নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে ছাত্রশিবির সন্দেহে গতকাল পুলিশ ৪৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে । এ সময় তাদের কাছ থেকে বই ( পুলিশের ভাষ্যমতে জিহাদি বই ), ইসলামী ছাত্র শিবিরের একটি ব্যানার, লিফলেট, সদস্য সংগ্রহ ফরম, সদস্যদের নামের তালিকা, খাতা কলম ও কয়েকটি বই উদ্ধার করে পুলিশ।
অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদের নিজ ফেসবুক আইডিতে " জেএমবি ও ছাত্র শিবিরের সদস্যদের গ্রেফতারের চিত্র " শিরোনামে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গ্রেপ্তারকৃত তরুনেরা দুই হাত তুলে একটা বাসা থেকে বেরুচ্ছে তাদের ঘিরে আছে উদ্যত অস্ত্র হাতে সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্ম পরিহিত একদল পুলিশ।
একজন পুলিশের হাতে একটা দীর্ঘ লাঠি সেই লাঠি দিয়ে সর্বশক্তি দিয়ে প্রত্যেকের পিছনে বাড়ি দেয়া হচ্ছে। কেউ একজন পিছন থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের মাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা পোষণ করে গালি দিচ্ছে। ছাত্ররা শান্তভাবেই কোন প্রতিরোধ ছাড়াই মাথার উপরে হাত তুলে পুলিশের নির্দেশ অনুসারে ভ্যানের ভিতরে গিয়ে বসছিলো।
ছাত্রশিবির কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাই পুলিশ কাউকে শুধুমাত্র সেই সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে পারেনা। সংবিধানের ৩৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার পূর্ন অধিকার দেয়া হয়েছে। ৩৬ নং ধারায় বলা হয়েছে "জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরা, ইহার যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতিস্থাপন এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে "।
এ ছাড়াও সংবিধানের ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১ ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিককে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার দেয়া হয়েছে । ছাত্রশিবির কোন নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। তাহলে এই সংগঠনের নেতা কর্মীদের উপর এই বেআইনি অভিযান, গ্রেফতার, প্রহার ও মিথ্যাচার কেন সংবিধান ও আইন বিরোধী হবেনা? এবং সংবিধান ও আইন বিরোধী কাজে জড়িত অতি উৎসাহী পুলিশ অফিসার ও সদস্যদেরকে কেন বিচার ও শাস্তির মুখামুখি করা হবেনা? পুলিশ কি কোন অবস্থাতেই নিরস্ত্র এবং আত্মসমর্পণকারীদের এভাবে পেটাতে পারে, বা গালি দিতে পারে?
বাংলাদেশের পুলিশের বিরুদ্ধে তার কর্তব্য পালনের নামে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ আছে। গুম, খুন এসব নিয়ে গত ২৮ জুলাই নিউইয়র্ক টাইমস এ একটি প্রতিবেদনও ছাপা হয়। র্যাব, পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড বহিরবিশ্বে আদৌ বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করছে কি? । নিচের এই ভিডিওতে সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সামান্যই দেখতে পাবেন।। আমরা জানতে চাই যে সমস্ত পুলিশ সদস্য প্রকাশ্যে এভাবে চরম মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটালো তার প্রতিকার কী হবে?
আবার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ তার নিজ ফেসবুক আইডিতে ( Azad Bp ) এ নিয়ে একাধিক লিঙ্ক, ভিডিও পোষ্ট করেন । যাতে দেখা যায় দুটি ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেন " সোনারগাঁয়ে জাদুঘরের সামনে রেস্টুরেন্টের ভিতর হতে জেএমবি ও ছাত্র শিবিরের সদস্যদের গ্রেফতারের চিত্র " । এ ছাড়াও তিনি সোনারগাঁ প্রতিদিনের আরেকটি লিঙ্ক শেয়ার করেন যার শিরোনাম " সোনারগাঁ জাদুঘর সংলগ্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে জিহাদী বইসহ ৪৩ জঙ্গী ও শিবির কর্মী গ্রেফতার " । একটি নিবন্ধিত ছাত্রসংগঠনকে বিনা প্রমানে ও অযৌক্তিকভাবে জঙ্গী, জেএমবি আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কারনে তার এই কর্মকাণ্ড আইসিটি এ্যাক্ট ২০০৬ এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ । যার শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড ও ১ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা ।
এই, এস আই আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি এএসআই থেকে এসআই পদে পদান্নতি লাভ করেন । তিনি বিভিন্ন সময়ে জনকল্যাণ, সমাজকল্যাণ নিয়ে কাজ করে বেশ পরিচিতি লাভ করেন । চলতি বছরে মানব সেবায় অবদানের জন্য মহাত্ম গান্ধী শান্তি পদক-২০১৭ এ ভূষিত হন । এ ছাড়াও মানব সেবায় বিশেষ আবদান রাখায় আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংগঠন প্রটেকশন অব রাইটস্ ইন বাংলাদেশ(পিআরবি)’র পক্ষ থেকে আয়োজিত বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তন-ঢাকায় অনুষ্ঠিত “ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা সভায় ‘ফিদেল কাস্ত্রো এ্যাওয়ার্ড-২০১৭ এ ভূষিত হন ।
তবে তার এসব অর্জন ও কর্মকে ছাপিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে তার নেতৃত্বে শিবির কর্মীদের অন্যায়ভাবে প্রহার ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা নিয়ে । অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কর্মকর্তা হিসেবে তিনি কোন ভাবে এর দায় এড়াতে পারেন না । একজন মধ্যবয়স্ক পুলিশ সদস্য যখন সর্বশক্তি দিয়ে প্রত্যেকের পিছনে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন ও গ্রেপ্তারকৃতদের মাকে ধর্ষণ করার ইচ্ছা পোষণ করে গালি দেন, এসআই আবুল কালাম আজাদ তাদেরকে একটি বারও বাধা দেননি বা নিষেধ করেন নি । তাহলে এখানে কোথায় তার মানব সেবায় বিশেষ আবদান, আর কোথায় তার ফিদেল কাস্ত্রো এ্যাওয়ার্ড, মহাত্মগান্ধী শান্তি পদকের মুল্যায়ন। তার ভালো কাজের স্বীকৃতি অবশ্যই দিচ্ছি, কিন্তু তার এসব দলকানা, পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকাণ্ডের জন্য সংবিধান ও মানবাধিকার লংঘনের দরুন তার বিচার হওয়া আবশ্যক ।
কিন্তু বিচার দেবেন কার কাছে?
ঘটনাস্থল, সোনারগাঁও থানায় এসআই আবুল কালাম আজাদের কাছে অভিযোগ করে আদালতে?
পাবেন তো মানবাধিকার আর সংবিধান লঙ্ঘনের বিচার?
এতো শুটকির বাজারে বিড়াল পাহারা দেওয়ার দশা । আর এভাবেই স্বাধীন বাংলায় পদদলিত হতে থাকবে মানবাধিকার ।
নাকি এত কিছুর পরেও ভরসা রাখবো সেই " নৌকায় " ?
এতদসংক্রান্ত লিঙ্কঃ
১। https://www.facebook.com/azad.ha.39
২। http://www.bhorerkagoj.net/print-editi…/2017/…/30/158889.php#
৩। https://youtu.be/870jptrpTAY
৪। আইসিটি এ্যাক্ট ২০০৬ এর ৫৭ ধারা - http://bdconstitutionbangla.blogspot.bd/
৫। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬,৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১ নং ধারা ।
৬। https://www.nytimes.com/…/the-opposition-disappears-in-bang…
৭। সোনারগাঁ প্রতিদিন - http://www.sonargaonpratidin.com/?p=1916
১। https://www.facebook.com/azad.ha.39
২। http://www.bhorerkagoj.net/print-editi…/2017/…/30/158889.php#
৩। https://youtu.be/870jptrpTAY
৪। আইসিটি এ্যাক্ট ২০০৬ এর ৫৭ ধারা - http://bdconstitutionbangla.blogspot.bd/
৫। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬,৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪১ নং ধারা ।
৬। https://www.nytimes.com/…/the-opposition-disappears-in-bang…
৭। সোনারগাঁ প্রতিদিন - http://www.sonargaonpratidin.com/?p=1916
( Collected)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন