২৮শে জানুয়ারি’১৭ শনিবার ঐতিহাসিক তুর পাহাড় তুরে মুসা(আঃ) পরিদর্শন শেষে মিশরের পর্যটন নগরী শার্ম আল শেইখ-এ আমাদের নির্ধারিত হোটেল ইAmwaz Resort- এ পৌঁছলাম, তখন রাত প্রায় ৯টা। ৪ তারকা মানের হোটেলটির সৌন্দর্য এবং পারিপার্শ্বিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখে সফর সঙ্গী সবাই উৎফুল্ল। বাস থেকে নামার সাথে সাথে ওয়েলকাম ড্রিংকস্ এর মাধ্যমে উষ্ণ অভ্যর্থনার পর যার যার লাগেজ রুমে রুমে পৌঁছে গেল। ভিজিটরস টিম লিডার প্রফেসর ড. বি. এম. মফিজুর রহমান আল্-আযহারী দ্রুত খাওয়ার পর্ব সেরে নেয়ার তাগিদ দিলেন। খাবার কক্ষে এসে দেখি এ এক বিশাল আয়োজন। ইতালিয়ান, তার্কি, এরাবিয়ান ফুডসহ বুফে আইটেমে নানা পদের বার্বি কিউ, সী ফুড, নান, ডিম, ব্রেড, বীফ, ভেজিটেবল, পিঁয়াজু (মিশরী নাম ত‘আমিয়্যাহ), ডেট বেভারেজ, ফ্রেশ জুস, তার্কিস কফি, পুডিং, মিষ্টি, হালুয়া, মোভেন পিক, আইসক্রিম আরো কতো কি সাজানো পশরা দেখে ঘুরে ঘুরে পছন্দের খাবার খাচ্ছিলাম। আবার পছন্দের খাবার অর্ডার দিয়েও খাচ্ছেন অনেকে। হোটেলে রয়েছে বিরাট চিলড্রেন এন্টারটেইন্টমেন্ট, মিনি কিডস্ ক্লাব, সুইমিং পুল (চিলড্রেন, লেডিস, জেন্টস) ওয়াটার াইড, স্পোর্টস, মিউজিক, গলফ গেইমস, সংগীত, নৃত্য, টেনিস কোর্ট, ফিটনেস সেন্টার, ভলিবল সহ বিভিন্ন আয়োজনে ভরা খুব বিশাল রিসোর্ট এলাকা। দিনভর তুর পাহাড় যাওয়া আসায় জার্নিতে ক্লান্ত শ্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার মেজ পুত্র যাওয়াদ, ভগ্নিপতি এড. আনোয়ার সহ টিমের ১৮জন সদস্য-সদস্যারা সব ঘুরে ফিরে দেখছিলাম। পরদিন সকাল ২৯শে জানুয়ারি আমরা পর্যটন নগরী স্বপ্নপুরী শার্ম আল-শেখ কে বিদায় জানাবো। রাতে সব ঘুছিয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর সকালে অনেকেই সমুদ্র স্নানে গিয়ে ফিরে এলেন। নাস্তা সেরে অপেক্ষমাণ বাসে উঠে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে আমাদের যাত্রা শুরু। সকালে নীল এয়ারের একটি ডোমেষ্টিক ফ্লাইটে ১ঘন্টা আকাশে উড়ে আমরা মিশরের রাজধানী কায়রো বিমান বন্দরে অবতরণ করি। ওখানে আমাদের প্রিয় গাইড আহমেদ অপেক্ষমাণ ছিলেন। বাসে উঠে কায়রো পৌঁছে আমাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠ বিখ্যাত আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় দেখানোর জন্য। প্রশস্ত পীচ ঢালা কালো পথ বেয়ে গাড়ি এগিয়ে চললো। প্রফেসর ড. আযহারী বললেন, হোসাইনিয়্যাহ এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক জামেউল আয্হার। এই এলাকার নামকরণ করা হয়েছে হযরত ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর নামের সাথে মিল রেখে। জামেউল আযহারের অপর পার্শ্বেই রয়েছে আরেকটি মসজিদ। যা জামেউল হুসাইন নামে পরিচিত। রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে আল্-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের আদি ও প্রধান ক্যাম্পাস এবং মসজিদুল আযহার। এই মসজিদুল আযহারকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে পৃথিবীর প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানের অন্যতম পাদপ্রদীপ জামে‘আতুল আয্হার বা আল্-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রবৃন্দ যেমন আসে অধ্যয়ন করার জন্য, তেমনি গবেষকবৃন্দও এখানে আসেন গবেষণা করার জন্য। এটি প্রতিষ্ঠা করেছেন ফাতেমী বংশের খলীফা ময়েয-লি-দিনিল্লাহ্। ৩৬১ হিজরী মোতাবেক ৯৭২ ঈসায়ী সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ব্যাপারে ভিন্ন মতও রয়েছে। কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন, মিশরে ফাতেমী খলীফা ময়েয লি-দিনিল্লাহ্র শাসনামলে খলীফা কর্তৃক ৩৫৯ হিজরী ২৪শে জুমাদিউল উলা মোতাবেক ৪ এপ্রিল ৯৭০ খ্রিস্টাব্দের জামে আল আযহার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন, ফাতেমী খলীফা ময়েয লি-দিনিল্লাহ্র ক্রীতদাস জাওয়ার আল কাতিব যখন কায়রো নগরী আবাদ করেন, তখন তিনি মসজিদুল আয্হার প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নাম অনুসারেই এই মসজিদ ও আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়েছে। আবার আরেক ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত ফাতিমাতুয যাহরা রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহার নামের ‘যাহ্রা’ শব্দটি অবলম্বনে ‘আল আযহার’ নামকরণ করা হয়েছে। বিশাল এই মসজিদে ৩০ হাজার মুসল্লী একত্রে জামায়াতে নামায আদায় করতে পারে। আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২ লক্ষেরও বেশি। গেটে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং মেহমানদের বসার সুন্দর আয়োজন। এখানে রাস্তার পশ্চিম পার্শ্বে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও মসজিদ এবং পূর্ব পাশে জামেউল হুসাইনের পাশ্বেই একটি দৃষ্টিনন্দন মাযার।
কোনো কোনো ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন, এখানে ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুর মাথা মোবারক দাফন করা হয়েছে। ইরাকের কারবালা প্রান্তরের বেদনা বিধূর ঘটনা প্রত্যেক মুসলমানেরই কম বেশি জানা রয়েছে। তাঁকে শহীদ করার পর তাঁর পবিত্র মাথা মোবারক দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তা কুফায় প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে মাথা মোবারক সিরিয়ার দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে পাঠানো হলে সেখানের উমাইয়া মসজিদের মাঠে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে দাফনকৃত মাথা মোবারক উঠিয়ে আস্কালানে নিয়ে দাফন করা হয়। ৫৪৮ হিজরীতে ক্রুসেডে যুদ্ধের সময় পবিত্র মাথা মোবারকের মর্যাদাহানি হতে পারে, এ আশঙ্কায় সেখান থেকে উঠিয়ে মিশরের কায়রো নগরীতে দাফন করা হয়। একে কেন্দ্র করে বিশাল এক মাযার ও সুদৃশ্য মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। অবশ্য নির্ভরযোগ্য তথ্যানুসারে, কায়রোতে ইমাম হোসাইনের মস্তিষ্ক দাফনের বিষয়টিতে মত পার্থক্য রয়েছে ।
এই মাজারে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করে থাকে। মাজারের পশ্চিম পার্শ্বে একটি কক্ষে সংরক্ষিত রয়েছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসসাল্লামের পবিত্র দাড়ি মোবারকের কয়েক গুচ্ছ, তাঁর ব্যবহৃত উটের জ্বীন ও মিসওয়াক। এই কক্ষটি বিশেষ সময় খুলে দেয়া হয়। জামেউল আল-আযহার বা আল-আয্হার মসজিদের পিছনেই রয়েছে একটি গলিপথ। এই পথের ধারেই রয়েছে আল্লামা ইমাম বদরুদ্দিন আইনী (রাহঃ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ও মসজিদ। এখানেই তাঁর মাজার অবস্থিত। এই মাদ্রাসা তিনি ৮৪২ হিজরি সনে প্রতিষ্ঠা করেন। এটিও একটি প্রাচীন ও বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আল্-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ক্যাম্পাসের অদূরেই রয়েছে খান-এ খলীলী নামক প্রত্নতাত্ত্বিক বিশাল মার্কেট। যেখান থেকে আমরা পেপিরাস পেপারসহ নানাধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ক্রয় করি।
আজ আমাদের নিয়ে আসা হলো কায়রোর অন্যতম নতুন শহর মাদীনাতুন নসরে অবস্থিত আল্-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসে। বিশাল ক্যাম্পাস, ছাত্র-ছাত্রীরা ঢুকছে-বের হচ্ছে। বেশ কড়া কড়ি, উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এ বিশ্ববিদ্যালয়। সর্বত্র সি.সি ক্যামেরা এবং দেয়ালের উপর কাঁটা তারের বেড়া। আবুল ফাত্তাহ আল সিসি বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিক্ষোভ ঠেকাতে এ ব্যবস্থা জানতে পারলাম। যাক আমাদের টিম লিডার আল আযহার এর প্রাক্তন ছাত্র ড. মফিজুর রহমান আযহারীর অনুরোধে আমরা নতুন ক্যাম্পাসে কিছুক্ষণ ঘুরে দেখার অনুমতি পেলাম। কিছুক্ষণ ক্যাম্পাস ঘুরে দেখলাম। এ বিশাল ক্যাম্পাস দেখতে গাড়ি নিয়েও পুরোদিন প্রয়োজন হবে। আল্-আযহার বিশ্ববিদ্যালয় এর আরবি নাম জামি‘আতুল আল্-আযহার। এটি আরবি সাহিত্য, ইসলামিক স্টাডিজ, কুরআনিক সাইন্সেস, হাদিস, ইসলামী আইন শিক্ষাসহ যুক্তি বিদ্যা, ব্যাকরণ, অলংকার শাস্ত্র সহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক ডিসিপ্লিন দ্বারা সমৃদ্ধ একটি অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়, যা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম এবং মিশরের প্রথম ডিগ্রি গ্র্য্রান্টিং ইউনিভার্সিটি। ইসলাম ধর্মের আদর্শ প্রচার এবং ইসলামী সংস্কৃতির বিস্তার ঘটানোর উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। টিম লিডার থেকে জানতে পারলাম আল-আযহারের সর্বোচ্চ পদধারী কে বলা হয় শায়খুল আযহার। তিনি পদাধিকার বলে মিশরের গ্র্যান্ড ইমাম বা ইমামুল আকবর। শায়খুল আযহার পদ একটি সাংবিধানিক পদ এবং এই পদে নিয়োগ পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশের প্রেসিডেন্ট করে থাকেন। জানতে পারলাম বাংলাদেশ থেকে এখানে প্রতি বছর মাত্র ১৫জন ছাত্র কোটা হিসেবে আসার সুযোগ পায়, যা অন্যান্য দেশের তুলনায় খুবই কম। অথচ বাংলাদেশ পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। এ ব্যাপারে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগপৎ ভূমিকা আবশ্যক। ফিরে আসার পর পথে নিজেই দেখলাম একটি মসজিদে সেনা প্রহরা এবং তালা দেয়া। গাইড বললেন,“মসজিদটির নাম মসজিদে “রাবিয়াহ আল-‘আদউয়্যাহ”। এখানে ২০১৩ সালে রমজান মাসে সিসি বিরোধী বিক্ষোভ ও অবস্থান শুরু হয়ে প্রায় ৪৫দিন চলতে থাকে। সেনা সমর্থক মিশরের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আবুল ফাত্তাহ আল সি. সি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারাগারে পাঠালে লক্ষ লক্ষ মানুষ, ছাত্র-ছাত্রী অবস্থান নেয় এ মসজিদ চত্বরে। অবশেষে কমান্ডো অভিযান ও বিপুল জানমালের ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে এ বিক্ষোভ অপসারণ করা হয়। সেথায় প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয়। এর পর থেকে মসজিদটিতে তালা ঝুলছে এবং তথায় নামাযও বন্ধ”। আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস ডানে ফেলে এগুতেই গাইড আমাদের দেখালেন যে স্থানে তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এর নিহত হওয়ার স্থান। সেখানেই রয়েছে তার পিরামিড আকৃতির বিশাল সমাধিক্ষেত্র।
এরপর আমরা কায়রো অভিজাত সানসিটি শপিং মল এ গেলাম। বিশাল আধুনিক মার্কেট, অনেকেই কেনা কাটা করলেন। আমাদের টিম লিডার আযহারী ভাই তাঁর স্ত্রীর আবদার মেটাতে একটি বিরাট ফুট প্রসেসর সেট কিনলেন। এর পর আমরা কায়রো আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। স্থানীয় সময় রাত আড়াইটায় সৌদিয়া এয়ার লাইন্সের একটি বিশাল ফ্লাইটে পবিত্র মক্কা মদীনা সফর ও ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ আসনে বসে পড়লাম। শোকর আলহামদুলিল্লাহ মাত্র ৫দিনের মিশর সফরে অনেক কিছু দেখেছি, শিখেছি, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। ঐদিনই ওমরার উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ফিরছিলাম। মিশর সফরের শেষ দিন হৃদয়টা অনেক ভারাক্রান্ত ছিল। অনেক কিছু দেখার বাকী রয়ে গেল। এটিই ছিল আমার জীবনে প্রথম মিশর সফর। পুনরায় এ দেশে আর আসা হবে কিনা মহান আল্লাই ভালো জানেন। খুব ভালো লাগলো আমাদের মিশরী গাইড এয়ারপোর্টের একেবারে ইমিগ্রেশান পর্যন্ত সহযোগিতা দিয়ে বিদায় নিলো। তাদের এমন সহযোগিতা ও আন্তরিকতা তাদের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে মনে হলো। কিছুক্ষণের মধ্যে উড়োজাহাজ জেদ্দার উদ্দেশ্যে উড়াল দিল। আর আমরা ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আরব বসন্তের দেশ, প্রাচীন সভ্যতার দেশ যেখানে হযরত ইব্রাহিম,হযরত ইউসুফ, হযরত মুসা, হযরত হারুন, হযরত ইলিয়াস, হযরত সালেহ, হযরত লুকমান ও হযরত দানিয়েল আলাইহিমুসসালাম সহ নাম না জানা কতো নবী রাসূল এবং সাহাবায়ে কেরামের স্মৃতি ও পদচারণায় ধন্য দেশ পুণ্য ভূমি মিশরকে বিদায় জানালাম। গুড বাই কায়রো, গুড বাই ফারাও, গুডবাই পিরামিড আর নীল নদের দেশ মিশর (সমাপ্ত)।
লেখক : আইনজীবী, কলামিস্ট, সুশাসন ও মানবাধিকার কর্মী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন