চিতার চোখের নীচে কান্নার দাগ।... অনেক অনেক দিন আগের কথা। এক আলসে শিকারি একটা বাওবাব গাছের তলায় বসেছিল। শিকারিটা ছিল যেমন আলসে, তেমনি শয়তান। বাওবাব গাছের তলায় বসে বসে সে ভাবছিল: কি গরম রে বাবা! ধ্যাত, এখন কেউ ঝোপের মধ্যে শিকার করতে যায়? কাছেই কিন্তু ঘাসের মাঠে এক পাল নধর হরিণ চড়ে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু বর্শা ছুড়ে দু-চারটে হরিণ শিকার করার পরিশ্রম করবে না। এমনই অলস সে! বাওবাব গাছের তলায় বসে বসে সে ভাবছিল: ইস্ যদি শিকার না-করেই মাংস পেতাম।
একটু দূরে হঠাৎ কী যেন নড়ে উঠল। বাঁ দিকে। একটা মাদি চিতা। ক্ষুধার্ত। হরিণের মাংসের লোভে এসেছে। হঠাৎই চিতাটা হরিণের পালের দিকে তেড়ে এল। চমকে উঠে হরিণের দলটি পালিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু পিছিয়ে পড়া একটি দলছুট হরিণকে লক্ষ করে লম্বা পা গুটিয়ে তীব্র গতিতে লাফ দিয়ে হরিণটি মাটিতে ফেলে দিল চিতাটি। । মুহূর্তেই শিকার ছিন্নভিন্ন করে ফেলল ।
গাছতলায় বসে শিকারি সবই দেখল। মৃত হরিণটিকে টেনে-হিচঁড়ে ছায়ায় নিয়ে গেল চিতাটি। ওখানে সুন্দর তিনটি চিতাছানা মায়ের জন্য অপেক্ষা করছিল। ছানাগুলি দেখে অলস শিকারির ভীষণ লোভ হল। এরাও একদিন এদের মায়ের মতন ভালো শিকারী হয়ে উঠবে। ইস্, ওরা যদি আমার জন্য শিকার করত। এই ভেবে একটি চিতাছানা চুরি করার কথা ভাবল। একটু পর মা চিতা জলাশয়ের কাছে যাবে। তখন ...
সূর্য যখন ডুবু ডুবু ... মা চিতা ছানাদের ঝোপের আড়ালে রেখে জলাশয়ের দিকে গেল । শয়তান শিকারিটা বর্শা তুলে ঝোপের কাছে যায়। ছানাগুলি ছোট বলেই কিন্তু মোটেও ভয় পেল না। কিন্তু কোন ছানাটা নেবে শিকারি তা ভেবে পেল না।
পরে তিনটে ছানাই নিয়ে গ্রামে ফিরে গেল শিকারি।
পরে চিতা ঝোপের কাছে ফিরে এল। ছানাগুলি না দেখে অস্থির হয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করল। সারারাত কাঁদল।
চিতার কান্নার শব্দে একজন বৃদ্ধ ঝোপের কাছে এল।
এই বৃদ্ধের কিন্তু জীবজন্তু সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান ছিল। সে যা বোঝার বুঝল। কেউ চিতার ছানা চুরি করেছে। সেই শয়তান শিকারির ওপর রেগে উঠল বৃদ্ধ। শিকারি কেবল চোরই না, সে জুলু গোত্রের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যও ভঙ্গ করেছে। জুলু গোত্রের সবাই জানে একজন শিকারি কেবল নিজের শক্তি ও দক্ষতা ব্যবহার করবে। এ ছাড়া শিকারের অন্য যে কোনও উপায়ই নিষিদ্ধ।
বৃদ্ধ গ্রামে ফিরে এল।
গ্রামের বয়স্কদের কাছে অলস শিকারির কুকর্মের কথা খুলে বলল । গ্রামবাসীরা সব শুনে রেগে উঠল। শয়তান অলস শিকারিকে গ্রাম থেকে বের করে দিল । তারপর বৃদ্ধ চিতাছানাদের ওদের মায়ের কছে ফিরিয়ে দিল। কান্নারত মা চিতার কান্নার দাগ কিন্তু রয়েই গেল। আজও চিতার চোখের নীচে আমরা যে দাগ দেখতে পাই, তা আমাদের সেই অলস শিকারীকে মনে করিয়ে দেয়। যে অলস শিকারি জুলু গোত্রের ঐতিহ্যের ভঙ্গ করেছিল। আজও চিতা চোখের নিচে কান্নার দাগ নিয়ে জন্ম গ্রহন করে।
Engr. Md. Arifur Rahman
অনুবাদ সূএ: http://www.canteach.ca/elementary/africa1.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন