বাংলাদেশ বার্তা ডেস্কঃ
নাগরিক অধিকার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে - মিয়া গোলাম পারওয়ার
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, জাতি হিসেবে আমরা সাহসী ও চির সংগ্রামী। ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে আমাদের রয়েছে বিজয়ের গৌরবোজ্জল ইতিহাস। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন এবং মহান স্বাধীনতা অর্জন আমাদের সোনালী অর্জন। জাতির বীর সন্তানেরা একটি স্বাধীন দেশ, সুরক্ষিত সীমানা ও লাল সবুজের একটি পতাকার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে। শহীদের রক্তে এই ভুমি উর্বর হয়েছে।
দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এসেও আমরা স্বাধীনতার পুরো স্বাদ থেকে বঞ্চিত। স্বাধীনতার পর থেকে দেশে যথেষ্ট অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে এটা সত্য। তবে মহান স্বাধীনতার মুলনীতি আজো বাস্তবায়ন হয়নি। মানুষের মৌলিক অধিকার আজো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সামাজিক মর্যাদা, সাম্য ও ন্যায় বিচারের জন্য আমাদের অর্জন আজ বিসর্জনে পরিনত হয়েছে। শুধুমাত্র আদর্শিক ভিন্নতার কারণে নিরপরাধ থাকাও স্বত্তেও একটা গোষ্ঠীর উপর হত্যা, গ্রেফতার, হামলা-মামলা ও নির্যাতনের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে। অপরদিকে ক্ষমতার মোহে প্রকৃত অপরাধী চক্র দিব্যি সমাজে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এভাবে একটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা চলতে পারেনা। মানব জাতিকে শোষনমুক্ত একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ উপহার দিতে এসেছে শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম। মানবতার মুক্তিদূত মহানবী (সাঃ) এর দেখানো পথেই দেশ, জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রকৃত কল্যান ও মুক্তি নিহিত। এর আলোকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। সীমাহিন জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা করে জামায়াত সামর্থ অনুযায়ী আর্ত মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য দেশপ্রেমিক জনতাকে শপথ নিতে হবে। নাগরিকের অধিকার চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বুধবার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্র ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসুচীর অংশ হিসেবে নগরীর আখালিয়া এলাকায় সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত দিনব্যাপী ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহানগর সেক্রেটারী মুহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে কয়েকটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টীমের তত্ত্বাবধানে ২ শতাধিক অসহায় অসুস্থ মানুষকে ব্যবস্থাপত্রের পাশাপাশি বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, আমাদের সম্ভাবনার পাশাপাশি সমস্যাও অনেক। রাষ্ট্র কর্তৃক মানুষের শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সমাজের সকল স্তরে আজ বৈষম্য। মুমূর্ষ কেউ হাসপাতালের বেডে জায়গা না পেয়ে ফ্লোরে শুয়েও চিকিৎসা পায়না। আবার কেউ সামান্য অসুস্থ হলে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাকে নিজের মত করে নিয়ে যেতে পারে। কেউ খেতে পারেনা আর কেউ দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। কেউ বিচারের নামে অপরাধী না হয়েও জুলুম নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
আবার কেউ অপরাধী হয়েও রাজার মত পরিচালিত হচ্ছে। এমন বাংলাদেশ আমাদের শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। বৈষম্য মুক্ত সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। কিন্তু আমরা তা থেকে বঞ্চিত। দেশের যে কোন ক্রান্তিলগ্নে জামায়াত সব সময় জনতার পাশে ছিল। আমরা সাধ্যমত অসহায় ও দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি, এতিমদের পাশে দাঁড়িয়েছি ও অসুস্থ মানুষদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছি। আজ সিলেটে নিজেদের সাধ্যমত ফ্রি চিকিৎসা ও ঔষুধ তুলে দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। মজলুম সংগঠন জামায়াতের জন্য দোয়া করবেন। জুলুম নিপীড়ন ও ষড়যন্ত্র ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের প্রচেষ্ঠা থেকে জামায়াতকে দমিয়ে রাখা যাবেনা। নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে জামায়াত কাজ করে যাবেই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, জালালাবাদ থানা জামায়াতের আমীর মুফতি আলী হায়দার, জামায়াত নেতা মুহাম্মদ ফয়জুল হক, মোঃ তারেক মিয়া বাবুল মেম্বার, রিয়াজ মিয়া, আব্দুল মাজিদ, বদরুল হক, শরীফ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, এডভোকেট সালেহ আহমদ, ফেরদৌস আহমদ, কাওসার আহমদ, জয়নাল আবেদীন, ফয়জুল আলম, ফাহিম আহমদ, আবুল হোসেন মুন্না, মাওলানা কামরান আহমদ, সোয়েব আহমদ, শিহান আহমদ, হোসাইন আহমদ, আব্দুল জব্বার ও ওয়ারিছ মিয়া প্রমূখ।
সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, রাষ্ট্রের উচিত মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সমাজের প্রতিটি স্তরে আজ বৈষম্য বিরাজমান। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেই কোন রাষ্ট্র উন্নত হয়ে যায়না। যতক্ষণ না রাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে আমাদের দাবী সিলেট সহ দেশের প্রতিটি জনপদে একাধিক সরকারী হাসপাতাল বিনির্মাণ করা হোক। হাসপাতালে বিনামূল্যে সকল প্রকার ঔষুধ ও পরীক্ষা-নিরিক্ষা নিশ্চিত করা হোক। সমাজের প্রতিটি স্তরে সামাজিক ন্যায় বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদ ভোগ করতে পারবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন