স্টাফ রিপোর্টার : জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের যুক্তিতর্কের ৬ষ্ঠ দিনের শুনানিতে আলোচিত ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগের ওপর যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগের যুক্তি খ-ন করতে গিয়ে আল্লামা সাঈদীর আইনজীবী প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এবং প্রসিকিউশনের উপস্থাপিত হত্যার ঘটনাস্থলের ডকুমেন্টের গরমিল তুলে ধরেন। এরপর দশম অভিযোগ বিশাবালী হত্যার অভিযোগ খ-নের ওপর যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ফের এ বিষয়ে শুনানি হবে। ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার এ অভিযোগটিতে ট্রাইব্যুনাল আল্লামা সাঈদীকে মৃত্যুদ- দিয়েছিল।
গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি হয়। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
আল্লামা সাঈদীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন এডভোকেট এস এম শাহজাহান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন।সরকার পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী মানিক পসারী বলেছেন তাকে পাড়েরহাট পুলের গোড়ায় গুলী করে হত্যা করা হয়। আর সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন বলেছেন, পুল থেকে ২০-৩০ হাত দূরে নিয়ে তাকে গুলী করা হয়েছে। অষ্টম সাক্ষী বলেছেন ব্রিজের উপর নিয়ে তাকে গুলী করা হয়েছে। চতুর্থ সাক্ষী সুলতান বলেছেন, তাকে থানার ঘাটে গুলী করা হয়েছে। এভাবে হত্যার ঘটনাস্থল সম্পর্কে প্রসিকিউশনের সাক্ষীরাই ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছেন। শুধু তাই নয় প্রসিকিউশনের একটি ডকুমেন্টেও আবার হত্যার ঘটনাস্থল সম্পর্কে আরেক রকম তথ্য রয়েছে। এ ডকুমেন্ট জমা দিয়েছিলেন এক নম্বর সাক্ষী এবং মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার। মাহবুুবুল আলম জিয়া নগর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে নিয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্যাডে তৈরি করা নিহতদের এ তালিকায় অন্যান্যের মধ্যে ইব্রাহীম কুট্টির নাম রয়েছে একেবারে শেষে। এখানে উল্লেখ আছে ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়া তার শ্বশুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বলেশ্বর নদীর বেদিতে হত্যা করা হয়।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশনই এ ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে এবং তারা এ ডকুমেন্ট এর ওপর নির্ভর করেছে। তাদের ডকুমেন্টেই উল্লেখ আছে ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় তার শ্বশুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে দাবি করেছে আল্লামা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীরা। তিনি বলেন এটা পরিষ্কার যে, প্রসিকিউশনের সাক্ষী এবং ডকুমেন্টে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থান উল্লেখ আছে। আর প্রসিকিউশন যখন ঘটনা স্থল থেকে সরে যায় তখন আসলে তারা মামলা থেকেই সরে গেছে।
মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট :
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালের ৮ মার্চ পিরোজপুর এসডিও বরাবর একটি মামলা করেন। পরে ১৬ জুলাই এ মামলাটি থানায় এজাহার হিসেবে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে মমতাজ বেগম উল্লেখ করেন তার স্বামী ইব্রাহীম কুট্টি তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় শান্তি কমিটির লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি গুলী করে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর। মমতাজ বেগম সে মামলায় মোট ১৩ জনকে আসামী করেছেন এবং সে আসামীর তালিকায় আল্লামা সাঈদীর নাম নেই।
তাছাড়া মামলায় ঘটনাস্থল নলবুনিয়ায় তার বাপের বাড়ি উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রসিকিউশন দাবি করেছে তাকে পাড়েরহাট হত্যা করা হয়েছে। এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশনের দাবি ৮ মে তাকে পাড়েরহাট হত্যা করা হয়েছে। আর মমতাজ বেগমের মামলায় তাকে হত্যার তারিখ ১ অক্টোবর উল্লেখ আছে। মমতাজ বেগমের মামলায় ঘটনাস্থল এবং ঘটনার তারিখ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন।
মমতাজ বেগমের মামলায় আরো উল্লেখ আছে যে, ওই ঘটনার সময় তাদের বাড়ি থেকে তার ভাই সাহেব আলীকে এবং তার মা সিতারা বেগমকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর। পরে তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার ভাই সাহেব আলীকে আর ছাড়া হয়নি। তাকে পাকিস্তান আর্মি পিরোজপুরে গুলী করে হত্যা করে।
তিনি আদালতে এ মামলার ডকুমেন্ট দাখিল করেন।
মমতাজ বেগমের মামলায় ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তিনি তাদের নাম পড়ে শোনান। এরা হল দানেশ মোল্লা, আতাহার আলী, আশ্রাফ আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী কালাম চৌধুরী, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা। আসামীদের তালিকায় আল্লামা সাঈদীর নাম নেই। এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।
“ঘটনার বিবরণ এই যে, বিবাদীগণ পরস্পর যোগাযোগে রাইফেল পিস্তল ছোরা লাঠি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার পিতার ঘর বেড়দিয়া আমার স্বামীর উপর গুলি করিয়া হত্যা করিয়া আমার শরীরে জখম করিয়া আমার মাতা ও ভ্রাতাকে ধরিয়া পিরোজপুর আনিয়া আমার মাতাকে ছাড়িয়া দিয়া আমার ভ্রাতা সিরাজুলকে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে। আক্রোশের কারণ এই যে, আমি ও আমার স্বামী আমার স্বামীর বাড়িতে বাদুরা গ্রামে বসবাস করিতেছিলাম। গত মে মাসে পাক সৈন্য এদেশে আসিয়া যখন অকারণে গুলি করিয়া মানুষ হত্যা করিতে থাকে তখন কতিপয় হিন্দু আমাদের শরণাপন্ন হওয়ায় আমরা তাহাদের আশ্রয় দেয়ায় পাক সৈন্য ও তাহাদের দালালরা আমার স্বামীকে হত্যা করিতে খোঁজ করিতে থাকায় আমরা ভয়ে ভীত হইয়া আমরা পিত্রালয়ে বসবাস করিতেছিলাম। ...
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে আমি গর্ভবতী থাকায় আমার পিতা পাড়েরহাট আওয়ামী লীগ অফিসে জানাইয়া কোন প্রতিকার পায় নাই। তাই এই দরখাস্ত করিতে ...হইলাম। ”
মামলার বিবরণ পড়া শেষে এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশনের দাবি ১৯৭১ সালে আট মে ইব্রাহীমকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়েছে। আর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে মমতাজ বেগম তার আবেদনে উল্লেখ করেছেন তিনি তখন গর্ভবতী। ১৯৭১ সালের ৮ মে পাড়েরহাট ইব্রাহীম নিহত হলে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে তার গর্ভবতী থাকার কথা নয়। এ থেকেও প্রমাণিত যে ইব্রাহীম কুট্টি ১৯৭১ সালে আট মে পাড়েরহাটে নিহত হয়নি। ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর তার শ্বশুর বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায়ই নিহত হয়। এর সাথে আল্লামা সাঈদী কোন অবস্থাতেই জড়িত নন। থাকলে অন্তত মমতাজ বেগমের মামলায় তার নাম থাকত।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশন আমাদের এ ডকুমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং একে অসত্য আখ্যায়িত করেছে। তাদের উচিত ছিল পিরোজপুর থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ডাকার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা তা করেনি। উল্টো আমরা থানা থেকে এ মামলার নথিপত্র তলবের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়ার অভিযোগ বিষয়ে এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, বেসরকারী টেলিভিশন একুশের চোখ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে মানিক পসারি বলেছেন তাদের বাড়িঘর পোড়ানোর কোন চিহ্ন এতদিন পর আর নেই। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে তাদের বাড়ির পোড়া টিন কাঠ আলামত হিসেবে হাজির করা হয়েছে। একুশের চোখ সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য অনুসারে এসব আলামত মিথ্যা।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, আল্লামা সাঈদীর পক্ষে ১৭ তম সাক্ষী ভাগিরথীর ছেলে গণেশ চন্দ্র সাহা অষ্টম অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। কিন্তু তারপরও এ অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল রায়ে অন্যান্য সাক্ষীর সাথে গণেশ চন্দ্রের ওপর নির্ভর করেছে।
গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি হয়। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা, বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
আল্লামা সাঈদীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছেন এডভোকেট এস এম শাহজাহান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তানভির আহমেদ আল আমিন।সরকার পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল এম কে রহমান।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী মানিক পসারী বলেছেন তাকে পাড়েরহাট পুলের গোড়ায় গুলী করে হত্যা করা হয়। আর সপ্তম সাক্ষী মফিজ উদ্দিন বলেছেন, পুল থেকে ২০-৩০ হাত দূরে নিয়ে তাকে গুলী করা হয়েছে। অষ্টম সাক্ষী বলেছেন ব্রিজের উপর নিয়ে তাকে গুলী করা হয়েছে। চতুর্থ সাক্ষী সুলতান বলেছেন, তাকে থানার ঘাটে গুলী করা হয়েছে। এভাবে হত্যার ঘটনাস্থল সম্পর্কে প্রসিকিউশনের সাক্ষীরাই ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছেন। শুধু তাই নয় প্রসিকিউশনের একটি ডকুমেন্টেও আবার হত্যার ঘটনাস্থল সম্পর্কে আরেক রকম তথ্য রয়েছে। এ ডকুমেন্ট জমা দিয়েছিলেন এক নম্বর সাক্ষী এবং মামলার বাদী মাহবুবুল আলম হাওলাদার। মাহবুুবুল আলম জিয়া নগর থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হিসেবে পিরোজপুর বলেশ্বর নদীর বেদিতে নিয়ে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্যাডে তৈরি করা নিহতদের এ তালিকায় অন্যান্যের মধ্যে ইব্রাহীম কুট্টির নাম রয়েছে একেবারে শেষে। এখানে উল্লেখ আছে ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়া তার শ্বশুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে বলেশ্বর নদীর বেদিতে হত্যা করা হয়।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশনই এ ডকুমেন্ট জমা দিয়েছে এবং তারা এ ডকুমেন্ট এর ওপর নির্ভর করেছে। তাদের ডকুমেন্টেই উল্লেখ আছে ইব্রাহীম কুট্টিকে নলবুনিয়ায় তার শ্বশুর বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যে দাবি করেছে আল্লামা সাঈদীর পক্ষের সাক্ষীরা। তিনি বলেন এটা পরিষ্কার যে, প্রসিকিউশনের সাক্ষী এবং ডকুমেন্টে ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থান উল্লেখ আছে। আর প্রসিকিউশন যখন ঘটনা স্থল থেকে সরে যায় তখন আসলে তারা মামলা থেকেই সরে গেছে।
মমতাজ বেগমের মামলার ডকুমেন্ট :
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে তার স্ত্রী মমতাজ বেগম ১৯৭২ সালের ৮ মার্চ পিরোজপুর এসডিও বরাবর একটি মামলা করেন। পরে ১৬ জুলাই এ মামলাটি থানায় এজাহার হিসেবে পাঠানো হয়।
মামলার এজাহারে মমতাজ বেগম উল্লেখ করেন তার স্বামী ইব্রাহীম কুট্টি তার বাপের বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায় শান্তি কমিটির লোকজন এবং পাকিস্তান আর্মি গুলী করে হত্যা করে। ঘটনাটি ঘটে ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর। মমতাজ বেগম সে মামলায় মোট ১৩ জনকে আসামী করেছেন এবং সে আসামীর তালিকায় আল্লামা সাঈদীর নাম নেই।
তাছাড়া মামলায় ঘটনাস্থল নলবুনিয়ায় তার বাপের বাড়ি উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রসিকিউশন দাবি করেছে তাকে পাড়েরহাট হত্যা করা হয়েছে। এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশনের দাবি ৮ মে তাকে পাড়েরহাট হত্যা করা হয়েছে। আর মমতাজ বেগমের মামলায় তাকে হত্যার তারিখ ১ অক্টোবর উল্লেখ আছে। মমতাজ বেগমের মামলায় ঘটনাস্থল এবং ঘটনার তারিখ সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন।
মমতাজ বেগমের মামলায় আরো উল্লেখ আছে যে, ওই ঘটনার সময় তাদের বাড়ি থেকে তার ভাই সাহেব আলীকে এবং তার মা সিতারা বেগমকেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পিরোজপুর। পরে তার মাকে ছেড়ে দেয়া হলেও তার ভাই সাহেব আলীকে আর ছাড়া হয়নি। তাকে পাকিস্তান আর্মি পিরোজপুরে গুলী করে হত্যা করে।
তিনি আদালতে এ মামলার ডকুমেন্ট দাখিল করেন।
মমতাজ বেগমের মামলায় ইব্রাহীম কুট্টি হত্যা বিষয়ে যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তিনি তাদের নাম পড়ে শোনান। এরা হল দানেশ মোল্লা, আতাহার আলী, আশ্রাফ আলী, আব্দুল মান্নান, আইউব আলী কালাম চৌধুরী, রুহুল আমিন, আব্দুল হাকিম মুন্সি, মমিন উদ্দিন, সেকোন্দার আলী শিকদার, শামসুর রহমান এসআই, মোসলেম মাওলানা। আসামীদের তালিকায় আল্লামা সাঈদীর নাম নেই। এছাড়া পাকিস্তান আর্মিকেও আসামী করা হয় মমতাজ বেগমের মামলায়।
“ঘটনার বিবরণ এই যে, বিবাদীগণ পরস্পর যোগাযোগে রাইফেল পিস্তল ছোরা লাঠি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমার পিতার ঘর বেড়দিয়া আমার স্বামীর উপর গুলি করিয়া হত্যা করিয়া আমার শরীরে জখম করিয়া আমার মাতা ও ভ্রাতাকে ধরিয়া পিরোজপুর আনিয়া আমার মাতাকে ছাড়িয়া দিয়া আমার ভ্রাতা সিরাজুলকে গুলি করিয়া হত্যা করিয়াছে। আক্রোশের কারণ এই যে, আমি ও আমার স্বামী আমার স্বামীর বাড়িতে বাদুরা গ্রামে বসবাস করিতেছিলাম। গত মে মাসে পাক সৈন্য এদেশে আসিয়া যখন অকারণে গুলি করিয়া মানুষ হত্যা করিতে থাকে তখন কতিপয় হিন্দু আমাদের শরণাপন্ন হওয়ায় আমরা তাহাদের আশ্রয় দেয়ায় পাক সৈন্য ও তাহাদের দালালরা আমার স্বামীকে হত্যা করিতে খোঁজ করিতে থাকায় আমরা ভয়ে ভীত হইয়া আমরা পিত্রালয়ে বসবাস করিতেছিলাম। ...
প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে আমি গর্ভবতী থাকায় আমার পিতা পাড়েরহাট আওয়ামী লীগ অফিসে জানাইয়া কোন প্রতিকার পায় নাই। তাই এই দরখাস্ত করিতে ...হইলাম। ”
মামলার বিবরণ পড়া শেষে এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশনের দাবি ১৯৭১ সালে আট মে ইব্রাহীমকে পাড়েরহাট বাজারে হত্যা করা হয়েছে। আর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে মমতাজ বেগম তার আবেদনে উল্লেখ করেছেন তিনি তখন গর্ভবতী। ১৯৭১ সালের ৮ মে পাড়েরহাট ইব্রাহীম নিহত হলে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে তার গর্ভবতী থাকার কথা নয়। এ থেকেও প্রমাণিত যে ইব্রাহীম কুট্টি ১৯৭১ সালে আট মে পাড়েরহাটে নিহত হয়নি। ১৯৭১ সালের ১ অক্টোবর তার শ্বশুর বাড়ি নলবুনিয়া থাকা অবস্থায়ই নিহত হয়। এর সাথে আল্লামা সাঈদী কোন অবস্থাতেই জড়িত নন। থাকলে অন্তত মমতাজ বেগমের মামলায় তার নাম থাকত।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, প্রসিকিউশন আমাদের এ ডকুমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং একে অসত্য আখ্যায়িত করেছে। তাদের উচিত ছিল পিরোজপুর থেকে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ডাকার ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা তা করেনি। উল্টো আমরা থানা থেকে এ মামলার নথিপত্র তলবের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল সে আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।
মানিক পসারীর বাড়িতে আগুন দেয়ার অভিযোগ বিষয়ে এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, বেসরকারী টেলিভিশন একুশের চোখ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে মানিক পসারি বলেছেন তাদের বাড়িঘর পোড়ানোর কোন চিহ্ন এতদিন পর আর নেই। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে তাদের বাড়ির পোড়া টিন কাঠ আলামত হিসেবে হাজির করা হয়েছে। একুশের চোখ সাক্ষাৎকারে তার বক্তব্য অনুসারে এসব আলামত মিথ্যা।
এডভোকেট এস এম শাহজাহান বলেন, আল্লামা সাঈদীর পক্ষে ১৭ তম সাক্ষী ভাগিরথীর ছেলে গণেশ চন্দ্র সাহা অষ্টম অভিযোগ ইব্রাহীম কুট্টি হত্যার অভিযোগ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। কিন্তু তারপরও এ অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল রায়ে অন্যান্য সাক্ষীর সাথে গণেশ চন্দ্রের ওপর নির্ভর করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন