার মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করলাম। একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনালের মাননীয় চেয়ারম্যান আমাকে বললেন : ‘আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা আপনার কাছ থেকে শুনতে আমরা খুবই আগ্রহী। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণের বিশ্লেষণ নিয়ে আপনার এত কষ্ট করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। অন্য কাউকে আপনি এই দায়িত্ব দিলেও পারতেন।’ মাননীয় বিচারপতির বক্তব্যে হয়তো সারবত্তা ছিল; কিন্তু কামারুজ্জামান ভাইয়ের পক্ষে সব ধরনের যুক্তিপ্রমাণ উপস্থাপনের ঐতিহাসিক সুযোগ থেকে আমি নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইনি। তা ছাড়া কামারুজ্জামান ভাইয়ের সাথে আমার ব্যক্তিগত যে সম্পর্ক ছিল মাননীয় বিচারপতির তা জানা থাকার কথা নয়।
আমরা তার মামলার সাথে প্রাসঙ্গিক দেশ-বিদেশের উচ্চ আদালতের নজিরসহ যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থাপন করছিলাম, আর তিনি ‘আসামির’ কাঠগড়ায় বসে তা শুনছিলেন। যুক্তিপ্রমাণ উপস্থাপন শেষ হলে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। এর কয়েক দিন পর কারাগার থেকে লেখা তার একটি চিঠি পেলাম। লিখেছেন, আমি এবং আমার জুনিয়র এহসানকে উদ্দেশ করে। তাতে আমাদের পেশাগত দক্ষতার প্রশংসা করেছেন এবং তার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তার এই সৌজন্যে আমি সত্যিই অভিভূত হয়েছিলাম। আমার দুর্ভাগ্য, সুপ্রিম কোর্টে তার আপিল ও রিভিউ পিটিশন শুনানির সময় আমি অনুপস্থিত ছিলাম। এটা আমার জন্য খুই বেদনাদায়ক। দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে আমাকে বিদেশে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে সুপ্রিম কোর্টে শহীদ কামারুজ্জামানের আপিল আবেদন খারিজ হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই তড়িঘড়ি করে তার রায় কার্যকরের চেষ্টা করা হয়। এ অবস্থায় একদিন তার বড় ছেলে ওয়ামির ফোন পেলাম। সে বলছিল- ‘চাচা, আব্বুর ভাগ্যে যা আছে তা তো হবেই, কিন্তু মোল্লা চাচার মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করত তাহলে আমরা পরিবারের লোকজন কিছুটা হলেও সান্ত্বÍনা পেতাম।’ এরপর আটলান্টিক মহাসাগরের উভয় তীরে জাতিসঙ্ঘসহ বিপুলসংখ্যক মানবাধিকার সংগঠন এই মর্মে জোরালো প্রতিবাদ জানায় যে, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং রিভিউ পিটিশন শুনানি না হওয়া পর্যন্ত যেন চূড়ান্ত শাস্তি বাস্তবায়ন করা না হয়। যার ফলে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়া এবং রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা থেকে বিরত থাকতে। শেষ পর্যন্ত এপ্রিল মাসের ১১ তারিখে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পূর্ব পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মৃত্যুদণ্ড যাতে কার্যকর না হয় এর পক্ষে জোরালো দাবি জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ যে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দুনিয়াতে নতুন কিছু নয়। আজ থেকে ৭০ বছর আগে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে সর্বপ্রথম নুরেমবার্গ ট্রায়াল অনুষ্ঠিত হয়। তার পরে টোকিও, সাবেক যুগোস্লøাভিয়া, রুয়ান্ডা, সিয়েরালিয়ন, কম্বোডিয়া, পূর্ব তিমুর, লেবাননসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হয়েছে। এসব বিষয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ছিলেন সামরিক বিভাগের লোক। এর বাইরে যারা ছিলেন তারা ছিলেন রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের
অধিকারী।
স্মরণ করা যেতে পারে, যে সময়ে কামারুজ্জামান ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল তখন তার বয়স ছিল ১৮-১৯। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল তা হচ্ছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো সুশৃঙ্খল বাহিনীর ওপর তার কর্তৃত্ব ছিল। এটা যুগপৎভাবে অবিশ্বাস্য ও নজিরবিহীন। শহীদ কামারুজ্জামান ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড় করিয়ে প্রতিহিংসাবাদীরা হয়তো বিজয়ের হাসি হেসেছেন, কিন্তু তারা জানেন না দ্বীন-দুনিয়ার মালিক কী অভিভাষণে তাকে পরকালে স্বাগত জানাবেন। আল কুরআনের ভাষায়- ‘তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলল, হায় ! আমার জাতি যদি কোনোক্রমে জানতে পারতো কিভাবে আমার পরোয়ারদিগার আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।’ (৩৬ : ২৬-২৭)
রাজনীতি একটি কঠিন ও জটিল বিষয়। রাজনীতিবিদদের দূরদর্শী হতে হয় কামারুজ্জামান ভাইয়ের রাজনীতি বিশ্লেষণী ক্ষমতা যে কতটা পরিপক্ব ছিল এবং তিনি যে কতটা দূরদর্শী ছিলেন তার প্রমাণ মেলে কারাগার থেকে ২০১০ সালে প্রকাশ করা এক ভাবনায়। ফাঁসির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজের জীবন রক্ষার উদ্বেগের পরিবর্তে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নিয়েই ছিলেন উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের জটিল রাজনৈতিক সমস্যার অত্যন্ত গভীরে তিনি পৌঁছতে পেরেছিলেন এবং এর সমাধানের জন্য জাতীয় রাজনীতিতে হানাহানি বন্ধ করে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি সৃষ্টির প্রস্তাবনা রেখেছিলেন। তিনি দৃঢ়ভাবে এই মত ব্যক্ত করেছিলেন যে, শুধু এভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব। তিনি ১১টি পয়েন্টের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের বর্তমান সঙ্কটপূর্ণ অবস্থা বিশ্লেষণ করে যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন মাত্র চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তা অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি যে এতটা দূরদর্শী ছিলেন তার জীবদ্দশায় এ সত্যটা অনুধাবন করতে পারিনি বলে আজ খুবই আক্ষেপ করছি।শহীদ কামারুজ্জামান চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে দশটায় দুনিয়াবাসী তাকে চিরবিদায় জানিয়েছে অশ্রুভারাক্রান্ত হৃদয়ে। এখন তিনি আছেন আসমানবাসীর তত্ত্বাবধানে। আল কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা : ‘আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে কখনো মৃত মনে কোরো না; বরং তারা তাদের পালনকর্তার কাছে জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত।’(৩ : ১৬৯)
আজ এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, কামারুজ্জামান ভাই আর আমাদের মাঝে নেই। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমার ধানমন্ডির বাসভবনে তাকে আর কোনো দিন অভ্যর্থনা জানাতে পারব না। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, আমার নয়া পল্টন ল-চেম্বারসে তিনি আর কোনো দিন সাক্ষাৎ করতে আসবেন না। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, টেলিফোনে তার কণ্ঠস্বর আর কোনো দিন শুনতে পারব না। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, তার হাসিমাখা মুখ এই দুনিয়ায় আর কোনো দিন দেখতে পাবো না।
কামারুজ্জামান ভাই ছিলেন বাংলাদেশে ইসলামি আন্দোলনের এক বিরল ব্যক্তিত্ব। ইসলামি আন্দোলনের আকাশে আরেকজন কামারুজ্জামানের আবির্ভাব কবে ঘটবে দূর প্রবাসে বসে জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় (Autumn of life) তাই ভাবছি আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আরজি জানাচ্ছি তিনি যেন ভাই কামারুজ্জামানের শাহাদত কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দেন এবং ইসলামি আন্দোলনে তার অভাব পূরণ করে দেন।

বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০১৭

অবিশ্বাস্য ডিজিটাল প্রতারণা, সাবধান!

বিশ্বাস অর্জন করে এভাবেও তাহলে অবিশ্বাস্য প্রতারণা করা যায়! খুলে বলা যাক ঘটনা।
রাজধানীর একটি সরকারি কলেজের লেকচারার রাজিয়া খানমের কাছে হঠাৎ একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। তিনি যে মোবাইল অপারেটরের সিম ব্যবহার করেন সেই একই অপারেটরের নম্বর। ফোনের ওপাশ থেকে বলা হয় ‘আমি কাস্টমার সার্ভিস থেকে বলছি। আপনার জন্য একটি সুখবর আছে। আমরা বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশনকৃত সিমের মধ্য থেকে একটি লটারী আয়োজন করেছি এবং আপনার নম্বরটি প্রথম পুরষ্কার হিসেবে ২১ লক্ষ টাকা জিতেছে।’ রাজিয়া বিরক্ত হন এসব শুনে। কেননা তিনি দেশের খবরাখবর ভালই রাখেন। এরকম অনেক ভুয়া লটারীর খবর তিনি ইন্টারনেটে পড়েছেন, কলিগদের কাছেও শুনেছেন। কাজেই ফোন কেটে দেয়ার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু থেমে গেলেন পরের কথাগুলো শুনে। ওপাশ থেকে বলতে থাকল, ‘আপনি নিশ্চয় গতকাল বিটিভিতে রাত ৮ টার সংবাদের পর প্রচারিত অনুষ্ঠানটি দেখেছেন ম্যাম। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী, আমাদের কোম্পানীর সিইওসহ ৬৪ জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানেই লটারীটি অনুষ্ঠিত হয়’। রাজিয়া’র বিটিভি দেখা হয়না বললেই চলে। তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। শুধু বললেন, ‘না, আমি দেখিনি। কিন্তু এটার প্রুফ কি?’ তখন তাকে জানানো হল অল্প সময়ের মধ্যেই কাস্টমার সার্ভিস থেকে একটি কনফার্মেশন এসএমএস আসবে। সেখানে প্রদত্ত ইন্সট্রাকশন ফলো করতে হবে। এরপর কাস্টমার ইনফরমেশন ভেরিফাই করার কথা বলে জেনে নেয়া হয় রাজিয়ার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য। কিছুক্ষণ পর সত্যিই মোবাইল অপারেটরের নম্বর থেকে একটি কনফার্মেশন এসএমএস আসে। এরপর পুনরায় ফোন আসে রাজিয়ার নম্বরে। বলা হয় লটারী উইনার সিম হিসেবে সিমটি পুনরায় রেজস্ট্রেশন করতে হবে যেটির ফি বাবদ ৩৫০০ টাকা প্রদান করতে হবে। দেয়া হয় একটি বিকাশ নম্বর। রাজিয়া কিছুটা সন্দেহ আর কৌতুহল নিয়ে বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন।
দুই দিন পর Central Bank লেখা একটি নম্বর থেকে এসএমএস আসে রাজিয়ার নম্বরে। যেখানে লটারী জেতার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয় লটারীতে জেতা টাকা প্রসেস করার জন্য কিছু ব্যাংক চার্জ আছে। এই চার্জ পরিশোধ করতে রবি’র নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। পরে আবার সেই নম্বর থেকে ফোন আসে রাজিয়ার কাছে। বলা হয় চার্জ বাবদ ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বিকাশ করতে হবে। রাজিয়া সেন্ট্রাল ব্যাংকের এসএমএস পাওয়ার পর বিশ্বাস করতে থাকেন লটারী জেতার বিষয়টি। তাই চার্জ বাবদ টাকা পরিশোধ করে দেন দ্রুত। কয়েকদিন পর NBR লেখা নম্বর থেকে এসএমএস আসে সেখানেও একই ভাবে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয় এই সিমের জেতা অর্থের বিষয়ে সেন্ট্রাল ব্যাংকের এপ্রুভাল পাওয়া গেছে তবে লটারীতে জেতা টাকার বিপরীতে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। এই ট্যাক্স পরিশোধ করতে রবি’র নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। পরে আবার সেই নম্বর থেকে ফোন দিয়ে কিছু বিকাশ নম্বর ট্যাক্স বাবদ ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। রাজিয়া আর অবিশ্বাসের কিছু দেখেন না। বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দিলেন। এভাবে একের পর এক DUDOK, TnT, Parliament এরকম বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের নামে এসএমএস দিয়ে বিভিন্ন রকম ফি/চার্জ পরিশোধ করতে বলতে থাকে। প্রতিবারেই আগেরবারের সরকারি প্রতিষ্ঠানের এপ্রুভালের অথবা ক্লিয়ারেন্সের কথা উল্লেখ করা হয় এবং তার সাথে বাড়তে থাকে টাকার অংক। আর কিছুদিন যেতেই রাজিয়া বুঝতে পারেন তিনি আসলে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। লটারীর বিষয়টি মূলত ভুয়া। কিন্তু ততদিনে লটারীতে জেতা পুরষ্কারের লোভে প্রতারকদের হাতে তুলে দিয়েছেন সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা। আফসোস আর একরাশ হতাশা নিয়ে শেষ পর্যন্ত দ্বারস্থ হন পুলিশের।
উপরে বর্ণিত ঘটনাটির ভুক্তভোগীর নাম ও পরিচয় কাল্পনিক। কিন্তু প্রতারণার ধরণ বর্ণিত এই ঘটনাটির মতই। কেবল ব্যক্তিভেদে টাকার অংক, টাকা দাবীর অজুহাত ভিন্ন ভিন্ন হয়। বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটর কোম্পানির নামে ভুয়া এসএমএস পাঠিয়ে বিশ্বাস অর্জন করার প্রক্রিয়াটিও প্রায় সব ক্ষেত্রে কমন।
ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এ ধরণের বেশ কিছু ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তে নামে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি এন্ড ক্রাইম বিভাগ। গত ১৭ জুলাই’১৭ তারিখে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষনের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ডিজিটাল প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে। পরে তাদের স্বীকারোক্তির উপর ভিত্তি করে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আরো ৫ জন প্রতারককে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-মোঃ কামাল হোসেন, জাফর মুন্সি, মোঃ মিলন শিকদার, মোঃ আজিজুল হাকিম, তাপস সাহা, মানিক @ বাবুল মুন্সী, মোঃ বকুল মুন্সী এবং ওলি মীর। এরা সবাই বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা অথবা কাস্টমার সার্ভিসের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে বিকাশ-এর মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিত।
কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ডিভিশন সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এরা সবাই ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার ‘ওয়েলকাম’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্য। প্রতিষ্ঠানটির কাজই হচ্ছে এধরণের প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেয়া। এজন্য তারা বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া এসএমএস পাঠাতো যাতে মানুষের মনে টাকা পাঠানোর ব্যাপারে কোন সন্দেহের সৃষ্টি না হয়। টাকা সংগ্রহের জন্য তারা ব্যবহার করত ভিন্ন ভিন্ন বিকাশ নম্বর। যেগুলোর সবগুলোই ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর তারা ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও সিম দুটোই নষ্ট করে ফেলত যাতে কোনভাবে তাদের সনাক্ত করা না যায়।
সিটি আরো জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৩ জন ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে মাধ্যমে এই চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে। একই সাথে এধরণের ডিজিটাল প্রতারণার অন্য কোন চক্র সক্রিয় আছে কিনা সেবিষয়েও কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।
সবশেষে বলা যায় আমাদের জীবন তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে ততই বাড়ছে এধরণের ডিজিটাল প্রতারণার সংখ্যা। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে প্রতারক চক্রের কাজের ধরণ। তাই বদলাতে হবে, সচেতন হতে হবে আপনাকেও। নিশ্চিত না হয়ে অপরিচিত কারো কথায় আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে সব সময়। নিজের দায় নিজেকেই নিতে হবে। তা না হলে ‘বিশ্বাসে মেলায় বস্তু’- প্রবাদটিও সময় বিশেষে মিথ্যা প্রমাণ হতে বেশি সময় লাগবেনা। অতএব, সাধু সাবধান !
সুত্র ডিএমপি নিউজ/এসকেসি

শাহআলম চৌধুরী'র ইন্তেকালে মোহরা জামায়াতের শোক প্রকাশ


বাংলাদেশ বার্তাঃ মোহরা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন চৌধুরীর পিতা  শাহআলম চৌধুরী'র ইন্তেকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মোহরা ওয়ার্ড শোক প্রকাশ  করেছেন। 

মোহরার মোহাম্মদ আলাউদ্দিন চৌধুরীর পিতা  শাহআলম চৌধুরী'র ইন্তেকাল করেছেন।  "ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিউন"। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মোহরা ওয়ার্ড সভাপতি জনাব ফারুক এবং সহ-সভাপতি জনাব মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন সরকার শোক প্রকাশ করে এক যৌথ বিবৃতি প্রদান করেছে।

বিবৃতিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেছেন, যেন মহান আল্লাহ উনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন এবং উনার শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

আজ বাদে যোহর মধ্যম মোহরা ছদরিয়া জামে মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাযা অনুষ্টিত হবে। জানাযার স্থান ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুলের মাঠ। পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭

আরও একটি মনোরম সাহিত্য আড্ডার কথা !!


বাংলাদেশ বার্তাঃ  সকালের ইস্কাটন গার্ডেনের কথা তো হয়ে গেল ! গতকাল পড়ন্ত বিকেলে আবার ছুটলাম ইন্দিরা রোডের অন্যধারার সাপ্তাহিক নিয়মিত সাহিত্য আড্ডায় ।নিয়মিত হলেও আমি বরাবরেই অনিয়মিত বিবিধ কারণে। আড্ডা পাগল কবি জামান মনির যখন খুলনা থেকে ঢাকায়, তখন তো ঘরে বসে থাকা দায়!! তার উপর তিনিই আজ আড্ডা ও কাব্য আলোচনার মধ্যমণি ।তাই দ্বিগুণ উৎসাহে ছুটতে হলো তার সাথে । তা ছাড়া মান্যবর

কবি ও অন্যধারা সাহিত্য সংসদের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ড.সৈয়দ রনো আগেই স্ট্যাটাস দিয়ে রেখেছেন বিশেষ আলোচক হিসাবে আমাকেও দাঁড়াতে হবে ।আমি ঘরোয়া আড্ডায় প্রাণবন্ত থাকলেও মঞ্চে... 'পা কাঁপিতেছে ..পর্দা ফেলিয়া দাও!'অবস্থা হয় ।
তবুও কি আর করা ? মাঝে মাঝে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে যাই !! যা হোক ,আড্ডায় গিয়ে বুঝলাম আমাদের জন্য আজ আরও একটি চমক অপেক্ষা করছে । প্রখ্যাত ছড়াকার. আবু সালেহ ৭১ এ পদার্পণ করলেন ৬ শ্রাবণ ,তাকে ঘিরে আনন্দ উৎসব, কেক কাটার আয়োজন চলছে । একে একে আমন্ত্রিত অতিথিবর্গ আসলেন । কবি ক্যামেলিয়া আহমেদ,কবি ও প্রাবন্ধিক বকুল আশরাফ ,কবি ও কথা সাহিত্যিক শাওন আজগর ,
সাহিত্য সম্পাদক ,কবি জাকির আবু জাফর ,তারুণ্যের কবি রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন এবং ছড়াকার আবু সালেহ সবাই আসন গ্রহণ করলেন। এভাবে আড্ডা ধীরে ধীরে
বেশ জমে উঠলো ।পারিবারিক অনুষ্ঠান থাকার জন্য প্রধান অতিথি আগেই আলোচনা করলেন ।কেকটাও আড়ম্বরে কাটা হলো ।আবেগ আপ্লুত কবি সবাইকে পারিবারিক অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে গেলেন ।তারপর আমরা আবার মূল প্রোগ্রামে চলে আসলাম ।আড্ডার কবি তার কাব্য গ্রন্থ " স্বচ্ছ জলে ডুব সাঁতার " থেকে পাঠ করলেন বেশ কয়েকটি কবিতা। মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশে কবিতা আবৃত্তি, আলোচনা চলতে লাগলো। সন্ধ্যা পেরিয়ে কখন রাত নামলো বুঝতে পারিনি । কবি মাদবর রফিকের সভাপতিত্বে
ও কবি সৈয়দ রনো ও কবি শাওন আজগরের সঞ্চালনায় পুরো অনুষ্ঠানটি বেশ উপভোগ্য,শিক্ষণীয় হয়ে উঠেছিল । দেখুন ,আড্ডার ছবি নিয়ে সাজানো এ্যালবাম।
।।
লালমাটিয়া ।ঢাক ।
২১ জুলাই ২০১৭
০৬ শ্রাবণ ১৪২৪

ফেইসবুক স্ট্যাটাস: আবু জাফর সিকদার

ভালোবাসায় সিক্ত হলাম আমরা কয়জনা!

বাংলাদেশ বার্তা:  শ্রাবণের সকাল! সূর্য মুখ গোমরা করে আছে,মেঘলা আকাশ! যেকোনো সময় ঝুম বিষ্টির আভাস! প্রকৃতির ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে, ছুটির দিনের আরাম ঘুম হারাম করে তবুও ছুটলাম ইস্কাটন গার্ডেনের নিঝুম নির্জন এক ডেরায়! প্রত্যাশিত সময়ে কড়া নাড়তেই চৌকাঠের ওপারে আমরা কয়জনকে স্বাগত জানালেন আমাদের প্রাণপ্রিয় লতিফ বন্ধু সুহৃদ কবি একেএম মিজানুর রহমান Rahman Akm Mizanurও তার সহধর্মীনী! 

ভাই ও ভাবীর আথিতিয়তা এতটাই প্রাণবন্ত, আন্তরিক যে তার বর্ণনা আমি দিতে পারবো না জানি,তবে মেঘলা দিনে সাত সকালে খিচুড়ি, ইলিশ ভুনা, শুটকির রকমারি পদ আর বরিশালের আমের চাটনি ডাইনিং টেবিলে সাজানো দেখলে কার না জিবে জল আসবে বলুন! আমাদেরও হল তাই!! খাওয়া পেটে আবার খেলুম! না হলে উপায় কী! তারপর গরম গরম চা এ চুমুক দিতে দিতে জম্পেশ আড্ডা! কবিতা কথা, জীবনের কথা, সুখ দুঃখ হাসি কান্নার কথা, ভালোলাগা মন্দ লাগা, বর্ণাঢ্য স্মৃতি আর অভিজ্ঞানের কথা আরও কথকতা! প্রিয় কবি জামান মনির Zaman Monir,প্রতিভাবান কবি ও কথা সাহিত্যিক রাফিয়া পলি Rafia Poliও আর ছোট্ট বাবু, খুদে লেখক তাশদীদ তাশি Tashdid Tashi এবং আমি মিলে যখন কবিবরের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে পৌঁছলাম তখন সকাল দশটা ছুঁই ছুঁই। তারপর খাওয়া দাওয়া সেরে আড্ডায় কখন যে সময় বয়ে গেল টেরই পেলাম না! অবশেষে 'বাংলা লতিফা সংকলন - কলস ২০১৫ 'এবং 'কলস ২০১৬ ' এবং কবি মিজানুর রহমানের একক বাংলা লতিফা কাব্যগ্রন্থ, 'মণিমালা' ও শিশুদের পাঠ্য-উপযোগী আরও দুটি অসাধারণ বই আমাদের হাতে হাতে আনন্দ চিত্তে তুলে দিলেন! আর সেই মুহূর্তগুলো ক্যামেরা-বন্দী করেছে সেই খুদে জন মাস্টার তাশদীদ তাশি। বাবু, তুমি তোমার তোলা ছবিতে না থাকলেও সর্বক্ষণ আমাদের সাথেই ছিলে, তোমাকে অনেক অনেক আদর, ভালোবাসা! 
আমাদেরকে একই ফ্রেমে ধরে রাখার জন্য ! হোস্টদ্বয়কে ধন্যবাদ দিয়ে আর খাটো করবো না! স্মৃতিময় ভালোবাসা অমর হোক! সাথে নিবেদন করছি একটি বাংলা লতিফা!
।।
কলস কাব্য
।।
লিখবো কী আর গপ্পো কথা
হৃদয় ছুঁয়েছে বিষ্টির ফোটা
টুপটাপ ঝরেছে আনন্দ সাগরে।
দক্ষিণা জানালা খোলা
বসেছিলাম কয়জনে ওই পাঠ-ঘরে!
শ্রাবণ বৈভবে মন-বীণা তারে লেগেছে ক্ষণিক দোলা।

।।
লালমাটিয়া। ঢাকা
০৬ শ্রাবণ ১৪২৪
২১ জুলাই ২০১৭
From FB Abu Zafor sikder

মানিকগঞ্জ পৌরসভা: বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে প্রদানের দাবীতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্ধ দিবস কর্মবিরতি পালন

মানিকগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা বৃদ্ধির
 দাবীতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করছে
বাংলাদেশ বার্তাঃ মানিকগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েসনের উদ্যোগে বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে প্রদানের দাবীতে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ দীর্ঘদিন যাবত  তাদের বেতন-ভাতা ও পেনশনসহ অন্যান্য সুবিধা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে প্রদানের দাবী জানিয়ে আসছিলেন। এরই অংশ হিসেবে তারা ২৪ জুলাই ২০১৭ইং তারিখ “সকাল ৯:০০ টা থেকে দুপুর ১:০০ পর্যন্ত” অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছে।
সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি তাদের জোর দাবী যেন তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়। মানিকগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী এসোসিয়েসন আশাবাদী যে তাদের দাবী মেনে নিয়ে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হবে।

সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০১৭

নামাজে জানাযা শেষে মুসল্লীদের গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা: গণবিচ্ছিন্ন এ সরকার মানুষের ধর্মীয় ও মৌলিক অধিকার হরণ করে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না-------অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ বার্তাঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলামের নামাজে জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার বিভিন্ন মোড় থেকে পুলিশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী, মরহুমের আত্মীয়-স্বজন ১০ জন মহিলাসহ শতাধিক সাধারণ মুসল্লীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আজ ২৪ জুলাই এক বিবৃতি প্রদান করেছেনঃ-
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা রফিকুল ইসলাম গত ২৩ জুলাই ইন্তেকাল করেন। আজ ২৪ জুলাই বাদ জোহর মরহুমের নামাজে জানাজায় দলমত নির্বিশেষ হাজার হাজার মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন। নামাজে জানাজা শেষে মুসল্লীগণ যখন বাড়ি ফিরছিলেন তখন রাস্তার বিভিন্ন মোড় থেকে পুলিশ অন্যায়ভাবে শতাধিক মুসল্লীকে গ্রেফতার করে। মরহুমের আত্মীয়-স্বজন মহিলারাও এ গ্রেফতারের হাত থেকে রেহাই পাননি।
সরকারের এ ধরনের ন্যক্কারজনক ভূমিকা মানুষের ধর্মীয় ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। এ ধরনের ইসলাম বিরোধী নৃশংস ও বর্বরোচিত ঘটনা ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবে দেখা যায়। আমি নামাজে জানাজা শেষে মুসল্লীদের গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।
গণবিচ্ছিন্ন এ সরকার মানুষের ধর্মীয় ও মৌলিক অধিকার হরণ করে বেশি দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আমি জনগণকে সরকারের জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানাচ্ছি।
গ্রেফতারকৃত মহিলাসহ সকল মুসল্লীদের অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে মুক্তি প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। ”

রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭

'আল আকসার জন্য প্রাণ দিতে যাচ্ছি'


'আমি আমার অন্তিম ইচ্ছার কথা লিখছি, এগুলোই আমার জীবনের শেষ কথা। আমি আল-আকসার জন্য শহীদ হতে যাচ্ছি'।
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এমন এক মর্মস্পর্শী পোস্ট দিয়ে ইসরাইলি সেটলারদের ওপর ছুরি হামলা চালিয়েছেন ওমর আল আবেদ নামের ১৯ বছরের এক ফিলিস্তিনি তরুণ।

শুক্রবার ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ৯০ মিনিটের মাথায় ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের হালামিসহে ছুরি হামলা চালান ওই তরুণ। এতে তিন ইসরাইলি নিহত হ্য়।
এদিকে হামলার পরপরই ওমরকে ধরে ফেলে ইসরাইলি সেনারা। এরপর তাকে গুলিও করা হয়।
শনিবার সকালে ইসরাইলি সৈন্যরা পশ্চিম তীরের কোবর গ্রামে ওমরের পরিবারের খোঁজে অভিযান চালায় এবং তার এক ভাইকে আটক করে।
তবে হামলার ঘটনায় ওমর ও তার পরিবার বিপদে পড়লেও ফিলিস্তিনিদের কাছে রীতিমত নায়কে পরিণত হয়েছেন দুঃসাহসী তরুণটি। ফেসবুকে দেয়া পোস্ট নিয়ে তুমুল আলোচনাও শুরু হয়েছে।
আরবী ভাষায় লেখা ওমরের পোস্টটি ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে ইসরাইলি সংবাদপত্র হারেজ।
এতে দেখা যায় ওমর লিখেছেন, 'আমি বয়সে তরুণ, এখনও আমার বয়স কুড়ি বছর হয়নি, আমার অনেক স্বপ্ন ও সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ কেমন জীবন, যখন তারা (ইসরাইলিরা) কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আমাদের নারী ও তরুণদের হত্যা করছে? তারা আল-আকসা মসজিদকে অপবিত্র করছে আর আমরা ঘুমিয়ে থাকছি, এটি খুবই লজ্জার ব্যাপার যে আমরা অলস বসে আছি'।
যেসব ফিলিস্তিনির কাছে অস্ত্র আছে তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে তরুণটি লেখেন, জানতে চেয়ে লেখেন, আপনারা এসব অস্ত্র শুধু বিয়ের অনুষ্ঠান আর উৎসবের সময় বের করেন, আপনারা কি নিজের জন্য লজ্জিত বোধ করেন না? কেন আপনারা আল্লাহর নামের যুদ্ধের ঘোষণা দেন না। তারা আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে আর আপনাদের অস্ত্রের কোনো নড়াচড়া নাই।
এরপর ওমর লেখেন, আমার কাছে একটি চকচকে ধারালো ছুরি আছে, এটি আল-আকসার ডাকে সাড়া দিচ্ছে। তোমাদের (ইসরাইলি) জন্য লজ্জা, তোমাদের জন্য লজ্জা যারা ঘৃণা ছড়াও। আল্লাহ তোমাদের ওপর প্রতিশোধ নেবেন... আমরা সবাই ফিলিস্তিনের সন্তান এবং আমরা সবাই আল-আকসার সন্তান। আর তোমরা (ইসরাইলিরা) বানর এবং শুয়োরের সন্তানরা জেনে রাখ, তোমরা যদি আল-আকসার দরজা খুলে না দাও, আল্লাহ তোমাদের ধাওয়া করবেন এবং মর্মন্তুদ শাস্তি দেবেন, আমি তোমাদের হুঁশিয়ার করছি।
এদিকে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সংস্থা হামাস ওমর আল আবেদের হামলাকে সমর্থন করেছে। সংগঠনটির মুখপাত্র হুসাম বাদরান বলেন, 'আল-আকসা মসজিদের সমর্থনে আমরা দখলদারির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই চালিয়ে যাব।
ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী বলছে, হামলাকারী ওমরকে তারা হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে মনে করছে। তবে এখনও তাকে হামাসের সক্রিয় সদস্য বলে বিবেচনা করেনি তারা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার আল-আকসা মসজিদে প্রবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ করেছে। এ সময় ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এত তিন ফিলিস্তিনি তরুণ নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হন। এছাড়া আটক হন অন্তত ২৭ জন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলছে, এদিন তিন হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে বিক্ষোভে অংশ নেয়। এছাড়া গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলেও উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়।
উৎসঃ যুগান্তর

শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭

ইউএনও গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিস্মিত প্রধানমন্ত্রী

প্রধান মন্ত্রী বলেন, ক্লাস ফাইভের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এই অফিসার সুন্দর একটি কাজ করেছেন। সেখানে যে ছবিটি আঁকা হয়েছে, সেটি আমার সামনেই আছে, আপনারা দেখতে পারেন। এই ছবিটিতে বিকৃত করার মতো কিছু করা হয়নি। এটি রীতিমত পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। এই অফিসারটি রীতিমত পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। আর সেখানে উল্টো আমরা তার সঙ্গে এই করেছি, এই বলে প্রধানমন্ত্রী তিরস্কার করলেন। এটি রীতিমত নিন্দনীয়।
সরকারের একজন কর্মচারীকে অনুমোদন ছাড়া কিভাবে গ্রেপ্তার করা হলো জানতে চাইলে এইচটি ইমাম বলেন, এটি কোনোভাবে করা যায় না। কারণ ইউএনও হচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সবচে’ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাকে কোনো শাস্তি দিতে হলে বা তার বিরুদ্ধে মামলা বা কিছু করতে হলে সরকারের অনুমোদন দরকার। এক্ষেত্রে তা নেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ ইউএনও'র সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তাকে যেভাবে ধরে নিয়ে গেছে এ জন্য আমি ওখানকার ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপারসহ সব কর্মকর্তাকে দায়ী করবো। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭

প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা- ২০১৭ এর রুটিন


সুগার ড্যাডি এবং মিডিয়া বেবি

উন্নত জীবনের আশায় পূর্ব ইউরোপের অনেক তন্বীতরুণী সুন্দরী পশ্চিম ইউরোপে বা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। সেখানে তাদের অনেক সচ্ছল ও বয়স্ক পুরুষ ‘লুফে নেয়’ বা আশ্রয় দেয়। এদেরই বলা হয় সুগার ড্যাডি, বাংলায় বলা যেতে পারে মিঠাই বাবা। আর আশ্রিতাকে বলা হয় সুগার বেবি। বাবা-কন্যা বা দাদা-নাতনির বয়সের হলেও এরা একজন আরেকজনের কাছে ঠিক সুগার বা মিঠাইয়ের মতোই মিষ্টি। 
ফিল্মি পাড়ায় এ ধরনের সুগার ড্যাডি ও সুগার বেবির কথা প্রায়ই বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এই মিঠাই বাবাদের হাতে থাকে আবার হরেক রকমের মিঠাই। আর্থিক মিঠাইয়ের সাথে সাথে কারো হাতে থাকে সাংস্কৃতিক মিঠাই, কারো হাতে রাষ্ট্রীয় মিঠাই। মিঠাইয়ের চৌম্বক ধর্মের কারণেই মিঠাই কন্যারা তাদের প্রতি আকর্ষিত হয়। এগুলোর নব্বই শতাংশ গোপন থাকে। তবে মাঝে মধ্যে দু-একটি ব্যাক ফায়ার করে বসলেই সেগুলো জনসাধারণের গোচরে এসে পড়ে। 
বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কিছু গ্লোবাল সুগার ড্যাডি রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে মিঠাইকন্যা হিসেবে বেছে নেয়া হয় টার্গেট করা দেশটির বা ভ্যাসাল স্টেটটির দল বা গোত্রবিশেষকে। সিকিমের লেন্দুপ দর্জির সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটি ছিল পাশের দেশটির কাছে এরূপ একটি সুগার বেবি। নিজেদের সুগার বেবিদের ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে সেই সব দেশের স্বাধীনচেতা বা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়। 
বৈশ্বিক এই সুগার ড্যাডিদের হিসাব একটু ভিন্ন ধরনের। কাউকে যেমন বিষ খাইয়ে মারা যায়, তেমনি সেই কাজটি মিঠাই খাইয়েও করা সম্ভব। এই মিঠাই খাওয়াতে হয় একটা পরিকল্পনার অধীনে এবং একটা লম্বা সময় ধরে। এই মিঠাই খাওয়ানোর কর্মটি সম্পাদন করা হয় সাহিত্য-সংস্কৃতির জগৎ তথা মিডিয়া ও বিনোদন জগতের বিভিন্ন আউটলেট দিয়ে। সে লক্ষ্যেই রাজনৈতিক আগ্রাসনের আগে মিঠাই প্রয়োগে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও চালানো হয়। 
আমরা দেখেছি, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন এ দেশের পত্রপত্রিকাকে মারার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। দুটি পত্রিকা (পরে চারটি ) সরকারের নিয়ন্ত্রণে রেখে বাদবাকি সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করা হয়। তবে এভাবে ডাইরেক্ট অ্যাকশন তখন সফল হয়নি।
এর পরই বিশেষ জায়গা থেকে মিঠাই বাবার আবির্ভাব হয়। বিষের বদলে মিঠাই খাওয়ানো শুরু হয়। এই পদ্ধতিটি অনেক নিরাপদ, প্রীতিকর তো বটেই। সুযোগ মতো কিছু জাতীয় আবেগ ও চেতনাকেও এই মিঠাইয়ের মধ্যে ভরে ফেলা হয়। প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে আমাদের সংস্কৃতি, সাহিত্য ও মিডিয়া জগতকে এই মিঠাই খাওয়ানোর কাজটি অব্যাহত রয়েছে। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। টক, ঝাল বাদ দিয়ে শুধু মিষ্টি খাওয়ার সুবাদে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মিডিয়া জগত ডায়াবেটিস আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আমরা জানি, ডায়াবেটিস হলে শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ কমে যায়। ইনসুলিনের কাজ হলো, রক্তের মধ্যে বিরাজমান গ্লুকোজ বা শক্তিকে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সরবরাহ করা। ইনসুলিনের অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ব্যাহত হওয়ায় শরীরের আবশ্যক অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো জ্বালানি বা প্রয়োজনীয় শক্তির অভাবে ড্যামেজ হয়ে পড়ে। 
রক্তের ইনসুলিনের মতো হুবহু মিডিয়ার ইনসুলিন হলো, এর বস্তুনিষ্ঠতা। মিঠাই বাবা এই বস্তুনিষ্ঠতার পরিবর্তে নিরপেক্ষতা নামক মিষ্টি আমাদের সফ্টওয়্যারে ইনস্টল করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আমাদের চিন্তার জগতটিকে আলগোছে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। আমরা এখন সর্বদা নিরপেক্ষতা তালাশ করি, বস্তুনিষ্ঠতা খুঁজি না। 
মিডিয়ার ইনসুলিনের (বস্তুনিষ্ঠতার) অভাবে সমাজে বা রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যকীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের জীবনীশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এ দেশের বিবেক বলে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছে, তারা এখন সত্য কথা বলতে ভয় পান। কিছু বলার আগে প্রথমে ভাবেন এতে তার ‘নিরপেক্ষতা’ নষ্ট হয়ে যাবে কিনা। কারণ বর্তমান প্রেক্ষাপটে কিছুটা সত্য বললে বিএনপি হয়ে পড়ার ভয় থাকে আর কোনো কোনো ব্যাপারে একটু বেশি সত্য বললে এমনকি জামায়াত হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয়। 
কবি ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার অপহৃত হলে একটি সাপ্তাহিকের জনৈক সম্পাদক এর বিরুদ্ধে একটি লেখা অন লাইন পোর্টাল এবং ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেছেন। 
ফরহাদ মজহার যেহেতু এই সরকারের কঠোর সমালোচক, কাজেই তার অপহরণের এ ঘটনার নিন্দা জানালে বিএনপি-জামায়াত হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার রিস্ক থেকে যায়। সরকারের বিরাগভাজন হবার সম্ভাবনাও প্রবল। তাই নিরাপদ হলো, আগে নিজের নিরপেক্ষতার যথেষ্ট প্রমাণ হাজির করা। তারপরে যতটুকু সম্ভব, সত্য কথাটি বলা।
ওই সাংবাদিক প্রথমেই আক্রমণ চালালেন শফিক রেহমানের ওপর। এই নিরপেক্ষ খিচুরির এক নম্বর কাহিনীতে একুশে টিভি বন্ধ হওয়ার ঘটনাটি টেনেছেন। এই টিভি বন্ধ হওয়ার জন্য সেদিন শফিক রেহমানের বাসায় মিষ্টি খাওয়া খাওয়ি (?) হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। আসলে একুশে টিভি বন্ধ হয়েছিল একটি মারাত্মক অনিয়মের কারণে এবং তা কোর্টের নির্দেশে। প্রকৃত ঘটনাটি একটু পরে বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে। 
দুই নম্বর কাহিনীতে ২১ আগস্টের ঘটনাটি বিবৃত করা হয়েছে। ২১ আগস্ট ঘিরে জনমনে সৃষ্ট অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে এখানে সরকারদলীয় বর্ণনাটিই পুরাপুরি তুলে ধরা হয়েছে। এই দু’টি বর্ণনায় সরকারপক্ষ এতটুকু খুশি হবে যে, এখন তাদের দু-একটি অপকর্ম উল্লেখ করলেও আর তেমন সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। 
তিন নম্বরে বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম এবং চার নম্বরে ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনা দু’টি অত্যন্ত ঈমানদারীর সাথেই বর্ণনা করা হয়েছে। তিন এবং চার নম্বর বর্ণনাটি একজন বিএনপি সমর্থকের এতটাই ভালো লেগে যাবে যে, এক নম্বরে শফিক রেহমানের বাসায় মিষ্টি খাওয়ার হলুদ গল্প এবং দুই নম্বরে ২১ আগস্টের বর্ণনাটিও একটু অস্বস্তিসহকারে হলেও গ্রহণ করে ফেলবে। ইনি দুই দুই করে নিক্তি দিয়ে মেপে লেখাটিকে নিরপেক্ষ বানিয়েছেন! এরপর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে নিরপেক্ষতার স্কেলে আরো একধাপ উপরে উঠে গেছেন! কারণ কয়েক দিন আগে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে যে ১২ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে শহীদ মিনারে অপাংক্তেয় ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে তার নামটিও ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। সাংবাদিকতার নামে তারা এভাবে নিরপেক্ষতার দাঁড়িয়াবান্দা খেলে একটি ঘটনার প্রকৃত চিত্র পুরোপুরি পাল্টে ফেলেন। নিরপেক্ষতার এই খেলায় বস্তুনিষ্ঠতা পেছনে পড়ে যায়। সবকিছুকে এভাবে ‘নিরপেক্ষ’ বানালে প্রতিবাদের ভাষাটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কারেক্টটিভ অ্যাকশন ধীর হয়ে যায়। এই সবই মিডিয়ায় ডায়াবেটিসের প্রভাব। 
এবার আসুন দেখি, একুশে টিভি নিয়ে সেদিন কী ঘটনা ঘটেছিল। হাইকোর্ট যেদিন ইটিভির মালিক এসএ মাহমুদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন, সেদিন শফিক রেহমান ফোবানা সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে অবস্থান করছিলেন। সেদিন যায়যায়দিন অফিসে কোনো মিষ্টি খাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি নিয়ে যায়যায়দিন একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে রায়টি হওয়ায় এক ধরনের পেশাগত তৃপ্তি পেলে তা অপরাধ নয়। কারণ তাদের অনুসন্ধানেই বেরিয়ে আসে যে, শেখ হাসিনার সরকার বেসরকারি টিভি লাইসেন্সের জন্য একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। তাতে উল্লেখ ছিল, এটি দেয়া হবে একটি কর্পোরেট বডিকে, ব্যক্তি বিশেষকে নয়। কিন্তু লাইসেন্সটি দেয়া হয় ব্যক্তিগতভাবে জনাব মাহমুদকে, ইটিভি লিমিটেডকে নয়। বিষয়টি যখন ইটিভির অন্যান্য পরিচালক এবং বিনিয়োগকারীরা জেনে যান, তখন তারা সঙ্গত কারণেই এসএ মাহমুদের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। ব্যবসায়িক পার্টনাররা এটাকে তাদের সঙ্গে ‘সুস্পষ্ট প্রতারণা’ হিসেবে বিবেচনা করে সবাই তার বিরুদ্ধে চলে যান। মাহমুদ তখন সম্ভাব্য আইনি ঝামেলা এড়াতে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেলেন। তারপর ২০০২ সালে বিএনপির আমলে হাইকোর্টে রায়টি দেয়া হয়। কিছু দিন পরে লন্ডনেই মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেন। 
এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, ইটিভি বেআইনি বা অনৈতিকভাবে টেরিস্টেরিয়াল সম্প্রচারের চ্যানেলটি ব্যবহার করত যেটি স্যাটেলাইটের সাহায্য ছাড়াই ব্রডকাস্ট হতো। এটি ছিল বিটিভির সেকেন্ড চ্যানেল যেটি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম পরিচালনার জন্য ব্যবস্থা করেছিলেন। এই চ্যানেলের অনুষ্ঠান দেখতে দেশের কোথায়ও ডিশ অ্যান্টিনা ব্যবহারের প্রয়োজন হতো না। ফলে আমাদের রাষ্ট্রীয় চ্যানেল বিটিভি বিজ্ঞাপন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে একটি অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে পড়ে। একইভাবে দেশের অন্য দু’টি প্রাইভেট টিভি স্টেশন যারা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাদের অনুষ্ঠান ব্রডকাস্ট করত, তারাও অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যায়। ইটিভির জনপ্রিয়তার কারণে তাদের মালিকের এই অনিয়মটি চাপা পড়ে ছিল। 
তারপরেও বলা যায়, মিডিয়ার স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় এখানে বিষয়টি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ঠিকভাবে হ্যান্ডল করতে পারেনি। হাইকোর্টের রায়ের পর তারা নতুন করে আবার একটি টেন্ডার দিতে পারত এবং সেই টেন্ডারে ইটিভির অংশগ্রহণের একটা সুযোগ থাকত। তা না করায় জনগণ ধারণা করে যে, ইটিভির বিরুদ্ধে সরকারের ক্ষোভই হাইকোর্টের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। কিন্তু সেই ভুল ধারণাটি অপসারণে বিএনপির পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে ইটিভি কর্তৃপক্ষ নিজেদের বিরাট অনিয়ম ঢেকে ফেলে এক ধরনের অনুকূল আবহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। 
এখানে হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে শফিক রেহমান এবং তখনকার ‘যায়যায়দিন’ কর্তৃপক্ষকে অহেতুক জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কোনো মিডিয়া অনিয়ম করলে সেটা দেখানোর দায়িত্বও অন্য দায়িত্বশীল মিডিয়ার ওপর পড়ে। শফিক রেহমানকে আমরা যতটুকু জানি, তিনি কথার জবাব কথা দিয়ে, লেখার জবাব লেখা দিয়ে দিতেই বেশি আগ্রহী। তিনি কোনো মিডিয়াকে বন্ধ করার পক্ষে নন। মনের ভাব লেখার মাধ্যমে এবং কথার মাধ্যমে যিনি অত্যন্ত নিপুণভাবে প্রকাশ করতে পারেন, তার তো অন্যের কণ্ঠ বা কলম স্তব্ধ করে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। 
এটা তার চরিত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। যে কোনো ধরনের এক্সট্রিম অ্যাকশন বা চূড়ান্ত শাস্তির বিপক্ষে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বিচারিক আদালতে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডেরও বিরোধী। সারা বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের বা অপব্যবহারের বিরুদ্ধে যে আওয়াজ উঠেছে, তার সাথে তিনিই প্রথম একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং এ দেশে তা জোরেসোরে প্রচার করেছেন। এই মুহূর্তে এগুলো লিখলে ‘রাজাকার’ হিসেবে গণ্য হবেন, সেই গণনা তিনি করেননি। নিজের বক্তব্য প্রকাশ করলে তাকে কোন পন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, সেই হীনম্মন্যতাতেও কখনো ভোগেন না। তার এ ধরনের অবস্থান কখনোই নৈতিক আদর্শের কোনো স্খলন বা অস্বচ্ছতায় ভোগে না। তিনি সবসময় যথেষ্ট যুক্তি ও তথ্য দিয়ে তার অবস্থান সৃষ্টি করেন। 
জীবিত কোনো ‘ন্যাশনাল আইডল’ বা ‘বাস্তব নমুনা’ আমাদের সামনে নেই। নতুন প্রজন্মের কাছে এরূপ কাউকে আমরা তুলে ধরতে পারি না। যে দু-একজন আছেন, তাদেরও আমরা আমাদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতার কারণে ছোট বা খাটো করে ফেলি। 
আমরা কাউকে হয় প্রচণ্ড ভালোবাসি কিংবা প্রচণ্ড ঘৃণা করি। এই দু’টি প্রান্তিকতার মাঝে কোনো অবস্থান আমাদের মনোজগতে ঠাঁই পায় না। বিরোধী দল কিংবা ভিন্নমতের মানুষের মাঝেও যে ভদ্রলোক থাকতে পারে, তা আমরা মেনে নিতে পারি না। 
বিবিসির আকবর হোসেন গত বছরের এপ্রিল মাসে তার এক গবেষণাধর্মী নিবন্ধে প্রশ্ন রেখেছিলেন, শফিক রেহমান বিএনপির কোনো পদ-পদবিতে নেই। তার পরেও কেন তিনি বিএনপিতে এত শক্তিশালী? এই প্রশ্নটি শুধু আকবর হোসেনের একার নয়, আরো অনেকের মনেই এ প্রশ্নটি জেগেছে। এই প্রশ্নের এক কথায় উত্তর হবে, শফিক রেহমান শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। একজন ব্যক্তির পদ-পদবির দরকার পড়ে, একটি প্রতিষ্ঠানের সেই প্রয়োজন নেই।
এই অবস্থান শুধু বিএনপিতে শফিক রেহমানের নয়, আওয়ামী লীগেও কেউ কেউ থাকলে বরং জাতির অনেক উপকার হতো। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগে এসে অনেকেই বিত্তশালী হয়েছেন, কেউ কেউ প্রতিপত্তিশালী হয়েছেন। কিন্তু শফিক রেহমানের মতো ‘শক্তিশালী’ বোধহয় কমই হয়েছেন। বিএনপিতে শফিক রেহমানের প্রভাব আসলেই কতটুকু, তা আমিও ভালো করে জানি না। তবে এ ধরনের একটি ভাবনা তার শত্রুমিত্র সবার মাঝে ছড়িয়ে আছে। দেশের মানুষ মনে করে, শফিক রেহমানের কোনো পরামর্শ বেগম জিয়া কিংবা বিএনপি রাখবে। অর্থাৎ জাতির ক্রান্তিলগ্নে বেগম জিয়াকে ভালো কোনো পরামর্শ দিলে তিনি হয়তোবা শুনবেন। শেখ হাসিনাকে নিয়ে এমন ধারণা করা যায় কি? কিছু দিন আগে একজন দরিদ্র ও বয়স্ক মহিলার একটি কথা ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়ে পড়েছিল। ওই মহিলা তার ভাষা ও ভঙ্গিতেই বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকে পিটাইয়া-পুটাইয়া হলেও কোনো কথা মানানো যেত, এই মহিলারে তো কিছুই শোনানো যায় না।’
বিবিসির আকবর হোসেন বা অন্য কাউকে বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরে অনুসন্ধান বা গবেষণার আহ্বান জানাব। এটা শুধু ব্যক্তি শফিক রেহমানকে ওপরে তুলে ধরার জন্য নয়। বরং আমাদের জাতির একটা বড় রোগ থেকে মুক্তির জন্যই এটা প্রয়োজন। প্রত্যেকটা দলেই আমাদের কিছু ‘শফিক রেহমান’ দরকার। শফিক রেহমানদের পরামর্শের একটা গুরুত্ব আছে বলেই হয়তোবা ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একতরফা নির্বাচন দিয়েও পনের দিনের মাথায় পদত্যাগ করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়েছিল।
আওয়ামী লীগে শফিক রেহমানের মতো কেউ নেই বলেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সৃষ্ট অবৈধ সরকারকে টেনে পাঁচ বছর পুরো করে ফেলার পথে রয়েছে। আইয়ুব খানের স্টাইলে ‘কম গণতন্ত্র বেশি উন্নয়নের বটিকা’ খাওয়ানোর কোশেশ চলছে। এর পরিণাম নিয়ে ভাবার বা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়ার মতো কোনো শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব আওয়ামী লীগে নেই। এ ব্যাপারে যারা একটু আধটু চেষ্টা করেছেন, তারা সবাই টপ নেতৃত্বের চক্ষুশূল হয়ে ছিঁটকে পড়েছেন। 
এখন আবার খায়েশ হয়েছে, ২০২১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী পালন করবেন। কাজেই সামনের নির্বাচন কেমন হবে তার আলামত স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। সমগ্র দেশবাসীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্বৈরশাসক এরশাদও নয় বছর টিকে ছিলেন। শাসনকে প্রলম্বিত করায় কৃতিত্বের কিছু নেই বরং একটা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের জন্য বেকুবির অনেক লক্ষণ রয়েছে এতে। এরশাদের জাতীয় পার্টি এবং ভাসানী মুজিবের আওয়ামী লীগ এক নয়- এ কথাটি আজ আওয়ামী লীগ ভুলে গেছে। আজকের এই তিমির রাত পোহালে নিজেদের চেহারা কিভাবে দেখাবেন, সেই চিন্তা তাদের আছে বলে মনে হয় না। 
মাহমুদুর রহমান মান্না আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হওয়াকে নিজের বেকুবি বলে আফসোস করছেন। কিন্তু ভেতরে বা আশপাশে থেকে এই কিছিমের বেকুবি ধরিয়ে দেয়ার মতো অবস্থান এই মেধাবী রাজনীতিবিদও তৈরি করতে পারেননি। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের টপ নেতৃত্বের মধ্যকার এই পার্থক্য নিয়ে কোনো মুক্ত গবেষক গবেষণা করলে জাতির অনেক উপকার হবে। 
আমরা অনেক সময় সঠিক কথাটি না বলে এক ধরনের False equalization এর মাধ্যমে রাজনীতির ক্রনিক রোগের চিকিৎসাকে নিজেরাই জটিল করে তুলি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলটি তলিয়ে দেখার জন্য একটি সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। দেশের শ্রেষ্ঠ আইনবিদদের এমিকাস কিউরি হিসেবেও নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তাদের অধিকাংশের অভিমত ছিল তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রাখার পক্ষে। কিন্তু শেষমেশ এক ব্যক্তির ইচ্ছায় এটিকে বাতিল করে জাতিকে বর্তমান দুর্দশায় ফেলে দেয়া হয়েছে। 
ব্যক্তি শফিক রেহমানের গুণগান করার চেয়ে তার কর্মকাণ্ডের প্রতি একটু মনোযোগ দেয়া দরকার। কিছু দরকারি কথা নতুন প্রজন্মকে জানানো দরকার। শফিক রেহমানের বিস্তর লেখা রয়েছে। সেগুলো থেকে গবেষকরা তার ব্যাপারে অনেক গবেষণা করতে পারবেন এবং আমার এ দাবির সত্যাসত্য প্রমাণ করতে পারবেন। 
ডায়াবেটিস আক্রান্ত মিডিয়া এ দেশকে প্রায় ডিপলিটিসাইজেশন বা বিরাজনীতিকরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে। তাদের আসল চেহারাটি দেখা গেছে এক এগারোর সময়। তারা নানা কৌশলে সৎ ও চরিত্রবান রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন করে গেছেন, মেধাবী ও তরুণ অংশকে রাজনীতির প্রতি বিতৃষ্ণ করেছেন। 
বাকশালের মতো ভুল পরামর্শ দিয়ে তারা দেশের রাজনীতিকে যে বিভ্রান্তি ও জটিলতায় জড়িয়েছিলেন, সেখান থেকে আজো জাতির মুক্তি মিলছে না। বরং আরো নতুনভাবে জড়ানো হচ্ছে। ভালো ও সৎ মানুষ রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন- এ ধরনের সর্বনাশা প্রচারণা জাতিকে স্থায়ী পঙ্গুত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা সবাই চাই, দেশটি ভালোভাবে চলুক। কিন্তু এ জন্য যে ভালো চালকের দরকার, এ কথাটি আমরা ভুলে যাই। 
আমার অনেক বন্ধুবান্ধব বিষয়টি নিয়ে আমাকেও একই প্রশ্ন করেন, আরো নিরপেক্ষ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেউ কেউ এটা নিয়ে আফসোসও করেন। আমার এসব হিতাকাক্সক্ষী বন্ধুর অনেকেই বিদেশের মাটিতে থাকেন। বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিকত্ব বাদ দিয়ে সেসব দেশে দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকত্ব পেয়েও তারা খুশি। কারণ সে সব দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র আছে, আইনের শাসন আছে। মানুষের মানবিক মর্যাদা ও মানবিক স্বস্তির সব উপায় উপকরণ তাদের আয়ত্তে চলে এসেছে। কিন্তু এসব সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় আশীর্বাদ কিভাবে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে আমার এসব ট্যালেন্টেড বন্ধুরা খুব কম ভাবেন। বস্তুনিষ্ঠতা বাদ দিয়ে সবাই যদি নিরপেক্ষতার পেছনে ছুটতেন, তবে বর্তমান সৌভাগ্য তাদের কখনোই ধরা দিত না। 
এসব উন্নত দেশের প্রায় সবগুলোতেই কনজার্ভেটিভ ও লিবারেল নামক দু’টি দল আছে। দেশের ভালো, ভদ্র ও বিবেকবান মানুষগুলোই এসব দলে যোগ দেন। তারা পক্ষের মানুষগুলোকে ভালো বানাতে চেষ্টা করেন। আমাদের মতো নিরপেক্ষ মানুষগুলোকে ভালো করার চেষ্টা করেন না। আমাদের এই ভুল চিন্তার কারণে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। তারা ওদের শুদ্ধ চিন্তার জন্য এগিয়ে গেছেন। 
কাজেই ডায়াবেটিস আক্রান্ত এই দেশের রাজনীতি ও মিডিয়াকে ঠিক করতে আরো বেশি ‘শফিক রেহমান’ দরকার।
(দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত উপসম্পাদকীয় কলাম )