বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল ও নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
এসময় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এই কর্মসূচিতে যোগ দেয়। কর্মসূচি শেষে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। মানববন্ধন ও অবস্থানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশ চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হকসহ বাম জোটের সাজ্জাদ জহির চন্দন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রাজেকুজ্জামান রতন, বহ্নিশিখা জামালী, আকবর খান, আজিজুর রহমান, আব্দুস সাত্তার, মানস নন্দী, ফখরুদ্দিন কবির আতিক, মনির উদ্দিন পাপ্পু, বাচ্চু ভূঁইয়া, মমিনুর রহমান মমিনসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে কোটি কোটি ভোটারের ভোটাধিকার হরণ করে আরও একবার যে জবরদস্তিমূলক প্রহসনের নির্বাচন মঞ্চস্থ করা হলো, বাম গণতান্ত্রিক জোট এই নির্বাচন ও নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করছে।
নির্বাচনের দিনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে ভর্তি করে রাখা, নিরাপত্তার নামে নজিরবিহীন ভয়ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও ন্যাক্কারজনক ভূমিকা, বাম জোটের একাধিক প্রর্থীসহ বিরোধীদলগুলোর প্রার্থী ও এজেন্টদের আটক, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে অধিকাংশ দেশবাসীকে ভোটাধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে গোটা নির্বাচনকে ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে ও আশঙ্কানুযায়ী নির্বাচনে সরকারের ছকেরই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ভোর থেকেই দেশব্যাপী ভোট কেন্দ্র দখল, প্রকাশ্য জালিয়াতি, ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কার সিল মারতে বাধ্য করা, বিরোধী দলীয় ভোটারদের জোর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, কোথাও সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি অসংখ্য ঘটনার মধ্যে দিয়ে সমগ্র নির্বাচনকে পুরোপুরি অর্থহীন ও হাস্যকর করে তোলা হয়েছে।
এই সমুদয় তৎপরতার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে যেটুকু আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তা পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যেকোন অবকাশ নেই তা আরেকবার প্রমাণ হল।
তাই এই নির্বাচন ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে না। এই নির্বাচনে জনগণের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
কোটি কোটি ভোটারের ভোটাধিকার হরণ করে সংগঠিত নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন বাতিল ও নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আজ আমরা ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ও দেশব্যাপী মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।
৩০ ডিসেম্বর অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশবাসীকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ‘ভুয়া ভোটে’ যাদেরকে নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে তাদের প্রায় সবাইকে জনগণ ‘ভুয়া প্রতিনিধি’ হিসেবে বিবেচনা করছে। জনগণের কাছে ‘জনগণের প্রতিনিধি’ বলে দাবিদারদের কোন বৈধতা নেই।
এমতাবস্থায়, সংগঠিত প্রহসনের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ তদারকি সরকার গঠন, নির্বাচনের অর্থ-পেশীশক্তি-প্রশাসনিক কারসাজি-সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ ও ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’ চালুসহ গোটা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধন করে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করাই গণতন্ত্রের দাবি। এই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে জনগণের প্রতি দৃঢ় মনোবল অক্ষুণœ রেখে রুটি-রুজি ও গণতন্ত্র-ভোটাধিকারের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দেশব্যাপী কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচির শেষে জানানো হয় আগামী ১১ জানুয়ারি শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীদের নিয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন