চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্ষমতার জোরে তিনি এ কাজের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনকেও যুক্ত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন নগরীর কে সি দে রোড এলাকার বাসিন্দা ঝিনু রাণী বড়ুয়া। তিনি অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধা অমল বড়ুয়া লাতু’র স্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি তাদের হয়রানির জন্য মহিউদ্দিনের সাবেক পিএস ও নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও স্থানীয় কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী এবং মহিউদ্দনের ভাগ্নে মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী নোবেলকেও অভিযুক্ত করেন।
স্বামী ও তিন সন্তানকে পাশে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ঝিনু রাণী বলেন, আমি ২০০১ সালের ১৭ জুন তাপস চৌধুরীর কাছ থেকে জায়গার রেজিস্ট্রি নিই। তখন মেয়র ছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের ইঙ্গিতে এক মাসের মধ্যে আমার স্বামীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে মাদক আইনে মামলা দেয়।
তিনি বলেন, আমার কেনা জায়গায় পূর্বদিকে হাসিনা মহিউদ্দিনের জায়গা। ২০০১ সালে হাসিনা মহিউদ্দিন আমার জায়গায় তার স্বত্ত্ব দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। ২০০৫ সালে মামলাটি খারিজ হয়। ২০০৬ সালে তিনি আবারও আরেকটি মামলা করেন। মামলাটি জজকোর্টে বিচারাধীন আছে।
ঝিনু রাণী বড়ুয়া বলেন, ‘আমি তার বিরুদ্ধে কখনও মামলা করিনি। তিনি কয়েক বছর ধরে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করছেন, হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে ২০১২ সালে থানায় জিডিও করেছিলাম।’
তিনি জানান, ২০১২ সালের ১৭ নভেম্বর সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাদের বাড়ি ও দোকানে ভাংচুর চালানো হয়। এসময় তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার হস্তক্ষেপে দখল থেকে রক্ষা পান তারা। এরপর ক্ষমতার জোরে আইনের ফাঁকফোকর বের করে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে সেই ঘরকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। গত ২০ ও ২১ জানুয়ারি বসতঘর সিটি কর্পোরেশন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়।
ঝিনু রাণী বলেন, যেদিন সিটি কর্পোরেশন ঘর ভেঙ্গে দেন অদ্ভুতভাবে সেদিন বিকেলে হাসিনা মহিউদ্দিন আদালতের মাধ্যমে ওই জায়গায় কোন স্থাপনা গড়তে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এপিএস শমসের বারবার এসে আমাদের হুমকি দিচ্ছে আমরা যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। রাত-বিরাতে এসে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাগ্নে নোবেল হুমকি দিচ্ছে আমাদের। কাউন্সিলর জহরলাল হাজারীর কাছে গেলে তিনি বলেন, উনি (হাসিনা মহিউদ্দিন) যখন বলছেন আপনি চলে যান। কাউন্সিলর কথায় কথায় ধমক দেন।
এ বিষয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে কোন অভিযোগ করেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি উনাকে টেলিফোন করেছিলাম। কে ধরেছে আমি জানিনা। তাকে এ বিষয়ে বললে তিনি বলেছেন, মহিউদ্দিন চৌধুরী এসব বিষয়ে মাথা ঘামাননা। আপনার আইনে যা হয় তা-ই করুন।
সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন হঠাৎ আমাদের বসতঘরকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নোটিশ দেয়। সেখানে উচ্ছেদের কোন তারিখ ছিলনা। আমি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন আইনগতভাবে যা হয় তা করবেন। কিন্তু হঠাৎ এসে আমার ঘর ভেঙ্গে আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। আমি এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছি।
নিজের অসুস্থ স্বামী ও সন্তানদের রক্ষার জন্য, মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতভিটা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান এই মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী।
উল্লেখ্য সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। এবার সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চেষ্টা করছেন।
মহিউদ্দিন চট্টগ্রামের মেয়র থাকাকালে তার স্ত্রী’র বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আছে।
এছাড়া মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে নগরীর গোলপাহাড় মোড় এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পশুশালার জায়গা দখলের চেষ্টার অভিযোগে কয়েক বছর আগে আন্দোলনে নেমেছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন