★ ইসলামী
সমাজের উপলব্ধি :
যারা সত্যিই ইসলামী সমাজ কায়েম করতে চান তাদের, সর্বপ্রথম ভালভাবে উপলব্ধি করতে হবে, আমাদের জাতির মধ্যে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্টার আকাঙ্খার মোটেই অভাব নাই। আসল অভাব আগ্রহ ও উদ্যোগ গ্রহণের। তাছাড়া এ কাজের জন্য যে মৌলিক গুণাবলীর প্রয়োজন অধিকাংশ লোকের মধ্যে তা অনুপস্হিত।
★ ভয়াবহ দৃশ্য ও নিরাশার মেঘ:
আমাদের জাতির সমগ্র প্রভাবশালী অংশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজে বিকৃতি ও ভাঙন সুষ্টিতে মখর। বর্তমান মুসলিম বিশ্বে সমাজ জীবন পরিগঠন ও ভাঙ্গার বৃহত্তম শক্তি হচ্ছে সরকার। সত্যকারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্হা যাহাতে প্রতিষ্টিত না থাকে সে জন্য জনগণকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করতে থাকে। যারা বিকৃতি ও ভাঙ্গনের কাজে লিপ্ত নেই তারাও সৃষ্টি ও বিন্যাসের চিন্তামুক্ত। আর বাকী যারা সমাজ সংস্কার ও গঠনের প্রচেষ্টায় নিয়োজিত তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।
★ আশার আলো বা সাফল্যে:
আমাদের জাতি সামগ্রিকভাবে অসৎপ্রবন নয়। অশিক্ষা ও অজ্ঞতার কারণে প্রতারিত হতে পারে বা হচ্ছে। কিন্তু প্রতারণা-কারীদের উপর তারা সন্তুষ্ট নয়।বিচক্ষণতার সাথে সুসংবদ্ধ ও অবিরাম প্রচেষ্টা চালালে অবশেষে সংশোধনের মাধ্যমে জনশক্তি গুলোকে সমর্থনে পরিণত করা যেতে পারে। সমাজে বিকৃতির জন্য যারা কাজ করে যাচ্ছে তারা সকল প্রকার সুবিধা লাভ করেছে কিন্তু তারা "চারিত্রিক শক্তি ও ঐক্যের শক্তি" উর্জন করতে পারেনি।
★ দীন প্রতিষ্টা বা ইসলামী সমাজ :
দীন প্রতিষ্টা বা ইসলামী সমাজ কায়েমের কাজ আল্লাহ তায়ালার নিজের কাজ, এ কাজে আল্লাহর সাহিয্য ও সমর্থন লাভ ছাড়া কায়েম হতে পারে না। সূরা নূর ৫৫ আয়াতে ইতিপর্বে আমরা জেনেছি। কিভাবে আল্লাহর সাহিয্য পাওয়া যায় এবং শর্তাবলী কি কি তা আমরা আলাপ করবো!
আল্লাহর সাহিয্য পাওয়ার শর্তাবলী:
১. যারা হক-বাতিলের সংগ্রামে সবর ও আন্তরিকতার সাথে প্রচেষ্টা চালাই।
মহান আল্লাহ তা নিজেই বলে দিয়েছেন -
وَ
الصّٰبِرِیْنَ فِی الْبَاْسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیْنَ الْبَاْسِؕ أُولَٰئِكَ
الَّذِیْنَ صَدَقُوْاؕ وَ أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ
যারা বিপদে-অনটনে ও হক- বাতিলের সংগ্রামে সবর করবে তারাই সৎ ও সত্যাশ্রয়ী এবং তারাই মুত্তাকী। (আল-বাক্বারাহ ১৭৭)
یٰۤاَیُّهَا
النَّبِیُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِیْنَ عَلَى الْقِتَالِؕ اِنْ یَّكُنْ مِّنْكُمْ
عِشْرُوْنَ صٰبِرُوْنَ یَغْلِبُوْا مِائَتَیْنِۚ
হে নবী! মুমিনদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করো। তোমাদের মধ্যে বিশজন সবরকারী থাকলে তারা দু'শ জনের ওপর বিজয়ী হবে। (আল-আনফাল ৬৫)
قَالَ
مُوْسٰى لِقَوْمِهِ اسْتَعِیْنُوْا بِاللّٰهِ وَ اصْبِرُوْاۚ-اِنَّ الْاَرْضَ
لِلّٰهِ ﳜ یُوْرِثُهَا مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖؕ-وَ
الْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِیْنَ
মূসা তার জাতিকে বললোঃ “আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও এবং সবর করো। এ পৃথিবী তো আল্লাহরই। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান তাকে এর উত্তরাধিকারী করেন। আর যারা তাঁকে ভয় করে কাজ করে চূড়ান্ত সাফল্য তাদের জন্য নির্ধারিত।”
(আল-আরাফ ১২৮)
২. সাফল্যের জন্য পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা যে নীতি পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন সে পদ্ধতিকে অনুসরণ করতে হবে:
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এরশাদ করেছেন -
لِكُلٍّ
جَعَلْنَا مِنْكُمْ شِرْعَةً وَّ مِنْهَاجًاؕ وَ لَوْ شَآءَ اللّٰهُ
তোমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি শরীয়াত ও একটি কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে রেখেছি। (মায়িদাহ ৪৮)
سُنَّةَ
مَنْ قَدْ اَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنْ رُّسُلِنَا وَ لَا تَجِدُ لِسُنَّتِنَا
تَحْوِیْلًا۠
এটি আমার স্থায়ী কর্মপদ্ধতি। তোমার পূর্বে আমি যেসব রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের সবার ব্যাপারে এ কর্মপদ্ধতি আরোপ করেছিলাম। আর আমার কর্মপদ্ধতিতে তুমি কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না।
(বনী ইসরাঈল ৭৭)
وَ مَنْ
یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُۚ وَ هُوَ فِی
الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ
এ আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া যে ব্যক্তি অন্য কোন পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায় তার সে পদ্ধতি কখনোই গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে হবে ব্যর্থ, আশাহত ও বঞ্চিত। (আলে-ইমরান ৮৫)
هُدًى
لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَ الْفُرْقَانِۚ
মানবজাতির জন্য পুরোপুরি হিদায়াত এবং এমন দ্ব্যর্থহীন শিক্ষা সম্বলিত, যা সত্য-সঠিক পথ দেখায় এবং হক ও বাতিলের পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। (বাক্বারাহ ১৮৫)
অথাৎ : মানব সভ্যতার প্রাচীনতম যুগ থেকে প্রতি যুগের নবীগণ ও তাঁদের সৎ ও সত্যনিষ্ঠ অনুসারীগণ সমাজ, সংস্কৃতি ও নৈতিকতার এই আইনগুলো কার্যকর করে এসেছেন। আল্লাহ তাঁর অসীম অনুগ্রহের বদৌলতে তোমাদেরকে জাহেলীয়াতের অবস্থা থেকে বের করে সৎ ও সত্যনিষ্ঠ লোকদের জীবনধারার দিকে পরিচালিত করেছেন।
৩. ব্যক্তিবর্গকে ইসলামী জীবনব্যবস্হা সম্পর্কে সঠিক ধারনা ও জ্ঞান উর্জন করতে হবে:
আল্লাহ বলেন -
ذٰلِكَ
الْفَضْلُ مِنَ اللّٰهِؕ وَ كَفٰى بِاللّٰهِ عَلِیْمًا۠
আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া এই হচ্ছে প্রকৃত অনুগ্রহ এবং যথার্থ সত্য জানার জন্য একমাত্র আল্লাহর জ্ঞানই যথেষ্ট। (আন-নিসা ৭০)
وَ
الرّٰسِخُوْنَ فِی الْعِلْمِ یَقُوْلُوْنَ اٰمَنَّا بِهٖۙ كُلٌّ مِّنْ عِنْدِ
رَبِّنَاۚ وَ مَا یَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الْاَلْبَابِ
জ্ঞানের অধিকারীরা বলেঃ “আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, এসব আমাদের রবের পক্ষ থেকেই এসেছে”। আর প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানবান লোকেরাই কোন বিষয় থেকে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে (ইমরান ৭)
مَنْ
یَّتَبَدَّلِ الْكُفْرَ بِالْاِیْمَانِ فَقَدْ ضَلَّ سَوَآءَ السَّبِیْلِ
যে ব্যক্তি ঈমানী নীতিকে কুফরী নীতিতে পরিবর্তিত করেছে, সে-ই সত্য-সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। (বাক্বারাহ ১০৮)
وَ
مِنْهُمْ اُمِّیُّوْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ الْكِتٰبَ اِلَّاۤ اَمَانِیَّ وَ اِنْ
هُمْ اِلَّا یَظُنُّوْنَ
তাদের কিতাবের জ্ঞান নেই, নিজেদের ভিত্তিহীন আশা- আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ে বসে আছে এবং নিছক অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে চলছে।
(বাক্বারাহ ৭৮)
অথাৎ : এ ছিল তাদের জনগণের অবস্থা। আল্লাহর কিতাবের কোন জ্ঞানই তাদের ছিল না। আল্লাহ তাঁর কিতাবে দ্বীনের কি কি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন, শরীয়াত ও নৈতিকতার কি বিধান দিয়েছেন এবং কোন কোন জিনিসের ওপর মানুষের কল্যাণ ও ক্ষতির ভিত রেখেছেন, তার কিছুই তারা জানতো না। এই জ্ঞান না থাকার কারণে তারা নিজেদের ইচ্ছা, আশা- আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনার অনুসারী বিভিন্ন মনগড়া কথাকে দ্বীন মনে করতো এবং এরই ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মিথ্যা আশা বুকে নিয়ে জীবন ধারণ করতো। বর্তমান অবস্হা ও তাই।
৪. প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উন্নত ও উত্তম চারিত্রিক গুণাবলির অধিকারী হতে হবে:
পবিত্র কোরআনে তা উল্লেখ করা হয়েছে -
اَلصّٰبِرِیْنَ
وَ الصّٰدِقِیْنَ وَ الْقٰنِتِیْنَ وَ الْمُنْفِقِیْنَ وَ الْمُسْتَغْفِرِیْنَ
بِالْاَسْحَارِ
সত্যনিষ্ঠ, অনুগত ও দানশীল এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর কাছে গোনাহ মাফের জন্য দোয়া করে থাকে। (আলে-ইমরান ১৭)
اِنَّ
الْمُسْلِمِیْنَ وَ الْمُسْلِمٰتِ وَ الْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ وَ الْقٰنِتِیْنَ
وَ الْقٰنِتٰتِ وَ الصّٰدِقِیْنَ وَ الصّٰدِقٰتِ وَ الصّٰبِرِیْنَ وَ الصّٰبِرٰتِ
وَ الْخٰشِعِیْنَ وَ الْخٰشِعٰتِ وَ الْمُتَصَدِّقِیْنَ وَ الْمُتَصَدِّقٰتِ وَ
الصَّآئِمِیْنَ وَ الصّٰٓئِمٰتِ وَ الْحٰفِظِیْنَ فُرُوْجَهُمْ وَ الْحٰفِظٰتِ وَ
الذّٰكِرِیْنَ اللّٰهَ كَثِیْرًا وَّ الذّٰكِرٰتِۙ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ
مَّغْفِرَةً وَّ اَجْرًا عَظِیْمًا
একথা সুনিশ্চিত যে, যে পুরুষ ও নারী মুসলিম, মু’মিন, হুকুমের অনুগত, সত্যবাদী, সবরকারী, আল্লাহর সামনে বিনত, সাদকাদানকারী, রোযা পালনকারী, নিজেদের লজ্জাস্থানের, হেফাজতকারী এবং আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণকারী আল্লাহ তাদের জন্য মাগফিরাত এবং প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।(আল-আহযাব ৩৫)
اَلتَّآئِبُوْنَ
الْعٰبِدُوْنَ الْحٰمِدُوْنَ السَّآئِحُوْنَ الرّٰكِعُوْنَ السّٰجِدُوْنَ
الْاٰمِرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَ النَّاهُوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَ الْحٰفِظُوْنَ
لِحُدُوْدِ اللّٰهِؕ وَ بَشِّرِ الْمُؤْمِنِیْنَ
আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী তার ইবাদতকারী, তার প্রশংসা বানী উচ্চারণকারী, তার জন্য যমীনে বিচরণকারী তার সামনে রুকূ ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশকারী, অসৎকাজ থেকে বিরতকারী এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী (সেই সব মুমিন হয়ে থাকে যারা আল্লাহর সাথে কেনাবেচার সওদা করে) আর হে নবী! এ মুমিনদেরকে সুখবর দাও! (আত-তওবা ১১২)
অর্থাৎ: সত্যিকার মু’মিন ঈমানের দাবী করার পর নিজের জায়গায় আরামে বসে থাকতে পারে না। বরং সে আল্লাহর দীন গ্রহণ করার পর তার উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে যায় এবং তার দাবী পূরণ করার জন্য সারা পৃথিবীব্যাপী অবিরাম প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে থাকে। আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগী, নৈতিক চরিত্র, সামাজিকতা, তামাদ্দুন অর্থনীতি-রাজনীতি আইন-আদালত এবং যুদ্ধ ও শান্তির ব্যাপারে যে সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন তারা তা পুরোপুরি মেনে চলে। নিজেদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক কর্মকাণ্ড এ সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ রাখে। কখনো এ সীমা অতিক্রম করে ইচ্ছা মতো কাজ করতে থাকে না। আবার কখনো আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মনগড়া আইনের বা মানুষের তৈরী ভিন্নতর আইনকে জীবন বিধান হিসেবে গ্রহণ করে না। এছাড়াও আল্লাহর সীমারেখা গুলো প্রতিষ্ঠিত করতে হবে এবং এগুলো লঙ্ঘন করতে দেয়া যাবে না।
৫. প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক ভাবে অসৎ গুণাবলী এবং দোষ-ক্রটি থেকে মুক্ত হতে হবে:
বিষয়গুলি আল্লাহ কোরআনে বলে দিয়েছেন -
اِنَّ
الْمُجْرِمِیْنَ فِیْ عَذَابِ جَهَنَّمَ خٰلِدُوْنَۚۖ
আর অপরাধীরা তারা তো চিরদিন জাহান্নামের আযাব ভোগ করবে। (আয-যুখরুফ ৭৪)
یٰۤاَیُّهَا
الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنَّمَا الْخَمْرُ وَ الْمَیْسِرُ وَ الْاَنْصَابُ وَ
الْاَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّیْطٰنِ فَاجْتَنِبُوْهُ لَعَلَّكُمْ
تُفْلِحُوْنَ
হে ঈমানদারগণ! এ মদ, জুয়া, মূর্তি পূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ এ সমস্তই হচ্ছে ঘৃণ্য শয়তানী কার্যকলাপ। এগুলো থেকে দূরে থাকো, আশা করা যায় তোমরা সফলতা লাভ করবে। (মায়িদাহ ৯০)
حَلَّافٍ
مَّهِیْنٍۙهَمَّازٍ مَّشَّآءٍۭ بِنَمِیْمٍۙمَّنَّاعٍ لِّلْخَیْرِ مُعْتَدٍ
اَثِیْمٍۙعُتُلٍّۭ بَعْدَ ذٰلِكَ زَنِیْمٍۙ
যে কথায় কথায় শপথ করে, যে মর্যাদাহীন। যে গীবত করে, চোগল খোরী করে বেড়ায়। কল্যাণের কাজে বাধা দেয়, জুলুম ও বাড়া বাড়িতে সীমালংঘন করে। চরম পাপিষ্ঠ ঝগড়াটে ও হিংস্র এবং সর্বোপরি বজ্জাত। (সূরা ক্বলম ১-১৩)
وَ لَا
تَعْتَدُوْاؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ الْمُعْتَدِیْنَ
আর সীমালংঘন করো না। সীমা-লংঘনকরীদেরকে আল্লাহ ভীষণভাবে অপছন্দ করেন।(-মায়িদাহ ৮৭)
অথাৎ সীমালংঘন করার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। হালালকে হারাম করা এবং আল্লাহর নির্ধারিত পাক-পবিত্র জিনিসগুলো থেকে এমনভাবে দূরে সরে থাকা যেন সেগুলো নাপাক, এটাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। তারপর পাক পবিত্র জিনিসগুলো অযথা ও অপ্রয়োজনে ব্যয় করা, অপচয় ও অপব্যয় করা এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ও প্রচুর পরিমাণে ব্যয় করাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। আবার হালালের সীমা পেরিয়ে হারামের সীমানায় প্রবেশ করাও বাড়াবাড়ি। এ তিনটি কাজই আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।
৬. সাহিয্য পাওয়ার জন্য আর একটি শর্ত হচ্ছে সর্বক্ষনিক আল্লাহর জিকর ও দোয়া:
আল্লাহ বলেন -
وَ
سْــٴَـلُوا اللّٰهَ مِنْ فَضْلِهٖؕ اِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِكُلِّ شَیْءٍ عَلِیْمًا
হ্যাঁ,, আল্লাহর কাছে তাঁর ফযল ও মেহেরবানীর জন্য দোয়া করতে থাকো। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত জিনিসের জ্ঞান রাখেন। (আন-নিসা ৩২)
رَبِّ
هَبْ لِیْ حُكْمًا وَّ اَلْحِقْنِیْ بِالصّٰلِحِیْنَۙ
(এরপর ইবরাহীম দোয়া করলোঃ) “হে আমার রব! আমাকে প্রজ্ঞা দান করো এবং আমাকে সৎকর্ম- শীলদের সাথে শামিল করো।(আশ-শুআরা ৮৩)
وَ لَمَّا
بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَ جُنُوْدِهٖ قَالُوْا رَبَّنَاۤ اَفْرِغْ عَلَیْنَا
صَبْرًا وَّ ثَبِّتْ اَقْدَامَنَا وَ انْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَؕ
আর যখন তারা জালুত ও তার সেনাদলের মোকাবিলায় বের হলো, তারা দোয়া করলোঃ “হে আমাদের রব! আমাদের সবর দান করো, আমাদের অবিচলিত রাখ এবং এই কাফের দলের ওপর আমাদের বিজয় দান করো।(আল-বাক্বারাহ ২৫০)
وَ اِذْ
قَالَ اِبْرٰهِیْمُ رَبِّ اجْعَلْ هٰذَا الْبَلَدَ اٰمِنًا وَّ اجْنُبْنِیْ وَ
بَنِیَّ اَنْ نَّعْبُدَ الْاَصْنَامَؕ
স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহীম দোয়া করছিল, “হে আমার রব! এ শহরকে নিরাপত্তার শহরে পরিণত করো এবং আমার ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে বাঁচাও।
(সূরা ইবরাহীম ৩৫)
পৃথিবীর ব্যবস্থাপনা অক্ষুন্ন রাখার জন্য মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ যে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন তা হচ্ছে এই যে, তিনি বিভিন্ন মানব গোষ্ঠী ও দলকে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত দুনিয়ায় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভের সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যখনই কোন দল সীমা ছাড়িয়ে যেতে থাকে তখনই তিনি অন্য একটি দলের সাহায্যে তার শক্তির দর্প চূর্ণ করে দেন। কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা চিরন্তনভাবে একটি জাতি ও একটি দলের মধ্যে কেন্দ্রীভূত করে রাখা হতো এবং তার ক্ষমতার দাপট ও জুলুম-নির্যাতন হতো সীমাহীন ও অশেষ, তাহলে নিঃসন্দেহে আল্লাহর এই রাজ্যে মহা বিপর্যয় নেমে আসতো। তাই যখন কোন একটি দল উল্লেখিত শর্তাবলীর আলোকে সংগ্রাম চালাই তখন মহান আল্লাহ তাদের বিজয় দান করেন।
(ইসলামের পূর্ণাঙ্গ রূপ-পর্ব ৬)
চলবে - - -
মোহাম্মদ নূর হোসাইন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন